ভালোবাসা ( এক অনুভূতি)
পর্বঃ ৩
পরেরদিন সকাল বেলা উঠে আদ্রিয়ান ডাকতে থাকে মেয়েটিকে।
– জংলি বিড়াল ওই জংলি বিড়াল কই তুই ( আদ্রিয়ান)
কোনো সাড়া না পেয়ে ওর রুমের দিকে যায়। গিয়ে দেখে ঘুমিয়ে আছে সে। গায়ে হাত দিয়ে ডাকতে গিয়ে দেখে বেশ জ্বর। ভালো করে খেয়াল করে দেখল কপাল আর কনুই থেকে রক্ত ঝরেছে। চোখ- মুখ দেখে বোঝা যায় সাড়া রাত অনেক কান্না করেছে মেয়েটা। নিজের উপরেই রাগ হচ্ছে এখন আদ্রিয়ানের। কেন এমন ব্যবহার করতে গেল। ওই রাতের ঘটনায় তো মেয়েটার কোন দোষ ছিল না। ধরতে গেলে ওর নিজের দোষ ছিল। নেশা করে নিজেকে সামলাতে পারেনা তো কি দরকার ছিল নেশা করার।
বেশ কিছুক্ষণ বসে থেকে রান্না ঘরের দিকে যায়। দেশের বাইরে থাকার দরুন রান্নাটা বেশ ভালই পারে। রান্না করে এসে মেয়েটিকে ডেকে তোলে। ঔষধ খাইয়ে বাইরে যাবে এমন সময় মেয়েটি আদ্রিয়ানের হাত টেনে ধরে।
– আপনি আমাকে জংলি বিড়াল কেন বলেন?? আমি কি জংলিদের মতো দেখতে?? ( মেয়েটি)
আদ্রিয়ান এবার মেয়েটির দিকে ভালো করে তাকালো। কোনো দিক দিয়েই মেয়েটি পাহাড়িদের মতো না। বরং সে যেন এক মায়া পরী।
– কি হলো বলছেন না কেন আমি কি জংলিদের মতো??( মেয়েটি)
– না মানে ইয়ে আসলে আমি তো তোমার নাম জানি না( আদ্রিয়ান)
এবার মেয়েটা বেশ শব্দ করেই হাসল,,
– আজ থেকে ২২ দিন ১৪ ঘন্টা ২১ মিনিট একটা মেয়ের সাথে আছেন আর তার নাম জানেন না?? আজব মানুষ( মেয়েটি)
– ইয়ে,, জানি না তো কি হয়েছে। তুমিও তো বলো নি ( আদ্রিয়ান বেশ রেগে)
– সারাদিন জংলি বিড়াল বলে ডাকলে নাম বলব কখন। আচ্ছা ঠিক আছে, আমার নাম নওশি।
– বাহ বেশ নাম তো প্রেমে পড়ার মতো। কিন্তু যদি একটু স্মার্ট আর পড়াশোনা জানা হতো বেশ ভালো হতো। নেভার মাইন্ড, সব শিখায় নেব ( আদ্রিয়ান মনে মনে)
– কি বিরবির করছেন। গালি দেয়ার হলে জোড়ে বলুন। মনে মনে গালি দেয়ার কি আছে?? ( নওশি গাল ফুলিয়ে)
এবার আদ্রিয়ান জোরে হেসে ওঠে। অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বলে আরেব্বাস জংলি বিড়াল দেখি রাগও করে।
– আম্মুউউউউউ কই তুমি দেখ তোমার মেয়েকে কি কি বলতাছে। ( নওশি)
– আচ্ছা থাক ঢং করতে হবে না। গাল ফুলাইলে বিড়াল কেন জানি পেচা হয়ে যায়।( আদ্রিয়ান)
– 😡😡😡😡
– আচ্ছা শোন আজ একটু আসতে দেরি হবে। তোমার কি কি লাগবে বলো?? মানে গয়না, কসমেটিক কি কি লাগবে তোমার. ( আদ্রিয়ান)
– উমমমম একটা চকলেট, একটা আইসক্রিম, আর একটা টেডি বিয়ার (নওশি)
– ইইইহ সময় মতো বিয়ে দিলে এতো দিনে বাচ্চার মা হতো। আর দেখ বাচ্চাদের মতো আবদার করছে। (আদ্রিয়ান)
– এনে দিতে না পারলে নাই। আমি নিজে চেয়েছি?? আপনি দিতে চাইলেন তাই বলছি। এতো আনতে পারবেন না বল্লেই হয় টাকা নেই। কিপ্টা, খারুস কোথাকার (নওশি)
– এই মেয়ে এতোদিন চুপ ছিল তাই একদিনে সব কথা বলতাছে। সারা জীবন কিভাবে সামলাব আল্লাহ রহম করিও তোমার এই নাদান বান্দার উপরে। ( আদ্রিয়ান মনে মনে)
অফিসের কাজ শেষ করে ফেরার সময় নওশির কথা মতো সব নিয়ে আসে আদ্রিয়ান। সব কিছু পেয়ে নওশির খুশি কে দেখে। যেন ছোট একটা বাচ্চা সে।
এদিকে আদ্রিয়ান নওশির দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। যেন এমন কোনো দৃশ্য দেখার জন্য তার এতো বছরের প্রতীক্ষা। পরের দিন নওশির জন্য নতুন বিছানা আর কিছু জিনিস এনে দেয় আদ্রিয়ান।
সেই দিনের পর আরও এক মাস কেটে গেছে। নওশি এখন আদ্রিয়ানের সব। ভালো খারাপ সব কিছু যেন নওশি। কিন্তু আদ্রিয়ান এখনো তার মনের কথা নওশি কে বলতে পারে নি। কারণ কোথাও একটা সংকোচ কাজ করে তার।
আজ তাড়াতাড়ি অফিসের কাজ শেষ করে সাগর, প্রত্যয়ের সাথে আড্ডায় বসে আদ্রিয়ান।
-ব্রেকিং নিউজ, ব্রেকিং নিউজ, ব্রেকিং নিউজ, আমাদের দি গ্রেট আদ্রিয়ান খান, যে কিনা কখনো প্রেমে পড়বে না বলেছিল সে নিজে প্রেমে পড়েছে। ( সাগর)
– ওই তুই চুপ করবি?? নাকি পাবলিক প্লেসে মারব তোকে( আদ্রিয়ান)
– কেন তুই ওকে মারবি কেন?? যেখানে তুই প্রেমে পরবি না বল্লি সেই তুই প্রেমে পড়লি তাও এক জংলি বিড়ালের ( প্রত্যয়)
– শাট আপ। ও কোনো জংলি বিড়াল না। ওর নাম নওশি। মনে থাকবে? ওর নাম নওশি।
– ওওওও নওশি?? ( প্রত্যয়, সাগর একসাথে)
– চুপ না আগে বল কিভাবে প্রপোস করব। আমি কিছিতেই পারছি না( আদ্রিয়ান)
– ওই তুই না আমার ফ্রেন্ড?? এতো ভাবিস কেন? নিজের বউকেই তো বলবি। একটা গোলাপ হাতে নিয়ে সোজা হাটু গেড়ে বলবি,, ওগো তোমাকে আমি বড্ড ভালোবাসি গো। ( প্রত্যয়)
– দুর শালা পারব না আমি। এসব হবে না আমার দারা।৷ ( আদ্রিয়ান)
– আচ্ছা তুই এখানে থাক আমাদের কেউ একজন তোর বউকে প্রপোজ করে আসি। তুই লাইভ অভিজ্ঞতা নে। পরে আবার তুই করিস( সাগর)
– ওই না, শোন, থাম। আমার বউ আমি প্রপোজ করব।যা এখান থেকে( আদ্রিয়ান)
– আচ্ছা আচ্ছা আমরা যাচ্ছি। বাসায় গিয়ে কোথাও ভুলে গেলে কল করিস মনে করায় দিব নি( প্রত্যয়, সাগর হাসতে হাসতে)
ওখান থেকে বেড়িয়ে এক গুচ্ছ গোলাপ আর কিছু বেলুন নিয়ে প্রপোজ করার উদ্দেশ্যে বাড়ির দিকে রওয়ানা দেয় আদ্রিয়ান কিন্তু মাঝ পথে একটা ট্রাক ধাক্কা দেয় আদ্রিয়ানের গাড়িকে।
চলবে??