#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#পর্ব_০৫
#মেহরাজ_হোসেন_রনি
এবার নিরা না চাইতেও ভিতরে চলে গেল।রুমে আয়ান বসে ছিল।নিরাকে আসতে দেখে আয়ান বলল
“আপনি কি এখনো সেই বিষয়টা নিয়ে আমার উপর রেগে আছন?”
“তুমি কোন বিষয়ের কথা বলছো আয়ান?আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না।”
“দুপুরে আপনার আব্বু আম্মুর সাথে লাঞ্চ না করেই বেড়িয়ে গেলাম।সেটা নিয়ে হয় তো আপনি কিছুটা রেগে আছেন?”
“নাহ তেমন কিছু না।”
(“আমার তো তোমার সামনে আসতেই মন চাচ্ছে না।তোমাকে দেখলেই শুধু দুপুরের সেই দৃশ্যের কথা মনে পরে যায়।মন এই খান থেকে পালিয়ে যাই।”)
“তাহলে আমি এখন শুয়ে পড়ি।আচ্ছা আপনার কাছে কি কোল বালিস আছে? না মানে কোল বালিস ছাড়া আমার ঘুমে কিছুটা সমস্যা হয়।”
“আমি এনে দিচ্ছি।তুমি শুয়ে পড়ো।”
নিরা কোলবালিশ নিয়ে এসে খাটের মধ্যে রেখে শুয়ে পরলো।কিছুসময় পর নিরা শুয়া থেকে উঠে বসে আয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখলো আয়ান ঘুমিয়ে পড়েছে।হালকা আলোতে আয়ানকে ভালোভাবেই দেখা যাচ্ছে।নিরা মনে মনে ভাবছে
“ইস একদম বাচ্চাদের মত ঘুমাচ্ছে।আয়ান যে কেনো আমার বড় হল না।এইসব আমি কি ভাবছি।এইটা ঠিক না।মাথা থেকে এইসব বাদ দিয়ে ঘুমিয়ে যা নিরা।তোর জন্য এইসব না।”
নিজের মাথায় আস্তে করে বারি দিয়ে আবার শুয়ে পরলো।পরের দিন সকাল সকাল রিয়াদ ওর ফুপির বাসায় এসে হাজির।রিয়াদকে দেখে আকাশের মা বলল
“ভালো করেছিস এসে।এখন তোর আকাশ ভাইয়ের রুমে গিয়ে রেস্ট নে।নাস্তার সময় কথা হবে ঠিক আছে।”
রিয়াদ কিছুটা ক্লান্ত।তাই কিছু না বলেই আকাশের রুমে চলে গেল রেস্ট করতে।নিলা আজ অনেকটা সকালে ঘুম থেকে উঠে গেছে।বারান্দায় বসে সকালে আবহাওয়া অনুভূতি নিচ্ছে।আগে আপুর সাথে বসে সকালে আবহাওয়া অনুভূতি উপভোগ করতো কিন্তু এখন তো নিলা একা।
নিরার ঘুমটা ভেঙে গেল।অনেকটা সকাল হয়ে গেছে কিন্তু চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে নিরা আয়ানের বুকের উপর খুব আরাম করে শুয়ে আছে।নিরা এক ঝটকায় আয়ানের থেকে দূরে শরে গেল।ভাগ্য ভালো আয়ানের ঘুমটা এখনো ভাঙে নি।যদি আয়ান দেখে ফেলতো নিরা ওর বুকের উপর ঘুমিয়ে ছিল তাহলে কি লজ্জাটাই নাহ পেতে হতো নিরার।কিন্তু নিরা ঘুমের মধ্যে আয়ানের বুকের গেল কিভাবে?নিরা তো ঘুমের মধ্যে স্লিলিং ওয়াক করে না তাহলে? কিন্তু সেটা যাই হোক নিরার ঘুমটা আজ অনেক ভালো হয়েছে।
আকাশ ঘুম থেকে উঠে পাশে রিয়াদকে দেখলো।রিয়াদ আকাশকে দেখে বলল
“গুড মর্নিং আকাশ ভাইয়া।”
“গুড মর্নিং রিয়াদ।কখন এসেছিস তুই।”
“বেশিক্ষণ হয় নি ভাইয়া।”
“আচ্ছা তুই থাক।আমার আবার আজ অফিসে যেতে হবে।”
“আচ্ছা ভাইয়া।”
আকাশ ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে গেল।কিন্তু আজ রিয়াকে নাস্তা টেবিলে আনতে দেখে আকাশ কিছুটা অবাক হল।কারন রিয়া তো কখনো নাস্তা দেয় না।আকাশ আর সেই দিকে খেয়াল না দিয়ে নাস্তা শেষ করে রেডি হতে গেল।আরিফ মাহমুদ তার শ্যালকের সাথে রাতে এসে আকাশ আর রিয়ার বিয়ের কথা বলবে বলে ঠিক করে।তাই নাস্তা করার সময় তেমন কিছু বলে নি।
রিয়াদ নাস্তা করতে এসে ওর আম্মুকে বলল
“আম্মু নিরা ভাবি কোথায়?ভাবিকে তো দেখছি না?”
আকাশের মামি মানে রিয়াদের মা বলল
“নিরা তো বাসায় নেই।নিরা আর আয়ান গতকাল নিরাদের বাসায় গেছে।আজ বা আগামীকালকের মধ্যে চলে আসবে।”
“ওহ আচ্ছা।”
(“তাহলে একটু অপেক্ষা করতে হবে মনে হচ্ছে।সমস্যা নেই ওই মেয়ের জন্য না হয় একটু অপেক্ষা করলাম।”)
দুইদিন পরে আয়ান আর নিরা বাসায় চলে আসে।রাতে কিছুটা দেড়ি করে আসাতে কারো সাথে আর তেমন কথা হয় নি।পরের দিন সকালে নিরা আয়ানের আম্মুর সাথে নাস্তা বানাতে সাহায্য করতে চাচ্ছিল কিন্তু আয়ানের মা বলল
“নিরা তোর কিছু করতে হবে না মা।তুই রুমে গিয়ে দেখ আয়ানের কিছু লাগবে কি না।আয়ান তো মনে হয় আজ অফিসে যাবে।”
“আম্মু আমি আয়নের সব কিছু রেডি করে দিয়ে এসেছে।আপনি এখন বলেন আমাকে কি করতে হবে?”
“তাহলে নিরা মা তুই খাবার গুলো নিয়ে টেবিলে রেখে দিয়ে আয়।”
“আচ্ছা আম্মু।”
নিরা নাস্তা গুলো খাবার টেবিলে রেখে আসলো।কিছুসময় পর সবাই এক এক করে নাস্তার টেবিলে আসলো নাস্তা করার জন্য।সবার শেষে আয়ান আসলো নাস্তা করতে।আয়ানকে দেখে আকাশ বলল
“কিরে আয়ান কখন আসলি?”
“ভাইয়া গতকাল রাতে এসেছি।বেশি রাত হয়ে গেছিল তাই আর কারো সাথে তেমন একটা দেখা হয় নি।”
“ওহ।তা আজ অফিসে যাবি নাকি?”
“হুম যাবো তো।”
একটু পরেই নিরা আর আয়ানের আম্মু রান্না ঘর থেকে আসলো সবাইকে নাস্তা দিতে।নিরাকে দেখে আকাশ কিছুক্ষণ নিরার দিকে তাকিয়ে ছিল।নিরা অবশ্য বিষয়টা খেয়াল করেছিল।নাস্তা শেষ করে আয়ান আকাশ আর ওদের আব্বু অফিসে চলে গেল।
নিরা নাস্তা শেষ করে রুমে যাচ্ছিল তখন রিয়াদ বলল
“ভাবি আপনার সাথে একটু কথা বলা যাবে?খুব দরকার ছিল।”
“আচ্ছা তাহলে রুমে আসো।”
নিরা আর রিয়াদ রুমে গেল।নিরা বলল
“এবার বলো রিয়াদ কি বলবে।”
“ভাবি তুমি আমার নাম জানলে কিভাবে?”
“রিয়া আমাকে বলেছিল তোমার কথা।তা এখন বলো কি বলবে।”
“আসলে ভাবি আমি একটা মেয়েকে বিয়ের দিন দেখেছিলাম কিন্তু একটা জরুরি কাজ থাকায় আমাকে চলে আসতে হয়েছি।কিন্তু পরে আর সেই মেয়েটার খোজ পাই নি।তুমি আমাকে একটু হেল্প করবে ভাবি?প্লিজ ভাবি না করো না।”
“ওহ তাহলে তো মনে হচ্ছে প্রেমভালোবাসার বিষয়।তা মেয়েটার কোনো ছবি আছে?”
“না ভাবি।”
“তাহলে আমি চিনবো কিভাবে রিয়াদ মেয়েটা কে?”
“আমি বলছি তুমি ভালো করে শুনো তাহলেই চিনতে পারবে।”
“আচ্ছা বলো।”
“বিয়ের দিন মিষ্টি কালারের লেহেঙ্গা পরেছিল।উচ্চতা প্রায় পাচঁ ফিটের মত হবে।আর হাসলে দুই গালেই টোল পড়ে।আরেকটা কথা ভাবি।”
“কি?”
“মেয়েটার নাকটা একটু ছোট।”
“হ্যা তোমাকে বলছে।নাক ঠিকই আছে।তোমার চোখেই ছোট লেগেছে।”
“তুমি চিনেছো নাকি মেয়েটাকে?”
“নাহ।ঠিক চিনতে পারি নি।কিন্তু আমি খোজ নিয়ে দেখছি মেয়েটা কে।ওকে।”
“আচ্ছা ভাবি।তুমি একটু খোজ নিয়ে দেখো প্লিজ।তুমি যা বলবে তাই হবে।তুমি শুধু মেয়েটার খোজটা বের করে দেও তাহলেই হবে।”
“আচ্ছা তুমি এখন যাও আমি দেখছি বিষয়টা।”
“আচ্ছা।”
রিয়াদ চলে গেল।নিরা মনে মনে বলছে
“ওর কত বড় সাহস।আমার বোনের নাকি নাক ছোট।আমার বোন যেইভাবে আছে সেইভাবেই পারফেক্ট আর কত কিউট!আর এই রিয়াদ বলছে কি না ওর নাক ছোট।রিয়াদকে আগে বলল না নিলার কথা।আগে দেখে নেই রিয়াদ কেমন তার পরে এইটা নিয়ে নিলার সাথে কথা বলল।”
আয়ান অফিসে কাজ করছিল তখন টেলিফোনে আয়ানের আব্বু ফোন দিয়ে তার রুমে যেতে বলল।আয়ান ওর আব্বুর রুমে গিয়ে বলল
“হ্যা আব্বু বলো।”
“আকাশের জন্য রিয়াকে তোর আম্মু পছন্দ করেছে।এখন তোর কি মতামত।”
“এইটা নিয়ে ভাইয়ার সাথে কথা বলেছো?”
“নাহ এখনো বলে নি।কিন্তু তোর মামার কোনো আপত্তি নেই।এখন তোর মতামত নিয়ে তারপরে আকাশের সাথে কথা বলল।”
“আমি রিয়াকে ভাবি বলে ডাকতে পারবো না আব্বু।সেটা আগেই বলে দিলাম।নাহ হলে আমাকে সারাদিন জ্বালিয়ে শেষ করে দিবে।”
আয়ানের আব্বু হেসে বলল
“তাহলে তো ভালোই হবে।”
রাতে সবাই একসাথে খাবার খেতে বসলো।রিয়ার আব্বু আম্মু বাসায় চলে গেছে একদিন আগেই।আয়ানের আম্মু নিরা আর রিয়া সবাইকে খাবার দিচ্ছিল তখন আয়ানের আব্বু বলল
“আচ্ছা আকাশ তোর সাথে একটা বিষয় নিয়ে কথা বলার ছিল।”
“হ্যা আব্বু বলো।”
“তোর আম্মু আর আমি ঠিক করেছি রিয়ার সাথে তোর বিয়ে দিবো।এখন তোর মতামত কি আকাশ?”
কথাটা শুনে আকাশ খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে বলল
“আমি এই পিচ্ছি মেয়েকে বিয়ে করবো সেটা তোমরা ভাবলে কিভাবে?আমি রিয়াকে বিয়ে করতে পারবো না আব্বু।”
#চলবে…