বেলাশেষে part_4
#adrin_anisha
.
আমি ডাকছিলাম আপনাকে আপনি শুনতে পাননি নাকি? আর এভাবে চলে যাচ্ছেন কেন? আর কাদছেন ই বা কেন?
সুভা রেগে গিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগল,
” কি ভাবেন কি আপনি নিজেকে? খুব মহান আপনি? আমাকে এভাবে লজ্জা দেয়াটা কি খুব দরকার ছিল?” আবার কাদতে লাগল সুভা। শুভ্র অনেকটা ঘাবড়ে গেল, বুঝতে পারল না ঠিক কি হয়েছে? আর কিভাবে সে সুভাকে লজ্জা দিল সেটাও মাথায় ঢুকছেনা শুভ্রর৷ তবুও ভাবল হয়তো ওরই কোনো ভূল ছিল, তাই নিজেই ক্ষমা চেয়ে নিল।
” সরি, আমি আসলে ঠিক বুঝতে পারিনি আপনার খারাপ লাগবে, কিন্তু তবুও আমার জন্য আপনি কষ্ট পেয়েছেন তাই আমি সত্যি খুব দুঃখিত। আমায় ক্ষমা করে দিন প্লিজ।”
সুভা এবার চোখ মুখে হাসতে লাগল। শুভ্রর মাথায় কিছুই ঢুকলো না। মনে মনে ভাবল,
” এই মেয়েটা এতো রহস্যময়ী কেন? একটু আগেই কোনো এক অজানা কারণে কান্না করছিল, আর এখন এভাবে হাসছে। ব্যাপার টা কি?”
” আমি পাগল হয়ে গেছি কিনা সেটাই ভাবছেন তো? নাহ পাগল হইনি, জাস্ট মুগ্ধ হয়ে গেছি আপনার মহানতা দেখে। যেখানে আপনাকে ভূল বোঝার জন্য আমার সরি বলা দরকার সেখানে কোনো দোষ না থাকা সত্ত্বেও আপনিই ক্ষমা চাইছেন। আজকাল তো ইগোর জন্য মানুষ ভূল করেও সরি বলেনা, আর এভাবেই শেষ হয়ে যায় কতো সম্পর্ক, আর সেখানে আপনি নিজের ভূল না বুঝেই সরি বলছেন? সত্যি, আপনাকে যতই দেখছি মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। ”
শুভ্র কিছুটা লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকাতে লাগল,
” আসলে আমি অনেক বোকা তাই না? কি করব বলুন আমি তো এমন ই। এমন থাকতেই ভালো লাগে”
সুভা শুভ্রকে ধমক দিয়ে বলে,
” চুপ, একদম চুপ। কে বলল আপনি বোকা? আপনাকে যারা বোকা বলবে তারাই প্রকৃত বোকা। আপকি কি জানেন আপনার প্রতিটা কাজ ইহকালের জন্য নয়, পরকালের জন্য। আজকাল মানুষ ইহকাল নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত যে, পরকাল নিয়ে ভাবার সময়টাও নেই। আর এরকম একটা যুগে আপনার মতো মানুষের সাথে কথা বলাটাও আমার সৌভাগ্য মনে হচ্ছে। আচ্ছা, সব তো ঠিক আছে, কিন্তু একটা জিনিস বুঝলাম না, আজকে স্যার যখন জিজ্ঞেস করলেন তোমার আসতে দেরী হয়েছে কেন তখন বললেন না কেন?”
শুভ্র বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে বলল,
” আসলে এর পেছনে ২ টা কারণ আছে, এক তো, আমি যদি সত্যিটা বলতাম তাহলে বেশির ভাগই বিশ্বাস করত না, বলতো আমি চাপা মারছি। আর যারা বিশ্বাস করত তারা ভাবতো আমি শো-অফ করছি।
আর ২য় কারণ টা হচ্ছে দান বা উপকার যতটা গোপনে করা যায় ততই বেশি আল্লাহ তায়ালা খুশি হন। উনি তো বলেছেন এমন ভাবে দান করতে যেন আমার ডান হাত দিয়ে দান করলে বাম হাতও জানতে না পারে। ”
শুভ্রর উত্তরে সুভা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষন পর চোখ সরিয়ে বলল,
” আপনাকে জাস্ট আর কিচ্ছু বলার নেই আমার। সকল প্রশংসাই কম হয়ে যাবে। বাই দা ওয়ে, আমি সুভা”
শুভ্রর দিকে হাত বাড়িয়ে দিল সুভা। শুভ্র ও হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে নিল। সুভা খুশি হয়ে বলল
” তাহলে আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ডস, তাই তো?”
” অবশ্যই”
” আচ্ছা আমি যাই তাহলে এখন৷ অনেক দেরী হয়ে যাচ্ছে”
” আচ্ছা”
.
.
.
বাসায় এসেই সুভা দেখল মেঘা মুখ ফুলিয়ে খাটের উপর বসে মোবাইল টিপছে। সুভা মুচকি হাসি দিয়ে ব্যাগ রেখে ওয়াশরুমে চলে গেল। মেঘা আড়চোখে সবই দেখল আর রেগে গেল
” কতবড় সাহস, দেখল যে আমি রাগ করেছি কোথায় আমার রাগ ভাংগাবে, তা না? ”
মেঘা এবার আরো বেশি অভিমান করে বসে রইল।
সুভা ওয়াশরুম থেকে এসে ব্যাগ খুলে একটা চকোলেট এর প্যাকেট বের করে সেটা নিয়ে মেঘার পাশে গিয়ে বসল। তারপর আস্তে আস্তে সেটা খুলতে লাগল। চকোলেট হচ্ছে মেঘার উইক পয়েন্ট। এটা দেখলেই মেঘার সব রাগ-অভিমান জলের মতো ঠান্ডা হয়ে যায়। আর সেটা সুভা খুব ভালো করেই জানে। সুভা প্যাকেট টা খুলে মেঘাকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাওয়ার ভান করে মুখে স্লো মোশনে ঢোকাতে লাগল, যেন জেনে বুঝে মেঘাকে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। মেঘাও সুযোগের সৎ ব্যবহার করে চকোলেট টা কেড়ে নিয়ে নিল সুভার মুখের সামনে থেকে। আর নিয়েই কামড় বসিয়ে দিল। সুভা হো হো করে হাসতে লাগল। হাসতে হাসতে বিছানায় লুটোপুটি খাচ্ছে সুভা৷ মুখ ভেংচিয়ে মেঘা জিজ্ঞেস করল,
” তো তোর ওই বেচারা কি বলল তোকে?”
.
.
.
.
চলবে….
পর্ব ৩ এর লিংক
https://m.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=910503482713705&refid=18&