ভালোবাসার লুকোচুরি পর্ব-০৭

0
1848

#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#পর্ব_০৭
#মেহরাজ_হোসেন_রনি

এবার আয়ান যা বলল সেটা শুনে নিরা কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলার মত অবস্থা।আয়ান বলল

“হ্যা আমিই আকাশ ভাইয়াকে কিডন্যাপ করিয়েছিলাম।”

কথাটা শুনে নিরা নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছে না।নিরা কিছুসময় ভাবার পরে বলল

“আয়ান তুমি আমার সাথে ফান করছো তাই না।”

“নাহ।আমি সত্যি বলছি।ভাইয়াকে যদি কিডন্যাপ না করাতাম তাহলে তো আপনাকে পেতাম না।”

কথাটা শুনে নিরা হতভম্ব হয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল

“মানে?”

“মানে হল আমি আপনাকে ভালোবাসি।তাও আবার তিন বছর আগে থেকেই।”

“কি বলছো এইসব আয়ান!তোমার পরিবারের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল যেইদিন তোমরা আমাকে দেখতে এসেছিলে?তাহলে তিন বছর আগে থেকে কিভাবে আমাকে ভালোবাসো?”

আয়ান নিরার থেকে নিজের ফোনটা নিয়ে নিরাকে একটা ফটো দেখিয়ে বলল

“কিছু মনে পরেছে?”

নিরা ফটোটা ভালো করে দেখলো।এইটা নিরার দুই তিন বছর আগের ছবি।ফটোতে নিরা পানির উপর দারিয়ে।এই ফটোটা নিরা কক্সবাজার বেড়াতে যাওয়ার সময়ের ফটো।আরো কয়েকটা ফটো ছিল কিন্তু শেষ ফটোতে আয়ানের ঠিক পিছনে নিরাকে দেখা যাচ্ছিল।আয়ান আবার বলল

“আমি তখন থেকেই আপনাকে ভালোবাসি।”

“তাহলে সেটা কাউকে বলো কি কেনো?”

“নিজের থেকে বড় কাউকে ভালোবাসি।সেটা কে বলবো?আর আগে যদি বললাম তাহলে কি আপনি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হতেন?”

“তোমার পরিবারকে তো বলতে পারতে।নাকি সেটার পারতে না আয়ান?”

“আমি ঠিক করেছিলাম ভাইয়ার বিয়ে হওয়ার পরে বাসায় আপনার কথা বলল।কিন্তু যখন ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখতে গিয়ে আপনাকে দেখলাম।তখন আমার কি অবস্থা হয়েছিল সেটা আপনাকে বলে বুঝাতে পারবো না।কিন্তু আমি আপনাকে হারিয়ে ফেলতে চাই নি।তাই বিয়ের আগের দিন হলুদের অনুষ্ঠান শেষে ভাইয়াকে কিডন্যাপ করিয়ে রেখি। যাতে আপনার বিয়েটা আমার সাথেই হয়।”

নিরা চুপ করে আছে কিছু বলছে না।কেউ নিরার অজানতেই ভালোবাসতে পারে সেটা নিরার জানা ছিল না।আয়ানও চুপ করে আছে।আজ দুইজনের মধ্যে নিরবতা ভিন্ন কিছু বলতে চাচ্ছে।আয়ানের একটাই ভয় নিরা যদি ওকে ছেড়ে একেবারের জন্য চলে যায় তাহলে আয়ান কি করবে?এবার নিরা বলল

“আয়ান আমার সাথে এসো।”

আয়ান নিরার দিকে তাকিয়ে দেখলো নিরা রুম থেকে চলে যাচ্ছিল।নিরার পিছন পিছনে আয়ানও রুম থেকে বের হয়ে গেল।ড্রয়িংরুমে আয়ানের আম্মু নিরা আর আয়ানকে।দেখে বলল

“তোরা এসে পরেছিস।এখন খাবার খেতে বসে পর।”

নিরা বলল
“আম্মু আপনি আব্বুকে একটু নিয়ে আসেন তো।আয়ান কিছু বলবে সবাইকে।”

“কি হয়েছে নিরা মা?”

“আম্মু প্লিজ আপনি আব্বুকে ডেকে নিয়ে আসুন।”

ওদের কথা বলার মধ্যে সবাই এসে গেছে।আয়ানের আব্বু বলল
“কি হয়েছে নিরা মা।”

এবার নিরা বলল
“আয়ান এবার সবাইকে সত্যিটা বলো।”

আকাশ বলল
“কিসের সত্যি কথা বলবে আয়ান?”

আয়ানের আব্বু বলল
“কিরে আয়ান কি সত্যি কথা বলবি তুই?”

তারপরে আয়ান যা বলল তা শুনে সবাই আশ্চর্য হয়ে গেল।আয়ানের আম্মু এসে আয়ানকে একটা চর মেরে বলল

“ছিঃ আয়ান তুই নিজের ভাইকে কিডন্যাপ করেছিলি।তাও আবার নিরার জন্য?তুই বললে কি আমরা তোর বিয়ে নিরার সাথে করাতাম না নাকি?তুই এই কাজটা কিভাবে করতে পারলি হ্যা?”

আয়ান কিছু বলছে না।কিন্তু মনে মনে বলছে
“আম্মু তোমরা সবাই রাজি হলেও নিরা কি রাজি হতো?আর নিরার পরিবার?তারা কি রাজি হত নিরা আর আমার বিয়েতে?কখনোই না।”

আকাশ কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেল।আকাশের পিছনে রিয়াও আকাশের রুমে দিকে গেল।এবার আয়ানের আব্বু বলল

“তুই কি নিজে বাসা থেকে চলে যাবি নাকি আমি ঘাড়ধাক্কা দিয়ে তোকে বের করতে হবে?”

নিরা বলল
“আব্বু আমি..”

“নাহ নিরা মা তুই কিছু বলিস না আজ।এমন ছেলে আমার থাকার চেয়ে না থাকা ভালো।কিরে তুই এখনো দারিয়ে আছিস কেনো?”

আয়ান বলল
“হুম যাচ্ছি।”

আয়ান রুমের দিকে যাচ্ছিল তখন আয়ানের আব্বু বলল
“যেইভাবে আছিস সেইভাবেই চলে যা।”

আয়ান একবার সবার দিকে তাকিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেল।আয়ানের আব্বু নিরাকে বলল

“নিরা মা তোর যদি এইখানে থাকতে মন না চায় তাহলে তোর আব্বু আম্মুর কাছে চলে যেতে পারিস।আমাদের জন্য নিজের ক্ষতি করিস না।আমরা আমাদের ছেলেকে ভালোভাবে লালনপালন করতে পারি নি।তা না হলে এমনটা হত না।”

আয়ানের আব্বুও রুমে চলে গেলেন।ড্রয়িংরুমে শুধু নিরা আর ওর শাশুড়ি আছে।নিরা শাশুড়ি মাকে কিছু বলবে কিন্তু সেটা আর হয়ে পারলো না।কারন আয়ানের মা এখনো দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।আর তার চোখ দিয়ে পানি পরছে কিন্তু কান্না কোনো শব্দ হচ্ছে না।

আয়ান রাস্তার পাশে বসে আছে।রাত অনেক হয়েছে তাই রানাকে কল দিয়ে বলেছে এইখানে আসতে।কিছুসময়ের মধ্যে রানা বাইক নিয়ে আয়ানের বলা জায়গাতে এসে পরলো।আয়ানকে এইভাবে বসে থাকতে দেখে রানা অনেকটা শক।রানা কিছুটা বিচলিত হয়ে বলল

“আয়ান তুই এইভাবে রাস্তার পাশে বসে আছিস কেনো?আর এত রাতে তুই এইখানে কি করছিস?”

“তুই আমাকে কিছুদিন থাকার ব্যবস্থা করে দিতে পারবি?”

“কি হয়েছে আয়ান?কোনো সমস্যা হয়েছে?”

“সেটা জেনে তোর কোনো কাজ নেই।তুই শুধু বল আমার থাকার ব্যবস্থা করে দিয়ে পারবি কিছুদিনের জন্য?”

“আচ্ছা তুই এখন আমার সাথে চল।বাকি সব কথা পরে হবে।”

আয়ান আর কিছু না বলে রানার সাথে চলে গেল।নিরা রুমে বসে ভাবছে নিরা যা করেছে সেটা ঠিক নাকি ভুল?কিছুটা দোটানাতে পরে গেছে নিরা।

আকাশের পাশে রিয়া বসে আছে।রিয়ার এখন আকাশকে ঠিক কি বলা উচিত সেটা রিয়া ঠিক জানে না।তাও রিয়া বলল

“আপনি কি আয়ানের উপর রেগে আছে বা ও যা করেছে সেটাতে কষ্ট পেয়েছেন?”

“আচ্ছা রিয়া আয়ান যদি আমাকে এই কথাটা বিয়ের আগে বলতো তাহলে কি আমি নিরাকে বিয়ে করার কথা ভাবতাম। কিন্তু আয়ান কিভাবে পারলো এই রকম একটা কাজ করতে?”

“আমার মনে হচ্ছে সমস্যাটা এইখানে না।অন্য কিছু।নাহলে আয়ান তো এমন কিছু করার কথা না।”

আকাশ কিছু বলল না।চুপ করে থাকলো।বাসাটা কেমন থমথমে হয়ে গেছে।বাসার সবাই আয়ানের বিষয়টা নিয়ে অনেকটাই শক।পরের দিন এই খবরটা আয়ানের মামার বাসায় চলে যায় সাথে নিরাদের বাসাতেও।প্রথম কয়েকদিন সবাই আয়ানের চলে যাওয়া নিয়ে চুপ থাকলেও সপ্তাহ খানিক পরে সবাই আয়ানের খোজ জানতে চায় কিন্তু কেউ আর আয়ানের খোজ পায় না।

আয়ানের আব্বু বাদে আয়ানের খোজ সবাই করছে কিন্তু কেউ ঠিক জানে না আয়ান কোথায় আছে।রিয়া আকাশকে বলে

“ফুপি এখন প্রতি রাতেই আয়ানের জন্য কান্না করছে।আপনি একটু খুজে নিয়ে আসুন না আয়ানকে।”

“তোর কি মনে হয় রিয়া আমি আয়ানকে খুজি নি?আয়ানের খোজ পেলে আমি ঠিকই ওকে বাসায় নিয়ে আসতাম।হয়তো আয়ান একটা ভুল করেছিল।কিন্তু সেটার জন্য আমি আমার ভাইকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারি না তাই না।”

“তো এখন কি করবেন?আয়ান বাসা থেকে চলে গেছে প্রায় দুই মাস হয়ে গেল কিন্তু এখনো কোনো খোজ পাওয়া গেল না।নিরা ভাবি এখন মনে করছে সব কিছু ওনার জন্য হয়েছে।তাই সবসময় মনখারাপ করে বসে থাকে।তাই আমি ভাবির ছোট বোনকে কল দিয়ে বলেছি ভাবিকে কিছুদিনের জন্য যেন তাদের বাসায় নিয়ে যায়।”

আকাশ এখন আর নিরার বিষয়টা নিয়ে ভাবে না।কিন্তু মাঝেমাঝে ঠিকই নিরার কথা মনে পরে কিন্তু সেটা কাউকে বুঝতে দেয় না।এখন আকাশ আয়ানকে নিয়ে ভাবছে।

নিরা গতকাল ওর আব্বু আম্মুর কাছে চলে এসেছে।প্রথমে আসতে চাচ্ছিল না কিন্তু নিলার অনেক জোরাজোরিতে আসতে হয় নিরাকে।নিলা নিজে ওর আব্বুকে নিয়ে নিরাকে আনতে গিয়েছিল।আয়ানের পরিবার কিছু বলে নি।কারন নিরা আর আগের মত নেই।অনেকটা চুপচাপ হয়ে গেছে।তাই আয়ানের আম্মু আর যেতে না করেনি।

নিলা নিরার রুমে এসে দেখে নিরা চুপ করে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।নিলা যে রুমে এসেছে সেই দিকে নিরার কোনো খেয়াল নেই।নিলা নিরার পাশে বসে বলল

“আপু!”

নিরা কিছু না বলে শুধু নিলার দিকে তাকালো।নিলা বলল

“আপু এইভাবে আর কত দিন?নিজের কি অবস্থা হয়েছে দেখেছো?”

“আর কিছু বলবি?”

নিলা বুঝলো এইভাবে নিরার কিছু হবে না।তাই ঠিক করলো কোথাও থেকে ঘুরে আসবে।তাই বলল

“আপু আগামীকাল তুমি আমার সাথে খালার বাসায় যাবে।”

“নাহ আমার ভালো লাগছে না।তুই একা যা।”

“ওহ এখন তুমি যাবে কেনো আমার সাথে?আমি কে তোমার?আমি তো তোমার কেউ না।তুমি তো আমাকে নিজের বোন ভাবো না।যদি ভাবতে তাহলে আমার সাথে ঠিকই যেতে।”

“ব্লাকমেইল করছিস?”

“যা ভাবো তুমি।এখন বলো যাবে কি না।”

“দুই দিনের বেশি কিন্তু আমি থাকতে পারবো না আগেই বলে দিলাম।”

“আচ্ছা যেমনটা তুমি বলবে সেটাই হবে।আমি তাহলে সব গুছিয়ে নেই।”

নিলা কিছুটা খুশি হয়ে চলে গেল।কিন্তু নিরার মনে খুশি নেই।নিরা আয়ানকে অনেকটা মিস করে।আয়ানের সাথে কাটানো সময়টা অনেক মিস করে নিরা।

রাতেই দুই বোন বেড়িয়ে পরে নিলার খালার বাসাতে যাওয়ার জন্য।সকালের মধ্যে নিরা আর নিলা সিলেটে পোঁছে যায়।বিকালে নিলার খালাতো বোন সায়রা, নিরা আর নিলাকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যায়।ঘুরাঘুরি শেষে সায়রা বলে

“আপু অনেক তো ঘুরলাম এখন চলো কিছু খেয়ে নেই।”

নিরা কিছু বলছে না।নিলা বলল
“হ্যা চল।এইখানে ভালো রেস্টুরেন্ট কোথায় আছে সেটাতে চল।”

সায়রা বলল
“তাহলে আমাদের এইখানের বেস্ট রেস্টুরেন্ট যেটা সেটাতে চলো।”

রেস্টুরেন্টে তিনজন বসে আছে।নিলা বলল
“আপু তোরা বস আমি খাবার অডার দিয়ে আসি।”

নিলা খাবার অডার দিতে চলে গেল।নিরা আর সায়রা বসে আছে।কিছুসময় পর নিলা এসে বলল

“আপু আয়ান ভাইয়া।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে