#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_05
কান থেকে ফোন টা নামিয়ে ফিক করে হেঁসে দিলো পূর্ণা , এমন নয় যে পূর্ণা বুঝতে পারে নি যে লোকটা মিথ্যে বলছে কিংবা কথা ঘুড়ানোর চেষ্টা করছে , তবে যায় হোক লোকটার কথা খারাপ লাগে নি তার ,
” কি হয়েছে হাসছিস কেন ? ”
ইলমির কথায় পূর্ণা ইলমির দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলল ,
” আবব কিছু না , তো তুই তো বললি না এত সকাল সকাল সঙ সেজে আমার বাসায় কি করছিস? ”
ইলমি হাত দিয়ে সপিং ব্যগ টাকে কাছে টেনে খুলতে খুলতে বলল ,
” কাল কি বলেছিলাম মনে নাই তোর ? যায় হোক মনে না থাকলেও আমার কিছু করার নাই , তোকে আবার মনে করিয়ে দিচ্ছি আজ পহেলা ফাল্গুন , পহেলা বসন্ত , বসন্ত বরণ অনুষ্ঠান হবে জা’বির ক্যাম্পাসে আর অফিস শেষে তুই আর আমি যাবো , বিশাল অনুষ্ঠান হয় ওখানে ”
পূর্ণা চোখ ছোট ছোট করে ইলমির দিকে তাকিয়ে আছে , ইলমি শপিং ব্যাগ থেকে বাসন্তি রঙের সাড়ি , সাদা রঙের ব্লাউজ , মাথার খোঁপায় লাগানোর মতো বেলি ফুলের মালা আর হাতে বাধার জন্য রজনীগন্ধার গাজরা , গলায় আর কানের জন্য ছোট্ট পাথরের ইয়ারিং আর চেইন হাতে ম্যাচিং রেশমি চুড়ি ,
” এগুলো আনলি কেন ? ”
জিনিস গুলো বিছানায় সাজিয়ে রাখতে রাখতে ইলমি বলল ,
” জিনিস গুলো নিশ্চয়ই বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘরে সাজিয়ে রাখার জন্য আনি নি , আর তুই ই তো কালকে বললি তোর বাসন্তী রঙের সাড়ি নাই তাই নিয়ে আসলাম এখন তো আর বলতে পারবি না যে তোর সাড়ি নাই ”
ইলমির কথায় পূর্ণা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল ,
” দেখ ইলমি কাজটা কিন্তু তুই একদম ঠিক করিস নি , এত গুলো টাকা নষ্ট করার কোন মানে ই হয় না ”
” এই এই পূর্ণ তোকে কে বলেছে রে টাকার হিসেব করতে , আমার টাকা আমি ঢেরর বুঝবো তোকে আমার টাকা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না , যা তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে আয় তো , অফিস টাইম হয়ে গেছে প্রায় ”
পূর্ণা আর কিছু বলল না কারণ সে জানে এই মেয়ে কে কিচ্ছু বলে লাভ নাই উল্টো একটা কথার বদলে দশ টা কথা শুনাবে
পূর্ণা ফ্রেস হয়ে আসলে ইলমি পূর্ণা কে সাড়ি পড়িয়ে রেডি করে দিয়ে গলায় আইডি কার্ড ঝুলিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো ,
____________________
” আজ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে মিহু , একদম আমার স্বপ্নের রাজকন্যা , গড প্রমিস একদম হুর পরী লাগছে , চোখ ফেরানো দায় হ’য়ে যাচ্ছে ”
নিজের ডেস্কে বসে কাজ করছিলো পূর্ণা , সামনে কারো কন্ঠ শুনতে পেয়ে চোখ তুলে তাকালো ,
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মৃদুল কে দেখতে পেয়ে বিরক্তিতে নাক মুখ কুচকে গেলো তার , অনিচ্ছা সত্যেও বলল ,
” ধন্যবাদ ”
পূর্ণা বুঝতে পারে না মানুষ এতোটা ছে’চড়া কি করে হতে পারে , এতো বেহায়া যে কেউ হতে পারে মৃদুল কে না দেখলে পূর্ণা কখনোই বুঝতে পারতো না ,
” আজ কোথাও যাবে না কি মিহু ? ”
পূর্ণা ভ্রু কুচকে মৃদুলের দিকে তাকিয়ে বলল ,
” ফাস্ট অফ অল আমি মিহু নই , আমার নাম মিফতাহুল পূর্ণা , ডাক নাম পূর্ণা , মিফতাহুল ডাকলে পুরো টাই ডাকবেন নয়তো পূর্ণা , এসব হাফ নেইম আমার পছন্দ না বিশেষ করে আপনার কাছ থেকে তো না ই , আর আমাকে কেমন লাগছে সেটা আমি বাসা থেকে বের হবার আগে আয়নায় দেখে এসেছি আপনার কাছে কোন কমপ্লিমেন্ট চাই নি যেহেতু দিয়েছেন আপনার একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য ছিল তাই ধন্যবাদ দিলাম, আমরা কোথায় যাই আর না যাই সেটা আপনাকে কেন কৈফিয়ত দিতে হবে আমার ? হু আর ইউ ? নিজের কাজ নেই ? যান নিজের চরকায় তেল দেন ”
বলেই আবার ফাইল দেখায় মনোযোগ দিলো পূর্ণা ,
” মিহু তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো ! ”
পূর্ণা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল ,
” ইট’স মিফতাহুল নট মিহু আর মান আছে আপনার ? মান থাকলে না অপমান করবো , আপনার তো মান ই নেই , আত্ম সম্মান যদি বিন্দু পরিমাণ থাকতো তাহলে এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতেন না ! আর কাকে কি বলি আমি ! ”
” পূর্ণা! ”
” সে যায় ই হোক না কেন , আপনি কি আর কিছু বলবেন ? না বললে যান নিজের কাজে যান অযথা কাউকে ডিস্টার্ব করবেন না মিস্টার মৃদুল , আর আমি এখন বেরুবো , আমার কাজ শেষ আপনার কোন কাজ থাকলে করতে পারেন আর না থাকলে আমার ডেস্ক টা বেশ ময়লা হয়েছে , চাইলে পরিষ্কার ও করে দিতে পারেন , আমি ডোন্ট মাইন্ট ”
বলেই পূর্ণা বাকা হাসি দিয়ে বাইরে বের হয়ে আসলো , বাইরে এসে দেখে খুব অল্প স্বল্প মেম্বার ই আছে অফিসে , বেশির ভাগ ই চলে গেছে , এই পহেলা ফাল্গুন এ হয়তো কেউ নিজের প্রিয় মানুষ টার সাথে সময় কাটাতে ব্যস্ত আবার কেউ ভালোবাসার মানুষ এর সাথে দিনটি উদযাপন করতে ব্যস্ত কেউ কেউ আবার নিজের পরিবার কে নিয়ে এই রঙিন শহরে ঘুরতে ব্যস্ত ,
পিছনে থেকে হাতে টান পরাই পূর্ণা পিছনে তাকালো , ইলমি ভ্রু কুচকে তরা দিকে ই তাকিয়ে আছে ,
” কি হয়েছে তোর এমন রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন ? ”
পূর্ণা ক্ষীণ কন্ঠে বলল ,
” না তেমন কিছু না ”
” মন খারাপ ? ”
” আমার আবার মন খারাপ ! মন আছে এটাই অনেক সেটা খারাপ করার সামর্থ নেই ”
ইলমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
” তোর এই ফালতু প্যাচাল শেষ হলে বল বেরুবো আমরা ”
” হুম চল ”
পূর্ণা আর ইলমি অফিস থেকে বের হয়ে একটা রিকশায় উঠলো , প্রায় মিনিট পনেরোর মাঝে ই রিকসা এসে থামলো জা’বির গেইটের সামনে ,
রিকসা ভাড়া মিটিয়ে ইলমি বলল ,
” দোস্ত তুই এই দিকটাই একটু দাড়া আমি এই যাব আর এই আসবো ”
পূর্ণা হাতের রজনী গন্ধার গাজরা ঠিক করতে করতে বলল ,
” ঠিক আছে যা তবে তাড়াতাড়ি আসবি কিন্তু ”
কথাটা বলেই পূর্ণা সামনে তাকিয়ে দেখে ততক্ষণে ইলমি উধাও ,
প্রায় পনেরো মিনিট হতে চলল এই ইলমির আসার নাম গন্ধ নেই , পূর্ণা ঘাড় ঘুরিয়ে জা’বির গেইটে র দিকে তাকালো ,
ভেতরে বেশ জাক জমক পূর্ণ সেটা কোলাহল দেখে ই বোঝা যাচ্ছে , পূর্ণা গেটের দিকে হাটতে লাগলো ,
পূর্ণার মনে হচ্ছে চুলের খোঁপা টা ঢিলে হয়ে গেছে কিছু ক্ষনের মাঝে ই খুলে পড়বে , চুল তো আর কম না কোমড় ছাড়িয়ে সামলানো খুব কষ্ট নেহাত লম্বা চুল প্রিয় নয়তো কবেই বয়কাট দিয়ে ফেলতো ,
পূর্ণা চুল থেকে বেলি ফুলের মালা টা খুলে আলগোছা চুল গুলো এক হাতে খোপা করতে করতে সামনে এগুলো ,
হঠাৎ পিছন থেকে কেউ দৌড়ে এসে পূর্ণার কাঁধে র সাথে ধাক্কা লাগতেই পূর্ণা পরতে পরতে বেচেছে কিন্তু হাতে থাকা বেলি ফুলের মালা টা নিচে পরে গেছে , পূর্ণা চোখ তুলে তাকালো সামনের দিকে , ছেলেটা বেশ কিছু টা দৌড়ে গিয়ে হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে জোরে বলল,
” সরি আপু , আ’ম রিয়েলি সরি , আসলে পিছনে থেকে দৌড়ানি দিয়েছে তো তাই খেয়াল করি নি ”
, মাস্ক পড় ছিলো বলে কথাটা বুঝতে খানিক সেকেন্ড সময় লাগলো ,ছেলেটি আবার সামনের দিকে তাকিয়ে দৌড় দিতে যাবে হঠাৎ কোন একটা কারনে সেখানে ই থেমে গেলো
পিছনে থেকে ছেলেটার নাম ধরে কেউ দৌড়ে আসছে, পূর্না পিছনে তাকাতে যাবে অমনি কেউ দৌড়ে এসে পূর্ণার উপর পড়লো পূর্না টাল সামলাতে না পেরে লোকটাকে নিয়ে ই নিচে পরে গেলো
তারপর আর কি ! সবাই ফ্রি তে বাংলা সিনামা র রোমান্টিক সিন উপভোগ করলো ,
লোকটা উপরে পূর্ণা নিচে , পূর্ণা ভ্রু কুচকে লোকটার দিকে তাকালো , মাস্ক পড়া থাকলেও লোকটার চোখ অসম্ভব সুন্দর ,
কথাটা মনে আসতেই পূর্ণা নিজের মন কে হাজার টা গালি দিলো ,
” ওয়াও ওয়াও হুয়াট অ্যা রোমান্টিক সিন ইয়ার ”
কথাটা কানে আসতেই পূর্ণা ঘাড় ঘুরিয়ে সেদিকে তাকালো , সেই মাস্ক পড়া ছেলেটা হাতে মোবাইল দিয়ে বিভিন্ন এঙ্গেল এ ছবি তুলছে , চারপাশে বেশ ভীড় জমে গেছে কিন্তু পূর্ণার সাথে লেপ্টে থাকা লোকটার উঠার কোন নাম গন্ধ নেই ,
” এই যে মিস্টার কানা , আই নোও আমি কিউট একটা মেয়ে তাই বলে পাবলিক প্লেসে এভাবে লেপ্টে থাকার কোন মানে ই হয় না , আর মানুষ না তো যেন একটা আস্ত হাতি , ও মা গো আমার কোমড় শেষ ! আরে উঠুন উঠুন সবাই কে কি বাংলা সিনামা র রোমান্টিক সিন দেখানোর সখ হয়েছে না কি ”
পূর্ণার কথাটা কানে যেতেই লোকটা পূর্ণার কানে র কাছে কিছু টা ঝুকে ফিসফিস কন্ঠে বলল,
” আপনার ভাগ্য ভালো মিসস , বাংলা সিনামা র রোমান্টিক সিন দেখাচ্ছি , যদি কোরিয়ান সিনামার রোমান্টিক সিন দেখাতাম তাহলে …
বলেই লোকটা ভ্রু বাকিয়ে উঠে বসলো ,
আর পূর্ণা চোখ বড় বড় করে লোক টার দিকে তাকালো , কতটা নির্লজ্জ হলে মানুষ পাবলিক প্লেসে একটা অচেনা মেয়েকে এ কথা বলতে পারে , পূর্ণা ক্ষীণ কন্ঠে বলে উঠলো ,
” অসভ্য ”
লোকটা খানিকটা শব্দ করে হেসে বলল ,
” আই নোওও ”
চলবে …..