#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২৪
কাব্য ভাইয়ের রুম থেকে বেরিয়ে হনহনিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম।আমাকে এভাবে রেগে বেরোতে দেখে মামিমা,সাদাফ ভাইয়া পিছন থেকে অনেক ডাকল।আমি কারো কথা না শুনেই রেগে হেঁটে চলেছি।কাব্য পেয়েছেটা কী?শালার হাতির নাতিকে ভাই বলতেও লজ্জা লাগছে।যখন তখন হাত ধরে টানাটানি,গায়ে হাত তোলা,প্রতিশোধ নেয়ার জন্য কিডন্যাপ করা,ব্লা ব্লা।এতকিছু আর শয্য হইতাছে না,ইচ্ছে করতাছে খুন করে ফেলতে।এসব ভেবে রেগে হনহনিয়ে হেঁটে চলেছি,কিন্তু হঠাৎ করেই কেউ পিছন থেকে আমার হাত ধরে আটকে ফেলে।পিছনে তাকিয়ে দেখি সাদাফ ভাই,এমনিতেই মেজাজ গরম হয়ে আছে তার উপর আবার উনিও এসে সেই টানাটানি শুরু করছে।তাই এবার আর রাগটা কন্ট্রোল করতে পারলাম না।
“এই কী পেয়েছেন টা কী আপনি?যখন তখন এমন হাত ধরে টানাটানি করেন কেন?আপনাকে বলছি না এমন হাত ধরে টানাটানি করা আমার পছন্দ নয়।তারপরও একই কাজ কেন করছেন বারবার?মানছি আপনার সাথে আমার ছোট বেলা বিয়ে হয়েছে তাই বলে কী যা খুশি তাই করবেন?নিজের লিমিটে থাকুন,নয়ত ভালো হবে না।হাত ছাড়ুন আমার,আর একদম পিছন পিছন আসবেন না আমার।”
কথাটা বলেই রেগে হনহনিয়ে চলে এলাম,পিছন দিকে একবার ফিরেও তাকাই নি।পিছন ফিরলে হয়ত সাদাফ ভাইয়ের চোখের জলটা দেখতে পারতাম।
এইদিকে সাবিহার কথা শুনে সাদাফের চোখে জল চলে আসে।সে ত এসেছিল জানতে যে কাব্য কিছু করেছে কী না যার কারনে ওভাবে রেগে বেরিয়ে এসেছে।কিন্তু সাবিহা যে এতকিছু বলে ফেলবে সাদাফ ভাবতে পারে নি।সাবিহার কথায় সাদাফ খুব কষ্ট পেয়েছে,সাদাফ তার চোখের জল মুছে চলে আসে।
____________________________________
কাব্য ফ্লোরে বসে বেডে হেলান দিয়ে সিগারেট টানছে,আর নিজের করা সমস্ত খারাপ কাজগুলো মনে করছে।কাব্যর চোখ দিয়ে প্রতিনিয়ত পানি ঝড়ছে।
“ভালবাসায় অন্ধ হয়ে আমার আপন মানুষদেরকে কতই না কষ্ট দিয়েছি।হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে কত কষ্টই না দিলাম,বিশেষ করে সাবিহাকে।মেয়েটার সাথে কী কী না করেছি আমি,কিন্তু তারপরও মেয়েটা কেমন শক্ত রয়েছে।যাকে কষ্ট দিয়ে এতদিন পৈশাচিক আনন্দ পেতাম আজ তার কথা ভেবেই কষ্ট পাচ্ছি।কাউকে কষ্ট দিয়ে হয়ত সাময়িক সুখ পাওয়া যায়,কিন্তু সেটা ক্ষনস্থায়ী নয়।কাউকে কষ্ট দিলে তার থেকে শতগুণ কষ্ট পেতে হয় নিজেকে, কথাগুলো যে কতখানি সত্যি সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি আমি।।তাই কাউকে কষ্ট না দেয়াই ভালো,তাতে আল্লাহ তায়ালা নারাজ হবেন না,আর আমার মত অবস্থাও কারো হবে না।
সাবিহা মেয়েটা খুব ভালো,নয়ত দুইজন ভালবাসার মানুষকে এক করার জন্য ওভাবে কিডন্যাপ করে বিয়ে দেয় নাকি?যেখানে আমার জন্য ভাইয়ের বিয়েটা ভাঙ্গল,আর আমি কিছুই করতে পারলাম না সেখানে সাবিহা ঠিকই তাদের বিয়েটা করিয়ে দিলো।সাবিহার সাহস আছে বলতে হবে,আগে ভীতু ছিল কিন্তু এখন অনেক সাহসী হয়েছে।কিন্তু এই সাহসের জন্য ত আমি মাফ চাওয়ার সুযোগটাই পাচ্ছি না,সামনে গেলেই ত ঠাস আর ঠুস করে মেরে দেয়।কিন্তু যেভাবেই হোক সাবিহার কাছে আমার ক্ষমা চাইতেই হবে।”
কথাগুলো ভেবে কাব্য হাতের সিগারেট ফেলে দিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে নিশানকে ফোন লাগায়।নিশানের সাথে কাব্য সবটা মিটমাট করে নিয়েছে,কারন কাব্য নিশানকে কথা দিয়েছে সাবিহাকে আর কষ্ট দিবে না।
একবার রিং হতেই নিশান ফোন ধরে।
“দোস্ত কেমন আছিস?”
“ভালো আছি,তুই কেমন আছিস?”
“আর ভালো থাকা!” (মন খারাপ করে)
“কেন আবার কী করেছিস তুই?সাবিহাকে কিছু বলিস নি ত?”
“আরে না সেসব কিছুই না,আসলে আজ সাবিহা আমাদের বাড়িতে এসেছিল।”
“ত কী হয়েছে?”
“ত আমি অর সাথে কথা বলার জন্য টেনে আমার রুমে নিয়ে আসি ক্ষমা চাওয়ার জন্য।কিন্তু সাবিহা আমার কোন কথাই শুনছিল না,তাই একটা থাপ্পড় মারি।ভেবেছিলাম ঠান্ডা হয়ে যাবে থাপ্পড় খেয়ে তারপর মাফ চাইব।কিন্তু উল্টা সাবিহা রেগে আমার গালে থাপ্পড় মেরে চলে যায়।”
“একদম ঠিক করছে।তুই কী মানুষ হবি না কাব্য?কথায় কথায় এত গায়ে হাত কেন তুলিস?আর ওভাবে টেনে এনে মাফ চাওয়ারই বা কী মানে?ভালো করে বলে সাবিহার সাথে কথা বলতে পারতি,মাফ চাইতে পারতি।কিন্তু তুই ত তুই ই,সবসময় তুই এমন গায়ে হাত তুলিস।আর সবার আগে নিজের রাগটাকে প্রাধান্য দিস বেশি,আর তোর মুখের আগে হাতটা বেশি চলে।তাই হাতটাও সামলা নয়ত এমন করলে সাবিহা তকে এই জন্মে মাফ করবে না উল্টা তরে বিনা নোটিসে অন্য গ্রহে পাঠাইয়া দিব,যেখানে কোন মানুষ থাকবে না থাকবে শুধু তোর মত এলিয়েন।”
“এখন কী করব?”
“কী করবি আবার!রাগ কমা,হাত পা কন্ট্রোল কর আর একটু মাথা খাটিয়ে কাজ করতে শিখ।”
“কিন্তু সাবিহা ত আমার সাথে কথা বলতেই চাইছে না।”
“তুই যে আচরন করিস তাতে কথা না বলাই স্বাভাবিক।দেখি আমি কোন ব্যাবস্থা করতে পারি কী না!”
“ঠিক আছে।”
কথাটা বলে নিশান ফোনটা রেখে দেয় আর কাব্য ভাবতে থাকে কীভাবে সাবিহার সাথে দেখা করে মাফ চাইবে।
____________________________________
বিকাল ৩টা বেজে ৫৬ মিনিট,রুমে পায়চারি করছি আর ভাবছি তখন সাদাফ ভাইয়ার সাথে রাগ দেখানোটা বারাবাড়ি করে ফেলছি।সাদাফ ভাইয়া নিশ্চয়ই খুব কষ্ট পেয়েছে,আমিও না রেগে গেলে কিছু মনে থাকে না।যে আচরন করেছি তার জন্য ক্ষমা চাইতেই হবে।নয়ত আমিও শান্তি পাব না আর ঐদিকে সাদাফ ভাইও কষ্ট পাবে।উনাকে বড্ড বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলি আমি,নাহ উনাকে আর কষ্ট দিব না।কথাগুলো নিজ মনে বিড়বিড় করেই সাদাফ ভাইয়ের বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লাম।ফোনও দিতে পারতাম কিন্তু ফোনে কথা বলাই একরকম আর সরাসরি কথা বলাই আরেক রকম।বাড়িতে যাওয়াই ভালো আমার মনে হয় তাই বাড়িতেই যাব।
সাদাফ ভাইয়ার বাড়িতে এসে আন্টির সাথে একটু কথা বলে সাদাফ ভাইয়ের রুমে চলে এলাম।উনি ত ঘরে নেই,তাই সারাবাড়ি খুঁজতে খুঁজতে ছাঁদে চলে এলাম।এসে দেখি উনি একটা দোলনায় বসে আছে,আমিও ধীরে ধীরে উনার পাশে গিয়ে বসি।উনি আমার উপস্থিতি টের পেয়েছে কিন্তু কথা বলছে না।খুব কষ্ট পেয়েছে আর খুব রাগ করে আছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে,তাই আমি এবার একটা শুকনো ঢোক গিলে বলে উঠলাম।
“সাদাফ ভাইয়া তখন রাগ দেখানোর জন্য সরি,আসলে তখন মেজাজ খুব খারাপ ছিল।আর আপনি ত জানেনই আমার রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকে না।তাই প্লিজ রাগ ক্ষমা করে দিন আমাকে।”
উনি কিছু না বলে দোলনা থেকে উঠে ছাদের কিনার ঘেসে দাঁড়ায়।আমিও উনার সামনে দাঁড়িয়ে কানে হাত দিয়ে ইনোসেন্ট ফেস করে বলে উঠি।
“সরি বলছি ত,প্লিজ ক্ষমা করে দিন।”
উনি এখনও কিছু বললেন না ঘুরে অন্যদিকে চলে গেলেন,সেটা দেখে আমার খুব রাগ লাগল।তাই আমি ছাদের উপরে একটা আম গাছে চড়লাম,আর কিছুটা চেঁচিয়ে বললাম।
“এই ফুলাইন্না,কথা বলবেন নাকি এখান থেকে ঝাপ দিয়ে শহীদ হয়ে যাব!”
উনি এবার পিছন ফিরে আমাকে গাছে দেখে ঘাবড়ে গেলেন,আর ছুটে গাছের নিচে দাঁড়ালেন আর রেগে বললেন।
“কী করছো এসব?নামো ওখান থেকে,পড়ে গেলে দাঁত আর দাঁতের জায়গায় থাকবে না।”
আমি গাছের ডালে হাত পা ছড়িয়ে ভালো করে বসি।আর একটা আম পেরে সেটাতে কামড় দিয়ে চিল মুডে উনার দিকে তাকিয়ে বলি।
“যাক বাবা মুখের কস্টেপ ত খুলল,,,উফফ এতক্ষণ ভালো করে বলছিলাম কিন্তু আপনি কথাই বলছিলেন না।আর এখন কী সুন্দর করে কথা বলছেন,এবার বলেন মাফ করে দিছি।”
“বেশি কথা বলবে না একদম,তাড়াতাড়ি নিচে নামো।”
“নামব না আগে বলুন,মাফ করে দিছি।”
“থাপ্পড় খেতে না চাইলে নিচে নামে এক্ষুনি।”
“আজিব ত!আমি বলি কী আর উনি বলে কী?”
“সাবিহহহহহহা,নামবে তুমি নাকি আমি উপরে আসব?আমি আসলে কিন্তু ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।”
“এত রাগ করার কী আছে নামছি ত!”
কথাটা বলেই গাছ থেকে দুইটা আম পেড়ে নিচে নেমে পড়লাম,আর উনার সামনে দাঁড়িয়ে জামা আর হাত থেকে ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে বলে উঠলাম।
“এবার বলুন মাফ করে দিছেন,আপনি আমার উপর রেগে নেই।আর মাফ করে দিলে আপনাকে এত্তগুলা কিউট কিউট আম দিব।”
“এই মেয়েটা না পুরাই শয়তানের ডিব্বা,গাছে উঠে থ্রেট করে আমার গাছের আম দিয়ে আমার রাগ ভাঙ্গাতে চাইছে।কই একটু রোমান্টিক ভাবে রাগ ভাঙ্গাবে।তা না করে এভাবে থ্রেট করল,আল্লাহ আর কতকিছু দেখতে হবে আমাকে।”(মনে মনে)
“আমার গাছের আম দিয়ে আমার রাগ ভাঙ্গানো তাই না!”
“হি হি হি,,,গাছে কী নাম লেখা ছিল এটা আপনার গাছ?”
“তবে রে দুষ্টু দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।”
কথাটা বলেই সাদাফ হেঁসে সাবিহাকে তাড়া করে আর সাবিহাও হেঁসে দৌড় লাগায়।
#চলবে,,,
#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২৫
সকাল ৬ টা বেজে ৪ মিনিট,,,বজ্জাত ফোনটা সক্কাল সক্কাল এক নাগাড়ে বেজেই চলেছে,হাজারও বিরক্তি নিয়ে চোখ ডলতে ডলতে ফোনটা ধরি।আর সাথে সাথে ওপর পাশ থেকে কেউ উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে।
“সাবিহা মামনি তুই জলদি আমাদের বাড়িতে আয়,সাদাফের কী যেন হয়েছে?ঘুম থেকে উঠে কাঁদছে আর কী যেন বিড়বিড় করে চলেছে একনাগাড়ে।কী বলছে কিছুই বুঝতে পারছি না শুধু এতটুকু বুঝতে পেরেছি তোর নাম নিয়ে কিছু বলছে।মা না ভালো তাড়াতাড়ি আয় তুই।”
আন্টির কথাশুনে আমার চোখ থেকে ঘুম ছুটে গেলো,আর একরাশ চিন্তারা এসে ভর করল মস্তিষ্কে।কী হয়েছে সাদাফ ভাইয়ার?উনি এমনটা কেন করছে?নাহ এখানে বসে এসব ভাবলে চলবে না,আমাকে এক্ষুনি উনার বাড়িতে যেতে হবে।তাই শোয়া থেকে উঠে চুলগুলো হাত খোঁপা করে গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে গেলাম রুম থেকে।বাগানে এসে দেখি বাবা গাছে পানি দিচ্ছে,বাবা আমাকে দেখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে।
“সাবিহা তুই এত সকালে গাড়ির চাবি নিয়ে কই যাচ্ছিস?”
“বাবা সাদাফ ভাইয়ার কী যেন হয়েছে?আন্টি ফোন করে বলল আমাকে যেতে।”
“সে কী?কী হয়েছে সাদাফের?”
“সেটাই ত জানি না,এখন এত কথা বলতে পারব না বাবা আমাকে তাড়াতাড়ি যেতে হবে।আমি এখন আসি বাবা এসে সবটা বলব তোমাকে।”
“আরে দাঁড়া আমিও যাব।”
“বাবা তোমাকে যেতে হবে না,আমি আগে গিয়ে দেখি তারপর তুমি যেও।”
কথাটা বলেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম,খুব দ্রুত ড্রাইভ করছি আমি।মনটা কেমন অস্থির হয়ে আছে,যতক্ষণ না নিজের চোখে উনাকে দেখব ততক্ষণ শান্তি নেই।সাদাফ ভাইদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে ছুটে গেলাম বাড়ির ভিতরে।এসে দেখি আন্টি আর আংকেল চিন্তিত মুখে সাদাফ ভাইয়ার পাশে বসে আছে।কিন্তু সাদাফ ভাইয়ার কোন ভাবাবেগ নেই,উনি উনার মত একমনে কী যেন বিড়বিড় করে চলেছে।উনাকে এমন অবস্থায় দেখে বুকের মধ্যে কেমন যেন একটা ব্যাথা অনুভব হল।আমাকে আসতে দেখে আন্টি আমার কাছে ছুটে আসে আর আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।
“মা রে আমার ছেলেটাকে ঠিক করে দে না,দেখ না আমার ছেলেটা কেমন যেন করছে?ডাক্তারকে ফোন দিচ্ছি কিন্তু এত সকালে ফোন তুলছে না।না পেরে তকে ফোন দিয়েছি,কারো সাথে কোন কথা বলছে না এভাবেই রয়েছে সেই তখন থেকে।তুই আমার ছেলেটাকে ঠিক করে দে না রে মা।”
“আন্টি আপনি শান্ত হন,সাদাফ ভাইয়ার কিছু হয় নি।আমি দেখছি,আপনি শান্ত হন একটু।”
আন্টির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আমি সাদাফ ভাইয়ের দিকে এগিয়ে যাই।সাদাফ ভাইয়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসি আমি,আর কাঁপা কাঁপা হাতে সাদাফ ভাইয়ের গালে হাত রাখি।সাদাফ ভাইয়ের কোন ভাবাবেগ নেই,আমি এবার নরম স্বরে সাদাফ ভাইকে বলে উঠি।
“সাদাফ ভাই।”
সাদাফ ভাই এবার মুখ তুলে আমার দিকে তাকায়,আমাকে দেখার সাথেসাথে উনি আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠে।
“আমার সাবিহা ফিরে এসেছে,আমার সাবিহা আমার কাছে ফিরে এসেছে।কাব্য,লিজা আমার থেকে সাবিহাকে কেড়ে নিতে পারে নি।মা,বাবা দেখো সাবিহা আমার কাছে ফিরে এসেছে।এই সাবিহা আমাকে ছেড়ে কিন্তু একদম যাবে না।আমি মরে যাব তোমাকে ছেড়ে,প্লিজ যেও না আমাকে ছেড়ে।খুব ভালবাসি তোমাকে,প্লিজ আমাকে একা করে চলে যেও না।না না এভাবে বললে হবে না,চলো আমরা পালিয়ে যাই এখান থেকে।কাব্য আর লিজার থেকে অনেক দূরে চলে যাব তোমাকে নিয়ে।তবে আর অরা তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।আর আমার থেকে দূরে সরাতেও পারবে না।চলো আমার সাথে,সবার আড়ালে অনেক দূরে চলে যাব তোমাকে নিয়ে।তাড়াতাড়ি চলো,নয়ত কাব্য আর লিজা চলে আসবে।”
উনি কথাগুলো একনাগাড়ে বলে উঠে দাঁড়িয়ে আমার হাত ধরে বসা থেকে উঠায়।আর দরজার দিকে হাঁটা ধরে,আমি উনার আচরনে এতটাই অবাক যে উনাকে যে আটকাবো সেটাও মাথায় নেই।উনি আজও সেদিনের মত পাগলামি করছে যেদিন কাব্য ভাই আমাকে কিডন্যাপ করেছিল।আর আজও এমন করছে,কী হয়েছে উনার?কী সমস্যা হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।সাদাফ ভাইয়ার বাবার কথায় হুস আসে আমার।
“সাদাফ তুই কী শুরু করেছিস?কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস সাবিহাকে?দাড়া সাদাফ,কথা শোন আমার।”
সাদাফ ভাই কারো কথা না শুনেই হেটে চলেছে।কিন্তু আমি এবার দাঁড়িয়ে যাই আর সেটা দেখে সাদাফ ভাই পিছন ফিরে বলে উঠে,,,
“থামলে কেন?চলো তাড়াতাড়ি,নয়ত কাব্য আর লিজা চলে আসবে।”
“হ্যাঁ ভাইয়া আমরা যাব ত,কিন্তু যাওয়ার আগে একটা ছোট্ট কাজ করতে হবে।”
“কী কাজ করতে হবে তাড়াতাড়ি বলো,নয়ত অরা চলে আসবে।”
আমি এবার সাদাফ ভাইকে বিছানায় বসাতে বসাতে বলে উঠি।
“আচ্ছা আপনি একটু বসুন আমি আসছি।”
“না না,তুমি কোথাও যাবে না।তুমি গেলে যদি আর না আসো।না একদম কোথাও যাবে না তুমি আমাকে ছেড়ে।আমার পাশে বসো তুমি,আর কী করবে তাড়াতাড়ি করো নয়ত অরা চলে আসবে।”
আমি উনার অবস্থা দেখে বুঝতে পারছি উনি খুব ভয় পেয়েছেন,যার জন্য উনি এমন আচরন করছে।তাই আন্টিকে ইশারায় বললাম কিছু খাবার আর ঘুমের ঔষধ নিয়ে আসতে।একটু ঘুমালেই উনি ঠিক হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।আন্টি আমার কথামত ঔষধ আর খাবার নিয়ে আসে।আমিও উনাকে নানা ধরনের কথা বলে খাইয়ে দিয়ে ঔষধটা খাইয়ে দেই।খাওয়ার পর উনি আমার কোলে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে যায়।সেটা দেখে আন্টি আর আংকেল কিছুটা নিশ্চিন্ত হন,আর তারা বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।
সাদাফ ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আমি আর ভেবে চলেছি উনি এমন কেন করছে?কোন খারাপ স্বপ্ন দেখে কী এমন পাগলামি করছে?কিন্তু স্বপ্ন দেখে কী কেউ এতটা পাগলামি করে?অন্য কোন ঘটনা নেই ত এসবের পিছনে।আর উনি বারবার কাব্য ভাই আর গরিলা মার্কা মহিলার কথা কেন বলল?তারা কী কিছু করেছে?উফফ মাথা পুরো হ্যাং হয়ে আছে,কিছু বুঝতে পারছি না আমি।না মাথায় এত চাপ দিয়ে লাভ নেই,আমার সমস্ত প্রশ্নের উওর সাদাফ ভাই ই দিতে পারবে।ত উনার ঘুম থেকে উঠার অপেক্ষা করি,তারপর সবই জানতে পারব।
___________________________________
দুপুর ২ টা ছুঁইছুঁই,সাদাফের ঘুম ভাঙ্গে আর চোখ খুলে নিজেকে কারো কোলে আবিষ্কার করে।সাদাফ তাড়াহুড়ো করে উঠে পড়ে,আর তাকিয়ে দেখে সাবিহা বেডে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।কিন্তু সাদাফ তাড়াহুড়ো করে উঠাতে সাবিহার ঘুমটা ভেঙ্গে যায়।
আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি সাদাফ ভাইয়া জেগে গেছে সেটা দেখে মুচকি হেঁসে বলে উঠে,,,
“এখন ঠিক আছেন আপনি?”
সাদাফ ভাইয়া মাথা নাড়িয়ে বুঝায় সে ঠিক আছে।পরক্ষনেই আবার বলে উঠে,,,
“তুমি এখানে?আর তোমার কোলে,,,
” সকালে কী পাগলামি করেছেন মনে নেই আপনার?আচ্ছা এটা বলুন ত লিজা আপু আর কাব্য ভাই কী করেছে?যার কারনে সকালে এতটা পাগলামি করেছেন?”
আমার কথাশুনে সাদাফ ভাইয়ের মুখে ভয়ের ছাপ আবারও দেখা দেয়।উনাকে এমন ভয় পেতে দেখে এবার আমারও কেমন যেন একটা লাগছে।কী এমন হয়েছে যার জন্য উনি এভাবে এতটা ভয় পেয়ে রয়েছে?আমি উনার কাঁধে হাত রেখে বলে উঠি,,,”
“সাদাফ ভাইয়া কোন সমস্যা হয়েছে?”
সাদাফ ভাইয়া আমার দিকে টলমল চোখে তাকিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,,,
“আমি এখন তোমাকে কিছু বলতে পারব না সাবিহা,সময় হলে সব বলব তোমাকে।কিন্তু তুমি প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না,আমি তোমাকে খুব ভালবাসি।তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারব না আমি,প্লিজ কখনও ছেড়ে যেও না।”
উনার এমন অবস্থা দেখে আমি শুধু অবাকই হচ্ছি।কিছুই বুঝতে পারছি না কী হচ্ছে এসব?কী আছে এসবের পিছনে যার জন্য উনি এতটা পাগলামি করছে?
“শীলার বিয়ের দিন চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি।”
সাদাফ ভাইয়া আমাকে ছেড়ে আমার গালে হাত দিয়ে কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বলে উঠে কথাটা।উনার কথা শুনে চমকে উনার দিকে তাকাই,কী বলছে উনি এসব?আপুর বিয়ের দিন আমাদের বিয়ে মানে?কীভাবে কী?”
“মানেহ?”
“এত কিছু জানি না আমি,তুমি শুধু বলো আমাকে বিয়ে করবে আর সেটা এ সপ্তাহেই।আমি সারাক্ষণ তোমার আশেপাশে থাকতে চাই,যাতে কেউ তোমাকে আমার থেকে কেড়ে নিতে না পারে।প্লিজ সাবিহা আমাকে ফিরিয়ে দিও না,রাজি হয়ে যাও প্লিজ।”
“আপনার থেকে কে কেড়ে নিবে আমাকে সেটা ত বলুন।”
“আমি এখন কিছু বলতে পারব না সাবিহা,তুমি আমার কাছে কিছু জানতে চেও না দয়াকরে।শুধু তুমি বলো আমাকে বিয়ে করবে আর সেটা এ সপ্তাহেই।”
উনার কথাশুনে মাথায় আবার নতুন চিন্তা এসে ভর করল।
“সাবিহা কিছু ত বলো।”
“আমাকে একটু ভাবার সময় দিন।আমি আপনাকে পরে জানাচ্ছি।”
কথাটা বলেই উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বেরিয়ে এলাম রুম থেকে।
অন্যদিকে সাদাফ বেডে বসে দুইহাত দিয়ে চুল আকড়ে ধরে আর কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠে।
“তোমাকে হারাতে পারব না আমি,তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারব না আমি।আমার থেকে তোমাকে কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।কেড়ে নিবে আমার থেকে তোমাকে,তোমার লাইফ রিক্স আছে সাবিহা।ছয় বছর আগে যেমনটা আমার থেকে তোমাকে কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছিল ঠিক এখনও তাই করা হচ্ছে।কিন্তু আমি ত পারব না তোমাকে ছেড়ে থাকতে, আমার তোমাকে চাই সারাজীবনের জন্য।তোমাকে হারানোর ভয়ে পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি।তোমাকে ছেড়ে বাঁচতে পারব না আমি,বাঁচতে পারব না।”
কথাটা বলেই সাদাফ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
#চলবে,,,