#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#অন্তিম_পর্ব
#অদ্রিতা_জান্নাত
হসপিটালের ওটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে অরূপ ৷ কাচের গ্লাস ভেদ করে ওপাশের শ্রেয়ার মুখটা দেখতে পাচ্ছে ও ৷ দেয়ালের সাথে ঠেশ দিয়ে দাঁড়িয়ে শ্রেয়াকে দেখে যাচ্ছে ৷ চোখ মুখ সব ফুলে গেছে ৷ মাথার চুল সব এলোমেলো ৷ হাতে শার্টে রক্ত লেগে রয়েছে ৷
অন্যদিকে শূন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে তুহিন ৷ চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে ৷ তাও নিঃশব্দে ৷ মনে মনে একটাই প্রার্থনা করছে শ্রেয়া যেন ভালো হয়ে যায় ৷ দরকার পরলে শ্রেয়ার বদলে যেন ওকে নিয়ে যায় ৷ তবুও যেন শ্রেয়া ভালো থাকে ৷
কিছুক্ষন পর শ্রেয়ার মা বাবা আর বাকি সবাই হাসপাতালে এসে পৌঁছালো ৷ শ্রেয়ার মা পাগলামি শুরু করে দিয়েছে ৷ মেয়ের কাছে যাবে ৷ ওটির ভিতরে যাবে ৷ সব নার্সরা মিলে তাকে আটকিয়ে রাখছে ৷ হঠাৎ শ্রেয়ার মায়ের চোখ যায় অরূপের দিকে ৷ তার কান্না মূহুর্তেই রাগে পরিনত হলো ৷ সব নার্সকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে অরূপের কাছে গিয়ে ওকে টেনে নিজের দিকে ঘুরালেন ৷ অরূপ অবাক হয়ে তাকালো তার দিকে ৷ উনি অরূপকে ঝাকিয়ে বলতে লাগলেন,,,,,,,,,
“তুমি? তুমি কেন এসেছো এখানে? আমার মেয়েটাকে কষ্ট দিয়েও শান্তি পাও নি? আরো দিতে এসেছো আবার? তোমার জন্য আজ আমার মেয়েটার এই অবস্থা ৷ তুমি কি আমার মেয়েটাকে মেরে ফেলতো চাচ্ছো? ওর [শ্রেয়ার দিকে ইশারা করে] মুখটা দেখলে কি তোমার একটুও কষ্ট হয় না? কেন এসেছো আবার আমার মেয়েটার জীবনে?”
বলেই অরূপকে ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দিল ৷ অরূপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল ৷ ভুল যখন করেছে তখন শাস্তিও পেতে হবে ৷ কিন্তু ওর ভুলের শাস্তি শ্রেয়া কেন পাবে? এটা তো হতে পারে না ৷ অরূপ আবার শ্রেয়ার দিকে তাকালো ৷
কিছুক্ষন পর ডাক্তার বেরিয়ে আসলে সবাই তার কাছে ছুটে চলে গেল ৷ একের পর এক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে লাগলো তাকে ৷ ডাক্তার সবাইকে চুপ করিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,,
“দেখুন? অপারেশন এখনো কম্পিলিট হয় নি ৷ তাই তেমন কিছু বলতে পারছি না ৷ পেসেন্টের প্রচুর ব্লাড লস হয়েছে ৷ O- গ্রুপের রক্ত লাগবে আমাদের ৷ আপনারা যেখান থেকে পারেন ব্যবস্থা করুন ৷ আমাদের স্টক এ নেই ৷ আর হ্যাঁ পেসেন্টের অবস্থা বেশি ভালো না ৷ ওনার পেটে গুরুতর ভাবে আঘাত লেগেছে ৷ এর কারনে ভবিষ্যৎ এ কোনো বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে ৷ আরেকটা কথা ওনার একটা কিডনি নষ্ট হয়ে গিয়েছে ৷”
শ্রেয়ার মা চিৎকার দিয়ে উঠলেন ৷ কিছুক্ষন পর উনি অজ্ঞান হয়ে গেলেন ৷ ওনাকে একটা কেবিনে নিয়ে ঘুমের ইনজ্যাকশান দেয়া হলো ৷ তুহিন শ্রেয়ার দিকে একবার তাকিয়ে রক্ত আনতে চলে গেলো ৷ অন্যদিকে অরূপ কিছু একটা ভেবে দৌঁড়ে অন্যদিকে চলে গেলো ৷
____________________
চার বছর পর ৷
পুরো আকাশ জুড়ে রয়েছে কালো মেঘ ৷ সূর্যের এক ফোঁটা চিহ্ন পর্যন্ত নেই ৷ আশেপাশে বয়ে চলেছে শা শা করে ছুটে চলা বাতাস ৷ পুরো প্রকৃতি যেন কালো রূপ ধারন করেছে ৷ একটু পরেই হয়তো আকাশের বুক চিড়ে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির পানি কনা পৃথিবীর বুকে ঝড়ে পরবে ৷
এসবে ভেবেই মুখটা হালকা প্রসারিত করে হাসলো শ্রেয়া ৷ একটু পর আকাশ যেমন তার বৃষ্টির পানি দিয়ে পৃথিবীর বুক ভিজিয়ে দিবে ঠিক তেমন ভাবেই যদি শ্রেয়াও ওর চোখের পানি দিয়ে কারো বুক ভিজিয়ে দিতে পারতো!
চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পরলো এক ফোঁটা অশ্রু ৷ হঠাৎ ওর সামনে কেউ কিছু একটা ধরলো ৷ ও শূন্য আকাশের থেকে চোখ সরিয়ে সেই ব্যক্তিটির দিকে তাকালো ৷ তুহিন হাত আরেকটু বাড়িয়ে দিয়ে শ্রেয়াকে বললো,,,,,,, “নাও!”
শ্রেয়া তুহিনের হাত থেকে কফির কাপটা নিল ৷ তুহিন চুপচাপ শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে রইল ৷ শ্রেয়া এখন কারো সাথে বেশি কথা বলে না প্রয়োজন ছাড়া ৷ অনেক বেশি চুপচাপ হয়ে গিয়েছে ৷ তবে একজনের সঙ্গে মন খুলে কথা বলে ও ৷ তুহিন হাসলো তার কথা ভেবে ৷ শ্রেয়া চায়ের কাপটা পাশে রেখে আবার আকাশ পানে চেয়ে রইলো ৷ ঠিক তখনি একটা ছেলে ‘মাম্মা’ বলে দৌঁড়ে আসলো ওর কাছে ৷ শ্রেয়ার কোলের উপর উঠে শ্রেয়ার গলা জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,
“কি হয়েছে মাম্মা? তোমার মন খারাপ?”
শ্রেয়া হেসে মাথা নেড়ে ‘না’ বোঝালো ৷ ছেলেটার দুগালে চুমু খেয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে নিল ৷ একমাত্র এই ছেলেটার কাছেই ও শান্তি পায় ৷ সেটা কি মা হওয়ায় নাকি কোনো ভালোবাসার টানে সেটা জানা নেই ওর ৷ হঠাৎ ঝিড়িঝিড়ি করে বৃষ্টি পরতে লাগলো ৷ শ্রেয়া ছেলেটাকে কোলে নিয়ে ছাদ থেকে নেমে নিচে চলে গেল ৷ তুহিনও একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চায়ের কাপ দুটো নিয়ে নিচে চলে গেল ৷
শ্রেয়া ছোট্ট ছেলেটাকে নিয়ে এসে চেয়ারে বসালো ৷ হালকা পানি পরা চুলগুলো ঝেড়ে দিল ও ৷ তারপর ওর মুখটা মুছতে মুছতে বলে উঠলো,,,,,,,,,,
“কেন গেলে বলো তো? যদি আরো ভিজে যেতে?”
“ভালোই হতো ৷”
ছেলেটা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে শ্রেয়ার হাত ধরে আবার বলে উঠলো,,,,,,,,,,
“মাম্মা আজ চলো না একটু ঘুরতে যাই ৷ বৃষ্টি দেখবো আর ঘুরবো কত্তো মজা না?”
“আজ না বাবা ৷ পরে একদিন ৷ আজ ভালো লাগছে না আমার ৷”
“প্লিজ মাম্মা প্লিজ চলো না ৷”
“বললাম না আজ না ৷ একটা কথাও যদি শুনতে ৷”
ছেলেটা ঠোঁট উল্টে দাঁড়িয়ে রইলো ৷ তখনি তুহিন রুমের মধ্যে এসে ছেলেটাকে কোলে নিয়ে শ্রেয়াকে বলতে লাগলো,,,,,,
“এভাবে বলছো কেন? আজ আমি আমার বাবাটাকে ঘুরতে নিয়ে যাবে ৷ যাবে না বাবা ৷”
ছেলেটা মাথা নাড়ালো ৷ তুহিন ওকে নিচে নামিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,
“যাও রেডি হয়ে নাও হুম? আমি আসছি এক্ষুনি তোমার কাছে ৷ যাও যাও ৷”
ছেলেটা দৌঁড়ে অন্যদিকে চলে গেল ৷ তুহিন শ্রেয়ার পাশে এসে বসে বলে উঠলো,,,,,,,
“আর কত ভাববে বলো তো?”
শ্রেয়া কিছু বললো না ৷ তুহিন একটা দম নিয়ে বললো,,,,,,,,,
“আজ অন্তত কেঁদো না প্লিজ ৷”
শ্রেয়া এবারও কিছু বললো না ৷ তুহিন উঠে যেতে যেতে বলে উঠলো,,,,,,,,
“সাবধানে থেকো ৷ অরূপকে ঘুরিয়ে নিয়েই চলে আসবো আমি ৷”
শ্রেয়া চোখ তুলে তাকালো তুহিনের দিকে ৷ অরূপ নামটা প্রত্যেকবার ওর বুকে আঘাত করে করে চলে যায় ৷ তবুও ফিরে আসে না মানুষটা ৷ মানুষ এতোটা স্বার্থপর কি করে হয়? শ্রেয়া ঠোঁট কামড়ে চোখ বন্ধ করে বসে রইল ৷
শ্রেয়া ওই বাচ্চা ছেলেটার নাম অরূপের সঙ্গে মিলিয়ে অরূপ রেখেছে ৷ ছেলেটা পুরো অবিকল অরূপের মতো দেখতে ৷ কথা বার্তাও অরূপের মতো ৷ একদম ছোট্ট অরূপ ৷ অরূপের স্মৃতি বেঁচে আছে শ্রেয়ার মনে আর বাচ্চা ছেলেটার মুখে ৷ শুধু প্রাণটাই ওদের থেকে দূরে ৷ ছোট্ট ছেলেটা শ্রেয়ার নিজের ছেলে না ৷ তবে নিজের ছেলে থেকে কম কিছু ভাবে নি ও ওকে ৷ চার বছর আগে শ্রেয়ার অপারেশন হয় ৷ ওর ঠিক হতে প্রায় মাস খানিক সময় লেগে যায় ৷ একটা কিডনি আর রক্ত দিয়ে ওকে বাঁচায় একজন ৷ সেই একজনটা হচ্ছে শ্রেয়ার ভালোবাসার অরূপ ৷ হয়তো জীবনে একটা ভুল করেছে ৷ সেই ভুলটাও শুধরে নিয়েছে ৷ শ্রেয়ার যে ব্রেন ক্যান্সার হয়েছিল সেটার জন্য কোমোথেরাপি করে সব ক্যান্সারে আক্রমন কোষ গুলোকে মারা হয় ৷ মূলত এই রোগের রোগীরা সহজে ভালো হয় না ৷ তবে সেটা সম্পূর্ন ভাগ্যের উপর নির্ভর করে ৷ সেখানে হয়তো শ্রেয়ার আয়ু বেঁচে ছিল ৷ তাই ও বেঁচে গিয়েছে ৷ শ্রেয়ার জ্ঞান ফিরে প্রায় একমাস পর ৷ সবাইকে দেখলেও তখন অরূপকে দেখতে না পেয়ে অস্থির হয়ে উঠেছিল ৷ কিন্তু শেষ দেখাও দেখতে পেল না ও ৷ ওকে বাড়িতে নিয়ে গেলে ও প্রায়ই পাগলামী করতো ৷ হাসপাতালে থাকতে ডাক্তার বলেছিল শ্রেয়ার আর কখনো মা হতে পারবে না ৷ তখন শ্রেয়ার মানসিক অবস্থা খারাপ ছিল বলে তুহিন অনাথ আশ্রম থেকে একটা বাচ্চাকে কোলে করে নিয়ে আসে ৷ এমনি এমনি তুহিন ছেলেটাকে আনে নি ৷ কাকতালীয় ভাবে ছেলেটার চেহারার সাথে অরূপের চেহারার অবিকল মিল রয়েছে ৷ বাচ্চাটার বয়স তখন হবে প্রায় ৫ মাস ৷ শ্রেয়া সেই ছেলেটার মুখেই অরূপকে দেখতে পায় ৷ সারাদিন সেই ছেলেটাকে নিয়ে পরে থাকতো ৷ আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয় ও ৷ তবে অরূপের কথা কাঁদায় ওকে ৷ একটা বিধবা মেয়ের কোলে একটা ছোট্ট বাচ্চা দেখে অনেকে অনেক রকমের কথা শুনায় শ্রেয়াকে ৷ তাই শ্রেয়ার বাবা মা বাধ্য হয়ে তুহিনের সাথে শ্রেয়ার বিয়ে দেয় ৷ শ্রেয়া করতে না চাইলেও ওকে জোর করে ৷ কেউ জীবনে একা বাঁচতে পারে না ৷ একজন সঙ্গি তো লাগেই ৷ শ্রেয়ার ক্ষেত্রেও তাই ৷ তুহিন বিয়ে করতে চায় নি ৷ কিন্তু পরে ওই বাচ্চা ছেলেটার কথা ভেবে রাজি হয়ে যায় ৷ তুহিন আর শ্রেযার সম্পর্ক একদম বন্ধুর মত ৷ আগে যেরকমটা ছিল এখনো ঠিক সেরকম ৷ ওরা এখন বাংলাদেশেই নিজের বাড়িতে থাকে ৷
(এখন অনেকে বলবেন একটা কিডনি না থাকলে কি মানুষ বাঁচে না? হ্যাঁ বাঁচে তবে তার অনেক যত্নের দরকার হয় ৷ অরূপের মানসিক অবস্থাও ভালো ছিল না শ্রেয়াকে ঐভাবে দেখে ৷ ও ওর নিজের শরীরের সবটুকু রক্ত দিয়েছে শ্রেয়াকে সঙ্গে কিডনিও দিয়েছে ৷ যার জন্য ওর শরীর দুর্বল ছিল প্রচুর ৷ যেই কয়দিন বেঁচে ছিল শ্রেয়াকে মন ভরে দেখে নিত ৷ কিন্তু অরূপকে দেখতে পেল না শ্রেয়া ৷)
৷
৷
ছোট্ট অরূপকে গাড়িতে বসিয়ে তুহিন নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো ৷ ছোট্ট ছেলেটা গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরের বৃষ্টির পানি হাত দিয়ে ধরতে লাগলো ৷ কিছুক্ষন পর তুহিন গাড়ি থামিয়ে অরূপকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,,
“এরকম করছো কেন বাবা? ঠান্ডা লেগে যাবে তো ৷”
অরূপ মাথা নাড়িয়ে ‘না’ করে বলে উঠলো,,,,,,,,
“আচ্ছা পাপা মাম্মার কি হয়েছে? প্রায়ই সময় মন খারাপ করে থাকে ৷”
“তোমার মাম্মার যখন ভালো লাগে না ৷ তখন এরকম করে ৷ যখন এরকম করবে তখন তাকে একটুও জ্বালাবে না ৷ শক্ত করে জড়িয়ে রাখবে ৷ কেমন!”
অরূপ দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে নিজের হাত পা নাড়িয়ে খেলতে লাগলো ৷ তুহিন বাহিরের দিকে তাকিয়ে নিজের চোখের কোনায় জমে থাকা পানিটা আস্তে করে মুছে নিলো ৷
৷
৷
৷
শ্রেয়া নিজের চোখ মুছে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেল ৷ আলমারির কাছে গিয়ে অালমারি থেকে একটা প্যাকেট বের করলো ৷ প্যাকেটটা হাতে নিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো ৷ প্যাকেটটা খুলে তার মধ্যে থেকে একটা শাড়ি বের করলো ৷ তার সঙ্গে শাড়ির সাথে কিছু ম্যাচিং জুয়েলারী সেটও রয়েছে ৷ সবকিছু ভিতর থেকে বের করে হাতে নিল ৷ এইটা অরূপের দেয়া শেষ স্মৃতি ওর কাছে ৷ এর আগের সব স্মৃতিগুলা যে ও নষ্ট করে ফেলেছে ৷ কিন্তু এগুলা ও ওর নিজের জীবন দিয়ে আগলে রাখবে ৷ মানুষটা তো আর ফিরে আসবে না কিন্তু তার দেয়া জিনিসপত্র আগলে রাখবে ও ৷ শাড়ির সঙ্গেই তার উপরে একটা চিরকুট রয়েছে ৷ শ্রেয়া সেটা হাতে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলো ৷ এটা যে ও কতবার পরেছে তার কোনো হিসাব নেই ৷ সময় হলেই এইটা পরে আর কাঁদে ৷ চিরকুটের লিখাগুলা এখন ওর মুখস্ত হয়ে গেছে ৷ লিখাগুলো পরলেই ওর বুকটা ফেটে যায় ৷ আস্তে আস্তে সেটা খুললো শ্রেয়া ৷ আর প্রথম থেকে পরতে লাগলো!!
“প্রিয়”
এটা যখন পরবে তখন হয়তো তোমার কাছে আমি থাকবো না ৷ তুমি হয়তো আমাকে স্বার্থপর ভাববে ৷ তবে তোমার জন্য এতোটুকু স্বার্থপর হতেই পারি কি বলো! আমি কিন্তু তোমার পাশে আছি সবসময় ৷ তোমার সাথে আছি আর সারাজীবন থাকবো ৷ তুমি কষ্ট পেও না ৷ আর আমার জন্য একদম চোখের পানি ফেলবে না ৷ তাতে আমারও কষ্ট হবে অনেক ৷ জানো? যে কয়দিন বেঁচে ছিলাম তোমাকে মন ভরে দেখে নিতাম কিন্তু কথা বলতে পারতাম না ৷ আচ্ছা তুমি কি আমাকে শেষ দেখা দেখেছো? দেখো না কিন্তু ৷ আমি জানি তাতে অনেক কষ্ট হবে তোমার ৷ আমার কথা বেশি ভাববে না ৷ যে চলে যাওয়ার সে যাবেই ৷ যেমনটা আমি ৷ তাই আমার কথা না ভেবে লাইফে মুভ অন করো ৷ আমার জন্য নিজের জীবনটা থামিয়ে রেখো না শ্রেয়া ৷ আমি তো ভুল করেছিলাম ৷ তার শাস্তিও পেয়েছি ৷ তুমি তো কিছু করো নি তুমি কেন শাস্তি পাবে? আমার ভুলগুলো ক্ষমা করে দিও শ্রেয়া ৷ আর হ্যাঁ এই শাড়ি গয়নাগুলো পরে নিজেকে একবার দেখো ৷ আমি তো তোমাকে দেখার জন্য থাকবো না ৷ কিন্তু তুমি পরো ৷ অভিমান করে থেকো না আবার আমার উপর ৷ কি বলো তো তোমার অভিমান ভাঙ্গানোর জন্য আমি আর নেই ৷ হয়তো সেই কাজটা অন্য কেউ করবে ৷ আমার আরেকটা কথা রাখবে শ্রেয়া? তুহিনকে বিয়ে করবে প্লিজ ৷ ও অনেক ভালো ছেলে ৷ আমার থেকেও সুখে রাখবে তোমাকে ৷ একা একা সারাজীবন না কাটিয়ে একজনের সঙ্গে কাটাও ভালো লাগবে ৷ আমি জানি তুমি এখনো আমায় ভালোবাসো ৷ আমি যদি সেই ভুলটা না করতাম তাহলে হয়তো আজ আমরা এভাবে থাকতাম না ৷ আমাকে ভালোবাসো সমস্যা নেই ৷ তুহিনকেও ভালোবেসো ৷ আমি জানি এখন তুমি বলবে তুমি ওকে ভালোবাসতে পারবে না ৷ আমি বলবো একসাথে থাকো দুজন ঠিক “ভালোবাসবে তুমিও” ৷ তুহিন তোমার জন্য যোগ্য ৷ আমার মতো ভাগ্যকে পায়ে ঠেলে দিয়ে সেই ভুলটা করো না শ্রেয়া ৷ একটু চেষ্টা করো পারবে ৷ ভালোবাসা বলে কয়ে হয় না মূহুর্তের মধ্যেই হয়ে যায় ৷ শুধু এইটুকুই চাইবো কখনো খারাপ পথে পা বাড়াবে না ৷ ভালো থেকো! ভালো রেখো! পরিশেষে বলবো “ভালোবাসি তোমায়!”
শ্রেয়া চিরকুটটা বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো ৷ জোরে একটা দম নিয়ে মুখটা হালকা প্রসারিত করে হাসলো ৷ সেই হাসির পিছনে রয়েছে একজনকে হারিয়ে ফেলার কষ্ট আর তার ভালোবাসা ছাড়া বেঁচে থাকার হতাশা!
সমাপ্ত________________
★অরূপকে কেন মেরে ফেললাম?
=ওর অন্যায়ের শাস্তি ও পেয়েছে ৷ এখন যদি বলেন যে তার জন্য কেন মেরে ফেললাম? একটা প্রানকে বাঁচাতে ও নিজের প্রান দিয়েছে ৷ সেটা নিশ্চয়ই পাপ না!
★অরূপের সাথে শ্রেয়ার বিয়ে হয়েছে আবার তুহিনের সাথে শ্রেয়ার বিয়ে দিলাম কেন?
=একলা বাঁচা অনেক কঠিন ৷ আর অরূপ যেহেতু মারা গেছে তো দ্বিতীয় বিয়ে শ্রেয়া করতেই পারে ৷ অন্তত নিজের জন্য না হোক ওই ছোট্ট ছেলেটার জন্য ৷ যে একমাত্র ওর বাঁচার আশা ৷
★অরূপের সঙ্গে শ্রেয়ার মিল না দিয়ে কেন তুহিনের সাথে দিলাম?
=কারো সাথেই দেয় নি আমি ৷ বিয়ে হলেই যে মিল হবে এমন কোনো কথা নেই ৷ দুটো মনের মিল হলেই সেটা মিল ৷ বিয়ের পর কি স্বামী স্ত্রী বন্ধু হিসেবে থাকতে পারে না? অবশ্যই পারবে কেন পারবে না? আর নায়ক নায়িকার মিল হতেই হবে এমন কোনো কথা নেই ৷
★স্যাড এন্ডিং কেন দিলাম?
=গল্পটা মোটেও স্যাড এন্ডিং দেই নি ৷ অরূপকে মেরেছি সেটা স্যাড কিন্তু শ্রেয়া ওর ছেলেকে নিয়ে তুহিনের সাথে ভালো থাকবে সেটা ততোটাও স্যাড না ৷
গল্পটা আমি আমার মতো লিখেছি ৷ কারো কথা শুনে নয় ৷ আমার মত সবাইকে সাজিয়েছে ৷ জানিনা কতটুকু পেরেছি ৷ তবে অরূপকে মারার জন্য যারা রেগে আছেন তাদের বলবো বাস্তব জীবনে এরকম হাজার হাজার ভালোবাসা রয়েছে যেগুলো অসমাপ্ত ৷ অনেকেরই হয়তো ইন্ডিংটা ভালো লাগে নাই ৷ তার জন্য সরি ৷ সবার ভালো লাগবে এমন তো কোনো কথা নেই ৷ দয়া করে কেউ বাজে মন্তব্য করবেন না ৷ সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন ৷ আল্লাহ হাফেজ💔
I like your thoughts..
Nice writing
Carry on
🤟🤟🤘🤟
Just wow