#ভালোবাসার_পরিনতি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_৫
“তোদের সংসারে এতো ঝামেলা হয়েছে যে শেষ পর্যন্ত ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছিস আর আমাদের জানানোর প্রয়োজন বোধ মনে করিস নি” (বড় ভাই)
“হ্যাঁ আমরা সবাই বুঝিয়ে বললে হয়তো রোহান তোর সাথে থাকতো ” (ছোট ভাই)
“কম চেষ্টা তো করি নি ওর সাথে থাকার জন্য আর তোমরা যেনো ওর সাথে এসব নিয়ে কথা না বলো তা আমাকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে তাই তোমাদের অপমান করতে চাই নি” (ইভা)
“একমাত্র আদরের বোন তোকে কোনো দিন একটা থাপ্পড় পর্যন্ত দেই নি আর ও তোর সাথে এতো নিষ্ঠ ব্যবহার করেছে আর তুই আমাদের অপমানের কথা চিন্তা করে কিছু না জানিয়ে ভুল করেছিস ” (বড় ভাই)
“আমি মনে করি ইভা তোমাদের না জানিয়ে কোনো ভুল করে নি কারন কোনো মেয়ে চায় না তার বাবার বাড়ির লোকজনকে শশুড় বাড়ির কেউ অপমান করুক ” (বড় ভাবি)
“তোমাদের কিছু বলতে গেলে আমার উপর, রাফিসার উপর নির্যাতন বেশি হতো। তোমার ভাবতে পারবে না রোহানের খারাপ রুপ কতোটা ভয়ানক ” (ইভা)
“রোহানের বাবা মায়ের সাথে কথা বললো, ওনার ছেলের এতো সাহস হয় কিভাবে যে আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলে এমন কি দুধের বাচ্চার গায়ে হাত তুলতেও ছাড়ে নি(বাবা)
” না বাবা ওর বাবা মা এসব কিছু জানে না আর ওনারা খুব ভালো। তাদের ছেলে খারাপ হয়ে থাকলে তাদের তো কোনো দোষ নেই (ইভা)
“ওদের তো ডিভোর্স হয়ে গেছে এখন আমাদের কোনো অধিকার নেই রোহান ভাইয়ের সাথে এসব বিষয়ে কথা বলার আর যে নিজে থেকে সংসার করতে চায় না তাকে হাজার বার বুঝিয়ে কোনো লাভ হয় না। এখন থেকে ইভা শুধু ওর সন্তানদের কথা ভেবে নিজেকে শক্ত করবে (ছোট ভাবি)”
আমি ওদের কথা শুনে কান্না করে দিলাম, আল্লাহ বোধহয় আমাকে পুরোপুরি একা করে দেয় নি আমার পরিবার আমার পাশে আছে। মা আমাকে বুকে জড়িয়ে বললো,
“মা তুই কোনো চিন্তা করিস না আল্লাহ যা করে ভালো জন্যই করে, আমরা সবাই তোর সাথে আছি ”
“সকাল থেকে এসে শুধু কথা শুনে যাচ্ছি, খাওয়া দাওয়া যে করতে হবে তা কি কারো মনে আছে? সবাই খেতে এসো ” (বড় ভাবি)
“আমি কিছু খাবো না এখন একটু ঘুমাবে ” (ইভা)
“শোনো বাপু আমাদের বাসায় থাকতে হলে আমাদের কথা শুনে চলতে হবে, এখন খেতে চলো (ছোট ভাবি)
” তুই বিকেলে রেডি হয়ে থাকিস ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো “(ছোট ভাই)
” না ভাইয়া দু দিন পরে যাবো মন মেজাজ একদম ভালো লাগছে না “(ইভা)
” এবার তোর কথা শুনলাম এর পরে আর না “(ছোট ভাই)
আমার খাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই তাও মা জোর করে খাইয়ে দিলো।
রাফিসার খেলার সাথী তিন্নি, তিয়াসকে পেয়ে খুব খুশি। ও ভাবে ওর বাবা কিছু দিন পরে আমাদের নিতে আসবে কিন্তু ওর ভাবনা যে সত্যি হওয়ার না।
তিন্নি বড় ভাইয়ের মেয়ে, চতুর্থ শ্রেনীতে পড়ে আর তিয়াস ছোট ভাইয়ের ছেলে, দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ে।
আমি শুয়ে শুয়ে ভাবতেছি রোহানের সাথে প্রথম দেখা। ওর বাবা- মা, কাকা- কাকি, মামা-মামি, বন্ধুরা, কাজিনরা আর ও আমাকে দেখতে এসে এনগেজমেন্ট হলো। বাবা-মাকে বলেছিলাম তাদের পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করবো তাই দেখতে এসে এনগেজমেন্টে কোনো আপত্তি করি নি। সেদিন আমি লাল রংয়ের শাড়ি পরে ছিলাম আর ও কালো রংয়ের শার্ট। সুন্দর মানুষদের কালো রংয়ে বেশি সুন্দর লাগে।
দুজনে আলাদা ভাবে কথা বলতে গেলাম তখন ও বললো,
-আপনি পরিবারের চাপে পড়ে বিয়ে করবে না, যদি নিজের ইচ্ছে থেকে বিয়ে করতে চান তাহলে আমার সাথে বিয়ে হবে নয়তো না।
-না আমি কারো চাপে পড়ে বিয়ে করতে যাচ্ছি না। নিজের ইচ্ছে
-তাহলে আমারও বিয়ে করতে সমস্যা নেই।
-আপনার পছন্দের কেউ আছে নাকি?
-আরে না না আপনাকে পছন্দ করে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছি
-আমাকে আপনি আগে থেকে চিনেন কিভাবে?
-আপনি কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন তখন আপনাকে দেখে ভালো লাগে তারপর আপনি যে রিকশায় ছিলেন ওটা ফলো করে আপনার বাড়ির ঠিকানা পেয়ে যায়।
-হাহাহাহ্ হতেও তো পারতো আমি বাসায় না এসে অন্য কোথাও গেলাম সেখানেও কি আপনি আমাকে ফলো করে যেতেন??
-যাওয়ার দরকার হতে অবশ্যই যেতাম।
-ওহ্ আচ্ছা (একটু মুচকি হেসে)
-ওভাবে হাসবেন না বুকে লাগে, এতো সুন্দর হাসি
-হাহাহাহ্
দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ওর একটা বন্ধু বললো,
-আর কতো কথা বলবি, বাসার রাতের জন্য কিছু কথা তুলে রেখে এখন চল। সবাই তোদের জন্য অপেক্ষা করছে।
-হুম চল।
কয়েক দিনের মধ্যে আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো। কতো সুন্দর ছিলো পাঁচ বছরের স্মৃতিগুলো, ভালোবাসাও কোনো কমতি ছিলো না। একে অপরের ছায়া হয়ে থাকতাম সব সময়। বাসর রাতে ও আমাকে একটা ব্রেসলেট দিয়ে বলেছিলো সারাজীবন যেনো হাতে রাখি। আমার হাতে এখনও আছে শুধু মানুষটি নেই ।
রাফিসা আমার কাছে এসে বললো,
-আম্মু দেখো আমাকে এতোগুলো চকলেট, চিপ দিয়েছে
-কে দিয়েছে?
-তাকে চিনি না তো
-তোমাকে বলেছি না যে অপরিচিত কেউ কিছু দিলে নিবে না
-উনি তো নানাদের বাসায় এসেছে তারপর আমাকে দেখে এসব দিয়েছে
-এমন কে এসেছে, চলো তো গিয়ে দেখি।
চলবে,,,,,