ভালোবাসায় তুমি আমি পর্ব-০৮ এবং শেষ পর্ব

0
1564

#ভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব_০৮(শেষ)
#নির্মল_আহমেদ

প্রায় 10 12 মিনিটের মধ্যে তিশা ও তনয় গিয়ে পৌঁছলো তিশাদের বাসার সামনে। তনয় নিজেকে মনে মনে শক্ত করে নিচ্ছে। তিশা যেন ভয়ে কাঁপছে ক্রমাগত, বুক ঢিপঢিপ করছে তার। অনেক বারেই তো সে তার বাড়ির সামনে এসেছিল কিন্তু কখনো তো এরকম অনুভুতি হয়নি। তবে আজকে কেন?
তিশার বাবা-মা ও আপু ড্রয়িংরুমে বসে ছিল। হঠাৎ করে কলিং বেলের আওয়াজ শুনতে পেল তারা। সবাই তাকাল দরজার দিকে। আতিফ রহমান একটু বিরক্ত হয়ে ভাবলেন,’এখন আবার কে আসবে!’ভেবেই তুলিকে নির্দেশ দিলেন,
‘দেখতো তুলি দরজাটা খুলে। কে এসেছে?’
তুলি পিতৃআজ্ঞা পালনের জন্য সোফা থেকে উঠে দরজার কাছে গেল।দরজা খুলতেই তিশা ও তনয়কে একসাথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে অবাক হলো। সোফায় বসে থাকা আতিফ রহমান মাথা নিচু করে নিজের মেয়ের কথা ভাবছিলেন, তাই দরজার দিকে তাকাননি। কিন্তু হঠাৎ তুলি চিৎকার করে যখন তাকে ডাকল, তখন তিনিও দরজার দিকে তাকিয়ে নির্বিকার ভঙ্গিতে অবাক হয়ে বসে রইলেন। এখন তার কি করনীয় তিনি তা বুঝতে পারছেন না। কিন্তু তিশার মা আবেগপ্রবণ ভঙ্গিতে সোফা থেকে উঠে কাঁদতে কাঁদতে নিজের মেয়ের কাছে গেলেন। কিন্তু আতিক রহমান কঠোর কন্ঠে তিশা র মাকে বললেন,
‘দাঁড়াও। কোথায় যাচ্ছ?
তিশার মা চোখের পানি মুছে বললেন,’কেন? কিসের কাছে?’
‘না তুমি যাবে না? আমার আগে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে ওকে! তারপর।’কথাটা অনেকটা শক্ত হবে বলে আতিফ রহমান নিজের চোখ থেকে চশমাটা খুলে টেবিলে রাখলেন। একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস টেনে তিশার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। তিশা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তনয়ের তেমন কোনো ভাবান্তর নেই। সে বেশ স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তুলি একবার তার বাবার দিকে আর একবার তার দিকে তাকাচ্ছে। সে খুবই কনফিউজড।
তিশা এবার মৃদু মাথা দুলিয়ে অস্পষ্ট কন্ঠে তার বাবাকে বললো,’বাবা! তুমি…’
তিশা আর কথায় করতে পারল না। সেখানেই থমকে গেল। কারণ আতিফ রহমান তার হাতটি শক্ত করে উচিয়ে ধরেছেন, অর্থাৎ তিনি কিছু শুনতে চান না। তিনি স্বাভাবিক ভাবেই তিশার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন,
‘একটাও মিথ্যা কথা না বলে, সরাসরি বল কাল সারারাত কোথায় ছিলি।’
তিশা কিছু বলতে পারলো না। হাত কচলাতে কচলাতে উনার দিকে তাকাল করুন দৃষ্টিতে। তনয় বুঝতে পারল তিশার অবস্থাটা। তাই তনয় আর টাইম ওয়েস্ট না করে একটা গলা খাকারি দিয়ে আতিফ রহমান কে বলল,
‘আঙ্কেল! আমি বলছি কি হয়েছে।’
আতিফ রহমান সহ তিশার মা ও তুলি ও অবাক হলো এ কথায়। তনয় সবার ফেস দেখে বুঝতে পারল সবার এখন কৌতুহলী অবস্থা। সে একটু অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বলল,
‘কাল সারারাত আমি আর তিশা একসাথে ছিলাম।’
তুলি চমকে দিকে তাকালো। তার বাবাকে বলতে না দিয়ে সে-ই বলল,
‘তনয়! তুমি এসব কি বলছ। সারারাত তিশার সাথে ছিলে মানে? কোথায় ছিলে?’
‘সব বলছি। তার আগে বলতে চাই আমি তুলিকে নয় তৃষা কে বিয়ে করতে চাই।”
আতিক রহমান এবার মাত্রাতিরিক্ত রাগান্বিত কন্ঠে তনয়কে বললেন,’এটা কি মগের মুল্লুক পেয়েছে? যে এটা পছন্দ হয়নি জন্য এটা নেবো।’
‘কিন্তু আঙ্কেল! আমার ও তিশার বিয়ে অনেক আগেই হয়ে গেছে। তাহলে এখন কী বলবেন?’
‘এটা, এটা তুমি কি বলছো তনয়। তিশার সাথে তোমার বিয়ে অনেক আগেই হয়ে গেছে মানে? আমি যে তোমাকে খুব ভালবেসে ফেলেছি সেটা কি হবে?’
‘দেখো তুলি, আমরা সব সময় যেটা চাই সেটা সব সময় পাইনা। কিছু কিছু জিনিস সেক্রিফাইস করতে হয়। ধরে নাও এটাও সেই রকম।’
আতিফ রহমান কনফিউজড ভঙ্গিতে বললেন,
‘আরে এসব কি হচ্ছে। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা। তনয়, তুমি সবকিছু খুলে বলো প্লিজ। আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না।’
‘হুম সেটাই ঠিক হবে।’বলেই তনয় সব কিছু খুলে বলল তাদের।
সবকিছু শোনার পর সবাই স্তব্ধ ও নিরব। তুলি কিছুটা মন খারাপ করে সেখান থেকে চলে গেল। তুলির এরকম ভাবে চলে যাওয়া দেখে মনে মনে কষ্ট পেল তিশা। পিছন থেকে একবার ডাকলো। কিন্তু তুলি সাড়া না দিয়ে উপরে উঠল।
এদিকে আতিক রহমান মাথায় হাত দিয়ে বললেন,’ওহ আল্লাহ! এসব কথা তাহলে তুলির দেখাদেখির দিন পরনি কেন তোমরা। তাহলে সেদিনই তো ল্যাঠা চুকে যেত।’
এতক্ষণে তিশা মুখ খুলল,’আসলে বাবা, আমরা দুজনের মধ্যে কেউ এই সম্পর্কটাকে মান্য দেয়নি। এটাকে একটা এক্সিডেন্টলি ঘটনা ভেবে আমরা দুজন ঠিক করেছিলাম যে, আমরা আমাদের মতো জীবন যাপন করব। কিন্তু ভাগ্য আমাদের আবার এক করিয়ে দিল। বুঝিয়ে দিল কারো একবার বিয়ে হলে সেটাই বাস্তব ও সেটা নিয়ে বাকি জীবন চলতে হবে।’
তিশার মা তিশার কাছে গিয়ে তার মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলল,’কিন্তু মা তুই তো আমাকে কখনো কোনো কথা চাপা মারিস না। তাহলে আমাকে অন্তত বলতিস তাহলে আজকের এই দিনটা দেখতে হতো না।’
আতিফ রহমান বুঝতে পারলেন তারা এতক্ষণ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে। তাই তিনি একটু ইতস্তত করে বললেন,’আচ্ছা ঠিক আছে। বাড়ির ভিতরে আসো। তনয়, তোমার বাবা মাকে তো এখানে আসতে হবে। তাদের কি ফোন করেছ?’
‘হুম আঙ্কেল। ফোন করেছি কিছুক্ষণের মধ্যে এসে যাবে।’
তনয়ের কাছ থেকে আঙ্কেল ডাকটা মোটেও পছন্দ হলো না আতিফ রহমানের। তাই বললেন,’উম হুম, আর আংকেল নয়। এবার থেকে তো তোমায় বাবা বলে ডাকতে হবে। না হলে কিন্তু আমার মেয়েকে তোমাকে তুলে দেব না।’
তোমার একটা মুচকি হেসে বলল,’আচ্ছা বাবা, চলুন ভিতরে গিয়ে বসি।’
‘এই তো এতক্ষণে তোমার মুখ থেকে বাবা ডাকটা শুনে মনে হল, আমার দুটি মেয়ের পাশাপাশি একটা ছিল রয়েছে।’
এরপর তনয়ের মা-বাবা আসলে যেদিন তুলিও তনয়ের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল সেদিনই তাদের বিয়ে ঠিক করা হলো। এরপর উক্ত দিন আসলে তনয় ও তিশার ধুমধাম করে বিয়ে হয়। এর কিছুদিন বাদে তনয়ের এক বন্ধু সাদমান যে ভার্সিটির প্রফেসর তার সাথে তুলির বিয়ে হয়। এখন তারা সুখে শান্তিতে জীবন কাটাচ্ছে।

৫ বছর পর,,,
‘তিশা! কোথায় গেলে। আমার নীল শার্ট টা খুজে পাচ্ছি না। প্লিজ একটু হেল্প করো না।’
রান্নাঘর থেকেই তিশা রুটি ভাজতে ভাজতে বলল,
‘আমি পারবো না। আমার এখন বহুৎ কাজ। তুমি নিজে খুঁজে দেখো।’
‘আরে আচ্ছা মুশকিল তো। শার্ট টা কি আমি রেখেছি। শার্ট টা ইস্ত্রি করবার পর কোথায় এখন রেখেছো আমি কি করে জানি। আর তোমার কথা অনুযায়ী আলমারিতে অনেক খুঁজেছি সেখানে নেই।’
তৃষা বিরক্ত কন্ঠে বলল,’আরে একটু ভালো করে খুঁজো। শার্টের তো আর ডানা নেই যে উড়ে উড়ে পালাবে। রুমে কোথাও আছে।’
‘তিশা! আমি অনেক খুঁজলাম কিন্তু পাইনি। তুমি প্লিজ এসে খুঁজে দাও। তুমি আসলে নিশ্চয়ই পাবে। এদিকে আমার অফিসে যেতে লেট হয়ে যাচ্ছে। তুমি কি চাও যে আমি দেরিতে অফিসে গিয়ে বসের গালিগালাজ শুনি।’
তিশা বিরক্ত হয়ে গ্যাসের পাওয়ার কমিয়ে দিয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে হাত মুছতে মুছতে রুমে আসলো। রুমে আসতেই সে অনেকটা অবাক হয়ে গেল। কারণ তনয় শার্টটা তো পেয়েছে প্লাস পড়েও আছে। তিশা রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
‘এটা কি হলো। সকাল সকাল আমার সাথে মশকরা করলে। এদিকে রুটি ভাজতে দেরি হলে আবার আমার সাথে ঝগড়া লাগিয়ে দেবে।’
তনয় একটা মুচকি হেসে জবাব দিল,’হুম। আমার বউ, তুমি হয়তো ভুলে গেছো আজকে এপ্রিলফুল। তাই সকাল সকাল তোমাকে দিয়েই এপ্রিল ফুল টা শুরু করলাম।’বলেই দাঁত কেলিয়ে একটা হাসি দিল তনয়।
তিশা বিরক্ত হয়ে চলে যেতে চাইলেই তনয় তিশার হাত ধরে আটকে দেয়। এক ঝটকায় তাকে তার বউকে এনে রোমান্টিক সরে পরল,
‘আমার বউ, তোমাকে রুমে ঢাকার আরেক একটি কারণ আছে। সেটা হল..’তনয় মুখ দিয়ে চুমুর ইশারা করলো।
তিশার জোর করে তমায় থেকে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বিরক্ত কন্ঠে বলল,’না না আমি ওসব পারব না এই সকাল সকাল। আমার অনেক কাজ আছে। যেতে দাও।’
‘হুম হুম। ওসব কথা তো শুনছি আজ। অফিসে যাওয়ার আগে তোমার ঠোঁটের একটা চুমু না পেলে সারাদিন তাই আমার বৃথা যাবে। কাজে মন বসবে না আর তুমি কি চাও যে কাজে ফাঁকি দেওয়ার জন্য তোমার বরের কাজটা চলে যাক।’
‘দেখো এসব কথা আমি শুনতে চাইনা। তুমি ছেড়ে দেবে কিনা সেটা আগে বল।’
‘না ছেড়ে দেবো না। একটা কিস দাও তারপর।’
তনয় তৃষাকে এখনো জড়িয়ে ধরেই আছে। তিশা বিরক্ত হয়ে বলল,
‘এক মেয়ের বাপ হয়েও তোমার দুষ্টুমি এখনো পুরোলো না। আমি সকাল-সকাল এইসব কিস ফিস দিতে পারব না।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে। তোমায় দিতে হবে না। আমি দিচ্ছি।’
বলেই তনয় তার হাত দুটি তিশার মাথায় শক্ত করে ধরে তার মুখ ক্রমশ তার মুখের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকলো। দুটি ঠোঁট পরস্পর মিলিত হতে যাবে তখনই তিশা আঁতকে উঠে বলল,
‘এই এই ছাড়ো বাবা এসেছে।’
তনয় অনেকটা লজ্জা ও ভয় পেয়ে তৃষা কে ছেড়ে দিল। তিশার ছাড়া পেতে হাসতে হাসতে সেখান থেকে চলে যেতে যেতে বলল,
‘কেমন, তোমাকেও এপ্রিল ফুল বানালাম।’
তনয় ভ্যাবলার মত তিশার দৌড়ে পালানোর দেখছে আর মাথা চুলকাচ্ছে।
সমাপ্ত❤️❤️❤️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে