#ভালোবাসা অন্যরকম
[পর্ব – ১০]
লেখক – আবির চৌধুরী
— ঈশান তোকে আমি একটা কথা বলতে চাই।
— কি কথা বলবি বল!
— আমি জানি তোর চোখে এখন সব মেয়ে খারাপ। সবাই তো এক না, একজন তোকে কষ্ট দিয়েছে তাই বলে সবাইকি তোকে কষ্ট দিবে?
— আমি আর কষ্ট নিতে চাইনা। কারণ আমি যদি আবার কষ্ট পাই তাহলে আমি এবার সহ্য করতে পারবোনা তাই এখন আর কষ্ট নিতে চাইনা। এসব কথা বাদ দে। আমি তোকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি তার মানে আই নয় যে আমি তোকে আমার স্ত্রী হিসেবে মেনে নেবো।
রাইসা আর কোনো কথা না বলে আমার রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো। পরের দিন সকালে আমি ফ্রেশ হয়ে একটা উকুলের কাছে চলে গেলাম। উকিলের সাথে কথা বলে চলে আসলাম। ৭ দিনের ভিতরে ডিভোর্স পেপার হাতে চলে আসবে। তারপর আমি সোজা আমার বাসায় চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে নিজের রুমে চুপচাপ বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পরে আম্মু আমার রুমে আসলো।
— ঈশান বাবা উকিলের সাথে কথা হইছে?
— হুম ৭ দিন সময় লাগবে। ৭ দিন পরে ডিভোর্স পেপার চলে আসবে।
— আমি তোদের বিয়েটা তাড়াতাড়ি দিয়ে দিতে চাই। তোকে একটা কথা বলি বাবা রাইসাকে তুই কষ্ট দিসনা মেয়েটা তোকে অনেক ভালোবাসে। যা করবি বুঝেশুনে করিস।
তারপর আম্মু আমার রুম থেকে বের হয়ে গেলো। দেখতে দেখতে সাত দিন পার হয়ে গেলো। সাত দিন পরে আমার বাসায় ডিভোর্স পেপার চাক এলো। আমি ডিভোর্স পেপারে আমার সিগনেচার দিয়ে দিয়ার বাসায় পাঠিয়ে দিলাম। এই ভাবে আরো দুই দিন কেটে গেলো। দুই দিন পরে দিয়ার বাসা থেকে ডিভোর্স পেপার ফিরে এলো দিয়া এ সিগনেচার করে দিয়েছে৷ কিছুদিন পরে আমার আর রাইসার বিয়ে হয়ে যায়। তেমন কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। শুধু আমাদের দুই পরিবার ছিলো। আজ আমাদের বাসর রাত আমি ছাদের উপরে উঠে দাঁড়িয়ে আছি চাঁদের দিকে তাকিয়ে। আজকে খুব করে দিয়ার কথা মনে হচ্ছে। দিয়া কি করে পারলো এসব? খুব খারাপ লাগছে। দিয়ার কথা মনে পড়লেই বুকের ভিতর টা কেপে উঠে। একটা সিগারেট হাতে নিয়ে জ্বালিয়ে দিলাম। একটু পরে আম্মু আমাকে ডাকতে ডাকতে ছাদের উপরে চলে আসলো। আম্মুর শব্দ শুনে আমি সিগারেট টা নিভিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম আবার।
— কিরে তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস আর ওই দিকে রাইসা তোর জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে। তাড়াতাড়ি যা তুই।
— তুমি যাও আমি আসছি৷
তারপর আম্মু চলে গেলো আমি কিছুক্ষণ পরে বাসর ঘরের দিকে চলে গেলাম। বাসর ঘরের সামনে গেলে অনেকের অনেক রকম অনুভূতি কাজ করে ভয় লাগে। আমার তেমন কিছুই হচ্ছেনা কারণ এটা আমার জীবনের দ্বিতীয় বাসর। কি অদ্ভুত তাইনা! আমি বাসর ঘরের ভিতরে ঢুকতেই রাইসা খাটের ওপর থেকে নেমে এসে আমাকে সালাম করে আবার খাটের উপরে গিয়ে বসে পড়ল। আমি গিয়ে খাটের উপরে বসে রাইসাকে বললাম– ঘুমিয়ে যা। অনেক রাত হইছে আমিও ঘুমাই।
— আজকে তো আমাদের বাসর রাত আজকে রাতে তুমি আর আমি গল্প করে সারারাত কাটিয়ে দেব।
রাইসার মুখে তুমি শব্দটা শুনে আমার বুকের ভিতর টা মোচড় দিয়ে উঠল। রাইসা আজকে প্রথম আমাকে তুমি করে বলল।
— রাইসা তোমাকে আমি আগেও বলছি এই বিয়ে আমি আমার মায়ের ইচ্ছেতে করছি। সো আমার কাছে কিছু আসা করাটা বোকামি।
— প্রতিটি মেয়ের স্বপ্ন থাকে বাসর রার নিয়ে আমারও অনেক স্বপ্ন ছিল। যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে এসেছি তাকে তো পেলাল কিন্তু আমার স্বপ্ন গুলোর কি দোষ বলতে পারো তুমি? আমি তো তোমাকে ভালোবাসি আমি তোমার কাছে তেমন কিছুই চাইনা আমাকে শুধু একটু ভালোবাসা দিলেই হবে। আমি শুধু তোমার ভালোবাসা চাই আর কিছুই না।
— আমি তোমাকে সেটা কখনও দিতে পারবোনা।
— আচ্ছা দিতে হবে না। আমাকে শুধু তোমার পাসের বালিশটায় একটু যায়গা দিলেই হবে। আর কিছু লাগবে না আমার। অন্তত তোমার পাসে তো থাকতে পারবো। আচ্ছা ঈশান আমার একটা কথা রাখবে প্লিজ!
— কি কথা?
— তোমার তো চাঁদ খুব প্রিয় চলো আমরা একটু ছাদের উপরে বসে চাঁদ দেখে আসি।
— ঠিক আছে চল।
কি আর করার! চলে গেলাম ছাদের উপরে ছাদের উপরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
— দাঁড়িয়ে না থেকে আমরা এক যায়গায় বসি। বেশিক্ষণ দাড়িয়ে থাকলে আবার পা ব্যাথা করতে পারে।
রাইসা এসব কথা শুনে আমি অবাক হচ্ছি। যে মেয়েকে আমি এতো অবহেলা করি সেই মেয়ে আমার এতো কেয়ার করে!
— কি হলো ঈশান কি ভাবছ তুমি? এখানে বসতে ভালো না লাগলে ঠিক আছে চলো আমরা রুমে চলে যাই।
— না ঠিক আছে চলো বসি আমরা।
তারপর আমি রাইসা গিয়ে এক পাসে বসে পড়লাম। দুজনেই নিরবতা পালন করে বসে আছি। কেউ কোনো কথা বলছেনা। অবশেষে নিরবতার অবসান ঘটিয়ে রাইসা বলে উঠল– ঈশান ভালোবাসি তোমাকে খুব বেশি ভালোবাসি। আমাকে তোমার মনের একটা কোণে যায়গা দিবে প্লিজ?
আমি কিছু না বলে চুপ হয়ে রইলাম।
— ঈশান প্লিন চুপ করে থেকোনা কিছু বলো!
— আমার কিছু বলার নাই, অনেক রাত হইছে ঘুমাতে হবে রুমে চলো।
রাইসা কিছু না বলে আমার আগে উঠে দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে গেল।আমি রাইসার পিছনে ছাদ থেকে নেমে রুমে গিয়ে দেখি রাইসা অন্যদিকে মুখ করে শুয়ে আছে। আমিও গিয়ে অন্যদিকে মুখ করে শুয়ে পড়লাম। ঘুমানোর কিছুক্ষণের মধ্যে আমার চোখে ঘুম নেমে আসলো। হঠাৎ করে কারো কান্নার শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ খুলে বুঝতে পারলাম রাইসা কান্না করছে। আমি শুনেও না শোনার ভান করে শুয়ে রইলাম। কিন্তু আমার চোখে ঘুম আসছেনা।ঘুম আসবে বা কি করে আমার পাশেই যে রাইসা কান্না করছে। আমি কি করবো বুঝতে পারছিনা আমার যে খুব ভয় হয়। যদি আমি রাইসাকে আপন করে নেই তো ও যদি দিয়ার মতো আমার সাথে এমন করে? এসব চিন্তা মাথায় আসলেই আমার খুব খারাপ লাগে। এসব ভাবতে ভাবতে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি দিয়া ঠিক আমার বুকের উপরে ঘুমিয়ে আছে। আজকে আর ওঁকে সরিয়ে দিলাম না জানি হয়তো অনেক রাতে ঘুমিয়েছে। তারপর আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুমানোর অনেক্ষন পরে রাইসার ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো।
— ঈশান উঠ নাস্থা করবিনা? অনেক বেলা হইছে আর কতো ঘুমাবি?
— হুম আরেকটু ঘুনাতে দেও খুব ঘুম পাচ্ছে আমার।
ঘুম ঘুম চোখে কথাটা বললাম। এবার রাইসা আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার গায়ে হাত দিতেও আমি রাইসার হাত ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে আসলাম। আমি নিজের মধ্যে নেই এখন ঘুম ঘুম চোখে এসব করছি। রাইসা কিছুই বলছেনা। এবার আমি রাইসা কে নিজের বুকের কাছে নিয়ে আসলাম। রাইসার ঠোঁটে চুমু খাবো এমন সময় আমি চোখ খুলে দেখি রাইসা চোখ বন্ধ করে আছে। আমি রাইসা যে সরিয়ে দিয়ে বললাম — রাইসা তুই?
রাইসা অনেক টা লজ্জা পেয়ে গেলো আর আমার রুম থেকে বের হয়ে গেলো। তারপর নিজে নিজে ভাবতে থাকলাম এটা আমি কি করতে পাচ্ছিলাম! এবার আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে চলে গেলাম। নাস্তা করতে গিয়ে দেখি সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে৷ আমি গিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লাম। তারপর রাইসা আমার দিকে খাবার এগিয়ে দিল। আমি খাওয়া দাওয়া শেষ করে আনার রুমে চলে গেলাম।
একটু পরে রাইসা আমার রুমে আসলো,,
চলবে,,,,,