#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১৬
কাব্য তার বারান্দায় বসে চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছে।কাব্য খুব ভেঙ্গে পড়েছে শীলা আর মেঘের বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়াতে।তার মা,বোন,ভাই তাকে দায়ী করছে বিয়ে ভাঙ্গার জন্য।তার জন্য প্রতিনিয়ত তারা কাব্যকে এড়িয়ে চলছে,বাড়িতে কারো মুখে কোন হাসি নেই।কাব্য এখন অপরাধ বোধে ভুগছে,সেদিন তার মায়ের বলা কথাগুলো আর মেঘের বিয়ে ভাঙ্গায় কাব্যর মনে ভালোই দাগ কেটেছে।যার ফল কাব্য এখন অপরাধ বোধে ভুগছে,কাব্য নিরবে চোখের পানি ফেলছে আকাশের দিকে তাকিয়ে।তখনই কাব্যর রুমে প্রবেশ করে তার বাবা।উনি কাব্যকে ঘরে দেখতে না পেয়ে বারান্দায় আসে আর দেখে কাব্যর চোখে জল।উনি সেটা দেখে কাব্যর কাঁধে হাত রাখে,কাব্য কারো ছোঁয়া পেয়ে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে তাকায়।আর দেখে তার বাবা দাঁড়িয়ে আছে,সেটা দেখে কাব্য হাসার চেষ্টা করে বলে উঠল,,,
“বাবা কিছু বলবে!”
“এভাবে আর কত নিজেকে কষ্ট দিবি!হসপিটাল থেকে ফিরেছিস আজ চার দিন,আর এসেই নিজেকে আবারও ঘর বন্ধি করে রেখেছিস।তুই এভাবে থাকলে কী আমাদের ভালো লাগে!”
“বাবা আমি ত ঠিকই আছি,আর শরীরটা ভালো লাগছে না তাই ঘর থেকে বের হচ্ছি না।তোমরা প্লিজ আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না।”
“আমাকে মিথ্যা বলিস না কাব্য,আমি বুঝতে পারছি তোর মনের অবস্থা।যেভাবে তোর মা,হিয়া আর মেঘ তকে এড়িয়ে চলছে তাতে করে তোর মন খারাপ হওয়ারই কথা।”
“বাবা তাদের কী এমনটা করা স্বাভাবিক নয়?”
“মানেহ?”
“মানে কিছু না,তুমি যাও এখান থেকে আমি একা থাকতে চাই।”
“কাব্য তুই কী কোন ভাবে তোর মা,হিয়া আর মেঘের মত নিজেকে দায়ী করছিস মেঘ আর শীলার বিয়ে ভাঙ্গার জন্য!”
“বাবা এটা ভাবার কী আছে!এটাই ত সত্যি আমার জন্যই ত ফুপা ভাইয়ার বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়েছে।ভাইয়া আর শীলা ত একে অপরকে খুব ভালবাসে আর তাদের ভালবাসাকে পূর্নতা দেয়ার জন্যই ত বিয়েটা ঠিক হয়েছিল।কিন্তু আমার কৃতকর্মের জন্য তারা আজ আলাদা।আমি জানি ভালবাসার মানুষটাকে হারালে ঠিক কতটা কষ্ট হয়।আর ভাইও যে কতটা কষ্ট পাচ্ছে সেটা আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি,আমার কর্ম ফল আমার ভাই পাচ্ছে।আমি যদি সাবিহার সাথে অমানুষের মত আচরনগুলো না করতাম তবে আজ এসব হত না।”
“কাব্য তুই যা বলছিস সেটা পুরোপুরি সত্যি নয়,তুই সাবিহাকে আঘাত করেছিা সেটা অন্যায় তার জন্য মেঘের সাথে বিয়ে ভাঙ্গার কোন সম্পর্ক দেখছি না আমি।”
“বাবা প্লিজ যাও এখান থেকে,এত সম্পর্ক খুজতে আমার ভালো লাগছে না।যাও এখান থেকে নয়ত আমি বেরিয়ে যাব।”
কাব্যর কথাশুনে তার বাবা চুপচাপ ঘর থেকে বের হয়ে যায়,আর কাব্য তার ঘরে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে নিশানকে ফোন লাগায়।কিন্তু ফোন বিজি বলছে,কাব্য বুঝতে পারছে নিশান তাকে ব্লক করেছে তাই বিজি বলছে।কাব্য একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ড্রয়ার থেকে নতুন একটা সিম কানেক্ট করে,আবারও ফোন লাগায় নিশানকে।কয়েকবার রিং হওয়ার পরই নিশান ফোনটা ধরে সালাম দিয়ে বলে উঠে,,,
“হ্যালো,,,আসসালামু আলাইকুম।কে বলছেন?”
“ওয়ালাইকুম সালাম,,,দোস্ত আমি কাব্য।”
নিশান কাব্যর কথাশুনে রেগে যায় আর বলে উঠে,,,
“তকে না করেছি না আমার সাথে যোগাযোগ না করতে,তুই আবার আমাকে ফোন দিয়েছিস কোন সাহসে!”
“দোস্ত প্লিজ শান্ত হ,আর ফোনটা কাটিস না প্লিজ।আমার তোর সাথে অনেক কথা আছে,আমি খুব পেরায় আছি দোস্ত একটু সাহায্য কর আমাকে।”
অনুরোধ করে নরম গলায় বলে উঠে কাব্য,কাব্যর এভাবে বলার কারনে নিশানের কিছুটা খারাপ লাগে।তাই নিশান নিজেকে শান্ত করে নরম গলায় বলে উঠে,,,
“কী হয়েছে তোর?”
তারপর কাব্য নিশানকে সবটা বলে যা যা করেছে সাবিহার সাথে আর মেঘের বিয়ে ভাঙ্গার কথাও বলে।সবটা শুনে নিশান খুব রেগে যায় আর বলে উঠে,,,
“ছিঃ কাব্য তুই খারাপ এটা জানতাম কিন্তু তুই যে এতটা খারাপ সেটা জানতাম না।তোর কী লজ্জা করছে না!এমন একটা কাজ কীভাবে করতে পারলি তুই?”
“দোস্ত আমি অন্যায় করেছি,খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি দোস্ত।আমি এখন প্রতিটা মুহূর্তে অপরাধ বোধে ভুগি,আমি কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না।দোস্ত বল না আমার কী করা উচিত?আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না কীভাবে সবটা ঠিক করব!”
“তুই যা করেছিস তাতে করে সবটা ঠিক করা সম্ভবও নয়,তুই মানুষের কাতারেই পড়িস না।তুই ফোন রাখ আমাকে আর কল করবি না।”
“দোস্ত প্লিজ সাহায্য কর,বিপদে বন্ধুই ত বন্ধুকে সাহায্য করে,সঠিক পথ দেখায়।এখন তুই এভাবে আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে আমি কী করব?”
“এতদিনে বুঝতে পারলি বন্ধুরা সঠিক পথ দেখায়!আরে আগে যখন চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলতাম ইশা ভালো মেয়ে নয়,ইশার সাথে রিলেশন জড়াস না কিন্তু শুনেছিলি তখন আমাদের কথা?”
“দোস্ত প্লিজ আর অপরাধ বোধ বাড়াস না আমার,আমি পারছি না এভাবে অপরাধ বোধে ভুগতে।”
“তুই যা করেছিস তাতে করে তোর এটাই প্রাপ্য আর তকে সাহায্য করার কোন রাস্তা দেখছি না।কিন্তু বন্ধু হিসেবে একটা কথাই বলব তুই যার সাথে অন্যায় করেছিস তার কাছে ক্ষমা চা।”
কথাটা বলেই নিশান ফোনটা কেটে দেয়,আর কাব্য ফোনটা রাখার পর তার গাল বেয়ে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে।আর কাব্য সিদ্ধান্ত নেয় সে সাবিহার বাড়িতে যাবে,গিয়ে সাবিহার কাছে মন থেকে ক্ষমা চাইবে।আর মেঘ আর শীলার বিয়েটা দেয়ার জন্য অনুরোধ করবে,তার জন্য তাকে যদি অপমানিত হতেও হয় তাই হবে।এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে কাব্য বেরিয়ে গেলো।
______________________________________
শীলা আর মেঘকে চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে,আর তাদের সামনেই কালো হুডি পড়ে বসে আছে সাবিহা।শীলা আর মেঘের মুখও বাঁধা যার জন্য তারা কোন কথা বলতে পারছে না।শীলা রেগে সাবিহার দিকে তাকিয়ে আছে আর সাবিহা সেদিকে না তাকিয়ে মনযোগ দিয়ে ফোন টিপছে।এভাবে কিছুক্ষন কাটার পরও যখন কাজি আর আসে না তখন সাবিহা কাউকে ফোন দেয় আর ধমকে বলে উঠে,,,
“কাজিকে নিয়ে আসতে এতক্ষণ লাগে!এদিকে ত দুজনে ছোটার জন্য ছটফট করছে।তাড়াতাড়ি কাজি নিয়ে আয় আর বিয়েটা দিয়ে শান্ত করি দুজনকে,আর আমরা দুই বান্ধবীও শান্ত হই।”
সাবিহা কথাটা বলে অপর পাশের উওর পেয়ে মুচকি হেঁসে ফোনটা কেটে দেয়।আর মেঘ আর শীলার দিকে তাকিয়ে দেখে তারা দুজনে অবাক চোখে তাকে দেখছে।সাবিহা সেটা দেখে বলে উঠে,,,
“আমি কথা বলতে পারছি এটা দেখে তোমরা খুব অবাক হয়েছো তাই ত!”
শীলা মাথা নেড়ে না বুঝায় যার অর্থ এর জন্য নয়,সাবিহা আবারও বলে উঠে,,,
“তবে কীসের জন্য এভাবে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছো আমার দিকে!”
মেঘ এবার সাবিহাকে ইশারা করে বলে মুখের বাঁধন খুলে দিতে সেটা দেখে সাবিহা বলে উঠে,,,
“মুখ খুলব তবে চিৎকার করা যাবে না,চিৎকার করলে তোমার বউয়ের উপর তেলাপোকা ছেড়ে দিব কিন্তু!”
মেঘ মাথা নেড়ে না বুঝায় যার অর্থ সে চিৎকার করবে না।সাবিহা তার উওর পেয়ে মেঘের মুখের বাঁধন খুলে দেয় আর মেঘ বলে উঠে,,,
“তোর সাথে কী হিয়াও যুক্ত আমাদের কিডন্যাপ করার পিছনে!”
“ইয়েস জিজু একদম,আমরা দুই বান্ধবী মিলেই তোমাদের বিয়ে দিব।তোমাদের ত ভালো করে বুঝাইলাম কিন্তু তোমরা ত বুঝলে না।পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করবে না তোমরা তাই এই পদ্ধতি।আমরা দুই বোন+বান্ধবী থাকতে একজোড়া চড়ুই আলাদা হয়ে যাবে সেটা ত হবে না।তাই এই পদ্ধতি,এখন বলো ত আমাদের সারপ্রাইজটা তোমাদের কেমন লেগেছে?”
“হাতের বাঁধনটা খুলে দে তারপর দেখাচ্ছি কেমন লাগছে?”
“দিব ত,হাতের বাঁধন অবশ্যই খুলে দিব।কিন্তু এখন নয় যখন কাজি আসবে আর তোমরা রেজিষ্ট্রি পেপারে সই করবে তখন।ততক্ষণ এভাবেই বসে থাকো এবং আপু আর তুমি দুজনে মিলে চোখে চোখে কথা বলো।”
কথাটা বলে সাবিহা মেঘের মুখ বাঁধতে গেলে মেঘ বলে উঠে,,,
“এক মিনিট,এক মিনিট দাঁড়া আমার আর একটা প্রশ্ন আছে।”
“আবার কীসের প্রশ্ন?”
“তুই কথা বলতে পারছিস কীভাবে?”
“মানুষ কথা বলে কীভাবে সেটাও জানো না তুমি!আপু দেখ তোর জামাই ডাক্তার হয়েও জানে না মানুষ কীভাবে কথা বলে!অবশ্যই ঠোঁট,জিহ্ব,,
” কথা না ঘুরিয়ে বল,নয়ত মাইর খাবি আমার হাতে।”
“আরে এত চাপ নিওনা আমার কথা বলা নিয়ে,আমি ত স্ট্রং গার্ল তাই নিজেকে সুস্থ নিজেই করেছি।কথা না বলাটা কতটা কষ্টের সেটা আমি হাড়েহাড়ে টের পেয়েছি এতদিন।তাই প্রতি সকাল,বিকাল,রাতে সবার আড়ালে কথা বলার চেষ্টা করতাম।আর সফলও হই গতরাতে,আর দেখো আমি এখন কথা বলতে পারছি।”
“কিন্তু এভাবে জোরপূর্বক কথা বলানোতে কিন্তু গলায় সমস্যা হতে পারে!”
“আহ্ জিজু এখন এত সমস্যা সমস্যা করো না ত,আমি কথা বলতে পারছি সেটা এনজয় করতে দাও।আর নিজেদের বিয়েটাও এনজয় করো বুঝতে পেরেছো।”
কথাটা বলেই সাবিহা মেঘের মুখটা আবারও বেঁধে দেয়,আর অপেক্ষা করতে থাকে কখন হিয়া আসবে কাজি নিয়ে।সাবিহার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে হিয়া কাজিকে নিয়ে পৌঁছায়।হিয়াকে দেখে সাবিহা জড়িয়ে ধরে,হিয়াও জড়িয়ে ধরে সাবিহাকে আর বলে উঠে,,,
“বইন অবশেষে আমার বিয়াইন হব উফফ ভাবতেই কী যে মজা লাগছে আমার।”
“হুম বইনা আমদের সম্পর্ক আরো মজবুত হবে এবার,বোন+বান্ধবী+বিয়াইন।মন চাইতাছে এই খুশিতে লুঙ্গি ডান্স দিতে কিন্তু আপাতত এই ইচ্ছেটা ধমিয়ে রেখে তেনাদের বিয়ের কাজটা সারি চল।”
কথাটা বলে সাবিহা আর হিয়া,মেঘ আর শীলার সামনে যায়।শীলা মুখ ঘুরিয়ে নেয় সেটা দেখে সাবিহা বলে উঠে,,,
“আপু চুপচাপ বিয়েটা করে নে নয়ত জোড় করে তদের বিয়েটা দিব,যেভাবে জোড় করে কিডন্যাপ করে তুলে এনেছি তদের।”
তারপরও শীলা তাকায় না,সেটা দেখে সাবিহা মেঘের দিকে তাকায় আর বলে উঠে,,,
“জিজু তোমার বউকে বলো চুপচাপ বিয়েটা করতে নয়ত এখানে এই মুহুর্তে আমি আর হিয়া তোমাদের সামনে নিজেদের আঘাত করব।”
কথাটা শুনে হিয়া,শীলা আর মেঘ চোখ বড়বড় করে তাকায় সাবিহার দিকে।হিয়া সাবিহার কানে কানে বলে উঠে,,,
“বইন এইটা কী কছ?এটা ত কথা ছিল না।”
“চুপ কর আর দেখ কী হয়?”
হিয়া চুপ করে যায়,আর সাবিহা নিজের পকেট থেকে একটা ব্লেড বের করে সেটা দুইভাগ করে।একটা নিজের হাতে নেয় আরেকটা হিয়ার হাতে দেয়।হিয়া অনিচ্ছা স্বত্বেও ভয়ে ভয়ে ব্লেডটা হাতে নেয়,আর সাবিহা নিজের হাতের রগে ব্লেডটা সেট করে শীলা আর মেঘকে বলে উঠে,,,
“বিয়েটা করবে নাকি আঘাত করব?”
শীলা সাবিহার হাতের দিকে একবার তাকিয়ে মেঘের দিকে তাকায় আর তাড়াতাড়ি মাথা ঝাঁকিয়ে উওর দেয় সে বিয়ে করবে।আর মেঘও একই পদ্ধতি অবলম্বন করে জানায় তারা বিয়ে করবে।সাবিহা বাঁকা হেসে কাজিকে বিয়ে পড়াতে বলে শীলা আর মেঘের হাতের বাঁধন খুলে দিয়ে জড়িয়ে ধরে।তারপর মেঘ আর শীলার বিয়েটা সম্পন্ন হয় খুব ভালো করেই।
#চলবে…
#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১৭
বঁধুবেশে মুখটা কাচুমাচু করে মামুর বাড়ির চৌকাঠে দাঁড়িয়ে আছে আপু,তার পাশেই মেঘ ভাইয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।আর তাদের সামনে মামা বুকে হাত গুজে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে,আর মামি মা গেছে বরনডালা সাজাতে।অন্যদিকে আমি আর হিয়া দুজনে আপুর ট্রলিব্যাগের উপর বসে বসে হাই তুলছি।আপুকে কিডন্যাপ করার আগে আপুর প্রয়োজনীয় সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছিলাম এই ব্যাগে।আমাদের ভাব এমন যেন কিছুই হয় নি,কিন্তু মামুর মোটেও শয্য হচ্ছে না এসব কিছু তাই তিনি রেগে বলে উঠে,,,
“তোকে নিজের ছেলে বলে পরিচয় দিতে লজ্জা করছে আমার,ছিঃ তুই কীভাবে পারলি এভাবে পালিয়ে বিয়ে করতে?পরিবারের বিরুদ্ধে কীভাবে গেলি তুই!”
আমি এবার আরেকটা হাই তুলতে তুলতে বলে উঠলাম,,,
“মামা তুমি না অনেক বেশি খারাপ হয়ে গেছো।এক চোখে নুন আরেক চোখে মরিচ দেখো।”
“কী বলতে চাইছিস তুই?”(রেগে চিৎকার করে)
“আহ্হা মামা এভাবে চেঁচাচ্ছো কেন?আমি ত কানে কালা না,সবই শুনতে পাই তাই আস্তে বলো।”
“বেশি কথা না বলে বল কী বলতে চাইছিস এক চোখে নুন আরেক চোখে মরিচ দেখি মানে কী?”
“সেটা এভাবে শান্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেই পারো,এত চেঁচানোর কী আছে?”
“এবার কিন্তু কানের নিচে দিব একটা।”
“এত হাইপার হয়ো না ত,আমি কথাটা দিয়ে বুঝাতে চাইছি যে তুমি দুজনকে দুই চোখে দেখো।কাব্য ভাই এতকিছু করল সেটা তোমার চোখে পড়ে না,আর তুমি কাব্য ভাইকে কিছু বলোও না উল্টো সাপোর্ট করো।আর মেঘ ভাইয়া বিয়ে করছে তার জন্য ছেলে হিসেবে পরিচয় দিতেই তোমার লজ্জা করছে!বাহ!বাহ!বাহ! মামু তোমার নামটা ত স্বর্নাক্ষরে লেখা দরকার।নিজেরই ত দুইটা ছেলে কিন্তু দুজনের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন কাজকর্ম করে প্রকাশ করো যেন একজন পানিতে ভেসে এসেছে।আরেকজন সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছে।কী রে ঠিক বলেছি না আমি?”
কথাগুলো আমি তাচ্ছিল্য হেঁসে বললাম,আমার কথাশুনে হিয়া বোকার মত একবার আমার দিকে তাকায় আরেকবার মামুর দিকে তাকায়।বেচারি পড়ে গেছে মহাবিপদে কার পক্ষ নিবে বুঝতে পারছে না।আমার পক্ষ নিলে মামা দোলাই দিব আর মামার পক্ষ নিলে আমি হিয়াকে ডিটারজেন্ট ছাড়াই ধুয়ে দিব।এসব ভেবে হিয়া আমতা আমতা করে বলে উঠল,,,
“আআআমি কককী বলব?”
“আছাড় দিয়া ব্যাঙ বানাইয়া ফেলমু তরে,যেটা বলতে বলছি তার উওর দে।”
এবার হিয়া ফিসফিসিয়ে আমার কানের কাছে এসে বলে উঠল,,,
“বইন ছাইড়া দে,আব্বুর পক্ষে কথা না বললে পরে আমাকে উস্টা দিয়ে শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে ফালাইব।যেটা আমি একদমই চাইছি না,প্লিজ বইন মাফ কর আমারে।”
“কথাটা একবার যখন বলেই দিয়েছি তখন ত তকে বলতেই হবে রে বইনা,নয়ত তোরে আমি যে কী করব নিজেও জানি না।”
“হিয়াকে এত চাপ না দিয়ে তোর বোন আর জিজুকে বল ঠিক করে দাঁড়াতে বরন করতে হবে নাকি!”
মিসেস লতা বরনডালা নিয়ে এসে কথাটা বলল,সাবিহা বলে উঠল,,,
“মামি মা তুমি না এত্তগুলো ভালো,কী সুন্দর আপু আর ভাইয়া থুক্কু জিজুকে মেনে নিয়েছো।আমার মামার মত ভিটকেল মার্কা না তুমি।”
আমার কথাশুনে সবাই মুখ টিপে হাসছে আর মামা রেগে বলে উঠল,,
“এই তুই কী বললি আমাকে?আমি ভিটকেল?আমি?”
“তুমি চুপ করে ঘরে যাও ত,এখানে যত থাকবে তত বেশি বকবক করবে।যাও এখান থেকে,ভালো মুডটা নষ্ট করো না।”
মামিমার কথা শুনে মামা কিছু না বলে রেগে হনহনিয়ে তার ঘরে চলে যায়।আমি এবার মামিমাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠি,,,
“মামাটা যে কেন তোমার মত এত ভালো হলো না গো!”
“হয়েছে ছাড় এবার,ভালবাসা পড়ে দেখাস আগে বরন ত করি।”
আমি হাসিমুখে সম্মতি জানিয়ে মামিমাকে ছেড়ে দাঁড়াই,আর মামিমা এক গাল হেঁসে বরন করে নেয় আপু আর জিজুকে।কিন্তু আপু আর ভাইয়ার মুখে কোন হাসির আবাস নেই,যেটা আমাকে বড্ড বেশি ভাবাচ্ছে।
“এভাবে মুখটা গোমড়া করে না থেকে একটু হাসি দে দুজনে।এতদিন ত দুজনের একজনও শান্তিতে ঘুমাতে পারিস নি,এখন যখন দুজনে এক হলি ত এভাবে ওপ করে আছিস কেন?”
মামিমার কথা শুনে আপু আর নিজেকে সামলাতে পারে না।মামিমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে,আর বলে উঠে,,,
“বববাবা মেনে ননননিবে না,ববাবা খখুব রাগ কককরবে।”
“এই পাগলী মেয়ে এভাবে কাঁদছিস কেন?শান্ত হ,তোর বাবার সাথে আমি কথা বলব।সব ঠিক হয়ে যাবে,কাঁদিস না মা আমার।”
আপুর কান্না দেখে আমার খুব খারাপ লাগে,আমি আপুর কাছে এগিয়ে গিয়ে কাঁধে হাত দিয়ে বলে উঠি,,,
“আপু তুই কাঁদিস না,আমি বাবাকে মেনেজ করে নিব।আর বাবাকে মেনেজ করে দুইদিনের মধ্যেই তোর সাথে কথা বলিয়ে দিব।তুই এসব নিয়ে চিন্তা করিস না আপু,নতুন জীবনটা সুন্দর করে সাজা।তোর এই বোন থাকতে কোন কষ্ট পেতে দিবে না তকে।”
আমার কথাশুনে আপু মামিমাকে ছেড়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,,,
“তোর মত বোন পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার,জীবনে হয়ত কোন ভালো কাজ করেছি যার ফল আল্লা আমাকে তোর মত একটা বোন দিয়েছে।তুই যে আমাকে কোন কষ্ট পেতে দিবি না সেটা আমি বুঝতে পেরেছি রে।তুই না থাকলে হয়ত আমার আর মেঘের বিয়েটা হত না।দুজনেই হয়ত গুমরে গুমরে মরতাম,কিন্তু পরিবারের দিকে তাকিয়ে কিছু করতে পারতাম না।তারপর তুই যেভাবেই হোক আমাদের দুজনকে এক করেছিস।কিন্তু বাবা মেনে নিবে না আমাদের,বাবা খুব রাগ করবে।হয়ত আমাকে মেয়ে বলে পরিচয়ই দিবে না,আর এমনটা হলে আমি বাঁচব না।”
“আপু প্লিজ বাজে কথা বলিস না,আমি তকে কথা দিচ্ছি এমন কিছুই হবে না।আমি বাবাকে রাজি করাব তদের যাতে মেনে নেয়।তুই এভাবে কাঁদিস না প্লিজ,এই জিজু আপুকে বলো না কান্না থামাতে।এভাবে কাঁদলে এবার আমিও আপুর দুঃখে দুঃখিত হয়ে হেঁসে ফেলব।”
আমার কথা শুনে আপু আমাকে ছেড়ে আমার পিঠে একটা চাপড় মেরে বলে উঠে,,,
“সিরিয়াস মোমেন্টেও তোর মজা না করলে চলে না তাই না!”
“এত সিরিয়াস মোমেন্ট টোমেন্ট আমি মেইনটেইন করতে পারব না,যখন মজা করতে ইচ্ছে করবে করব।আবার যখন হাসতে ইচ্ছে করবে তখন হাসব।”
“হয়েছে হয়েছে এবার থাম তোরা,মেঘ শীলাকে ঘরে নিয়ে যা।কোলে করে নিয়ে যাবি কিন্তু আর হিয়া ফোনটা নিয়ে ভিডিও কর।এমন একটা মুহুর্তের স্মৃতি হিসেবে রেখে দিব,পরে নিজেদের ছেলে মেয়েদেরও দেখাতে পারবি তোরা🤭।”
মামিমার কথা শুনে মেঘ ভাইয়া চোখ বড়বড় করে আপুর দিকে তাকায়।আপুও অবাক চোখে মেঘ ভাইয়ার দিকে তাকায় সেটা দেখে মামিমা বলে উঠে,,,
“এত অবাক হওয়ার কিছু নেই,এটা নিয়ম আমাদের বাড়ির।তাই তাড়াতাড়ি কাজ সার,আর হিয়া তকে ওখানে বসে থাকতে বলি নি এখানে আয়।”
অতঃপর মামিমার কথামত মেঘ ভাইয়া ইতস্তত করে আপুকে কোলে তুলে নেয়।আর আপু লজ্জায় লাল হয়ে ভাইয়ার গলা জড়িয়ে ধরে মাথা নিচু করে ফেলে।আর সবটা হিয়া ক্যামেরা বন্দি করে ফেলে,সব কাজ সম্পন্ন হলে আমি মামিমার কাছে গিয়ে বলি,,,
“মামিমা আমি এবার আসি,তুমি আপুকে একটু দেখো।”
“রাত ৯ টা বাজে,এত রাতে তুই বাড়িতে যাবি এখন!এত রাতে বাড়িতে গিয়ে কাজ নেই।আজ এখানেই থেকে যা,কাল সকালে চলে যাস।”
“মামিমা বাবা জানতে পারলে রাগ করবে,বাবা এখনও জানে না আপু আর ভাইয়ার বিয়ের কথা।বাবাকে বলেছি দুইবোন আজ রীতা আপু মানে আপুর বান্ধবীর বাসায় এসেছি।আর বাবা যদি আজ রাতের মধ্যে অন্য কারো থেকে বিয়ের কথাটা জানতে পারে তবে রাগ করবে খুব।তাই আমাকে তাড়াতাড়ি গিয়ে বাবাকে মেনেজ করতে হবে।”
“কাল করিস,এখন এত রাতে তকে একা ছাড়ব না আমি।তুই তোর বাবাকে ফোন দিয়ে বল তোরা কাল সকালে চলে আসবি।”
তারপর মামিমাকে শত জোড় করার পরও উনি যেতে দিবে না বলে দেয়।তাই বাধ্য হয়ে রয়ে যাই এখানে,আর বাড়িতেও ফোন করে জানিয়ে দিয়েছি।কিন্তু তারপরও বাবা চিন্তা করছে,বড় দুইটা মেয়ে বাড়ির বাইরে আছে চিন্তা করাটাই স্বাভাবিক।কিন্তু তারপরও বাবাকে মেনেজ করে নিয়েছি।আর এখানে আসার পর কাব্য ভাইয়ের কোন দেখাই মিলল না।বেচারা কী পালালো নাকি?কিন্তু নিলয় ভাইয়া ত বলেছে কাব্য ভাইকে একজন আড়ালে থেকে সবসময় ফলো করে।তবে কাব্য ভাই কই গেলো?দূর বাবা এতকিছু ভেবে লাভ নেই,আপুর বিয়ের ঝামেলাটা সারুক তারপর কাব্য ভাইয়ের ব্যাবস্থা করব।এখন খিদে পেয়েছে খুব,ত খেয়ে আসি।
_____________________________________
রাত ১ টা বেজে ১৩ মিনিট,সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।কিন্তু আমার মনে হচ্ছে কেউ আমার পাশে আছে,কেউ আমাকে গভীরভাবে দেখে চলেছে।কথাটা ভেবেই ভয়ে ভয়ে চোখ খুললাম,আর চোখ খুলে যেই না চিৎকার দিব ওমনি সাদাফ ভাই আমার মুখ চেপে ধরে।
“হুসসস,মুখ থেকে হাত সরাচ্ছি একদম চিল্লাবে না।”
আমি মাথা নেড়ে সায় জানালে সাদাফ ভাই আমার মুখ থেকে হাত সরায়।আর আমি উনার দিকে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠি,,,
“আপনি এত রাতে এখানে কী করছেন?আর ঘরেই বা আসলেন কীভাবে?”
“এখানে আসা কোন ব্যাপার না,আর এখানে এসেছি তোমাকে নিতে।চলো আমার সাথে!”
আমি উনার কথাশুনে অবাক হয়ে যাই,মানেহ!উনি এতরাতে আমাকে নিতে এসেছে কিন্তু কেন?
“আপনার মাথা ঠিক আছে?এতরাতে কী সব পাগলের প্রলাপ বকছেন?”
“আমার মাথা ঠিকই আছে আর কোন পাগলের প্রলাপও বলছি না।তাই কোন কথা না বলে চলো এখান থেকে।”
“আমি যাব না আপনার সাথে,আপনি এখান থেকে চলে যান নয়ত ভালো হবে না।”
“আর কী ভালো হওয়ার বাকি আছে!সিংহের গুহায় এসে পড়েছো আর এখানে নিজেকে সেফ মনে করে শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছিলে!তুমি কী ভুলে যাচ্ছো এখানে কাব্য আছে,আর যখন তখন তোমার বিপদ হতে পারে।”
“আমি কিছু ভুলি নি,আর আমাকে নিয়ে আপনার এত চিন্তা করতে হবে না।আমি নিজের রক্ষা নিজেই করতে পারব তাই আপনি আসুন।”
“আমার সাথে তুমিও যাবে।”
“আপনি কী আমাকে জোড় করছেন?”
“তোমার যদি মনে হয় জোড় করছি তবে তাই,এখন চলো আমার সাথে।”
“আমি যাব না আপনার সাথে,আপনি এখান থেকে যান নয়ত আমি কী করব নিজেও জানি না।”
“আমি ভালো করেই জানি কী করবে তুমি,ত আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।তোমাকে নিতে যখন এসেছি ত নিয়েই যাব।”
কথাটা বলে সাদাফ ভাই আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই আমায় কোলে তুলে নেয়।আমি ছোটার চেষ্টা করে চলেছি কিন্তু উনি আমার দুই হাত উনার এক হাত দিয়ে চেপে ধরেছে,যার জন্য হাত কোন কাজে লাগাতে পারছি না।তাই পা দিয়ে উনাকে আঘাত করতে থাকি,কিন্তু তাতে উনার বিন্দুমাত্র ভাবাবেগ দেখা গেলো না।উনি দিব্যি আগের মতই হেঁটে চলেছেন,তাই আমি এবার আর কোন উপায় না পেয়ে উনার নাকে জোরে একটা কামড় বসিয়ে দেই।আর তখনই উনি আমাকে ছেড়ে দেয়,আর আমি ধপাস করে নিচে পড়ে যাই।
#চলবে…