বৃষ্টি শেষে রোদ পর্ব-০৫

0
440

#বৃষ্টি_শেষে_রোদ (পর্ব ৫)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

দেখতে দেখতে ঘনিয়ে এলো রুহি আপুর বিয়ের সময়। বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে আজ থেকে। বিয়ের কেনাকাটার জন্য বের হয়েছে তারা। রুহি, রুহির মা, রিদ, রোহান, রুমকি, আরশি ও আরশির বোন আরিশা আপু।

সবাই যার যার মতো কাপর দেখতে ব্যস্ত। প্ল্যান ছিল মেয়েরা সবাই বিয়ের জন্য এক রঙের শাড়ি নিবে। আর ছেলেরা এক রঙের পাঞ্জাবি। রিদ ও রোহান মিলে পাঞ্জাবী দেখছে নিজেদের জন্য। দুজন হলুদের জন্য হলদ রঙের পাঞ্জাবি দেখছে তারা। একটার পর একটা দেখছে, কোনোটাই মনে ধরছে না। হটাৎই পাশ থেকে আরশি রিদকে ডেকে একটা কালো রঙের পাঞ্জাবির দিকে চেয়ে বলে,
“এ পাঞ্জাবি টা আপনাকে মানাবে খুব।”

পাঞ্জাবিটার দিকে এক পলক তাকালো রিদ। অতঃপর কিছুটা ভেবে বলে,
“এটা দেখতে ভালো লাগছে না একদম। তাছাড়া আমরা হলুদ রঙের পাঞ্জাবি খুঁজছি।”
আর কিছু বললো না আরশি। ক্ষনিকটা মন খারাপ করে আপুদের কাছে চলে গেলো সে। ব্যস্ত ভঙ্গিতে আবারও পাঞ্জাবি দেখায় মন দিল রিদ।

হলুদের জন্য একটা করে হলুদ শাড়ি নিয়ে। এখন বিয়ের জন্য মেয়েরা সবাই লাল রঙের শাড়ি দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আরশি একে একে তিনটা লাল রঙের শাড়ি সামনে রেখে একটা একটা করে দেখছে বারংবার। রিদ তার পাশে এসে জানতে চাইলো, কোনটা পছন্দ হয়েছে তার?

আরশি চুপচাপ শাড়ি গুলো দেখছিলো। নিজের মাঝে কোনো শব্দ ছাড়াই বিরবির করে বলে, ‘তিনটাই তো পছন্দ হয়েছে। কোনটা রেখে কোনটা নিব ওটাই ভেবে পাচ্ছি না।’
কিন্তু সেটা প্রকাশ্যে না বলে চুপচাপ একটা শাড়ি হাতে নিয়ে বলে,
“এটা সুন্দর আছে। এটা নিই।”

কেনাকাটা শেষে সবাই গেলো রুহির জন্য গহনা নিতে জুয়েলারির দোকানে। অতঃপর পাক্কা তিন ঘন্টা কেনাকাটার পর বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিল তারা। রোহান ক্লান্তি ভঙ্গিতে সিটে গা এলিয়ে দিয়ে বলে,
“ভাইরে ভাই, এই জন্য মেয়ে মানুষ নিয়ে শপিংমলে আসি না। যত সময় তাদের পেছন পেছন ঘুরলাম, এই সময়ে যদি আমি একটা বিয়ে করতাম তাহলে তাদের শপিং শেষ হওয়ার আগে একটা বাচ্চার বাপও হয়ে যেতে পারতাম।”

রিদ কিছুটা হেসে বলে,
“ভাই বিয়ে করলে তো বৌ আরো প্যারা দিবে। হয়তো তখন তিন ঘন্টার জায়গায় পাঁচ ঘন্টাও লাগতে পারে। তাহলে এর মাঝে বাচ্চা পয়দা করার সময় পাবি কই?”
রোহান ক্লান্ত ভঙ্গিতে দু’হাত জোর করে বলে,
“ভাই বিয়ের স্বাদ মিটে গেছে আমার।”

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

রুমকি জানালার পর্দা সরিয়ে দিতেই রুমটা আলোকিত হয়ে গেলো অনেকটা। সকাল হয়েছে অনেক আগেই। রুমকি একটা হাই দিয়ে ঘড়ির কাটার দিকে তাকালো। দেখে সকাল আট টা। আজ রুহি আপুর বিয়ে, এত সময় ধরে ঘুমানোর কোনো মানে হয়? এমনিতেও গতকাল রাতে ঘুমাতে ঘুমাতে প্রায় একটা বেজে গেছে।

তার মাঝে আরশি ঘুমিয়ে গিয়েছিল এগারোটার দিকে। তাও সবার সাথে রাগ করে। সে এক বিশাল কাহিনি।

রাতে রুহি আপুকে মেহেদী পরানোর পর আরিশা আপু লাগালো। তারপর রুমকি। অনেক্ষন ধরে মেহেদী লাগানোর আশায় একপাশে বসেছিল আরশি। কিন্তু সবাই তাকে ছোট দেখে ইগনোর করায় হয়তো ইগো হার্ট হয়ে তার। রাগে তার হাতে থাকা মেহেদীর প্যাকেট টা জোরে আছাড় মেরে চুপচাপ রুমে এসে শুয়ে পড়ে সে। সবাই কিছুটা অবাক হলো তার এমন কান্ডে। সবাই সিরিয়ালে একে একে মেহেদী লাগাচ্ছিল। এদিকে অপেক্ষা করতে করতে শান্তশিষ্ট মেয়েটা এমন রাগ দেখাবে কে জানতো।

আরিশা আপু তাকে ডাকতে এলে সরাসরি বলে আর লাগাবে না সে। আরিশা আপু আর জোর করলো না। কারণ সে ভালোই জানে তার বোন শান্ত হলেও এক রোগা টাইপের মেয়ে।

রুমকি হাত ভর্তি মেহেদী নিয়ে তার পাশে এসে বলে,
“ভাবি রাগ করো না উঠে পরো। আমাদের সবার হয়ে গেছে তো। আমার একটা মাত্র ভাবি, রাগ করে থাকলে ননদ হয়ে আমার ভালো লাগবে বলো?”

আরশি গলায় অনেকটা তেজ নিয়ে বলে,
“আর একবার কানের সামনে বকবক করবি তো ধরে হাতের সব মেহেদী গালের মাঝে ডলে দিব।”

রাতে রুহি, আরিশা, রুমকি সবাই মিলে চেষ্টা করেও আর মোহেদী লাগাতে পারেনি আরশিকে। অথচ রুমকি সকালে ঘুম থেকে উঠে ভালো ভাবে তাকাতেই চোখে পড়ে আরশির মেহেদী রাঙা দুটি হাত। কিছুটা অবাক হয়ে আরশিকে ধাক্কিয়ে ঘুম থেকে তুলে বলে,
“এই চিটার এই। মেহেদী তো দেখি ঠিকই লাগালি। তাহলে রাতে আমাদের উপর এমন রাগ ঝেড়ে ঢং করলি কেন?”

আরশি ঘুমু ঘুমু চোখে আশেপাশে তাকিয়ে বলে,
“আমি এখানে আসলাম কি করে।”
রুমকি কিছুটা হেসে বলে,
“কিসব আবোল তাবোল বকছিস? এখানেই তো ঘুমিয়েছিলি। তাহলে কোথায় থাকার কথা ছিল?”
আরশি আবারও ঘুমু ঘুমু চোখে বলে,
“আমি না ছাদে ছিলাম, রি…….।”
বলতে গিয়ে আচমকাই থেমে গেলো আরশি। অতঃপর কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে,
“যা তো এখান থেকে। সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। এখন একটু ঘুমাতে দে।”

বলেই অন্য দিকে ঘুরে চোখ বুঁজে নিল আরশি। রুমকি কিছুটা ভ্রু-কুচকে বলে,
“গত রাতে কোথায় ছিলি? আর মেহেদী লাগালিই বা কখন? তুই তো আমাদের সবার আগে ঘুমিয়ে গেলি। তাহলে ঘুম হয়নি কেন?”
উত্তর দিল না আরশি। রুমকি আবারও ডেকে বলে,
“এ…..ই চিটার ভাবি।”
,

গতকাল রাতে মেহেদী নিয়ে রাগ করে সবার আগে ঘুমিয়ে গিয়েছিল আরশি। হটাৎ ঘুম ভাঙতেই সামনে রিদের চেহারা ভেসে আসলো। আরশিকে পাঁজাকোলে করে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে সে। রাত তখন তিনটা। ঘুম ভেঙে নিজেকে এমন অবস্থায় দেখে কিছু বলতে চাইলো আরশি। তার আগেই রিদের ‘হুশ’ সূচক শব্দ শুনে চুপ হয়ে গেলো সে। বুকটা ধুকপুক করছো তার। এই মাঝরাতে একটা প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে তাকে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছে। কি সাংঘাতিক ব্যাপার।

ছাদের এক পাশে নিয়ে বসিয়ে দিল আরশিকে। আরশি ঘুমকাতুর দৃষ্টিতে চেয়ে কারণ জানতে চাইলে নিশ্চুপ থাকে রিদ। চুপচাপ একটা ছোট কাপরের শপিং ব্যাগ থেকে কয়েকটা মেহেদী বের করে পাশে রাখে তার।
‘আমি মেহেদী লাগাবো না’ বলতে চেয়েও বলতে পারলো না আরশি। রিদ তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
“আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি তোকে? নাকি কোনো কিছুর অনুমতি চাইছি? চুপচাপ বসে থাক। একটাকথাও বলবি না।”

সিড়ির রুমের বাইরে জ্বলতে থাকা লাইটের আলোর তাদের অব্দি পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিলো না। তাই একটা স্ট্যান এনে ফোনের প্লাস অন করে রেখে দিল সে। ফ্লোরে বসে আরশির এক হাত নিজের হাটুতে রেখে একটা মেহেদীর প্যাকেট হাতে তুলে নিল সে। আরশি শান্ত গলায় ক্ষনিকটা কৌতুহল নিয়ে বলে,
“আপনি মেহেদী পড়াতে পারেন?”
রিদ মেহেদী লাগানো শুরু করে শান্ত গলায় বলে,
“না পারলে অন্তত হাতটা তো লাল করে দিতে পারবো।”

কিছুক্ষণ নিশ্চুপ রইল আরশি। অবাক হয়ে চেয়ে রইল রিদের মেহেদী লাগানোর দিকে। সে যতটুকু আশা করেছিল, তার চেয়েও সুন্দর করে লাগাচ্ছে রিদ। মনে হচ্ছে এ ব্যাপারে মোটামুটি একজন অভিজ্ঞ ব্যাক্তি। যদিও এর জন্য কাগজের ডিজাইন টার দিকে বারংবার তাকাতে হচ্ছে রিদের। সাথে হাতও কাঁপছে ক্ষনিকটা।

এক হাত হাতে লাগাতে ঘন্টা খানেক লাগলো রিদের। অন্য হাতে লাগানোর প্রস্তুতি নিলে আরশি ক্লান্তি ভঙ্গিতে একটা হাই তুলে বলে,
“ঘুম পাচ্ছে খুব। এখন আর লাগাবো না।”
রিদ শান্ত গলায় বলে,
“ঘুমিয়ে পর।”
আরশি ঘুম কাতুর গলায় বলে,
“কোথায়?”

রিদ চুপচাপ আরশির মাথাটা টেনে নিজের কাধে রাখে। অতঃপর আরশির বাম হাতটা তার হাটুর উপর রেখে বলে,
“ঘুমা। আর হাত কিছুক্ষন নাড়াচাড়া করবি না। নাহলে লেপ্টে যাবে।”

বলেই অন্য হাতে লাগাতে শুরু করলো সে। ঘুমের ঘোরে কিছুক্ষনের মাঝে আরশি ওভাবেই বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে গেলো রিদের কাধে। মেহেদী লাগানো শেষে আরশির ডান হাতটা ধরে চুপচাপ বলে আছে রিদ। অন্য হাত শুকিয়ে গেছে এতোক্ষনে। এখন এই হাত শুকানো অব্দি এভাবেই অপেক্ষা করতে হবে তাকে। নয়তো এই অব্স্থায় বিছানায় নিয়ে রেখে আসলে ঘুমের ঘোরে হাতের বারোটা বাজিয়ে দিবে সে।

একটু একটু করে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। নড়েচড়ে কাধ থেকে মাথা সরিয়ে রিদের বুকে মাথা রেখে চুপচাপ ঘুমিয়ে আছে আরশি। অথচ তার হাতের পাহারাদার হিসেবে তাকে বুকে আগলে রেখে অন্য কেউ বসে আছে নির্ঘুম।
প্রেয়সী ঘুমাচ্ছে ঘুমাক। হয়তো প্রেয়সীর এই প্রশান্তির ঘুমই তার ঘুমের শুন্যতা পুরণ করার জন্য যথেষ্ট।

To be continue…………………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে