#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#পর্ব_০৯
#মেহরাজ_হোসেন_রনি
আকাশ অফিসে বসে কাজ করছিল।তখন বাসা থেকে আকাশের কাছে কল আসলো।আকাশ কিছু না ভেবেই কলটা রিসিভ করে বলল
“হ্যা আম্মু বলো।”
“আকাশ আয়ানের খোজ পেয়েছি।তুই জলদি বাসায় আয়।”
“আমি এখনি বাসায় আসছি আম্মু।”
কলটা কেটেই আকাশ বেড়িয়ে পরলো বাসায় জন্য।নতুন বাসাতে তেমন কিছুই নেই।তাই নিরাকে নিয়ে মার্কেটে গেল কিছু জিনিসপত্র কিনে নিয়ে আসতে।রান্না করার জন্য কিছু আর রাতের খাবারের জন্য কিছু নিয়ে আসলো।বাসায় এসে নিরা বলল
“আয়ান তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট করো।আমি এর মধ্যে রান্না বসিয়ে দেই।”
আয়ান মুচকি হেসে ফ্রেশ হতে চলে গেল।আর নিরা রান্না ঘরে গেল।আকাশ কিছুসময়ের মধ্যে বাসায় চলে আসলো।আকাশ ওর আম্মুকে বলল
“আম্মু আয়ান এখন কোথায় আছে বলো আমাকে।আমি ওকে নিয়ে আসছি।”
আকাশের আম্মুর পাশ থেকে রিয়া বলল
“আয়ান এখন সিলেটে আছে।”
“সিলেটে ঠিকানা কি আছে তোর কাছে?”
“নাহ।কিন্তু নিরা ভাবি নাকি আয়ানের সাথেই আছে।”
“তুই নিরাকে কল দিয়ে আয়ানের ঠিকানাটা জেনে নে।”
নিরা রান্না করছিল তখন রিয়ার নাম্বার থেকে কল আসলো।নিরা কল রিসিভ করে বলল
“হ্যা রিয়া বলো।”
“ভাবি আয়ান কোথায় এখন?”
“বাসাতেই আছে।ফ্রেশ হতে গেছে।কেনো কি হয়েছে?”
“তুমি যে আয়ানকে খুজে পেয়েছো সেটা বলো নি কেনো?”
“আসলে রিয়া আয়ান বলেছিল ওর কথা বাসার কাউকে যেন না বলি।”
“আচ্ছা এখন আয়ানের ঠিকানা দেও।”
নিরা আয়ানের নতুন বাসার ঠিকানা দিয়ে দিলো।আকাশ রিয়ার থেকে ঠিকানাটা নিয়ে চলে আসবে তখন আকাশের আম্মু আর রিয়া বলল তারাও নাকি যাবে।পরে ওদের নিয়েই বেড়িয়ে পরলো।
নিলা একা একা বসে ফোন চালাচ্ছিল তখন সায়রা রুমে আসলো।সায়রা বলল
“আপু কি করছো?”
“দেখছিস না ফোন চালাচ্ছি।”
সায়রা নিলার পাশে বসে বলল
“আপু নিরা আপুর বাসায় কবে যাবে?”
“মনে হয় আগামীকাল সকালে।কেনো?”
“আমাকেও সাথে নিয়ে যাবে?মানে আমিও যেতে চাচ্ছিলাম।”
“আচ্ছা যাস।খালা যদি যেতে দেয় তাহলে যাস।”
“আম্মু বলেছে তুমি নিয়ে গেলে যেতে দিবে।”
“তাহলে সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠিস।”
“আচ্ছা আপু এই ছেলেটা কে গো?”
নিলা ফোনে রিয়াদের ফেসবুক আইডিটা দেখছিল।সায়রা সেটাই দেখে কথাটা বলল।নিলা বলল
“এইটা আমার একটা ফ্রেন্ড।”
“আপু তোমার ফ্রেন্ডটা তো বেস হ্যান্ডসাম।সিঙ্গেল নাকি?”
কথাটা শুনে নিলা এমন ভাবে সায়রার দিকে তাকালো মনে হয় সায়রা কোনো ভুল কথা বলে ফেলেছে।সায়রা কিছুটা ভয়ে পেয়ে বলল
“আমি তো এমনেই জিজ্ঞাস করেছিলাম আপু।আমার একটু কাছে এখন আমি আসি।”
সায়রা কোনোরকম ভাবে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো।নিলা যেইভাবে সায়রার দিকে তাকিয়েছে সেটা দেখে যে কেউ ভয় পেয়ে যাবে।
নিরা রান্না শেষ করে রুমে গেল।আয়ান ফোনে একটু কাজ করছিল।নিরাকে আসতে দেখে বলল
“রান্না শেষ হয়েছে?”
“হ্যা।আমি একটু ফ্রেশ হয়ে নি তারপরে খাবার দিচ্ছি।”
“আচ্ছা।”
রাতে আরিফ মাহমুদ মানে আয়ানের আব্বু বাসায় আসলো।কিন্তু বাসায় কেউ নেই।তাই আকাশকে কল দিলো।আকাশ ড্রাইভ করছিল।তখন ওর আব্বু কল দিয়েছে।আকাশ ফোনটা রিয়া কাছে দিয়ে বলে কথা বলতে।রিয়া কল রিসিভ করে বলে
“হ্যালো ফুপা।”
“হ্যা রিয়া তোরা সবাই কোথায়?বাসায় কেউ নেই কেনো?”
“ফুপা আমরা সবাই আয়ানের কাছে যাচ্ছি সিলেটে।আয়ানকে আনতে।”
“তোর ফুপিকে দেখে রাখিস।রাখছি এখন।”
আরিফ মাহমুদ কলটা কেটে দিলেন।রিয়ার পাশ থেকে আকাশের আম্মু বলল
“কি বলেছে ওনি?”
“বলেছে তোমার খেয়াল রাখতে।”
আকাশের মা কিছু আর বলল না।নিরা ফ্রেশ হয়ে এসে বলল
“আয়ান খেতে আসো।”
“হুম চলেন।”
নিরা আর আয়ান একসাথে খেতে বসলো।খাওয়ার মধ্যে নিরা বলল
“আমাকে এত তাড়াতাড়ি ক্ষমা করে দিবে সেটা ভাবিনি।”
“আপনি আবার কি অন্যায় করেছিলেন?”
“এই যে সে দিন আমার জন্য তোমাকে বাসা থেকে বের করে দিলো আব্বু।আমি যদি তোমাকে সত্যি কথাটা না বলতে বললাম তাহলে তো আর এমন কিছু হতো না।সব সমস্যা তো আমাকে নিয়েই হয়েছিল।”
“এইখানে তো আপনার কোনো দোষ ছিল না।আপনার মনে হয়েছিল সত্যিটা সবার জানার দরকার।তাই আপনি এমনটা করতে বলেছিলেন।আর অন্যায়টা যেহেতু আমি করেছিলাম।তাই শাস্তিটা তো আমাকেই পাওয়ার দরকার তাই না।”
“তুমি তো আমার জন্যই এইসব করেছিলে আয়ান।কিন্তু তোমার পদ্ধতিটা কিছুটা ভুল ছিল।কিন্তু এটার মানে এই না যে তুমি সবার থেকে দূরে সরে থাকবে।”
“আচ্ছা এই সব কথা এখন বাদ দিন।জলদি খাবার শেষ করুন আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।”
নিরা আর কথা বাড়ালো না।খাবার শেষ করে নিরা সব কিছু গুছিয়ে রাখতে চলে গেল।যেহেতু আজ নতুন বাসাতে উঠেছে।তাই বাসাতে কোনো খাট নেই।ওরা আজ নিচে ঘুমাবে।আয়ান বিছানাতে শুয়ে ছিল কিছুসময় পর নিরা এসে আয়ানের বুকে এসে শুয়ে পরলো।আয়ান কিছুটা হাসলো।নিরা বলল
“আয়ান!”
“হুম।”
“এত লুকোচুরি কেনো করলে?”
“যদি লুকোচুরি না করতাম তাহলে তো আপনাকে পেতাম না।আর আপনিও তো আমাকে ভালোবাসতেন না তাই না।”
নিরা আয়ানের বুক থেকে মাথা তুলে বলল
“আমি তোমাকে ভালোবাসি এইটা আবার তোমাকে কে বলেছে হ্যা?”
আয়ান হেসে বলল
“তাহলে আমার কাছে আছেন কেনো চলে যান?আমাকে যেহেতু ভালোই বাসেন না তাহলে আসলেন কেনো এইখানে?”
“চুপ একদম চুপ।বেশি কথা বললে এখন কিন্তু তোমার খবর আছে বলে দিলাম।আমাকে ঘুমাতে দেও।অনেক দিন শান্তি মত ঘুমাতে পারি নি।”
আয়ান কিছু বলল না শুধু হাসলো।ঘুমিয়ে গেল ওরা।পরের দিন সকালে আয়ান ফ্রেশ হয়ে রেস্টুরেন্টে চলে গেল।নিরা নিলাকে কল দিয়ে বলল বাসায় আসতে।যেহেতু নতুন বাসাটা বেশি দূরে ছিল না তাই এক ঘন্টার মধ্যে নিলা আর সায়রা নিরার কাছে চলে আসলো।
আকাশ সিলেটে চলে এসেছে কিন্তু আয়ানের নতুন বাসাটা ঠিক কোথায় সেটা বুঝতে পারছে না।তাই রিয়াকে বলল নিরার সাথে কথা বলতে।নিরা ওর বোনদের সাথে কথা বলছিল তখন রিয়ার কল আসলো।নিরা কলটা রিসিভ করে বলল
“হ্যা রিয়া বলো।”
“ভাবি আমরা তো এসে পরেছি সিলেটে কিন্তু বাসাটা তো খুজে পাচ্ছি না।”
পরে নিরা বুঝিয়ে বলল বাসার ঠিকানাটা।রিয়ার সাথে কথা শেষ করতেই নিলা বলল
“আপু রিয়া আপু কেনো কল দিয়েছিল?”
“আম্মু রিয়া আর আয়ানের ভাই আসতেছে।কিন্তু বাসাটা ঠিক খুজে পাচ্ছে না।তাই ঠিকানাটা বলে দিলাম।”
“তুমি না আয়ান ভাইয়ার সাথে থাকবে তাহলে ওনাদেরকে আয়ান ভাইয়ার কথা বললে কেনো?”
“আমি কি সারাজীবন আয়ানকে আলাদা থাকবো নাকি?আর আয়ানের সাথে এইখানে থাকছি কারন আয়ান আবার চলে না যায়।আবার চলে গেল আমি আয়ানকে ছাড়া থাকবো কিভাবে?তাই রিয়া যখন বাসার ঠিকানা জানতে চেয়েছিল তখন বাসার ঠিকানাটা বলে দেই।”
“তুমি যে কি করতে চাচ্ছো আপু।আমি কিছুই বুজতে পারছি না।”
“তোর এত বুঝে কাজ নেই।আমি সবাইকে একসাথে নিয়ে থাকতে চাই এবার বুঝেছিস।”
নিলা আর কিছু বলল না।কিছুসময় পর রিয়ারা চলে আসলো এই বাসাতে।আয়ান মা তো বাসায় আসার সাথে সাথেই আয়ানকে খুঁজছে।রিয়া বলল
“ভাবি আয়ান কোথায়?”
“আয়ান তো রেস্টুরেন্টে গেছে।”
“এত সকালে রেস্টুরেন্টে কেনো?”
“আয়ান রেস্টুরেন্টের ম্যানেজের জব করে।”
কথাটা শুনে আকাশ বলল
“আমাদের নিজস্ব অফিস থাকতে আয়ান কি না রেস্টুরেন্টে ম্যানেজারের জব করে।কোন রেস্টুরেন্টে জব করে আয়ান?”
“এইখানে আসার সময় যে বড় রেস্টুরেন্টটা আছে সেটাতেই।”
আকাশ বলল
“আম্মু তোমরা এইখানে থাকো আমি আয়ানকে নিয়ে আসছি।”
আয়ানের মা বলল
“তুই একটু তাড়াতাড়ি নিয়ে আয় আয়ানকে।”
আকাশ বেড়িয়ে গেল রেস্টুরেন্টের জন্য।আয়ান আজ একটু আগেই গিয়েছে রেস্টুরেন্টে।কারন গতকাল ছুটি নিয়েছিল।তাই আজ আগে এসে গতকালকের সব হিসাবটা মিলাচ্ছে।কিছুসময় পর একজন এসে আয়ানকে বলল
“স্যার আপনার সাথে একজন দেখা করতে এসেছে।”
আয়ান কাজটা রেখে কে এসেছে সেটা দেখতে গেল।আয়ান গিয়ে দেখে আকাশ দারিয়ে আছে।আয়ানকে দেখে আকাশ বলল
“আয়ান তুই নাকি এইখানে ম্যানেজারের জব করছিস?”
“হ্যা ভাইয়া।”
“আমাদের অফিস থাকতে তুই কি না এইখানে জব করছিস।তোর এইখানে জব করার দরকার নেই।তুই আমার সাথে আমাদের বাসায় চল।তোর বাসায় আম্মু এসেছে তোকে দেখার জন্য।এখন বাসায় চল তোর।”
“ভাইয়া আমি ওই বাসাতে যাবো না।তুমি আম্মুকে বলো আমার জন্য অপেক্ষা করতে।আমি বিকালে এসে আম্মুর সাথে দেখা করছি।এখন তুমি বাসায় যাও।”
“তুই তাহলে আমার সাথে যাবি না।”
“তুমি ভালো করেই জানো আমি এখন যাবো না।তাই এখানে কথা না বলে বাসায় যাও।আমি বিকালে বাসায় আসছি।”
আকাশকে বাসায় আসতে দেখে ওর আম্মু বলল
“আকাশ আয়ান কোথায়?আয়ানকে নিয়ে আসিস নি।”
#চলবে…
What the wow story 😘😘😘
I love it soooo much 😍😍
Very Fantastic story🤩🤩🤩