ভালোবাসা ( এক অনুভূতি)
পর্ব :১০
লেখা kashfuzjahan
অন্তরার চিকিৎসা আর নওশির ভালোবাসায় আদ্রিয়ান এখন বেশ সুস্থ। কথা বলতে পারে। নওশি সব বাদ দিয়ে এখন আদ্রিয়ানকে সময় দেয়। বাচ্চারাও এখন সবার সাথে ফ্রী, যদিও এখনো তারা জানে না আদ্রিয়ান তাদের বাবা। কারণ আদ্রিয়ানই নিষেধ করেছে। বাচ্চাদের এতো বড় ধাক্কা দেয়া ঠিক হবে না। তাদেরকে বাঙ্গালীদের সব শেখানো হচ্ছে। আর সাগর এখন জয়ের সাথে পুরা আমেরিকা ঘুরে দেখছে।
অন্যদিকে,
নিজেদের অজান্তেই দুটো মন চুরি হয়ে গেছে। আজ সন্ধ্যার আড্ডায় নিলয় কে গান গাইতে বললে সে গেয়ে ওঠে
দুটি মন আর নেই দুজনার
রাত বলে আমি সাথি হব যে
ফাগুনের রাতে আমি রুপকথা হয়ে কাছে রব যে
দুটি মন আর নেই দুজনার।
ফুল বলে রঙ্গে আর ছেয় না
পাখি বলে আর গান গেয় না
আমাদের মিতালি মায়াকে
কানে কানে কত কথা কব যে।
দুটি মন আর নেই দুজনার।
গানটা শুনে সকলে মনে মনে হেসেছিল। কারণ সবাই জানে কার মন কার কাছে নেই। তাও কিছুই বলছে না। সময়ের হাতে সব ছেড়ে দিয়েছে সবাই। আল্লাহ নিশ্চয়ই কাউকে নিরাশ করে না। সকলে তার কর্ম অনুযায়ী ফল পাবে।
রাত ১২টা ৩০,
নিলয়ের মোবাইলে একটা মেসেজ আসে।
সবাই ঘুমিয়ে পড়লে ছাদে এসো। কথা আছে।
আরশি
সবাই ঘুমানোর পর নিলয় পা টিপে ছাদে চলে যায়। আর সাথে সাথে কে যেন ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।
– উ মা গো। কোন শালারে আমাকে ফালায় দেয়( নিলয়)
– আমি বে ( আরশি)
– ওহ মহা রাণি আপনি?? তা বলুন কেন ডেকেছিলেন আমাকে?? ( নিলয়)
– ওই আমার ভাতিজা-ভাতিজি তোকে পাপা কেন বলে?? ( আরশি নিলয়ের কলার চেপে)
– ছোট থেকে আমাকে দেখেছে আমার কাছে বড় হয়েছে তাই?? ( নিলয়)
– কেন?? অন্যের বাচ্চা তোকে আব্বু কেন ডাকবে?? নিজের ক্ষমতা নাই বাচ্চা জন্ম দেয়ার ( আরশি)
– একটা সুযোগ দাও দেখায় দিব। কি আছে কি নাই ( নিলয়)
– শখ কত? সর যা ( আরশি)
– আচ্ছা ( বলেই ভদ্র ছেলের মতো নিলয় যেতে লাগল।
সাথে সাথেই আরশি নিলয়ের চুল ধরে নিজের সামনে আনে।
– ওই কই যাস তুই ( আরশি)
– আল্লাহ দেখ কি হচ্ছে। একটা মাসুম বেচাড়া পুরুষের ইজ্জত হরণ করছে এই মেয়েটা। আল্লাহ বাচাও আমাকে। ( নিলয়)
– কেউ বাচাবে না তোমাকে বাছা ধন। আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও তারপর যাইতে পারবা( আরশি)
– জি মহা রাণি বলুন( নিলয়)
– ভালোবাসিস আমায়?? ( আরশি)
– নিজের চেয়েও অনেক বেশি ( নিলয়)
– তো প্রপোজ কি তোর বাবা করবে?? ( আরশি)
– না আমি করব ( নিলয়)
– তো কর ( আরশি)
– সারাদিনের ক্লান্তি শেষে ঝগড়া করার একটা তুমি চাই। হাজার নিস্তব্ধতার মাঝে যার নিশ্বাস হবে আমার একমাত্র অবলম্বন। যার কোলে মাথা রেখে নিশ্চিতে হাজার বছর কাটাতে পারব। নো ফ্লাটিং, নো চিটিং, নো টাইম পাস। তুমি কি আমার শেষ বয়সের অবলম্বন হবে?? ( নিলয়)
– ইয়েস আই উইল ( আরশি)
আরশি কথাটা বলার সাথে সাথে নিলয় আরশি কে জড়িয়ে লম্বা একটা কিস করে দৌড় দেয়। আর আরশি?? কি হলো বুঝতে না পেরে দাড়িয়ে আছে।
অন্যদিকে,
নওশি সব দেখে বেশ খুশি হলো। কারণ আদ্রিয়ান আসার পর ও অনুতপ্ত ছিলো এই ভেবে যাতে নিলয়ের সাথে কিছু ভুল না হয়।
পরেরদিন সকালে,,
আয়ানের জন্য নতুন ইলেক্ট্রনিক গিটার নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু ঠিক ভাবে চেক করা হয় নি বলে সম্পুর্ন গিটার টাই কারেন্ট হয়ে আছে। আদ্রিয়ান সব দেখেও কিচ্ছু করতে পারছে না। এদিকে আয়ান আসছে গিটারটি নিতে।
আদ্রিয়ান অনেক চিৎকার করলেও আয়ান শুনতে পায় না। শেষে অনেক কষ্ট করে নিজের পায়ে দাড়িয়ে পরে আদ্রিয়ান। আর বাচিয়ে নেয়। তার কলিজার টুকরাকে।
চলবে???
ভালোবাসা ( এক অনুভূতি)
পর্ব :১১
লেখা kashfuzjahan
জিসানদের বাড়িতে বিচার সভা বসেছে। আসামি নিলয় আর আরশি?? কারণ নওশি সব বলে দিয়েছে সবাইকে।
– কিরে নিলয় তুই নাকি আরশি কে প্রপোজ করেছিস?? ( জিসান)
– ভাইয়া তুই কিভাবে জানলি?? ( নিলয়)
– কিভাবে জানি সেটা ব্যাপার না। জানি সেটাই ব্যাপার। ( জিসান)
– হ্যা ভাইয়া। ( নিলয়)
– ওই তুই না নওশিকে ভালোবাসিস। এতো তাড়াতাড়ি চেঞ্জ হয়ে গেলি?? শালা গিরগিটি ও তোর চেয়ে ভালো। ( জয়)
– ভাইয়া?? এসব কি বলছে দেখ ( নিলয়)
– তাই তো ভুল কি বললো?? ( জিসান)
– বেটা আমার ভাবির লগে লাইন মারা? খাড়া হাতে পাই তোরে। ( আরশি মনে মনে)
– দেখ ভাইয়া। এতোদিন ধরে নওশির সাথে থাকার পর একটা কথা বুঝেছি নওশিকে কখনো ভালোবাসি নি আমি। ছোট বেলা থেকে ওর সাথে মিশেছি তাই একটা মায়া ছিল। ভালোবাসা না। কারণ ভালোবাসা সে তো একটা অনুভূতি। কখন কার জন্য কাজ করে বলা যায় না। এতোদিন দেখেছি নওশি কিভাবে আদ্রিয়ান এর জন্য ওয়েট করেছে। সত্যি বলতে একবার হলেও আদ্রিয়ান কে আমার হিংসা হতো এটা ভেবে যে আমাকে এতো ভালোবাসার কেউ নেই কেন?? তবে অবশেষে আরশিকে পেলাম। যে আমাকে অনেক ভালোবাসে। হয়তো পরিচয় অনেকদিনের না তবে ভালোবাসা অনেক। ( নিলয়)
– তার মানে তুমি সত্যি আমার বোন কে ভালোবাস ( আদ্রিয়ান)
– জ্বি ( নিলয়)
– যাক ভালো। তাহলে এখন সালাম টা করে ফেল আফটার অল আমি তোমার বউয়ের বড় ভাই ( আদ্রিয়ান)
– ইইই আমিও নওশির বড় ভাই আগে আমাকে সালাম কর তারপর ( নিলয়)
– সালাম করলে যদি টাকা দাও তো করব এমনিও আমার চেয়ে ৪ মাসের বড় তুমি দিবা?? ( আদ্রিয়ান)
– তুই কি লুচ্চারে ভাইয়া। ( আরশি)
– আচ্ছা আচ্ছা সব ঠিক আছে। আগে বিয়ের ডেট ঠিক করি। তারপর সব হবে। ( জিসান)
– কার বিয়ে গো মামু?? ( আয়ান আর নোয়া)
– তোমার বাবা আবার বিয়ে করবে সোনা। ( জয় মুচকি হেসে)
– কিিিি পাপাই তুমি আবার বিয়ে করবা?? ( নোয়া)
– না মানে ইয়ে ( নিলয়)
– আসলে কি বলোতো সোনা তোমার পাপার কাছে তোমার মাম্মা পুরানো হয়ে গেছে। তাই আাবার বিয়ে করছে ( জয় নোয়াকে কোলে নিয়ে)
– কিহ্ আমার মাম্মাম পুরাতন হয়েছে?? তুমিই পুরাতন হয়েছো। আমি আবার মাম্মাম কে বিয়ে দিয়ে আর একটা পাপাই আনব যাও তুমি (আয়ান)।
– এই নাহলে আমার ছেলে। পুরাই রকেট। আগায় যাও সোনা। ( আদ্রিয়ান মনে মনে)
– এখনি ছেলে খুজ আজই। আচ্ছা আঙ্কেল তুমি আমার মাম্মাম কে বিয়ে করবে?? ( আয়ান সাগরের কাছে গিয়ে)
– ইয়ে, মানে বাবাই সোনা তোমার মাম্মাম কে তো বিয়ে করতামই কিন্তু আমার তো একটা বউ আছে, আবার বিয়ে করা যায় বলো?? ( সাগর)
– আদ্রিয়ান আঙ্কেলের তো বউ নেই তাহলে উনিই আমার নিউ পাপাই হবে। কি বলিস আায়ান ( নোয়া)
– হ্যা রে আমি না ভেবেই দেখিনি। আঙ্কেল তুমিই আমার নিউ পাপাই হবে। নিলয় পাপাই বাদ। ( আয়ান)
– ঠিক আছে কিন্তু৷,,,,,,,
– কোনো কিন্তু না। রাজি না হলে কিন্তু আড়ি তোমার সাথে। ( আয়ান)
– আরে আরে আমি তো রাজি। কিন্তু তোমার মাম্মাম মানবে তো?? ( আদ্রিয়ান)
– মাম্মাম কে আমরা রাজি করাব। বলেই নওশির কাছে যায়।
ও মাম্মা প্লিজ ভালো আঙ্কেল কে আমাদের পাপাই বানাও না প্লিজ মাম্মা প্লিজ। ও মাম্মাম প্লিজ। নিলয় পাপা দেখ কি করল। এখন আমাদেরও আর একটা পাপা চাই। প্লিজ৷ ( নোয়া আদ্রিয়ান এক সাথে)
– ওকে ওকে। তোমার মামুকে ডেট ফিক্সড করতে বলো ( নওশি)
– ইয়েেেে আমরা নিউ পাপা পেয়েছি। দেখ নিলয় পাপা ওপস নিলয় আঙ্কেল আমাদের নিউ পাপা। ( আদ্রিয়ান)
– ভাগ্য যে কার সাথে কোন খেলা খেলে বোঝা মানুষের কাজ নয় ( নিলয় মনে মনে)
রাতের বেলা নিস্তব্ধ আাকাশের নিচে বসে আছে নিলয় আর আরশি। অন্য দিকে ছাদে বসে আছে আদ্রিয়ান আর নওশি।
– জানো আদ্রিয়ান। যখন জানলাম তুমি আর নেই আমি সুইসাইড করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ভাই যখন আমাকে হাসপাতালে নেয় জানতে পারি আমি প্রেগনেন্ট। তোমার সেদিনের ছোয়া আমাকে পূর্ণতা আর বেচে থাকার সাহায্য করেছে। সাথে ছিলো ভাই এরা আর নিলয়। নাহলে কবে মারা যেতাম ( নওশি)
আদ্রিয়ান নওশির মুখে হাত দেয়
– ছিঃ এসব বলতে নেই। এসব কেন করেছো তুমি। তোমার জীবন বাচাতে এতো কষ্ট করলাম। আর তুমিই পাগলামি করছো। ( আদ্রিয়ান)
– কি করব বলো। মাথার ঠিক ছিলো না। ( নওশি)
– আচ্ছা ওসব ছাড়ো। পুরানো কথা বাদ এখন অনলি রোমান্স
বলেই নওশিকে জড়িয়ে ধরে আদ্রিয়ান
নিচে,,,
– বাবু ( আরশি)
– উমমম
– ওই বাবুই ( আরশি)
– হুমমম
– হারামি তোর খুব শখ আমার ভাবির সাথে লাইন মারার তাই না। দাড়া দেখাচ্ছি তোকে বলেই এলো পাথাড়ি মারতে শুরু করে নিলয় কে।
বেচাড়া নিলয়। সব সহ্য করা ছাড়া উপায় নেই কারণ মেয়েরা স্বামীর ভাগ কাউকে দেয় না.
চলবে???