#বেলা_শেষে। [২৪]
-আরে এটা দিগন্ত ভাইয়ের এক্স ওয়াইফ না। হাই কিউটি এত দিন কোথায় ছিলে তুমি?? দিগন্ত ভাই ছেড়ে দিয়েছে বলে কি কলেজে আসাও বন্ধ করে দিবে নাকি। আমরা আছি না, আমাদের দিকেও তো নজর দিতে পারো। কথাগুলো বলে অট্টহাসিতে ভেঙে পড়লো কয়েকটা যুবক।
মাথা নিচু করে একমনে হেটে ক্লাসের দিকেও যাচ্ছিল ভূমিকা। পথিমধ্যে কয়েকটা যুবক ভূমিকাকে ইঙ্গিত করে কথাগুলো বলল।যুবকগুলোর কথা শুনে থামকে দাঁড়ায় ভূমিকা। হাতে মুঠি শক্তকরে চেপে ধরে পিছনের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। যুবকগুলোকে কিছু বলবে এমন সময়, সেখান থেকে আরেকটা যুবক বলে উঠে,
-দিগন্ত ভাই তোমাকে পাত্তা দেয়নি তাইনা। ইশ এমন সুইট কিউট বউকে কেও পাত্তা না দিয়ে কি করে থাকতে পারে। ভাইটা সত্যি বোকা। আমাদের কাছে আসবে, আমরা তোমাকে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখবো। কখনো ছুড়ে ফেলে দিবো না। আমরা দয়ালু কি-না।
যুবকটা কথা শেষ হতে না হতেই তার গালে সজোরে চড় বসিয়ে দিলো ভূমিকা। চোখমুখ শক্ত করে বলল,
-কি বললি তুই, আমাকে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখবি। ছুড়ে ফেলে দিবি না। তোরা অনেক দয়ালু। শোন ভূমিকা করো দয়া নেয় না। তোদের মতো ছেলেকে ঘৃনা করে ভূমিকা। থুঁথুঁ দেয় তাদের মুখে। তোরা আমাকে দয়া করবি, বলেই আরেকটা চয় বসিয়ে দেয় যুবকটার গালে। গালে হাত রেখে অগ্নিমূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে যুবকটি।আর তার বাকি বন্ধুরা তেড়ে আসছে ভূমিকার দিকে। ভূমিকাও কম কিসে সেও নিজেকে প্রস্তুুত করতে ব্যস্ত হয়ে পরছে এদের সাথে লড়াই করার জন্যে। এমন সময় পিছন থেকে পুরুষনালী কন্ঠ শুনতে পেলে ভূমিকা,
-তোতাপাখিকে ডিস্টার্ব করছিস কেন?? ইটস্ গেট্টিং টু ব্যাড। তোরা যার যার ক্লাসে যা।
পিছনের দিকে ঘুরে তাকায় ভূমিকা। সামনে থাকা ছেলেকে দেখে ভ্রু কুচকিয়ে তাকায় সে। এ তো সেই ছেলে। যে দিন ভূমিকা সবুজ ড্রেস পরে কলেজে এসেছিলো সেদিন এই ছেলেটা ওকে তোতাপাখি বলে সম্বোধন করেছিল।
-আপনি এখানে???
-তোরা এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছিস। তোদের চলে যেতে বললাম না। ছেলেটার কথা শুনে সেখানে উপস্থিত সকলে এক এক করে চলে যায়। সবার চলে যাওয়ার পরেই এখানে উপস্থিত হয় মাহিন। মাহিনকে দেখে ভূমিকা চোখ মুখে রাগ উপচে পড়ছে। হাতের মুঠি শক্তকরে ক্রোধান্বিত হয়ে মাহিনের দিকে তাকায় সে। এই ছেলেটা আবার কোন মতলবে এখানে এসেছে। সেদিনের মার খেয়েও শিক্ষা হয়নি তার। আবার এসেছে। নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ভূমিকার মাথায়। কিন্ত ভূমিকার সেই ভাবনার সমাপ্তি ঘটিয়ে মাহিন বলে উঠলো,
-আই এম সরি ভূমিকা। জানি তোমার সাথে অনেক খারাপ আচরন করছি। ক্ষমা পাওয়ার অযোগ্য আমি, তবুও বলছি যদি পারো আমাকে মাফ করে দিও।
মাহিনের কথা শুনে ভ্রু কুচকিয়ে কপালে কয়েকটা ভাজ ফেলে ভূমিকা। এটা আবার কোন মাহিন। মাহিনের এই রুম সম্পূর্ণ অচেনা তার কাছে।
-কি হলো আমাকে মাফ করবে না ভূমিকা। অপর ছেলেটার কাদে হাত রেখে বলল মাহিন। ছেলেটা মাহিনের দিকে এক পলক তাকিয়ে ভূমিকার দিকে তাকালো। তারপর বলল,
-মাহিন ভাইকে এবারের মতো মাফ করে দাওনা তোতাপাখি।
-এই মিস্টার পাতি কাক আপনার ভাইকে বলে দিন, নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হওয়ার মতো শাস্তি আর কি হতে পারে। যারা অনুতপ্ত হয় তারাই বুঝতে পারে সে ঠিক কত বড় ভুল করেছে। বলেই সেখান থেকে চলে যায় ভূমিকা। মাহিনের দিকে সে ফিরেও তাকায়নি।
-টোপ তো গিললো না। ছুঁড়ে ফেলে দিলো ভাই।
-গিলে নি তো কি হয়েছে গিলবে। পৈশাচিক হাসি দিলো মাহিন।
ক্যান্টিনে বসে এতক্ষণ ভূমিকার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো দেখছিল আরাভ। প্রথম যুবকগুলোকে সে স্বাভাকিক ধরে নিলেও মাহিনকে দেখেই মাথায় রক্ত উঠে যায় আরাভের। পানির বোতল এতটা শক্তকরে ধরেছে যে সেটা কচমচ শব্দ করে বলছে,
-আমার উপর কেন রাগ ঝাড়ছিস। যা ওই মাহিনকে ধর। ওকে মার এইভাবে। আমার তো কষ্ট হচ্ছে খুব। আমাকে কেন কষ্ট দিচ্ছিস। আমি তোর কি ক্ষতি করেছি।
বোতলের কথা কানে তুলল না আরাভ। সে বোতলটাকে সজোরে ছুঁড়ে মারলো। ক্যান্টিনে উপস্থিত সকলে তাকিয়ে আছে আরাভের দিকে। আরাভের এই রাগের সাথে সবার আগে থেকেই পরিচয়। আরাভ যখন এই কলেজে পড়তো কখন কারনে অকারনে রেগে যেত সে।
ক্যান্টিন থেকে বেড়িয়ে সোজা গাড়ির কাছে চলে আসে সে। তারপর কাকে যেন কল করে কথা বলতে বলতে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যায় সে।
রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে গাড়ির জন্যে অপেক্ষা করছে ভূমিকা আর নিতু। এমন সময় কতিপয় যুবক এসে ভূমিকার পা জড়িয়ে বসে পড়লো। ঘটনার আকস্মিক কিছুই বোধগম্য হলো না ভূমিকার। সে নির্বিকায় তাকিয়ে রইলো যুবকগুলোর দিকে। এরা তো সে যুবক যারা সকাল বেলায় ভূমিকাকে বাজে অফার করছিল। এদের এই অবস্থা হলো কি করে। এক্সিডেন্ট হয়েছে কি?? না এক্সিডেন্ট হলে এরা ভূমিকার কাছে কেন ক্ষমা চাইবে। তাহলে এদের আবার হলোটা কি??
-এই কি করছেন আপনারা, আমার পা ছারুন। ছাড়ুন বলছি। নিজের পা ছাঁড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল ভূমিকা।
-আগে আমাগো মাফ করেন আফা। আমার আর কোনদিন আপনারে কোন খারাপ কথা বলবো না। কান্না মিশ্রিত সুরে বলল এক যুবক।
-শুধু আপনারে কেন? কোন মাইয়ারেই খারাপ কথা বলুৃম না। আপনে আমাগো মাফ কইরা দেন। [অপর একজন]
-আগে আমার পা ছাড়ুন। আর আপনাদের এই অবস্থা হলো কি করে। সকাল বেলায় তো ভালোই তরতাজা টাটকা দেখলাম। এখনি চেহারায় এমন শুটকি শুটকি ভাব কেন? আর আপনাদের সকলের দম কই গেল।
-আপা আপনে আমাগো মারেন কাটেন তাও কিছু বলুম না। আরাভ ভাইয়ের হাত থেকে বাচান আমাগো।
যুবকগুলোর মুখে আরাভের নাম শুনে ভ্রু কুচকালো ভূমিকা। তাদের দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে অবাকের সুরে বলল,
-আরাভ স্যার আপনাদের মেরেছে।
-হুম। ভাই আজ কলেজে এসেছিল এটা না দেখেই আমরা আপনাকে বিরক্ত করেছি। আমাদের মাফ কইরা দেন আপা।
-ঠিক আছে আপনারা আমার পা ছেড়ে উঠে দাঁড়ান। অতঃপর ভূমিাকার কথায় ছেলেগুলো ভূমিকার পায়ের কাছ থেকে উঠে দাঁড়ায়। ভূমিকা আবারও বলে,
-আরাভ স্যারের মতো একজন বড় ভাই থাকতে আপনারা পথভ্রষ্ট হন কি ভাবে। স্যারকে তো আপনারা বড় ভাই মানেন। তাই বলছি, স্যারের কাছ থেকে শিখে নিবেন কি ভাবে মেয়েদের সম্মান করতে হয়। আর হ্যাঁ কোন অসহায় মেয়ে দেখলে তাদের সুযোগ না নিয়ে, তাদের দায়িত্ব নিতে শিখুন। তাতে দেশ ও জনগণ সকলেরই মঙ্গল।
কিছুক্ষণ পর একটা রিক্সা আসলো। ভূমিকা আর নিতু দু-জনেই সেই রিক্সায় উঠে বসলো। রিক্সাওয়ালা রিক্সা চালাতে লাগলো।
-ছেলেগুলো তোকে মন্দ কথা বলেছে তাতে আরাভ স্যারের কি। আরাভ স্যার কেন ওদের মারলো। নিতুর কথা শুনে একটু নড়েচড়ে বসলো ভূমিকা তারপর বলল,
-আরাভ স্যার তো এমনি। সবার বিপদেআপদে ওনি পাশে এসে দাঁড়ান। মনে নেই তোর নয়না আপুর এক কথায় আমাকে যে চাকরি দেওয়ার কথা। অবলার মতো মাথা নাড়ালো নিতু। মনে হয় সে আরো কিছু বলতে চাচ্ছে। বাট এখন সে বলতে পারছে না।
তারপর দু-দিন কলেজে আসেনি ভূমিকা। সেই দু-দিন অফিসে কাজ করেছে সে। দু-দিন পর যখন কলেজে আসলো ভূমিকা, তখন সকলে ভূমিকাকে দেখে মাথা নিচু করে হাটে। কারো বাজে নজর বাজে কথা কোনটারই প্রভাব ফেলে না ভূমিকার উপর। কেও কেও ভূমিকাকে সালাম ও দেয়। দুই-দিনে সকলের এমন পরিবর্তনের কারন জানা নেই ভূমিকার। কেন সকলের মাঝে এমন পরিবর্তন হলো সেটা জানে না ভূমিকা। তবে যা হয়েছে সেরা ভালোই হয়েছে। এবার অন্ততপক্ষে শান্তি মতো কলেজে এসে পড়াশুনা করা যাবে। এতকিছুর মধ্যে মাহিনের কোন পরিবর্তন নেই। সে কাঁঠালেরআঠার মতো ভূমিকার পিছনে লেগে আছে।ভূমিকার সাথে বন্ধুত্ব করার জন্যে। তবে শেষ পর্যন্ত ভূমিকা মাহিনের সাথে বন্ধুত্ব করবে কি??
চলবে,,,,,,,,
#মাহফুজা_আফরিন_শিখা। [লেখনিতে]