#বোরখাওয়ালী
পর্বঃ ০৭
লেখাঃ Mst Liza
,
-দেখও তোমাকে কি আমি বারন করেছি?
আমি আস্তে করে ওর মুখের নিকাবটি খুলে দিলাম।ওকে দেখে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না।কারণ পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকা এতো সুন্দর অপ্সরী কিকরে হয়!! আল্লাহ মনে হয় জান্নাতের কোনও হুরের রূপ আমার মায়াবতীর চেহারাতে বসিয়ে দিয়েছে।স্যামলা বর্ণের মায়বী চোখদুটির পিঁছনে নিকাবের আড়ালে ঢেকে রাখা এই রূপ থাকবে তা আমি কল্পনাও করতে পারি নি।ওর হাতের পায়ের মোজাগুলো খুলে ফেললাম।এতো সুন্দর ফর্সা আমার মায়াবতী!! ওর হাতদুটো আমার ঠোঁঠের কাছে নিয়ে আলতো স্পর্শ দিতেই,,
-কি করছো কি আবির?
-এতো বছরের সব ভালোবাসা আজ উজার করে দেব তোমায়!
ও লজ্জায় আমার বুকে মুখ গুজে ফেলে,
-তুমি কি সত্যিই আমাকে এতোটা ভালোবাসো?
-বিশ্বাস হয় না?
-হুমম।আমিও তোমাকে ভালোবাসি।কিন্তু কিভাবে বলব বুঝতে পারছিলাম না।কাল রাতে আমি তোমাকে সেটাই বলতে গিয়েছিলাম।যানি বিয়ের আগে প্রেম ভালোবাসা বৈধ না।তাই তো তোমাকে বিয়ের কথা বলতে চাচ্ছিলাম।
-তুমি যানো আমাকে কতটা ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে?
-ভুল হয়েছে! চলো আমরা ২রাকাত নামাজ পড়ে স্রস্টার দরবারে শুকরিয়া আদায় করি!
আমি মাথা কাত করে সম্মতিসূচক উত্তর দিলাম।
তারপর আমরা দুজনে ২রাকাত নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম।নামাজ শেষে আলমারী থেকে আমি একটা প্যাকেট বের করলাম।ওর হাতে দিয়ে বললাম এটা তোমার জন্য।ও প্যাকেটটি খুলেই দেখে একটি লাল বেনারসি।
-আমি আমার বউটাকে আজ বউ সাজে দেখতে চাই।
-এখন শাড়ি পড়তে হবে?
-হুমম! এখন আমি তোমার স্বামী আমার সামনে তুমি শাড়ি পরে আসতেই পারো!
-সে তুমি ঠিক বলেছো! কিন্তু আমি তো শাড়ি কখনও পরি নি!
-পরনি আজ পরবে!
-তুমি বুঝতে পারছো না! আমি পারি না শাড়ি পরতে অন্য কোনও দি..
-উসসস! চুপপ! আমি তোমাকে আজই শাড়িতে দেখতে চাই।যাও এগুলো ওয়াশরুম থেকে পরে এসো।
(শাড়ির সাথে আর যেই কাপড়গুলো পরতে হয় ওর হাতে ধরিয়ে দিলাম)
-শাড়িটা কে পরিয়ে দেবে শুনি?
-আমি!
-তুমি শাড়ি পরাতে পারও নাকি?
-দেখি চেস্টা করে পারি কিনা!
ও চেন্জ করে আমার সামনে এসে,
-এখন কি করব?
শাড়িটা ওর হাতে ধরিয়ে দিলাম,
-তুমি পারো তো?
-এতো কথা বল কেন?
আমি নিজের হাতে শাড়ি পড়িয়ে ওকে আয়নার সামনে নিয়ে গেলাম।শাড়ির আচঁলটি ওর মাথাই তুলে দিয়ে বললাম,
-কত্ত সুন্দর লাগছে আমার বউটাকে!!
আয়নাতে ওর মুখটা দেখে মনে হলো লজ্জা পেয়েছে।আমি ওকে বললাম,
-ছাদে যাবে?
-এখন?
-হুমম।বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে এতোক্ষণে।
-গিয়ে কি হবে?
-ওই চাদঁটাকে যানাতে হবে না তুমি আমার হয়েছ?
ও মুচকি হেসে আমার হাত ধরে বলল চলো।তারপর আমরা দুজন ছাদে গিয়ে ওই আকাশটার দিকে তাকিয়ে অনেক্ষণ কথা বললাম।আখঁ খাবে?
-মানে?
-তুমি আখঁ খেতে ভালোবাসো তো তাই এনে রেখেছি! দাড়াও আনছি!
কিছুক্ষণ পর ওর হাতে একটা আখঁ ধরিয়ে দিলাম।তারপর আখঁ খেতে খেতে অনেকটা সময় কথা বলতে লাগলাম দুজনে।ও বলল আমার এখন খুব ঘুম পাচ্ছে আবির। আমি ওকে তখন কোলে তুলে নিয়ে রুমে চলে গেলাম।তারপর দরজাটা বন্ধ করে।নিজেকে ওর মাঝে বিলিয়ে দিলাম। এতোবছরে যতো অপেক্ষার সব অবসান ঘটল।আর আমার ভালোবাসা পেল পূর্ণতা।
দুদিন পরে আমরা বাড়ির সবাই মিলে আরির খালার বাসায় গেলাম।ওর খালা প্রথমে একটু রেগে ছিল ওর ওভাবে পালিয়ে যাওয়ায় ওনাকে অনেক অপদস্ত হতে হয়েছিল পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছ থেকে।কিন্তু বাবা-মা অনেক বোঝানোর পর উনি আমাদের মেনে নিয়েছে আর বিবাহিত জীবনের জন্য অনেক দোয়াও করেছে।
বাবা-মা আর রেখা চলে আসার পর অফিসের পাশেই একটি ফ্লাট ভাড়া নিয়ে সেখানে আমরা দুজন খুব সুন্দর ভাবে নিজেদের ছোট্ট একটি সংসার গুছিয়ে ফেলি।খুব অল্প সময়ে আমাকে আরি নিজের মনের মতো করে গড়ে তোলে।ওর সাথে থাকতে থাকতে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেও অভ্যাস্ত হয়ে গেছি।কোনও ওয়াক্ত নামাজ মিছ হলে কাজ্বা না পড়া অবদি বউ আমায় খেতে দেয় না।আমাকে বলে দাড়ি রাখলে নাকি আমাকে দেখতে খুব সুন্দর লাগবে।কি আর করার! বউকে খুশী করতে আমি দাড়ি রাখতেও শুরু করলাম।বিয়ের ছয়মাস পর একদিন আমি অফিসে থাকা অবস্থায় ফোন দিয়ে খুশীর সংবাদ দেয় আমি বাবা হতে চলেছি!! আমার ইচ্ছা হচ্ছিল তখনই আমার বউটার কাছে ছুট্টে চলে যায়।রাতে বাড়ি ফিরে ওকে কোলে তুলে ছাদে নিয়ে যায়।আর সেখানেই বাবুটা আসার পর কি কি করব দুজন আলোচনা করতে করতেই রাতটা কাটিয়ে দিই।মাকে খুশীর সংবাদটা দিলাম মাও খুশীতে আর থাকতে পারলো না।দুইদিন পরই মা এসে আরিকে খুলনায় নিয়ে যাই।এই সময়ে তো মেয়েদের অনেক যত্নের প্রয়োজন। আমি থাকি সারাদিন অফিসে ওর যত্ন ঠিক মতো নিতে পারব না।তবে দিনের মধ্যে সাত,আট বার সময় করে ফোনে খোঁজ নিই।রাতে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়ি।আর ঘুম ভাঙে ফজরে সময়, ওর ফোনের রিংটনের শব্দে।মায়ের সাথে যখনই কথা হয় ও সময়মত খেল কিনা।নিজের যত্ন নিল কিনা এসব বারবার জানতে চাই বলে মা হয়তো রেগে যাই আমার উপর।কিন্তু কি করব! খুব ভালোবাসি যে ওকে।আজ আমার বিয়ের এক বছর পাচঁ মাস পূর্ণ হলো।আর আজ আমার একটা ছোট্ট ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে।আরিকে সবসময় বলতাম আমার মেয়ে হলে তোমার মতোই বোরখাওয়ালী বানাবো।আজ আমি খুব খুশী অফিসের থেকে ছুটি নিয়ে রওয়া হয়েছি খুলনার উদ্দেশ্য।
,
,
,
১৯ বছর পর,,,,
,
,
ডাইয়েরীর পাতাগুলো বুজিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরে অঝোর নয়তে কাদঁতে থাকে আয়াত।আয়াতের কস্টে দম বন্ধ হয়ে আসছে।
বাপি এত্তো ভালোবাসতে তুমি মাম্মামকে? যানো মাম্মামও তোমাকে খুব ভালোবাসে।এখনও তোমার এই ডাইয়েরীটা না জড়িয়ে ধরে রাতে ঘুমাতেই পারে না।আমি অনেক চেস্টা করেছি মাম্মাম আমাকে ডাইয়েরীটা ছুঁতেও দেই নি।বলছে অন্যের ডাইয়েরীতে হাত দেওয়া উচিৎ নয়।আজ মাম্মামকে লুকিয়ে পড়েছি তারজন্য তওবা! তুমি সত্যিই খুব ভালো বাপি।আজ মনে হচ্ছে এই ডাইয়েরীর প্রতিটি পাতার ভাজে ভাজে আমার বাপি মিশে আছে।যানো বাপি যখন আমি প্রাইমারিতে পড়তাম তখন স্কুল ছুটি হলে সবার বাবা তাদের নিতে আসত।আর আমার তখন তোমাকে খুব মনে পরত।হাই স্কুলে প্রেরেন্স ডে’তে বাবা-মাকে নিয়ে টিচারর্সরা মিটিং করত।সবাই তাদের বাবা-মাকে সাথে করে আনত।আমার ওদেরকে বাবার আদর খেতে দেখে তখন খুব মন খারাপ হতো।আজ আমি কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটিতে উঠেছি।অনেক বড় হয়ে গেছি।তবুও মাম্মাম বলে আমি নাকি এখনও শিশু!!
মামনী ভার্সিটির প্রথম দিনে লেট হয়ে যাবে তো তারাতারি আসো।আয়াতকে ডাকছে তার মা।
আসছি মাম্মাম! নিকাবটা বাধঁলেই হয়ে যায়।
মাম্মাম আমি রেডি।পিঁছনের থেকে জড়িয়ে ধরে আয়াত তার মাকে বলল।
এইতো সোনা মেয়ে আমার সাবধানে যাবে আর কারও সাথে দুস্টুমি করবে না কিন্তু।একদম লক্ষী মেয়ের মতোন থাকবে।আয়াতের মাথায় হাত রেখে বলে।
মাম্মাম আজ আমার বাপিকে খুব মনে পরছে।আমাকে একটাবার বাপির ছবি দেখাবে?
কথাটা শুনে আরিয়ার বুকের ভেতরটা ব্যাথায় চিনচিন করে ওঠে।ও চাই না আয়াত তার বাবার সত্যিটা যানুক।
তোমার বাপি বেচেঁ নেই।তুমি যানো তো মৃত ব্যাক্তির ছবি দেখতে হয় না! তাই তোমার বাপির কোনও ছবিই আমরা রাখি নি।বলে বোঝায় আয়াতকে।
সরি মাম্মাম। তোমাকে বাপির কথা মনে করিয়ে খুব কস্ট দিয়ে ফেললাম। এই প্রমিছ আর কক্ষনও এমটা করবো না।
দাদুভাই কত্তক্ষণ বাইরে দাড়িয়ে থাকবো তারাতারি এসো।তোমাকে ভার্সিটি ছেড়ে দিয়ে যে আমাকে ফ্যাক্টেরি যেতে হবে।আয়াতের দাদু বলল।
হ্যাঁ হ্যাঁ যাবে দাদুভাই তোমার দাদু সেই কতোক্ষণ হলো রিক্সা নিয়ে দাড়িয়ে আছে বাইরে।আয়াতের দাদি কথাটি বলে আয়াতকে সাথে নিয়ে এগিয়ে দিতে গেল।
আয়াত চলে যাওয়ার পরই আরিয়া দৌড়ে নিজের ঘড়ে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দেই।আর আবিরের ডাইয়েরীটা নিজের বাহুতে চেপে ধরে চিৎকার করে কাদঁতে থাকে।কেন আবির, তুমি কেন এমনটা করলে আমার সাথে? আজ আমি চাইলেও তোমার মেয়েকে সত্যিটা বলতে পারছি না।আমি চাইনা তোমার মেয়ে তোমাকে ঘৃণা করুক।হোক না তোমার ডাইয়েরীর প্রত্যেকটা আবেগ মিথ্যা। তবুও আমি তো শুধু তোমায় ভালোবেসেছি।আর তোমার এই ডাইয়েরীর আবেগমাখা শব্দ চয়নগুলো বিশ্বাস করতে চেয়েছি।তুমি খুব ভালো থাকো।তুমি সুখে থাকলেই যে আমি সুখী।
চলবে…..