#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২৮
আমি ওয়াশরুম থেকে চেন্জ করে বের হওয়ার সাথে সাথে সাদাফ ভাই আমাকে কোলে তুলে নেয়।পড়ে যাওয়ার ভয়ে সাদাফ ভাইয়ের গলা জড়িয়ে ধরি আমি।তখন সাদাফ ভাই হাসতে হাসতে বলে উঠে,,,
“সাবুপরি কী ভেবেছো তুমি,আমি একা একা বাসর রাত পালন করব হুম?”
“ছাড়ুন আমাকে।”
“নাও ছেড়ে দিলাম।”
কথাটা বলেই সাদাফ ভাই আমাকে খাটে ধপাস করে ফেলে দেয়।আমি ভয়ে পেয়ে হালকা চিৎকার করে উঠি।সাদাফ ভাই এবার আমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে।
“আরে করছেনটা কী?সরুন এখান থেকে।”
“বাসর রাত পালন করছি,আজ সারারাত দুজন গল্প করব এভাবেই।”
কথাটা বলে উনি আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে,আমি শিউরে উঠি।পরক্ষণেই নিজেকে সামলিয়ে উনাকে সরানোর জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়ি।
“আমি সারারাত এভাবে বসে থাকতে পারব না,উঠুন বলছি।নয়ত ঘুসি দিয়ে নাক ফাটিয়ে ফেলব।”
“ঘুসি দেও আর লাথি দেও তারপরও উঠছি না আমি।এভাবেই বসে থাকবে বুঝেছো!”
“আমার ওত বুঝে কাজ নেই,আপনাকে উঠতে বলেছি উঠুন।আপনার মত হাতি আমার কোলে শুয়ে আছেন আর আমি মশা হয়ে সে ভার বহন করিতে পারিতেছিনা।অতএব জনাব আপনি আমার কোল থেকে উঠুন নয়ত খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
“এমন কেন করো সাবুপরি?তুমি সবসময় আমার সাথে এমন কঠোর হয়ে কথা বলো।একটু নরম হতে পারো না আমার জন্য।আমারও ত ইচ্ছে করে আমার বউটা আমার সাথে সবসময় মিষ্টি স্বরে কথা বলবে।মিষ্টি করে ওগো,হেগো এভাবে বলে ডাকবে।কিন্তু তুমি ত সবসময় আমার সাথে রেগে কথা বলো,নয়ত ঠাস ঠুস লাগিয়ে দাও।”
সাদাফ ভাই কথাগুলো নরম গলায় বলেছে।আমার উপর করা উনার অভিযোগ গুলো একটাও মিথ্যা নয়।সত্যি আমি বড্ড বেশি কঠোর হই উনার প্রতি।
“আজ এমন একটা স্পেশাল দিনে তোমার কাছে একটা অনুরোধ করব,রাখবে?”
“এভাবে কেন বলছেন?আপনি বলুন না কী বলতে চান।”
“বলব তার আগে বলো রাখবে।”
“হুম রাখব বলুন।”
“একটাবার ভালবাসি বলবে!জানি তুমি আমাকে ভালবাসো না তারপরও একটা বার মিথ্যে করেই ভালবাসি বলো না সাবুপরি।”
আমি উনার কথাশুনে থমকে যাই।কী করব আমি?মিথ্যে করেই কী ভালবাসি বলা যায়?
“তোমার মুখ থেকে ভালবাসি কথাটা শুনতে বড্ড বেশি ইচ্ছে করছে সাবুপরি।প্লিজ একটাবার বলো,আর কখনও বলব না ভালবাসি বলো।শুধু আজ একটাবার বলো না।”
কী এক মুসিবতে পড়লাম আমি,ভালবাসি কথাটা বলা কী এতই সহজ?
কিছুক্ষন ধরে আমি এসবই ভাবছি যে বলব নাকি বলব না!একটা সময় সাদাফ ভাই আমাকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।আর চুপচাপ ব্যালকনিতে চলে যায়,আমার চুপ থাকাটা উনাকে কষ্ট দিয়েছে।কিন্তু আমিই বা কী করব,হঠাৎ করেই মাথায় একটা কথা আসে আর আমার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে।আমি খাট থেকে নেমে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়াই ঠিক উনার পিছনে।আর গিয়েই উনাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আস্তে করে বলে উঠি,,,
“ভালবাসতে চাই আপনাকে।ভালবেসে আপনার কাছে-পাশে থাকতে চাই।রাখবেন কী আমায় ভালবেসে আপনার কাছে?”
উনি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আমাকে টেনে উনার সামনে দাঁড় করিয়ে আমার নাকে উনার নাক ঘসে মুচকি হেসে বলে।
“ভালবেসে রাখব কাছে,
থাকব তোমার পাশে।
বাসব অনেক ভালো,
সারাজীবন ধরে।”
(কবিতা লেখার ট্রায় করছি কিন্তু হয় নাই🤧)
উনার কথাশুনে আমার ঠোঁটের কোনের হাসিটা চওড়া হয়।উনি এবার আমাকে বুকে আগলে নেয় শক্ত করে।
______________________________________
সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গে চেঁচামেচির আওয়াজে,ঘুম থেকে উঠে দেখি সাদাফ ভাই পাশে নেই।হয়ত নিচে গেছে,আমিও গায়ে উর্নাটা জড়িয়ে নিচে নামি।আর নিচে নেমেই সকাল সকাল মাথাটা গরম হয়ে যায়।গরিলা মার্কা মহিলা আর কাব্য ভাই সকালে পুলিশ নিয়ে হাজির আমাদের বাড়িতে।গরিলা মার্কা মহিলা আর কাব্য ভাইকে দেখেই মাথা গরম হয়ে যায় আমার।কিন্তু এখানে কী হচ্ছে সেটা ঠিক ঠাহর করতে পারছি না।সাদাফ ভাই আর উনার বাবা এক পাশে কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে।আর এক পাশে সাদাফ ভাইয়ের মা দাঁড়িয়ে আছে।আমি ধীর পায়ে শ্বাশুড়ি আম্মুর পাশে গিয়ে দাঁড়াই।
“আম্মু এই দুই শয়তান এখানে কেন?”
আমার কথা শুনে আম্মু চোখ দুইটা বড়বড় করে তাকায় আমার দিকে।আমি সেটা দেখে আবারও বলে উঠি,,,
“আম্মু এখন এমন রিয়েকশন না দিয়ে কাহিনী কী সেটা বলো।”
আমার কথা শেষ হওয়ার পরই আম্মু আমাকে টেনে একপাশে নিয়ে দাঁড় করায় আর ফিসফিসিয়ে বলে উঠে।
“আরে এই দুইজনকে নাকি সাদাফ কাল কিডন্যাপ করেছে তাই পুলিশ নিয়ে এসেছে বাড়িতে।”
আম্মুর কথাশুনে আমার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।দুজনকে কিডন্যাপ করেছে মানে?কাল তবে এর জন্য এই দুই শয়তানকে চোখে পড়ে নি।কিন্তু সাদাফ ভাই ওদের কিডন্যাপ কেন করল?আমার ভাবনার মাঝেই কাব্য ভাই আমার কাছে এসে আমার গালে হাত দিয়ে বলে।
“সাবিহা তুই ঠিক আছিস?এই বদমাইশটা তোর কোন ক্ষতি করে নি ত?তকে আর কিছু করতে পারবে না এই বদমাইশটা।আমি এসে পড়েছি এবার তকে এখান থেকে নিয়ে যাব।চল আমার সাথে,এখানে আর এক মুহুর্তও না।”
কথাটা বলে কাব্য ভাই আমার হাত ধরে টান দেয়।তখন সাদাফ ভাই আমার পাশে এসে অন্য হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে উনার বুকে ফেলে।আর এক হাত দিয়ে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে উনার সাথে মিশিয়ে নেয়।আর রাগমিশ্রিত স্বরে বলে উঠে,,,
“তোর সাহস হল কী করে আমার বাড়িতে এসে আমারই বিয়ে করা বউকে টাচ করার?”
সাদাফের কথা শুনে কাব্য অবাক হয়ে যায়।বউ মানে কী বলছে এসব সাদাফ?
“বউ মানেহ?”
“বউ মানে সাবিহা আমার বিয়ে করা বউ।”
“সাদাফ তুই বিয়ে করেছিস?আর এই মেয়েটাকে!তুই কী জানিস না আমি তকে কতটা ভালবাসি?তারপরও তুই এই মেয়েটাকে কীভাবে বিয়ে করলি?”
“আমি কাকে বিয়ে করব না করব সেটা কী তুই বলে দিবি?আর এই মেয়েটা এই মেয়েটা করছিস কেন?অর একটা সুন্দর নাম আছে নাম ধরে ডাকবি নয়ত ভাবি বলবি।”
আমি অবাক চোখে সবার কথা শুনে যাচ্ছি।কাব্য ভাইকে নতুন রূপে দেখছি,তার সাথে গরিলা মার্কা মহিলার প্রেম প্রেম পাগলামি।আর সবার উপরে আছে আমার একমাত্র হাসবেন্ড যে কী না আজ পুরো ফাটিয়ে দিচ্ছে।আমি আজ কিছু বলব না শুধু নিরব দর্শকের মত সবটা দেখব।ইস্ পপকর্ন হলে জমত ভালো,কিন্তু আমি ত ফ্রেশই হই নি ঘুম থেকে উঠে।দেৎ ভাল্লাগে না,আমার এমন বোকা বোকা ভাবনার মাঝেই কাব্য ভাই আমার দিকে এগিয়ে এসে কিছু বলতে নিলে সাদাফ ভাই হাত দিয়ে থামিয়ে দেয়।
“যেখানে আছিস সেখানেই থাক একদম আমার বউয়ের কাছে আসার চেষ্টা করবি না।”
“সাদাফ সাবিহাকে ছাড়,সাবিহা তকে বিয়ে করতে পারে না।সাবিহা ত আমাকে ভালবাসে,সাবিহা এমনটা করতে পারে না।তুই নিশ্চয়ই সাবিহাকে জোড় করে বিয়ে করেছিস?অফিসার আপনি কিছু বলছেন না কেন?দেখতে পারছেন না একটা মেয়েকে কীভাবে জোড় করে আটকে রেখেছে!কিছু করুন আপনারা,আর সাবিহাকে মুক্ত করুন অর থেকে।”
“এই চুপ,একদম চুপ সাবিহা তকে ভালবাসত কিন্তু এখন আর বাসে না।আর অফিসার কী বলবে?আমি আমার বউকেই বিয়ে করেছি,দুজনের মতেই বিয়েটা হয়েছে।তুই এসবে নাক গলাচ্ছিস কেন?ভালো চাস ত চুপচাপ তুই আর লিজা চলে যা এখান থেকে।নয়ত যে পুলিশ নিয়ে তরা এসেছিস সে পুলিশের হাতেই তদের ধরিয়ে দিব।তরা নিশ্চয়ই এমন কোন কাজ করিস নি যে পুলিশ তদের কোলে বসিয়ে আদর করবে?তাই চুপচাপ এখান থেকে যা নয়ত তদের আসল রূপটা ওদের সামনে আনতে বাধ্য হব।”
তারপরও কাব্য ভাই আর লিজা আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে।সেটা দেখে সাদাফ ভাই আমার হাত ধরে সিড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে অফিসারদের বলে।
“ওদের যে আমি কিডন্যাপ করেছি তার কোন পাকাপোক্ত প্রমান আপনাদের কাছে নেই।তাই এই দুই জনকে নিয়ে এখান থেকে চলে যান।নয়ত আমিও আইন একটুআকটু জানি।”
কথাটা বলেই সাদাফ ভাই আমাকে নিয়ে রুমে চলে আসে।রুমে এসে দরজা বন্ধ করে কোমড়ে হাত দিয়ে আমার সামনে দাঁড়ায়।আমি সেটা দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালে উনি ধমকে বলে উঠে,,,
“তোমাকে যে কাব্য স্পর্শ করল তারপরও তুমি কাব্যকে কিছু বললে না কেন?আমি চাই না আমি ব্যাতীত অন্য কোন পুরুষ তোমায় স্পর্শ করুক।তারপরও কেন তোমাকে কাব্য স্পর্শ করল?আর তুমি কেন কিছু বললে না?”
আমি উনার প্রশ্নের কোন উওর না দিয়ে চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি,উনি সেটা দেখে রেগে দেয়ালে একটা ঘুসি দেয়।আমি আৎকে উঠি,আর উনার হাত ধরতে গেলে উনি আরো রেগে যায়।
“একদম ছুবি না আমাকে।তুই ঐ কাব্যকে নিয়ে পড়ে থাক।”
কথাটা বলেই উনি রেগে রুম থেকে চলে যায়,আর আমিও উনার পিছন পিছন ছুটি।হাতটা হয়ত থেতলে গেছে ঔষধ না লাগালে সমস্যা হবে।
#চলবে…
#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২৯
সাদাফ ভাই একটা রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।আমি বাইরে থেকে ধাক্কাচ্ছি কিন্তু খুলছে না।
“সাদাফ ভাই দরজাটা খুলুন,হাতটা দেখতে দিন আমাকে।”
উনার কোন সারা শব্দ নেই,আমি বারবার ডেকে চলেছি উনি কিছু বলছেও না দরজাও খুলছে না।
“দরজা খুলবেন না ত আপনি!ওকে ফাইন থাকুন আপনি এই বদ্ধ ঘরে।আমি চললাম আপনার বাড়ি ছেড়ে,থাকুন একা।আর বিরক্ত করতে আসব না।”
কথাটা বলেই আমি সেখান থেকে চলে এলাম।আমি শিয়োর উনি এবার দরজা খুলে বের হবে।তাই একটু নাটক করতে হল,নয়ত সারাদিনেও বের হত না।
অন্যদিকে সাদাফ এতক্ষণ সাবিহার কথা শুনেও দরজা খুলে নি।সে খুব রেগে আছে,কেন তার বউকে অন্য কেউ টাচ করবে?তার বউয়ের উপর শুধু তার অধিকার অন্য কেউ কোন অধিকারে তার বউকে টাচ করবে?আর যাই হোক এটা মেনে নেয়া যায় না।
কিছুক্ষণ পর যখন সাবিহার কোন সারা শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না তখন সাদাফের সাবিহার বলা শেষ কথাটা মনে পড়ে।আর সাথে সাথে সাদাফ দৌড়ে দরজা খুলে বাইরে আসে।আসেপাশে তাকিয়ে দেখে কোথাও সাবিহা নেই।সাদাফ ছুটে তাদের রুমে গেলো কিন্তু সেখানেও সাবিহা নেই।সাদাফের বুকের ভিতরটা এবার মোচড় দিয়ে উঠল।সাবিহা কী সত্যি তাকে ছেড়ে চলে গেছে?সাবিহা চলে গেলে সাদাফ থাকবে কীভাবে?
এসব ভেবে সাদাফ আবারও পাগলের মত দৌড়ে বাড়ির বাইরে আসে।এসে দেখে সাবিহা পিছনে হাত দিয়ে ধীরে ধীরে হেঁটে চলেছে।এমন ভাবে হাঁটছে যেন পিঁপড়াদেরকেও হার মানাবে।সাদাফ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সাবিহার কাছে গিয়ে সাবিহাকে কোলে তুলে নেয়।
সাদাফ ভাই কোলে নেয়ার পর মুচকি হাসলাম।আমি জানতাম উনি আসবে,তাই কিছু না বলে আমি উনার গলা জড়িয়ে ধরে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।কিন্তু উনি ভুলেও আমার দিকে তাকাচ্ছে না।জামাই আমার ক্ষ্যাপছে ভালো।
সাদাফ ভাই আমাকে ঘরে এনে খাটে বসিয়ে দিয়ে বের হতে নিলে আমি উনার হাত ধরে আঁটকে বসিয়ে দেই খাটে।আর আমি উঠে উনার সামনে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়াই।শাসনের স্বরে বলে উঠি,,,
“এখান থেকে এক পা নড়লে না একদম ভালো হবে না।চুপ করে বসে থাকবেন এখানে নয়ত সত্যি সত্যি চলে যাব।”
আমার কথার পরিবর্তে উনি দাঁতে দাত চেপে বলে উঠে।
“চলে যাওয়ার জন্য এক পা বাড়াও একদম জানে মেরে দেব।”
“রাগ করবে ঠিকই কিন্তু ভালবাসা একটুও কমবে না।আর না ছাড়তে পারবে আমাকে,না পারবে আমাকে ছেড়ে থাকতে।”
উনি কিছু বললেন না,চুপ করে বসে রইলেন।আমিও আর কিছু না বলে উনার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসি,আর উনার হাতটা হাতে নিয়ে দেখি অনেকটা ফুলে আছে।বরফ লাগাতে হবে,তাই আমি উঠে দাঁড়াই ফ্রিজ থেকে বরফ আনার জন্য।উনি তখন আমার হাতটা চেপে ধরে আমি সেটা দেখে উনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বলে উঠি।
“কিচেনে যাচ্ছি,এখনই এসে পড়ব।”
তারপর উনার থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে চলে আসি বরফ নিতে।আর সাদাফ ভাই কাউকে ফোন করে।
“এক ঘন্টার মধ্যে কাব্যকে আমার চোখের সামনে দেখতে চাই।এক ঘন্টা মানে এক ঘন্টা,তার এক মিনিট বেশি হলে কী করব জানোই!”
কথাটা বলেই ফোনটা রেখে দেয়।একটু পর সাবিহা এসে বরফ নিয়ে।সাবিহা বরফ লাগাতে লাগাতে বলে উঠে,,,
“ব্রেকফাস্ট কী নিচে গিয়ে করবেন নাকি এখানে নিয়ে আসব?”
সাদাফ ভাই কিছু বলল না,আমিও আর কিছু জিজ্ঞেস না করে নিচে চলে এলাম।আর একটা প্লেটে খাবার নিয়ে উপরে চলে এলাম।এসে দেখি উনি ফোনে কিছু একটা করছে।আমি খাটে খাবারটা রেখে উনার হাত থেকে ফোনটা নেই।
“খাবার নিয়ে এসেছি খেয়ে নিন,খাওয়া শেষ হলে ফোন হাতে পাবেন।”
উনি এবারও কিছু বললেন না।আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে,চুপ করে বসে রইলেন।এরকম চুপ করে থাকলে কী ভালো লাগে?রাগ লাগছে খুব,ইচ্ছে করছে বেটাকে পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে ফেলতে।কিন্তু এখন রাগ দেখালে চলবে না,দুজন একসাথে রেগে গেলে সমস্যা।তাই একজনকে ত চুপ করে থেকে ত আরেকজনের রাগ ভাঙ্গাতেই হবে।এভাবে নিজের মনকে বুঝিয়ে খাবারের প্লেটটা হাতে নিয়ে খাবার উনার মুখের সামনে ধরলাম।উনি একবার আমার দিকে তাকিয়ে চুপচাপ খেয়ে নিলেন।খেয়েই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন,বেটায় একবারও বলল না তুমিও খাও।
খাবারের প্লেট নিচে রেখে ঘরে এসে দেখি টেবিলে খাবার বেড়ে রাখা কারো জন্য।আর তার পাশেই একটা চিরকুট।আমি কৌতুহল বশত সেখানে গিয়ে চিরকুটটা খুলি।আর সেটা পড়ে আমার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে।চিরকুটটাতে লেখা,,,
“প্লেটে যেন একটা খাবারও অবশিষ্ট না থাকে।”
আমি মুচকি হেঁসে খাবারটা খেয়ে নেই।আমার খাওয়া শেষ হওয়ার একটু পরেই উনি ঘরে আসে।ঘরে এসেই আলমারি খুলে শার্ট আর প্যান্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।আমার দিকে একবার তাকালও না।
গতকাল বলেছিল বাবার অফিসে জয়েন করবে।তাই হয়ত এখন রেডি হতে গেলো অফিসে যাওয়ার জন্য।উনি ওয়াশরুম থেকে বেরোলে আমি উনার সামনে টাই নিয়ে দাঁড়াই।
“বাবার অফিসে যাবেন তাই না!প্রথম অফিসে যাবেন আজ।চলুন আজ আমি আপনাকে রেডি করিয়ে দিব।”
উনার গলায় টাইটা বাঁধতে গেলে উনি আমার হাত ধরে আটকে দেয়।আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালে উনি আমার হাত থেকে টাইটা নিয়ে সরে দাঁড়ায়।যার অর্থ সে পড়বে না,কিন্তু আমিও ছাড়ার পাত্রী নই।আমি আরেকটা টাই নিয়ে উনার সামনে দাঁড়াতেই উনি আবারও একই কাজ করে।আমি গাল ফুলিয়ে আবারও আরেকটা টাই নিতে গেলে উনি পিছন থেকে দুইটা টাই এক করে সেটা দিয়ে আমাকে আটকে টান দেয়।আমি উনার বুকের উপর গিয়ে পড়ি,আমার পিঠ উনার বুকের উপর।আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই উনি আমাকে টাই দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিয়ে চলে যায়।কিছুক্ষণ পর সবটা বুঝতে পেরে ছোটার জন্য ছটফট শুরু করি।
“আরে ঐ ফুলাইন্না,আমারে বাঁধলেন কেন?খুলে দিয়ে যান আমাকে।”
চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে এসব বলছি আর ছোটার চেষ্টা করছি।কিন্তু ছুটতে পারছি না,বজ্জাতটা এমন ভাবে বেঁধেছে যে খুলতেই পারছি না।
______________________________________
কাব্যর হাত,পা বাঁধা অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে।আর তার সামনেই সাদাফ রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে।
“তকে কাল ছেড়ে দিয়ে খুব বড় ভুল করেছিরে।তকে ছেড়ে দেয়া একদমই উচিত হয় নি আমার।তকে না ছাড়লে হয়ত সকালের ঘটনা গুলো ঘটতই না।কিন্তু এখন এসব ভেবে কী লাভ?যা হওয়ার তা ত হয়েই গেছে।”
“তুই চাচ্ছিস টা কী?কেন আমার সাথে এমন করছিস?কেন সাবিহাকে আর আমাকে আটকে রেখেছিস?ছেড়ে দে আমাকে আমি সাবিহাকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাব।সাবিহার ভালবাসা আমি এতদিনে বুঝতে পেরেছি।এখন তুই আর আমাদের আলাদা করিস না প্লিজ।সাবিহাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দে।”
কাব্য কথা শেষ করতেই সাদাফ কাব্যর পেটে একটা লাথি মেরে দেয়।
“আমার সামনে বসে আমারই বউকে নিয়ে চলে যাওয়ার কথা বলছিস তুই?তোকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না।তুই বেঁচে থাকলে যখন তখন ঝামেলা করতে পারিস আমাদের মাঝে।যেটা আমি একদমই চাই না,তাই আজ এই মুহুর্তে তকে আমি পৃথিবীর বুক থেকে বিদায় দিব।”
সাদাফের কথাশুনে কাব্য রীতিমতো ঘামতে শুরু করেছে।সাদাফ বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় আর হাতে একটা রড নেয়।যখনই সাদাফ রডটা দিয়ে কাব্যকে আঘাত করবে তখন কেউ পিছন থেকে আটকায়।সাদাফ রেগে পিছনে তাকায়,আর যা দেখে তা দেখার জন্য সাদাফ একটুও প্রস্তত ছিল না।সাদাফের চোখে এবার রাগের পরিবর্তে ভয় ফুটে উঠে।সাদাফের মুখ থেকে আপনা-আপনি বেরিয়ে আসে,,,
“সাবিহা!”
#চলবে,,,