বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব-৩০ | বাংলা রোমান্টিক গল্প

0
3102

#বৃষ্টি_হয়ে_নামবো
#Writer_Nondini_Nila
#Part_30

12 ঘন্টা হতে আর মাত্র 10 মিনিট আছে। অথচ এখন অব্দি দোলার জ্ঞান ফেরেনি। ওটির রুম খুলে দেওয়া হয়েছে। ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দিয়েছে। তাই তারা বলেছে আত্মীয়-স্বজন সবাই চাইলে এখনও ওর কাছে যেতে পারবে কারণ বেশী সময় নাই তারা ভাবছেন দোলার আর জ্ঞান ফিরবে না কারণ ফেরার হলে আগেই ফিরত।
এখন আর দোলার মাকে না জানিয়ে লাভ নেই তিনি এসে বুঝতে পেরেছেন কিছু একটা হয়েছে এখনতো তিনি তার মেয়ের পাশে বসে করে কেঁদে যাচ্ছে।

একটি মাত্র মেয়ে তার আর তার কিনা অবস্থা। চোখের জল কোনমতেই বাঁধ মানছে না। সবাইয়ের চোখ ভরা পানি নিয়ে ওটির ভেতরে দাঁড়িয়ে নীরব হয়ে দাঁড়ায় দোলার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। দোলার মা আচমকা আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন।
তাকে নিয়ে আবার ভর্তি করতে হলো।
এদিকে আদনান হসপিটালে নেই। দোলার সাথে পাগলামো করে দেখা করে আবার চলে গেছে কোথায় যেন।
ডাক্তাররাও চোখে পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাদেরও কষ্ট হচ্ছে তারা কখনোই চায়না কোন পেশেন তাদের কাছে এসে এভাবে সবাইকে ছেড়ে চলে যাক। কিন্তু সবাই কে তো বাঁচানোর সম্ভব না। যদি তার হায়াত না থাকে। কিন্তু তারাতো নিরুপায়।

চোখের চশমাটা খুলে চোখটা মুছে নিল তখনই হঠাৎ চোখে পরলো দোলার হাতের আংগুল নড়ছে। উনি চমকে উঠল তাড়াতারি দোলার কাছে গেলেন। সবাই ভেতরে দাঁড়িয়ে ছিলেন দোলার মা বাদে তাকে আরেকটা কেবিনে ভর্তি করা হয়েছে।সবাই আশা ছেড়ে দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন তখন হঠাৎ ডাক্তারকে দোলার কাছে দৌড়ে যাওয়া তে সবাই অবাক হয়ে তাকালো। ডাক্তার দোলার পালস চেক করছেন। তারপর নার্সকে দেখে অক্সিজেন দিতে বলল।আর অক্সিজেন দোলার নাকে দিতেই দোলা জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। আস্তে আস্তে নিঃশ্বাস নেওয়া টা স্বাভাবিক হলো। সবাই বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে সবার চোখে-মুখে আশার আলো ফুটে উঠল।
ডাক্তার দোলাকে একটা ইনজেকশন দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল, আর মামনি দের কাছে গেল,
মামনিরা ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল,
ডঃ দোলা..
মিরাক্কেল আপনাদের দলা বেঁচে গেছে। আমি তো একদমে আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম তখন কিভাবে কি হলো সত্যি আই এম শকড।
কিন্তু ডঃ দোলা তাহলে কথা বলছো না কেন?
তাকে ঘুমের ইনজেকশন দেয়া হয়েছে। এখন আর কোন চিন্তা নেই যা ছিল সব কেটে গেছে। আপনারা একদম নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন উনি 4/5 দিনের ভেতরে ঠিক হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ আমরা তো আশা করছি।

সবার মুখে খুশি দেখা পাওয়া গেল
সবাইকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আমার দিকে রুম থেকে বেরিয়ে এলো,,
এবার সবার চিন্তা করতে লাগল আদনান ভাই কোথায় গেছে। অনেকক্ষণ ধরে তাকে দেখা যাচ্ছে না। আমার জন্য ভাইয়া কেমন পাগল সবাই তা জানে। তাই আমার এই খবরটা ভাইয়া এখন জানানো দরকার। না হলে ভাইয়া কি থেকে কি করে বসবে সন্দেহ আছে।
কিন্তু কোথায় ভাইয়া কোথায় সবাই পাগলের মতো ভাইয়াকে খুজতে লাগলো। তারপর ফোন করতে লাগলো, কিন্তু রিসিভ করছো না?

সবাই আমার চিন্তা বাদ দে এখন ভাইয়া চিন্তা করছে।এদিকে ভাইয়া মসজিদে চলে এসেছিল আমার জন্য দোয়া করার জন্য যাতে আমি সুস্থ হয়ে যায়। আর ডাক্তার কে নিজের নাম্বার দিয়ে সে বলেছিল আমার জ্ঞান ফিরলে যেন জানায় আর না হলে সে ওখান থেকে আসবেনা। ডক্টর আঙ্কেল বুদ্ধি করে আমার জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে কল করে জানিয়ে দিয়েছে। ভাইয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মসজিদ থেকে আমার এখানে আসতে নেয়। গাড়ি চালাচ্ছে তাড়াতাড়ি তখনই ভাইয়ের চোখ যায় রাস্তার বাম কর্নারে।

সেখানে দাঁড়িয়ে আছে তিথি আর একটা ছেলে।ভাইয়া গান্ড়িটা খুব সাবধানে থামিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে সে দিকে তাকায় ভাইয়া তাকানোর মাঝে সামনে ছেলেটির তিথির গালে ঠাস করে চড় মারে রেগে।
এটা দেখে ভাইয়া হকচকিয়ে যায় সাথে সন্দেহ হয়
তাই লুকিয়ে তিথিদের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে কথা শোনার চেষ্টা করে।
তিথি বলছে,
ভাইয়া তুই আমাকে মারলি?
হ্যাঁ মারলাম। তুই কোন সাহসে দোলা কে মারার প্ল্যান করেছিস?
আমি ওকে মারবো সেটা তো আগে থেকেই জানো।
না আমি জানিনা আমি জানি শুধু এটুকুই তুই দোলাকে আদনানের থেকে দোলা কে সরাতে বলেছিলি।
হ্যাঁ বলেছিলাম কিন্তু তুমি সেই সব পারছ না।আর আমি আদনানের থেকে দোলাকের সরাবো বলেছি সরাতে না পারলে আমি পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবো দোলাকে ওর জন্য আদনান আমাকে বারবার অপমানিত করে। ইগনোর করেছে।

আদনান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে দোলার এই অবস্থায় জন্য তিথি দায়ী। ও ইচ্ছে করে দোলার এই অবস্থা করেছে।রাগে ওর ফর্সা মুখ রক্ত বর্ণ ধারণ করছে।
ও আড়াল থেকে তিরিশের কাছে যাওয়ার জন্য এক পা এগিয়ে যায় ওমনি ওর ফোন বেজে উঠে আর ওইদিকে থেকে তিথিরা ও ফোনের আওয়াজ পেয়ে পেছনে তাকায় চমকে।
আদনান তাড়াতাড়ি ফোন বের করে রিং অফ করে লুকিয়ে পরে।
এদিকে আরাফাত বদে উঠে,
তুই কাজটা ভুল করেছিস যদি দোলার কিছু হয় আমি তোকে বোন বলে ক্ষমা করবো না মনে রাখিস।
তিথি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে ভাইয়ের দিকে ,
মানে এসব কি বলছো?
ঠিকই বলেছি। দোলাকে আমি ভালোবাসি ওকে আমার চাই।আর তুই কিনা ওকে মেরে হসপিটালে পাঠিয়েছিস।
হতদম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে ভাইয়ের দিকে তিথি তারপর বলল,
হোয়াট,
দোলার কিছু হলে আমি তোকে ক্ষমা করবো না।আমি চেয়েছিলাম দোলা আমার হবে আর আদনান তোর কিন্তু তুমি কি করলি।
আমি তো এসব জানতাম না। আর তুই ওই দোলাকে পছন্দ করিস কবে থেকে‌।
আরাফাত কিছু না বলে হনহনিয়ে চলে গেল।এদিকে আদনান বিষ্ময়ে হতদম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের সমস্ত কথায় ও শুনেছে।
আদনান কি যেন ভেবে নিজের গাড়িতে ওঠে হসপিটালে চলে এলো। তারপর ধরে দোলার কেবিনে এলো সবাই চিন্তিত হয়ে দোলার কেবিনের বাইরে বসে ছিল। তখন ছুটে আদনান কে আসতে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে পরে ওর কাছে আসে।
নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে লাগে। আদনান কোনমতে কাটিয়ে দোলার কাছে আসে।
দোলার অক্সিজেন খুলে দেয়া হয়েছে হাতে স্যালাইন চলছে। নিষ্পলক ভাবে দোলা দিকে তাকিয়ে থেকে আদনান পাশে গিয়ে বসে। দোলা ইনজেকশনে খুব ভয় পায় আর এখন কিনা ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। দেওয়া হবে কতটা ভয় পাবে ঘুম ভাঙলে।আদনান নিজের কাঁপা হাতটা আস্তে করে দোলার শুকনো গালে স্পর্শ করে। নিজের ভুলের জন্য দোলার এই অবস্থা। তিথিকে আমার আনা উচিত হয়নি ও ভালো হবার মানুষ না আমার আগে বোঝা উচিত ছিলো। ওর জন্য আমার দোলা রানী কত কষ্ট পাচ্ছে। আদনানের চোখের কোনে পানি জমে ওঠে। তিথিকে ও ওর ভাইকে এর চরম শাস্তি দিয়েই ছাড়বে। আদনানের চোখের পানি গাল বেয়ে দোলার হাতে পড়ে। আর তখনই দোলা পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। আদনান কে নিয়ে যে সামনে বসে থাকতে দেখে আমার চোখ ছল ছল করে ওঠে।আমার চোখ কেম গোলা হয়ে আসছে আমি আবার চোখ বুজে চোখ মেলে ভাইয়া দিকে তাকায়।
ভাইয়া আমার দিকে নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে আছে তার চোখের কোনে পানি জমে আছে। আমি দুর্বল গলায় ভাইয়াকে ডেকে উঠি,
ভা–ই–য়া
ভাই আমার মুখে কথা শুনে আমার আরেক পাশে এসে বসেছে যে পাশে স্যালান দেওয়া হয় নাই।
তারপর হাত শক্ত করে ধরে তিন-চারটা চুমু খেয়ে বলে,
কথা বলিস না তোর কষ্ট হবে দোলা রানী।
আমি আবার কিছু বলতে গেলে ভাইয়া হাত দিয়ে আমাকে চুপ করে থাকতে ইশারা করে।
একদম কথা বলিস না তুই আমাকে কত ভয় পায় দিছিলি জানিস।আমার মনে হচ্ছিল আমি আমার প্রাণ ভোমরা হারিয়ে ফেলছি।বুকের ভেতরটা কত ব্যথা করছিল জানিস আর কখনো এমন ভয় পাওয়াবি না আমাকে। না হলে কিন্তু সত্যিই তোর সাথে প্রেম করবো না।
কষ্টের মাঝেও ভাই আর এই কথা শুনে আমি মৃদু হাসলাম। আর ভাইয়ার বারণ সত্তেও বললাম,
আমি তো প্রেম করবই না আমি তো এবার বিয়ে করবো।
ভাই আমার কথা শুনে শকড হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
তারপর ভাইয়া বলল, পাগলি। বলে ভাইয়া মাথা উচু করে আমার সারা মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিল। আমি চোখ বন্ধ করে ভাইয়ার স্পর্শ অনুভব করছি।কেমন যেন মাথা যন্ত্রণা করছে আমি নিজের মধ্যে থাকতে পারছিনা আসতে আসতে আমি ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলাম।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে