#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্বঃ(১০)
#লেখিকা রাদিয়াহ রাফা রুহি
আমার বান্ধুবী আমাকে নেম প্লেট দিয়েছে। জানলেন তো তাই না। এবার আমার ব্যাগটা আনার ব্যবস্থা করুন প্লিজ। আমি এই ভাড়ি বেনারশী পড়ে আর থাকতে পারছি না।
শুভ্রঃ ঠিক আছে আমি ব্যবস্থা করবো কিন্তু এতো রাতে আর হবে না মেডাম।সারারাত কি জেগেই থাকবেন ঘুমাবেন না। কাল কে দিবো আপাতত একটু ফ্রেশ হয়ে আসুন তারপর শুয়ে পড়ুন।
আমি ভাবছি এখন অন্য কথা তাহলে ওই বাচ্চা মেয়েটি কে। মাথায় তো আরও কত্ত গুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।প্রথম দিনই কি এই প্রশ্ন টা করা ঠিক হবে।না না এটা উনার ব্যাক্তিগত ব্যাপার কিন্তু এখন তো আমি উনার স্ত্রী তাহলে। বিয়েটা যেভাবেই হক আমি মানি এই বিয়েটা। ভাবছিলাম মনে মনে আমার ভাবনার ছেদ ঘটলো কারোর তুরির আওয়াজে।
উনি আমার দিকে একটু ঝুকে আমার মুখের সামনে হাত নাড়লেন।
শুভ্রঃ কি ভাবছেন মেডাম।আচ্ছা আপনি বাসা থেকে পালাচ্ছিলেন কেন? মনে তো হচ্ছিল বিয়ের আসর থেকে পালাচ্ছিলেন।
যদিও শুভ্র জানে নীলা কেন পালাচ্ছিলো তাও প্রশ্নটা করে ফেললো। কারণ শুভ্র চাই না নীলা তার সম্পর্কে আগেই সবকিছু জানুক।আগে আমার জন্য ওর মনে ফীলিংস তৈরি করতে হবে। তারপর সব বলবো ওকে।
নীলা শুভ্রর প্রশ্ন শুনে একটুও অবাক হয়নি কারন ও জানতো শুভ্র অকে প্রশ্নটা করবে।
নীলাঃ সে অনেক কথা। মিস্টার শুভ্র আ্য্যএএ— আপনার পুরো নামটা যেনো কি?
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকয়ে আছে নীলা/
শুভ্রঃ এই জন্যই তো বলেছিলাম মেডাম—সবকিছু জানতে চাইলেন কিন্তু আমার বিষয়ে কিছুই জানতে চাইলেন না।
আরে মিসেস চোধুরী আপনি যে এখন আমার বউ সেটা কি মনে আছে নাকি নেই।
নীলাঃ হুম বুঝলাম তার মানে আপনার পুরো নাম শুভ্র চৌধুরী রাইট। ওকে আমার ব্যাপারে কাল কে সবকিছুই বলবো। এখন আমি ঘুমাবো। আমি বেডের এক কোনায় শুয়ে পড়লাম। চুপটি করে আর ভাবছি উনি কি আমার পাশেই শুবেন।এইটা ভেবেই কেমন অদ্ভুত ফিলিং হচ্ছে। হালকা হালকা কাপছি আমি।অমনি জোর করে কাপুনি থামিয়ে জোড়োসড়ো হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে রইলাম। যদিও এখন ঘুম ধরবে বলে মনে হয় না।
এদিকে শুভ্র ভাবছে এ কেমন মেয়েরে বাবা।আমাকে একটু বললোও না শুয়ে পড়লো একাই। শুভ্র শুতে যাবে তখনি কিছু একটা ভেবে আর বিছানায় গেলো না।যদি বিছানায় শুইলে নিজের কন্ট্রোল হাড়িয়ে ফেলে।সে সরে গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো কোনো রকম।
——————————————————–
সকালে জানালার কাচ ভেদ করে সূর্যের স্নিগ্ধ আলো নীলার মুখে পরতেই সে নড়ে উঠলো। চোখ মুখ খিচে মুখের সামনে হাত দিয়ে মুখটাকে আড়াল করছে রোদ থেকে। তারপর পরক্ষনেই তার মনে হলো কাল কের কথা। চোখ খুলে ঝাপিয়ে উঠে বসলো নীলা।
আর চোখ পরলো সোফায় থাকা লোকটার দিকে।একি উনি তার মানে সোফায় ঘুমিয়েছেন। এটা কি ঠিক হলো। উনার বাড়িতে উনিই সোফায় আর আমি উনার বিছানায়।
একদম দানব লাগছে। জিম করা বডি। এতো লম্বা। মনে হয় ছয় ফিট দুই থেকে তিন ইঞ্চি।
খুব কষ্টেই উনি সোফায় শুয়ে আছেন।মুখুটা এতো সুন্দর লাগছে কিছু চুল উনার কপাল লেপ্টে আছে।
এতো সুন্দর একটা হাসবেন্ড পাবো ভাবি নি।কথাটা জোরেই বললো নীলা।
তখনি কেউ বললো খবর দার আমার চেহেরার দিকে নজর দিবেন। লুকিয়ে দেখা বন্ধ করুন। আমার বুঝি লজ্জা করে না।
আমার চোখ গুলো যেনো ছানাবড়া হয়ে গেলো। উনি নিজের মুখে কুশন চেপে কথাটা বললেন। তার মানে উনি ঘুমান নি। সকাল সকাল কি একটা কথা বলে ফেললাম।এখন উনি কি ভাববেন।
তখনি দরজা ধাক্কানোর শুব্দ এলো কানে। আল্লাহ এতো বেলা হয়ে গেছে এখনো আমি উঠিনি। কি ভাববে সবাই। —- বেনারশী টা ঠিক করে নিলাম।
তারপর গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম একজন সার্ভেন্ট দাঁড়িয়ে আছে। হাতে একটা শাড়ি।
মেডাম আপনার জন্য পাঠিয়েছেন। এটা পড়তে বলেছেন আপনাকে।
আমি বুঝতে পারলাম উনি মেডাম কাকে বলছেন।
উনি মিষ্টি হাসি দিয়ে আমার দিকে শাড়িটা এগিয়ে দিলেন।
বিনিময়ে আমিও মুখে একটা মেকি হাসি দিয়ে উনার হাত থেকে শাড়িটা নিলাম তারপর উনি চলে গেলেন।দরজা টা বন্ধ করে দিয়ে আমি ফ্রেশ হতে যাওয়ার আগে উনার দিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম। উনি এখনো মুখে কুশন চেপেই রেখেছেন। অজান্তেই একটা হাসি চলে আসলো মুখে। তারপর আমি সাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলাম।
শাড়িটা কালো খয়েরী। ইন স্টক যরী বুটিক জর্জেট এর । নীলার শাড়ি টা খুব ভালো লেগেছে শাড়িটা পরে আয়নায় দেখলাম বাহ খুব মানিয়েছে আমাকে।
আমি চুল গুলো বিনুনি করে নিবো কিছুটা করেছি। হঠাৎ করে চেয়ে দেখি উনি আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন। ঘোর লাগানো দৃষ্টিতে।
উনার চোখে কেমন নেশা লেগে আছে। উনি আস্তে আস্তে আমার আমার ঘাড়ে হাত দিয়ে আমার চুলে হাত দিলেন।
আমি উনার প্রত্যেক টা স্পর্শে কেঁপে কেঁপে উঠছি। জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছি। নিশ্বাস যেনো বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
উনার স্পর্শ ক্রমশ বাড়ছে।উনি আমার অর্ধেক করা বিনুনি টা আস্তে আস্তে খুলছেন। এর মধ্যে একটাও কথা বলেন নি উনি। আমি কিছু বলতেই পারছি না। কথা বের হচ্ছে না আমার মুখ থেকে। চোখ খুলতেই পারছি না শাড়িটা হাত দিয়ে চেপে ধরে আছি।
তারপর হঠাৎ উনি আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললেন ভেজা চুল বাধতে নেই মেডামজানেন না এটা। আর চুল টা খোলায় থাক।
এই কথা বলেই উনি আমার কাছ থেকে সড়ে গেলেন।
আমি ফট করে চোখ খুলে আয়নার দিকে তাকালাম। দেখলাম উনি আমার দিকে একটা মিস্টি হাসি দিয়ে চলে গেলেন।
উনার কথা গুলোর মধ্যে একটা নেশা কাজ করছিলো। কি অসম্ভব মহো উনার কন্ঠে!
তারপর আমি কিছুক্ষন অইভাবেই দাঁড়িয়ে রইলাম আর ভাবলাম কি হচ্ছিলো একটু আগে।
তারপর আর দাঁড়িয়ে না থেকে আস্তে আস্তে নিচে নেমে আসলাম।
আর দেখলাম একটা বাচ্চা দৌঁড়া দৌঁড়ি করছে।একটা সার্ভেন্ট মেয়েটাকে ধরার জন্য ওর পিছু পিছু ছুটছে।
কিছু একটা বলছে খাবে না খাবে না এইটাই বলে দৌঁড়াচ্ছে মেয়েটা।
হঠাৎ মেয়েটি আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরলো।
———————————————————
এদিকে কোনো একজন মহিলা ফোনে কথা বলছে।
হ্যাঁলো—- কাজ কতো দুর কতো জন মেয়ে জোগার হয়েছে!
ফোনের অপর পাশ থেকে বলে উঠলেন দশ জনের মধ্যে নয় জন মেয়ে হয়েছে মেডাম।আর একজন বাকি আছে।
—-ঠিক আছে! অই একজন হয়ে যাবে খুব শীঘ্রই। যদি পালিয়ে না যেতো —- এই বলে রাগে গজগজ করতে থাকে। ফোনটা কেটে দেই।
তোকে তো আমি ঠিক খুজে বের করবো। আমার থেকে তর এতো তারাতাড়ি মুক্তি নেই।এই বলে হাতের কাছের ফুল দানিটা এক ঝটকায় ভেঙে ফেলে। ঘর কাপানো শয়তানি হাসি হাসতে থাকে জোরে শব্দ করে।
চলবে——
#ভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি
বাচ্চা মেয়েটি আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরল। আমি হাটু গেড়ে বসলাম মেয়েটির সামনে। মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম কি অদ্ভুত মায়া ভরা মুখটা।
যে কেউ এই মেয়েটিকে দেখলে কাছে টেনে নেবে। আমি অবাক পানে চেয়ে আছি মেয়েটির দিকে। আর ভাবলাম এই মেয়েটিই হইতো মিস্টার চৌধুরীর মেয়ে।
হঠাৎ মেয়েটি আমাকে জিজ্ঞেস করলো —কে তুমি?
একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে আমার দিকে অতি আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে মেয়েটি।
নীলা ভাবছে কি বলবো আমি অকে ;।আমি কি বলবো যে আমি অর নতুন মা। বুঝতে পারছি না কি বলা উচিত।
নীলা জানে যে একটা বাচ্চা তার মাকে ছাড়া কতটা অসহায়। সেটা নীলার থেকে ভালো আর কে জানে।
ছোট বেলা থেকেই সে শুধু কষ্টই পেয়ে এসেছে। মায়ের আদর কি সেটা নীলার জানা নেই। নীলার সাথে অর সৎ মা যা করেছে সেটা এই বাচ্চা মেয়েটির সাথে কিছুতেই হতে দেবে না।
নীলা ফিহার চিবুকে আলতো করে ছুঁয়ে একটা মিস্টি হাসি দিয়ে বললো—
—উমম বলবো তার আগে তুমি বলো —তুমি ছুটছিলে কেন হুমম! ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো!
ফিহা নিজের মুখ টা আলতো একটু বেঁকিয়ে নির্লিপ্ত ভঙ্গীতে বললো দেখো না আমার রোজ রোজ দুধ খেতে ভালো লাগে তবুও জোর করে আমাকে খাওয়াবে অই পঁচা আন্টিটা! তাই তো ছুটছিলাম।অসহায় মুখ করে কথা গুলো বললো।
অই মহিলা সার্ভেন্ট কে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো ফিহা।
নীলাও ফিহার দেখানো মহিলার দিকে তাকালো। মহিলাটি ভয়ে মুখটা শুকনো করে রেখেছে।
ওহ আচ্ছা তো এই ব্যাপার! আমার একটা ম্যাজিক দেখবে তুমি এঞ্জেল!
তুমি আমাকে এঞ্জেল বললে—তাহলে আমি তোমাকে কি বলবো —–(ফিহা)
নীলা নিজের অজান্তেই ফিহাকে বলে ফেললো –আমি—আমি হলাম তোমার মা—
ফিহার চোখ মুখ আনন্দ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। মেয়েটির চোখে মুখে আনন্দের আভাস মনে হলো যেনো হাতে চাঁদ পেয়ে গেছে। সে চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে বললো সত্যিই তুমি আমার মা!!!! —-
নীলা এতক্ষণে খেয়াল হলো কি বলে ফেলেছে। এই বাচ্চা মেয়েটার খুশি আমি কিছু তেই নষ্ট করতে পারি না
—-নীলা বসা থেকে উঠে ফিহার দুই কাধে হাত রেখে বললো —
হুম আমি তোমার মা! এখন চল আমি তোমাকে একটা মজার জিনিস দেখায়।দেখবে তুমি?
কথা গুলো বলছে আর হাটছে আস্তে আস্তে ফিহাকে ডাইনিং টেবিলের সামনে নিয়ে গিয়ে বসালো!
ফিহা বললো কি ম্যাজিক! দেখাও নীলার দিকে তাকিয়ে —-
আচ্ছা দেখাবো তবে তোমাকে তো আমার একটা কথা শুনতে হবে।
ঠিক আছে মা শুনবো!
নীলার যেনো ফিহার মুখ থেকে মা ডাক শুনে অদ্ভুত একটা ভালো লাগা কাজ করছে! কি মিস্টি মেয়ে!নিজেকে মা মা লাগছে মেয়েটির কাছে! এসব ভাবছে নীলা/
তখনই কেউ অর হাত ধরে বললো কি হলো মা বলো । আমি তোমার সব কথা শুনবো।
তো তুমি এখানে চুপটি করে বসো হ্যাঁ। কোথাও যাবে না কিন্তু। আমি এই যাব আর এই আসবো ঠিক আছে।
ঠিক আছে মা। এই বলে ফিহাও লক্ষী মেয়ের মতো চুপটি করে বসে রইলো।
নীলা তখন কার সেই মহিলা সার্ভেন্টের কাছে গেলো।
সার্ভেন্ট টা তো ভয় পাচ্ছে না জানি কি বলে এখন তাকে।
সার্ভেন্ট টি নীলার দিকে এক পলক চাবে তাকিয়ে রয়েছে এতো সুন্দর গায়ের রং এতো মায়াবিনী। চুল গুলো কি লম্বা। পুরো পিঠ জোরে আছড়ে পড়েছে। শাড়িতে খুব মানিয়েছে মেয়েটিকে।যেনো আকাশ থেকে কোনো পরীর আগমন হয়েছে।
নীলা কাজের মেয়েটির সামনে আসার পর দেখে এক ধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
নীলা গলা পরিস্কার করে বললো —
এক্সকিউজ মি মেডাম!তখন মেয়েটির জন্য যে দুধটা খাওয়াতে চেয়েছিলেন আমাকে দিন সাথে চকলেট দিন প্লিজ! আর আমি কিছু বানাতে পারি এখন।
আপনি রান্না করবেন মেডাম। আপনি নতুন বউ। মেডাম যদি জানতে পারে আমার চাকরি টা চলে যাবে।আপনি আমাকে বলুন কি করতে হবে বানিয়ে দিচ্ছি।
কেউ কিছুই বলবে না আপনি শুধু দেখিয়ে দিন কোথায় কি আছে প্লিজ। আর আমি এক্টু কাজ করবো।
ওকে মেডাম আমি সবকিছু রেডি করে দিচ্ছি কি বানাবেন বলুন।
নীলা মাথা নেড়ে রান্না ঘরে চলে গেলো। তারপর দুধের সাথে কিছু চকলেট এর মিস্ট্রি মিশিয়ে দিলো আর নুডলস রান্না করে নিয়ে আসলো কিছুক্ষণের মধ্যেই।
এসে দেখে ফিহা একি ভাবে বসে আছে। যেভাবে বলেছিলো নীলা।
বাহ আমার এঞ্জেল সোনা তো খুব লক্ষী যেমন টা বলেছি সেভাবেই আছে।
এই দেখো আমি তোমার জন্য কি এনেছি।
নুডলস —-দেখেই ফিহা খুশিতে চোখ গুলো বড় করে — আমার তো খুব প্রিয় । বাট আমাকে তো খেতে দেই না এটা দাদুন অসহায় মুখ করে।
ঠিক আছে এঞ্জেল আমি তোমাকে খাইয়ে দিই। কেউ কিছু বলবে না। আর একটা স্পেশাল জিনিস আছে তোমার জন্য এটা আগে খেতে হবে।তারপর চকলেট দিয়ে দুধ টা ফিহার সামনে ধরে।
ফিহা বললো দুধ মিস্ট্রি। দাও দাও।তারপর ফিহাও নীলার হাতে থেকে খেয়ে নেই খুব তৃপ্তি করে।
নীলা ফিহাকে খুব যত্ন সহ কারে খাইয়ে দিচ্ছে। আর গল্প করছে! হাসছে দুজনেই।
শুভ্র ফ্রেশ হয়ে নিচে নামছিলো তখনি এসে দেখে দুজনকে দেখছে সিড়িতেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে । আর অবাক হচ্ছে কতটা মিশুক মেয়েটা। এক দিনেই কেমন আপন করে নিয়েছে বাচ্চা মেয়েটি কে।
সেদিন বাচ্চাটির সাথে খারাপ ব্যবহার করার পর অনেক আফসোস হয়েছিল শুভ্রর। সেদিন বকার ভয়েই আর ফিহা শুভ্রর কাছে যায়নি। খুব খারাপ লেগেছিল তার।
নীলা আর ফিহার এসব কিছু আরও দুজন মানুষ দেখছে। মোল্লিকা আর হিয়া। কি যত্ন করে খাওয়াচ্ছে। তাই ওরা আর কোনো কথা বলেনি। এই কদিন ফিহা কত বায়না করেছে খাবে না বলে। আর আজ অনায়েসেই খেয়ে নিচ্ছে। হিয়া বললো অর মা কে।
তারপর নীলা হঠাৎ খেয়াল করলো কালকে রাতের সেই মহিলা আর মেয়েটার দিকে।উনারা ওখানে দাঁড়িয়ে আছে।
নীলা উনাদের দেখে দাঁড়িয়ে পরল। কি বলব এখন বুঝতে পারছি না।
মোল্লিকা নীলার দিকে এগিয়ে এসে বললো—-
মোল্লিকাঃ কি হলো মা দাঁড়িয়ে পরলে কেন। আমি জানি মা তোমার অসস্তি হচ্ছে। মা মেয়েকে খাওয়াবে এটাই তো স্বাভাবিক। এতে সংকোচ করার কি আছে।
নীলাঃ না আসলে আন্টি এঞ্জেল কিছু খেতে চাইছিল না তাই আমি কিছু খাবার বানিয়ে অকে খাওয়াচ্ছিলাম।
হিয়াঃ আরে ভাবি তোমার মেয়েকে তুমি খাওয়াবে না। এতে সংকোচ করছো কেন।
আর তুমি এঞ্জেল কাকে বলছো অকে তো আমরা ফিহা ডাকি।
তার মানে উনারা সত্যিই আমাকে এঞ্জেল এর মা ভাবছেন এখনো। নীলা ভাবছে কি বলবো এখন আমি।
না আসলে আমি তো অকে এঞ্জেল বলেই ডাকি— নীলা কিছুটা ভাবলেশহীন ভাবে কথা টা বললো।
হিয়াঃ ওহ আচ্ছা। হাই আমি হিয়া। তোমার এক মাত্র ননদ। আর উনি তোমার শাশুড়ী মা।কাল রাতে তুমি অসুস্থ ছিলে বলে কিছু বলতে পারি নি।
নীলাঃ অহ আচ্ছা।
নিজেকে কেমন যেনো লাগছে সবার মধ্যে। তাই নীলা মাথা নিচু করে রেখেছে।
মোল্লিকাঃ আরে বৌমা তুমি এতো লজ্জা পাচ্ছ কেন আমরা তো সবাই ফ্যামিলি। আজ থেকে আমি তোমার আরেক মা বুঝেছো। এটা হলো তোমার নিজের সংসার।
নীলা মাথা তুলে তাকালো মোল্লিকার দিকে ছলছল চোখে!
নীলাঃ আচ্ছা। আমি আপনাকে মা বলতে পারি!
মোল্লিকাঃ কেন নয় মা! আমি কি তোমার মা হতে পারি না।নিজের মা কে ছেড়ে এসেছো বলে কি কষ্ট হচ্ছে তাই না। আমি জানি বিয়ে হলে সবার এরকম হয়।নিজের মা বাবা ছেড়ে থাকতে। মাকে মনে পরছে বুঝি খুব
নীলার মুখে আলতো করে ছুয়ে।
নীলাঃ আমার মা নেই আন্টি। আপনারা তো কিছুই জানেন না আমার ব্যাপারে।
কেদে কেদে বললো নীলা
মোল্লিকাঃ আরে পাগলি মেয়ে কাদছে কেমন করে।আমি না তোমার মা তাহলে আমাকে আন্টি বলছো কেন। তোমার মা নেই তো কি হয়েছে আমি আছি তো।
নীলাঃ ঠিক আছে মা । আর বলবো না এই বলে নীলা মোল্লিকাকে জড়িয়ে ধরলো। মোল্লিকাও আবেসে নীলাকে আগলে নিলো।
হিয়া শুভ্র এসব কিছু দেখে যাচ্ছে।
হিয়া বললো বাহ মা ভাবিকে পেয়ে তো আমাদের ভুলেই গেছ।
শুভ্রও হিয়ার সাথে তাল মিলিয়ে বললো হুম তাই তো দেখছি।
আমরা এখানে থেকে কি করবো চল।
মাঝ খান থেকে ফিহা বলে উঠলো আর আমি। আমাকে তো দাদুন একেবারেই ভুলে গেছে মনে হচ্ছে এক বার তাকালাও না।
নীলাকে ছেড়ে দিয়ে মোল্লিকা সবাই কে উদ্দেশ্য করে বললো তোরা তো খুব হিংসুটে হয়েছিস হ্যাঁ। এই বলে সবাই হেসে দিলো নীলাও সবার সাথে হেসে দিলো।
এর মধ্যে শুভ্রর চোখ পড়লো নীলার দিকে । এই বাড়িতে আসার পর এই প্রথম নীলাকে হাসতে দেখলো শুভ্র।কি মিষ্টি লাগছে মেয়েটিকে। হাসলে মেয়েটির ডান গালে একটা ছোট্ট টোল পরে।
হাসতে হাসতে নীলারও চোখ পরলো শুভ্রর দিকে। নীলা খেয়াল করলো শুভ্র অর দিকে তাকিয়ে আছে এক ধ্যানে —
Naino ki to baat….
To Naino jaane hay..
sapne ki raaz tu naina jaane hay….
Deel ki baate dhadkan jaane hay..
Jispe gujhre wo teene jaane hay….
আসলে কি ওরা জানে হৃদয়ের ইশারাতেই চোখ কাজ করে। দুজনের মনের ও নয়নের গভীর সেই চাহনীতে হারিয়ে গেছে ——
চলবে —–