গল্পঃ #বেড়াজাল
লেখিকা: #চন্দ্রাবতী
পর্ব – #২৩
সিরাজ ইন্দ্রা দুজনেই হসপিটালে পৌঁছে চন্দ্রার কেবিনের দরজার কাঁচ দিয়ে দেখে সিয়াম চন্দ্রার হাত মাথায় ঠেকিয়ে বসে আছে পাশে।
ইন্দ্রা ও সিরাজ একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে আর ভিতরে না ঢুকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা পিয়াসের কাছে যায়।
পিয়াস ওদের দেখে উঠে দাঁড়ায়। ইন্দ্রা ব্যাকুলতা নিয়ে জিজ্ঞেস করে “আপনি জানেন ডাক্তার কি বলেছে..? কেমন আছে আমার বোন..? কিছু হবে না তো..?”
পিয়াসের কাছে ইন্দ্রা অচেনা হলেও তার ধরতে সময় লাগে না সে চন্দ্রার বোন। কারন তাদের দুই বোনকেই অনেকটা একই দেখতে।
পিয়াস আশ্বাসের সাথে বলে ওঠে “চিন্তা করবেন না। ভাবী ঠিক আছে একদম। শুধু কিছু কিছু জায়গায় চোট লেগেছে তাই ডাক্তার বলেছে কিছুদিন বেড রেস্টে থাকতে, তাহলেই ঠিক হয়ে যাবে।” ইন্দ্রা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।
এর মধ্যেই দেখা যায় দরজা ঠেলে সিয়ামকে বাইরে আসতে। সিয়াম ওদের দুজনকে দেখে বলে “এতক্ষণ সময় লাগলো যে তোদের..?আর ইন্দ্রা তুমি দেখতে চাইলে ভিতরে গিয়ে দেখা করে আসতে পরো।”
ইন্দ্রা সে কোথায় সায় দিয়ে ভিতরে চলে গেলো চন্দ্রার কাছে।
সিরাজ সিয়ামকে উদ্দেশ্য করে বললো “আসলে ভাইয়া রাস্তায় জ্যাম ছিলো। তুমি কিছু খাবে এনে দেবো..?আর রাতে কি তুমি থাকবে..?
সিয়াম হতাশ গলায় বললো “আমার এখন খাবার গলা দিয়ে নামবেনা রে। তোরা খেয়ে নে কিছু। আর হ্যাঁ রাতে আমি এখানেই থাকবো।”
ইন্দ্রা ততক্ষণে কেবিনের বাইরে এসে সিয়ামের উদ্দেশ্যে বললো “ভাইয়া একটা রিকুয়েস্ট রাখবেন।”
সিয়াম বললো “এভাবে বলছো কেনো ইন্দ্রা আমিও তো তোমার বড়ো ভাইয়ের মতো তাই আবদার করো।”
ইন্দ্রা এবার হালকা হাসি মুখ করে বললো “আজ রাতে আমি থাকি চন্দ্রার কাছে..? এমনিতেও আজ তো ওর হুশ ফিরবে না। আপনারা বরং কাল সকাল সকাল চলে আসবেন এখন গিয়ে রেস্ট নিন।”
সিয়াম বললো “না ইন্দ্রা তা হয় না এই অবস্থায় আমি ওকে ছেড়ে কিভাবে চলে যাবো..?আর তুমিই বা একা কিভাবে সামলাবে..?”
সিরাজ এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার মুখ খুললো “হ্যাঁ ভাইয়া ইন্দ্রা ঠিক বলেছে। তুমি বাড়ি চলো কি অবস্থা দেখো নিজের পাগল পাগল লাগছে তোমায়। গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটু ঘুমিয়ে কাল সকালে আসবে এমনিও তো ভাবীর ঘুম কাল সকালেই ভাঙবে।”
সিয়াম বাড়ি যেতে না চাইলেও সবাই মিলে তাকে জোর করে পাঠালো বাড়ি।
বাড়ি এসে ঘরে ঢুকতেই সিয়ামের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। অন্যসময় হলে মেয়েটা হাসি মুখ করে দরজা খুলতো। তার জন্যে অপেক্ষা করে বসে থাকতো। সে কাজ করলে তার চোখের সামনে ঘুরঘুর করতো। সেসবই ভীষণ ভালো লাগতো সিয়ামের। আজ যেনো মনে হচ্ছে পুরো বাড়িতে নিস্তব্দতা নেমে এসেছে।
সিয়াম ফ্রেশ হয়ে নিলো। আজ আর কিছু তার খেতে মন চাইছে না। তাই একটু কফি নিয়ে ল্যাপটপটা নিয়ে বসলো।
কিছুক্ষণ পর সিয়াম ল্যাপটপ বন্ধ করে পাশে রেখে দিল বিরক্তিতে। তার কিছুই ভালো লাগছে না। চন্দ্রাকে দেখার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠছে। কিন্তু এখন তো আর তাকে দেখা করতে দেবেনা সকালের আগে। সিয়াম কফিটাও শেষ করতে পারলো না। ঘরের দরজা ভালোভাবে আটকে পর্দা টেনে গিয়ে দাঁড়ালো ব্যালকনিতে। তার ব্যালকনিটা বাগানের হালকা পিছন দিক হওয়ায় পরিষ্কার ব্যাতিত সেখানে কেউ যায় না। যদিও সিয়ামের সুবিধে এতে সে যাবতীয় দরকারি কাজ এখানে করতে পারে।
সিয়াম আকাশের দিকে তাকালো। চাঁদ দেখা যাচ্ছে না আকাশে। সিয়াম আনমনে হাসলো আজ তার ঘরের চাঁদ আর আকাশের চাঁদ দুজনেই তার থেকে মুখ ফিরিয়ে আছে।
সিয়াম বেশ খানিকক্ষণ একইভাবে দাঁড়িয়ে থাকলো। মনে মনে কথা সাজালো কিভাবে চন্দ্রার সুস্থ হওয়ার পর তাকে সবটা গুছিয়ে বলবে। কিন্তু অবাধ্য মনটা কিছুতেই মানতে চাইছে না তার এখন তার নিজের উপরই রাগ হচ্ছে কেনো যে চন্দ্রার কাছে সে রইল না।
এসব ভাবতে ভাবতেই সিয়াম ফোন বের করে পিয়াসকে ফোন লাগালো। পিয়াস ফোন তুলতেই সিয়াম বললো ” সব ডিটেইল বের করেছিস লোকটার..?”
পিয়াস ওপাশ থেকে বললো “তোকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাচ্ছি সব। আর শোননা বলছি যে..” বলেই থামলো পিয়াস।
সিয়াম বললো “হেজিটেড করিসনা বল যা বলবি।”
পিয়াস আমতা আমতা করে বলল “বলছি দেখ তুই কিছু করতে যাস না হিতেবিপরীত হবে।”
সিয়াম বাঁকা হেসে বললো “এই সিয়াম ওতো কাঁচা কাজ করে না তা তো তোর জন্য পিয়াস। আর বাই দা ওয়ে লোকটা ড্রিংক করে গাড়ি চালাচ্ছিল।”
পিয়াস অবাক হয়ে বলে “সত্যি..? দেখে তো বেশ ভদ্র সভ্য মনে হলো। মনে হলো না তো ড্রিংক করে গাড়ি চালাচ্ছিল।”
সিয়াম চুপ থেকে বললো “ওই জন্যই আমি এতো কথা বলার পরও সে চুপ করে ছিলো। যদি আমি ধরে নি। ভাবলো কি হসপিটালে নিয়ে এসে নাম কিনে নিলেই এই সিয়াম তাকে ছেড়ে দেবে..? নেভার! জাস্ট দেখতে থাক পিয়াস তুই কি থেকে কি হয়। ” সিয়াম ফোন রেখে দেয়।
ফোনে চন্দ্রার একটা ছবি বার করে জুম করে দেখতে থাকে আর বিড়বিড় করে বলে “সিয়ামের চন্দ্রাবতীর গায়ে আঁচড় দেওয়ার ফল সবকটাকে ভুগতে হবে চন্দ্রাবতী।”
ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সিয়াম বোঝে না কখন সকাল হয়ে গেছে। শেষ রাতের দিকে তার একটু চোখ লেগেছিল বটে কিন্তু একটা দুঃস্বপ্ন এসে সিয়ামের সেই ঘুমটাও ভাঙিয়ে দিয়েছে।
সিয়াম উঠে ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বেরোতেই অভ্যাস বশত রোজকার মতো চেঁচিয়ে উঠলো “চন্দ্রা শার্টটা কই আমা…” পুরো কথা শেষ করতে পারলো না খেয়ালে এলো চন্দ্রা নেই এখানে। বুক টা মোচড় দিয়ে উঠলো সিয়ামের। এই কদিনেই চন্দ্রা তার অভ্যাস পুরোপুরি খারাপ করে দিয়েছে। মেয়েটা একদিন নেই তাতেই তার এই অবস্থা। এই জন্যেই মেয়েটাকে সে বাপের বাড়িও যেতে দেয়না গেলেও থাকতে দেয় না। সিয়ামের মাকে ছাড়া বাড়ি যেমন প্রাণহীন লাগতো তার কাছে চন্দ্রাকে ছাড়াও সিয়ামের একই অনুভুতি হয়।
সিয়াম আর না ভেবে তাড়াতাড়ি দরজা দিয়ে বেরোতে গিয়ে দেখলো সিয়া নামছে সিড়ি দিয়ে। সিয়াও সিয়ামকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে এলো সিয়ামের কাছে এসে বললো “ভাইয়া এতো সকাল সকাল সবাই কোথায়..? ভাবী ওঠেনি..?আসলে আমি কাল স্লিপিং পিলস্ খেয়ে ঘুমিয়েছি তাই দেরি হলো উঠতে।”
সিয়াম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিয়াকে নিজের কাছে ডাকলো। সিয়াও বিড়াল ছানার মত গুটি গুটি পায়ে সিয়ামের কাছে গিয়ে বসলো। সিয়াম সিয়ার মাথায় হাত রেখে বলল “আয়নায় দেখেছিস নিজেকে..?কি থেকে কি হয়েছিস..? এসব দেখে আমাদের কষ্ট হয় না..?জীবনের সব সিদ্ধান্তই তো আগে আমায় জিজ্ঞেস করে নিতিস এখন কি খুব বড়ো হয়ে গেছিস..?”
সিয়ার এবার চোখে জল এলো। আসলেই ভীষণ খারাপ কাজ করেছে সে তার উচিৎ হয়নি একটা বিশ্বাসঘাতকের জন্য তার ভালোবাসার মানুষগুলোকে কষ্ট দেওয়া। সিয়া সিয়ামের কোলে মাথা রেখে কান্নারত অবস্থায় বললো “ক্ষমা করো ভাইয়া ক্ষমা করো আর এমন করবো না। আমি সত্যিই অনেক বড়ো ভুল করেছি। আসলে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি তোমরা যদি বকাঝকা করো। আর হবে না ভাইয়া আমি আবার আগের মত হওয়ার চেষ্টা করবো। কারোর জন্য আমি আর নিজের জীবন শেষ করবো না।
সিয়াম মনে মনে বেশ অবাক হলো সিয়ার কথা শুনে কিন্তু বাইরে তা প্রকাশ করলো না। শুধু মনে মনে অপূর্বকে ধন্যবাদ দিলো। সিয়ার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো ” সিয়া তোর ভাবীর অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। আমি এখন সেখানেই যাচ্ছি।”
সিয়া ভীষণ রকম চমকে বললো ” কিহহহহহ..? ভাবীর অ্যাক্সিডেন্ট! কখন কীভাবে..? আর তোমরা আমায় একটাবারও বলেনি কেনো ভাইয়া..?”
সিয়াম আস্থা দেওয়ার সুরে বললো “শান্ত হ। তোর নিজের শরীর অসুস্থ এই অবস্থায় আমিই সিরাজকে বলতে বারণ করেছি।”
সিয়ার বেশ খারাপ লাগলো। এতো বড়ো অঘটন ঘটে গেলো আর সে জানেই না।মন খারাপ করে বলল “আমিও যাবো ভাইয়া হসপিটাল।”
সিয়াম ঘড়ি দেখলো আর দু-মিনিটও তার লেট করলে চলবে না।”
সিয়াম সিয়াকে ধীর স্বরে বললো “তুই আগে ফ্রেশ হ। নাস্তা কর, আমি অপূর্বকে পাঠিয়ে দিচ্ছি সেও দেখতে যাবে বলেছিলো। আমার এখন একটু তাড়া আছে।”
সিয়া ঘাড় নেড়ে চলে গেলো নিজের রুমে।
সিয়াম সিরাজকে ফোন লাগালো। সিরাজ জানালো সে আগে থেকেই অপেক্ষা করছে তার গাড়িতে। সিয়াম আর সিরাজ এবার সোজা হসপিটালে গেলো।
সিয়াম কেবিনে ঢুকে দেখলো একজন নার্স ছাড়া কেউ নেই কেবিনে। সিয়াম একবার চন্দ্রাকে দেখে নার্সকে জিজ্ঞেস করলো “ওর এখনো ঘুম ভাঙছে না কেনো..?” নার্স বললো “ভেঙে যাওয়ার তো কথা। কিছুক্ষণ পরও না ভাঙলে আপনি ডক্টরের সাথে কথা বলবেন একটু। নিজেরা তাড়াহুড়ো করে ডাকতে যাবেন না এতে পেশেন্টের মাথায় চাপ পড়বে।”
সিয়াম ঘাড় নাড়ালো। নার্সটা বেরিয়ে গেলো। সিয়াম এবার চন্দ্রার দিকে তাকিয়ে তার বাম হাতটা আগের মত দুই হাতের মুঠোয় নিয়ে চন্দ্রার কানে ঠোঁট ঠেকিয়ে ঘোর মেশানো কণ্ঠে ডাকলো ” চন্দ্রাবতী.. চোখ মেলে দেখো একজন কাতর হয়ে গেছে তোমার ঐ চোখ দুটো দেখার জন্য।”
বিস্ময়কর ঘটনা নাকি ধরতে পারলো না সিয়াম। কিন্তু এই কথা শুনে চন্দ্রা হালকা নড়ে উঠলো। মিনিট দশেক বাদ পিট পিট করে চোখ খুললো।
সিয়ামকে সামনে দেখে মুখে হালকা হাসি ফুটলেও টা মুহূর্তেই মিলিয়ে গেলো মাথায় কিছু স্মৃতি ধাক্কা দিতে। চন্দ্রা কিছু বলার জন্য উত্তেজিত হয়ে পড়ল। কিন্তু কথা বলতে পারলো না গলা দিয়ে তার স্বর বেরোচ্ছে না। আচমকা উত্তেজিত হয়ে পড়ায় সিয়ামও দেখে ঘাবড়ে গেলো। কি করবে না ভেবে পেয়ে তাড়াহুড়ো করে ডক্টরকে ডেকে আনলো। ডক্টর নার্স এসে ধরে ইনজেকশন দিয়ে চন্দ্রাকে শান্ত করলেন মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে দিলেন।
সিয়াম পুরো বিষয়টাই লক্ষ্য করলো। আসলেই কি সে অনেক বড়ো ভুল করেছে..? যেই কারণে সিয়ামকে এক পলক দেখেই চন্দ্রা এইরকম করছে..?
আচ্ছা এখন কি চন্দ্রা সত্যি তাকে এখন ছেড়ে দেবে..? নানা ছাড়বে বললেই কি সিয়াম ছেড়ে দেবে নাকি। তার কাছে জোর করে হলেও আটকে রাখবে। নাহলে যে সিয়ামও ভালো থাকার এক মাত্র সম্বল হারাবে।
_______________________________
অপূর্ব সিয়ার বাড়ির সামনে গাড়ি নিয়ে ওয়েট করছে। একবার হাত ঘড়ি দেখছে তো একবার সিয়া আসছে কি না তা দেখছে।
এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতেই অপূর্বের চোখ গেলো সিয়ার বাড়ির দরজার দিকে। সিয়া হেঁটে হেঁটে আসছে।
অপূর্বের রোদ থেকে বাঁচার জন্য যে সানগ্লাসটা চোখে পড়েছিল সেটা এক টান মারে ডান হাত দিয়ে খুলে ফেললো।
সিয়া একটা গোলাপি কালারের চুড়িদার পড়েছে তার গোলাপি ওড়নাটা মাথায় দেওয়া। মুখে তেমন কোনো কৃত্রিম প্রসাধনি নেই। সূর্যের কিরণে গাল গুলো চকচক করছে। ঠোঁটে শুধু একটু লিপবাম যার জন্যে ঠোঁটটাও ঝিলিক মারছে সূর্যের আলোয়।
অপূর্ব আবার সানগ্লাসটা পরে নিল। তাপে তার চোখ দুটো ঝলসে যাচ্ছে। না সূর্যের তাপ নয়, এটা অন্যরকম তাপ।
সিয়া এসে অপূর্বের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে তার পাশে ড্রাইভিং সিটে বসলো।
অপূর্ব তাকালো না। শুকনো ঢোঁক গিললো শুধু দুবার। তারপর গাড়ি চলতে শুরু করল।
বাইরের আওয়াজ ছাড়া গাড়ির ভিতরে পিনপিনে নীরবতা। অন্যসময় হলে অপূর্বই যেচে যেচে হাজারটা কথা বলে কিন্তু আজ তাকে পুরো শান্ত লাগছে। সিয়ার দিকে ভুল করেও একবার তাকায়নি সে।
সিয়া এবার জড়তা করতে নিজেই বলে উঠলো “আপনি ঠিক ছিলেন অপূর্ব। আমি সত্যিই বড্ড বোকা নইলে কি আর একজন বিশ্বাসঘাকতকের জন্য নিজের প্রাণ দিতে যাই।”
অপূর্ব শুনে হালকা হাসলো তারপর বললো ” তুমি অনেক স্ট্রং সিয়া। নইলে এতো সহজে কেউ বাস্তবতা মেনে নিতে পারে না।”
সিয়া উত্তর দিলো না জানলা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে থাকলো। অবশ্যই বাইরে সে প্রচন্ড স্টং মেয়ে কিন্তু ভিতরে ভিতরে যে চুরমার হয়ে গেছে। কিন্তু সে কথা কাকে বলবে..?
______________________________________
বিকেল অবধি সবাই প্রায় হসপিটালই ছিলো। চন্দ্রাকে ছুটি করিয়ে সবাই মিলে তাকে সিয়ামের বাড়ি নিয়ে এলো। চন্দ্রা মানা করতে পারলো না তার ভিতর সেইটুকু শক্তি অবশিষ্ট নেই এখন। কিন্তু সবাই থাকলেও বেহায়া চোখ দুটো যাকে খুঁজছে সে কই..?
সিয়াম চন্দ্রার সামনে আর যায়নি। এই অবস্থায় চন্দ্রা আবার উত্তেজিত হলে ডাক্তার ছাড়তো না হসপিটাল থেকে। তাই সিয়াম সবাইকে সব বুঝিয়ে অফিস চলে গেছে নিজের যদিও ওখান থেকে বসে বসেই সবটা পর্যবেক্ষণ করেছে সে।
রাত ১২ টা
চন্দ্রা নিজের রুমে একটা বই খুলে কোলে নিয়ে বসে আছে। তার ভিতরটা অস্তির অস্থির লাগছে সিয়াম কোনোদিন এতো দেরি করে না। মিনিট কুড়ি আগে ইন্দ্রা চন্দ্রাকে একা রেখে নিজের রুমে গেছে। চন্দ্রা ফোন হাতে নিয়েও ফোন করেনি সিয়ামকে এক তো সে কথা বলতে পারবে না দুই তার অনেক প্রশ্নের উত্তর জানা বাকি।
তখন সে একটু বেশিই অভার রিয়েক্ট করে ফেলেছে সিয়ামের সাথে।
ধীরে ধীরে তার সামনে অনেক সত্যিই আসছে। চন্দ্রা এই বিষয় ইন্দ্রাকে কিছু করে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে। ইন্দ্রা তাকে অনেক বুঝিয়েছে এই ব্যাপারে। তার ধারণা কোনো কারণ না থাকলে সিয়াম নিশ্চই এইরকম করতো না। ইন্দ্রা কথায় কথায় এটাও জানিয়েছে যে তাকে তার আগের লাইফ থেকে বের হতে যে মানুষটা সাহায্য করেছে সে সিয়ামই। তাই ইন্দ্রা সিয়ামকে আগে থেকে চেনে।
চন্দ্রার মাথায় প্রচুর প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। ইন্দ্রা পুরো বিষযটাতার কাছে ক্লিয়ার করেনি। কতক্ষণে যে তার গলা ঠিক হবে আর সিয়ামের কাছে প্রশ্নের ঝুলি নিয়ে বসতে পারবে এই ভেবে যাচ্ছে শুধু।
এই মধ্যেই দরজায় খট করে আওয়াজ হয়। সিয়াম ভিতরে আসে। চন্দ্রা শীতল দৃষ্টিতে তাকায় সিয়ামের দিকে।
সিয়াম ভাবেছিল রাত করে গেলে চন্দ্রা ঘুমিয়ে যাবে তাই সে রাত করেই এসেছে কিন্তু চন্দ্রাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে সে বেশ অবাক হয়েছে। আচ্ছা চন্দ্রা কি তার অপেক্ষা করছিল..?
সিয়াম আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করে “তুমি এখনও ঘুমাওনি..? খেয়েছো রাতে..? মেডিসিন ঠিকঠাক নিয়েছ..?”
চন্দ্রা কিছু বলে না সিয়ামের থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বইয়ের পাতায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
সিয়াম দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ে প্রথমটা ছাড়া সবকথা প্রশ্নের উত্তরই তার জানা। সে বারে বারে সিয়া ইন্দ্রাকে ফোন করে চন্দ্রার খোঁজ নিয়েছে।
সিয়াম দরজাটা ভালো মতো আটকে সবকটা জানলার পর্দা টেনে দেয়। তারপর হুইচেয়ার থেকে নিজেই উঠে এসে চন্দ্রার পাশে বসল।
সিয়াম বসে চন্দ্রার দিকে তাকাতেই দেখলো চন্দ্রা কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
#চলবে..?
গল্পঃ #বেড়াজাল
লেখিকা: #চন্দ্রাবতী
পর্ব – #২৪
সিয়াম বসে চন্দ্রার দিকে তাকাতেই দেখলো চন্দ্রা কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
সিয়াম এবার নিজের ডান হাত টা বাড়িয়ে চন্দ্রার হাত ধরতে গেলেই চন্দ্রা হাতটা সরিয়ে নিলো।
সিয়ামের বেশ খারাপ লাগলো কিন্তু মুখে কিছু বললো না।
– চন্দ্র আমি জানি আমি অনেক বড়ো ভুল করেছি তোমার কাছ থেকে সবটা লুকিয়ে। কিন্তু একটাবার আমায় সুযোগ তো দাও নিজেকে এক্সপ্লেইন করার।
চন্দ্রা সেই শুনে আওয়াজ করে বইটা বন্ধ করে দিয়ে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সিয়ামর দিকে। তারপর উত্তেজিত হয়ে কিছু একটা বলতে উদ্যত হলো কিন্তু পারলো না গলার জন্য। গলায় টান পড়ায় বাম হাত দিয়ে ধরে মুখটা বিকৃত করে নিলো।
সিয়াম চমকে উঠলো সে ভাবেনি চন্দ্রা এইরকম কিছু করবে। সে পাশ থেকে জলের গ্লাসটা নিয়ে চন্দ্রার সামনে ধরলো। চন্দ্রা একপলক তা দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিল অর্থাৎ সে জল খাবে না।
সিয়ামের এবার রাগ হলো এতো কষ্ট পাচ্ছে তাও তাকে জেদ করতেই হবে, সিয়াম এবার নিজেই জোর করে চন্দ্রার এক হাত ধরে চন্দ্রাকে জলটা খাইয়ে দিলো।
গ্লাসটা রেখে সিয়াম শুধু বললো “কিচ্ছু শুনতে হবে না তোমায় শুয়ে পরো।” বলে চন্দ্রাকে ঠিকঠাক করে শুইয়ে সে নিজেও শুয়ে পড়লো।
চন্দ্রা এবার উসখুশ করছে তার শোনার ভীষণ আগ্রহ ছিল উপর উপর সে যতই রাগ দেখাক না কেনো। মুখ ফুটে তো এখন সে বলতেও পারবে না। অগত্যা নিজেকে গালাগাল করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লো সে।
সিয়াম ইচ্ছে করেই বলেনি আজ চন্দ্রাকে। সিয়াম সব বললেই আবার সে একের পিঠে এক প্রশ্ন করতে গিয়ে উত্তেজিত হতো আর নয়তো সব চাপ মাথায় দিতো। তার থেকে চন্দ্রা কথা বলতে পড়লেই সে সব খুলে বলবে বলে ঠিক করলো।
পরের দিন সকালে চন্দ্রা উঠেই দেখলো সে নিজের জায়গাতেই আছে উল্টে সিয়াম নিজের জায়গা থেকে সরে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। চন্দ্রার এবার বুঝতে অসুবিধা হলনা রোজ সকালে কেন নিজেকে সিয়ামের হাতে আবদ্ধ পেত। অসভ্য লোকটা ওকেই টেনে নিজের কাছে নিয়ে যেত, যাতে করে চন্দ্রার মনে হয় সে নিজেই ঘুমের ঘোরে সিয়ামের কাছে চলে গেছে।
চন্দ্রা চোখ ছোটো ছোটো করে সিয়ামকে দেখলো। যতই মনে মনে বকুক লোকটাকে সিয়ামের সান্নিধ্য চন্দ্রার এখনও ভীষণ প্রিয়। সিয়াম একেবারে আলতো করে ধরে শুয়ে আছে তাকে যাতে অল্প পরিমাণও চন্দ্রা ব্যাথা না পায়। চন্দ্রার কেনো যেন সরাতে ইচ্ছে হলো না, তাই সেও চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করে পরে রইল।
মিনিট দশেক বাদ সিয়ামের ঘুম ভাঙলো। চোখ পিটপিট করে খুলেই চোখের সামনে চন্দ্রাকে দেখে একটা মিষ্টি হাসি হাসলো তারপর আস্তে করে চন্দ্রার কপালের পাশে একটা গভীর চুম্বন দিয়ে উঠে পড়ল।
চন্দ্রা জেগে থাকায় পুরোটাই অনুভব করলো। মিনিট কয়েকবাদ সেও চোখ খুলল। সব ঠিক থাকলেও তার মনে কোথাও গিয়ে খচ করছে। তার সবসময় মনে হচ্ছে সিয়াম আরো অনেক কিছুই লুকিয়ে আছে এখনও। তাই সে চেয়েও সিয়ামকে সুস্থ অবস্হায় দেখে খুশি হতে পারছে না।
সিয়াম চন্দ্রাকে ওইরকম অন্যমনস্ক ভাবে বসে থাকতে দেখে তোয়ালে টা পাশে রেখে বললো “তা ম্যাডাম মনে মনে আমার গুষ্টি উদ্ধার করা হলে আপনি কি ফ্রেশ হবেন..?”
চন্দ্রা ঘোর থেকে বেড়িয়ে এসে সিয়ামের দিকে তাকালো। লোকটা ভুল বলে না সে সত্যিই তার চোখ পড়তে জানে এবার বিশ্বাস হলো চন্দ্রার।
সিয়াম বিছানার কাছে এসে বিনাবাক্যে চন্দ্রাকে কোলে তুলে নিয়ে হাসতে হাসতে বললো “এবার দেখছি হুইচেয়ারটা তার ঠিকঠাক যোগ্য মানুষ পাবে।”
চন্দ্রা চোখ গরম করে সিয়ামের দিকে তাকাতেই সিয়াম মুখটা ভীতু ভীতু করে বললো “আচ্ছা আচ্ছা বসতে হবে না হুইচেয়ারে, আমিই আপনাকে কোলে তুলেই সব জায়গায় নিয়ে যাবো হয়েছে, এবার তো এইরম কটমট করে তাকানো বন্ধ করো আমার ভয় লাগছে।” বলেই সিয়াম একটা মুচকি হাসি দিল।
চন্দ্রা চোখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকালো। সিয়াম দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে চন্দ্রাকে ফ্রেশ করিয়ে আনলো।
সে শুনেছে বউরা নাকি তার বরদের কথা বলার সুযোগই দেয় না। আর তাই বউয়েরা বেশি কথা না বলতে পারলে তারা ভীষণ খুশি হয়।
কিন্তু সিয়ামের একদম ভালো লাগছে না চন্দ্রাকে এভাবে দেখে তার ওই সবসময় কথা বলা চন্দ্রাটাকেই বেশি পছন্দ।
__________________________________
মাঝে কেটে গেছে চারদিন। বাড়ির সবাই চন্দ্রাকে এইকদিন বেশ যত্ন করেছে। এমনকি সুইটি বেগমও এসে মাঝে মাঝে চন্দ্রার খোঁজ নিয়ে গেছে যা চন্দ্রার কাছে ভীষণ আশ্চর্যজনক। কারন কোনকিছুতেই তাকে দেখা যায় না এমনকি সারাদিন বাড়িতেও খুব একটা তাকে দেখা যায় না। কিন্তু এইসব দেখার পরও সিয়াম আগের মতই চুপচাপ। তিনি কোথায় যায় সারাদিন কি করেন এই বিষয়ে কারোর কোনো মাথা ব্যাথা দেখেনি চন্দ্রা। সে নিজেও বেশি মাথা ঘামায়নি এই বিষয়ে কোনোদিন, তবে কিছুমাস ধরে তার ব্যবহারে নজরদারি করেছে চন্দ্রা তার চালচলন বেশ অদ্ভুত ধরনের তা বেশ লক্ষ্য করেছে , এই যেমন এক্ষুনি তার আচরণ দেখে মনে হবে সে এক কথায় তার প্রাণও দিতে পারেন কারোর জন্য। এবার একসময় মনে হয় তার মতো স্বার্থপর মানুষ দুনিয়ায় দুটো নেই।
এই কয়েকদিনে বেশ অভুতপূর্ণ কিছু ঘটনা ঘটেছে যা কিছুমাসেও ঘটেনি। এই যেমন অপূর্ব সক্ষম হয়েছে সিয়াকে তার বন্ধু বানাতে সিয়া পুরোপুরি ভাবে নিজেকে ট্রমা থেকে না বের করতে পারলেও অপূর্বের সাহায্যে অনেকটাই বেরিয়ে এসেছে। পরিবর্তন এসেছে ইন্দ্রা
ও সিরাজের সম্পর্কেও। তারা এখন দুজনে কিছুনা কিছু নিয়ে ঝগড়া করতেই থাকে। এটা তাদের দুজনের কাছেই আশ্চর্যজনক তাও প্রথম গিয়ে সিরাজই খোঁচায় ইন্দ্রাকে কয়েকদিন ইন্দ্রা চুপচাপ মেনে নিলেও এখন বেশ ঝগড়া করে সেও পায়ে পা মিলিয়ে।
সব সম্পর্ক বদলালেও শুধু বদলায়নি চন্দ্রা আর সিয়ামের সম্পর্ক। চন্দ্রা আগের মতই সিয়ামকে ইগনোর করে চলছে, আর সিয়াম আগের মতই চন্দ্রার সব কাজ নিজের হতে হতে করে দিচ্ছে। চন্দ্রা এইকয়েক দিনে সিয়ামকে দেখে বেশ অবাক হয়েছে। যে মানুষটা নিজের শরীর খারাপ নিয়েও অফিস গেছে সে তার অসুস্থতায় অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সারাদিন ওর আসেপাশে থেকেছে। খুঁটিনাটিও খেয়াল রেখেছে ওর জল টুকু তাকে একা খেতে দেয়নি। এইসব দেখে চন্দ্রার মন একটু গোললেও বিশেষ পাত্তা দেয়নি সে সেদিকে, সে যতক্ষণ না সত্যিটা জানছে ততক্ষণ তার মন কোনকিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না।
আজ সকাল সকাল ডক্টরের কাছে চেকআপ করিয়ে এনেছে সিয়াম চন্দ্রার। ডক্টর বলেছেন এখন চন্দ্রা মোটামুটি হলেও সুস্থ কথা বলতে পারবে আর হাঁটাচলাও করতে পারবে নিজে, তবে বেশি নয় একদম কমসম।
সিয়াম ঘরে ফিরেই চন্দ্রাকে কিছু বলতে দেওয়ার আগেই অফিসের দরকারি কল পেয়ে ছুটে গেছে সেখানে।
চন্দ্রার এবার ভালো লাগছে না এখনই মানুষটাকে যেতে হলো। কতশত প্রশ্ন মনে জমেছে তার যতক্ষণ উত্তর খুঁজে পাচ্ছে তার মন শান্ত হচ্ছে না কিছুতেই।
চন্দ্রা ধীরে ধীরে বিছানা থেকে উঠে সিয়ামের পড়া বইগুলো দেখতে লাগলো খুলে খুলে। হঠাৎই বইয়ের ভিতর থেকে কিছু একটা নীচে পড়ার আওয়াজ পেলো চন্দ্রা। নীচে তাকাতেই দেখলো একটা ছোট্ট ইয়াররিং পড়ে আছে মেঝেতে, চন্দ্রা সেটা তুলে হাতে নিয়ে দেখতেই চমকে উঠলো এটা তো তারই প্রিয় একটা ইয়ারিংয়ের মধ্যে একটা, যেটা সে হারিয়ে ফেলেছিল কিছু বছর আগে ঘুরতে গিয়ে। এটা তার এতটাই প্রিয় এর এক অংশ তার কাছে এখনো রাখা আছে যত্ন করে। চন্দ্রার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিল। তার ইয়াররিং সিয়ামের বইয়ের ভিতর কীকরে এলো..? তাও এতো বছর আগের। চন্দ্রা বই বন্ধ করে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো এর মানে আরো অনেক কিছুই আগে যা চন্দ্রা এখনও জানে না। চন্দ্রা ঠিক করলো সে সিয়ামকে এই বিষয়ে এখন কিছু বলবে না আগে তার আগের বিষয় গুলো ক্লিয়ার করুক তারপর তাকে এই বিষয় জিজ্ঞেস করবে।
সিয়াম ফিরলো বিকেলের দিক করে। এসেই দেখলো চন্দ্রা ফোনে কিছু একটা করছে। তাই তাকে আর ডিস্টার্ব না করে সে দরজাটা ভালো ভাবে আটকে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে বেরোতেই চন্দ্রা শান্ত কঠিন স্বরে বলল ” আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে যদি আপনার হাতে সময় থাকে তাহলে কিছু সময় চাইছি আপনার কাছে।”
সিয়াম বেশ চমকালো এতদিন বাদ চন্দ্রার কণ্ঠস্বর শুনে। তবে মুখে প্রকাশ করলো না। শুধু ” হুম ” বলে এসে চন্দ্রার মুখোমুখি বসলো।
চন্দ্রা এবার নিজেকে ধাতস্থ করে সিয়ামকে বললো “জিজ্ঞেস করার মতো কিছু রেখেছেন..? আপনাকে আপাদমস্তক দেখেই আমার সন্দেহ হচ্ছে। আচ্ছা আপনি আমায় আসলেই ভালোটালো বসেন নাকি সেটাও অভিনয়..?”
সিয়াম এবার চেঁচিয়ে বললো ” চন্দ্র , আমার ভালোবাসার দিকে আঙ্গুল তোলার অধিকার কারোর নেই। এমনকি তোমারও না বুঝেছ..?”
চন্দ্রা ধমক শুনে হলকা কেঁপে উঠলেও নিজেকে সামলে নিলো। সে এই প্রথম সিয়ামকে এতো রেগে যেতে দেখলো।
লাস্টের এই কটা বাক্যই যথেষ্ট ছিল সিয়ামের হৃদয়ের শত টুকরো করার জন্য। তাও নিজের রাগটা সামলে চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস টেনে বললো “ফাইন! সব জানতে চাও তো সবটা বলছি তোমায়। কিন্তু বলার আগে একটা শর্ত তোমায় আমাকে দিতে হবে। বোলো দিতে রাজি..?”
চন্দ্রা নীচের দিকে তাকিয়ে একবাক্যে বললো ” রাজি “।
সিয়াম বললো ” আমার এই পুরো ঘটনা বলার সময় তুমি আমায় একটাও প্রশ্ন করতে পারবেনা। আমার বলা শেষ হলে তুমি তোমার এক এক করে প্রশ্ন করতে পারো।”
চন্দ্রা কিছুক্ষন ভেবে বললো “আচ্ছা তাই। বলুন তবে।”
সিয়াম একটা লম্বা শ্বাস টেনে বলতে শুরু করলো তার অনাথ হওয়ার কথা, সুইটি বেগমের তাদের সাথে ছলনা করার কথা, সিয়ামের মা বাবাকে মেরে সম্পত্তির দখলের কথা তার এতো বছর অসুস্থতার অভিনয় করার কথা সবটুকু যতটা সিয়ামের বলার প্রয়োজন ছিল।
চন্দ্রা হা করে শুধু শুনেই গেলো প্রত্যেকটা কথা এখন মনে হচ্ছে তাকে শর্ত না দিলেও সে চুপ করেই শুনতো প্রত্যেকটা কথা। কারন প্রত্যেকটা কথায় ছিল চন্দ্রার জন্য চমক।
চন্দ্রা সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে সিয়ামের মা বাবার মৃত্যুর ঘটনা শুনে। যা বলার সময় সে লক্ষ্য করেছে সিয়ামেরও ঠোঁট কাঁপছিলো। হয়তো জলও এসেছিল চোখে তবে টা গড়িয়ে পড়ার আগেই সন্তপর্নে সে মুছে ফেলেছে। যদিও চন্দ্রার চোখের আড়াল হয়নি তা। চন্দ্রার ভেবেই গা শিরশির করে উঠছে , তার নিজেরই যখন এতো খারাপ লাগছে শুনে আর এই মানুষটাতো এত বছর ধরে বয়ে বেড়াচ্ছে এসব।
চন্দ্রা এবার দুজনের নীরবতা কাটিয়ে প্রশ্ন করলো ” তা আমার থেকে আপনার অসুস্থতা লুকোবার কারণ..?”
সিয়াম জবাব দিলো ” বিশেষ কারণ কিছুই না আমি উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করছিলাম শুধু। আর এমনিতেও আমার উপর বেশ নজর রাখা হয়। তাই আমি চাইনি ভুলবশতও মনি একটুও টের পাক।”
চন্দ্রা আরো কিছু জিজ্ঞেস করতে গেলো কিন্তু তার আগেই দরজায় টোকা পড়ার আওয়াজ পেলো দুজন।
চন্দ্রা সিয়ামের দিকে তাকাতেই সিয়াম উঠে গিয়ে হুইচেয়ারে বসলো। চন্দ্রা উঠে গিয়ে দরজা খুলতে উদ্যত হলো।
#চলবে..?