#ভালোবাসার_উষ্ণতা
#৭ম_পর্ব
চেয়ার থেকে উঠতেই যাবে তখন এক জন রমনী তার সামনে এসে দাঁড়ালো। রমনীটিকে দেখে যেন মাটি থেকে জমি খসে গেছে, রমনীটি আর কেউ নয় আবরারের ছোট বেলার বান্ধবী রাইসা। কালো শাড়ি পরিহিতা রাইসাকে দেখে মূহুর্তের জন্য খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ে। প্রথমে ভেবেছিলো রাইসাই সে নাকি যে প্রাপ্তি সেজে সবার সাথে ছলনা করে যাচ্ছে। পরে নিজেকে শান্ত করে বোঝালো, এটা অসম্ভব। যতদূর জানে রাইসার বিয়ে হয়ে গেছে, বিয়ের পর কানাডা চলে গিয়েছিলো। আবরার ও রাইসার বিয়ে নিয়ে খুব একটা খুশি ছিলো না। কিন্তু রাইসাকে দেখে মনে হচ্ছে ও খুব খুশিতেই আছে, মা হতে চলেছে সে। অনেকটা উত্তেজিত ভাবেই জিজ্ঞেস করে অয়ন,
– তুমি? এখানে? কবে এলে রাইসা আপু কানাডা থেকে?
– তাহলে আমায় এখনো মনে রেখেছিস তোরা! খুব কেক খেতে ইচ্ছে করছিলো তাই এখানে আসা। বসতে পারি?
– হ্যা হ্যা বসো না, দুলাভাই কোথায়? তুমি একা যে?
– জানি না, আমি একাই এলাম। শুনলাম, আবরার নাকি বিয়ে করেছে? খুব সুখে আছে নারে?
– আপু তুমিও কি নিউজগুলোই দেখো আর বিশ্বাস করো?
– না বিশ্বাস করার কি আছে?
– না নেই, ভাই ইউ.এস.এ তে। কিছু কাজে গেছে।
– ও, বউ কে নিয়ে গেছে বুঝি?
– না, ও দেশে। তোমার কথা বলো, আসলে কবে? আর এতো বড় গুড নিউজ আমরা কেনো জানি না?
– আমি কখনো যাই ই নি। আর খোঁজ করিস নি বলে জানতে পারিস নি। এটা এমন কিছুই না। আর গুড নিউজ আসতে বেশি দেরি নেই, সাড়ে সাত মাস চলে৷
– কিন্তু তুমি তো
– বিয়েটা আমি করি নি অয়ন। একটা মানুষকে ভালোবেসে অন্য কাউকে বিয়ে করাটা বোধ হয় ঠিক হতো না। আর বিয়ের আগেই আমি এই জানের অস্তিত্ব টের পেয়েছি। ভালোবাসার স্মৃতিটাকে কিভাবে মুছে ফেলি বল। কিন্তু কি বল তো, মানুষটা আমার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখে নি। সেটায় আমার কষ্ট নেই, আমি আমার বাচ্চাকে ঠিক নিজের মতো করে গড়ে নিবো দেখিস।
– তোমার বাড়ির লোকজন জানে?
– হুম, বাবা আমার মুখ দেখেন না ছয় মাস হবে।
– তুমি আমাদের বলো নি কেন?
– বলে কি হবে?
– আমরা এতোটা পর বুঝি?
– যা আপন ছিলো সেই কথা রাখে নি, পরের কাছে কি চাইবো?
– তুমি এখন কোথায় আছো?
– এক বান্ধবীর বাসায়। একটা জব ম্যানেজ হয়ে গেছে, এভাবেই কাটছি। তোর সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগলো। আচ্ছা, আমি আসি। আবরার এলে একবার ওর সাথে দেখা হওয়াটা দরকার। আমাকে একটু জানাস কেমন?
– তুমি তোমার নাম্বারটা আমায় দাও। আর যেকোনো প্রয়োজনে আমাকে জানাতে ভুলোনা কিন্তু।
– হুম, সেভ করে নে।
নম্বর সেভ করার জন্য মোবাইলের লক খুলতেই “প্রাপ্তি শেখ” এর ম্যাসেজ। তাতে লেখা,
” আপনি আমাকে কথা দিয়ে অন্য নারীর সাথে বসে রইবেন, এটা আমি আশা করি নি”
ম্যাসেজটা পেয়েই আশেপাশে নজর ঘুরালো অয়ন। অয়নকে খুব উত্তেজিত লাগছিলো, মথায় ঘাম জমে গেছে। রাইসা অয়নের অস্বাভাবিকতা দেখে জিজ্ঞেস করে,
– কি হলো? তুই এতোটা উত্তেজিত কেনো হচ্ছিস? কোনো সমস্যা
– না, কিছু না। তুমি নম্বর দাও।
রাইসাকে উবারে তুলে দিয়ে, ফোনটা আবার হাতে নেয় অয়ন। ম্যাসেজ অপশনে যেয়ে অই আইডিতে টাইপ করে,
– আপনি যদি ক্যাফেতে এসেই থাকেন তবে দেখা কেনো করলেন না। এক ঘন্টা আপনার অপেক্ষায় কাটিয়েছি। আর ওই নারীটি আমার বোন ছিলো।
– আমার সাথে দেখা করতে বেশ উতলা হচ্ছেন, বেশ কাল আমার চাচাতো বোন রোশনি শেখ আপনার সাথে দেখা করবে। তাকে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আমাকেও লাগবে।
– আচ্ছা, যা আপনার ভালো লাগে।
ম্যাসেজটা পাঠিয়েই রিয়াদকে ফোন দেয় অয়ন। শুধু একটা কথাই বলে,
– আইপি এড্রেস হ্যাক করো। কোন কম্পিউটার বা মোবাইল থেকে ম্যাসেজ আসছে আমি জানতে চাই। তোমাকে তিন দিন সময় দিচ্ছি। আমি জানি না তুমি কিভাবে কি করবে।
ফোনটা রেখে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় অয়ন। আজ নিজে প্রাপ্তিকে বাড়ি নিয়ে যাবে সে। উদ্দেশ্য একটাই প্রাপ্তির মনে নিজের জন্য ভালোবাসা তৈরি করা। অনেক ভেবে ঠিক করেছে, একটা চেষ্টা করতে ক্ষতি নেই। তারপর প্রাপ্তি যদি তাকে ক্ষমা করে দেয়, তাহলে প্রাপ্তিকে মনের মহারানী করে সারাজীবন নিজের মনের রাজত্বে রেখে দিবে। আর যদি তা না হয়, তবে আবরার আর প্রাপ্তির জীবনে বাধা হয়ে কোনোদিনও আসবে না।
বিকেল ৫টা,
স্থানঃ- নবজাগরণ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
গেটের সামনে অনেকক্ষণ যাবৎ দাঁড়িয়ে আছে অয়ন। প্রাপ্তি এখনো আসে নি, এমনকি মেয়েটার কাছে মোবাইলও নেই। এতো ঘাড়ত্যাড়া মেয়ে, যদি একটু কথা শুনতো। আজকেই মোবাইল কিনে দিতে হবে। প্রায় দেড় ঘন্টা যাবৎ দাঁড়িয়ে আছে অয়ন। আজ আসুক ওকে একটা শিক্ষা দিতে হবে। রাস্তায় পড়ে থাকা ক্যানে লাথি বসাতেই যাবে তখন নজরে পড়লো প্রাপ্তি একটি ছেলের সাথে গেটের দিকে আসছে, তারা যথেষ্ট হাসাহাসি করছিলো যা কারোর কাছে দৃষ্টিকটু না হলেও অয়নের মুহূর্তের মধ্যে মেজাজ বিগড়ে দিতে যথেষ্ট। প্রাপ্তি সামনেই আসছিলো, খেয়াল করে দেখলো গেটের ঠিক অপসিটে গাড়িতে হেলান দিয়ে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। অয়নকে দেখে মোটামুটি ভয়ে জমে গেছে প্রাপ্তি। এমনেই পান থেকে চুন খসলেই এই বান্দা চৌদ্দ গুষ্টির ষষ্ঠী করে দেয়। আর এখন তো একটা ছেলের সাথে সে ঘুরছে না জানি তার ভাগ্যে কি আছে।
অয়নের সামনে গিয়ে আমতা আমতা করে কিছু বলতে গেলে, অয়ন থামিয়ে দেয়। গাড়ির দরজা খুলে নিজে বসায় প্রাপ্তিকে। তারপর রেষ্টুরেন্ট এ খায়াতে নিয়ে যায়। প্রাপ্তির কাছে এ যেনো অন্য অয়ন। এতো দামি রেষ্টুরেন্টে এই প্রথম গিয়েছে প্রাপ্তি। প্রাপ্তির প্রথমে অস্বস্তি লাগলেও অয়ন পাশে থাকায় তার অস্বস্তিকর পরিস্থিতি স্বস্তিকর হয়ে উঠেছে। খাওয়া দাওয়া শেষে নদীর পাড়ে ঘুরতে নিয়ে যায় অয়ন তাকে। আজ তিন মাস পর বাহিরে এসেছে প্রাপ্তি। নদীর তীরের ঠান্ডা হাওয়া ভেতরে থাকা মানুষটাকে নাড়িয়ে দিতে যথেষ্ট। আজ প্রাপ্তির খুব হালকা লাগছে, পাশে থাকা মানুষটাকেও আজ যেন খুব ভালো লাগছে। বেশ কিছুক্ষণ নদীর দিকে তাকিয়ে থেকে পাশে তাকাতেই প্রাপ্তির শরীর জমে গেলো। অয়ন তখন …..
চলবে