#ভালোবাসার_দূরত্ব (পর্ব 3)
#লেখনীতে_নাফিসা_আনজুম
,,
,,
,,
পেছন থেকে জোরে ডেকে উঠলো সামির।
হ্যাঁ নেহাকে ছাড়া একদম ভালো লাগছিলো না অফিসে। ও রাগ করে চলে এসেছে তাই আমিও চলে আসলাম। কিন্তু এসেই যে এমন একটা দৃশ্য দেখবো ভাবিনি। ফুপি ওকে কেনো মারলো।
আমি ফুপির কাছে গেলাম, দেখলাম ফুপির চোখেঁও পানি চিকচিক করছে। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। কাঁপাকাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম, নেহাকে মারলে কেনো ফুপি।
আমার কথা শুনে নেহা ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দিলো। ফুপিও কিছু না বলেই ঘরে চলে গেলো। কিছুই বুঝতে পারছি না , ফুপাকে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে ফুপা, ফুপি নেহাকে কেনো মারলো। আপনি অন্তত বলুন।
ফুপা মাথা নিচু করে বললো, নেহা একজনকে ভালোবাসে সামির। যে ওকে ভালোবাসে না।
ফুপার কথাটা শুনে বুকের বামপাশটাতে মোচর দিয়ে উঠলো। নেহা একজনকে ভালোবাসে। আর কিছু শোনার মতো অবস্থা নেই তাই আর কিছু না বলে চলে আসলাম। বাড়িতে আসতেই আম্মু জিজ্ঞেস করলো আজ এতো তারাতারি কেনো ফিরলি বাবা।
শুধু বললাম ভালোলাগছে না আম্মু। আমি আব্বুর সাথে যতোটা ফ্রি আম্মুর সাথে ততোটা নই।
রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে ভাবতে লাগলাম পূরোনো সেই দিনগুলি,,
আমি তখন ক্লাস নাইনে পরি। আর নেহা ক্লাস থ্রি। গ্রাম থেকে শহরে এসেছে। প্রথমে আমাদের বাড়িতেই ওঠে। তখন ওদের বাড়ি করা শেষ কিন্তু জিনিস বসানো বাকি আছে। মূলতো ফুপিই দেখে দেবে কোন জিনিস কোথায় রাখবে এজন্য আগে এসে আমাদের বাড়িতে উঠেছে।
আমি নিচে বাগানে বসে ছিলাম, এমন সময় ফুপির হাত ধরে হেটে আসছিলো নেহা। আর নাহিদ ফুপার কোলে ঘুমিয়ে ছিলো। হালকা গোলাপি কালারের একটা শর্ট টপ্স কোমর পর্যন্ত আর কালো/নেভিব্লু কালার জিন্ম্সের একটা স্কার্ট পরা ছিলো। যখন আমাদের ছাদে থাকা ফুলের গাছের দিকে হাত দিয়ে ফুপিকে দেখাচ্ছিল তখন কোমর থেকে টপ্স কিছুটা সরে গিয়ে নাভিটা বের হয়েছিলো। তারপর হাত নামালে আবার ঢেকে যায়।
তা দেখে নিঃশব্দে হেসেছিলাম আমি।তারপর আসতে আসতে কথা হয় ওর সাথে,অনেক দুষ্টুমি করতো ও,আমি কখনো রাগ দেখাইতাম আবার কখনো হেসে উরিয়ে দিতাম। আমি রাগ করলে আব্বুকে বিচার দিতো।তারপর ও চুপ থাকতো , চকলেট আইসক্রিম কিছু না কিছু দিয়ে ওর রাগ ভাঙ্গাতাম। ভালো লাগতো আমারো। মাঝে মাঝে নিজের কাজেই অবাক লাগতো, স্কুল কলেজে কতো মেয়ের প্রেমপত্র পাইছি হিসেব নেই, আর আমি কি না এই পিচ্চিটার মাঝেই নিজের শান্তি খুজে পেতাম। তারপর ওর এতো বড় হওয়ার মধ্যে কতো সৃতি মিশে আছে আমাদের।
প্রেম ভালোবাসা কিছু বুঝতো না তখনো তাই হয়তো আমাকেও বুঝতে পারে নি।
কিন্তু এখন, এখন তো বুঝে সব তারপরো কেনো আমাকে বুঝলো না। কি করে অন্যকাউকে ভালোবাসতে পারলি তুই।
আমার বাহিরে গিয়ে পড়ালেখা করার ইচ্ছে ছিলো। শুধুমাত্র তোর কথা ভেবে যাই নি। দিনে একটিবার না দেখলে শান্তি লাগে না আমার।তাইতো ফুপিকে রাজি করিয়ে তোকে পি এ বানিয়েছিলাম।যাতে সবসময় নিজের কাছে রাখতে পারি।সারাক্ষণ দেখতে পারি।
কষ্ট হচ্ছে খুব কষ্ট হচ্ছে। নেহা অন্যকারো হবে এটা ভাবতে পারছি না। আমার সবটা জুরে শুধু নেহা ছাড়া কেউ নেই।
,,
নেহা কান্না করছিলো এমন সময় ওর আম্মু ওর ঘরে আসে,
দেখ নেহা,তোকে আজ কিছু কথা বলতে চাই। তুই খুব ভালো করেই জানিস তোর মামি কেমন। তোর মামা বিষয়টা মেনে নিলেও তোর মামি মেনে নিবে না। আর ওনার একটাই মাত্র ছেলে,ছেলেকে নিজের মনের মতো করে মানুষ করেছে, অনেই স্বপ্ন সাবিনা ভাবির(সামিরের আম্মু), আমি চাই না কোনোভাবে কেউ এই বিষয়টা জানুক,ভাবি তো মানবেই না,শুধু শুধু আমাকে সবার সামনে হাসিঁর পাত্রি বানাস না।সব থেকে বড় কথা সামির তো তোকে ভালোবাসে না।
মায়ের কথা শুনে নেহার বুকটা ফেটে যাচ্ছে, কি বলবে বুঝতে পারছে না। আসল মানুষটাই যে ওর না। সেই মানুষটাই যে অন্যকারো মায়ায় আসক্ত।কাকে নিয়ে বড়াই করবে ও।ওর মানুষটা যদি ওকে ভালোবাসতো তাহলে সবাইকে রাজি করানোর জন্য সব কিছু করতে পারতো।
নেহা ঠিক করে ও আর কখনোই পাগলামি করবে না, অভিমান করবে না। কথাও বলবে না। মোটকথা সামিরের থেকে দূরে সরে যাবে। যে মানুষটা ওর ছিলই না কখনো,তাকে কিভাবে এখন নিজের করবে।ভেবে হু হু করে কেঁদে ওঠে নেহা।
,,
তিন দিন পর
এর মধ্যে একদিন সামিরের বাবা এসে দেখে গেছে নেহাকে, ও একদিন যায় নি জন্য উনি নিজেই এসেছিলো।
রাতে একা একা ছাঁদে দাড়িয়ে আছে নেহা। এমন সময় পেছন থেকে একটা ছায়ামূতমর্তি এসে ওর পাশে দাড়ায়।
অনেকটা ভয় পেয়ে সরে যায় নেহা। দেখে সামির ভাইয়া ।
এতো রাতে ছাঁদে সামির কে দেখে অবাক না হয়ে পারে না।
এই সময় উনি এখানে কেনো এসেছে।অবাক হলেও কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে আসে ও।
সামির আহত চোখেঁ ওর যাওয়ার পানে চেয়ে থাকে।
আসলে এই তিন দিনে একজন ও অফিস যায় নি।সামির ওকে একদিন না দেখে থাকতে পারে না,সেখানে তিনদিন হয় দেখা নেই,এই তিনদিন জিদ করে নিজেকে কষ্ট দিয়ে হলেও থেকেছে,কিন্তু আর সম্ভব হচ্ছিল না তাই রাতেই চলে আসে নেহাকে একটিবার দেখার জন্য।
,,
ইমদাদ হোসেন(সামিরের আব্বু) চিন্তিত মুখে ছোফায় বসে আছে। পাশেই সাবিনা বেগম ও আছে। তাদের চিন্তা হচ্ছে, সামির তো কখনো এই রকম করে নি, একটানা তিনদিন অফিস গেলো না, ঠিকমতো খাচ্ছে না, কারো সাথে কথা বলছে না এখন আবার এতো রাতে বাড়িতেও নেই। কি হয়েছে কি ছেলেটার কাউকে কিছু বলছে ও না।
অনেক্ষন পর সামির বাড়িতে আসলো।
তুমি এতোক্ষন কোথায় ছিলি সামির(কড়া গলায় জিজ্ঞেস করলেন ইমদাদ হোসেন।
বাবার কথা শুনে সামির ছোট ছোট চোখঁ করে অসহায়ের মত দাড়িয়ে আছে।
কি হলো সামির, উত্তর দিচ্ছিস না কেনো তোর বাবার কথার (সামিরের অম্মু)
একটু কাজ ছিলো তাই বাহিরে ছিলাম। সামির জানে তার বাবা খুব সহজে রেগে যায় না।
এতো রাতে বাহিরে তোমার কি কাজ ,তাছাড়া তিন দিন থেকে অফিস যাচ্ছিস না কেনো, নেহা তো অসুস্থ কাল দেখে এসেছি, কি যে হয়েছে মেয়েটার, চোখঁ মুখগুলা দেখেই মনে হয় খাওয়া দাওয়া করে না ঠিকমতো। এদিকে তুই ও খাওয়া দাওয়া করতেছিস না,রুম থেকে বেরোস না, কি হয়েছে তোদের। চিন্তিত হয়ে বললেন কথাগুলো।
না আব্বু তেমন কিছু না,আসলে এমনি আমার শরীরটাও একটু ভালো নেই তো,তাই যাচ্ছি না।আমতা আমতা করে বলে সামির।
সাবিনা বেগমের মুখে চিন্তার ছাপ, একসাথেই সামির আর নেহার এমন আচরন,ওনার কেমন সন্দেহ লাগছে, কিন্তু উনি যা ভাবছে এমন কিছু হলে জীবনেও মেনে নেবে না উনি।
নেহার কথা মনে হতে আবারো মনটা খারাপ হয়ে যায়,কেনো এমন করলি নেহা। আমাকে একটিবার ভালোবেসে দেখতিস কতোটা আগলে রাখতাম তোকে, আমার মনের রানি করে রাখতাম।কি এমন হতো আমাকে ভালোবাসলে। এতোগুলো বছর থেকে যে তোর ভালোবাসা পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম আমি,কেনো বুঝলি না আমাকে।
পরেরদিন সকালে সামির অফিসের জন্য বের হবে সেই সময় ওর মা ডেকে বসে।
হুমম আম্মু বলো
চল না বাবা আজ তোর মেঝো ফুপির বাড়িতে যাই, অনেকদিন থেকে যেতে বলে।
কিন্তু আম্মু আমি অফিসে যাচ্ছি,এমনিও তিনদিন যাই নি।
দেখ অফিসের কাজ তোর আব্বু সামলিয়ে নেবে,তুই আমার সাথে যাচ্ছিস ব্যাস
কিন্তু আম্মু
কোনো কিন্তু না, যেটা বলছি সেটাই
সামির ওর আম্মুর কথায় ওনেক ভয় পায়,তার কথার ওপর কিছু বলতেও পারে না। এটা ঠিক সাবিনা বেগম তার ছেলেকে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু ওনেক শাসন ও করে, তার মতে ছেলেকে শাসন না করলে ছেলে কথা শুনবে না, ব্যাপথে যাবে।
দুপুরের আগে আগে মেঝো ফুপির বাড়িতে আসি, বুঝলাম না আম্মুর আবার কি হলো আজকেই এই বাড়িতে আসতে হবে।
এখানে এসে সবাই গল্প করতেছে।মিশুটা একটু পর পর তাকাচ্ছে আর মিটমিট করে হাসছে, শুধু রশনি ছিলো না, এমন সময় রশনি আসে,
সামির ভাইয়া একটু আসো তো
এর আগেও সব ভাই বোন মিলে একখানে হয়েছে,কিন্তু রশনির ওকে কখনোই একা ডাকে নি। তবে আজ কেনো ডাকলো।
যাওয়ার পর রশনি যেটা বললো,সেটা শোনার পর নিজের মায়ের ওপর খুব রাগ হলো,
চলবে,,
ভূল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ❌কপি করা নিষেধ ❌