#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব২০
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি
নীলা সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফিহাকে নিয়ে আদর করে খাইয়ে দিচ্ছে।পাশে হিয়াও কথা বলছে। মোল্লিকা কিচেনে থেকে মাঝে মধ্যে এসে ওদের সাথে কথা বলছে আবার রান্না ঘরে রান্না করছে।পরিচারিকা হেল্প করছেন তার কাজে। এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠায় সবাই একটু অবাক হয়েই গেছে।
এসময় আবার কে আসলো।মা আপনাকে যেতে হবে না আমি যাচ্ছি।
নীলা ফিহাকে রেখে আস্তে আস্তে দরজাটা খুলে দিলো।দরজা টা খুলতেই সে দেখলো একজন অচেনা মহিলা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
সে একজন এলিগেন্ট বিউটি ছিলো।তাকে দেখেই প্রথম যে চারটি শব্দ মাথায় আসে তা হলো
ভদ্র, মার্জিত, সুন্দরী, যুবতী। নীলা ফ্রিজ হয়ে গেলো।
পিছনেই শুভ্র এসে আস্তে আস্তে থেমে গেলো।
সে উচ্চ কন্ঠে ডেকে উঠলো —
তুহিনা——-কেমন আছিস তুহি।
তুহিনা সরকার আর কোনো দিকে না দেখে।শুভ্রর দিকে এগিয়ে গেলো।
নীলা সেই আগের ন্যায় তাকিয়ে ছিলো।মেয়েটির খোলা লম্বা কালো চুল গুলো বাতাসে উড়ে। অর ব্রাইট আর বিউটিফুল মুখটাকে দেখেই সুন্দরী, ভদ্র, মার্জিত রুপ দিয়েছিলো! ও একটা সাদা স্যুটেট জ্যাকেট পরে ছিলো। তার নিচে একটা গ্রে কালারের ড্রেস পরেছিলো। ওকে খুবই উজ্জ্বল!বুদ্ধিমতী, গ্রেসফুল আর দয়ালু মনে হচ্ছিলো।তাকে একনজরেই সবদিক থেকেই একজন সুন্দরী ধনী যুবতী বলে মনে হচ্ছিলো।
ওখানে থাকা সকলেই শুভ্রর মুখে তুহি নাম শুনেই বুঝে গেছে। যে কে এসেছে।
হিয়া আর মোল্লিকা এক সাথে সামনে থাকা মহিলার দিকে তাকালো।
আয় আয় ভেতরে আয়।তোরই অপেক্ষা করছি।
তুহিনা সরকার মিষ্টি করে হেসে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরলো।
শুভ্রও তুহিনাকে জড়িয়ে ধরলো। সে ভুলেই গেছিলো যে সেখানে নীলা দাঁড়িয়ে ছিল।
নীলা এক মুহূর্তের মধ্যে থমকে গেলো। সে বুঝতে পারছিলো না তার এই মুহূর্তে কি করা উচিত।
সে একটা ঘোর লাগা চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে ছিলো। সে বুঝতে পারছিলো যে তাকে খুবই বোকা বোকা দেখাচ্ছে । নীলার কাছে ওদের কে একদম পারফেক্ট ম্যাচ মনে হচ্ছে। সে অবভ্যিয়াসলী একজন ফ্যাসন্যাবল স্টাইলিস্ট ওমেন লাগছিলো। ওদের খুবই মানিয়েছে।
এখানে আর না থাকাই শ্রেয়।
নীলা ওখান থেকে চলে এসে ফিহার কাছে গিয়ে বসে পরলো। তার কেমন যেন অদ্ভুত লাগতে শুরু করলো।
আরে তুহিনা যে কেমন আছো মা।ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি। এসো ভেতরে এসো।
তুহিনা শুভ্রকে ছেড়ে দিলো।
তুহিনা শুভ্রর দিকে তাকিয়ে মোল্লিকার কাছে গেলো।
জি আন্টি আমি ভালো আছি।তোমরা কেমন আছো।
হ্যাঁ মা ভালো আছি।তোমার বাবা মা কেমন আছেন। উনাদের অনেক দিন দেখি না। একদিন সময় করে আসতে বলো।
জি আন্টি আব্বু আম্মু ভালো আছে। আমি আসতে বলবো উনাদের।
ওখানে থাকা সবার দিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নীলা আর ফিহার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকালো।
তারপর এগিয়ে গিয়ে—-
আরে হিয়া তুমি কেমন আছো। তোমার পায়ের ব্যাথা কেমন!
হিয়া মিষ্টি করে হেসে বললো। ভালো আছি তুহিনা আপু তুমি কেমন আছো।
তুহিনা সবার সাথে কথা বলতেই নীলার দিকে তাকালো। তুহিনার সুন্দর নরম চিবুক টা খানিকটা উপরে উঠে গেলো। এবং সে একটা এরোগেন্ট এক্সপ্রেশন নিয়ে নীলার দিকে তাকালো। নীলার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সে চোখ ফিরিয়ে নিলো এবং শুভ্রর উপর তার দৃষ্টি রাখলো।
শুভ্র কে ও আর বাচ্চাটি আংগুল দিয়ে ইশারা করে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে—
আরে তুহি কি তুই কি এইভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবি চল বসে কথা বলি।
ওকে ঠিক আছে চল।
মা দু কাপ কফি দিও তো।
ঠিক আছে তোরা বস আমি আনছি।
তুহিনা আর শুভ্র কিছুটা দুরে থাকা সোফায় বসে পরলো।
নীলা চোখে পানি চলে এসেছে। সে ফিহাকে বলল —
এঞ্জেল মা তুমি অই দিকে গিয়ে খেলা করো।আন্টির সাথে।
ফিহা কোনো কথা না বলে দৌড়ে হিয়ার কাছে চলে গেলো। হিয়াও ফিহার সাথে খেলছিলো।
কেউ নীলার মনের অবস্থা বুঝতে পারলো না। নীলা বুঝতেই দিলো না।
নীলা সেখানে আর বসে থাকতে পারলো না।দোঁড়ে ঘরে চলে গেলো।
নীলাকে এইভাবে দৌঁড়ে চলে যেতে দেখে শুভ্র মাথা তুলে একটু তাকালো আর ভ্রু কুচকালো। হঠাৎ এই মেয়ের কি হলো এরকম ভাবে চলে গেলো কেন।
শুভ্র আর তুহিনা বসে গল্প করছিলো।মোল্লিকা এসে কফি দিয়ে আবার চলে গেলো।
এখন বল কে অই বাচ্চা আর মেয়েটা।এই কি তোর বউ।
শুভ্র তুহিনাকে সবটা খুলে বললো।
তোকে যে আমি ম্যাসেজ দিয়েছিলাম তুই কি সেগুলো দেখিসনি।পরিস্থিতি এমনি ছিল যে আমাকে বিয়ে টা করতে হয়েছে।তাছাড়া আমি ওকে ভালোবেসে ফেলি প্রথম দেখায়।আর কেউ কোনো ক্ষতি করবে সেটা তো আমি আর বসে বসে দেখতে পারি না তাই না।
ওমাই গড তোর সাথে এতো কিছু হয়ে গেছে আর আমাকে তুই কাল সব কিছু জানালি।
ঠিক আছে। তো আমাকে যা করতে হবে তা না হয় বুঝলাম। আমার সাধ্য মতো চেষ্টা করবো।আমি আমার প্রান টাও দিয়ে দিতে পারি তোর জন্য। তুই আমার সেই ছোট বেলার বন্ধু।
তো তোর বউ এর সাথে আলাপ করালি না তো।
একে তো না জানিয়ে বিয়ে করছিস। আর এখন বউয়ের সাথে আলাপ অব্দি করালি না।
তুই তো অনেক কেই হেল্প করিস। আর আমি জানি তুই ছাড়া আমাকে কেউ এই কাজে হেল্প করতে পারবে না।।
ওর সাথে আলাপ করিয়ে দিবো। ও আসুক। তারপর।
নীলা ঘরে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে পরল। কেন জানি না তার খুব খারাপ লাগছিলো।তার চোখ বেয়ে পানি পরতে লাগলো। এটা কেন হচ্ছে বুঝতে পারলাম না। আমি কেন উনার সাথে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারছি না। আমি কি তাহলে শুভ্রকে ভালোবেসে ফেলেছি তাই এরকম হচ্ছে। দাদি বলতো বিয়ের পর নাকি স্বামীর স্ত্রী একে অপরের প্রতি এমনি ভালোবাসা হয়ে যায়।আল্লাহ তায়ালা একে অপরের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেন।
আমারও কি তাই হলো। যাকে চিনতাম না জানতাম না তার প্রতি এই মায়া কেন কাজ করছে।আর তাছাড়া স্বামী স্ত্রীর যেমনই হোক না কেন।নিজের স্বামীর সাথে অন্য কাউকে দেখলে সবারই খারাপ লাগে। না না উনারা তো বন্ধুও হতে পারে আমি শুধু শুধুই ভাবছি।
তখনি ফিহা কোত্থেকে দৌড়ে আসলো। নীলাকে পিছনে থেকে পা জাপ্টে ধরলো।
নীলা পিছনে ঘুরে তাকালো। আরে এঞ্জেল তুমি।
মা তোমার কি মন খারাপ। তুমি কি কাদছো।
না তো মা আমার তো মন খারাপ না।তোমাকে কে বললো আমার মন খারাপ।
আমি তো দেখলাম।তুমি কাদছিলে।
না এঞ্জেল মামুনি। মুখে একটা হাসি টেনে। চোখ মুঝে বললো।কয় দেখ তো আমি তো হাসছি।
চলো আমরা এখানে বসে গল্প করি।
মা তুমি।কি জানো তুমি যখন ছিলে বাবা আমাকে বকে ছিলো।আমার খুব ব্যাথা লেগেছিল।
আহারে কোথায় ব্যাথা লেগেছিল এঞ্জেল সোনার।
এইইই খানে ব্যাথা লেগেছিলো।হার্টের কাছে হাত দিয়ে দেখালো ফিহা।
আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমার বাবাকে বকে দিবো।আমার এঞ্জেল সোনাকে বকেছে।খুব করে বকে দিবো।আর এখন তো আমি আছি কার সাদ্ধি যে আমার এঞ্জেলকে বকে।
তুমি চলো এক্ষুনি বকে দিবে যাতে আর আমাকে না বকে।চলো না মা।
ফিহা এক প্রকার নীলার এক হাতের আঙুল টেনে নিয়ে আসছে।
নীলা সেখানে আসা মাত্রই তার কানে একটা কথায় আসলো। তুহিনা আর শুভ্র ডিভোর্স পেপার রেডি করার কথা বলছে। নীলা এই কথা টা শুনা মাত্রই সেখানেই কিংবর্তবিমূড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো পাথরের ন্যায়।
ফিহা নীলার হাত ধরে টান দিতেই সে কিছুটা নড়ে উঠলো।
এঞ্জেল এখন তোমার বাবা ব্যাস্ত আছে। আমি পড়ে তোমার বাবার সাথে কথা বলবো।
নীলা দেখলো শুভ্র আর তুহিনা এখনো খুবই সুন্দর ভাবে হেসে হেসে কথা বলছে। তারপর ওদের দিক থেকে নিজের চোখ সরিয়ে নিলো।
ঠিক আছে মা। তুমি কিন্তু বকে দিও পরে মনে করে।
ঠিক আছে মা এই বলে ফিহার গাল টেনে দিয়ে কোলে তুলে নিলো।
নীলা সোফায় গিয়ে ফিহাকে নিয়ে বসে পরলো।
আমি তোর কথা মতো সব কিছু দেখে নিবো।আর হ্যাঁ আমাকে এখানেই থাকতে হবে। তাহলে আমার কাজের সুবিধা হবে।
ঠিক আছে তুই এখানেই থাকবি। আমি মাকে বলে দিচ্ছি। তুই এখানেই থাকছিস।
নীলা এক ধ্যানে শুধু সেই কথায় ভেবে যাচ্ছে। আচ্ছা উনি আমাকে কি সত্যিই ডিভোর্স দিয়ে দিবে।কিন্তু আমি যে উনার চোখে ভালোবাসা দেখতে পেলাম।
ফিহা এটা সেটা করছে। হিয়া ডাকতেই দৌঁড়ে ওর কাছে চলে গেলো ।
নীলাকে মুখ কালো করে বসে থাকতে দেখে একজন পরিচারিকা এসে নীলার সামনে বসলো।
মেডাম কি ভাবছেন। স্যার তুহিনা ম্যাম সেই ছোট বেলা থেকেই বন্ধু। উনাদের মধ্যে আলাদা কোনো সম্পর্ক নেই।আসলে আপনার আগে স্যার এক মাত্র তুহিনা ম্যাম এর সাথেই শুধু কথা বলতেন।তাছাড়া আর অন্য কোনো মেয়েলি ব্যাপার কিন্তু স্যার এর নেই। আর সে জন্যই তো সেদিন এতো কিছু হয়ে গেলো। উনাদের বন্ধুত্ব একদম পবিত্র। যেখানে কোনো খাত নেই।আপনি স্যারকে ভুল বুঝবেন না প্লিজ। আমি সেই ছোট বেলা থেকেই উনাকে দেখছি। তুহিনা ম্যাম খুবই ভালো মনের মানুষ।
আচ্ছা উনারা দুজন যদি বহু বছর থেকেই পরিচয় থাকে উনি কোথায় ছিলেন।
মেডাম আপনি তো জানেন স্যার কেমন মানুষ। উনার মতো সৎ চরিত্রের লোক কিন্তু একটাও পাবেন না। কিন্তু আমরা ছাড়া বাইরের মানুষ জন খুব কম জানেন উনাদের বন্ধুত্বের বিষয় টা।
নীলা এতক্ষন পরিচারিকার সব কথায় শুনছিলো কিন্তু কিছুই বললো না।সে চুপচাপ সেখান থেকে চলে গেলো।
মোল্লিকা সবে মাত্র রান্না ঘর থেকে আসছিলো এসেই দেখলেন নীলা মুখটা শুকনো করে চলে গেলো। উনি হয়তো ব্যাপারটা ধরতে পারলেন।মায়েরা হয়তো সব কিছুই বুঝতে পারেন সন্তানদের কখন কি হয়।
চলবে—–
#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব২১
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি
নীলা সোফায় বসে বসে নিজের মনে পা দুটো তুলে বসে গপগপ করে খাবার খাচ্ছে।নীলার যখন মন খারাপ থাকে বা রেগে থাকে তখন সে ইচ্ছে মতো খাবার খাই আর তার রাগ কমে। মাঝে মাঝে সে যখন রেগে থাকতো বা মনে আঘাত পেতো কিছু বলতে পারতো না রিশিকার উপর সে তখন দাদির ঘরে বসে এইভাবে খাবার খেতো। তাহলে তার রাগ বা মন খারাপ তা দুর হয়ে যেতো। তার মনে হতো খাবার খেতে খেতে সে রাগ টাকেও চিবিয়ে খেয়ে ফেলতো। তার এই রাগ না কমা অব্দি সে খেতেই থাকবে। আর দাদি নীলার এসব বাচ্চাদের মতো কান্ড দেখে হাসতেন।
শুভ্র দেখলো যে নীলা সোফায় বসে খুব বিস্রি ভাবে পা তুলে কিভাবে খাবার খাচ্ছে।
শুভ্র বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে বললো তুমি কি একটু হাইজিনিক হতে পারো।
নীলা মাথা তুলে তাকালো সে কটমট করছে রাগে।আমি হাত ধুয়েই খাচ্ছি। আপনাকে কে বললো আমি হাইজিনিক নয়। বলেই আবার খেতে শুরু করল।
শুভ্র ওর খাওয়ার দিকে তাকালো নীলা যে হাত দিয়ে খাচ্ছিলো তার সারা হাতে এটো লেগেছিল।
শুভ্রর ভ্রু দুটো আরও গভীর হলো।
তুমি কি কোনো ম্যানার্স জানো না। ঠিক করে খাও। এইভাবে কেউ খাবার খাই।
নীলা আবারও মাথা তুললো আর বললো—
হ্যাঁ সবাই আপনার ওই তুহিনার মতো ভদ্র আর মার্জিত হয়না।
ইউ আর রাইট। আমার খাবার দাবার ব্যাপারেও কোনো ম্যানার্স নেই।আমি আমার জন্মের পরই আমার মা মারা যায়। আর আমার বাবা সে তো আমাকে কোনো দিন তার নিজের মেয়ের মতো ট্রিট করেন নি।আর আমার সৎমা তো আমায় টাকার জন্য বিক্রিই করে দিতে চেয়েছিলেন। সো কেউ আমাকে কোনো ম্যানার্স বা এডিকেট শেখায়নি।
ওয়েট ওয়েট এক্ষুনি তুমি কি বললে আরেক বার বলো।বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন মানে।
নীলা চোখ বড় করে ফেলে। এটা আমি কি বলে ফেলেছি। মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেছে।এখন কি উত্তর দিবো আমি।
কি হলো চুপ কেন। বলো এটা তুমি কি বললে।
বিক্রি করতে চেয়েছিলেন মানে টা কি।
কয় না তো আমি কিছু বলি নি।আপনি যান আমি খাচ্ছি। আমাকে খেতে দিন।
হাউ ইভার আপনার মতো সকলের জীবনে এতো সময় ও থাকে না।ম্যানার্স বা এডিকেট,এতো বদোর করার মতো। আমার কাছে জীবনের মানে হলো নিজেকে সম্মান করা।তাই আমি এসব কিছু জানি না। আর আমি কোনো দিন মিস তুহিনা সরকার ও হবো না। ওকে আপনার যদি আমাকে খেতে দেখতে আনকম্ফোর্টেবল লাগে আমি চেষ্টা করবো তোমার সামনে না খাওয়ার। তাছাড়া এখন আমার দিকে তাকানোর মতো আপনার টাইম ও নেই। আপনার তুহিনা আছে না।আমি তো দেখলাম আজ সারা দিন আমার সাথে একটা কথাও বলেন নি।
শুভ্র ক্রব্ধ হয়ে বললো।ইয়েস দ্যাটস রাইট। তুহিনা সত্যিই একটা ভদ্র মার্জিত ভালো মেয়ে।আর তুমি এতো বলো কিভাবে এক সাথে হ্যাঁ। এটলিস্ট ও তোমার মতো এভাবে হাত দিয়ে গপগপ করে খাই না।
এটা বলতে বলতেই শুভ্রর চোখ নীলার এটো লাগা নোংরা হাতের দিকে চলে গেলো।
আর তুমি কথা ঘুরাচ্ছো কেনো। আমি তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করেছি।তোমাকে তোমার সৎমা বিক্রি করতে চেয়েছিলেন কেন বলো।
নীলা নিজের দিকে তাকালো । ওর ও একটু ইম্ব্যারেস ফীল হলো। কিন্তু ও এটা তে ইউসড ছিলো। তাই এতে ওর খুব বেশি এলো গেলো না। আর নীলা শুভ্রর প্রশ্নের উত্তর না দেওয়ার জন্য কুইকলি ওর একেকটা আঙুল চাটতে শুরু করলো।
নীলা মাথা তুললো এবং শুভ্রর দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর চোখ রাগে গরম হয়ে আছে। সে এক দৃষ্টিতে নীলার দিকে তাকিয়ে ছিলো। তার চোখ লাল হয়ে গেছিলো। সে এমন ভাবে নীলার দিকে তাকিয়ে ছিলো যে দেখে মনে হচ্ছিল সে তাকে এক্ষুনি ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে।
নীলা জানে এখন এখানে থাকলে বিশ্বের দ্বিতীয়যুদ্ধ বুঝি এক্ষুনি শুরু হয়ে যাবে। রাগ করবেন না আমি আর আপনার সামনে খাবো না। নীলা ভয়ে ভয়ে হাসলো।আর সেখান থেকে ছুটে পালিয়ে আসলো।
শুভ্র নীলার এরুপ কান্ডে হাসবে না রাগবে বুঝতে পারলো না। তবে সে একটা বিষয় নিয়ে খুব বিষন্য হয়ে পরলো নীলার মুখ থেকে কথা বের করতে পারলো না। তুমি যতই কথা ঘুরাও কেন আমি তো এর রহস্য ভেদ করবই।এট এনি কোস্ট।
শুভ্র আর কিছু না ভেবে ভেতরে চলে গেলো।
নীলা ও ফিহার কাছে গিয়ে ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে আর মোল্লিকার সাথে কথা বলছে।হিয়াও কথা বলছে।টুকটাক।
নীলা এই কদিনে বেশ ভালো ভাবেই লক্ষ্য করেছে যে হিয়া মেয়েটার চোখ মুখে জুরে সব সময় একটা বিষন্যতার ছাপ আছে।খুব প্রয়োজন না হলে মেয়েটি কথা বলে না। কিন্তু মেয়েটা যে মনের দিক থেকে একেবারে খাটি একটা মানুষ নীলা এটাও বুঝেছে।
তার মনে হঠাৎ করেই একটা প্রশ্ন জেগে উঠলো।হিয়ার পা কি জন্ম থেকে এমন নাকি কোনো এক্সিডেন্ট ওর জীবন টা এই ভাবে তছনছ করে দিয়েছে। আমি কি একবার জানতে চাইবো।নীলা ফিহার মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। আর ভাবছে প্রশ্নটা করা কি ঠিক হবে। করেই ফেলি যা হবার হবে।
এদিকে মোল্লিকা দেখতে পেলো নীলা গভীর ভাবে কি যেনো ভাবছে।
কি ভাবছো মা।কি হয়েছে।
মা কিছু মনে করলে একটা কথা জানতে চাইবো।
হিয়া এগিয়ে এসে বললো আরে ভাবি এতো কিন্তু কিন্তু করছো কেন বলো না কি বলবে।
হ্যাঁ মা বলো কি কথা জানতে চাও।
আসলে মা হিয়ার পা কিভাবে এরকম হলো।
প্রশ্নটা শুনা মাত্রই হিয়া কিছুটা দুরে চলে গেলো। ওর চোখে পানি চলে এসেছে।
মোল্লিকার মুখটা গম্ভীর হয়ে গেলো মুহূর্তেই।
নীলা কথাটা বলেই আহাম্মক হয়ে গেলো। সেতো ভাবেনি যে এরকম একটা সিচুয়েশনে পরবে।
নীলা হিয়ার কাছে এগিয়ে গেলো —-
আ্যম স্যরি হিয়া আমি বুঝতে পারিনি তুমি হার্ট হবে।আমি সত্যিই তোমাকে হার্ট করতে চাইনি।বিলিভ মী। আ্যম এক্সট্রেমলী স্যরি। প্লিজ বোন তুমি কেদো না।
হিয়া প্রতিউত্তরে কিচ্ছু বললো না। চোখ মুছে নিলো হাতের উল্টো পাশ দিয়ে।
মোল্লিকা মুখ গম্ভীর করেই বললো। বউমা সময় হোক সবটা জানতে পারবে।এখন তুমি যাও।
নীলার তার শাশুড়ী মায়ের গম্ভীর মুখ দেখে আর কোনো কথা না ঘরের দিকে পা বাড়ালো।আর তাছাড়া শুভ্র এখন তার সাথে রেগে আছে। না জানি কি হয় আজ ঘরে গেলে। নীলার মন চাইছিল না আসতে। হিয়ার দিকে একবার তাকিয়ে চলে আসলো।সে কি নিজের অজান্তেই কষ্ট দিয়ে ফেললো। হিয়ার পায়ের বিষয়ে জানতে চেয়ে ভুল করে ফেললো না তো।
নীলা খুব সাবধানে ভয়ে ভয়ে এক পা এক পা করে শুভ্রর ঘরে ঢুকতেই দেখলো তুহিনা আর শুভ্র বসে আছে। খুব গভীর ভাবে কিছু নিয়ে ডিসকাশন করছে কিছু না।
নীলা নক না করেই ভেতর ঢুকে পরে।
আর শুনতে পাই শুভ্র বলছে কাজ কত দুর পেপার কি রেডি করছিস।
না বেশ কিছু দিন টাইম লাগবে পেপার রেডি করতে।
নীলার পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে যায় সে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তাহলে কি শুভ্র সত্যিই ডিভোর্স পেপার রেডি করার কথায় বলছে।শুভ্র কি তাকে ডিভোর্স দিয়ে অই তুহিনা কে বিয়ে করবে।
নীলা একটু সরে আসতে একটা ফ্লাওয়ার ভ্যাস এর ওর সাথে হাত লেগে যায়।
অমনি শুভ্র আর তুহিনা দুজনের হাতে নীলার দিকে তাকায়।
হ্যেই ঘরের ভেতর যদি কেউ থাকে তাহলে যে নক করতে হয় জানো না।আমি জানতাম না তোমার মধ্যে এই সামান্য ম্যানার্স টুকুও নেই। শুভ্র রেগে বললো।কারণ তখন কার রাগ শুভ্রর মধ্যে এখনো পুষে রেখেছে। যা এখন নীলার উপর উগ্রে দিলো।
নীলার চোখ থেকে দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরল।
আহ শুভ্র তুই ওর সাথে এমন ভাবে কথা বলছিস কেন। ও বুঝতে পারে নি। তুই ওর সাথে এরকম ব্যবহার করতে পারিস না। আমি যাচ্ছি তোরা কথা বল।
না না ম্যম আমি চলে যাচ্ছি। আপনারা কথা বলুন
আমার সত্যিই নক করে আসা উচিত ছিল। স্যরি স্যার আর হবে না।এরকম ভুল।আমি এক্ষুণি চলে যাচ্ছি।
স্যার কথা টা শুনে শুভ্রর যেন বুকের মধ্যে তীরের বেগে লাগলো। নীলা ওকে স্যার বলছে।
তুহিনা ওকবার শুভ্র আর একবার নীলার দিকে তাকিয়ে বললো–+
আরে না না তুমি কেন চলে যাবে।আমি চলে যাচ্ছি।আমাদের তো প্রায় কাজ শেষ। বাকি যা আছে সেটা কাল করে নিবো।
এই বলেই তুহিনা নীলার দিকে মুচকি হেসে চলে গেলো। নীলা বাইরে বেরিয়ে আসতে নিচ্ছিলো।তখনি তার হাতে টান অনুভব করলো।
শুভ্র নীলার হাত টেনে ধরেছিলো।
কোথায় যাচ্ছো।যাও চুপটি করে গিয়ে বসো। আরএকটা কথাও আমি শুনতে চাই না।
নীলা নিজের হাত শুভ্রর হাত থেকে এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিয়ে খাটের উপর গিয়ে বসে পরলো।
শুভ্র কিছু একটা মনে করে নীলার অনেক টা কাছে চলে গেলো। নীলা হঠাৎ শুভ্র তার এতো কাছে আসায় পিছিয়ে খাটের সাথে লেপ্টে গেল।
নীলা কনফিউজ ভাবে শুভ্রর দিকে তাকালো।
একটা শুকনো ঢোক গিলে বললো।এই আপনি কি করছেন। পিছিয়ে যান বলছি।আমি কি ভয় পাই নাকি আপনাকে।
আচ্ছা তাই ভয় পাও না বুঝি।তো এই ভাবে পিছিয়ে গেলে কেনো।
আপনি হঠাৎ করে এইভাবে কাছে আসলে যে কেউ ভয় পেয়ে যাবে।হুটহাট করে আমার কাছে আসবেন না।
আর এরকম ভাবে ক্যাজুয়ালী জিব বের করে আর কোনো দিন আঙুল চেটো না। স্পেশালি একটা যুবক পুরুষ মানুষের সামনে তো নয় ই।
হোয়াট নীলা চট করে মুখটা শুভ্রর দিকে এগিয়ে এনে বললো আপনি ঠিক মীন করছেন হুহ্। নীলা সত্যিই বুঝতে পারলো না শুভ্র ঠিক কি মীন করলো।
তুমি কি জানো সে দিন যখন তোমার কাছে গেছিলাম তোমার ফেস টা কিরকম ভাবে লাল হয়ে গেছিলো। মনে হচ্ছিলো যেনো এক্ষুনি ফেটে রক্ত বের হবে। ইউ আর সো ব্লাসিং ইউ নো। যেমন টা এখন হচ্ছো।
নীলার মুখ ইমিডিয়েটলী আরোও বেশি লাল হয়ে উঠলো। নীলার কানের লতি লজ্জায় গরম হয়ে উঠলো।
শুভ্র নীলার আরোও কিছুটা কাছে চলে এলো।সে যখন নীলার লাল হয়ে যাওয়া মুখ টা দেখলো সে এতটাই কোমল। তার নারী সুলভ কোমনীয়তা তার আশেপাশে ছড়িয়ে পরেছিলো। নীলার গভীর কালো চোখ দুটো তে একটা রহস্য লুকিয়ে আছে।
নীলা একেবারে খাটের সাথে আধো শোয়ার মতো হেলে গেলে।
নীলা শুভ্রর চোখ দেখেছিল। ওর চোখ দুটো কোনো অতুল কহরের মতো গভীর। এই কাছাকাছি আসা রুমের ভেতরের পরিবেশকে হঠাৎ করেই উত্তপ্ত করে তুলেছিল। মনে হচ্ছিলো কোনো একটা স্যাসপিসাস ঘটনা ঘটতে চলেছে।
শুভ্রর শরীরের উষনতা নীলার শরীরে ছড়িয়ে পরেছিলো।
আর একজন সত্যিকারের পুরুষ হিসেবে তার শরীরের হাড় যেনো কেপে উঠেছিলো।
শুভ্র আজ আবারও নীলার প্রেমে পড়ে গেছে।এই মেয়ে আমাকে পাগল বানিয়ে তবেই ছাড়বে।
দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। খুব গভীর ভাবে।
এমন সময় তুহিনা হুট করেই রুমে চলে আসে।
শুভ্র আমি আমার ফোন টা ফে–লে গে—
সে আর কিছু বলতে পারলো না। সে তারাতাড়ি করে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
শুভ্র আর নীলার দুজনের ই ধ্যান ভেঙে গেল। শুভ্র তারাতাড়ি করে সরে আসলো।
নীলা নিজের ঠিক করে বসলো।
স্যরি স্যরি আমি আসলে আমার ফোন টা ফেলে গেছিলাম।আ্যম রিয়্যালি স্যরি।
আরে তুহিনা অল রাইট। এই নে তোর ফোন।
শুভ্র তুহিনা কে ফোন টা দিতেই তুহিনা প্রায় দৌড়ে চলে এলো সেখানে থেকে।
এর আবার কি হলো। শুভ্র নির্লিপ্ত ভংগীতে একবার তুহিনার যাওয়ার পানে তাকিয়ে তারপর পরক্ষনেই সে বুঝলো তুহিনার এই ভাবে দৌড়ে পালানোর কারণ টা।
নীলা তো পারলে এক্ষুনি মাটির নিচে চলে যাবে।সে নীল ডাউন করে বসে রইলো। রুমের ভেতর কার সেই উষন্বতা এখনো যেনো রয়েই গেছে।
শুভ্র আর কিছু না ভেবে সোফায় গিয়ে বসে পরলো নিজের ল্যাপটপ টা নিয়ে।
চলবে —–