বেড়াজাল পর্ব-৩৯ এবং শেষ পর্ব

0
497

গল্পঃ #বেড়াজাল
লেখিকা: #চন্দ্রাবতী
পর্ব – #৩৯ (সমাপ্তির প্রথম খন্ড)

কেটে গেছে দুই মাস। সময়ের সাথে সাথে মানুষ গুলোর ভিতরও পরিবর্তন এসেছে।

আজ শুক্রবার। সবাই বাড়িতে থাকার দরুণ চন্দ্রা সিয়া অপূর্বকে ডেকেছে এই বাড়ি আসার জন্য। তাই চন্দ্রা এখন রান্নাঘরে। সিনথিয়াও ওর হাতে হাতে সাহায্য করছিলো কিন্তু হটাৎই ফোনে কল আসায় তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেছে। চন্দ্রা জিজ্ঞেস করলে শুধু বলেছে দরকারি কাজ আছে তাড়াতাড়ি চলে আসবে সে।

চন্দ্রা তাই আর মাথা না ঘামিয়ে রান্নাঘরে একাই সব করতে লাগলো। এরই মধ্যে সিয়াম এসে উপস্থিত হলো রান্নাঘরে। কড়াইতে সদ্য সবজি ছাড়ার কারণে চন্দ্রা টের পেলো না তেমন।
সিয়াম এসে ফট করে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই চন্দ্রা চমকে উঠলো। তা দেখে সিয়াম হেসে বললো “এখনও বুঝতে পারো না কে এমন ভাবে তোমায় পিছন থেকে জড়িয়ে ধরতে পারে..?”

চন্দ্রা মুচকি হেসে বলল “হ্যাঁ বুঝি সবই বুঝি তা কি মনে করে আজ রান্নাঘরে হুম হুম..?” বলেই চন্দ্রা দুই ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো।

সিয়াম ওভাবেই জড়িয়ে বললো “তুমি দেখি দিন দিন সুন্দর হয়ে যাচ্ছ বউ ব্যাপার কি বলতো..? সাড়া সপ্তাহটা তো ঠিক ভাবে দেখতেই পাই না তোমায় তাই আজ চলে এলাম মন ভরে তোমায় দেখতে।”

চন্দ্রা মিটিমিটি হেসে বললো “থাক আর তেল লাগাতে হবে না আমি রান্নায় এমনিই তেল বেশি দি।”

সিয়াম হাত আলগা করে বললো ” এইরকম তুমি বলতে পারলে আমায় চন্দ্র..? আমি কি না তোমায় বাটার লাগাই..? যাও আর করলাম না আদর।” বলেই সিয়াম পিছন ফিরে বাসন পত্র নিয়ে টুকটাক নাড়তে লাগলো।

চন্দ্রা তা দেখে করুন মুখ করে সিয়ামের সামনে গিয়ে বললো “আমি তো মজা করছিলাম সিয়াম। আচ্ছা সরি……সরি বলছি তো” সিয়ামের তাও কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে চন্দ্রা এবার নিজেই সিয়ামকে জোর করে তার দিকে ঘুরিয়ে নিজের পা হালকা উঁচু করে সিয়ামের এক গালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। এর পর আরেক গালে ঠোঁট ছুঁয়াতে গেলেই সিয়াম টেনে চন্দ্রার ঠোঁট দুটো আঁকড়ে ধরলো।

_________________________________

সিয়া সকালের ব্রেকফাস্ট করে উপরের ঘরে এলো। আজ তার সিয়ামদের বাড়ি যাওয়ার কথা কিন্তু সকাল থেকেই কেমন গা গুলাচ্ছে তার। কয়েক দিন ধরেই হচ্ছে তার এইসব একজন মেয়ে হয়ে সে ভালোই বুঝেছে এই সব কিসের ইঙ্গিত। কয়েকদিন থেকে কাজের চাপে সে অতটা গুরুত্ব দেয়নি আর না অপূর্বকে কিছু জানিয়েছে। বমিও করেছে সে তার অফিসে দুই বার শরীরটা দূর্বল হয়ে আছে কিছুটা তাই। কিন্তু আজ তার শরীরটা একটু বেশিই খারাপ লাগছে তার। কাল বাড়ি ফেরার পথে একটা প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট নিয়ে এসেছিল। সিয়া সেটা নিয়েই ওয়াসরুমে চলে গেলো।

কয়েক মিনিট বাদ সিয়া ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে প্রেগনেন্সি কিট তার দিকে দেখলো। জ্বল জ্বল করছে সেখানে দুটো লাল দাগ। সিয়া বুঝতে পারলো না তার খুশি হওয়া দরকার কিনা..?মনের মধ্যে যেনো অনেক কিছুর জোট পাকিয়ে আসছে তার। এসব ভাবতে ভাবতেই সিয়া সামনে এগিয়ে কিট টা টেবিলের উপর রাখলো। তখনই অপূর্ব আসলো ঘরে সিয়াকে এইরকম অন্যমনস্ক দেখে অপূর্ব কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো ” সিয়া..? কি ভাবছো..?”

সিয়া আচমকা আওয়াজ পেয়ে দুই পা পেছোতেই মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো তার পরে যেতে নিলেই অপূর্ব ধরে ফেললো। ধরে বিছানায় বসিয়ে অপূর্ব চিন্তিত মুখে বললো ” কি হয়েছে কি তোমার সিয়া..? কয়েক দিন ধরেই দেখছি ঠিক মতো খাচ্ছো না, ঘুমোচ্ছো না এইটুকু সিঁড়ি উঠতেই কেমন হাঁপিয়ে যাচ্ছ। না না আজকেই তোমায় ক্লিনিকে নিয়ে যাবো কোনো কথা শুনতে চাই না এই নিয়ে আমি। আমি এক্ষুনি ডক্টরকে কল করছি। আজ আর ওইবাড়ি যেতে হবে না তোমায়।”

সিয়া অপূর্বকে এইভাবে উত্তেজিত হতে দেখে বললো “আরে আরে আমার কথা তো শোনো আগে..? আমার কিছু হয়নি।”
অপূর্ব ফোন নিয়ে বললো “না সিয়া অনেকদিন থেকেই দেখছি আর না। চুপ থাকো তুমি আমি যা বলবো তাই করবে।”

সিয়া শুনলো না অপূর্বের কথা তাকে হাত টেনে বেডে বসালো। অপূর্ব বেডে বসেই সিয়ার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই সিয়া পাশের টেবিল থেকে প্রেগনেন্সি কিটটা নিয়ে মুখ কাচুমাচু করে অপূর্বের হাতে দিলো। অপূর্ব কৌতূহল বশত তাড়াতাড়ি নিয়ে দেখতেই চোখ ছানা বড়া হয়ে গেলো তার। একবার সিয়ার মুখের দিকে তাকালো একবার কিট তার দিকে সিয়া করুন মুখ নিয়ে তাকিয়ে রইলো অপূর্বের দিকে। অপূর্ব কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করেই সিয়াকে জাপটে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুঁজে থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ বলতে লাগলো। তারপর মুখ তুলেই সিয়ার মুখে আদুরে স্পর্শ গুলো দিয়ে আবার জড়িয়ে ধরে মুখ গুঁজলো। এইসব এত তাড়াতাড়ি হলো সিয়ার বুঝতে একটু সময় লাগলো সবটা। সিয়া এবার অপূর্বের পিঠে হাত রেখে বলল “তুমি খুশি হয়েছ..?”

অপূর্ব মুখ সিয়ার হাত দুটো ধরে বললো “খুশি মানে..?আমি প্রকাশ করতে পারবনা আমি কতোটা খুশি হয়েছি। অনেক অনেক ধন্যবাদ সিয়া আমায় লাইফে আসার জন্য আমায় পরিপূর্ণ করার জন্য। একমিনিট তুমি খুশি হওনি এতে…?”
সিয়া হকচকিয়ে গেল। তা দেখে অপূর্বের মুখটা আঁধারে ছেয়ে গেল। সিয়া তা দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পরল “তুমি যেমনটা ভাবছো তেমনটা নয় অপূর্ব। আমি দ্বিধা দ্বন্দে ছিলাম একটু কারণ আমাদের কোনো বেবী প্ল্যান ছিল না আর এতো তাড়াতাড়ি তোমার যদি অসুবিধা হয়..? তাই ভেবে আর কি.. কিন্তু তোমায় দেখে এখন আর আমার মনে ছিটে ফটো দ্বিধাদ্বন্দ নেই বিশ্বাস করো।”

অপূর্ব হালকা হেসে বললো ” বাচ্চা উপরওয়ালার দান সিয়া। তার আসারই ছিলো তাই সে এসেছে। আর ধরলাম আমার কথা তোমার সাথে যুক্ত কোনোকিছুই আমার প্ল্যানের বাইরে নয়।”

সিয়া এই প্রথম এগিয়ে গিয়ে শক্ত করে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরলো অপূর্বকে। দুফোঁটা চোখের জল ফেলে শুধু আওরালো “থ্যাঙ্ক ইউ অপূর্ব থ্যাংক ইউ ফর এভ্রিথিং”
.
.
.
সিয়ার খবর সায়মা বেগম অলীক সাহেব আর অপা জানতেই বাড়িতে যেনো খুশির ধুম পড়ে গেছে তাদের। অলীক সাহেব একগাদা খেলনা নিয়ে এসেছেন সাথে মিষ্টি। সায়মা বেগম এখন থেকেই বসে গেছেন বাচ্চার কাঁথা সেলাই করতে। অপা সব বাচ্চার স্টিকার কিনে এনে সারাবাড়ি ময় লাগিয়েছে। সিয়ার এইসব দেখে ভীষণ রকম আনন্দ হচ্ছে সবার এইরকম মাতামাতি দেখে সে হেসেই যাচ্ছে। হেসে হেসে তার গালটা এবার ব্যাথা করছে কিন্তু তাও সে হাসছে। হটাৎই তার মনে হলো এতো খুশি সে এই প্রথমবার হলো জীবনে। চোখটা মুহূর্তেই ছলছল করে উঠলো।
.
.
সিয়াকে জোর করে আজ ক্লিনিকে নিয়ে এসেছে অপূর্ব। ডক্টর অপূর্বের সাথে আলাদা কথা বলতে চায় বলে সিয়া বাইরের চেয়ারটায় এসে বসেছে। হঠাৎই তার চোখ গেলো সামনে থেকে আসা মা ও ছেলের দিকে। সিয়ার চিনতে ভুল হলো না ওটা আতিফ ও তার মা। সিয়া কথা বলতে চাইলো না তাই মুখ ঘুড়িয়ে না দেখার ভান করে বসে রইল।

“সিয়া..?” এতদিন পর ওই মুখে নিজের নাম শুনে সিয়া চমকে উঠলো। না এখন আর তার আগের মতো ভালো লাগা কাজ করছে না কাজ করছে রাগ।

আতিফযে সিয়াকে দেখে বেশ অবাক সাথে খুশিও হয়েছে সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। সিয়া বিনিময়ে মুচকি হাসলো।
আতিফ নিজে থেকেই এবার বললো ” কেমন আছিস সিয়া..? বাড়িতে সবাই কেমন আছে..?”
সিয়া ভদ্রতার খাতিরে একটা হাসি দিয়ে বললো ” ভালো। সবাই ভালো। তা তুই কেমন আছিস..? আর তোর বউ..?”

আতিফ আর তার মা এতোক্ষণ হাসি মুখ করে থাকলেও এবার তাদের মুখটা অপরাধবোধ ছেয়ে গেল। আতিফের মা এবার সামনে এগিয়ে এসে সিয়ার হাত ধরে অনুতপ্ত গলায় বললো “আমায় ক্ষমা করো মা। আজ আমার জন্যই আমার ছেলের জীবনটা তছনছ হয়ে গেলো। একটু বেশি সুখে সাচ্ছন্দের আশায় আমি তার সুখটাই কেরে নিলাম।”

সিয়া বিস্ময় নিয়ে বললো ” মানে..? বুঝলাম না ঠিক।”

আতিফের মা ফির বললেন “আসলেই পাপ বাপকেও ছাড়ে না মা। যার সাথে ছেলেটার বিয়ে দিলাম একটু উঁচু পদ দেখে পরে জানতে পারলাম মেয়েটা আগে থেকেই অনেক ছেলের সাথে সম্পর্ক করেছে। সংসারে নিত্য নতুন এই নিয়ে অশান্তি লেগেই থাকত। আমাকেও ঠিকঠাক মত খেতে দিতো না। এই দেখে আমার বড়ো ছেলে ছেলের বউও আলাদা হয়ে গেলো আমার সংসার থেকে। তারপরই মেয়েটা নিজেই ডিভোর্স দিয়ে দিলো। সে নাকি পরিবারের চেপে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল। আমি এখন নিঃস্ব মা। অপরাধ বোধ রোজ আমায় কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। তুমি পারলে আমাদের এই মা ছেলেকে ক্ষমা করো মা।”

সিয়া এবার হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে একপলক আতিফকে দেখলো মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে সে। তারপর সিয়া বললো “আপনাদের অপরাধের শাস্তি আপনাদের পাওয়ারই ছিলো একদিন। একজনের চোখের জলের দাম এতটাও সস্তা নয়। তবু দোয়া করবো ভালো থাকবেন, আমি অতোটাও স্বার্থপর নই যে কারোর খারাপ দোয়া করবো। একটাই কথা বলতে চাই যা হয় তা হয়তো ভালোর জন্যই হয়, এটা আমি এখন উপলদ্ধি করতে পারছি ভালো ভাবে। আর আতিফ ভালো কোনো মেয়ে দেখে বিয়ে করে নিস।”

আতিফ এবার করুন স্বরে বলল ” সিয়া একটা বার কি আমায় সুযোগ দেওয়া….”

আতিফের কথা শেষ হওয়ার আগেই পিছন থেকে অপূর্বের আওয়াজ আসলো ” সিয়া..”
সিয়া তাকাতেই অপূর্ব এসে তার কোমর জড়িয়ে বললো “শরীর খারাপ লাগছে..? এখানে…” বলতে বলতেই তার চোখ গেলো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ দুটির উপর। তারা চোখ ভরা কৌতুহল নিয়ে তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। অপূর্ব সিয়ার কোমর না ছেড়েই বললো “তুমিই আতিফ রাইট..? আমি ড. অপূর্ব এহসান সিয়ার হাসবেন্ড। সত্যি বলতে তোমার উপর আগে রাগ থাকলেও তোমায় একটা ধন্যবাদ দেওয়ার ছিলো তুমি না ছাড়লে হয়তো এই মেয়েটাকে আমি পেতাম না জীবনে।”

কোমরে অপূর্বের হাতটা না সরানো দেখে সিয়া মুচকি হাসলো। তার এই ধরে রাখাই প্রমাণ দিচ্ছে তার প্রতি মানুষটার অধিকার বোধ, সে শুধু এখন এই মানুষটার এটার প্রমাণ। সিয়া এবার আতিফের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো “আম অলসো থ্যাংকফুল টু ইউ। এই মানুষটা হারিয়ে ফেললে হয়তো আমি জীবনের অনেক কিছুই হারাতাম।”

আতিফ আর তার মা মুখ কালো করে বললো ” বিয়ে করেছিস..? বাহ্ সুখে সংসার কর এই দোয়া করি আর পারলে ক্ষমা করিস এর বেশি কিছুই বলার মুখ নেই আমার। ভালো থাকিস আসি রে।” এই বলে সে আর তার মা বেড়িয়ে গেলো সেখান থেকে।

এরপর অপূর্ব আর সিয়াও গাড়িতে উঠে রওনা দিলো সিয়ামের বাড়ির উদ্দেশ্যে। কেউ কোনো কথা বললো না গাড়িতে তা দেখে সিয়া এবার নিজেই জিজ্ঞেস করলো ” ডক্টর কি বললেন তোমায় আমার ব্যাপারে..?” এতোক্ষণ অপূর্বের মুখ স্বাভাবিক থাকলেও এবার মুখটা মলিন হয়ে এলো। কিন্তু সিয়া তা বোঝার আগেই হালকা হেসে বললো “কই তেমন কিছু না। তোমার শরীরটা একটু দুর্বল তাই একটু বেশি খেয়াল রাখতে বলেছে তোমার। আমি বলছি কি এখন জবটা না করলে হয় না..? পরে তোমার ইচ্ছে হলে আমি বাঁধা দেবো না কিন্তু এখন…”

অপূর্ব ভেবেছিল সিয়া জবের জন্য জেদ করবে কিন্তু তার সব ধারণা ভুল প্রমাণ করে সিয়া অপূর্বের হাতের উপর হাত রেখে হেসে বলল ” ওকে ”

অপূর্বের মুখেও হাসি ফুটে উঠলো। মিথ্যে বলতে পারবে না মনকে সে, তবে সে আজ সত্যিই সিয়াকে হারাবার ভয় পেয়েছিলো একটু। তবে সিয়ার আনসার শুনে সেই ভয়টা এখন আর তার নেই।

“এই এই গাড়ি থামাও” সিয়ার উত্তেজিত গলা শুনে অপূর্ব গাড়ির ব্রেক কষে বললো “কি হয়েছে..? কি হয়েছে..?”

সিয়া অবাক হয়ে গাড়ির জানলা দিয়ে কিছু একটা দেখালো অপূর্বও তা দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।

___________________________

কিছুক্ষণের মধ্যেই সিয়া আর অপূর্ব সিয়ামদের বাড়িতে এসেই সিয়া ভাইয়া ভাবী বলে জোরে জোরে চেঁচাচ্ছে।

ওদের ডাক শুনে সিয়াম আর চন্দ্রা দৌড়ে রান্নাঘরের বাইরে এসে ওদের দেখে অবাক। ততক্ষণে সিরাজও নেমে এসেছে উপর থেকে তাদের চিল্লা চিল্লি শুনে।

সিয়া সিনথিয়ার কান ধরে বলে বললো ” ভাবী দেখেছো দুটো চোরকে ধরে এনেছি রাস্তা থেকে। রাস্তা নয় পার্ক থেকে দুজনে বসে বসে প্রেম করছিল।”

অপূর্বও পিয়াসের কান মুলে বললো “দেখ সিয়াম তলায় তলায় মহাশয় এই টেম্পু চালাচ্ছিল।”

চন্দ্রা সিয়াম দুজন দুজনের দিকে একবার দেখলো। তারপর অপূর্ব আর সিয়াকে চোখের ইশারায় অন্যদিকে আসতে বলল।
অপূর্ব সিয়া তা বুঝে চলে গেলো ভিতরে। কিছুক্ষণ পর সবাই গম্ভীর মুখ করে বেরিয়ে এলো।

পিয়াস ভয় পেলো কি বোঝা গেলো না, কিন্তু সিনথিয়া বেশ ভয় পেলো। যদি কেউ মেনে না নেয় তাদের সম্পর্কটা..? এই মানুষটাকে ছাড়া সে কিছুই ভাবতে পারে না। কদিনেই বড্ড আপন হয়ে গেছে মানুষটা।

সবাই গম্ভীর মুখ করেই এবার বারিয়ে এলো সবাই। সিনথিয়া আরো ভয় পেলো, পিয়াসের কাছ ঘেঁষে তার হাতের উপরের অংশটা চেপে ধরলো। পিয়াস চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করলো তাকে। সিনথিয়ার ভয় তাও কমলো না।

সিয়াম গম্ভীর মুখ করে বললো “ভুল যখন করেছিস শাস্তি তো পেতেই হবে দুজনকে।”

সিনথিয়া আর পারলো না কেঁদে দিলো হুহু করে। ওকে দেখে সবাই হকচকিয়ে গেল। চন্দ্রা বিচলিত হয়ে বললো “আগে শুনে তো নে শাস্তি টা তারপর ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদবি।”

পিয়াস চুপ করাতে ব্যস্ত সিনথিয়াকে। সিয়াম এবার দেরি না করে বললো “ভেবেছিলাম কদিন পর বলবো কিন্তু এরা তো দেখছি রোমিও জুলিয়েটকেও হার মানিয়ে দেবে। এই অপূর্ব তাড়াতাড়ি খবর দে আজই দুজনের রেজিষ্ট্রি করিয়ে দেবো শাস্তি স্বরূপ। পরে ওদের ইচ্ছে মতো বিয়ের তারিখ ঠিক করা যাবে।”

সিনথিয়া এবার কান্না থামিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো সবার দিকে। তা দেখে সবাই হু হা করে হেসে দিল। পিয়াসও ফিক করে হেসে দিল। সে মজাটা হালকা বুঝতে পেরেছিল আগেই তবে বলেনি সিনথিয়াকে।

তারপর সবাই আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। এই আনন্দের খবরের মধ্যে সিয়ার প্রেগনেন্ট হওয়ার খবরটা যেনো আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিলো সবার আনন্দ।

অবশেষে সিনথিয়া পিয়াসের রেজিষ্ট্রি শেষ করে রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই বেশ খানিকক্ষণ আড্ডা দিয়ে শুতে চলে গেলো যে যার রুমে।

______________________________

সিয়াম ঘরে ঢুকে চন্দ্রাকে দেখতে না পেয়ে ব্যালকনির দিকে গেলো। এখন তারা সিয়ামের উপরের ঘরটাতেই থাকে। সিয়াম জানে চন্দ্রার মন খারাপ থাকলে সে ব্যালকনিতে গিয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে।

সিয়াম ধীরে ধীরে গিয়ে চন্দ্রার পাশে রেলিংয়ে দুই হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো ” আমার চাঁদের কি আজ মন খারাপ..?”

চন্দ্রা সিয়ামের দিকে ঘুরল। সিয়াম চন্দ্রার চোখে জল দেখে বিচলিত হয়ে বললো “একি চন্দ্র কি হয়েছে..? সিরাজকে দেখে কষ্ট পেয়েছ..? তাই তো..? আমি তোমার তাকানো দেখেই বুঝেছি তখন।”

চন্দ্রা এবার কান্নারত অবস্থায় বললো ” আমি খুব খারাপ তাই না সিয়াম..? কীভাবে দিভাইকে দূরে পাঠিয়ে দিলাম সিরাজের থেকে। সিরাজকে চোখের সামনে দিন দিন কেমন হয়ে যেতে দেখছি। সারাদিন বাড়িতে থাকে না আগের মত হাসি মজা করে না। কেউ ফোন করলে পায় না। সারাদিন অফিসে পরে থাকে। আমার নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হয় সিয়াম। আমার এতো রাগ কেনো কেনো।” বলেই চন্দ্রা নিজের দুই হাত ঠুকতে লাগলো রেলিংয়ে।

সিয়ামের বুকটা কেঁপে উঠলো। চন্দ্রাকে টেনে নিজের বুকের মধ্যে চেপে ধরে বললো “শান্ত হও চন্দ্র, কে বলেছে সব দোষ তোমার..? সিরাজ যা করেছে সেটা ওর প্রাপ্য ছিলো। তোমার সাথে আরো বাকি মেয়েদের সাথে এটা না হলে ও অন্য কোনো না কোনো দিক দিয়ে শাস্তি ঠিক পেতই। তুমি তোমার জায়গা থেকে ঠিক ছিলে চন্দ্র। কেউই চাইবে না তার আপনজন এমন একটা মানুষের সংস্পর্শে থাকুক। তাই নিজেকে অপরাধী ভেবো না। আর এই সিদ্ধান্ত টা তো ইন্দ্রা সিরাজ দুজনের জন্যই সঠিক। এতে তারাও বুঝতে পারবে তাদের ভালোবাসা কি সত্যি নাকি শুধুই কয়েকদিনের মোহ।
আর রইলো রাগের কথা হ্যাঁ ওইটা তোমায় একটু কন্ট্রোল করতে হবে। আমরা জীবনে কেউই পারফেক্ট নই চন্দ্র। সবারই কিছু না কিছু দোষ গুন আছে। তাই এইসবকে বড়ো করে দেখো না ওইসব জীবনের অংশ। কিন্তু হ্যাঁ এরপরের বার থেকে কোনো কিছু নিয়ে রাগ হলে কিছুক্ষণ চুপ করে যাবে দেখবে রাগ কমে যাবে আর সব কিছুর সমাধানও সহজে করতে পারবে। বুঝলে পাগলি..?”

চন্দ্রা সিয়ামের বুকের মধ্যে থেকেই মাথা নাড়ালো। সিয়াম পাশে রাখা দোলনায় চন্দ্রাকে কলে নিতে বসে বললো “অনেক হয়েছে কান্নাকাটি এবার একটু হাসো তো দেখি। বেশ কয়েকদিন থেকে দেখছি আমায় আর আগের মতো আদর কোরো না।”

চন্দ্রা চেতে বললো “ওমনি তাহলে সকালে কে আগে…”

সিয়াম বাঁকা হেসে বললো “থামলে কেন বলো সকালে তুমি আগে কি করেছ এমন..?”

চন্দ্রা আবার আগের মতো সিয়ামের বুকে গুটিসুটি মেরে বললো “জানি না যাও। আবার তুমি আমার পিছনে লাগবে।”

সিয়াম গলায় শব্দ করে হাসলো। চন্দ্রা তা দেখে আসতে করে ডাকলো ” সিয়াম..”

সিয়াম একটু অবাক হলেও শুধু বললো “হুম”

চন্দ্রা এবার ইতস্তত করে বললো “সিয়া আপুর বাবু হবে কদিন বাদ অথচ তাদের বিয়ে আমাদের কতগুলো মাস পর হলো। আমারও বাবু চাই একটা। যে আমায় মা তোমায় বাবা বলে ডাকবে। আমাদের সংসারটা পরিপূর্ণ করবে।”

সিয়াম এবার চন্দ্রার চোখে চোখ রেখে মুচকি হেসে বলল “আমার চন্দ্রাবতীর হুকুম বলে কথা, আমার সাধ্য কি তার হুকুম অগ্রাহ্য করি।”

চন্দ্রা লাজুক হেসে সিয়ামের বুকে মুখ লুকলো। সিয়াম হেসে চন্দ্রাকে কলে তুলে চললো ঘরের দিকে।

#চলবে..?

( অনেক অনেক দুঃখিত। আমি চেয়েও পারছি না তাড়াতাড়ি দিতে তাই একটু বেশি করে দিয়ে পুষিয়ে দিচ্ছি আজও প্রায় 2300+ ওয়ার্ড আছে। আর একটা পর্ব হবে আমি তাড়াতাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করবো)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে