#ভালোবাসার_তুই
#Part_10
#Writer_NOVA
আকাশ ভেঙে বৃষ্টি। বৃষ্টির দিন আমার একটুও ভালো লাগে না।বৃষ্টি দেখলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়।কিন্তু কেন, সেটা আমি জানি না।বৃষ্টির দিন দেখলে মনে একরাশ বিষন্নতা ও একাকিত্ব ঘিরে ধরে।তবে বৃষ্টির দিনে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাতে ও গল্পের বই পড়তে আমি ভীষণ ভালোবাসি।কিংবা বারান্দায় দাঁড়িয়ে মুড অফ করে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকি।আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।ক্লাশ রুমের সামনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দুই হাত ভাজ করে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি। হঠাৎ করে তিনটা হাত এসে আমার কাঁধে হাত রাখলো।চোখ ঘুরিয়ে দেখতে পারলাম মৌসুমি, সিফা ও শারমিন দাঁড়িয়ে আছে।
শারমিনঃ কি রে তোর কি হয়েছে? এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?মন খারাপ নাকি?
সিফাঃ বৃষ্টির দিন তোর কি হয় বলতো?আমি খেয়াল করে দেখেছি তুই বৃষ্টি দেখলেই মন খারাপ করে ফেলিস।
আমিঃ আমার বৃষ্টির দিন একটুও ভালো লাগে না। অনেক বিরক্তিকর এই দিন।চারিদিকে কাদায় মাখামাখি, রাস্তাঘাট পানি দিয়ে পরিপূর্ণ। কোথাও যাওয়া যায় না।সারাক্ষণ ঘরে বসে থাকো।একটু বের হলেই ধপাস করে আছাড় খেতে হয়।মোট কথা বোরিং ও ডিজগাস্টিং একটা দিন।
মৌসুমিঃ এতো অভিযোগ তোর বৃষ্টির দিন নিয়ে। দেখবি তোরও একদিন ভালো লাগবে।
আমিঃ ভালো লাগার দিন হারিয়ে গেছে। স্কুলে থাকলে বৃষ্টির দিন অনেক ভালো লাগতো।তাও স্কুলে যেতে হবে না অথবা ক্লাশ কম হবে সেই খুশিতে।প্রায় সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম যাতে অনেকদিন বৃষ্টি থাকে।বাইরে গিয়ে সবাই মিলে একসাথে বৃষ্টিতে
দৌড়-ঝাপ করতাম।সেই ছোটবেলাটা এখনও রঙিন।স্মৃতির পাতায় অমলিন থাকবে সেই মুহূর্তগুলো।অনেক মিস করি সেই দিনগুলো।আফসোস করি আবার যদি ফিরে পেতাম সেই রঙিন মুহূর্তগুলো।ছোট বেলা ভাবতাম কবে বড় হবো?কিন্তু এখন ভাবি কেন বড় হলাম।ছোট বেলাটা উঁকি দিয়ে বলে, কি রে বড় না হতে চেয়েছিস।এখন কেমন লাগে?দীর্ঘ শ্বাস ছাড়া আর কোন উত্তর দিতে পারি না আমি।
সিফাঃ সত্যি সেই দিনগুলো অনেক আনন্দদায়ক ছিলো।কিছুই বুঝতাম না।তবে দিনগুলো ছিলো অন্য রকম ভালো লাগা।আজ ছুটে যেতে ইচ্ছে করে সেই ছোট বেলায়।
শারমিনঃ যত বড় হচ্ছি তত নিজের প্রতি তিক্ত হয়ে যাচ্ছি। কারণটা হলো পৃথিবীর স্বার্থপরতা গুলো চোখের সামনে দৃশ্যমান হয়ে যাচ্ছে। চারিদিকে শুধু স্বার্থের খেলা।
মৌসুমিঃ নোভা,তুই কি বৃষ্টিতে ভিজিস?না মানে অনেকে আছে বৃষ্টি পছন্দ না করলেও বৃষ্টির সময় মন খারাপ করলে বৃষ্টি স্নান করে।
আমিঃ আমার বৃষ্টির দিন মন খারাপ হয় মৌসুমি। মাথা খারাপ নয়।আমার বৃষ্টির পানি যে কোন জন্মের শত্রু আল্লাহ জানে। সামান্য কয়েক ফোঁটা পানি আমার মাথায় পরলে অটোমেটিক মাথা ব্যাথা স্টার্ট হয়ে যায়।যদি একটু বেশি পানি মাথায় পরে তাহলে ঠান্ডায় আক্রমণ করবে।আর বৃষ্টি স্নান করলে এক সপ্তাহ জ্বরের কারণে বিছানার থেকে উঠতে পারবো না।শুধু শুধু কি আমি বৃষ্টি পছন্দ করি না।
সিফাঃ তোর মাথা দেখছি অনেক ভি আই পি।
মৌসুমিঃ মানুষটাও তো ভি আই পি।আর তার মাথা কি সাধারণ হবে।
শারমিনঃ দেখছিস নোভা।তোকে পাম দিয়ে ওরা পুরা ফুলায় ফেলতাছে।
আমিঃ হুম অনেক ফুলছি।একটু পর বাস্ট হবো।
মৌসুমিঃ বিয়ের শপিং শেষ?
আমিঃ আমি কি জানি?যার বিয়ে তাকে জিজ্ঞেস কর।
সিফাঃ তাহলে কাকে জিজ্ঞেস করছি🙄?
শারমিনঃ আমরা কিন্তু তোর বিয়েতে দুই দিন আগে যাবো।তুই দাওয়াত দিলে দে নয়তো না দে।
আমিঃ আমি ভিক্ষুক দেখেছি।কিন্তু তোদের মতো এরকম ভিক্ষুক দেখিনি।এসব ব্যবসা কবে শুরু করলি?
মৌসুমিঃ কি বললি তুই?
আমিঃ আমি ভুল কিছু বলিনি।
তিনজন চোখ লাল করে আমার দিকে তাকালো।আমি মিটমিট করে হাসছি।সামনে এগিয়ে এসে ইচ্ছে মতো আমাকে মারতে লাগলো।
🍂🍂🍂
এনাজের অফিসের কাজ শেষ হয়ে গেছে ঘন্টাখানিক আগে।আজকাল অফিসের কাজের চাপ কমে আসছে।তারপরেও সে অফিস ফাঁকি দেয় না।সামনে বিয়েতে তো অনেক দিন ছুটি নিতে হবে।তাছাড়া বিয়ের কত কাজ বাকি আছে। যদিও আত্মীয়স্বজন তার বেশি নেই। টাকা থাকলে দূর সম্পর্কের মামা,চাচাও খবর রাখে।কিন্তু টাকা না থাকলে নিজের আপনজনও খবর রাখে না।জানালা দিয়ে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। বৃষ্টি তার খারাপ লাগে না।অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করে।রুমের সামনে জিসান এসে দরজায় কড়া নারলো।
জিসানঃ আসবো??
এনাজঃ তুই আবার পারমিশন নিতে পারিস।
জিসানঃ ভেতরে তো আসতে দে ভাই।
এনাজঃ অনুমতি নেওয়ার কি প্রয়োজন আদোও আছে জিসান?
জিসানঃ বেশি বকবক করিস তুই। ভেতরে আসার পারমিশনটা দে।
এনাজঃ তুই আমার কাছে পারমিশন চাইছিস।ঢং না করে চলে আয়।তোর পারমিশনের কোন দরকার নেই।
জিসানঃ ধন্যবাদ ভাই।
ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে কথাটা বললো জিসান।ভেতরে ঢুকে এনাজের পাশের চেয়ার টান দিয়ে বসে পরলো।
এনাজঃ এমন ব্যবহার করলি কেন?তুই তো কখনও আমার পারমিশন নেস না।আজ সূর্য কোন দিক দিয়ে উঠলো?
জিসানঃ আজ সূর্য উঠেইনি।তোর রুমের অপজিটে কোম্পানির বস দাঁড়িয়ে ছিলো।তার দৃষ্টি আমার দিকে স্থির ছিলো।এই মুহূর্তে যদি আমি তোর রুমে পারমিশন না নিয়ে আসি তাহলে আমার জব নিয়ে টানাটানি পরে যাবে।তাই এরকম বিহেভিয়ার।
এনাজঃ আমারো খোটকা লেগেছিলো। আমি ভাবলাম তোর মাথা আবার আউট হয়ে গেলো নাকি।
জিসানঃ তা ভাই,বিয়ের খবর কি?
এনাজঃ আর খবর।তোরা ছাড়া আমি একা কিছু করতে পারবো নাকি?কিছুই বুঝি না।বিয়ে তো জীবনে প্রথম করছি।কোন আইডিয়া নেই। গার্ডিয়ান থাকলে এসব নিয়ে আমার কোন টেনশন করতে হতো না।
জিসানঃ এমনভাবে বলছিস যেনো আমার ৪/৫ টা বিয়ে হয়েছে। আমার ভালো আইডিয়া আছে এই ব্যাপারে।এখনো কপালে একটাই জুটলো না আর ৪/৫ টা। ভেবেই হাত-পা কাঁপছে। এক বউয়ের জ্বালায় বেঁচে থাকার ইচ্ছে মরে যাবে।আর তো ৪/৫ টা।আল্লাহ এসব ভাবতেই আমার গরম লাগছে।আর যদি বাই চান্স তোর বউয়ের মতো পাগল-ছাগল হয়।তাহলে আমার জীবন তেজপাতা টু ধনিয়া পাতা হয়ে যাবে।বেঁচে থাকার ইচ্ছাটা চান্দের দেশে পারি দিবে।
এনাজঃ তুই কিন্তু আমার নোভাকে অপমান করছিস।আমার হবু বউয়ের নামে কোন ফালতু কথা কিন্তু আমি এলাউ করবো না জিসান।
জিসানঃ শালা তুই এখনি বিয়ে না হতেই বউয়ের পক্ষ টানা শুরু করেছিস।আর তো দিন পরেই রয়েছে। ভালো ভালো খুব ভালো।
এনাজ মুখ গম্ভীর করে কিছুটা রাগী স্বরে কথাটা বলেছিলো।যা দেখে জিসান অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সেটা দেখে এনাজ ফিক করে হেসে উঠলো।
এনাজঃ আমি মজা করছিলাম ইয়ার। তুই সিরিয়াস ধরে নিয়েছিস।
জিসানঃ যা শালা।আমায় তো ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি।
এনাজঃ তবে একটা কথা সত্য। নোভা একটু পাগলী টাইপের মেয়ে।প্রচুর লিপস্টিক পাগলী।ওর এসব পাগলামি গুলো দেখেই আমি ওর প্রতি আরো বেশি উইক হয়ে গিয়েছি।ওর পাগলামিগুলো আমায় বাধ্য করে ওকে ভীষণ ভালোবাসতে।
জিসানঃ প্রেমের মরা জলে ডুবে না।তোকে দেখে আমার গানটা মনে পরে যাচ্ছে।
এনাজঃ বৃষ্টি কমে আসছে।আমার এখন বের হতে হবে।আজ একটু নোভার কলেজের দিকে যাবো।গতকাল রাতে এতগুলো কল করলাম কিন্তু ধরেনি।তার হিসেব চুকাতে হবে।
জিসানঃ যা যা জলদী যা।দিন তো তোদেরি।আমাকে একটু তোর শালিকার সাথে সেটিং করে দিস।আমারও তো বিয়ে করতে হবে তাই না।বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে তবু বাবা-মা বোঝে না।এবার তোর শালিকা বিয়ে করে ঘরে তুলবো।রাতে আর কত একা ঘুমাবো বল।এবার একটা বিয়ে করতেই হয়।
জিসান এক চোখ মেরে টিটকারি মারলো এনাজকে।এনাজ হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
🍂🍂🍂
কলেজ ছুটি হতেই বাসার দিকে রওনা দিলো নোভা।বৃষ্টির বেগটা অনেকটা কমেছে। কিন্তু বিধি বাম! বাস স্টেন্ড পর্যন্ত যেতেই ঝুপঝুপ করে বৃষ্টির তেজ বেড়ে গেল।বাধ্য হয়ে নোভাকে একটা ছাউনির নিচে দাঁড়াতে হলো।এনাজ বাইক করে কলেজের দিকেই আসছিলো।হঠাৎ করে বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় নোভা যে ছাউনিতে দাঁড়িয়েছে সেই ছাউনিতে এসে বাইক পাশে রেখে দাঁড়ালো। মাথা ঝাড়তে ঝাড়তে চারিদিকে চোখ বুলচ্ছে এনাজ।দুটো মায়াবী চোখের দিকে তাকিয়ে তার পুরো পৃথিবী থেমে গেল।এই চোখগুলো তার অনেক চেনা।যতবার দেখে ততবারই এর প্রেমে পরে যায়।এনাজের মনে এখন একটা গানই গিটার বাজিয়ে শোনাচ্ছে।
♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
ঐ তোর মায়াবী চোখ লা লা লা লা লা
লা লা লা লা লা আঁচল হয়ে যাবো।
ঐ তোর মায়াবী চোখ, কাজল হয়ে যাবো
আর উরলে হাওয়ায় তোর,আঁচল হয়ে যাবো।
আমার হয়ে যা তুই, আমি তোর হয়ে যাবো
একবার ডেকে যা তুই, বারবার চলে যাবো
তোর দুষ্টমিতে আজ, আমি ইচ্ছে মিশাবো
আমার হয়ে যা তুই, আমি তোর হয়ে যাবো
ঐ তোর মায়াবী চোখ, কাজল হয়ে যাবো।
আর উরলে হাওয়ায় তোর,আঁচল হয়ে যাবো।
মনে মনে ছেয়ে আছে আষাঢ়ের ঘোর,
নেমে আয় রাত হয়ে, ঘুমোলে শহর
আকাশ হয়ে যা তুই, সাগর হয়ে যাবো
আজ ঢেউ হয়ে যা তুই, পাথর হয়ে যাবো
আমার হয়ে যা তুই, আমি তোর হয়ে যাবো
একবার ডেকে যা তুই, বারবার চলে যাবো
তোর দুষ্টমিতে আজ, আমি ইচ্ছে মিশাবো
♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
এই গানটা মনের মাঝে ঘন্টা বাজিয়ে বারবার মনে হচ্ছে এনাজের।নোভা আশেপাশে থাকলে ওর মাঝে অন্য রকম অনুভূতির কাজ করে।হয়তো এটার নামই ভালোবাসা।এনাজের ভালোবাসার_তুই টাকে ঘিরে হাজারো স্বপ্ন বুনছে মনে মনে।বৃষ্টির বেগটা বেড়েই যাচ্ছে। চারিদিকে ঝুম বৃষ্টির কারণে সাদা হয়ে আছে।নোভা এক দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে আছে।তার আর কোনদিকে হুশ নেই। নয়তো সে এতক্ষণে এনাজকে দেখে ফেলতো।এনাজ ধীর পায়ে নোভার পিছনে এসে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকালো।কিন্তু তারপরেও নোভার কোন হুশ নেই। কি জানি এক ধ্যানে ভাবছে সে।এনাজ যে ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে তাও দেখিনি।
#চলবে
রিচেইক দেওয়া হয়নি।ভূল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং।