#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৩২
.
আমি পুরো বোকার মতো তাকিয়ে আছি।আমার মনে হচ্ছে ঘুম থেকে উঠেছি এখন তাই হয়তো ঘুম ঘুম চোখে ভুল দেখছি। তাই চোখ কচলে আবার তাকাতেই আমার সামনে থাকা সবাই একসাথে চেঁচিয়ে বলে উঠল,
— ” সারপ্রাইজ।”
আমি আহম্মকের মতো তাকিয়ে আছি। কারণ আমার সামনে সজীব ভাইয়া, অর্ণব ভাইয়া, মলি আপু, মিলি আপু আপু ওনাদের হাজবেন্ট, ওহি, আর আমার ছোট মামার মেয়ে আমাদের বাড়ির সবচেয়ে ছোট মেয়ে হুমাইয়রা মাত্র পাঁচ বছর, আমরা সবাই আদর করে হিমু বলে ডাকি। আমি পুরো বোকা বনে গেছি। এটা নিশ্চিত যে স্বপ্ন দেখছি না। তারমানে ওরা সবাই সত্যিই এসছে? আমার মুখে আস্তে আস্তে হাসি ফুটে উঠল। আমি উঠে গিয়ে হিমুকে কোলে তুলে জরিয়ে ধরে বললাম,
— ” কেমন আছো সোনা?”
হিমু হেসে দিয়ে আমার গালে চুমু দিয়ে বলল,
— ” ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?”
আমিও ওর গালে চুমু দিয়ে বললাম,
— ” ভালোই ছিলাম। তোমাদের দেখে আরো ভালো হয়ে গেলাম।”
আমি ওকে নামিয়ে বাকিদের কাছে গিয়ে কুশল বিনিময় করে আনন্দিত কন্ঠে বললাম,
— ” তোমরা হঠাৎ এখানে কী করে? আগে তো বলোনি আসবে?”
মিলি আপু একটা লম্বা শ্বাস ফেলে বললেন,
— ” আমরাও তো জানতাম না যে আমরা আসবো। তোকে কীকরে জানাবো বল?”
— ” মানে?”
তখন ইফাজ ভাইয়া আর হিয়া আপি আর জাবিন একসাথে রুমে আসলো। ইফাজ ভাইয়া বললেন,
— ” কারণ তোমার বর আমাদের ফোন করে ডেকে নিয়ে এসেছে। ”
মলি আপুর হাজবেন্ট আজম ভাইয়াও বলল,
— ” হ্যাঁ সেই। আমাদেরও ফোন করে নিয়ে এলো। বলল বাড়ি ফাঁকা আছে আরামসে সবাই মিলে দুদিন হাসি মজা করে কাটাতে পারব।”
জাবিন হাফাতে হাফাতে বলল,
— ” ভাইয়াই শুনে আমি কী তাড়াতাড়ি এসছি শুধু আমিই জানি।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। দুপুরেই বলছিলাম ওদের মিস করছি। সন্ধ্যার মধ্যেই ওদের এনে হাজির করে দিল? আমি আশেপাশে তাকিয়ে আদ্রিয়ানকে খুজতে লাগলাম। তখনই আদ্রিয়ান ভেতর ঢুকলো আর আমি ওর দিকে তাকাতেই ওর আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। ওনাকে দেখেই হিমু দৌড়ে গিয়ে হাত বাড়িয়ে গেলো আর আদ্রিয়ানও ওকে কোলে নিয়ে নিলো। আমি একটু অবাক হলাম কারণ আদ্রিয়ান এর আগে কখনই হিমুর সাথে আলাপ করেনি। এটুকু সময়ের মধ্যে এতো ভালো বন্ডিং তৈরী হয়ে গেলো? হিমু আমার দিকে বলল,
— ” আপু এই ভাইয়াটা কী তোমার হাব্বি?”
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে এই মেয়ে হাব্বির কী বোঝে? আমি তবুও মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম। আদ্রিয়ান হিমুর দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” দেখলে সত্যি বলেছিলাম আমি?”
হিমু মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। এরপর আদ্রিয়ান সবাইকে বলল,
— ” তোমরা সবাই ছাদে যাও? আমি ওকে নিয়ে আসছি।”
আপি বলল,
— ” হ্যাঁ হ্যাঁ ছাদে আমি সব এরেঞ্জমেন্ট করে রেখেছি। তোমরা গিয়ে বসো আমি স্নাকস নিয়ে আসছি।”
ওরা সবাই চলে গেল। আমি এখনও আদ্রিয়ানের দিকেই তাকিয়ে আছি। আদ্রিয়ান আমার মুখের সামনে তুরি বাজিয়ে বলল,
— ” এইযে ম্যাডাম এতো কী ভাবছো? যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো। ছাদে যাবেনা?”
আমি মাথা নেড়ে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে খুব বেশি ভালো লাগছে আমার, এভাবে সবাইকে একসাথে পাবো ভাবতেই পারিনি। সব মন খারাপ নিমেষেই কেটে গেলো। আর সবটা ওনার জন্যেই হয়েছে।
_________________
সবাই মিলে পাকোড়া আর চা খেতে খেতে একসাথে আড্ডা দিচ্ছি ছাদে বসে। কথার মাঝে আপি বলল,
— ” আচ্ছা আজ তো মিনু ছিলুনা রান্না কে করেছে?”
আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বললাম,
— ” অনি আর আমি দুজন মিলে করেছি।”
সজীব ভাইয়া অবাক হয়ে বলল,
— ” বুড়ি করেছে রান্না? সিরিয়াসলি?”
অর্ণব ভাইয়াও পিঞ্চ মেরে কিছু বলবে তার আগেই আদ্রিয়ান বললেন,
— ” উমহুম আমার বউয়ের লেগপুল করবে না। আমি নিজে শিখিয়েছি ওকে।”
জাবিন হেসে বলল,
— ” ওহোহো কী প্রেম কী প্রেম। বউকে নিজের হাতে ধরে ধরে রান্না শেখাচ্ছে ভাবা যায়?”
আমি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রইলাম। ইফাজ ভাইয়া গিটারটা আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
— ” তো এই প্রেমময় মুহূর্তে একটা রোমান্টিক গান হয়ে যাক? অনিকে ডেডিকেট করে?”
আদ্রিয়ান গিটারটা নিয়ে আমার দিকে তাকালেন। আমি হালকা লজ্জামিশ্রিত চোখে ওনার দিকে তাকালাম। উনি গিটারটা হাতে নিয়ে সুর তুললেন তারপর আবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
— “তোমার নামের রোদ্দুরে, আমি ডুবেছি সমুদ্দুরে
জানি না যাবো কদ্দুরে এখনো
তোমার নামের রোদ্দুরে, আমি ডুবেছি সমুদ্দুরে
জানি না যাবো কদ্দুরে এখনো
আমার পোড়া কপালে, আর আমার সন্ধ্যে সকালে
তুমি কেন এলে জানি না এখনো
ফন্দি আটে মন পালাবার
বন্দি আছে কাছে সে তোমার
যদি সত্যি জানতে চাও
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও তোমাকেই চাই
যদি সত্যি জানতে চাও
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও তোমাকেই চাই।”
পাশ থেকে আপি আমাকে খোঁচা মারলো ওপাশে থেকে জাবিনও চোখ টিপ মারলো। আমি লজ্জা পেয়ে মাথা নামিয়ে মুচকি হেসে আবার তাকালাম ওনার দিকে।
— “হলো শুরু সাতদিনে,এই খেলাধুলো রাতদিনের
জানি বারণ করার সাধ্যি নেই আর আমার
তোমার নামের মন্দিরে, আর তোমার নামের মসজিদে
আমি কথা দিয়ে এসেছি বারবার
বিন্দু থেকে সিন্ধু হয়ে যাও
তুমি ইচ্ছেমত আমাকে সাজাও
যদি সত্যি জানতে চাও
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও তোমাকেই চাই
যদি সত্যি জানতে চাও
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও তোমাকেই চাই
মনের গভীরে, ঘুমের শরীরে
তোমাকে নিয়ে ডুবে যাবো
আমার কাছে কারণেরা আছে
নিজেকে আমি খুঁজেই নেবো
যদি সত্যি জানতে চাও
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও
তোমাকেই চাই
যদি সত্যি জানতে চাও
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও তোমাকেই চাই।”
গানটা শেষ হতেই সবাই একসাথে হাততালি দিলো। আর সেই আওয়াজে আমার ঘোর কাটলো। আর গানটা পুরোটাই আমাকে নিয়ে গেয়েছে বলে সবার পিঞ্চ করাতো আছেই।
________________
রাতে সবাই মিলে একসাথে অনেক হাসি মজার সাথে গার্ডেন এরিয়াতে পিকনিকের মতো করে খিচুড়ি রান্না করলাম। ডিনার কম্প্লিট করে সবাইকে রুমে রুমে পৌছে দিলাম। আদ্রিয়ান রুমে চলে গেছেন। আমি কিছুক্ষণ হিয়া, মলি, মিলি আপির সাথে গল্প করে খুশি মনে রুমে গিয়ে দেখি আদ্রিয়ান আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে। আমি দৌড়ে গিয়ে ওনাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
— ” থ্যাংক ইউ সো মাচ।”
উনি মুচকি হেসে চিরুনিটা রেখে আমার হাত ধরে ছাড়িয়ে আমার দিকে ঘুরে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে বললেন,
— ” আরে সবসময় এতো ফরমাল হও কেনো তুমি? আজ একটা কথা বলছি মাথায় রাখবে। আমার বা তোমার বললতে আমাদের মধ্যে কোনো শব্দ নেই। সবটাই তো আমাদের। বুঝেছো? ”
আমি ওনার দুই কাধের ওপর হাত রেখে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লাম।
— ” লং ড্রাইভে যাবে?”
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম,
— ” এখন?”
— ” হ্যাঁ চলো আজ কিছুটা সময় বাইরে কাটিয়ে আসি?”
আমি একটু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। উনি আমার নাকে নাক ঘষে বললেন,
— ” কী হলো যাবেনা?”
— ” আচ্ছা চলুন।”
উনি আমাকে ছেড়ে আমার হাত ধরে বললেন,
— ” চলো?”
মধ্যম গতিতে গাড়ি চলছে বাইরে থেকে ঠান্ডা হাওয়া আসছে। আর আদ্রিয়ান একমনে সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভ করছেন। আমি ওনাল দিকে তাকিয়ে বললাম,
— ” কতদূর যাবো?”
উনি ড্রাইভ করতে করতেই বললেন,
— ” দেখি কতদূর যেতে পারি।”
আমি কিছু না বলে জানালা দিয়ে বাইরের পরিবেশটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করছি। বেশ অনেকটা সময় একটা বিশাল ব্রিজের ওপর গাড়ি থামালেন আদ্রিয়ান। ব্রিজটা বেশ উচু। নদীটা ব্রিজ থেকে অনেকটা নিচে। আদ্রিয়ান সিটবেল্ট টা খুলে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” এখানেই নামবো অামরা।”
আদ্রিয়ান গাড়ি থেকে নেমে আমার সাইডে এসে দরজা খুলে আমাকে হাত ধরে নামালো। আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম ব্রিজটা অনেকটা নিরব। গাড়ি আসা যাওয়া নেই বললেই চলে। মাঝে মাঝে দুই একটা ট্রাক যাওয়া আসা করছে। নির্জন পরিবেশ, আকাশে পূর্ণিমার পূর্ণ চাঁদ। ফুরফুরে ঠান্ডা হাওয়া, নদীর শো শো শব্দ, দূরে বিভিন্ন জায়গায় জ্বলতে থাকা আলো সব মিলিয়ে অসাধারন লাগছে পরিবেশটা। আদ্রিয়ান গাড়ি দুটো চিপসের প্যাকেট আর একটা কোকাকোলা বের করে আমার হাতে একটা চিপস দিয়ে বললেন,
— ” চলো হাটি?
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম। আদ্রিয়ান আর আমি দুজনেই রেলিং এর পাশ দিয়ে হাটছি। দুজনেই চিপস খেতে খেতে হাটছি। আমি চারপাশের পরিবেশটা দেখছি। বেশ কিছক্ষণ হাটার পর একটা জায়গায় এসে দাঁড়ালাম আমরা। আদ্রিয়ান রেলিং এ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আর আমি রেলিং এ ভর দিয়ে। দুজনেই একটা কোকাকোলা শেয়ার করে করে খাচ্ছি, মানে এক ঢোক উনি এক ঢোক আমি খাচ্ছি। অদ্ভুতভাবে দুজনে কেউই কোনো কথা বলছিনা। ওনার দিকে তাকাতেই চোখ আটকে গেলো আমার, চাঁদের আলোয় পরছে ওনার ওপর, আর সেই আলোতে ওনাকে স্বর্গীয় দূতের চেয়ে কম কিছু মনে হচ্ছে না। লোকটার এই সৌন্দর্যযের ওপরও আমি ভীষণভাবে জেলাস। এতো সুন্দর কেনো হবে? বেশ অনেকটা সময় নিরবতার পর আদ্রিয়ান আমার দিকে না তাকিয়েই বললেন,
— ” আজকে কী আমাকে একটু বেশি সুন্দর লাগছে? যে আমার বউ আমায় এভাবে মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে?”
আমি হকচকিয়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিয়ে বললাম,
— ” আমার ব্ বয়েই গেছে আপনাকে দেখতে।”
— ” মিথ্যে বলার একটা ট্রেনিং নিয়ো বুঝলে। কারণ তুমি যখনই মিথ্যে বলো সবাই বুঝে যায় যে ইউ আর লাইয়িং।”
আমি ওনার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম,
— “এর আগে আবার কবে কাকে মিথ্যে বলেছি আমি?”
উনি এবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
— ” কাউকে কখনও বলোনি? আর ইউ শিউর ?”
আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। ওনার কথার মানেটা বুঝলাম না। উনি বড় একটা শ্বাস ফেলে বললেন,
— ” বাদ দাও। এটা বলো এরকম চুপ করে আছো কেনো? এমনিতেতো বকবক করে মাথা খেয়ে ফেলো!”
আমি ওনার দিকে ঘুরে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম,
— ” আজ আপনার কথা শুনতে ইচ্ছে করছে।”
আমার কথা শুনে উনি বোতলে চুমুক দিতে গিয়েও থেমে গেলেন। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা একটা হাসি দিয়ে বোতলটা ব্রিজের রেলিং এর ওপর রেখে ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে এলেন আমার ডান হাত ধরে একটানে নিজের কাছে টেনে নিয়ে একহাতে কোমর জরিয়ে আরেক হাতে আমার কাপালের চুলগুলো কানে গুজতে গুজতে বললেন,
— ” আমার কথা কিন্তু খুব ভয়ংকর। টলারেট করতে পারবে?”
আমি ওনার চোখের দিকে তাকিয়েই বললাম,
— ” শুনতে শুনতে অভ্যেস হয়ে গেছে। আপনার ভয়ংকর, অতি ভয়ংকর, অতিব ভয়ংকর সব কথাই দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নেই।”
আদ্রিয়ান হেসে দিলেন আমার কথা শুনে, তারপর আমার নাক টিপে দিয়ে বললেন,
— ” খুব দুষ্টু হয়ে গেছো আজকাল।”
— ” সবই আপনার ট্রেনিং এর ফল।”
উনি আমার কপালে সময় নিয়ে একটা চুমু দিয়ে জরিয়ে ধরে বললেন,
— ” আই লাভ ইউ জানপাখি।”
আমি কিছু না বলে ওনার পিঠ আকড়ে ধরে চুপ করে ওনার বুকের সাথে মিশে রইলাম। বেশ অনেকটা সময় পর উনি হঠাৎই আমায় শূণ্যে তুলে নিলেন। আমি একটু অবাক হয়ে কিছু বলার আগেই উনি আমাকে ব্রিজের রেলিং এর ওপর বসিয়ে দিলেন। আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে। ব্রিজটা অনেকটাই উঁচু যদি কোনো কারণে নিচে পরে যাই তো বাঁচা সম্ভব নয়। আমার পক্ষে তো একেবারেই না কারণ আমি সাতার জানিনা। উনি আমার দুইবাহুতে হাত রেখে বললেন,
— ” যদি তোমাকে আমি এখন এখান থেকে ফেলে দেই?”
আমি ওনার দিকে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে তারপর মুচকি হেসে বললাম,
— ” আমি জানি আপনি সেটা পারবেন না।”
— ” এতোটা বিশ্বাস?”
আমি হেসে বললাম,
— ” মানুষটাইতো এতো বিশ্বস্ত।”
উনি ওভাবেই আমাকে জরিয়ে ধরলেন শক্ত করে। আমি ওনার পিঠ ধরতে যাবো তার হঠাৎ উনি আমাকে ধাক্কা দিলেন। আমি আদ্রিয়ান বলে চিৎকার করে উঠলাম। উনি সাথে সাথে আমার হাত ধরে ফেললেন। আমি এখন এমন অবস্থায় আছি যে উনি আমার হাত ছাড়লেই আমি নিচে পরে যাবো। আমি ভয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি ভয়ে। উনি বাঁকা হেসে বললেন,
— ” ডু ইউ স্টিল ট্রাস্ট মি?”
আমি কিছু বললাম না চোখ নামিয়ে ফেললাম। উনি আমার দিকে ঝুকে বললেন,
— ” কাউকে এতোটা বিশ্বাস করোনা, যে বিশ্বাসটা ভেঙ্গে যাওয়ার পর সেই ধাক্কা সামলাতেই পারবেনা। আবার কাউকে এরকম বিশ্বাসও করোনা একটা ধাক্কা যেটাকে ভেঙ্গে দেওয়ার জন্যে যথেষ্ট।”
আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে।
#চলবে…
#ভালোবাসি_তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৩৩
.
আদ্রিয়ান হাত ছাড়লেই আমি সোজা ব্রিজ থেকে নদীতে গিয়ে পরবো। এসব ভেবে ঘাড় ঘুরিয়ে নিচের দিকে তাকাতেই কলিজা শুকিয়ে উঠল। আমার হালকা ইকো ফোবিয়া আছে। আমি কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,
— ” আদ্রিয়ান প্ প্লিজ তুলুন আমাকে আ্ আমার ভয় লাগছে।”
আদ্রিয়ান আমার কথা শুনে একটু হেসে হাত একটু আলগা করে দিতেই আমি চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম। উনি সাথেসাথেই আবার হাতটা শক্ত করে ধরে বললেন,
— ” এতো ভয় পাচ্ছো কেনো? তোমার কী মনে হচ্ছে আমি তোমাকে ফেলে দেবো?”
আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। ওনার হঠাৎ এমন ব্যবহার কেনো করছেন
লোকটা? আমার এবার সত্যিই ভয় করছে। উনি ফেলবেন না এটা আমি নিশ্চিত কিন্তু যদি স্লিপ করে যায় বা ওনার হাত থেকে। আমি এবার কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বললাম,
— ” আদ্রিয়ান আমার এবার সত্যিই খুব ভয় করছে। প্লিজ তুলুন আমায়।”
আদ্রিয়ান আমার হাত ধরে জোরে টান মারলেন। টান মারার কারণে উনি দুকদম পিছিয়ে গেলেন আর আমি হুমরি খেয়ে ওনার বুকের ওপর পরলাম। আমি ভয়ে খুব জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি। বুকের মধ্যে জেনো হাতুরি পেটাচ্ছে কেউ। উনি একহাতে আমার কোমর জরিয়ে ধরে আমার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললেন,
— “এতো অদ্ভুত কেনো তুমি? এতো ভয় পাও আবার মাঝে মাঝে নিজের সীমার গন্ডি পেরিয়ে এমন কাজ করে ফেলো যেটা করতে যথেষ্ট সাহসের দরকার। অদ্ভুত না?”
আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছি ওনার দিকে। উনি কী কিছু জেনে গেছেন? কিন্তু আমি তো ওনাকে কিছু বলিনি। তাহলে? হালকা ঘামছি আমি উনিকি সত্যিই কিছু জানেন? আমি ওনাকে কিছু জিজ্ঞেস করব তার আগেই উনি হেসে দিয়ে বললেন,
— ” আরে আমি মজা করছিলাম। এতো সিরিয়াসলি নিচ্ছিস কেন?”
আমি একটা লম্বা শ্বাস ফেলে ওনার বুকে একটা কিল মেরে বললাম,
— ” আপনি কিন্তু খুব খারাপ একটা লোক।”
উনি হাসি মুখেই আমায় নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললেন,
— ” আই নো দ্যাট বেইবি।”
আমি এবার একটু অভিমানী কন্ঠে ওনাকে দিকে তাকিয়ে বললাম,
— ” যদি সত্যিই নিচে পরে যেতাম? যদি আপনার হাত ফসকে যেতো তাহলে?”
— ” তোমার মনে হয় আমি পুরোপুরি কনফিডেন্ট না থাকলে তোমায় নিয়ে এতোবড় রিস্ক নিতাম?”
আমি ওনাকে নিজের থেকে সরিয়ে দিয়ে একটু দূরে গিয়ে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর উনি আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে দিয়ে বললেন,
— ” আচ্ছা আ’ম সরি। আমার এরকম মজা করাটা ঠিক হয়নি।”
আমি ওনার হাতের ওপর হাত রেখে মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে রইলাম। উনি ওনার স্পর্শটগুলো আরও গভীর করে বললেন,
— ” সরি বললাম তো!”
আমি এবারও কিছু বললাম না। উনি আমার কানের কাছে মুখ এনে বললেন,
— ” বুঝেছি আমার বউয়ের আমার এই আদরগুলো খুব ভালো লাগছে তাই ইচ্ছে করেই রেগে থাকার ভান করছে তাইনা? যদি তাই হয় তাহলে চলো বাড়িতে গিয়ে…”
আমি ভ্রু কুচকে ওনার দিকে ঘুরে তাকিয়ে ওনার বুকে হালকা করে একটা ধাক্কা মেরে বললাম,
— ” আপনি আসলেই একটা অসভ্য লোক।”
বলে হেটে যেতে নিলেই উনি একটানে আমায় নিজের কাছে এনে বললেন,
— ” নিজের বাড়িতে, নিজের বেডরুমে থাকা নিজেরই তিনমাসের পুরোনো বিয়ে করা বউয়ের সাথে এখনও কিছুই করলাম না অথচ তুমি আমার গায়ে অসভ্য ট্যাগটা লাগিয়ে দিলে?”
আমি এবার একটু হকচকিয়ে গেলাম কী বলবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা। তাই মাথা নিচু করে ফেললাম। উনি আমার চুলগুলো কানে গুজতে গুজতে বললেন,
— ” তোমার কিন্তু আজ সকাল থেকে আমায় তুমি করে বলার কথা ছিল। অথচ এখনও আপনি করেই বলছো দিস ইজ নট ফেয়ার হ্যাঁ?”
আমি ওনার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম। আমি জানি একবার যখন ওনার মাথায় আমাকে দিয়ে তুমি করে বলানোর ভুত চেপেছে তখন সে সেটা করিয়েই ছাড়বে। আমি একটা ইতস্তত করে বললাম,
— ” আর কয়েকট..”
আমাকে থামিয়ে দিয়ে উনি বললেন,
— ” উমহুম। কোনো এক্সকিউস নয়। আমি খুব ভালো করেই জানি যে তোমার এই কয়েকদিন আর কোনোদিনই হবেনা। সো আজ এবং এখন থেকেই বলতে হবে। ”
— ” এখনই?”
— ” জ্বী।”
আমি বেশ ভালো বুঝতে পারছি যে আজ আর আমার নিস্তার নেই তাই ওনাকে তুমি করেই বলতে হবে। কিন্তু অভ্যেস নেইতো কীকরে বলি ওনাকে তুমি করে? উনি আমায় শক্ত করে ধরে আছেন। আমি ছাড়নোর চেষ্টা করে বললাম,
— ” ছাড়ুন।”
কিন্তু উনি নাছোড়বান্দা। তুমি না বললে কিছুতেই ছাড়বেন না। তাই ওনার জোরাজুরিতে বাদ্ধ হয়েই বললাম,
— ” ছ্ ছাড়ো প্লিজ।”
— ” আরেকবার বলো?”
— ” আদ্রিয়ান প্লিজ ছাড়ো।”
উনি আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলেন। আর আমিও ওনার হাসি দেখে হেসে দিলাম। সারারাত বাইরেই ছিলাম, আইসক্রিম পার্লারে গিয়ে বেশ অনেকটা সময় ঘোরাঘুরির পর। প্রায় মাঝরাতের অনেক পরে একটা খালিমাঠে গাড়ি পার্ক করে গাড়ির রুফের ওপর শুয়ে ওনার বুকে মাথা রেখেই জোছনা বিলাশ করে আর ওনার প্রেম নামক কিছু ভয়ংকর কথা আর স্পর্শ সহ্য করেই সেদিনের রাতটা কাটিয়েছি। যদিও শেষ সময় দুজনেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
____________________
সকালে বাড়ি ফিরতে ভেতরে ঢুকে দেখি সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আছে। আদ্রিয়ান আর আমি একে ওপরের দিকে একবার তাকিয়ে আবার ওদের দিকে তাকালাম। সবাই মিটমিটিয়ে হেসে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল,
— ” কী ব্যাপার? সবগুলো এমন একজায়গায় হয়ে বোকার মতো হাসছো কেনো?”
ইফাজ ভাইয়া দাঁত কেলিয়ে বলল,
— ” তা ভাই গেছিলেটা কোথায়? তাও বউকে নিয়ে?”
জাবিনও ইফাজ ভাইয়ার কথায় তাল মিলিয়ে বলল,
— ” হ্যাঁ ভাইয়া। সারারাত বাইরে কাটিয়ে এলি তাও জোড়া?”
আমি হালকা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে আছি। অাদ্রিয়ান বলল,
— ” তোরা যে একেকটা নিন্মমানের গাধা সেটা কথায় কথায় প্রমাণ করাটা খুব দরকার? আমার বউকে নিয়ে যখন আমি বেড়িয়েছি আর সারারাত পর বাড়ি ফিরেছি নিশ্চয়ই গোটা শহরে নাইট গার্ডের ডিউটি করতে যাইনি। নিজেদের মতো আলাদাভাবে প্রেম করতে গেছি এতে এতো জিজ্ঞাসা করার কী হলো?”
সবাই চুপ হয়ে গেলো। আদ্রিয়ান যে এভাবে সোজাসুজি উত্তর দিয়ে দেবে সেটা কেউ আশা করেনি। আপি একটু গলা ঝেড়ে বলল,
— ” যা তোরা ফ্রেশ হয়ে আয় আমরা সবাই ডাইনিং এ ওয়েট করছি।”
আদ্রিয়ান আর আমি ফ্রেশ হতে চলে এলাম। প্রথমে আদ্রিয়ান ফ্রেশ হয়ে নামলো এরপর আমি। খাওয়ার টেবিলে গিয়ে হিমুকে একটু আদর করে আদ্রিয়ানের পাশের চেয়ারটা টেনে বসে পরলাম আমি। সবাই নানারকম গল্প করতে করতে আড্ডা দিচ্ছি আর খাচ্ছি। কথার মাঝে আদ্রিয়ানকে তুমি করে বলা নিয়েও আমার ভাই বোনেরৃ ফোড়ন কাটার চান্সটা ছাড়েনি। খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই একসাথে সোফায় বসলাম টিভি দেখতে কারণ সবারই আজ আফ ডে। নিউস চ্যানেলে দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই মহিলা সাংবাদিকটি বলে উঠলেন, ” দীর্ঘ দুইবছর পর আবারও বাংলাদেশ টেরোরিস্ট অ্যাটাক। বিশাল বিস্ফোরণে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে শ্যামলীর এক বিশাল জনসভা। কারা এনারা? সেই পুরোনো টেরোরিস্ট টিম নাকি নতুন কোনো দল..” সাংবাদিক আরও কিছু বলছিল কিন্তু সেগুলো আমার মস্তিষ্কে প্রবেশ করছিলনা। আমি ভীত দৃষ্টিতে আপির দিকে তাকালাম। আর নিজের কাঁপুনি আর ঘাম বন্ধ করার ব্যর্থ চেষ্টা করত লাগলাম। আপি চোখের ইশারায় আমায় স্বাভাবিক থাকতে বলল। আদ্রিয়ান একটা গ্লাসে পানি ঢেলে আমার দিকে এগিয়ে দিলো আমি ওর দিকে তাকাতেই ও বলল,
— ” পানি খাও ভালো লাগবে।”
ইফাজ ভাইয়া বলল,
— ” এনি প্রবলেম অনি?”
আমি কিছু না বলে পানিটা মুখে দিয়েছি আদ্রিয়ান এমন কিছু বলল যাতে আমি বিষম খেয়ে গেলাম। ও বলল,
— ” হয়তো কোনো পুরোনো কথা মনে পরে গেছে?”
#চলবে…
#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৩৪
.
আমি চমকে তাকালাম আদ্রিয়ানে দিকে। পুরোনো কথা মানে কী? কী বলতে চাইলো আদ্রিয়ান। ও কী সত্যিই কিছু জানে? আমি আপির দিকে তাকিয়ে দেখলাম আপিও অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। সজীব ভাইয়া, অর্ণব ভাইয়ার একই অবস্থা।আর বাকী সবাই কনফিউসড হয়ে তাকিয়ে আছে। আপি আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” প্ পুরোনো কথা মানে আদ্রিয়ান?”
আদ্রিয়ান মুখে হালকা হাসি ফুটিয়ে বলল,
— ” সেটা আমি কীকরে জানবো বউমনি? ওর চোখ মুখ দেখে আমার যেটা মনে হলো সেটাই বললাম।”
আমি চোখ বন্ধ করে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। পুরো পানিটা খেয়ে নিয়ে বললাম,
— ” না আমার শরীরটা ভালো লাগছেনা আমি একটু রুমে যাচ্ছি তোমরা কথা বলো হ্যাঁ।”
এটা বলে কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেলাম রুমে। রুমে গিয়ে সোজা ব্যালকনিতে গিয়ে রেলিং এ ভর দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি। আবার ব্লাস্ট? কিন্তু কেনো? দুই বছর পরেই কেনো? তারমানে কী ওরা আবার ফিরে এসছে? নাকি অন্যকেউ? ওরা যদি ফিরে এসে থাকে তাহলে কী খুজছে আমাকে? যদি এসেই থাকে তাহলেতো অবশ্যই খুজছে আমায়। এতো সহজে নিশ্চয়ই ছেড়ে দেবেনা আমাকে। টেনশনে মাথা অলমোস্ট ছিড়ে যাচ্ছে আমার। আমিতো এসব ভুলেই যাচ্ছিলাম। ভেবেছিলাম এটা শুধু অতীত হয়েই থাকবে কিন্তু এখন এসব কী হচ্ছে? কেনো হচ্ছে এসব? এসব নানারকম কথা ভাবতে ভাবতে পেছন থেকে কেউ জরিয়ে ধরল আমাকে। প্রথমে চমকে উঠলেও পরে বুঝতে পারলাম যে এটা আদ্রিয়ান। ও আমার কাধে থুতনি রেখে বলল,
— ” এত কী ভাবছো? কতক্ষণ যাবত এখানে দাঁড়িয়ে আছি বলোতো?”
আমি নিজেকে সামলে নিয়ে নিচু সুরে বললাম,
— ” সরি! আমি খেয়াল করিনি। আপনি চলে এলেন যে?”
— ” আমার বউ ওপরে একা আছে আমি নিচে বসে থাকি কীকরে? কিন্তু আবার আপনি?”
— ” আমার দ্বারা হবেনা। বারবার আপনিই বেড়িয়ে যাচ্ছে। কতোদিনের অভ্যেস বলুনতো?”
আদ্রিয়ান আমার হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললেন,
— ” তুমি বলতে বলতেই অভ্যেস হয়ে যাবে। কিন্তু কোনো এক্সকিউস শুনবো না আমি আগেই বলে দিয়েছি।”
আমি মুখ ফুলিয়ে একবার তাকালাম ওনার দিকে। তারপর করুণ স্বরে বললাম,
— ” আপনি করে বললে সমস্যা টা কোথায়?”
উনিও এবার বাচ্চাদের মত বায়নার স্বরে বলল,
— ” আমার ভালোলাগেনা শুনতে নিজেকে কেমন পর পর মনে হয়। আর তাছাড়াও আমার ছোটবেলার শখ যে আমার বউ আমাকে তুমি করে বলবে। সো এখন আপনি শোনার প্রশ্নেই ওঠেনা।”
আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে। চোখ ছোট ছোট করে ছোট একটা নিশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বললাম,
— ” আপনি ছোটবেলা থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন যে আপনার বউ আপনাকে কী নামে ডাকবে? লাইক সিরিয়াসলি?”
— ” হ্যাঁ। আমার বউকে নিয়ে আমি ভাববো না তো কে ভাববে তুমি?”
আমি একটা হতাশার নিশ্বাস ত্যাগ করে বললাম,
— ” নাহ আমি কেন ভাবতে যাবো। আমার আর কী? আপনার বউ আপনিই বুঝবেন।”
আদ্রিয়ান চোখ মুখ শক্ত করে বললেন,
— ” সেটা ঠিকই আছে কিন্তু আরেকবার যদি আপনি বলো তো কানের নিচে এমন জোরে একটা পরবে যে তিনদিন কানে শুনতে পাবেনা।”
আমি মুখ গোমড়া করে মাথা নিচু করে ফেললাম। উনি আমার নাক টেনে দিয়ে বললেন,
— ” আমি একটু বকলেই মুখটা এভাবে ছোট করে ফেলো। ইউ নো অদ্ভুতভাবে এটাও আমার খুব ভালোলাগে।”
আমি কিছু না বলে মাথা নামিয়ে রেখেই মুচকি হাসলাম। তারপর ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
— ” ওরা সবাই কী করছে?”
— ” নিচে গল্প করছে। তুমি এভাবে চল এলে কেন গল্প করা ছেড়ে?”
আমি একটু হাসার চেষ্টা করে ওনার হাতের ওপর হাত রেখে বললাম,
— ” কিছুনা শরীরটা একটু খারাপ লাগছিল তাই..”
ও আমার ডান গালে হাত রেখে নরম সুরে বলল,
— ” এখন ঠিক লাগছে?”
— ” হুম।”
— ” তাহলে নিচে চল?”
— ” হুম চলুন।”
উনি চোখ গরম করে তাকাতেই আমি একটু হকচকিয়ে ঘাড় বাকিয়ে এক কান ধরে বললাম,
— ” সরি। চলো..”
উনি হেসে দিয়ে আমার হাত ধরে কাছে টেনে কানের ওপর থেকে চুলগুলো আলতো হাতে সরিয়ে দিয়ে বলল,
— ” এতো কিউট করে বললে রাগ করা যায়।”
আমি একটু লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে হেসে দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
— ” আচ্ছা চলো এবার।”
এরপর আমরা দুজনে একসাথে নিচে গেলাম। ওরা সবাই বিকেলে চলে যাবে তাই সবাই মিলে ঠিক করলাম লাঞ্চ করতে যাবো বাইরে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। সবাই একসঙ্গে বাইরে চলে গেলাম লাঞ্চের জন্যে। সারাদিন আনন্দ মজা বিকেলে ওরা যাওয়ায় পর মনটা খারাপ হয়ে ছিল। আর তাই আমার মন ভালো করতে রাতে ও আমাকে নিয়ে আইসক্রিম খাইয়ে এনেছে তারসাথে অনেক মজাও হয়েছে।
___________________
দুদিন কেটে গেছে। এরমধ্যে ওকে তুমি বলার অভ্যেসটাও হয়ে গেছে আমার। আর ওর সাথে সম্পর্কটাও আরও নরমাল হয়েছে। নবীন বরণে যাওয়ার জন্যে রেডি হবো। আদ্রিয়ানের কিনে দেওয়া নীল রংয়ের শাড়িটা বেড় করে আপির রুমে যাবো পরতে তখনি আদ্রিয়ান ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করল। আমি বললাম,
— ” দরজা বন্ধ করলে কেনো? আমি আপির রুমে যাবো শাড়ি পড়তে।”
ও ওর টিশার্ট খুলতে খুলতে বলল,
— ” আমি থাকতে বউমনির রুমে কেন যাবে? আমাকে দাও আমি পরিয়ে দিচ্ছি।”
আমি হালকা চমকে গিয়ে বললাম,
— ” ম্ মানে কী? তুমি শাড়ি পড়িয়ে দেবে মানে? তুমি কেন পরাবে?”
ও চেয়ারের ওপর টিশার্ট টা রেখে বলল,
— ” কেনো হিয়া পড়াতে পারলে আমি কেন পারবোনা?”
আমি একটু ইতস্তত করে বললাম,
— ” আপি আর তুমি কী এক হলে নাকি?”
ও বাঁকা হেসে আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল,
— ” নাহ। একদম এক নাহ। তোমার আপি তো বোন আর আমি তোমার হাজবেন্ট। আর হাজবেন্ট তো শুধু শাড়ি পরাতে পারে না আরো অনেক কিছু করতে পারে।”
এটুকু বলে আমার দিকে ঝুকে বলল,
— ” কিন্তু আমার বউটা তো এখনও একটা বাচ্চা। তাই আর কিছু না হোক শাড়িটা পড়িয়ে দেই?”
আমি কী বলব? ও আমায় শাড়ি পরিয়ে দেবে এটা ভাবলেই তো আমার লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। আমি তুতলিয়ে বললাম,
— ” ন্ নো থ্যাংকস। আপি সুন্দর করে পরাতে পারে। তোমার পরানোর দরকার নেই।”
বলে দিয়ে আমি তাড়াহুড়ো করে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই উনি আমার হাত ধরে ফেললেন। আমার হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললেন,
— ” এখন এসব বলে লাভ নেই সুইটহার্ট। ইউ নো এজ ভেরী ওয়েল যে আমি একবার যেটা করব বলে ঠিক করে ফেলি সেটা করেই ফেলি। সো শাড়িটা আজ আমিই তোমাকে পড়াবো।”
আমি অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম ওর দিকে। এই সাড়ে তিনমাসে ওকে এটুকু চিনেছি যে ও যখন একবার বলেছে তখন আমায় শাড়ি পড়িয়েই ছাড়বে। উনি আমার গাল টিপে দিয়ে বললেন,
— ” এভাবে তাকিও না জানপাখি। লাভ হবেনা। এখন বাকিসব পরে আসবে নাকি আমিই..”
ওর এটুকু বলতে দেরী হলেও আমার দৌড়ে ওয়াসরুমে দৌড়ে যেতে একটুও দেরী হয়নি। চেঞ্জ করে ওয়াসরুমে বসে থাকাও যাবেনা সময় নেই। তাই প্রচন্ড লজ্জা লাগার পরেও গায়ে শাড়ি পেঁচিয়ে বলে বাইরে বেড়িয়ে গুটিগুটি পায়ে ওনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ও আমায় আগাগোড়া একবার স্কান করে বলল,
— ” শাড়িটা এভাবে পেঁচিয়ে রেখেছো হাতে না দিলে পড়াবো কীকরে?”
আমি কিছু না বলে শাড়ি খামঁছে ধরে ইতস্তত করে যাচ্ছি। আমায় চুপ থাকতে দেখে আদ্রিয়ান নিজেই আমার গা থেকে শাড়িটা সরিয়ে দিলেন। আমি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। বড় হওয়ার পর এইভাবে এই প্রথম কোনো পুরুষ দেখলো আমাকে। যদিও ও আমার নিজের হাজবেন্ট কিন্তু প্রথমবার তো। চোখ খোলার মত সাহস বা এনার্জি কোনোটাই পাচ্ছিনা। এরপর উনি শাড়ি পরানো শুরু করলেন। ওনার স্পর্শগুলোতে বারবার কেঁপে উঠছিল আমার শরীর। উনি ধীরে ধীরে খুব সুন্দর ভাবেই আমার শাড়ি পরানোটা শেষ করলেন। মাঝেমধ্যে ওনার খুনশুটিময় স্পর্শে আমার অবস্থা আরও বেশি ভয়াবহ হয়ে উঠছিল, কিন্তু ওকে কিছু বলতেও পারছিলাম না। কারণ ওকে চিনি আমি ওকে এখন কিছু বললেই উনি আরও বেশি দুষ্টুমি করবে তাই চুপ থাকাই নিরাপদ। শাড়ি পরানো শেষে আমি অবাক হয়ে দেখলাম নিজেকে। এতোটা সুন্দর শাড়ি পরানো কোথায় শিখলো ও? আমি অবাক হয়েই বললাম,
— ” তুমি এতো সুন্দর করে শাড়ি পরাতে পারো?”
ও নিজের পাঞ্জাবী পরতে পরতে বলল,
— ” হ্যাঁ। জাবিন যখন ছোট ছিল তখন আম্মুকে দেখতাম ওকে শাড়ি পড়াতে তখন দেখতাম। ইন্টারেস্টিং লাগতো। তখন আমিও আম্মুকে বলে শাড়ি পড়ানোটা শিখে নিয়েছিলাম।”
— ” ওহ।”
— ” হ্যাঁ তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও। আর সাজবেনা বেশি। জাস্ট ওর্নামেন্টস, একটু লিপস্টিক আর কাজল দেবে। আর হ্যাঁ চুলটা খোলা রাখবে, ব্লাউজের পিঠটা বেশ বড়। আর খেয়াল রাখবে আঁচল নেমে গিয়ে গলার নিচের ঐ তিল দুটো জেনো দেখা না যায়।”
আমি হতাশ হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
— ” আর কিছু?”
ও আমার দিকে তাকিয়ে মেকি হেসে বলল,
— ” জ্বি নট আপাতত যেটুকু বলছি সেটুকু করলেই খুশি হবো।”
আমিও আর কথা না বাড়িয়ে রেডি হয়ে নিলাম। আর উনিও রেডি হয়ে নিলেন। নীল পাঞ্জাবী, কালো জিন্স, কালো ঘড়ি। দেখতে কেমন লাগছে নতুন করে সেটা আর নাইবা বলি।দুজনে রেডি হয়ে বাড়ির সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলাম। ইফাজ ভাইয়ারও ইনভেটেশন ছিল কিন্তু সে একটা ইম্পর্টেন্ট কাজে আটকে গেছে, তাই আপিও গেলোনা। মেডিকেল গিয়ে গাড়ি থেকে নামতেই আদ্রিয়ানকে ওয়েলকাম করতে এলো আদ্রিয়ান ওনাদের সাথে কথা বলে ওনাদের এগিয়ে যেতে বলল। একটু এগোতেই হঠাৎ সামনে রূপ এসে হাজির হলো। আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম। ভয় নিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর চোখ মুখ একদম স্বাভাবিক। আগের দিনের মতো রাগ নেই। রূপ হেসে বললেন,
— “তোমার সাথে কথা বলার জন্যেই ওয়েট করছিলাম। এক্চুয়ালি আ’ম সরি। আমি সত্যিই জানতাম না তুমি আদ্রিয়ানের ওয়াইফ। তাই তোমার সাথে যেটুকু ফ্লার্ট করেছি বা অন্যকিছু ভেবেছি সেটা একদমই ঠিক হয়নি। আমি সত্যিই ভীষণ দুঃখিত।”
আমি কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান আমার হাত ধরে হেসে বলল,
— ” ইটস অলরাইট ডুড। তবে এরপর কোনো মেয়েকে লাইন মারার আগে মেয়েটার বায়োডেটা নিয়ে নিবি। মিস নাকি মিসেস সেটা জানাটা ইম্পর্টেন্ট হুম?”
বলে আমার হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেল। আমি ও একটু অবাক হলেও কিছু বললাম না। কারণ এখন ঝাড়ি খাওয়ার শখ আমার নেই। ভেতরে নিয়ে গিয়ে ও বলল,
— ” শোনো তুমি অরু ওদের কাছে যাও আমি সামনে যাচ্ছি।”
আমি মাথা নেড়ে চলে গেলাম। ওরা আমার জন্যে মাঝে একটা সিট রেখেই দিয়েছে। আমি গিয়ে বসতেই ইশু বলল,
— ” আরে ইয়ার আজকেও জিজুকে কী লাগছে এগেইন ক্রাশ।”
অরুও তাল মিলিয়ে বলল,
— ” হ্যাঁ সে আর বলতে হয়। জিজুকে দেখে তো রেগুলার ক্রাশ খাই।”
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
— ” এই চুপ করবি? সবসময় ছ্যাচড়ামি। জিজু হয় তোদের।”
ঐশি হেসে দিয়ে বলল,
— ” বাহবা কী প্রেমরে? এতো জেলাসি কোথাথেকে আসে?”
আমি অসহায় মুখ করে বুকের বা পাশে হাত দিলাম। ওরা হেসে দিলো। অনেকটা সময় কেটে গেল। প্রোগ্রাম প্রায় শেষের দিকে। হঠাৎ করেই দেখলাম আদ্রিয়ান উঠে কোথাও একটা গেল। আমি ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম,
— ” এই চলতো গিয়ে দেখি ও কোথায় গেল।”
বলে উঠে গেলাম, ওরাও এলো আমার সাথে। হঠাৎ একটা ছেলের সাথে ধাক্কা লেগে ওর বোতলের জুস আমার গায়ে এসে পরলো। আমি কিছু বলার আগেই চলে সে গেল। কী আর করার ওদের ওখানে দাঁড়াতে বলে মনের মধ্যে একগাদা বিরক্তি নিয়ে চলে গেলাম ওয়াসরুমে।সবাই ওডিটোরিয়ামের দিকে। আর ওখান থেকে ওডিটোরিয়াম অনেকটা দূরে তাই কেউ নেই এখানে। ওখানে গিয়ে ক্লিন হয়ে বেড়োনোর সাথে সাথে হঠাৎ কেউ আমার মুখ চেপে ধরল। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার মুখ চেপে ধরে রেখে আমাকে টেনে একটা ফাঁকা রুমে নিয়ে একপ্রকার ছুড়ে মারল। ফ্লোরে হুমরি খেয়ে পরে ব্যথায় চোখমুখ কুচকে ফেললাম আমি। অন্ধকার রুমটাতে আবছা আলোতে চারজন লোকের অবয়ব স্পষ্ট। আর তাদের পোশাকের ধরণ দেখে আমার বুঝতে একটুও দেরী হলোনা এরা কারা। আর সেটা বুজতে পেরেই ভয়ে হাতপা ঠান্ডা হয়ে গেল আমার।
#চলবে..