ভালোবাসার প্রজাপতি পর্ব – ৮

0
1106

#ভালোবাসার প্রজাপতি
#তাসনিম তামান্না
#পর্ব-৮

আকাশটা পরিষ্কার হলেও আকাশে খন্ড খন্ড সাদা মেঘ আছে ধীরে ধীরে সন্ধ্যা হয়ে আসছে। পাখিরা সেই আকাশে ছোটাছুটি করছে হয়ত তারা নীড়ে ফরবে তাই তো তাদের এতো তাড়া। আফরা অয়নের অফিসের ক্যান্টিনে বসে আছে সামনে বার্গার, পিৎজা, কোলড্রিংস আছে পেটে খুদা থাকার শর্তেও তার খেতে ইচ্ছে করছে না শরীরটা বড্ড ক্লান্ত লাগছে। বাসা থেকে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার ফোন ও দিয়েছে। আফরা জানিয়ে দিয়েছে সে অয়নের সাথে আছে একসাথে বাসায় ফিরবে। আফরা কাচের দেওয়াল ভেদ করে কোলাহল যুক্ত পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করছিল। এবার বাইরে থেকে চোখ সরিয়ে অয়নের দিকে তাকালো অয়ন মাথার চুল টেনে ধরে বসে আছে। ইশরাক আফরার পাশে বসে কফি খাচ্ছে আর কি যেনো ভাবছে। আফরা নিরবতা ভেঙে বলল

-‘ভাইয়া কি করবা কিছু ভাবলে?’

অয়ন মাথা তুলে অাফরার দিকে তাকালো অয়নের চোখ দুইটা লাল হয়ে আছে।

-‘হুম ছেলেটার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখি! ছেলেটা ভালো হয়ে গেছে কি না আয়রাকে সুখে রাখবে কি না….’

-‘ভাইয়া এসব কি বলছ তুমি তোমার মাথার ঠিক আছে না-কি পুরাই গেছে?’

-‘আফরা একটা কথা ভেবে দেখ ওরা যদি বিয়ে করতে চাই সংসার করতে চাই তাহলে আমাদের কিছু করার নাই আজ বাসায় গিয়ে তুই আয়রা সব কথা বলবি ও যদি রায়হানের সঙ্গে থাকতে চাই তাহলে সব এরেন্জমেন্ট আমি করবো সবাইকে আমি রাজি করাবো এটা নিয়ে এতো ভাবিস না আর…

অয়ন থামলো চোখ আর বুকটা বড্ড জ্বালা করছে তীব্র জ্বালা দম আটকে আসছে মনে হচ্ছে এখনি মারা যাবে ও একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল

-‘তোরা একটু থাক আমার একটু কাজ আছে সেটা শেষ করে এখনি আসছি’

ওদেরকে কিছু বলতে না দিয়ে চলে গেলো অয়ন। আফরা ফোঁস করে শ্বাস নিলো বিড়বিড় করে রায়হানকে গালি দিয়ে ধুয়ে দিলো।

-‘তোর লজ্জা লাগে না অন্যকে গালি দিতে?’

-‘এই আপনি চুপ করেন তো’

অয়ন ওয়াসরুমে গিয়ে চোখ মুখে পানি দিলো বুকটা কেমন ভার ভার লাগছে ওর খুব কান্না পাচ্ছে ওর কিন্তু ছেলেদের তো কাঁদতে নেই ওদের পাসান হৃদয়ের হতে হয়? সত্যি কি পাসান হতে হয় কেনো হতে হয়? কেনো তাদের কাঁদতে নেই? কেনো? হোয়াই?

আফরা বাসায় এসে সবার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে কিন্তু অয়ন সেটা সমলে নিয়েছে। ইশরাক চলে গিয়েছে ওখান থেকে। আফরা ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লো শরীরটা আর পারছে না এখন একটু না ঘুমালে বোধহয় এখনি বুঝি জ্ঞান হারাবে?

.

অয়ন বাসায় এসে শান্তি পাচ্ছে না। অয়ন আয়রার কাছ থেকে আয়রার মতামত না জানা পর্যন্ত শান্তি পাবেও না। প্রায় একঘন্টা একপ্রকার যুদ্ধ করে অয়ন নিজেকে আর দমাতে না পেরে উঠে আয়রার রুমে গিয়ে নক করলো…

-‘কে? দরজা খোলায় আছ!’

অয়ন দরজা ঠেলে ভিতরে ডুকলো আয়রা অয়নকে দেখে উঠে দাঁড়ালো।

-‘আয়রা তোর সাথে কিছু কথা ছিলো’

আয়রা অয়নের চোখের দিকে তাকালো অয়নের চোখ দুটা রক্তিম হয়ে আছে। আয়রা মিনমিনিয়ে বলল

-‘ জী কি বলবে বলো’

অয়ন কিছুক্ষণ চুপ থেকে ডিরেক্টর প্রশ্ন করলো

-‘তুই কি এখনো রায়হান’কে ভালোবাসিস?’

আয়রা চমকালো! থমকালো! বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো অয়নের দিকে। আয়রাকে কিছু বলতে না দেখে অয়ন বলল

-‘রায়হান যদি তোর কাছে ফিরে আসতে চায় তাহলে কি তুই ওর সাথে….. ‘

অয়ন থেকে গেলো গলা কাঁপছে। অয়ন নিজেকে ধাতস্ত করে নিয়ে আয়রার দিকে তাকালো। আয়রা বলল

-‘কি বলছেন এ-সব আর রায়হানের কাছে ফিরে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। আর যেখানে এতোদিন ও আমার খোঁজ নেই নি এখন এসে বলবে ওর সাথে সংসার বাঁধতে আর আমি ও সব ভুলে ওর সাথে চলে যাবো আমি এতোটাও দয়ালু নই’

অয়ন কিছুটা শান্তি পেলো। হুট করেই বলল

-‘তাহলে বিয়ে করবি আমায়? ছোট সংসার বান্দবী আমার সাথে’

আয়রা থমকে যায়। কি বলবে তার শব্দ খুঁজে পাচ্ছে না হঠাৎ মনে হলো তার শব্দ ভান্ডার শূন্য সে কথা বলতে পারে না বোবা!
আয়রাকে চুপ থাকতে দেখে অয়ন বলল

-‘না না আমি জোর করছি না তোর উপর। তুই সময় নে। আমি অপেক্ষা করবো কিন্তু শেষে উত্তরটা যেনো হ্যাঁ হয় না হলে আমি মরেও বেঁচে থাকবো’

অয়ন আর দাঁড়ালো না চলে গেলো। আয়রা ওভাবেই দাড়িয়ে রইলো

.

আফরা ঘুম থেকে উঠে আয়রার কাছেই আসছিল। অয়নের লাস্ট কথাটা শুনে দাড়িয়ে গেলো অয়ন আফরাকে দেখেও পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। আফরা রুমে ডুকে বলল

-‘আপু’

আয়রা চমকালো আফরা কতদিন পর তাকে আপু বলে ডাকলো শান্তি শান্তি অনুভূতি হলো। কাঁপা গলায় বলল

-‘বল’

-‘অয়ন ভাইয়াকে কষ্ট দিস না ভাইয়া তোকে সত্যি খুব ভালোবাসে। যদি ভালো না বাসতো তাহলে এতো দিনে বিয়ে করে নিত অন্য মেয়ের সাথে। আজ যখন রায়হানের সঙ্গে দেখা হয়ে ছিল অবশ্য এর আগেও হয়েছিল তোর কথা শুনছিলো কিন্তু আমি উত্তর না দিয়ে পালিয়ে আসছি। ভাইয়াকে বলছি এগুলা ভাইয়া তোকে হারানোর ভয় পাচ্ছে ভাইয়াকে কষ্ট দিস না প্লিজ। ভাইয়ার অনুভূতির গুলোর দাম দিতে শেখ…’

কথাগুলো বলে থামলো আফরা। আয়রা অবাক হয়ে বলল

-‘মানে আমার কথা কেনো শুনছিলো?’

-‘জানি না। কিন্তু লাস্ট একটা কথায় বলবো তুই যদি রায়হানকেই বেছে নিস তাহলে ভুলে যাবি তোর বোন। আফরা বলে কেউ ছিল’

-‘আফরা কি বলছিস এগুলা’

-‘ভুল তো কিছু বলি নাই। তোর ভুলের জন্য আমার আব্বুর মাথা সবার সামনে হেট হয়েছে। সেদিন কিন্তু আব্বু শুধু মাত্র তোর জন্য রায়হান আর তার পরিবারের কাছে হাত জোর করছিল কিন্তু তারা মানে নি শুধু তোর জন্য আমরা আগের বাসায় ছেড়ে এ বাসায় আসছি শুধু তোর জন্য এখন আত্নীয়-স্বজন, চেনা পরিচিতদের কাছে এখনো কথা শুনতে হয় কেনো বলতে পারবি? বাসার সবাই যখন চাইছে তোর আর ভাইয়ার বিয়ে দিতে তাহলে কেনো তুই তখন বাঁধা দিচ্ছিস? চাচি কতটা আশা নিয়ে বসে আছে যেখানে অন্য কেউ হলে তোর মুখ ও দেখত না।।।।তাসনিম তামান্না।।।।

আয়রা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আফরার দিকে। আফরা আবার বলল

-‘কি রে অবাক হচ্ছিস? আমি তোর সাথে কখনোই এসব বিষয় নিয়ে কথা বলি না আর ইচ্ছাও করে না। আর তুই যদি রায়হানকে বেছে নিস তাহলে আমি তোর মুখটাও দেখবো না’

-‘আফরা’

আফরা আর দাড়ালো না চলে গেলো। সে এত কঠিন কঠিন কথা বলতে চাই নি আয়রাকে কিন্তু ও চাই না আয়রা ভুল পথ নিক। ও চাই সঠিকটা বুঝক তাই তো আজ এতো কথা বলা।

আয়রা বসে পড়লো। আফরার প্রতিটা কথা কানে বাজছে। খুব কষ্ট হচ্ছে ওর বুকের মধ্যে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে নোনাপানি। মাথা সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। ওর কি করা উচিত? কোন দিকে যাবে ও?

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে