#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_11
” তা আপনার বিয়ে নিয়ে কিছু ভাবছেন নাকি মন্ত্রী সাহেব ? ”
আমার কথা শুনে উনি বেশ খানিকটা নড়েচড়ে বসলেন , এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে বললেন ,
” আবাদত বিয়ে নিয়ে কিছু ই ভাবছি না , তবে সময় সুযোগ বিয়ে তো অবশ্যই করবো আর অতি শীঘ্রই আর তা হলে মিডিয়া তে অবশ্য ই জানানো হবে ”
আমি মুচকি হেসে বললাম ,
” শুনলাম আপনার ভাইয়ের উপর না কি কারা আক্রমণ করেছে ইনফ্যাক্ট এক্সিডেন্ট করিয়েছে তারাই , আপনি কি কাউকে সন্দেহ করছেন ? আপনার বিরুধী দলীয় কাউকে ? ”
” না আবাদত পুলিশ তদন্তে আছে , আমি কাউকেই অযথা সন্দেহ করছি না আসলে প্রমান ছাড়া কিছু ই বলা যাচ্ছে না ”
” আচ্ছা মন্ত্রী সাহেব ধরেন , আপনাকে কেউ সাহায্য করলো তাহলে তার প্রতিদান আপনি কি ভাবে দিবেন ? ”
আমার কথা শুনে উনি খানিকটা থমকে গেলেন , ভ্রু কুচকে আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে বললেন,
” অবশ্য ই তার যে কোন বিপদে আমাকে সবার আগেই পাবে ”
” আর সেই মানুষটার সাথে আপনার বিহেভ কেমন হবে? ”
আমার কথা শুনে উনি আমার দিকে রহস্যময় ভাবে হেসে বললেন ,
” অবশ্য ই সে আমার থেকে শালিন, নম্র আর অমায়িক ব্যবহার প্রাপ্য ”
” এই ধরুন একজন লোকের আমি খুব বড় উপকার করলাম , কিন্তু বিনিময়ে সে আমার সাথে ভালো আচরণ তো করেই নি উল্টো সন্দেহ করেছে , সে লোকের ক্ষেত্রে আপনার মতামত কি হবে মন্ত্রী সাহেব ? আপনার যুক্তিতে সে কি ম্যানারলেস ? হ্যা বা না? ”
আমরা কথা শুনে তাহরিম তালুকদারের নাক খানিক টা ফুলিয়ে উঠলো হয়তো রেগে যাচ্ছে , তাতে আমার কি ? আমি তো আমার অপমানের ফায়দা উঠাবো, মনে মনে কথাটা চিন্তা করে ই ঠোঁট বেঁকিয়ে হাসলাম ,
” কি হলো বলুন মন্ত্রী সাহেব ? আপনার যুক্তিতে সে কি ম্যানারলেস ? হ্যা নাকি না? ”
উনি নাক ফুলিয়ে ই উত্তর দিলো ,
” হ্যা ”
” হুম , আসলেই সেই লোকটা ম্যানারলেস, অভদ্র , ফালতু তাই না ? ”
” হুম ”
উনি বেশ রেগে যাচ্ছে মনে হচ্ছে তাই আর কিছু বললাম না , টপিক চেঞ্জ করে বললাম ,
” তা মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার , বিয়ে করার সময় তো মিডিয়া কে জানাবেন, আর অতি শীঘ্রই আপনি বিয়ের পিরিতে বসবেন , তাহলে কি আমরা ধরে নেবো যে আপনার প্রিয় আই মিন মনের মানুষ টাকে আপনি পেয়ে গেছেন ”
আমার কথা শুনে উনি হাসলেন ,
” হুম হয়তো পেয়ে গেছি তবে আমি সিউর নই , আগে সিউর হই তারপর তাকে বলব আর সে যদি এক্সেপ্ট করে তাহলে সবাইকে ই বলব ”
আমি বেশ অবাক হয়ে বললাম ,
” আপনাকে এক্সেপ্ট করবে না ? দেশের অধিকাংশ মেয়ের হৃৎস্পন্দন থমকে দাড়ানো পুরুষ কে কেউ রিজেক্ট করবে ? এটা ভাবা যায়? আপনার কি মনে হয় ? ”
আমার কথ শুনে উনি বেশ শব্দ করে ই হেসে উঠলেন ,
” আপনি হলে এক্সেপ্ট করতেন ? ”
উনার কথায় আমি বেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাই , আমি কিছু বলবো তার আগেই উনি বলে উঠলো ,
” ডোন্ট মাইন্ড , আমি মজা করলাম আসলে সে সবার মতে নয় বলেই তো সে তাহরিম তালুকদার এর নজর কেরেছে , সে তো অধিকাংশের বাহিরে , আপনি কি ভেবে বা কি জেনে বলেছেন জানি না যে আমি অধিকাংশ মেয়ের হৃৎস্পন্দন থমকে দাড়ানোর কারণ কিন্তু আমার তো মনে হয় আমার উপস্থিতি সেই মেয়েটার ভ্রু কুচকে দেওয়ার কারণ ”
উনার কথায় আমি আবারো বেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম.
” বাহ বেশ ভালো ই মন জয় করে নিয়েছে , আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি ই আমাদের তরুণ মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার এর বিবাহের দাওয়াত পাবো , কি মন্ত্রী সাহেব দাওয়াত দিবেন না ? ”
আমার কথা শুনে উনি ঠোঁট নাড়িয়ে আস্তে আস্তে বলল যেন কেউ শুনতে না পায় ,
” নিজের বিয়ে তে কি বউ কে দাওয়াত দেওয়া যায় না কি ? এরকম কোন নিয়ম আছে না কি! জানতম না! ”
উনার মুখ নড়তে থাকায় আমি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলাম ,
” কিছু বললেন ? ”
আমার কথা শুনে উনি মুখ তুলে আমার দিকে তাকালো ,
” না বলছি , অবশ্যই সবাইকে দাওয়াত দেবো , জীবনে একবার ই তো বিয়ে করব , দাওয়াত অবশ্যই পাবেন ”
এমন বেশ টুকটাক কথা বলে প্রায় এক ঘন্টা র ইন্টার ভিউ শেষ করে উঠে দাড়ালাম ,
ক্যামেরা অফ করা হয়েছে , সোফায় গা হেলিয়ে দিলাম , বড্ড ক্লান্ত লাগছে , গা টা ও কেমন ম্যাচ ম্যাচ করছে , হঠাৎ জ্বর জ্বর লাগার কারণ টা বুঝলাম না , হয়তো সিজন চেঞ্জ তাই , কাজ তো শেষ এখন বাসায় গিয়ে বিছানায় শুতে পারলেই বাঁচি ,
অফিস থেকে বের হতেই গেইটে র কাছে এসে হঠাৎ মাথা টা চক্কর দিয়ে উঠলো, গেইট ধরে খানিকটা সময় দাঁড়িয়ে রইলাম , হঠাৎ কানের কাছে করো কন্ঠ শুনতে পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালাম ,
” বেশ তুখোড় বুদ্ধি আপনার মিস পূর্ণা ”
মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার এর কথা শুনে আমি কিছু বললাম না , আলতো হাসলাম ,
” আমি অভদ্র , ফালতু তাই না ? বেশ বুদ্ধি খাটিয়ে প্রশ্ন গুলো করেছেন, মানতে হবে মাথায় বেশিদিন গোবর থেকে থেকে কিছু টা সার উৎপাদন হয়েছে ”
এবার আমি বেশ চটে গেলাম ,
” হেই কি বললেন ? আমার মাথায় গোবর ? আমার মাথায় মোটেও গোবর না, গোবর থাকলে আপনাদের মতো ধুরন্ধর নেতাদের বাগে আনতে পারতাম না বুঝলেন ? ”
” হে সেটাই , মাথায় তো খালি শয়তানি বুদ্ধি কিলবিল করে, অন্য ক্ষেত্রে ও মাথাটা খাটাও মেয়ে ”
বলেই উনি আমার সামনে দিয়ে হনহন করে চলে গেলেন , পিছনে পিছনে তার এসিস্ট্যান্ট কুশন ,
আমি ভ্রু কুচকে উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম ,
উনি অন্য ক্ষেত্রে বলতে কি বুঝাতে চেয়েছেন ?
” কিরে আজ সারাদিন কি এভাবে ই দাঁড়িয়ে থাকবি না কি ? বল তাহলে , স্যার কে বলে তোকে সাংবাদিকতা থেকে গার্ড এ ট্রান্সফার করতে বলি ”
ইলুর কথায় আমি ওর দিকে তাকালাম , মুখ বেকিয়ে বললাম
” দরকার নেই , তোর এত ইচ্ছে করলে তুই যা , আমি এভাবে ই ভালো আছি ”
বলেই রাস্তায় হাটতে লাগলাম , আমার পিছনে পিছনে ইলু ,
কিছুদূর গিয়ে রিকসায় উঠলাম ,
আমার ভিষণ খারাপ লাগছে কিন্তু ইলুকে বলা যাবে না , মেয়েটা এমনি তেই বহুত টেনশন করে আমার জন্য আর নতুন করে টেনশন দেওয়ার মানেই হয় না.
ওকে বাসায় দিয়ে আমি আমার বাসায় চলে আসলাম , ফ্রেস হয়ে কড়া করে এক কাপ কফি বানালাম ৷ রান্না করার ইচ্ছে , মুড আর শক্তি কোন টাই নেই , কফি টা খেয়ে ঘুমাবো পরে যদি ভালো লাগে তাহলে রান্না করবো , এখন ঘুম টা বেশি জরুরি , জ্বর টা মনে হয় চলেই আসলো বলে,
মোবাইল অফ করে ঘুম দিলাম ,
বিকেল গড়িয়ে রাত নামলো কিন্তু ঘুম থেকে উঠার নাম গন্ধ নেই আমার , ওদিক থেকে কেউ একজন যে ফোন করতে করতে পাগল প্রায় সেদিকে কি কারো নজর আছে !
রাত প্রায় ১ টা , প্রচন্ড খিদে পেয়েছে সারাদিন কিছু খাওয়া নেই , কিন্তু উঠার সামর্থ্য নেই , মোবাইল টা কোথায় রেখেছি এই মূহুর্তে মনে ও পরছে না , চোখ খুলে রাখাই মুশকিল হয়ে পড়ছে , হঠাৎ বেলকনি থেকে কিছু একটা পড়ার আওয়াজ পেলাম কিন্তু গিয়ে দেখব কিভাবে ? উঠতেই তো পারছি না , ভাবলাম হয়তো ইলু , এই মেয়ে প্রায় ই এমন করে , আমার বাসাটা দোতলা ই তো , তাই প্রায় ই ও মই দিয়ে বেলকনি দিয়ে আসে তাই আর কিছু ভাবলাম না চোখ বন্ধ করলাম কিন্তু আমার মাথায় এটা তখনো আসে ই নি এতো রাতে একা একটা মেয়ে কিভাবে আসবে তাও বেলকনি দিয়ে ,
চোখ খুলে রাখতে ই পারছি না , চোখ বন্ধ করে ই মনে হলো কেউ এসেছে রুমে কড়া পারফিউমের ঘ্রান পাচ্ছি , তিন তিনটে কাথা মুড়ি দিয়ে আছি আমি তাও যেন শীত কমছে না ,
হঠাৎ মাথায় কারো ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে যেন সারা শরীর কেঁপে উঠলো ,
চোখ বন্ধ করে ই কাপা কাপা গলায় বললাম ,
” ইলু তোর হাত অনেক ঠান্ডা , হাত সরা , আর পারলে কিছু রান্না কর , সারাদিন কিছু খাই নি , খিদে পেয়েছে প্রচুর ”
আমার কথা শুনে মনে হলো কেউ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো ,
প্রায় পনেরো মিনিটের মাথায় আবার সেই পারফিউম এর গন্ধ পেলাম আমার খুব কাছে ,
কপালে ঠান্ডা কাপড়ের স্পর্শ পেয়ে নড়েচড়ে উঠলাম ,
কাপড় টা দিয়ে আমার কপাল সহ চোখ দুটো ও ঢেকে দিলো ,
মাথা টা উপরে তুলে বালিশ টা খাটের সাথে হেলান দিয়ে রেখে আমাকে ও উঠিয়ে এক হাতে জরিয়ে খাটে হেলান দিয়ে বসালো , আমি যে তখনো পুরোপুরি হুসে আছি তাও কিন্তু না , জ্বর যখন প্রচন্ড হয় তখন আমার কোন হুস ই থাকে না ,
” মুখের সামনে গরম কিছু র আভাস পেয়ে হা করলাম , খুব যন্ত সহকারে কেউ আমাকে সুপ খাইয়ে মুখ মুছিয়ে ঔষধ ও খাইয়ে আবার শুইয়ে দিলো , সব কিছু রেখে এসে পুনরায় আমার মাথার কাছে বসলো, মাথায় জল পট্টি দিতে লাগলো আমি ও ইলু ভেবে তার এক হা জরিয়ে ধরলাম , তখনো খেয়াল হলো না ইলুর হাত তো এত শক্ত থাকবে না ,
আর কিছু ই মনে নেই , আমি ঘুমিয়ে গেলাম
পরের দিন সকালে …
চলবে …