#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি
#গল্পঃভালবাসায়_তুমি_আমি_পর্ব_১
খান পেলেসে প্রায়ই একটা মেয়ের কান্না আর চিৎকারের আওয়াজ পাওয়া যায় কাউকে নির্মম ভাবে মারলে এরকম কান্নায় ভরা অসহায়ত্ব চিৎকার আর মুমূর্ষু আর্তনাথের ভরা কষ্টকর অত্যাচার হয় —,,,,যেমন টা আজকেও হয়েছে আজ তার ব্যাতিক্রম কিছু হয়নি একটু এদিক থেকে ওদিক হলেই অত্যাচার শুরু হয়ে যায়,,,, নীলা হাটুতে মুখ গুজে কান্না করছে ফুপিয়ে ফুপিয়ে অনেক কষ্ট আর ব্যাথায় সে শরীর টা নারাতে পারছে না আর একটু আগের কথা ভেবেই শিউরে ওঠে,,,,
ফ্লাসব্যাক—–
,,,,, নীলা সবে মাত্র কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছে একটু ভয়ে ভয়েই ঘরে ঢুকছিল কারন সে জানে যে তার কপালে অনেক দূর্ভোগ আছে তাই সে চুপিচুপি ঘরে ঢুকছিল আর তখনি তার ওপর আচমকা হামলা হয়—যেনো সে নীলার আসার অপেক্ষা করছিল আর মারার জন্য তৈরি হয়েই ছিলেন — তার সৎ মা রিশিকা ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই নীলার চুলের মুঠি টেনে ধরে মারতে থাকে — নীলা চিৎকার উঠে —অনেক জোরে থাপ্পর মারাই নীলার ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হয়ে গেছে — তারপর মেঝেতে ফেলে ঘার চেপে ধরে বলতে থাকে —
তোকে তো বারন করেছিলাম যে কাজ করে কলেজ যেতে পারলে কলেজ যাবি না হলে যাবি না — কেন গিয়েছিলি হ্যাঁ কাজ না করে —তকে তো বলেছি ঘরের কাজ গুলো করে যেতে তানা হলে তোর পড়াশোনা বন্ধ তোর কি সহজ কথা মাথায় যায় না —-নীলা শুধু চাপা আর্তনাথ করছে কথা বলতে পারছে না সে তার মুখ টা এমন ভাবে চেপে ধরে আছে যে কথায় বের হচ্ছে না তার —–মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে নীলাকে ধাক্কা দিয়ে পা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে গটগট করে চলে যায় —-দরজার আড়াল থেকে নীলার দাদি সবটা দেখেন কিন্তু কিচ্ছুটি বলতে পারেন না শুধু মুখে আঁচল চেপে কান্না করেন—- রিশিকা যেতেই দাদি এসে আমাকে তুলে ধরে ঘরে দিয়ে যায় আর মুখ পুরি পরে পরে মার খা আর কি করবি এটাই তো তোর কপাল—দাদি কাদতে কাদতে বাইরে চলে গেলো উনিই বা কি করবেন বয়স্ক মানুষ—
–বর্তমান
আমি এই বাড়ির অবৈধ সন্তান– ছোট বেলা থেকেই এই কথাটা বহু বার শুনেছে নীলা (নীলাঞ্জনা খান- সবাই তাকে নীলা বলেই ডাকে) সে এতোবার কথাটা শুনেছে যে আগে খারাপ লাগলেও তার এখন আর খারাপ লাগে না। তার নামের সাথে টাইটেল টা কেনো জেনো ব্যবহার করতে অসহ্য লাগে নীলার তাই সবাই তার নাম জিজ্ঞেস করলে শুধু নীলাঞ্জনা বলে।নীলাঞ্জনা খান বলে পরিচয় দিলেই তখনি তার নোংরা বাবার কথা মনে পরে —সে শুনেছে তার দাদি মানে তার বাবার মা শাহানা খান — এই যে তার বাবা ইমরান খান তার মা রুপার সাথে জোর করে শারিরীক সম্পর্কে গিয়েছিল আর তারপরেই আমি আমার মায়ের গর্ভে আসি,, এই কথা টা মা বাবাকে জানানোর পর বাবা আমাকে শিকার করলেও মা কে বিয়ে করতে চাননি।কারণ আমার মা ছিল একজন গরিব স্কুল মাস্টারের মেয়ে। প্রথমেই বলে দেই বাবা মা কে বিয়ে করবে না কিন্তু আমার দায়িত্ব নিবে।আমার জন্মের সময় মা মারা যায়। তারপর বাবা আমাকে তার কাছে রেখে মানুষ করে বিয়েও করে আমার সৎ মা আমাকে মানুষ করে তবে সেটা শুধু মাত্র বাবাকে দেখানোর জন্যই,,, এসব ভাবছে নীলাঞ্জনা বাড়ির চিলেকোঠার ঘরে বসে বসে,, সে সেখানেই থাকে এই বাড়িতে তাকে একমাত্র তার দাদি আর তার সৎ বোন মুনিয়া মুন্নি তাকে ভালোবাসে আর বাকিদের দু চোখের বিষ সে ,,, বাকিদের মানে মন্নির বড়ো বোন(জীনিয়া) তার মা -বাবাসহ—এমন সময় নীলাঞ্জনাকে ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢুকে তার সৎ মা রিশিকা চৌধুরী আর বলে,,
,
রিশিকা খানঃ সারাদিন ঘরে থাকবি নাকি নবাব নন্দিনির মতো ঘরের কাজ গুলো কে করবে শুনি,,নীলাঞ্জনা এতো টুকুও টনক নারালো না সে একি ভাবে বসে রইলো তার আজকে একটুও কাজ করতে মন চাইছে না— এতো মার তার ওপর সকাল থেকে।না খেয়ে থাকায় তার এতো টুকু শক্তিও নেই– আজ সে অনেক ক্লান্ত ।এসব ভাবছে নীলাঞ্জনা মনে মনে।
নীলাঞ্জনা কে চুপ করে থাকতে দেখে
রিশিকা খানঃ বললেন,,,
কিরে কথা কানে যাচ্ছে না– কাজ গুলো কি তোর মরা মা এসে করবে—আমি বেরবো তুই জানিস না — যাহ গিয়ে খাবার তৈরি কর
নীলাঞ্জনাঃ এই কথা গুলো নতুন না সব সময়ই সে এই ধরনের কথা শুনে অভ্যস্ত– আমার শরীর টা ভালো না –একটু আগেই তো কিভাবে মারলেন এখন এসেছেন কাজ করার জন্য ডাকতে —আমি খুব ক্লান্ত–কাশতে কাশতে আস্তে করে গোঙাতে গোঙাত বলে উঠে –বাড়িতে তো একটা সার্ভেন্ট রাখতে পারেন এতো টাকা মরার পর সাথে নিয়ে যাবেন নাকি–আজকে না হয় নিজেই খাবার টা বানিয়ে খেয়ে যান আমি পারবো না এক দমে সে সব কথা বলে ফেলে—
এদিকে রিশিকা তো রাগে গজগজ করছে
রিশিকা খানঃ তোর এতো বড় সাহস যে তুই আমার মুখের উপর কথা বলিস আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন এই বলে রিশকা নীলাকে মারতে যায় তখনি নীলা উঠে রিশিকার হাত মুচড়ে ধরে পিছনে দিকে—-
রিশিকা আহ করে চিৎকার করে উঠে–আর অবাক হয়ে যায় যে মেয়েটা তার হাতে একটু আগেও মার খেয়ে পরে ছিল সে কি না এখন আমার গায়ে হাত তুলেছে —যে কিনা একটু আগেও উঠে দাড়াতে পারছিল না আমাকে দেখে ভয়ে শিউরে থাকতো হঠাৎ এতো শক্তি পেলো কোথা থেকে —
নীলাঃ খবর দার আর কোনো সময় যদি গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টাও করেন তো কোন দিন তো আপনার সব কু-কর্মের কথা বলে দিব আপনার হাসবেন্ড কে — তো সাবধানে আমার গায়ে হাত দেওয়ার সাহস দেখাবেন তো আমার মুখ খুলে যাবে –অনেক সহ্য করেছি আপনার অত্যাচার আর না নীলা কাদতে কাদতে বলতে থাকে
রিশিকা খানঃ কি বলবি তুই হ্যা তোর কথা কেউই বিশ্বাস করবে না — কারন তোর কাছে আমার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ নেই —এই রিশিকা খান আমি –আমি যে এতো কাচা খেলয়ার না সেটা তো তুই জানিস —আমি যা বলবো তাই শুনবে তোর বাপ বুঝেছিস। ছাড় বলছি আমার হাত —আজ তোর বাপ আসুক দেখ তোর কি হাল করি–
নীলাঃ চুপ করে যায়–সত্যিই তো তার কাছে কোনো প্রমাণ নেই — তাই নীলা রিশিকার হাত ছেড়ে দেই—
রিশিকা হাত কচলাতে কচলাতে সেখান থেকে চলে যায় নীলার দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে থেকে–
নীলা সেখানেই ধপ করে বসে পরে আর ভাবতে থাকে আমি কি এই নরক থেকে কোনোদিন মুক্তি পাবো না আল্লাহ —-বলেই কাদতে থাকে—কাদতে কাদতে কখন যে ঘুমিয়ে পরে সে বুঝতে পারে না——
–
– ফজরের আজানের শব্দে ঘুম ভাঙলো নীলার ,,,সারা শরীর ব্যথায় নারাতে পারছি না — মাথাটা ঝিমঝিম করছে– তবুও সে অনেক কষ্টে উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজের অজু করে এসে নামাজ পড়ে নেই—- সে জানে যতো কিছুই হক না কেন তাকেই সব কাজ করতে হবে —তাছাড়া আজ তার কলেজে ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে তাকে যেতেই হবে তাই সে সময় নষ্ট না করে নিচে গিয়ে বাড়ির সব কাজ করে সবার জন্য ব্রেকফাস্ট তৈরি করে নেই — সে নিজের ঘরে গিয়ে তৈরি হতে চলে গেলো বাথ-রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে সাধারণ একটা থ্রি- পিচ পরে বের চুল গুলো বেনুনি করে এক পাশে রেখে ব্যাগ নিয়ে নিচে নেমে হালকা কিছু খেয়ে বেরোতে যাবে তখনি কারো ডাকে সে পিছনে তাকায়—-
চলবে কি —-