ভালোবাসা পর্ব-০১

0
2013

ভালোবাসা – (এক অনুভুতি)
পর্ব: ১
লেখা: কাশফুজ্জাহান

মাটিতে হাটু গেড়ে বসে আছে আদ্রিয়ান। সামনে ৩জন ছেলে পিস্তল হাতে দাড়িয়ে আছে। আর তার কিছুটা দুরে দাড়িয়ে আছে আদ্রিয়ানের এক্স- ওয়াইফ নওশি। কিন্তু নওশি ওর দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন ওকে চেনেই না।

আজ বিজনেস পার্টিতে এসে নওশিকে দেখেই চমকে যায় আদ্রিয়ান। এতো বড় পার্টিতে ও কিভাবে। কিছু বলার জন্য সামনে গিয়ে নওশির হাত ধরার সাথে সাথেই একটা ছেলে আদ্রিয়ানকে ধাক্কা দেয়। বলে ওঠে

– জিসান চৌধুরীর বোনের গায়ে হাত দেয়ার সাহস হয় কোথা থেকে??

কথাটা শোনার পরেই আদ্রিয়ান থমকে যায়। কিছুই মাথায় আসে না তার।

৭ মাস আগে,,

আদ্রিয়ান, সাগর, প্রত্যয় মিলে ঘুরতে গিয়েছিল রাঙামাটিতে। প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য্যে নিজেকে বিলিয়ে দিতে।

প্রথমদিন গিয়ে বিশ্রাম করেই সময় পার করে তারা।

পরেরদিন পাহাড় দেখতে বের হয় । ঘুরেবেড়ানোর সময় আদ্রিয়ান খেয়াল করে একটা বাচ্চা ছেলে পায়ে আঘাত পেয়েছে। তাই তাকে কোলে নিয়ে কাছের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। তারপর সেখান থেকে সাগর আর প্রত্যয়কে। অবশেষে সবাই একসাথে মিলে বাচ্চাটাকে বাড়িতে রাখতে যায়।

সেখানে গিয়ে সকলের আত্মীয়তায় মুগ্ধ হয় সবাই এবং আসার সময় বিংলুর ( যে ছেলেটিকে বাচিয়ে ছিল) বড় বোনের বিয়ের দাওয়াত পায় আদ্রিয়ানরা। হোটেলে ফিরে ৩জনই শুয়ে পড়ে।

– আজকের দিনটা বেশ মজায় কাটল তাই না?? ( প্রত্যয়)

– হ্যা, তবে জানা ছিল না পাহাড়ের লোকেরা এতোটা ভালো। আমি তো ওদের কে অসবভ্য ভাবতাম ( সাগর)

– শালা তোর মানুষের সাথে না মিশে কমেন্ট করার স্বভাব গেল না ( আদ্রিয়ান)

– তাহলে তুই এখানে বিয়ে কর আর আমরা এসে সবার সাথে মেশার সুযোগ পাব ( সাগর ও প্রত্যয় এক সাথে)

– আমি?? আর বিয়ে?? তাও এই জঙ্গলে? দি আদ্রিয়ান খান এখানে বিয়ে করবে?? ভাবলি কি করে?? ( আদ্রিয়ান)

– কার কপালে কে আছে বলা যায় না। হয়তো পাহাড়ি কোনো মেয়ে তোর কপালে আছে। ( সাগর)

– চুপ শালা। আদ্রিয়ান তার ভাগ্য নিজে লেখে। এখন ঘুমা নয়তো এই ৮ তলা বিল্ডিং থেকে তোকে ফেলে দিব। ভুলিস না সন্ধ্যায় বিয়ের অনুষ্ঠানে যেতে হবে।

সন্ধ্যা বেলা ফ্রেস হয়ে রেডি হয় ৩ বন্ধু। কেউ কারোর চেয়ে কম না। মাশাল্লাহ এক এক জন যেন নায়ক কেও হার মানায়। এদের মধ্যে

সাগর পড়েছে নীল পাঞ্জাবি, জিন্স প্যান্ট, হাতে নীল ঘড়ি। আর চুল গুলো এলোমেলো। চেহাড়ার মায়াবী ভাবটা যেন কয়েক গুন বেড়ে গেছে। যে কোন মেয়ে এক দেখাতেই প্রেমে পড়বে।

প্রত্যয় পরেছে বেগুনি রঙের পাঞ্জাবি, সাদা চুড়িদার, হাতে কালো ঘড়ি। চুল গুলো উপরের দিকে আচড়ানো। চেহাড়ায় একটা বিদেশি বিদেশি ভাব থাকায় তার সৌন্দর্য যেন আরও ১০ গুন বেশি বেড়ে গেছে।

এদিকে আদ্রিয়ান সম্পুর্ন কালো রঙে নিজেকে সাজিয়েছে। কালো চশমা। কালো পাঞ্জাবির সাথে কালো জিন্স। হাতে ঘড়ি। আর চাপ দাড়ি। সব মিলিয়ে যেন এক দেখায় নজর লেগে যাবে। বলিউডের নায়কেরাও হার মানবে তার কাছে।

তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে তিন বন্ধু বেড়িয়ে পড়ে বিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা পৌছে যায় বিয়ে বাড়িতে। আসরের নামাজের পরেই অনুষ্ঠান শুরু হয়। শহরের বাইরে ঘুড়তে এসে মজাই পাচ্ছিল তিন বন্ধু।

হঠাৎ করে প্রত্যয়ের চোখ যায় একটা মেয়ের উপরে। মেয়েটা সবুজ রঙের একটা পোশাক পরে আছে। তার সম্পুর্ন সাজটা পাহাড়িদের মতো হলেও মনে হচ্ছে যেন এক মায়া পরী নেমে এসেছে এই বনাঞ্চলে।

কারণ,
মেয়েটির চুল যেন কালো মেঘ, চোখ দুটোতে যেন এক নীলাভ মায়া। গায়ের রং টাও অন্যদের মতো না। বরং যে কোন বাঙ্গালি মেয়ের চেয়ে বেশি ফর্সা সে। দেখে মনেই হয় না পাহাড়ি মেয়ে। যেন রাজ প্রাসাদের রাণি সে।

তাই কৌতূহল আটকাতে না পেরে বিংলুকে ডেকে মেয়েটির ব্যাপারে জানতে চায় প্রত্যয়। জানতে পারে মেয়েটি বিংলুর বোনের বন্ধু।

কথাটা শুনে প্রত্যয় যায় সাগর আর আদ্রিয়ানের কাছে। তাদের কে সব কথা বল্লে সাগর বিশ্বাস করে কিন্তু আদ্রিয়ান সবটা হেসে উড়িয়ে দেয়।

বিয়ের অনুষ্ঠান হই হই করে শেষ হওয়ার পর চাদের আলোতে বসে পরে ৩ বন্ধু। কারণ অনেক রাত হয়েছে। হোটেলে ফেরা সম্ভব না। কিছুক্ষণ পর বিংলু আার ওর বাবা এসে একটা পানীয় পান করতে দেয় আদ্রিয়ানদের কে। কারণ এটা খাওয়া নাকি ওদের ওখানকার নিয়ম।

তাই এক প্রকার জোর করেই আদ্রিয়ানরা এসব কিছু খায়। কিন্তু কিছুক্ষণ একসাথে পড়েই তারা অনেক ঘুমের অনুভব করে। তাই তারা ঘুমাতে যায়। কিন্তু আদ্রিয়ান বুঝতে পারে না সে কোথায় ঘুমিয়েছে।

সকাল বেলা,
আশেপাশের চিৎকার শুনে ঘুম ভাঙ্গে প্রত্যয় আর সাগরের। ঘুম থেকে উঠে দেখে আদ্রিয়ান পাশে নেই। বাইরে কি হয়েছে দেখার জন্য বাইরে যেতেই তারা দেখতে পায় মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে আদ্রিয়ান আর আগের রাতের মেয়েটা।

সকলের বক্তব্য আদ্রিয়ান আর মেয়েটা রাতে এক সাথে ছিল। তারা নিজে দেখেছে। যেহুতু তারা নিজে দেখেছে তাই কোন সাফাই দেয়া চলবে না। তাদের একটাই কথা বিয়ে করতে হবে।

আদ্রিয়ান মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকলেও বোঝা যাচ্ছে তার চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে। কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। কারণ সে চায় না তার জন্য তার বন্ধুরা বিপদে পড়ুক।

এদিকে মেয়েটিকে দেখে প্রত্যয় অনেক কষ্ট পেলেও নিজেকে শান্ত রাখে। আর সাগর কে বলে আদ্রিয়ান কে শান্ত করতে। যেন সে কিছু না বলে এখানে। শেষে দুই বন্ধু মিলে আদ্রিয়ান কে বোঝানোর পর সে বিয়েতে বসে।

সম্পুর্ন অনিচ্ছায় আদ্রিয়ান বিয়ে করে মেয়েটিকে। আর ওইদিন রাতেই তারা রাঙামাটি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে।

চলবে???

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে