ভালোবাসার লুকোচুরি পর্ব-১২

0
1813

#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#পর্ব_১২
#মেহরাজ_হোসেন_রনি

রাতের খাবার খেয়ে আকাশের আব্বু রুমে যাচ্ছিল তখন ওনার শ্যালক কল দিলো মানে রিয়ার আব্বু।রিয়ার আব্বু এত রাতে কল দেয়াতে আরিফ মাহমুদ কিছুটা অবাক হলেন।সে কলটা রিসিভ করতেই তার শ্যালক বলল

“হ্যালো দুলাভাই আপনার সাথে একটু দরকারি কথা ছিল।”

“হুম বলো।”

“রিয়ার তো বিয়ের বয়স হয়েছে কিন্তু আকাশ বলেছে আয়ান বাসায় না আসা পর্যন্ত নাকি আকাশ বিয়ে করবে না।তা দুলাভাই এখন করবো?”

“আমাকে কি করতে বলছিস সেটা বল।”

“আপনি যদি আয়ানকে বাসায় নিয়ে আসতেন তাহলে ভালো হতো।আগে যা হয়েছে সেটা নিয়ে তো আর সারাজীবন বসে থাকলে হবে না।আর রিয়াকে তো আপনার মেয়ের মতই।ওর কথা ভেবে না হয় আয়ানকে বাসায় নিয়ে আসলেন।”

“তোর কি মনে হয় আমার ছেলে বাসায় আসুক সেটা আমি চাই না?আমি না হয় ভুল করে ওকে চলে যেতে বলেছিলাম।তাই বলে চলে গিয়ে এখন বাসায় আসবে না।আমি কয়েকদিন ধরে চাচ্ছিলাম ওর কাছে যেতে কিন্তু আমার কাছে তো ওর ঠিকানাটা নেই।”

“আচ্ছা আমি আপনাকে আয়ানের ঠিকানাটা দিচ্ছি।আপনি ওকে নিয়ে আসুন দুলাভাই।”

“আচ্ছা শুন।”

“হ্যা বলেন।”

“আমি যে তোর থেকে ওর ঠিকানা নিয়েছি।সেটা কাউকে বলার দরকার নেই।আর আমি যে ওর কাছে যাচ্ছি সেটাও কাউকে বলার দরকার নেই বুঝেছিস।”

“হ্যা দুলাভাই বুঝেছি।”

“আচ্ছা তাহলে ওর ঠিকানাটা আমাকে মেসেজ করে পাঠিয়ে দে।”

“আচ্ছা।”

আয়ানের আব্বু কিছুটা হ্যাপি।আয়ানের ঠিকানাটা পেয়ে গেছে।রিয়ার আব্বু তার দুলাভাইয়ের সাথে কথা শেষ করে রিয়াকে কল দিলো।

রিয়া অনেক চিন্তা ভাবনা করে ঠিক করে ওর আব্বুকে দিয়ে ওর ফুপাকে কল দিয়ে বলতে বলবে আয়ানকে বাসায় নিয়ে আসতে।রিয়া অপেক্ষা করছে কখন ওর আব্বু ওকে কল দিবে।কিছুসময় অপেক্ষা করার পর রিয়ার আব্বু কল দিলো।রিয়া কলটা রিসিভ করে বলল

“হ্যা আব্বু বলো ফুপা কি বলল?”

“দুলাভাই রাজি হয়েছে।আয়ানকে ফিরিয়ে আনতে যাবে বলেছি।আমার থেকে আয়ানের ঠিকানাটা চেয়েছে।তুই আমাকে আয়ানের ঠিকানাটা দে।আমি দুলাভাইকে ঠিকানাটা মেসেজ করে পাঠিয়ে দেই।”

“অনেক ভালো একটা খবর শুনালে আব্বু।আমি একটু পরেই তোমাকে ঠিকানাটা মেসেজ করে দিচ্ছি।”

“আর শুন তুই কিন্তু তোর ফুপাকে এই বিষয়ে কিছু বলিস না।তাহলে কিন্তু সমস্যা হবে।”

“নাহ আব্বু আমি তেমন কিছুই করবো না।”

“আচ্ছা এখন রাখছি।”

“আচ্ছা আব্বু।”

রিয়া ওর আব্বুকে আয়ানের ঠিকানাটা মেসেজ করে দিয়েছে।রিয়া শুধু এখন অপেক্ষা করছে আয়ানের বাসায় ফিরে আসার।

পরের দিন সকালে আয়ানের আব্বু অফিসে না গিয়ে ডাইরেক্ট এয়ারপোর্টে চলে গেল।রাতেই প্লেনের টিকেট কেটে রেখেছিল আয়ানের আব্বু। যাতে কোনো সমস্যা না হয়।

আয়ান সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে নিরা পাশে নেই।আয়ান ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে গিয়ে দেখে নিরা রান্না করছে।আয়ান কিছু না বলেই নিরাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
নিরা আজ কিছুটা সকালেই উঠে গেছে কারন রিয়া গতকাল রাতেই কল দিয়ে বলে দিয়েছে আয়ানের আব্বু আজ আসবে।তাই নিরা ভালো কিছু রান্না করছে।হঠাৎ করেই নিরাকে কেউ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরাতে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।কিন্তু নিরা পরে বুঝতে পারে এইটা আয়ান।তাই বলল

“কি স্যার আজ রান্না ঘরে?”

“আমার বউটা আজ খুব আদর করতে মন চাচ্ছিল তাই এসে পরলাম।”

“ইস কত ভালোবাসা।এত দিন কই ছিল আমার প্রতি ভালোবাসা হ্যা?আমাকে ছেড়ে তো ভালোই ছিলে এত দিন?”

“তুমি কি মনে করো আমাকে হ্যা?দূরে ছিলাম ঠিকই কিন্তু তোমার সব খোজ আমার কাছে ছিল।”

“আমাকে একটা চিমটি দেও তো আয়ান?”

“কেনো কি হয়েছে?”

“আমি কি ভুল কিছু শুনলাম?তুমি আমাকে আপনি থেকে তুমি বলছো?আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।”

আয়ান এবার নিরাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল
“এখন বিশ্বাস হয়েছে তোমার।নাকি অন্য কিছু করে বুঝাতে হবে।”

“এই নাহ নাহ।আমার অনেক কাজ আছে আয়ান।”

“আচ্ছা তুমি রান্না করো।আমি রেডি হয়ে নাস্তা করতে আসছি।”

“রাগ করলে?”

“নাহ।রাগ করি নি।কিন্তু একটু অভিমান হয়েছে।”

নিরা এবার আয়ানের গলা জড়িয়ে বলল
“এখনো অভিমান আছে?”

“হ্যা।”

“এখন তাহলে কি করতে হবে আমার।”

“তোমার কিছু করতে হবে না।আমিই করছি।”

কথাটা শেষ না করতেই আয়ান নিরার গলাতে আলতোভাবে একটা চুমু দিলো।নিরা তো আয়ানের এমন কাজে পুরো বরফের মত জমে গেছে।কি করলো আয়ান এটা।নিরা পুরাই শক।আয়ান নিরার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে মুচকি হেসে রুমে চলে গেল।

সকালে ঘুম থেকে উঠে নিলা ফোনটা অন করলো।রিয়াদকে কল দিবে।অনেক দিন হলো রিয়াদের সাথে নিলা কথা বলে না।রিয়াদ ঘুমাচ্ছিল তখন ফোনটা বেজে উঠলো।কিছুটা বিরক্ত হয়েই রিয়াদ কলটা রিসিভ করে বলল

“হ্যালো কে?”

“এত সকাল হয়েছে গেছে আপনি এখনো ঘুমাচ্ছেন?”

কথাটা শুনেই রিয়াদ ঘুম থেকে লাভ দিয়ে উঠে নাম্বার দেখে বলল
“আপনি এত দিন ফোন অফ করে রেখেছিলেন কেনো?”

“এমনেই।”

“জানেন আমি কত টেনশন করেছিলাম।”

“হ্যা সেটা তো এখন বুঝতেই পেরেছি।যে কি না আরাম করে ঘুমাচ্ছে সে নাকি আমার জন্য টেনশন করেছে।”

“আচ্ছা এখন থেকে আর সকালে বেশি ঘুমাবো না।এবার হয়েছে।”

“হুম গুড বয়।”

নিলা আর রিয়াদ আরো অনেক কথা বলল।আয়ান নাস্তা করে ওর কাজে চলে যায়।নিরা কিছুটা লজ্জা পাচ্ছিল তাই আয়ানের সামনে আসে নি।

দুপুরের মধ্যে আয়ানের আব্বু আয়ানের বাসায় এসে পৌছে।আয়ানের আম্মু আর নিরা খুব খুশি আয়ানের আব্বুকে দেখে।আয়ানের আব্বু বলল

“আয়ান কোথায়?ও কি বাসায় নেই?”

নিরা বলল
“আব্বু আয়ান তো রেস্টুরেন্টে গেছে।”

“রেস্টুরেন্টে কেনো?”

“আসলে আব্বু আয়ান রেস্টুরেন্টে ম্যানেজারের জব করে।”

“আয়ানকে বলো এখনি বাসায় আসতে।আমি এসেছি বলো।”

“আব্বু আয়ান একটু পরেই চলে আসবে।”

আয়ানের আব্বু আর কিছু বলল না।ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার খেয়ে নিলো আয়ানের আব্বু।

কিছুসময় পরে আয়ান বাসায় আসলো।ড্রয়িংরুমে আয়ান ওর আব্বুকে দেখে কিছুটা শক।আয়ানের আব্বু বলল

“কিরে এখনো আমার উপর রেগে আছিস?”

“নাহ।রাগ করার মত কিছু নেই।”

“আমি জানি তুই আমার উপর রাগ করে আছিস।”

“নাহ আব্বু তেমন কিছু না।”

“তাহলে এত দিন পর দেখা হল কিন্তু আমি কেমন আছি সেটা একবার জানতে চাইলে না যে?”

এবার আয়ান আর দারিয়ে থাকতে পারলো না।ওর আব্বুকে জড়িয়ে ধরলো।আয়ান ওর আব্বুকে অনেক ভালোবাসে।সেটা আয়ানের আব্বু ভালো করেই জানে।আয়ানের আব্বু বলল

“আমি রাগ করে চলে যেতে বললাম তাই চলে আসতে হবে তোর?বাসাটা কি একা আমার তোদের না।”

“ভুল করে ফেলেছি।সরি আব্বু।”

“হয়েছে।এখন বাসায় চল।আমি আর এইভাবে থাকতে পারছি না।তোরা সবাই আজ আমার সাথে বাসায় যাবি।”

“কিন্তু আব্বু..”

“আর কোনো কিন্তু না।আমি যা বলেছি সেটাই।”

“আমি আগেই যেতে চেয়েছিলাম আব্বু কিন্তু আম্মু যেতে মানা করেছিল।”

আয়ানের আম্মু বলল
“দেখেছিস নিরা মা এখন আয়ান আমার দোষ দিচ্ছে।রিয়া ঠিকই বলেছিল তুই আসলেই শয়তানের হাড্ডি।”

সবাই হাসছে আয়ানের কান্ড দেখে।সন্ধ্যার মধ্যে সবাই রেডি হয়ে বেড়িয়ে পরলো।আয়ানদের সাথে নিলাও আছে।আয়ানের আব্বু প্লেনের টিকেট কেটে রেখেছিল আসার সময়।তাই আর সমস্যা হয় নি।

রাতে রিয়া আর আকাশ বাসায় একা।তাই আকাশ বলছে

“তুই আজ বাসায় চলে গেলেই পারতিস।আব্বু যে আজ কই গেছে হঠাৎ।”

“তাতে সমস্যা কোথায়?আপনি কি ভয় পাচ্ছেন নাকি?”

“তোকে দিবো মাইর।আমাদের এইভাবে বাসাতে একা থাকাটা ঠিক না।”

“আরে ভয় পেয়েন না।আপনার কোনো ক্ষতি করবো না বিয়ের আগে।যা করার সেটা বিয়ের পরেই করবো।”

“ফাজিল মেয়ে একটা।”

বলেই আকাশ রুমে চলে গেল।রিয়া হাসছে আকাশের দেখে।প্রায় ঘন্টা দুইএক পরে সবাই বাসায় চলে আসে।রিয়া তো অনেক খুশি।এখন আকাশের সাথে ওর বিয়েটা হবে।আর কোনো সমস্যা নেই।সবার কথার শব্দ শুনে ভিতর থেকে আকাশ বেড়িয়ে এসে সবাইকে দেখে কিছুটা শক তার সাথে হ্যাপিও।সবাই খুব খুশি।কারন আয়ান আবার বাসায় চলে এসেছে।

পরের দিন সকালে নাস্তা করার সময় রিয়া সবাইকে বলল
“ওনি বলেছিল আয়ান বাসায় আসলে আমাদের বিয়েটা হবে।এখন সবাই মিলে আমাদের বিয়ের তারিখটা ঠিক করো।”

সবাই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।এই কথাটা কেউ জানে না।আকাশ রিয়াকে এই কথা বলেছে কারো বিশ্বাস হচ্ছে না।আকাশ বলল

“সবাই এইভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?রিয়া বিয়ের জন্য জোড় করেছিল তাই আমি রাজি হয়েছিলাম।নাহলে এই পিচ্চিকে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে ছিল না আমার।”

কথাটা শুনে রিয়া রেগে আগুন।মুখে কিছু বলছে না।কিন্তু মনে মনে আকাশ ইচ্ছে মত বকা দিচ্ছে।

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে