#ভালবাসি_শুধু_তোমায়_আমি
#পর্ব:১০
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
আরনিয়া চোখে পানি টলমল করছে। স্পর্শক কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরনিয়া কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে রুম থেকে চলে যায়। স্পর্শক ও আরনিয়ার পিছনে যায়। স্পর্শক বাইরে বের হওয়ার আগেই আরনিয়া গেইট দিয়ে বাড়ির বাইরে চলে যায়। আরনিয়া দৌড়াতে দৌড়াতে রাস্তায় চলে আসে পিছন থেকে একটা ট্রাক এসে আরনিয়াকে ধাক্কা মারে। আরনিয়া ছিটকে গিয়ে স্পর্শকের পায়ের কাছে পড়ে।
স্পর্শকের পৃথিবী থমকে যায়। আরনিয়া স্পর্শকের দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। সাদা উড়নাটা আরনিয়ার রক্তে লাল বর্ণ ধারণ করেছে। আরনিয়া শরীর রক্তে মাখামাখি হয়ে গেছে। স্পর্শক ধপ করে আরনিয়ার পাশে বসে পড়ে। স্পর্শক যেনো অনুভূতি শূন্য হয়ে গেছে। স্পর্শক রাস্তায় পড়ে থাকা আরনিয়ার নিস্তেজ দেহের দিকে তাকিয়ে আছে।
আরু এই আরু কথা বলো। এই আরু তুমি আমার সাথে কথা বলবে না। আমার ওপর তোমার এতো অভিমান যে আমার সাথে কথা বলবে না।
স্পর্শক আমাদের এখন আরনিয়াকে নিয়ে হসপিটালে যাওয়া উচিত।
আমার আরু কোথাও যাবে না। আমার আরু আমার সাথে থাকবে।
দেখ স্পর্শক এখন পাগলামি করিস না। এখন আরনিয়াকে নিয়ে হসপিটালে যাওয়া উচিত। নাহলে আরনিয়ার বড় কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে।
আমার আরুর কিচ্ছু হবে না।
স্পর্শক আরনিয়াকে কোলে তুলে নেয়। এর মাঝে এ্যাম্বোলেন্স চলে আসে অনু ফোন করেছিল।
__________________
স্পর্শক হসপিটালের করিডরে সিটে হেলান দিয়ে বসে আছে। কিছুক্ষণ আগেই আরনিয়াকে অপারেশন থ্রিয়েটারে নেওয়া হয়ছে। অনু এসে স্পর্শকের কাধে হাত রাখে। স্পর্শক অনুর হাত মুঠো করে করে কেঁদে দেয়।
অনু আমি আমার আরুর খেয়াল রাখতে পারলাম না। ও আমাকে ভুল বুঝে দূরে সরে গেলো।
অপারেশন থ্রিয়েটারে থেকে একটা নার্স বের হলো। স্পর্শক দৌড়ে নার্সটার কাছে গেলো।
আমার ওয়াইফ কেমন আছে?
আপনার ওয়াইফের অবস্থা সিরিয়াস। বাঁচার চান্স খুবই কম। আমরা আমাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করছি বাকিটা আল্লাহর হাতে।
কথাটা শোনার সাথে সাথেই স্পর্শক সেন্সলেস হয়ে পড়ে যেতে নিলে অনু ধরে ফেলে। কয়েকটা ওয়ার্ড বয় স্পর্শককে ধরে কেবিনে নিয়ে যায়। ডক্টর অনুর কথায় স্পর্শককে একটা ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দেয়।
তিন ঘন্টা পর
স্পর্শকের ঘুম ভাঙে। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারে সে একটা কেবিনে আছে। আরনিয়ার কথা মাথায় আসতেই। স্পর্শক তারাহুরা করে বেড থেকে নেমে রুম থেকে বের হতে যাবে তার আগেই কারোর সাথে ধাক্কা লাগে। তাকিয়ে দেখে অনু।
অনু আমার আরু কোথায়? এখন কেমন আছে? অপারেশন শেষ হয়ে গেছে? কী হলো? কথা বলছিস না কেনো?
তুই আমাকে কথা বলার সুযোগ দিয়েছিস? নিজেই তো বকবক করে যাচ্ছিস। আর এতোগুলো প্রশ্ন একসাথে করলে কোনটা রেখে কোনটার উত্তর দিবো।
অনুর বাচ্চা এতো কথা না বলে আমি যা জিঙ্গেস করছি তার উত্তর দে।
আরনিয়া অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে। আরনিয়ার আর কোনো বিপদ নেই এখন মোটামুটি সুস্থ আছে। কেবিনে দেওয়া হয়ছে। কিছুক্ষণের মাঝে ঙ্গান ফিরে আসবে। তুই তো আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি। এখন কেমন লাগছে তোর?
স্পর্শক অনুর কথা পাত্তা না দিয়ে পা বাড়ায় আরনিয়ার কেবিনের দিকে। কেবিনের দরজা ঠেলে কেবিনে প্রবেশ করে স্পর্শক।রুমে প্রবেশ করতেই আরনিয়াকে দেখে স্পর্শকের বুকটা ধক করে ওঠে। আরনিয়ার হাতে, পায়ে,
মাথায় ব্যান্ডেজ করা। স্পর্শক আরনিয়ার পাশে ধপ করে বসে পড়ে। আরনিয়ার একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়।
আরু তুমি কী করে তোমার স্পর্শককে ভুল বুঝতে পারলে? তুমি জানো না তোমার স্পর্শক অন্য কোনো মেয়েকে স্পর্শ তো অনেক দূরের কথা তার আরু ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসার কথাও কল্পনা করতে পারে না। আর অনুকে আমি নিজের বোন ছাড়া অন্য কিছু ভাবি না।
স্পর্শকের চোখ থেকে অঝর দ্বারায় পানি পড়ছে। স্পর্শক চোখ বন্ধ করে আরনিয়ার হাতে কয়েকটা ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়। গালে কারো হাতে স্পর্শ পেয়ে স্পর্শক চোখ খুলে। আরনিয়া তার দিকে ডেব ডেব করে তাকিয়ে আছে। স্পর্শক আরনিয়ার দিকে তাকাতেই আরনিয়া ফিক করে হেসে দেয়। স্পর্শক আরনিয়ার হাসি দেখে ভ্রু কুচকে তাকায়। ইশারায় জিঙ্গেস করে কী?
কাঁদলে তোমাকে বাচ্চাদের মতো লাগে।
কথাটা বলে আরনিয়া আবার হেসে দেয়। স্পর্শক বুঝতে পারছে আরনিয়ার হাসতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তবু তাকে হাসানোর জন্য হাসছে। স্পর্শক আরনিয়ার হাতটাকে আরো শক্ত করে মুঠোয় নিয়ে নেয়।
আরু তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো আজকে আমার জন্য তোমার এই অবস্থা।
ছি ছি স্পর্শক তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাইছো কেনো? ভুল তো আমি করেছি। ক্ষমা তো আমার চাওয়া উচিত। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি তোমাকে আর অনু আপুকে জড়িয়ে কী সব ভাবছিলাম? আমার বুঝা উচিত ছিল আমার স্পর্শক আমাকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসতে পারে না।
এই সব কথা বাদ দাও। এখন বলো তুমি কী খাবে?
তোমাকে। মানে চকলেট, আইসক্রিম আর ফুচকা খাবো।
স্পর্শক আরনিয়া মুখে এসব খাবারের নাম শুনে চোখ বড় বড় করে তাকায়ে। সে তো জানতো এই আরু এসব পছন্দ করে না যে করতো সে তো হারিয়ে গেছে। আর কোনোদিন ফিরে পাবে নাকি তা জানে না স্পর্শক।
আমার মামুনিটা কেমন আছে।
থমথমে পুরুষালি কন্ঠ শুনে দুজনেই বাকা চোখে দরজার দিকে তাকায়। এহসান খানকে দেখেই আরনিয়ার চোখে ধপ করে আগুন জ্বলে ওঠে। এহসান খান ভিতরে আসতে চাইলে বাধা দেয় আরনিয়া।
তুমি এক পাও কেবিনের ভিতরে রাখবে না।
কেনো মামুনি?
বলতে বলতে কয়েক পা এগিয়ে আসে এহসান খান। আরনিয়া স্পর্শককে উদ্দেশ্য করে বলে,
স্পর্শক এই লোকটাকে চলে যেতে বলো আমি এই লোকটাকে সহ্য করতে পারছি না। স্পর্শক এই লোকটাকে চলে যেতে বলো।
স্পর্শক এহসান খানকে চলে যেতে কী বলবে? তার তো মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছে না। স্পর্শক তো এখনো অবাকের রেশই কাটিয়ে উঠতে পারছে না। যে মেয়ে তার বাবা অন্ত প্রাণ সেই নাকি তার বাবাকে সহ্য করতে পারছে না।
চলবে……..