বেলাশেষে part_5
#adrin_anisha
.
“জানিস এই পৃথিবীতে ভালো মানুষেরাই সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায়, সবাই তাদের বোকার খেতাব দিয়ে দেয়। আসলেই কি তারা বোকা হয়? না রে, বোকা তো তারা হয় যারা ওদের বোকা ভাবে। আজকাল দূর্বলের উপর আঘাত করতে পারলে তাকে নেতার খেতাব দেয়া হয়। একজন সৎ মনের মানুষকে সবার সামনে ছোট করতে পারলে তাকে সবাই স্মার্ট / বুদ্ধিমানের খেতাব দেয়। কারো চোখে জল আনতে পারলে তাকে চালাকের খেতাব দেয়া হয়। আসলে কি সত্যিই তার সেই খেতাব গুলোর যোগ্য হয়?
নাহ হয় না রে, আসলে সাহসী সে যে অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে, চালাক সে যে অন্যের জুলম সহ্য করেও তার কোনো ক্ষতি করে না, নেতা সে যে দাপট দেখানো শাসকের হাত থেকে দূর্বলকে রক্ষা করে। আর স্মার্ট জানিস কারা? তারা যারা অন্যের চোখের জল মুছতে জানে, সেই মুখে হাসি ফোটাতে জানে”
সুভা একমনে কথা গুলো বলছে, আর মেঘা অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবছে সে তো শুধু জিজ্ঞেস করেছিল ওই ছেলেটার সাথে সুভার কি কথা হয়েছে, আর সেখানে কি না সুভা পুরো ফিলোসোফি ঝেরে দিল। মেঘা আস্তে করে চোখ বড় বড় করে সুভার কাধে হাত রাখল সুভা চমকে গিয়ে মেঘার দিকে তাকালো, যেন এতক্ষন অন্য দুনিয়াতে ছিল সে। আর তার চেয়েও বেশি চমকে উঠলো মেঘা। লাফ দিয়ে খাটের অন্য পাশে চলে যায় সে। তারপর আস্তে করে জিজ্ঞেস করে,
” দোস্ত তুই ঠিক আছিস তো? ভূত ভর করেনিতো তোর উপর” সাথে সাথে সুভা একটা রাগী লুক দিলো। আর মেঘাও ফিক করে হেসে দিল। হাসতে হাসতে লুটুপুটি খাচ্ছে মেঘা।। আর তা দেখে রাগে ফুসতে থাকল সুভা।
” এজন্যই তোদের বাঙালিদের কিছু বলতে নেই, ভালো কথা বললেও দোষ”
” ওহ তুই তো ইংরেজ তাই না, ইংরেজ চলে গেছে কিন্তু তোকে রেখে গেছে”
” চুপ করতো। যাহ এখন আমি ফ্রেশ হয়ে আসি”
.
পরদিন কলেজে যাওয়ার সময় সুভা চারদিকে তাকিয়ে শুভ্রকে খুঁজতে লাগল। মেঘা কিছুক্ষন সেটা লক্ষ্য করে জিজ্ঞেস করল,
” কি রে আজ কি কারো আসার কথা আছে নাকি?”
চমকে উঠলো সুভা।
” ক_ক_কই না তো। কে আসবে আবার?”
সুভা তাড়াতাড়ি করে সামনের দিকে তাকিয়ে হাটতে লাগল। মেঘাও মুচকি হাসি দিয়ে পেছন পেছন গেল। মেঘার নজর শুধু সুভার দিকেই ছিল তাই আশেপাশের খবর নেই তার। তখনই কারো সাথে ভয়ংকর ধাক্কা খেল সে। সে আর কেও না বরং শুভ্র নিজে। মেঘা শুভ্রর পায়ের উপর দাঁড়িয়ে লাফাতে শুরু করেছে, কারন সে কপালে ব্যাথা পেয়েছে। আর শুভ্র ও সেদিকে চিৎকার করেই যাচ্ছে। কিন্তু মেঘার সেদিকে খেয়াল নেই সে তার ব্যাথা নিয়েই ব্যাস্ত৷ তখনই সুভা এসে মেঘাকে একটান দিয়ে সরিয়ে দিল। মেঘা এতক্ষনে বুঝলো সে কোথায় লাফাচ্ছিল। তবুও তাকে দেখে মনে হলো না তার একটুও সেদিকে খেয়াল আছে। সে উল্টো শুভ্রকে ধমক দিতে শুরু করল।
” দেখে চলতে পারেন না? চোখ কি কপালে থাকে? উফফ, মাথাটা পুরো ফেটে গেছে মনে হয়। ”
” আই এম রিয়েলি সরি, আসলে আমি বুঝতে পারিনি। “”
” না তা বুঝবেন কেন? মেয়েদের সাথে ধাক্কা খেতে তো ভালই লাগে। আর পরে একটা সরি বলে দিলেই হলো। যত্তসব ”
মেঘা কপালে হাত দিয়ে চলে যেতে চাইলে সুভা বলে,
” তুই ওকে কেন বকছিস? দোষ তো তোর ছিল। তুই দেখতে পারলি না? তুই তো আমার দিকেই তাকিয়ে হাটছিলি, তোর চোখ দুটো কি আমাকে দেখার জন্য দিছে? নাকি চোখ ব্যাবহার করতে জানিস না”
সুভার কথায় মেঘার প্রচুর অভিমান হলো। কারণ সে ভেবেছিল সুভা তার পক্ষ নিয়ে কথা বলবে। মনে মনে ভাবল
” আজ এই ছেলেটার জন্য সুভা আমাকে এভাবে বকা দিল, তাও এভাবে একটা অজানা অচেনা ছেলের সামনে। এই ছেলেটা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে ছিনিয়ে নিচ্ছে। একে তো আমি কিছুতেই ছাড়ব না।” মেঘার চোখের জল নামবে নামবে করছে, কিন্তু কোনোমতো সে আটকে রেখেছে। হঠাৎই শুভ্রর দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো মেঘা, আর বলল ” i hate you, i just hate you”
বলেই দৌড়ে চলে গেল মেঘা। শুভ্র অনেকটা ঘাবড়ে যায়। কারণ মেঘার কথার চেয়েও মেঘার দৃষ্টিটা আরো বেশি ভয়ানক ছিল। যেন এখনই কাওকে খুন করে ফেলবে সে।
শুভ্র দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেঘার চলে যাওয়া দেখছে আর আকাশ-পাতাল ভেবে যাচ্ছে। তখনই সুভা এসে বলল,
” আই এম রিয়েলি সরি। ওর হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি। আসলে ও অনেক ছেলেমানুষ। তাই সবার সাথেই এভাবে না বুঝে কথা বলে। কাকে কি বলছে সেটাও বোঝে না। ”
” আরে না না। আপনি শুধুশুধুই এতো বাড়াবাড়ি করলেন। দেখুন গিয়ে এখনি, অনেক কষ্ট পেয়েছে মনে হয়। ”
” হ্যাঁ যাচ্ছি, তার আগে বলুন আপনার পায়ে বেশি লাগেনি তো?”
” আরে না, এ আর এমন কি। আমাদের ছেলেদের এতো সহজে ব্যাথা লাগে না”
শুভ্রর কথায় মুচকি হাসলো সুভা,
” তাই নাকি?”
” হুম, একদম”
” আচ্ছা যাই তাহলে আমি, ওই পাগলিটা না হলে আবার কি করবে কে জানে?”
.
সুভা সারা কলেজ খুঁজে কোথাও মেঘাকে পেল না। অনেক চিন্তায় পড়ে গেছে। মেয়েটা যে পরিমাণ রাগী, কোথাও কি ধ্বংস করছে কে জানে?
.
.
.
.
চলবে……
পার্ট ৪
https://m.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=911130492651004