#ভালবাসার_ঘর।
#বিন্দু_মালীনি।
#১ম_পর্ব।
আজ আমার বাসর রাত।অনেক ঝড় তুফানের পর রণ আর আমি এক হলাম।পৃথিবীর সব সুখ যেন আমার আঁচলে।বউ সেজে বসে আছি আমি।বাসর ঘর টা ঠিক আমার মন মত সাজানো হয়েছে।
রজনীগন্ধা গাদা গোলাপ কোন কিছুরই কমতি নেই।
রণ ধীর পায়ে রুমে প্রবেশ করতেই আমার সারা গায়ে যেন কাঁটা দিয়ে উঠলো।
অবশেষে ভালবাসার মানুষটাকে স্বামী রুপে পাওয়ার কি যে আনন্দ তা ভাষায় প্রকাশ করার মত ক্ষমতা আমার নেই।
আমি চুপ করে বসে আছি মাথা নিচু করে।
_উহুম উহুম।
আমার কলিজাটা চুপ কেন?হাসি কই আমার বউটার মুখে?নাকি আমাকে পেয়ে সে খুশি না?
_কি যে বলোনা।পৃথিবীর সব থেকে সুখী ব্যক্তিটি আজ আমি।ভালবাসি।
_এত্ত গুলা ভালবাসি।
রণ আমার কপালে ওর ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে আমাকে শক্ত করে ওর বুকে জড়িয়ে নেয়।পূর্ণতা পায় দুটো আত্মা।
সকাল হতেই আমি গোসল করে এসে রণর মাথার কাছে বসে আছি।
রণ ঘুমাচ্ছে।কি মাসুম আমার রণ।ওর মুখ টা আমি ছুঁয়ে দিচ্ছি এ হাতে।চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।কপালে চুমু আঁকার সাথে সাথেই রণ চোখ খুলে ফেলে।
লজ্জায় আমি চলে যেতে থাকি,আর তখনই ওর কলিজা জুড়ানো হাসিটা দিয়ে ও আমার হাত টা টান দিয়ে ওর বুকে টেনে নেয়।
_কি হলো?আমার বউ টা চলে যাচ্ছে যে?
লজ্জা পাচ্ছে নাকি আমার বউটা?
_ছাড়োনা,যাই দেখি মা কি করছেন.
_মাকে হেল্প ভাবীরা করবেনে,তুমি আমার সেবা করো।
_কি সেবা করবো?
_এইতো যেমন কপালে,গালে,নাকে আদর।
_যাও তো,লজ্জা লাগেনা বুঝি?
_ওই মাইয়া,আমি তোমার স্বামী।পরপুরুষ নাকি যে লজ্জা লাগবে?
_আচ্ছা হাত টা ছাড়ো, আর চোখ বন্ধ করো,দিচ্ছি।
রণ হাত টা ছেড়ে চোখ বন্ধ করার সাথে সাথে আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে শাশুড়ি মায়ের কাছে রান্নাঘরে চলে যাই।
মা নাস্তা বানাচ্ছেন।
_মা আমি হেল্প করি?
_না মা,তুমি রণর কাছে যাও।এখনি রান্না ঘরে আসতে হবেনা।সবে মাত্র বিয়ে হলো,ঘুরোফেরো।তারপর রান্না বান্না আরো কত কি সব করা যাবে।
মা আমাকে রণর কাছে পাঠাচ্ছেন।
আমি তো লজ্জায় রণর সামনে যাবার কথাই ভাবতে পারছিনা।
আর সামনে যাবো কি করে।
এমনিতেই আমি লাজুক।কিন্তু রণকে যে এতটা লজ্জা পাবো কোন দিন তা আমি।কখনো ভাবিই নি।
আমি দাঁড়িয়ে আছি মায়ের সামনে।
_কি হলো?যাও রণর কাছে।
আর দেখি রণ এসে হাজির।
আমি রণকে দেখা মাত্রই দৌড়।
_কিরে কিছু লাগবে তোর?কিছু বলবি?
_না মা কিছু না।
এদিকে রণও আমার পিছু পিছু চলে আসে।
_ওই ছেমড়ি,আমার কাছ থেকে দূরে পালাচ্ছো কেন বার বার?
_যাও তো,আমার সামনে এসোনা এত।
_কি?আমার বউ এর সামনে আমি আসবোনা?
_না আসবেনা।
_কেন আসবোনা?
_লজ্জা পাই আমি।
এ কথা বলেই আমি দু হাত দিয়ে আমার মুখ আটকে ফেললাম।
_ওরে আমার লাজুকলতারে।
তাকাও এদিকে,আমার চোখের দিকে তাকাও।হাত সরাও।
_না আমি পারবোনা।আমার লজ্জা লাগে সত্যি।
_বিয়ের আগে এই লজ্জা কই ছিলো শুনি?
_জানিনা,
রণকে রেখেই আমি আবারো চলে এলাম রুম থেকে বাইরে।
রণ আর আমি সবার সাথে নাস্তা করে নিলাম।
হঠাৎ করে তাকিয়ে দেখি রণ আমার দিকে চেয়ে আছে।আর আমি মাথা টা নিচু করে ফেলি।বুঝিনা কেন এত লজ্জা পাচ্ছি আমি আজ ওকে দেখে।
নাস্তা করে ও বাসার বাইরে চলে যায়।
আর এদিকে ভাবীরা আমাকে জিজ্ঞেস করেন,
_বাসর রাত কেমন কাটলো শুনি?
_ধুর,জানিনা ভাবী।
আরেক ভাবী বললেন,
_দেখোনা ভাবী,লজ্জায় লাল হয়ে গেছে আমাদের নতুন বউ।
আমি চুপ করে আছি,কোন কথা বলছিনা।
_বিন্দু,
_হুম ভাবী?
_রণ তোমাকে বাসর ঘরে কি গিফট দিয়েছে দেখি।
_গিফট?
_হুম গিফট।
_কিছু দেয়নি তো।
_ওমা,সে কি।
_কিছুই দেয়নি?
_নাতো।
_বাসর ঘরে সব বর রাই তো তার বউকে কিছু না কিছু গিফট দেয়।
সেটা যা ই হোক।
মাকেও তো বাবা দিয়েছেন।
তোমার দুই ভাইয়াও আমাদের দুজনকে দিয়েছেন।
আর রণ তোমাকে কিছুই দেয়নি?
_না ভাবী।
_এ কেমন প্রেম তোমাদের?
আমার মুখ টা চুপসে গেলো।
সত্যিই তো,রণ আমাকে কেমন ভালবাসে যে একটা গিফট ও দিলোনা বাসর রাতে।আর এটা নাকি সব বর রাই দিয়ে থাকেন।
কিছু ক্ষণ পর বান্ধবীরা ফোন দিলো।
_কিরে,কেমন কাটলো বাসর?হুম হুম?
বিড়াল টা কে মেরেছিলো?জিজু নাকি তুই?
_যাহ!মুখে কিছু আটকায় না তাইনা?
_আচ্ছা এত লজ্জা পেতে হবেনা।
এবার বল,রণ জিজু বাসর ঘরে কি দিলো তোকে?
_কিছু না।
_কিইইই?কিচ্ছু না?এ কি করে সম্ভব?
জানিস তপন আমাকে কত কিছু দিয়েছিলো?এই দিয়েছিলো সেই দিয়েছিলো।আর তমার বরও তো দিয়েছে,রিয়ার বর দিয়েছে।
আর রণ তোকে কিচ্ছু দিলোনা।ভাবা যায় এগুলা?
_আচ্ছা আমি এখন রাখছি।
কিছু ক্ষণ পর রণ আসে বাসায়।আমি রণকে এড়িয়ে চলি।
বাসায় মেহমান এসেছে তাই আর রণও আমার কাছে আসার সুযোগ পায়নি।
রাতে যখন খাওয়া দাওয়া শেষে দুজনই ফ্রি।আমি ফ্রি হয়ে রুমে আসি শুতে।
বিছানা ঠিক করে আমি খাটে বসে আছি।
_কি করে আমার বউ টা?
আমার ভালবাসা টা।
_ওই একদম বউ বলবিনা আমায়,কিসের ভালবাসা আমি তোর?এহ আসছে আমার বউ।আসছে আমার ভালবাসা।
তুমি আমায় ভালই বাসোনা।
বাসলে কি আর..
_বাসলে কি আর কি?
_কিচ্ছুনা,
যাও এখান থেকে।যাও বলছি।
_উঁহু!কি হয়েছে না শুনে আমি যাবোনা।
_বলছি ওয়েট।আসো আমার সাথে।
আমি রণকে হাত ধরে নিয়ে গিয়ে বারান্দায় দাড় করালাম।আর আমি রুমে এসে দিলাম দরজা বন্ধ করে।
থাক এবার সারা রাত বারান্দায়।
এটা তোর শাস্তি।
আর আমি শান্তিতে ঘুমাই।
_বিন্দুউউউ,কলিজা আমার দরজা টা খোলো প্লিজ।
আজ না আমাদের ২য় বাসর?
_তুই বারান্দায় বসে বসে বাসর কর বান্দর ছেলে।
আমি ঘুমালাম।
চলবে?