#ভালোবাসা অন্যরকম
[২য় পর্ব]
লেখক – আবির চৌধুরী
আমি জোরে জোরে দরজা ধাক্কা দিতে থাকলাম কিন্তু দরজা খুলছেনা দিয়া। খুব ভয় লাগছে মেয়েটা যে পরিমাণ রাগি কি থেকে কি হয়ে যায়।
আম্মু — বউমা দরজা খুলো কি হইছে তোমার দরজা বন্ধ করে দিলে কেন?
দিয়া কোনো কথা বলছে না। দিয়ার থেকে উত্তর না পেয়ে আম্মু বলল — ঈশান দরজা ভেঙে পেল।
তারপর আমি জোরে জোরে দরজা ধাক্কা দিতে থাকলাম এক সময় দরজা খুলে দেখি দিয়া অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে৷ দিয়া হাতে বিষের বলত দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। দিয়ার মুখ থেকে পেনা ছেড়ে দিছে।
আম্মু — বউমা কে নিয়ে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যেতে হবে। কিন্তু ও এমন করলো কেন?
আমি — জানি না আম্মু।
আমি দিয়াকে কোলে তুলে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। একটা টেকসি থামিয়ে ওকে নিয়ে হাসপাতালে চলে গেলাম। হাসপাতালে ঢুকতেই একজন ডাক্তার এগিয়ে আসলো।
— কি হইছে ওনার?
— বিষ খেয়েছে তাড়াতাড়ি কিছু একটা করুন ডাক্তার।
— পুলিশ কেচ আগে পুলিশে খবর দিন তারপর আমরা অপারেশন শুরু করব। না হলে আমরা কিছু করতে পারবোনা।
— ডাক্তার প্লিজ আগে অপারেশন শুরু করুন তারপর সব করবো দেরি হয়ে গেলে বিপদ হয়ে যেতে পারে প্লিজ৷
— সরি আমরা কিছুই করতে পারবোনা।
ডাক্তারের কথা শুনে আমার রাগ বেড়ে গেলো। ডাক্তারের কলার ধরে বললাম — তুই আগে ওর অপারেশন কর ভালো ভাবে বলছি যদি ওর কিছু হয়ে যায় তুই আর দুনিয়ায় আলো দেখতে পারবিনা।
ডাক্তার আমার কথা শুনে ভয় পেয়ে গেলো। ডাক্তার নার্সকে ডাক দিয়ে বলল — ওনাকে তাড়াতাড়ি অপারেশন রুমে মিয়ে যাও।
তারপর কয়েকজন নার্স এসে দিয়াকে নিয়ে অপারেশন রুমে নিয়ে গেলো। আমিও অপারেশন রুমের সামনে চলে গেলাম। অপারেশন রুমের দরজার মধ্যে ছোট একটা গ্লাস লাগানো আছে। আমি গ্লাস দিয়ে দেখতে থাকলাম। দিয়ার মুখে একটা পাইপের নল ঢুকিয়ে দিয়ে বিষ বের করছে। দিয়ার এমন করুন অবস্থা দেখে খুব খারাপ লাগছে। অনেক কষ্ট হচ্ছে মেয়েটা। কিন্তু ও কেন এমন করছে কিছুই বুঝতে পারছিনা। কেনো জানি সব কিছুর জন্য নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার বের হয়ে আসলো।
— সব বিষ বের করা হয়েছে। এখন ওনাকে রেস্টে রাখতে হবে। ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।
— সরি ডাক্তার, তখন এমন ব্যবহার করা ঠিক হয়নি আপনার সাথে।
— ঠিকি আছে। আসলে আমি ভুল ছিলাম সব কিছুর আগে রোগীকে দেখা উচিৎ।
এই কথা বলে ডাক্তার চলে গেলো। একটু পরে দিয়াকে কেবিনে শিপ্ট করা হলো। আমি গিয়ে দিয়ার পাশে বসে রইলাম। অনেক্ষন পরে দিয়া চোখ খুলে তাকাল। দিয়া আমার দিকে তাকিয়ে তার চোখ থেকে পানি পড়ে গেল।
— দিয়া এমন পাগলামি করার মানে কি? তোমার যদি কিছু হয়ে যেতো তখন আমার কি হতো?
দিয়া কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে শুধু কান্না করেই যাচ্ছে। আমি দিয়ার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম — রেস্ট নাও তুমি আর এমন পাগলামি কখনও করবে না।
তারপর আমি কেবিন থেকে বের হয়ে গেলাম। আম্মু দিয়ার পাশে বসে রইল। আমি বাসায় গিয়ে ভাবতে থাকলাম দিয়ার কি হয়েছে। দিয়া কেন এমন করছে? তাহলে কি এই বাচ্চা অন্য কারো! দিয়া আমার সাথে এমন টা কি করে করতে পারলো? দিয়া তো আমাকে অনেক ভালো বাসতো হঠাৎ কি হয়ে গেলো? যে ওর অন্য পুরুষের সঙ্গ নিতে হলো আমি কি অকে খুশি করতে পারতাম না? আমার ভালোবাসায় কি কোনো কমতি ছিল? দিয়ার সাথে কাটানো কথা গুলা খুব মনে পড়ছে।
চলুন ফ্ল্যাশব্যাক থেকে ঘুরে আসি।
ফ্ল্যাশব্যাক
______________________
আজ আমার আর দিয়ার বাসর রাত। আমি বাসর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। বাসর ঘরে ঢুকতে খুব ভয় লাগছে৷ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছি দিয়া আমাকে কি ভাবে নিবে। সব ভাবনার অবসান কাটিয়ে বাসর ঘরে ডুকে গেলাম। বাসর ঘরে ঢুকতেই দিয়া উঠে এসে আমাকে সালাম করে আবার খাটের উপরে গিয়ে বসে পড়লো বড় একটা ঘোমটা দিয়ে। আমি খাটের দিকে এগিয়ে গেলাম। গিয়ে দিয়ার পাশে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলাম।
হঠাৎ করে দিয়ার প্রথম বাক্য ছিল – আপনি কি কখনও প্রেম করছেন কারো সাথে?
দিয়ার মুখে এমন প্রশ্ন শুনে আমি অবাক হয়ে বললাম — না, কেন?
— তা হলে ঠিক আছে। এমনি জিজ্ঞেস করলাম কিছু মনে করবেন না।
— তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
— জ্বী বলুন।
— চলো ছাদের উপরে গিয়ে বসি। আজকে আকাশে খুব সুন্দর চাঁদ উঠেছে।
— আচ্ছা চলুন।
তারপর দিয়াকে নিয়ে ছাদের উপরে চলে গেলাম। ছাদের উপরে গিয়ে ছাদের এক কোণে গিয়ে আমরা বসলাম। ছাদের উপরে গিয়ে খুব ভালো লাগছে। হালকা হালকা বাতাস ভয়ে যাচ্ছে পুরো শরীর শীতল হয়ে আসছে। আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে রইলাম।
— চাঁদ আপনার খুব ভালো লাগে বুঝি?
— হুম। খুব ভালো লাগে। আমার যখন খুব কষ্ট হয় তখন আমি একা একা চাঁদের সাথে কথা বলি।
— চাঁদের সাথে কথা বলেন মানি? চাঁদ কি আপনার কথা শুনতে পায় নাকি?
— হুম শুনতে পায়। যখন আমার খুব করে মন খারাপ হয় তখন চাঁদ টাও কেমন যেনো হয়ে যায়। চাঁদ আমার কষ্ট বুঝতে পারে।
— আপনি তো খুব অদ্ভুত মানুষ!
— কেমন আমি?
— জানি নাহ।
— আচ্ছা তোমাকে আমার কিছু কথা বলার আছে।
— জ্বী বলুন!
— তুমি আমাকে স্বামী হিসেবে মেমে দিয়েছো? নাকি মা বাবার চাপে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছ? আমাকে তোমার বন্ধু মনে করতে পারো। আমি তোমার স্বামী নয় বন্ধু হয়ে থাকতে চাই। কাওকে যদি ভালোবেসে থাকো আমাকে বলতে পারো আমি তার হাতে তোমাকে তুলে দেবো। কারণ আমি জোর করে কারো ভালোবাসা নিতে চাইনা।
— আমি নিজের ইচ্ছেতেই রাজি হয়েছি। আর আমার এমন কেউ নেই। আমি কখনও রিলেশন করি নাই। আমি আপনার ভালোবাসা নিয়ে বেচে থাকতে চাই। পৃথিবীতে স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসাই সব থেকে বড় ভালোবাসা। এই ভালোসায় কখনো হারাম কিছুই থাকেনা।
দিয়ার কথা শুনে খুশিতে আমার মন ভরে গেলো। এবার চাঁদের থেকে চোখ সরিয়ে আমার পাশের চাঁদ এর দিকে তাকালাম৷ পুরো চাঁদের আলো যেনো দিয়ার মুখের উপরে এসে পড়ছে। তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে।
আমি দিয়াকে বললাম — দিয়া তোমার চুল গুলো ছেড়ে দাও।
দিয়া আমার দিকে লজ্জা মাখা চোখে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে তার চুল গুলো ছেড়ে দিল। হালকা হাওয়াতে দিয়ার চুল গুলো হাওয়ায় ভাসতে থাকলো। খুব অপরুপ সুন্দরী লাগছে দিকে। যেনো আমার চোখের সামনে দুটি চাঁদ। কোনটা রেখে কোন চাঁদ দেখবো! আমি দিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
— এই ভাবে কি দেখছেন?
— চাঁদ,
— কিন্তু চাঁদ তো আকাশে থাকে আপনি তো আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
— তুমি চাঁদের থেকে কম কিসে বলতে পারো?
আমার কথা শুনে দিয়া লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। দিয়া আর কিছু না বলে আমার কাধের উপরে তার মাথা রাখল। দিয়ার চুলের ঘ্রাণ আমার নাকে ভেসে আসলো। দিয়ার চুল থেকে খুব সুন্দর একটা ঘ্রাণ বের হচ্ছে।
— দিয়া অনেক রাত হইছে এবার চলো আমরা রুমে চলে যাই।
— ঠিক আছে কিন্তু আমি হেটে যেতে পারবোনা।
আমি দিয়ার কথা শুনে খানিকটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম — তো কি ভাবে যাবে?
— আমাকে কোলে করে নিয়ে যান।
এবার আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে দিয়াকে কোলে তুলে নিলাম। ওঁকে কোলে তুলে নিজের রুমে চলে গেলাম৷ দিয়াকে খাটের উপরে বসিয়ে দিয়ে আমি দরজা বন্ধ করে দিয়ে দিয়ার পাশে এসে বসলাম।
— অনেক রাত হইছে ঘুমিয়ে যাও।
— হুম, আর আপনাকে ধন্যবাদ।
— ধন্যবাদ কেন?
— আপনি আমার স্বপ্ন টা পুরোন করছেন। বাসর রাত নিয়ে আমার এমন একটা স্বপ্ন ছিল। যে আমি আমার স্বামী সাথে বসে আকাশের চাঁদ দেখবো।
— আচ্ছা ঠিক আছে এবার ঘুমিয়ে যাও।
— ঠিক আছে আপনিও ঘুমিয়ে যান।
এবার আমরা দুজনেই ঘুমিয়ে পড়লাম সকালে ঘুম থেকে উঠে বুকের উপরে ভারি কিছু অনুভব করতে পারলাম।
চলবে,,,,