#ভালোবাসা অন্যরকম
[পর্ব – ১২]
লেখক – আবির চৌধুরী
আমি রাইসার দেওয়া চিঠি টা খুলে পড়তে শুরু করে দিলাম
চিঠি
___________
ঈশান,, আমি কখনও ভাবি নাই যে আমি তোর বিরক্তিকর একটা মানুষ হবো। আমি তোর কাছে কখনও কিছু চাইনি, শুধু একটু ভালোবাসা ছেয়ে ছিলাম। আমি প্রতিটি রাত নিরবে কান্না করে গেছি শুধু তোর জন্য। আর তুই সেটা কখনও বুঝতে পারলি না। আমি তোর সব কিছু সহ্য করে পড়ে ছিলাম তোকে ভালোবাসি বলে। তোকে আমি ছোট বেলা থেকেই খুব ভালোবাসি। এখনও অনেক ভালোবাসি। তোকে পাওয়ার স্বপ্ন দেখতাম রোজ।যখন দিয়ার সাথে তোর বিয়ে হয়ে যায় তখন আমি অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। তোকে পাওয়ার আসা আমি তখনও ছেড়ে দেইনি। যখন শুনলাম দিয়া তোর সাথে এমন একটা কাজ করছে বিশ্বাস কর আমি তখন অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম। আমি চেয়েছি আমার ভালোবাসা দিয়ে তোর সব কষ্ট আমি দূর করে দেব। কিন্তু আমি ব্যার্থ হয়েছি। আমি পারলাম না তোর কষ্ট দূর করতে বরং আমি তোর বিরক্তের কারণ হলাম। তাই সব ছেড়ে আমি চলে আসতে বাদ্য হলাম। জানিস আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে তোকে ছেড়ে চলে আসতে। এখনও আমার চোখ দিয়ে টলমল করে পানি পড়ছে। আমি আর কিছু লিখতে পারছিনা ভালো থাকিস তুই আমি এটাই চায়।
রাইসার দেওয়া চিঠি টা পড়ে আমার চোখে পানি চলে আসলো। একটা মেয়ে আমাকে এতো ভালোবাসে আর আমি তার ভালোবাসা টা বুঝতে পারলাম না এতো দিনেও। এসব ভাবতে ভাবতে আমি আমার রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। ঘড়িতে এখন রাত ১০ টা বাজে। রাইসার বাসায় চলে যাবো। ভালো লাগছেনা আমার কোনো কিছু৷ তাই বাসা থেকে বের হবো তখন আম্মু ডাক দিল।
— ঈশান এতো রাতে কই জাস তুই?
— রাইসাকে নিয়ে আসতে যাচ্ছি।
আম্মু আমার কথা শুনে একটু খুসি হয়ে গেছে।
— এতো রাতে যেতে হবে না কাল গিয়ে নিয়ে আসলেই হবে। এখন খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।
— না আম্মু আমি রাইসার সাথে অনেক অন্যায় করছি আমি ওর ভালোবাসা বুঝতে পারিনি। আমাকে এখনই রাইসার কাছে গিয়ে ক্ষমা ছেয়ে আসতে হবে। আর আমি রাইসাকে নিয়ে তারপর বাসায় ফিরে আসবো।
তারপর আমি বাসা থেকে বের হয়ে রাইসার বাসার দিকে রওনা দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে রাইসার বাসায় পৌছে গেলাম। বাসার সামনে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিতেই রাইসার আম্মু এসে দরজা খুলে আমাকে দেখে অবাক হয়ে গেলো।
— বাবা তুমি এতো রাতে? এই সময় কিছু হইছে নাকি?
— রাইসা কোথায়?
— ও তো ওর রুমে শুয়ে আছে। তোমাদের বাসা থেকে আসার পর থেকে কিছুই খাচ্ছেনা।আর রুম থেকেও বের হচ্ছেনা। কিছু হইছে নাকি বাবা?
— না তেমন কিছুই হয়নি। আচ্ছা আমি রাইসার সাথে দেখা করে আসি।
তারপর আমি তাড়াহুড়ো করে রাইসার রুমে চলে গেলাম। রাইসার রুমে গিয়ে দেখি রাইসা খাটের উপরে শুয়ে এখনো কান্না করছে। আমি ধিরে ধিরে রাইসার দিকে এগিয়ে গেলাম। রাইসার কাছে গিয়ে রাইসা বলে একটা ডাক দিতেই রাইসা আমাকে দেখে চমকে উঠল। আর হা করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
— এই ভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? মনে হয় ভুত দেখলি?
— তুই এখানে! আমি তো বিশ্বাস করতে পারছিনা।
— বিশ্বাস করতে হবেনা তুই আমাকে না বলে চলে এলি কেন? তোর সাহস তো কম না দেখছি!
রাইসা আমার কথার উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল। এবার আমি রাইসার খুব কাছে চলে গেলাম। এতোটা কাছে যে রাইসার নিশ্বাস এর শব্দ আমি শুনতে পারছি।
— রাইসা আমার দিকে তাকা তুই। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে উত্তর দে আমাকে না বলে চলে আসলি কেন? আমাকে ছেড়ে কি থাকতে পারবি তুই?
রাইসা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলোনা। আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আর বলতে থাকল — আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবোনা খুব ভালোবাসি তোকে।
আজকে প্রথম রাইসাকে জড়িয়ে ধরলাম। তারপর রাইসার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে তার চোখের পানি মুছে দিলাম।
— থাকতে পারবিনা তা হলে আমাকে না বলে চলে আসলি কেন?
— কি করব আমি বল! আমার আর কি করার আছে?
— অনেক কিছুই করার আছে।
— মানে?
— আমাকে ভালোবাসবি।
— আমি তো তোকে ভালোবাসি কিন্তু তুই তো আমাকে,,,
এই কথা বলতেই আমি রাইসার ঠোঁটে আমার আঙ্গুল দিয়ে থামিয়ে দিলাম। আর বলতে থাকলাম।
— আমি ও আমার পাগলি টাকে খুব ভালোবেসে ফেলছি। আমাকে ছেড়ে আর কোথাও যেতে পারবিনা তুই।
আমার কথা শেষ করার আগে রাইসা আবার আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।
— এই পাগলি আবার কান্না কিসের হুম? আর কাঁদবে না একদন ওকে।
— হুম। তোকে আমি খুব ভালোবাসি ঈশান।
— আমিও তোকে ভালোবাসি।
এই বার দু’জন দু’জনকে অনেক্ষন জড়িয়ে ধরে রাখলাম। বুকের ভিতর খালি যায়গাটা যেনো আজ পুরোন হয়ে গেলো রাইসাকে বুকের মাঝে আগলে রেখে।
এবার আমি রাইসাকে বললাম — রাইসা এবার চল,
— চল মানে কই যাবো এখন?
— কেন আমাদের বাসায় আর কোথায়?
— পাগল হলি তুই কয়টা বাজে ঘড়ি দেখিস নাই নাকি? এতো রাতে কি আম্মু আমাদের যেতে দিবে?
রাইসার কথা শুনে আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। রাত ১ টা বেজে গেছে। কি আর করার আম্মুকে কল দিয়ে বলে দিলাম আজকে আর বাসায় যাবো না। কিছুক্ষণ পরে রাইসার আম্মু আমাদের রুমে আসলো।
— ঈশান, রাইসা তোরা খেতে আয় আমি তোদের জন্য খাবার রেডি করছি।
এই কথা বলে আমার শ্বাশুড়ি চলে গেলো। রাইসা বলল– এই নাও এগুলো পড়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।
— এগুলো কার জামা?
— আব্বুর জামা, তুই তো আর কিছু নিয়ে আসিস নাই তো আর কি করার আছে? আব্বুর এগুলো পড়ে রাত পার করতে হবে। যা এবার ফ্রেশ হয়ে আয়৷
তারপর আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। জামা গুলো দেখে নিয়ে আসি নাই। গায়ে দিয়ে দেখি অবাবা কতো বড় জামা মনে হয় এটার ভিতরে আমার মতো দু’জন ঢুকতে পারবে। কি আর করার এগুলো পড়ে বের হয়ে আসলাম। বের হতেই রাইসা আমাকে দেখে খিলখিল করে হেসে দিল।
— হাসবি না একদম তোর বাপ এতো মোটা কেন?
— ঠিক করে কথা বল আমার আব্বু কিন্তু তোর শ্বশুর হয় সম্মান দিয়ে কথা বলবি।
— ঠিক আছে মোটা বাপের চিকনা মেয়ে 🤣
এই কথা বলতেই রাইসা আমার দিকে তেড়ে আসলো। মেয়েদের উপরে আমার বিশ্বাস নেই যে কোনো কিছু একটা করে ফেলতে পারে সেই ভয়ে আমিও দিলাম এক দৌড়। তারপর রুমের ভিতরে অনেক্ষন দু’জনে ছুটাছুটি করছিলাম। একটু পরে আমি হাপিয়ে উঠলাম তাই খাটের উপরে নিজের শরীর হেলিয়ে দিলাম। রাইসা এসে আমার উপরে এসে পড়লো। দুজনেই হাপাচ্ছি। দু’জন দু’জনের নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পারছি। আমি রাইসার দিকে এক চাহুনিতে তাকিয়ে রইলাম।
— এই ভাবে কি দেখিস তুই?
— কি আবার দেখবো দেখছি আমার উপরে পড়ে থাকা একটা চিকনা মেয়েকে। যার নিশ্বাসের শব্দ আমাকে মাতাল করে তুলছে।
— শয়তান একটা। খেতে আয়।
এই কথা বলেই রাইসা লজ্জা পেয়ে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো। তারপর আমি নিজে নিজে একটা মুচকি হাসি দিয়ে আমিও রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। খাবার টেবিলে গিয়ে দেখি আমার শ্বাশুড়ি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিল। আমি হাসির কারণ টা বুঝতে পেরে জামাটা টান দিয়ে নিলাম।
— বাবা তুমি এটা পড়লে কেন? তোমার জন্য আলমারিতে কিছু জামা রাখা আছে সেই গুলো পড়ে নিয়।
— আপনার মেয়ে তো আমাকে এসব বের করে দিল। বলল আর নাকি জামা নেই।
— কিছু মনে কোরো না রাইসা অনেক বেশি ফাজিল হয়ে যাচ্ছে।
এইবার আমি রাইসার দিকে তাকিয়ে দেখি ও মুচকি মুচকি হাসছে। বুঝতে আর বাকি রইলোনা যে রাইসা এটা ইচ্ছে করেই করছে৷
এবার খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিলাম। রাইসার আম্মু আমার জন্য নতুন জামা নিয়ে এসে আমার হাতে দিল। সে গুলো নিয়ে আমি রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে রাইসার অপেক্ষা করে বসে আছি। কিন্তু তার আসার কোনো খবর নাই ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ২ টা পার হয়ে গেছে। অনেক্ষন পরে রাইসা রুমে আসলো।
চলবে,,,