ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-২০+২১

0
1258

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২০

কাব্য হেলেদুলে গেট দিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করছে।কাব্যকে দেখে যে কেউ বলতে পারবে কাব্য নেশা করেছে।কাব্য হেঁটে যাচ্ছে আর বিরবির করে বলে চলেছে,,,

“সাবিহার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।ভাইয়ার ভালবাসা তার কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।”

এই কথাগুলোই কাব্য প্রতিনিয়ত বলে চলেছে,হঠাৎ করে কাব্য একটা টবের সাথে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় আর সেখানেই বসে পড়ে।

সাদাফ ভাইয়ের হাতের উপর এক হাত আর আরেক হাত গালে দিয়ে বসে আছি,উনার দৃষ্টি আকাশের দিকে।কিন্তু আমার মনে চলছে বাবাকে কীভাবে মেনেজ করব সেই ভাবনা।কিন্তু হঠাৎ কিছু পড়ার শব্দে দুজনেই চমকে উঠি।

“কী যেন একটা পড়ার আওয়াজ হল না!”

“হ্যাঁ আমিও ত শুনলাম,কেউ কী জেগে গেছে?”

“হতে পারে,আপনি এখান থেকে যান তাড়াতাড়ি কেউ দেখলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।”

“আরে দাঁড়াও দেখতে দাও আগে,কোন চোর ডাকাতও ত হতে পারে।”

“আপনি এখান থেকে যান ত আপনার চোর,ডাকাত খুঁজতে হবে না।চোর,ডাকাত হলেও ভালো কিন্তু যদি সেটা না হয় অন্য কেউ হয় তবে তাদের সামনে পড়ে গেলে দুজনেই অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ব।”

“আরে শান্ত হও তুমি আর দেখতে দাও আমাকে।”

অতঃপর উনি আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়েই গটাগট পা ফেলে আওয়াজটা যেদিক থেকে আসছে সেদিকে চলে যায়।আমিও গাল ফুলিয়ে উনার পিছন পিছন যাই,কিন্তু একটু সামনে যাওয়ার পরই সাদাফ ভাইয়া থেমে যায়।উনাকে থেমে যেতে দেখে আমিও থেমে যাই,আর আশেপাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করি ঠিক কী হয়েছে!পরক্ষণেই একটা জায়গায় আমার চোখ আটকে যায়,এটা দেখার জন্য আমি একটুও প্রস্তুত ছিলাম না।আমদের সামনে কাব্য ভাই কেমন অস্বাভাবিক আচরন করছে মাটিতে বসে থেকে।একা একাই আঙুল নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলছে, আর হাসছে।সাদাফ ভাই আমার কাছে এসে আস্তে করে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,,,

“উনার এ অবস্থা কেন?নেশা টেশা করে নাকি?”

সাদাফ ভাইয়ার কথা শুনে আমি মাথা তুলে অবাক চোখে উনার দিকে তাকাই।মানুষ ত নেশা করলে আর পাগল হলেই এমন অস্বাভাবিক আচরন করে।তবে কাব্য ভাই কী সত্যি নেশা করেছে,কিন্তু উনাকে ত কখনও নেশা করতে দেখি নি আমি।সাদাফ ভাইয়ের কথায় আমার ঘোর কাটে।

“কোথায় হারিয়ে যাও বলো ত!একটা কথা জিজ্ঞেস করেছি তোমাকে আর তার উওর না দিয়ে একদম চুপ করে গেলে।”

“আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”

“এখানে দাঁড়িয়ে থাকলেও কিছু বুঝবে না।বাড়ির সবাই কে ডাকো,তারপর উনাকে ঘরে নিয়ে তেঁতুল গুলিয়ে খাওয়ায়।নির্ঘাত নেশা করে এসেছে,তুমি একদম উনার কাছে যাবে না।কে জানে আবার কী করে ফেলে!উনাকে আমার একদম বিশ্বাস হয় না।”

“আহ্ আপনি একটু থামুন আর দেখতে দিন আমাকে।”

কথাটা বলেই কাব্য ভাইয়ের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম আমি,সেটা দেখে সাদাফ ভাই আমার হাত টেনে ধরে দাঁড় করিয়ে রেগে বলে উঠে।

“এই তোমাকে না এইমাত্র বললাম উনার কাছে না যেতে,আর তুমি এখনই চলে যাচ্ছো!”

“সাদাফ ভাই ছাড়ুন আমাকে দেখতে দিন কী হয়েছে?এখন এত কিছু ভাবলে চলবে না,আর আপনি ত এখানেই আছেন কিছু হলে আপনি আটকাইয়েন।”

কথাটা বলেই সাদাফ ভাইয়ার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে কাব্য ভাইয়ের কাছে যাই।উনি আমাদের দেখতে পান নি,আমি উনার পিছনের দিকটায় বসি।।আর শুনতে পাই উনি একটা টবের দিকে আঙুল তুলে বলে যাচ্ছে,,,

“তুই আবার বাঁধা হলি কেন আমার চলার পথে হুম!চলার পথে ত এমনিতেই বাঁধার শেষ নাই,আবার তুই বাঁধা হয়ে দাঁড়ালি।”

উনার কথাশুনে আমি শিয়োর হয়ে গেলাম উনি নেশা করেছে,সেটা দেখে আমি সাদাফ ভাইয়ার কাছে গিয়ে বলে উঠি।

“উনি ত সত্যি সত্যি নেশা করেছে।এখন কী করব?”

“আমি ত তোমাকে আগেই বলেছি উনি নেশা করেছে।রুমে নিয়ে তেতুল গুলিয়ে খাওয়াতে,কিন্তু তুমি ত বিশ্বাস করলে না।”

“ভাইয়া এখন কী এসব বলার সময় নাকি?আপনি তাড়াতাড়ি যান এখান থেকে আমি মামুকে ডেকে আনছি।”

“ঠিক আছে চলে যাচ্ছি,তুমি নিজের খেয়াল রেখো।আর কাব্যর থেকে দূরে দূরে থাকবে,একদম কাছে ঘেসবে না বলে দিলাম।আর কাল সকালে বাড়িতে যাওয়ার আগে আমাকে একটা কল দিও,আঙ্কেলকে মেনেজ করতে তোমাকে হেল্প করব নে।”

আমি মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে ঘুরে যেই না যাব ওমনি সাদাফ ভাই আমাকে টেনে উনার সামনে দাড় করিয়ে দেয়।আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালে উনি আমার কপালে একটা চুমু একে দেয়।তারপর আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়েই বেরিয়ে যায়।আমিও আর ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলাম না,ভিতরে চলে এলাম মামুকে ডাকতে।

____________________________________

বাবার সামনে অপরাধীদের মত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।আর বাবা অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি ভয়ে শুকনো ঢোক গিলছি বারবার,আর মনে মনে সাদাফ ভাইয়ের গুষ্টির ষষ্ঠী করছি।শালা বদ আমাকে হেল্প করবে বলে এখনও তার পাত্তাই নাই।সকালে আসার সময়ই ফোন করে জানিয়েছি বাড়িতে আসছি,আর সে নাকি আসছে।কিন্তু কই এখনও ত তার কোন নাম গন্ধও নাই,অনেকক্ষন উনার অপেক্ষা করার পরও যখন আসে না।তখন আমি আর উনার আশায় না থেকেই বাবাকে আপুর বিয়ের কথাটা বলে দেই।তারপর থেকে বাবা অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রয়েছে আর একটু পর পর ধমকে জিজ্ঞেস করছে,”কাজটা করার আগে কার পারমিশন নিয়েছি”।
আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে রেখেছি,কী বলব কিছুই বুঝতে পারছি না।বাবা এবার খুব রেগে যায়,আর সোফার একটা কুশন ছুড়ে মারে আমার দিকে।আমি সেটা ধরে বাবার দিকে ভয়ে ভয়ে তাকাই সেটা দেখে বাবা বলে উঠে,,,

“বড়দের কথা অমান্য করে তুই এত বড় সিদ্ধান্তটা কীভাবে নিলি সাবিহা?কাকে বলে এত বড় একটা কাজ করেছিস তুই?”

“আআআসলে ববাব,,,

” চুপ একদম চুপ,তোর থেকে কোন কথাই শুনতে চাই না আমি।আমি এখনই ঐ বাড়িতে যাব আর শীলাকে নিয়ে আসব।ঐ মানুষটার বাড়িতে আমার মেয়েকে আমি কিছুতেই রাখব না।”

পরিস্থিতি হাতের বাহিরে চলে যাচ্ছে দেখা যায়,কিন্তু তার আগেই আমাকে কিছু করতে হবে নয়ত ঝামেলা আরো বাড়বে।আমি একটা শুকনো ঢোক গিলে সাহস নিয়ে বাবাকে বলে উঠি,,,

“বাবা প্লিজ তুমি শান্ত হয়ে বোঝার চেষ্টা করো,যা করার কাব্য ভাইয়া করেছে মেঘ ভাইয়া ত কিছু করে নি।আর আপু,মেঘ ভাইয়া দুজন দুজনকে খুব ভালবাসে।মেঘ ভাইয়া আপুকে সুখে রাখবে,কোন কষ্ট পেতে দিবে না দেখো।”

“তুই আর একটা কথাও বলবি না,আমি তোর কোন কথাই শুনব না।আমি এই মুহূর্তে শীলাকে নিয়ে আসব ঐ বাড়ি থেকে আর এসে তোর ব্যাবস্থা করব।”

বাবা কথাগুলো বেশ রেগেই বলে,আর ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।আমি বাবার পিছন পিছন দৌড়ে আসি বাবাকে আটকাতে।কিন্তু ড্রয়িং রুমে আসার পর আমার চোখ বড়বড় হয়ে যায়।কারন শীলা আপু,মেঘ ভাইয়াকে নিয়ে সাদাফ ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে পকেটে হাত গুজে।আর বাবা সেটা দেখে দাঁড়িয়ে যায়,আর তখন সাদাফ ভাইয়া বলে উঠে,,,

“আঙ্কেল অনেকক্ষণ ধরে শুনছিলাম আপনি শীলাকে নিয়ে আসবেন,কিন্তু দেখুন আমি আপনার মনের কথাটা আগেই বুঝতে পেরেছি।আর তাই শীলাকে তার শ্বশুর বাড়ি থেকে জামাই সহ তুলে আনলাম।এবার রেখে দিন নিজের মেয়ে আর মেয়ের জামাইকে আপনার বাড়িতে।”

“আমি এই বিয়ে মানি না,আর না মেঘকে এই বাড়ির জামাই হিসেবে মানি।তাই মেঘকে বলো আমার মেয়েকে রেখে চলে যেতে।”

“আপনার না মানাতে এখন কিছুই হবে না আঙ্কেল,কারন তারা কোন টিনেজার নয় যে আপনি মানলেন না তাই বিয়ে ভেঙ্গে গেলো।তাদের বয়স 18 & 21 পেরিয়ে গেছে তাই তাদের বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার সম্পূর্ণ রয়েছে।”

“সাদাফ তুমি কী জানো না কাব্য সাবিহার সাথে কী কী করেছে?আর কাব্যর বাবা কেমন প্রকৃতির মানুষ!ঐ বাড়িতে আমার মেয়ে থাকলে এমনিই মরে যাবে।আর কোন বাবা জেনে বুঝে তার মেয়েকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিতে পারে?”

“আপনার ত কাব্য আর তার বাবাকে নিয়ে সমস্যা?মেঘ ভাইয়াকে নিয়ে ত কোন সমস্যা নেই,তবে আপনি আপনার মেয়ে সহ মেয়ের জামাই আপনার কাছেই রেখে দিন।এতে করে আপনি আপনার মেয়েকে নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকলেন আর আপনার মেয়ে তার ভালবাসার মানুষের সাথে সুখে সংসার করতে পারল।”

“তুমি কী পাগল হয়েছো!আমি কখনও আমার মেয়েদের ঘর জামাই করব না।এতে করে সমাজের লোক অনেকে অনেক কথা বলবে।আমার মান সম্মান নিয়ে টানাটানি হবে।”

“তবে আপনি যে আপনার মেয়েকে তার বিয়ের পরের দিন তার শ্বশুর বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে চাইছেন তাতে কী আপনার মান সম্মান বাড়বে!”

সাদাফ ভাইয়ের কথাশুনে এবার বাবা চুপ করে যায়,এতক্ষণ আমরা সবাই বাবা আর সাদাফ ভাইয়ার কথাটা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম।উনি কায়দা করে ঠিক বাবাকে চুপ করিয়ে দিয়েছে।এবার নিশ্চয়ই বাবা আপুদের মেনে নিবে,উফফ ভাবতেই খুব আনন্দ হচ্ছে আমার।এই খুশিতে সাদাফ ভাইয়াকে দুইটা চুমা দিতে ইচ্ছে করতাছে।পরক্ষনেই নিজের বলা কথাটা ভেবে নিজের মাথায় দুইটা চাপড় মেরে বলে উঠি,,,”পাগল ছাগলের মত লজ্জার মাথা খেয়ে কী বলে ফেললাম ইস্।”

#চলবে…

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২১

দুপুর ২ টা বেজে ৭ মিনিট,আপুর সাথে বসে বসে অনলাইনে কিছু ড্রেস দেখছি।আপুর গায়ে হলুদ আর বিয়েতে পড়ার জন্য।সেদিন ত কিছুই কিনতে পারলাম না কাব্য ভাইয়ের জন্য তাই এখন শপিংটা অনলাইনেই করব ভাবছি।
আর হে বাবা বিয়েটা মেনে নিয়েছে।তখন বাবা বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হঠাৎ করেই বলে উঠে বিয়েটা মেনে নিবে।আর বাবা আজ মেঘ ভাইয়াদের বাড়িতে গেছিল,সাদাফ ভাইয়াকে সাথে নিয়ে।আর মামা,মামুর সাথে কথা বলে ওদের আবারও বিয়ে দিবে ধুমধাম করে ঠিক করে এসেছে।আর সেটা সামনের সপ্তাহেই,আর ততদিন আপু আমাদের বাড়িতে থাকবে।কথাটা শুনে সবাই খুশিতে আটখানা,আমি ত আপুকে জড়িয়ে ধরে রীতিমতো লাফালাফি শুরু করে দিয়েছিলাম।অবশেষে আপুর জীবনটা স্বাভাবিক হল আপুর ভালবাসা পূর্নতা পাবে,ভাবতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।
আর এই সবটা সম্ভব হয়েছে সাদাফ ভাইয়ার জন্য,কিন্তু তাকে ত ধন্যবাদই জানানো হয় নি।কথাটা ভেবেই আপুকে বলে তার রুম থেকে দৌড়ে এসে পড়লাম আমার রুমে,আর সাদাফ ভাইয়াকে ফোন লাগালাম।কিন্তু ভাইয়া ধরল না,তাই আমি ভাবলাম উনার বাড়িতে যাব গিয়ে সরাসরিই ধন্যবাদ জানাব।তাই ঝটপট নেভি ব্লু কালারের একটা গাউন পড়ে,মাথায় হিজাব বেঁধে,সাইডে একটা উর্না ফেলে দিলাম।তারপর হালকা একটু লিপস্টিক আর চোখে কাজল দিয়ে তৈরি হয়ে বাবাকে বলে বেরিয়ে পড়লাম।উদ্দেশ্য এখন সাদাফ ভাইয়ার বাড়িতে যাওয়া।

আধা ঘন্টা পর এসে পৌঁছালাম সাদাফ ভাইয়ার বাড়িতে,আর গেট দিয়ে ঢুকার সময় দেখি আন্টি বাগানে দাঁড়িয়ে কার সঙ্গে যেন রেগে কথা বলছে ফোনে।আমি আন্টির কাছে গিয়ে উনাকে পিছন থেকে চোখে ধরলাম,ছোট থেকেই এ অভ্যাস আমার।আন্টিকে দেখলেই এভাবে পিছন থেকে চোখে ধরব।আন্টি এবার ফোনটা রেখে আমার হাতের উপর হাত রেখে কিছুটা রেগে বলে উঠে,,,

“কে এভাবে ধরেছে আমাকে?”

“তোমাকে এভাবে আর কে ধরতে পারে হুম!”

আমার এই কথাটা শুনে আচমকা আন্টির চেহারা থেকে রাগটা বিলীন হয়ে মুখে হাসি ফুটে উঠে।

“আরে আমি কী সত্যি শুনছি নাকি এটা,আমার সাবিহা মামনি এসেছে।”

আমি এবার আন্টির চোখ থেকে হাত সরিয়ে অভিমানি স্বরে বলে উঠি।

“হুম হয়েছে হয়েছে আর মামনি মামনি বলতে হবে না,তুমি ত আমাকে চিনতেই পারলে না।”

“আমার মামনিটার অভিমান হয়েছে বুঝি,ওলেলে আমার কিউট মামনিটার অভিমান হয়েছে!”(গাল টেনে)

“সরো একদম কথা বলবে না আমার সাথে।”

“সরি মামনি এমনটা আর কখনও হবে না,আসলে ফোনে কথা বলছিলাম ত তাই বুঝতে পারি নি।”

“হুম ঠিক আছে,ঠিক আছে কোন সমস্যা নেই,এবারের মত ছেড়ে দিলাম।কিন্তু তুমি রেগে ওভাবে কার সাথে কথা বলছিলে?”

আমার কথা শুনে আন্টির চেহারার রং আবারও পাল্টে যায়।

“কোন সমস্যা হয়েছে?”

“আরে না না,কোন সমস্যা হয় নি।”

“আচ্ছা আন্টি পারসনাল কোন বিষয় হলে বলতে হবে না।”

“আরে না তেমন কিছুই নয়,তুই এসব নিয়ে ভাবিস না কিছু হয় নি।তুই বরং ভিতরে যা আমি আসছি ফোনে কথা বলে।”

“আচ্ছা আন্টি সাদাফ ভাইয়া কী বাড়িতে আছে?”

“হে হে ঐ পাগলটা ভিতরেই আছে,তুই যা।”

“আচ্ছা আন্টি।”

তারপর আমি ভিতরে চলে এলাম,আর ঐদিকে আন্টির হঠাৎ করেই কিছু একটা মনে পড়ে যায়।আর দৌড়ে উনিও ভিতরে আসার জন্য দৌড় দেয়।

_______________________________________

সাদাফ ভাইয়াকে খুঁজতে খুঁজতে উনার ঘরের সামনে চলে এলাম,আর যখনি ঘরের ভিতরে প্রবেশ করব তখন আমি যা দেখি তার জন্য মোটেও প্রস্তত ছিলাম না।আমার দৃষ্টি স্থীর হয়ে আসে একটা জায়গায়, নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।আমি দরজার সামনেই ঠায় দাড়িয়ে আছি,সাদাফ ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে আছে একটা মেয়ে।মেয়েটার গায়ে খুব ছোট একটা পোশাক যেটা দেখে আমি নিজেই লজ্জায় পড়ে যাচ্ছি।ভিতরে যাব নাকি চলে যাব সেটা ভাবতে ভাবতেই সাদাফ ভাইয়ের চোখ পড়ে আমার উপর।আর উনি সেটা দেখে গাবড়ে গিয়ে মেয়েটাকে একটা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়।আমি সেটা দেখে বেরিয়ে আসতে নিলেই সাদাফ ভাই আমার সামনে এসে কাঁধে হাত দিয়ে অস্থির হয়ে বলে উঠে,,,

“সাবিহা তুমি যা দেখেছো তা সত্যি নয়,তুমি আমাকে ভুল বুঝো না।আমার পুরো কথাটা শুনো তুমি,অর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।আমি তোমাকে ভালবাসি সাবিহা,তুমি আমার সব।তুমি প্লিজ আমাকে ভুল বুঝো না,তুমি ভুল বুঝলে আমি মরে যাব।তুমি ছাড়া আমি অন্য কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকানো ত দূরে থাক ভাবতেই পারি না।তুমি আমাকে,,,

কথাগুলো এক নিশ্বাসে চলেছে উনি,আমি এবার উনাকে হাত দিয়ে থামিয়ে দেই।

“গতরাতে মাত্র বললাম ভালবাসতে চাই আপনাকে,আর আজকেই আপনার নিজের নিকৃষ্টতম রূপ দেখিয়ে দিলেন।কাব্য ভাইয়ের থেকেও জঘন্য মানুষ আপনি।কাব্য ভাই যা করে তা সরাসরি করে কিন্তু আপনি ত মিচকা শয়তান।আপনার প্রতি ঘৃনা হচ্ছে,আর কখনও আমার সামনে আসবেন না আপনি।”

সাবিহার কথাশুনে সাদাফের চোখের কোনে জল জমা হয়,চোখের পানিগুলো টলমল করছে।যেকোন সময় তা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়বে।সাদাফের মনে ঝড় বয়ে যাচ্ছে,সে যে ভয়টা পেয়েছে সেটা সত্যি হল।সাবিহা তাকে ভুল বুঝেছে,এবার কী সাবিহা তার থেকে দূরে সরে যাবে।তবে সাদাফের কী হবে?এমন অনেক কথা নিজ মনে ভেবে চলেছে সাদাফ।

আমি সাদাফ ভাইয়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে এবার মেয়েটার সামনে গিয়ে দাঁড়াই মেয়েটার মুখে কেমন একটা তৃপ্তির হাসি।আমি বাঁকা হেঁসে মেয়েটার গায়ে আমার উর্নাটা পেঁচিয়ে দিতে দিতে সাদাফ ভাইয়ের দিকে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠি।

“কী ভেবেছেন এমনটাই বলব আমি!”

আমার কথাশুনে সাদাফ ভাই চোখে জল নিয়ে অবাক চোখে তাকায় আমার দিকে।

“এত অবাক হওয়ার কী আছে!এমনটা ভাবাই স্বাভাবিক নয় কী!আপনারা যেভাবে ছিলেন তাতে ত এসব বলাই স্বাভাবিক।কিন্তু আমি আপনাকে বিশ্বাস করি,আপনার ভালবাসার প্রতি আমার বিশ্বাস আছে।তাই চোখের দেখাটাকে বিশ্বাস করলাম না,আমি জানি আপনি কেমন।আর এই আপুটাও যে কেমন সেটাও বুঝা হয়ে গেছে আমার।উনি যেরকম পোশাক পড়েছে তাতে করে যে কেউ বলতে পারবে উনি কেমন?”

আমার কথাশুনে সাদাফ ভাইয়ের মুখে হাসি ফুটে উঠে,আর উনি হাসি মুখে কিছু বলতে নিলেই।আমি উনাকে হাত দিয়ে থামিয়ে রেগে বলে উঠি,,,

“অবিশ্বাস করি নি ঠিকই কিন্তু রাগ হচ্ছে খুব আপনার উপর।একটা মেয়ে আপনাকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছে আর আপনি তাকে কিছুই বললেন না।আমি আসার পর যেভাবে দূরে ঠেলেছেন সে কাজটা আগে করতে পারলেন না!

সাদাফ ভাই কিছু বলবে তার আগেই আমি বলে উঠি,,,

“আপনার সাথে পরে কথা বলব আগে বলুন এই গরিলা মার্কা মহিলা কে?”

এবার মেয়েটা রেগে ফোঁস করে উঠে।

“এই মেয়ে তুই কী বললি আমাকে?আমি গরিলা মার্কা মহিলা?আমি?”

“এখানে আপনি আর আমি ছাড়া কোন মেয়েকে ত দেখছি না যাকে মহিলা বলব।আর আমি নিজেকে নিজে ত এই কথাটা অবশ্যই বলব না তাই না!”

“How dare you!তোর সাহস হল কী করে আমার সাথে এভাবে কথা বলার?তুই জানিস আমি কে?”

“এই গলা নিচে,আরেকটা উঁচু আওয়াজে কথা বললে গলা কেটে হাতে ধরিয়ে দিব।আর আপনি নিজেই ত জানেন না আপনি কে ত আমি জানব কীভাবে?”

আমার কথাশুনে সাদাফ ভাই মুচকি হাসেঁ আর মেয়েটা রাগে ফেটে যাচ্ছে।আমি কিছু বলব তখন সেখানে উপস্থিত হয় সাদাফ ভাইয়ার মা,উনাকে দেখে আমি বলে উঠি।

“আন্টি এই মেয়েটা কে?”

“মামনি শান্ত হ,আমি তকে সব বলছি।তুই আমার সাথে আয়,মাথা ঠান্ডা কর।”

“আন্টি আমার মাথা ঠান্ডাই আছে,আর তুমি এখন এখানেই বলবে এই মেয়েটা কে?”

“এটা সাদাফের ক্লাসমেট লিজা।”

“ওহহো চিনতে পেরেছি ত,এই লিজাই ত সাদাফ ভাইয়ার সাথে আমাকে ছোট বেলায় দেখলেই মারার জন্য তেড়ে আসত তাই না!এখন বুঝলাম ব্যাথাটা কোন জায়গায়।”

“হ্যাঁ আমি সেই,যে তকে শয্য করতে পারত না একদমই।তকে মেরে ফেলতেও আমার হাত কাঁপবে না কারন তুই আমার থেকে সাদাফকে কেড়ে নিয়েছিস।তোর জন্য সাদাফ আমাকে সবসময় এড়িয়ে চলেছে,তোর জন্য সাদাফ আমার ভালবাসার,,,

ঠাস করে একটা আওয়াজ হওয়াতে লিজা চুপ করে যায়।লিজা আর কিছু বলার আগেই ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেই আমি,লিজার না সাদাফ ভাইয়ের।সাদাফ ভাই গালে হাত দিয়ে বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে,আন্টি আর লিজা দুজনেই খুব অবাক।আমি এবার রেগে বলে উঠি,,,

” কী ভাবছেন থাপ্পড়টা গরিলা মার্কা মহিলাকে না মেরে আপনাকে কেন মারলাম?আপনাকেই থাপ্পড়টা মারা দরকার আপনারই সামনে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে আর আপনি চুপচাপ শুনে চলেছেন!আপনার ত উচিত ছিল এই মহিলার গালে একটা দেয়ার কিন্তু আপনি?”

“এই মেয়ে তুই বারবার কাকে গরিলা বলে যাচ্ছিস আর সাদাফের গালে থাপ্পড় দিয়েছিস কেন?তকে ত আমি,,,”

কথাটা শুনে আরেকটা থাপ্পড় বসিয়ে দেই সাদাফ ভাইয়ের আরেক গালে।লিজা এবার কিছুটা ভয় পেয়ে যায় আর চুপ করে দাঁড়িয়ে পড়ে।আমি সেটা দেখে সাদাফ ভাইকে বলে উঠি,,,

“আমাকে এতগুলো কথা বলল আর আপনি চুপ করে শুনছেন?এসেছিলাম ধন্যবাদ জানাতে কিন্তু এখন ধন্যবাদ দেয়ার বদলে আপনাকে জ্যান্ত চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু এখন সেটা করাও সম্ভব নয় কারন এই গরিলা মার্কা মহিলার ছোয়া লেগে আছে আপনার গায়ে।”

কথাটা বলেই লিজাকে টেনে হিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে নিয়ে এলাম।এই লিজা ছোট বেলায় আমাকে অকারনে মারত তাই আপু বলে ডাকি না।এই মেয়েকে এখানে রাখা মানেই আবার কখন কী ঝামেলা করে ঠিক নেই তাই বের করে দিচ্ছি।এটা ত আমারই শ্বশুর বাড়ি তাই একে বের করার জন্য আমার ২য় বার ভাবতে হবে না।আর এই গরিলা মার্কা মেয়ে ছোটার চেষ্টা করে চলেছে কিন্তু ছুটতে পারছে না।

অন্যদিকে সাদাফ গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে সাবিহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।সাদাফের মার যেন চোখ বেরিয়ে আসবে এমন অবস্থা।কিন্তু পরক্ষনেই তিনি হাসিতে ফেটে পড়ে,সেটা দেখে সাদাফ ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,,,

“এভাবে হাসছো কেন?”

“বাপরে বাপ আমার মামনিটা পুরাই আগুন,উফফ এমন একটা মেয়ে যে আমার বাড়ির বউ ভাবতেই মজা লাগছে।আমার পাগল পোলার জন্য উপযুক্ত জীবনসঙ্গী।”

কথাগুলো হেঁসে বলতে বলতে উনি রুম থেকে বেরিয়ে যায় আর সাদাফ মুচকি হেসে বলে উঠে,,,

“হায় ম্যা মার জাওয়া😍,,,আবারও প্রেমে পড়ে গেলাম তোমার।তোমার মত মেয়েকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে ধন্য আমি।”

পরক্ষনেই সাদাফের মুখের হাসি গায়েব হয়ে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠে।

“সবই ত ঠিক আছে কিন্তু যেভাবে রেগে বেরিয়ে গেলো তাতে ত রাগ ভাঙ্গানোর জন্য আমাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে