বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব-০২

1
2799

#বৃষ্টি_হয়ে_নামবো
#writer_Nondini_Nila
#Part_2

বড় বড় চোখ করে বিষ্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি আদনান ভাইয়ের দিকে। জীবনে এতো বড় শক মনে হয় খাই নাই আর। আদনান ভাইয়ের দৃষ্টি সামনের দিকে ভুলে ও আমার দিকে তাকাচ্ছে না।একইভাবে সামনে দিকে তাকিয়ে হেটে যাচ্ছে আর আমি তার কোলে থেকে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি হতভম্ব হয়ে। আদনান ভাইয়ের ফর্সা মুখ লাল টকটকে হয়ে আছে ভ্রু কুঁচকে চোখ একটু ছোট করে হেঁটে যাচ্ছে। তার এই শক্ত কঠিন মুখ দেখেই আমার হার্ট এটাক করার অবস্থা। শেষমেষ কিনা আজ কেউ ধরা খেলাম তার হাতে।নিজের কপাল নিজের ই চাপরাতে ইচ্ছে হচ্ছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়। এতো পোড়া কপাল আমার একটু শান্তি পায় না এরজন্য। আহারে বেচারা পা আমার কি অবস্থা হয়েছে। এই খাটাশ টার জন্য আমার পায়ের এই হার হলো।

তখন ভাইয়াকে দেখে আমি ভয়ে হাত থেকে ব্যাট নিজের পায়ের উপর ফেলে দেই।আর ও মাগো বলে চিৎকার করে পা ধরে নিচে বসে পড়ি আমি বসার সাথে সাথে ভাইয়া এক প্রকার ঝড়ের গতিতে আমার কাছে এসে পা ধরে ঘাসের উপর বসে নিজের হাঁটুর উপর আমার পা নিয়ে দেখতে থাকে কি হয়েছে? কাঠের ব্যাড সেটা তো আর কম ভাড় না এক আঙ্গুলে পড়ে সেটা সাথে সাথে ফুলে উঠেছে আর সাইড দিয়ে লাল হয়ে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে আমার পা।আহ কি ব্যথা ভাইয়া আমাকে অবাক করে দিয়ে একটু বকলো না বরংচ আলতোভাবে ছুঁয়ে দিয়ে বলল,,
“জানি এটা হ‌ওয়ার বাকি ছিল আমি জানতাম এমন কিছুই ঘটবে। এই জন্যই তোকে আমি বারবার বাচ্চাদের মত লাফালাফি করতে মানা করি তুই এখন আর ছোট্ট বাচ্চা রোশনী বড় হয়েছিস। কিন্তু তুই তো আমার কথা শোনার মেয়ে না। আর তোর ওড়না কোথায় ওড়না কি কোমর এ বেঁধে রাখার জিনিস বেয়াদব মেয়ে তুই কি এখনো ছোট বাচ্চা রয়েছিস। এই মাঠ ভর্তি লোকের সামনে এভাবে ওনার কোমরে বেঁধে লাফালাফি করছিস।”
ভাইয়ার কথা গুলো একদমই চিৎকার আর রাগ নিয়ে ছিল না খুব করুন গলায় ছিল সে আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছিল তারপর একটু মুখটা শক্ত করে আমার দিকে তাকিয়ে তারপর আর কিছু না বলে কোলে তুলে নিল।ভাইয়ার আচমকা কাজে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম স্তব্ধ হয়ে ভাইয়া দিকে তাকিয়ে আছি। মাঠের সবাই আমাদের দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন আমরা সিনেমা দেখাচ্ছে অসহ্য।
আমি সবার দিকে তাকিয়ে একবার ভেংচি কেটে তারপর ভাইয়ার গলা জড়িয়ে ধরে চুপ করে রইলাম।
আজকে যে ফাস্ট ভাইয়ের কোলে উঠেছি এমনটা না এর আগেও বহুবার আদনান ভাইয়া আমাকে কোলে নিয়েছে।এমনি এমনি না সব সময় আমি কোন না কোন আকাম করেছি আর তখনই রেগে বকাবকি করে খোলে নিয়ে বাসায় গিয়েছে। আর এখন যদি কোলে নেওয়া নিয়ে কিছু বলি খাব একটা ধমক তার থেকেই ভাবে থাকায় বেটার। আর যে ব্যথা পেয়েছি এই পা নিয়ে আমি হাটতেও পারবোনা।

ভাইয়ার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবছিলাম। আচমকা ভাইয়ার গম্ভীর কণ্ঠে বাস্তবে ফিরে এলাম,
“এমন অসভ্যের মত গলা জড়িয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?”
লেহালুয়া তিনি আমাকে কোলে নিয়ে সবার সামনে চলতে পারবে আর আমি তার গলা জড়িয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারবো না।
কত বড় বদমাইশ হলে এমন ভাবে আমাকে বলতে পারে। আমি কটমট করে আদনান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি।
আদনান ভাই সামনের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলেছিল এবার আমার মুখের দিকে তাকালো।
“কি হলো এভাবে চোখ কটমট করছিস কেন?”

আমি ভীতু ভাইয়ার সামনে তো উপর এবার বলেই ফেললাম সাহস করে নিজে আমাকে কোলে নিয়ে যাচ্ছে তাতে কিছু হচ্ছেনা আর এখন আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকলেই নাকি আমি অসভ্য হয়ে যাব।

“তুমি আমাকে অসভ্য বললে তোমার দিকে তাকিয়ে আছি বলে আমাকে অসভ্য বলবে নিজে যে আমাকে এমন সবার সামনে নির্লজ্জের মত কোলে নিয়ে হাঁটছো এতে তুমি অসভ্য হচ্ছে না আর আমি তোমার গলা জড়িয়ে ধরেছে আরেকটু তাকিয়েছি বলে অসভ্য হয়ে গেলাম।কালকে তুমি আম্মুর সামনে আমাকে জা নয় তাই বলে বকে এসেছ তার জন্য কিনা আমার দুই দিন ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়েছে মার কাছ থেকে আবার আজকে তোমার জন্য শুধু মাত্র তোমার এই খাটাশ মুখটা দেখে আমার পা ভেঙে গেল এই অবস্থা হলো আর তুমি কিনা আমাকে সারারাস্তা ধমকাতে ধমকাতে আসছো। মামুনির সাথে আজকে দেখা করব তোমার নামে যদি আমি বিচার না দিয়েছি তো আমার নাম ও দোলা নয় হুহ।”
খুব সাহসী হয়ে একদমই কথাগুলো বলে উঠলাম।এই কথা বলতে বলতে কখন যে বাসার চলে এসেছি বুঝতেই পারিনি। আমরা এখন আমাদের বাগানে আছি।আমার কথা শেষ হতেই আদনান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি সে আমার দিকে তাকিয়ে নেই সে সামনে দিকে তাকিয়ে হেটে যাচ্ছে আমি তো ভাবতেছি এতগুলো কথা যে বলে ফেললাম রাগের মাথায় এখন আমার উপর দিয়ে যে কি যাবে তাই ভাবছি কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ভাই আমাকে আর কিছুই বলো না এসব বিষয় এ ।
ড্রইংরুমে এনে সোফায় বসিয়ে দিল ভাইয়া আমাকে আমাদের এভাবে বাসায় আসতে দেখি মা এক প্রকার ছুটতে ছুটতে এসে দাঁড়াল পাশে আমার দিকে কঠিন করে তাকিয়ে ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে?
আমার নামে একশো কুড়ি বদনাম করতে শুরু করে দিলো আদনান ভাই আমি রাগে ফুসফুস করছি আদনান ভাই এর বিচার দেওয়া দেখে একবার তোমাকে বাঘে পাই বাছাধন কি হাল করবো তুমি ভাবতেও পারবে না।এই দোলা কে এভাবে শায়েস্তা করার শাস্তি তো তুমি অবশ্যই পাবে। আহারে আমার পা। বলেই পা নাড়াতে গিয়েই দিল আমি চিৎকার। এত ব্যথা আমি কল্পনাও করিনি। আমার চিৎকার শুনে আদনান ভাইয়ের আর মায়ের কথায় ব্যাগাত ঘটল ভাইয়া ফ্লোরে বসে ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগল কি হয়েছে? আমি চিৎকার দিলাম কেন? আমার মা ও তো ব্যস্ত হয়ে গেল দুজনেই এখন ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করছি কী হয়েছে?
আহ্লাদ‌দেখাতে আসছে এখন আমাকে এতক্ষণ যে আমার নামেই কুটকাচালি করছিল দুইজন।কিছুক্ষণের মাঝেই মামনি চলে এলো আমাদের বাসায়। ভাই আমার পায়ে তখন ব্যথার মলম লাগিয়ে দিয়েছিল।মামুন এসে আমার পাশে বসে মাথায় হাত দিয়ে এক হাতে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করতে লাগল কী হয়েছে আমি ও মামনীর বুকে মাথা হেলিয়ে দিয়ে চুপ করে রইলাম।একটু পরে আদনান ভাইয়ের নামে বিচার দেওয়া শুরু করবো ভাইয়া পাশে আছে এখন কিছু বলা যাবে না। একটু পরে বলব।ভাইয়া এতো সল্ট ভাবে আমার পায়ে মলম দিচ্ছে যেন ব্যথা আমি না উনি নিজেই পেয়েছে। এতো ভালোবাসা দেখাচ্ছে কেনো এমনিতে তো আমাকে দু’চোখে সহ্য করতে পারে না।
জানি জানিকেন এত আদর যত্ন করছে এই ব্যাথাটা যমুনার জন্য পেয়েছে এটা বললে তুমি বকা খাবে।অবশ্য সেই বকাটা আমার পরিবারের কেউই দেবে না সেটা একমাত্র মামনি কে বললে হবে।একটু আগে আম্মুকে বলেছিলাম এই ব্যাথাটা পাওয়ার জন্য একমাত্র দায়ী আদনান ভাই।কিন্তু কি শত্রু মামার আজাদ ভাইকে তো কিছু বলবে না উল্টা সব দোষ আমার ঘাড়ে দিয়ে চলে গিয়েছে গরমপানি করতে গরম পানি পায়ে স্যাক দেবে এজন্য।

আদনান ভাই আমার পায়ে মলম দেওয়া শেষ করে চলে যাওয়ার আগে একবার আমার কানে কানে বলে গেল,,
“তুই তো আমার কাছে এমনিতেই আজ শাস্তি পেতে অমান্য করে মাঠে যাওয়ার জন্য। কিন্তু এবার সেইটার আরো বেশি হল পা টা ঠিক হতে দে তারপর তোরে বাচ্চামো‌ আর অসভ্যের মতো লাফালাফি করে বেয়াদবের মত খেলার জ্বাল মেটাবো।”
কানে কানে ফিসফিস করে কথাটা বলে বেরিয়ে গেল আমি তারপা আদনান ভাই এর নামে মামুনির কাছে বিচার শুরু করলাম।
পায়ে ভালোই জখম হয়েছে রাতে আমার গা কাঁপিয়ে জ্বর চলে এলো। জ্বর এলে আমি মা ছাড়া কিছু বুঝিনা। রাতে জ্বর আসার পর থেকে মা মা করতে লাগলাম মা বাবা দুজনেই ভয়ে আমার রুমে আসলো তখন মাঝ রাতে এসে দেখে আমার শরীর জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।পায়ের ব্যথা থেকে জ্বর এসেছে আম্মু তো ভয় পেয়ে গেছে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে আমি মাকে জড়িয়ে বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছি অন্য সব রোগের থেকে জর আমাকে কাবু করতে পারে ভালো। জ্বর আসলে আমি একদমই নেতিয়ে পরি। আর আজেবাজে কথা বলতে থাকি। আমিও জ্বরের মাঝে আদননা ভাইকে বকে যাচ্ছি।
আমাদের বাড়িতে এতকিছু এইসব আদনান ভাইয়ের বাড়িতে চলে গিয়েছে কারণ পাশাপাশি বাড়ি হয় আমাদের বাড়িতে চেঁচামেচিতে তারা জেগে গিয়েছে মাঝরাতে আদনান ভাই রুমে শুয়েছিল তার ঘুম আসছিল না আমার পায়ের ব্যথার জন্য।কেবলই ঘুমটা ধরে ছিল তখনই চিৎকার-চেচামেচি উঠে বসে আমার রুমের দিকে তাকায় রুমের লাইটের আলো দেখে নিজের রুমে থেকে রুমের দিকে তাকিয়ে কান্নার শব্দ পেয়ে চমকে উঠে আমার জন্য। তাড়াতাড়ি আমাদের বাসায় আসে আর সব জানতে পেরে ডাক্তারকে কল দেয়। আমার যখনই কোনো বিপদ আসে বা আমি অসুস্থ হই সবথেকে বেশি আদনান ভাই পাগল হয়ে যায় আজকেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।পাগলের মত ডাক্তার কে ফোন করে আসতে বলে কিন্তু ডাক্তার মাঝ রাতে আসবে না বলে দেয় আর পায় কে আদনান ভাই সে ডাক্তারের বাসায় চলে যায় আর জোর করে ধরে নিয়ে আসে আসবি না আবার।
আর আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছি।
ডাক্তার আমাকে দেখে তেমন সিরিয়াস কিছু বলল না কারণ আমার সিরিয়াস তেমন কিছুই হয়নি। পায়ের ব্যথা বাড়ার কারণে এত জর এসেছে। পায়ের ব্যথা কমে গেলে জ্বর সেরে যাবে এটা তেমন গুরুতর কিছুই না। এজন্য কেউ এমন পাগলামো করে তাকে মাঝরাতে নাকি হুমকি দিয়ে নিয়ে এসেছে। আদনান ভাই তো আমি বলতে পাগল।অবস্থা দেখে তিনি নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি ‌ ডাক্তারি কথা শুনে কিছুটা শান্ত হলো ডাক্তারকে সরি বলে আবার বাসায় পৌঁছে দিতে গেল।ডাক্তার আমাকে একটা প্যারাসিটামল ও ব্যথার ট্যাবলেট সাথে গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট খাইয়ে দিয়ে চলে গেল। একটা ছোট প্যাকশিকশন লিখে দিয়ে।

দুই দিন ধরে শুয়ে থাকতে হলো জ্বর অবশ্য পরের দিনই কমে গিয়েছে আর আসেনি।কিন্তু আমাকে ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হয়না আর আমি চাইলেও বের হতে পারি না পা যে ব্যথা কিছুটা কমলেও হাটতে পারি না। অদ্ভুত ব্যাপার আদনান ভাই আমাকে দুই দিন আর দেখতে এল না। তার এই কাজে আমি একটু না অনেক খানি অবাক হয়েছি। আমার কিছু হলে তো তিনি সারাদিন আমার পেছনে পড়ে থাকে।কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম হলো সেদিন রাতের পরে তাকে আর দুদিন দেখলাম না কোথাও।তিন দিনের মাথায় পায়ের ব্যথা কমেছে একটু খুরিয়ে খুরিয়চ হাঁটি আমি সেদিন মামুনির বাসায় চলে এলাম।তার একমাত্র উদ্দেশ্য ওই খাটাশ আদনানের খবর নিতে ওকে আমি সহ্য করতে পারিনা তবুও দুই দিন না দেখে কিছুটা শূন্যতা অনুভব করলাম। কেন মিস করলাম জানিনা আমি তো সব সময় চাই আদনান ভাই আমার চোখের সামনে থেকে দূরে থাকুক তাহলে আমি আমার নিজের লাইফটা শান্তি মতো নিজের লাইফটা এনজয় করতে পারবো। এই যেমন ভাইয়ের জন্য আমি কারাগারে বন্দি থাকি।আর অদ্ভুত বিষয় আমার ফ্যামিলির সবাই সেটা মেনে ও নেই।
কোথাও তার জন্য শান্তি মত থাকতে পারি না কলেজের কোন ছেলের সাথে কথা বলতে পারি না কারো সাথে কথা বলা যাবে না এই যেমন মাঠে খেলা যাবে না সবসময় বাসায় থাকো পরও এই দুঃখ
পিকনিকে যতবারই গিয়েছে আমি তার জন্য যেতে পারি নাই আর যদিও গিয়েছি সে আমার সাথে বডি কাট হয়ে গিয়েছে
আপনারাই বলুন আদনান ভাইয়ের মত মানুষেরা আমার সাথে যায় তাহলে কি আমি শান্তি মত পিকনিক ইনজয় করতে পারব।সে আমাকে এটা করতে দেবে না ওটা করতে দিবে না ওটা খেতে দেবে এটা পড়তে দেবেনা অফ অশান্তি সেখানে গিয়েও আমাকে এরকম কড়া শাসনে রাখা হয়।
সবকিছু নিয়েই তার বাড়াবাড়ি অসহ্য এজন্য তাকে আমি একদম সহ্য করতে পারি না তবুও তাকে কিনা আমি মিস করেছি ভাবা যায়।
ভাবনা-চিন্তা করতে করতে মা মণির বাসায় চলে এলাম।
#চলবে

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে