ভালোবাসা ( এক অনুভূতি)
পর্ব ৭
লেখা kashfuzjahan
প্রায় ৮ ঘন্টা পর জ্ঞান ফেরে আদ্রিয়ানের। চোখ মেলে প্রথমেই নওচির খোজ করে সে। ডাক্তার বাইরে এসে জিসান কে আদ্রিয়ানের জ্ঞান ফেরার কথা বলে। শোনার সাথে সাথে তারা ভিতরে যায়,,,
– কেমন আছো আদ্রিয়ান?? ( জয়)
– মাইরটা একটু বেশি পরছে তাই কোথাও কোথাও ব্যথা করছে বাকি সব ঠিক আছে ( আদ্রিয়ান)
– সরি ইয়ার আসলে বুঝতে পারি নি। বুঝই তো এক মাত্র বোনের ব্যাপার ( জিসান)
– ব্যাপার না ভাইয়া। শ্বশুর বাড়ি থেকে পাওয়া প্রথম গিফট হিসেবে রেখে দিলাম নাহয় ( আদ্রিয়ান)
– আচ্ছা একটা কথা বলো নওশির কি আগে থেকেই সব মনে ছিল? তাহলে আমাদের বলে নি কেন?? (জিসান)
– না ভাইয়া আগে থেকে মনে ছিল না। এতোদিনে একসাথে ঘোরার সময় একটু একটু মনে পরেছে। পরে যখন আমাকে মারছিলেন তখন ওর সম্পুর্ন টা মনে পরে যায়। তাই আমিও মারার সময় বাধা দেই নি। ওর মনে পরেছে এটাই অনেক মারা গেলেও আর কষ্ট ছিল না আমার ( আদ্রিয়ান)
– অনেক ভালোবাস আমাদের বনুকে তাই না?? (জয়)
– জীবনের চেয়েও বেশি ( আদ্রিয়ান)
এই দিকে জিসানের মাথায় চিন্তার ভাজ। কারণ একদিকে আদ্রিয়ান অন্য দিকে নিলয়। কার প্রতি বিচার করবে সে? দুজনেই ভালোবাসে নওশি কে। এমন সময় জিসানের মোবাইলে একটা কল আসে।
– স্যার কিছু লোকজন এসে আমাদেরকে মেরে নওশি ম্যাম কে তুলে নিয়ে গেছে ( গার্ড)
– কি বলো। তোমরা কি করছিলে আর নিলয় কোথায়? ( জিসান)
– আসলে স্যার নিলয় স্যার এর একটা কল আসায় সে বেড়িয়ে যায়। তখনি লোক গুলো আসে। ( গার্ড)
– আমরা এখনি আসছি। আর চিন্তা করো না আমরা ডাক্তার নিয়েই আসব। ( জিসান)
মোবাইল রেখে জয়কে নিয়ে বেড়িয়ে যায় জিসান। আদ্রিয়ান কে কিছুই বলে না। কারণ ও এমনি অসুস্থ। নওশির কথা শুনলে আরও উত্তেজিত হবে যা ওর জন্য একদমই ঠিক না।
জিসানের মুখ দেখে চিন্তা বুঝতে পারে আদ্রিয়ান। কোনো কিছু হয়েছে কি?? নওশি ঠিক আছে তো?? ভাবতেই কলিজা কেপে ওঠে তার।
জিসান আর জয় পৌছানোর পরেই নিলয় চলে আসে। চিঠিটা খুলে দেখে সেখানে লেখা।
নিজেদের বোনকে বাচাতে চাইলে নিচের ঠিকানায় চলে আসুন।
ইতি
প্রত্যয়
চিঠি পেয়ে সাথে সাথেই তারা বেড়িয়ে পরে। কিছুক্ষণের মধ্যে পৌছে যায় গুদাম ঘরে। দরজায় যেতেই প্রত্যয়ের লোকেরা তাদের হাত বেধে ফেলে।
– ওয়েলকাম, ওয়েকাম শালা বাবুরা ( প্রত্যয়)
– তুই আমাদের বোন কে কেন এনেছিস?? কি শত্রুতা আমাদর সাথে তোর ( জিসান)
– কোনো শত্রুতা নেই। আমার শত্রু তো আদ্রিয়ান, আর ওর প্রাণ তোমাদের বোন। তাই আর কি ( প্রত্যয়)
– কিন্তু আমরা তো তোমাদের কে অনেক ভালো বন্ধু ভাবতাম। সেটা কি? ( জিসান)
– বন্ধু?? ইজ মাই ফুট। আমার জিবনের সব কিছু কেড়ে বন্ধু হতে এসেছে? ( প্রত্যয়)
– মানে??
– ছোট বেলায় ওকে বাচানোর জন্য আমার বাবা মারা যায়। এরপর থেকে যখন যা আমার পছন্দের ছিল সব ওই নেয়। এমনকি নওশিকেও আমি আগে ভালোবপসেছিলাম তাকেও নিলো (প্রত্যয়)
– এটা ভাগ্যর ব্যাপার। ( নিলয়)
– হ্যা ভাগ্যই বটে। কতবার মারার চেস্টা করলাম। কিন্তু ও বেচে যাবেই। প্রথমে গাড়ি চাপা দিয়ে মারতে চাইলাম নওশি বাচালো। নওশিকে কেড়ে নিয়ে তিলে তিলে মারতে চাইলাম সাগরের জন্য বেচে গেল। আর আপনাদের দিয়েও কাজ হলো না( প্রত্যয়)
নিলয় কিছু করতে যাবে তার আগেই দেখল সাগর চুপি চুপি ভিতরে প্রবেশ করছে। তাই চুপ হয়ে যায়।
– কিন্তু অনেক হয়েছে আজ আর না। আজ নওশিকে মেরে ওর তিলে তিলে মরার ব্যবস্থা করব। বলেই গুলি করে নওশি কে।
সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে সবাই। চোখ খুলে দেখে নওশির সামনে পরে আছে আদ্রিয়ান।
কি ভাবছেন ও কোথা থেকে এলো??
জয় আর জিসান বেরোনোর পর নিজের মন কে কিছুতেই শান্ত করতে পারছিলোনা আদ্রিয়ান। তাই হসপিটাল থেকে চুপি চুপি বেড়িয়ে আসে সে। জিসান দের বাড়ির দিকে যাওয়ার সময় সাগরকে নিয়ে রওনা দেয়। পরে গার্ড এর কাছ থেকে সব শুনে এখানে আসে।
এতোক্ষণে হাত খোলা পেয়ে আদ্রিয়ানের দিকে দৌড়ে চলে যায় জয়, জিসান আর নিলয়। অবস্থা ভালো না দেখে প্রত্যয় পালানোর চেস্টা করলে সাগর ধরে ফেলে.
– তুমি এটা কেন করলে আদ্রিয়ান কেন ( জিসান)
– বলেছিলাম বা ভাইয়া ওকে জিবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসি। তাই ওকে বাচাতে আমার জিবনকে দিয়ে দিলাম। ( আদ্রিয়ান)
– এটা কেন করলে তুমি। এখন কি হবে আমার? ( নওশি)
– কথা দিয়েছিলাম জিবনের শেষ পর্যন্ত পাশে থাকব। আমি আমার কথা রেখেছি। বাকি সময় টা নিলয় তোমাকে সামলাবে। কি নিলয় পারবে না??
– হ্যা, কিন্তু,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
কিছু বলার আগেই তারা বুঝতে পারে আদ্রিয়ান চলে গেছে তাদেরকে ছেড়ে না ফেরার দেশে।
ভালোবাসা (এক অনুভূতি)
বোনাস পার্ট ২
লেখা: kashfuzjahan
৭ বছর পর
-মাম্মা মাম্মা হোয়ার ইজ আয়ান’স পাপা?? মাম্মাাাা ( আয়ান)
– তোমার পাপা তো এখানেই কোথাও আছে খুজে দেখ আমাকে জ্বালাবা না ( নওশি)
– এভরিবডি ফরগেট মাই বার্থডে। মামুই কই তুই মামুইইই (আয়ান)
– আাহারে এই ছেলেটাকে কই থেকে আনছে। এতো চিল্লায়। নওশি সত্যি করে বল তো এটা কি আমাদের বাড়ির ই ছেলে নাকি কুড়ায় আনছিস ( জয়)
– আমারও একই প্রশ্ন বুঝলি? আমাদের কারোর মতো হয় নি ( জিসান)
নওশি শুধু ওদের কথা শুনছে আর হাসছে। আর আমাদের ছোট্ট আয়ান গাল ফুলান বসে আছে। মনে হচ্ছে শ্রাবনের ধারা শিঘ্রই বর্ষিত হবে।
– তোমরা আমার ছেলের সাথে কি শুরু করেছো শুনি?? বকা দিব সবাইকে(নিলয়)
– পাপাই তুমি চলে আসছ দেখ এরা আমার সাথে কি করতাছে। দে আর ভেরি ব্যাড পাপাই। বলেই কান্না শিরু করে দিলো।
– হ্যা ওরা তো পচাই। আমরা দুজনে মিলে ওদেরকে মাইর দিব। তারপরও ও আমার সোনা বেটার কান্না করা যাবে না বুঝলে ( নিলয়)
কথাটা বলেই দুজনে জিসান আর জয়ের পিছনে ছোটা শুরু করলো। নওশি ল্যাপটপে কাজ করতে করতে দেখল আয়ান দেখতে ঠিক আদ্রিয়ানের মতোই হয়েছে।
নাক, চোখ, মুখ সব কিছুই যেন আদ্রিয়ান। আর নোয়া সম্পুর্ন নওশির মতো দেখতে ব্যবহার সৌন্দর্য সব। কিন্তু সে কোথায়। কথাটা মনে হবার সাথে সাথেই
– নোয়া মামুনি কই তুমি?? একবারও যে মাম্মাম এর কাছে এলে না আজ। ( নওশি)
– আসছি মাম্মাম। বলেই ছোট্ট একটা পরী নেমে এলো।
– কি হলো বেটা আজ তো আয়ানের সাথে সাথে তোমারও জন্মদিন। আয়ান এতো মজা করছে তুমি করবা না?? ( নওশি)
– করব মাম্মাম। কিন্তু কাল যে স্কুলের প্রোজেক্ট জমা দিতে হবে। আমারটা শেষ। কিন্তু আয়ান তো আর করবে না তাই ওর টা করছিলাম। ( নোয়া)
– এই হলো আমাদের বাড়ির মেয়ের কথা। আগে পড়াশোনা তারপর সব। নওশিও এমন ছিল। আজ শিওর হয়ে গেলাম আয়ান কে কুড়ায় পাইছিস ( জয়)
– ভাই আর একবার আমার ছেলেকে কিছু বললে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়ে যাবে বলে দিলাম। আর আম্মাজান আপনার পড়াশোনা কি আজ শেষ হবে?? হলে আমরা ঘুরতে যাই। ( নিলয়)
– ইয়েয়েয়ে আমরা ঘুরতে যাব ( আয়ান, নোয়া এক সাথে)
– নিলয় তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল আসবে একটু আমার সাথে ( নওশি)
– হ্যা বলো ( নিলয়)
– তোমাকে কতবার বলেছি ওদের কে মাথায় না তুলতে। ওদেরকে বাবা ছাড়াই থাকতে হবে। কারণ আসলেই তো ওদের বাবা নেই ( নওশি)
– দেখ আদ্রিয়ান চলে যাওয়ার সময় তোমার দায়িত্ব আমাকে দিয়েছিল। আর তখন ও বা আমরা কেউই জানতাম না নোয়া আর আয়ানের কথা। আমি শুধু আমার কথা রাখছি। তোমার কাছে তো আসি না। ওদের থেকেও দুরে রাখবা? আদ্রিয়ান হলে এটা করতে পারতা?? ( নিলয়)
– তবুও আমাদের জন্য তুমি নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট করবে তা আমি কিছুতেই মানতে পারব না। ( নওশি)
– সেটা আমার ব্যাপার তোমাকে ভাবতে হবে না। আসি ( নিলয়)
in Bangladesh
-দেখ ভাই আজকের বিকালটা কতো সুন্দর না। রোদের আনা গোনা তেমন নেই। বাগানে ফুল ফুটেছে। খুব মজা লাগছে। আগের তুই হলে দোলনায় দুলতাম একসাথে। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল। তোর এই অবস্থা। বাবা- মাও চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে। আমি যে বড্ড একা ভাই। ( বলই কান্না শুরু করে আরশি)
কিছুক্ষণ পর সে খেয়াল করে তার মাথায় কেউ হাত বুলায় দিচ্ছে। তার উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ মুছে উঠে দাড়িয়ে পরে আরশি।
– কিরে আবার কাদছিস?? এতো কান্না করলে হবে বল?? স্ট্রং হতে হবে না? ( সাগর)
– কি করব ভাই? একা আর কিছু সহ্য করতে পারছি না। যাইহোক ওর কোনো খোজ পেলে?? ( আরশি)
– নারে ৭ বছর ধরে ওকেই খুজছি। একরাতের মধ্যে কই যে গেল আল্লাহ জানে। ( সাগর)
– আল্লাহ জানে কি হবে?? শুধু কষ্ট হয় তোমার কথা ভেবে। বিনা স্বার্থে আমাদের জন্য কতো কিছু করছো তুমি। এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যায় ( আরশি)
– একা কই। তুই তো সব দিয়ে সাহায্য করিস। যাই হোক দেখ তোর ভাবী কি পাঠিয়েছে তোর জন্য। তোর পছন্দের পরোটা আর গরুর গোশ ভুনা। ( সাগর)
– হুম। এখন তো তোমরাই আমার সব। নাহলে অনাথের মতো পড়ে থাকতাম।( আরশি)
– পাগলের মতো কথা বলিস না। খেয়ে নে। ওকে খাইয়েছিস?? ( সাগর)
– হ্যা চিকেন স্যুপ খাইয়েছি। ( আরশি)
in u.s.a
– ও পাপা আজ তুমি আমার সাথে ঘুমাও না পাপা প্লিজ ( আয়ান)
– একটা গল্প বলবে পাপাই ( নোয়া)
– আজ না বেটা। আজ অনেক ক্লান্ত। অন্যদিন। আজ বরং তোমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেই তোমরা ঘুমাও ( নিলয়)
– ওকে পাপা ( নোয়া আর আয়ান একসাথে)
– তোমাকে দেয়া কথা কি রাখতে পেরেছি আমি আদ্রিয়ান?? আমি আামার সবটুকু দিয়ে ওদের ভালো রাখার চেষ্টা করছি। তাই তো সব ছেড়ে আজ ওদের জন্য এখানে। তুমি খুশি তো?? যেখানেই থাক ভালো থেকো ( নিলয় মনে মনে)
এমন সময় নওশি ওই রুমে প্রবেশ করে।
– নিলয় জেগে আছো? কথা ছিলো তোমার সাথে ( নওশি)
– হ্যা বলো কি বলবে ( নিলয়)
– আসলে তখনকার ব্যবহারের জন্য সরি। আমার বাচ্চারা দিন দিন তোমার উপর ডিপেন্ড করতেছে। আগেই আমাদের জন্য সব ছেড়ে এসেছো। চাইনা আমাদের জন্য তোমার আর কোনো ক্ষতি হোক। ( নওশি)
– আমার কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। আমি নিজের মতো ভালো আছি। এতো ভাবতে হবে না ( নিলয়)
– তারপরও,,,,,,,,,,
– একদম চুপ। আর ডিস্টার্ব করিও না ঘুমাব। ( নিলয়)
– আর ইউ শিওর ( নওশি)
– ইয়াহ আই এম। এখন ঘুমাইতে দাও। ( নিলয়)
– ওকে ঘুমাও গুড নাইট ( নওশি)
– গুড নাইট ( নিলয়)
চলবে???