বৃষ্টি ভেজা রাত পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

7
2297

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__২০_এবং_শেষ

ডায়রিটা রেখে কিছুক্ষন বারান্দায় নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে বৃষ্টি। বাইরের ঠান্ডা শীতল হাওয়া এসে তাকে ছুয়ে দিয়ে যাচ্ছে বার বার। খোলা চুল গুলোতে দিয়ে যাচ্ছে অদৃশ্য হাতছানি।
ডায়রির প্রতিটা পাতায় রয়েছে হাজারো অনুভুতির বসবাস। বর্ষার প্রতি রাতের ভালোবাসার গভিরতা কতটুকু ছিলো ডায়রির প্রতিটা শব্দই তার বাস্তব প্রমান। আচ্ছা দির্ঘ বছরের এতো গভির ভালোবাসাও কি মুহুর্তের মাঝেই হারিয়ে যায়?

মাঝ রাতে চিৎকার করে ঘুম ছেরে লাফিয়ে বসে বৃষ্টি। বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে সে। কপালে জমা হয়েছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। রাত পানির গ্লাস বাড়িয়ে দিতেই এক টানে পুরু গ্লাস শেষ করে পেলে সে। তার পরও যেনো উত্তেজনা কমছেনা তার।
স্বপ্ন না এটা ছিলো চরম দুঃস্বপ্ন। বাড়ি ভর্তি মানুষের ভির। যেমনটা ছিলো তাদের বিয়ের দিন। ড্রাইনিং রুমের মেঝেতে একটা সাদা কাপরের উপর সুয়ে আছে বর্ষা। গলা পর্যন্ত সাদা কাপর দিয়ে ঢাকা তার। খোলা চুপ পড়নে লাল রংয়ের একরা জামা। ওভাবেই ফ্লোড়ে পরে আছে বর্ষার নিথর দেহটা। গলাটা ফুলে যেনো কলা গাছ হয়ে আছে। মা পাশে বসে বসে দিয়ে যাচ্ছে আত্ন চিৎকার। বাবা দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। লোকজন একে একে এসে দেখে যাচ্ছে বর্ষাকে।
পাশে থাকা কিছু মায়ের বয়সি মহিলা মাকে সান্ত করার চেষ্টা করছে বার বার।
কিছুক্ষন পর ওখানে চলে এলো এম্বুলেন্স। ওসি সাহেব বললো লাশ গাড়িতে তুলতে। পোস মার্টামের জন্য নিয়ে যেতে হবে। তার কথা মতো ব্রষাকে গাড়িতে তুলছে বাকিরা। বাবা অজ্ঞান হয়ে পরে গেছে নিচে। বৃষ্টি স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে বর্ষাকে নিয়ে যাওয়ার দিকে। আচ্ছা আপুকে কি এখন কেটে ফেলবে? তাকে কি পুরুস মানুষরা কাটবে? তাহলে তো তার পরনে জামার শেষ অংশ টুকুও থাকবেনা। ছি মরার পরও এভাবে এতোগুলো পরুষ মানুষের সামনে। আপুর কি কষ্ট হবেনা? বর্ষাকে গাড়িতে তুলতেই হাত বাড়িয়ে আপু বলে চিৎকার দিয়ে উঠে বৃষ্টি। আর তখনই ঘুমটা ভেঙে যায় তার।
পাশ থেকে রাত বলে উঠে,
– আর ইউ ওকে?
বড় বড় নিশ্বাস থামিয়ে বৃষ্টি ছোট্ট করে বলে উঠে,
– হুম।
রাত বৃষ্টির মাথাটা টেনে বুকের সাথে মিশিয়ে বলে উঠে,
– নিশ্চই কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছো? তাইনা? স্বপ্ন তো স্বপ্নই তাইনা। সেটা খারাপও হয় আবার ভালোও হয়। সারা দিন আমরা যেটা নিয়ে বেশি ভাবি। তাই স্বপ্ন হয়ে চোখের সামনে ভেষে উঠে। আর পৃথিবীতে সব রোগের ঔষধ থাকলেও এই চিন্তা রোগের কোনো ঔষধ নাই। সো এসব মাত্রই তোমার মনের ভুল।
বৃষ্টি সম্মতি জানিয়ে রাতের কাছ থেকে সরে আসে।
তার পর কাত হয়ে অপর দিকে চেয়ে শুয়ে থাকে বৃষ্টি।
চোখে ঘুম আসছেনা আর। এভাবেই পার হয়ে গেলো কিছু সময়।রাতের দিকে চেয়ে দেখে রাত পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় ঘুমের রাজ্যে পারি দিয়েছে। বৃষ্টিরও ইচ্ছে করছে খুব, যে রাতের দিকে ঘুরে তার বুকে গুটিসুটি মেরে মিশে যে যেতে। কিন্তু চাইলেই সব চাওয়া পুরন হয়না। কারন মায়া বেরে যাবে। বৃষ্টি নিজের শরির হয়ে রাতের হাতটা ছাড়িয়ে উঠে চলে যায় বারান্দায়। ঘুম যেনো চোখের আড়াল হয়ে গেছে তার। রাত তখন তিনটা বেজে পঁচিশ। এক সাথে দুটু ঘুমের ঔষধ খেয়ে সুয়ে পরে বৃষ্টি।

সকালে উঠতে মাথাটা প্রচন্ড ধরে আছে তার। ঘরির কাটার দিকে তাকিয়ে দেখে পোনে নয়টা বাজে। বাইরে সূর্যটাও ধিরে ধিরে তেজস্ব হয়ে উঠছে। ইশ কতো বেলা হয়ে গেছে। উঠে ঢুলে ঢুলে ওয়াশ রুমে চলে যায় বৃষ্টি।

মায়ের কোলে মাথারেখে সুয়ে আছে রিদ। মা তার চুল গুলো হাত দিয়ে নারাচারা করছে।
– আম্মু,….
– হুম।
– বলোতো আমাকে দেখে এখন তোমার কি মনে হচ্ছে? মানে ছেলে মেয়ের চেহারা দেখলে নাকি মায়েরা সব বলে দিতে পারে।
– দিন দিন কেমন ফেকাসে হয়ে যাচ্ছিস তুই। আমার মনে হয় তুই কোনো বিষয় নিয়ে কষ্ট পাচ্ছিস।
রিদ এবার কেদে দিয়ে বলে উঠে,
– আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আম্মু। খুব বেশিই কষ্ট হচ্ছে আমার।

আজ আর ক্লাস করতে ভালো লাগছেনা বৃষ্টির। দুইটা ক্লাস করে চলে আসছে বৃষ্টি। একটা রিক্সা ডেকে উঠে চলে আসছে বৃষ্টি। হটাৎ ই একটা রেস্টুরেন্টের সামনে রাতের গাড়িটা দেখতে পেলো বৃষ্টি। রিক্সা থামিয়ে ওখানে কিছুক্ষন দাড়িয়ে রইলো সে।
একটু পর বেরিয়ে এলো রাত। গাড়ি নিয়ে চলে গেলো সে। তার পরই বেড়িয়ে আসলো বর্ষা। সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাতের চলে যাওয়ার দিকে।
বৃষ্টি চলে গেলো বাড়ির দিকে।
বাসায় গিয়ে চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে নেয় বৃষ্টি। তার পর লম্বালম্বি ভাবে সুয়ে থাকে বিছানায়। পাশে থাকা ফোনটা বাজতেই আছে অনাবরত। স্কিনে ভেষে আছে রাতের নাম।

রাত তখন গভির। সন্ধার পর বৃষ্টি হওয়ায় ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। ঘুমের ঘরে আচ্ছন্ন আরশি। গায়ে হালকা শিতল হওয়া স্পর্স করছে তার। কেও একজন কাঁথাটা টেনে তার গায়ে দিয়ে দিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে চলে যাচ্ছে সে। আরশি পেছন থেকে হাত বাড়িয়ে ডেকে উঠে,
– রিদ ভাইয়া…
আরশি চার দিকে তাকিয়ে দেখে রুমে কেও নেই। আর তার গায়েও কোনো কাঁথা নেই।
আরশির বুঝতে বাকি রইলোনা, পূর্বের সৃতি গুলো মনে এসে নাড়া দিচ্ছে বার বার।
আরশি যেনো গুন গুন করে বলে উঠে,
– আমি আর এমন করবোনা রিদ ভাইয়া। ফিরে আসোনা একটিবার। তোমার মুখে বার বার ভালোবাসি শব্দটা শুনে বিরক্ত হবোনা আর। ফিরে আসোনা একটি বার। তোমার ছোট্ট দুষ্টুমি গুলোতেও বিরক্ত হবোনা আর। ফিরে আসোনা একটি বার।

পরদিন সন্ধায় ছাদ থেকে নেমে এসে দেখে রাত্রি চৌধুরি চা বানাচ্ছে কিচেনে। বৃষ্টি মাথা নিচু করে তার সামনে গিয়ে দাড়ালো। রাত্রি চৌধুরি চা ঢালতে ঢালতে বলে উঠে,
– কিছু বলবে?
কিছু না বলেই হুট করে রাত্রি চৌধুরিকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলো বৃষ্টি।
– আরে আরে কি করছে পাগলিটা। কি হয়েছে বলবেতো। রাত কি কিছু বলেছে? আজ ও বাড়িতে আসুক তার পর বুঝাচ্ছি তাকে। যেমন বাপ তেমন তার ছেলে। সোফায় বসে টিভি দেখছিলো রুদ্র চৌধুরি। সে বলে উঠে,
– আমায় নিয়ে কি বলা হচ্ছে শুনি? আমি আর আমার ছেলে কি আবার বলো তো।
– তুমি চুপ করো, তোমার আস্কারা পেয়ে পেয়ে ছেলেটা এমন হয়েছে।
– ইদানিং মনে হয় কানটাও সমস্যা করছে। কেমন জানি মনে হয় সব উল্টা পাল্টা শুনি। দুঃখিত মেডাম।
বৃষ্টি কেদে কেদে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় বলে উঠে,
– আমায় ক্ষমা করে দিয়েন মা।
এই বলেই চলে যায় বৃষ্টি। রাত্রি চৌধুরি হা হয়ে তাকিয়ে আছে বৃষ্টির দিকে।

বৃষ্টি পাশে ফিরে দেখে রাত ঘুমাচ্ছে বেঘোরে। রুমটা অন্ধকার। হয়তো ঘন্টা খানেক পর ভোরের আলো ফুটে উঠতে শুরু করবে। ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখে সারে তিনটা বাজে।
চিরেকুট টা টেবিলে রাখলো বৃষ্টি। স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে রাতের ঘুমন্ত চেহারার দিকে। প্রচুর কান্না পাচ্ছে তার। হিচকি তুলে কাদতে ইচ্ছে করছে আজ। রাতের মুখটায় একটা চুমু একে দিতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু তা আর হলোনা। হয়তো রাত জেগে যাবে।
এখন বাসার সবাই ঘুমাচ্ছে। যা করার এই মুহুর্তটায় করতে হবে। ছোট ব্যাগটা নিয়ে রাস্তায় বেড়িয়ে আসে বৃষ্টি। ভয় ডর আজ তার ধরা ছোয়ার বাইয়ে।এই নির্জনরাস্তায় একাকি কাদতে ইচ্ছে করছে তার। ব্যাগটা নিয়ে নিরবে হেটে চলছে সে। হয়তো আমি চলে যাওয়ার পরই সব নাটকের সমাপ্তি হবে। এসব নাটক দেখতে দেখতে আজ আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। শুনলাম বড় বোন থাকাটা নাকি ভাগ্যের ব্যাপর। তাহলে এটাই কি আজ তার ভাগ্য?

স্টেশানে বসে আছে বৃষ্টি। ভোরের আলো একটু একটু করে ফুটে উঠতো শুরু করেছে। ফোনটা বের করে সিম খুলে নেয় বৃষ্টি। যাতে কেও আর যোগাযোগ করতে না পারে। এসব মায়া জাল ছেরে অনেক দুরে চলে যেতে চায় সে। যেখানে থাকবেনা এসব ক্রাইসিস। আর নিতে পারছেনা সে। ভুল হোক সঠিক হোক এটাই আজ তার সিদ্ধান্ত যে সে চলে যাবে আজ অনেক দুরে। সবার থেকে হারিয়ে যাবে সে। তার এই নির্বাসনে জদি সব ঠিকঠাক হয়ে যায় তাহলে মন্দ কি?
ট্রেন চলছে আপন গতিতে। সামনে বসে থাকা একটা হ্যান্ডসাম ছেলে বসে বসে পত্রিকা পরছে। পেপারের কারণে মুখটা দেখা যাচ্ছেনা তার।
ট্রেনের চলায় মাঝে মাঝে ঝাকুনি দিচ্ছে হালকা। নিজের দিকে তাকিয়ে পেটে হাত দেয় বৃষ্টি। কারণ ওই পেটেও বেড়ে উঠছে নতুন কেও। তার আর রাতের এক মাত্র ভালোবাসার অংশ। আজ থেকে না হয় এই নিশ্পাপ প্রানটাকে নিয়েই বেচে থাকবে সে।

…….. সমাপ্ত……..

বিঃদ্রঃ গল্পটি অসমাপ্ত। এর মাঝে আছে আরো অনেক প্রশ্ন লুকিয়ে। রিদ ও আরশির কি হয়েছিলো? রিদ কি ফিরে আসবে। আর আসলেও সে আরশির সাথে কেমন আচরণ করবে? রাত আর বৃষ্টির কি হয়েছিলো? বৃষ্টি কি পারবে তার ছোট্ট ভালোবাসার অংশটাকে নিয়ে একা বেচে থাকতে। তাদের মাঝে কি আবার দেখা হবে? বর্ষারই বা কি হলো শেষে। সব মিলিয়ে গল্পটি অসমাপ্ত। আপনারা চাইলে সমাপ্তি পর্ব টানতে গল্পটির সিজন ২ নিয়ে আসবো খুব শিগ্রই। আর গল্পটির সম্পর্কে আপনাদের মাতামত জানাবেন। বৃষ্টির সিদ্ধান্তটা কতটুকি ভুল বা সঠিক ছিলো?

7 মন্তব্য

  1. Please season 2 ta niye asben….. Amr sotti khub valo lege6e….. R rid r arshir moddhe durotto tadrkr 6ilo … Kothay bole dat thakte dater morjada dite hy…. Tai ami rid r arshir moddhe durotto tadrkr 6ilo… R ami bolbo jodi bristi kotha bolto rat er sathe r rat jodi thikthak vabe bojhato take tahole hyto sob ki6u thik thakto.. but sei situation e amio thakle bujhtam na ki korbo.. r shantir jonno amio hyto chole astam sob 6ere 6ure…. r amr keno jni na mone ho66e oi handsome 6eleta rat… R rat o age theke janto bristir bpr ta… Ba bujhte pere6ilo… Jai hok ki hy6ilo seta janar jonno please season 2 ta niye asun golpor content ta amr besh vlo lege6e… please 🙏 taratari deben…
    Thank you 💞😊

  2. Ki vabe bojhabo apna k ..golpo ta khub e sundor hoyeca ❤️ 😊
    Kintu end hoye gelo to 🥺, R ki Kono part 2 asbe na aii story tar …… please din na 🙏🙏🙏
    Please
    Please
    Please
    Please
    Please
    Please
    Please
    Please
    Please,🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏
    Please find na next season 2 ta 🥺🥺
    Ame ghumate to parci na aii story tar jonno
    Na study korte parci tik moton……..😭😭😭😭
    Ektu Tara tari deben

  3. Ki vabe bojhabo apna k ..golpo ta khub e sundor hoyeca ❤️ 😊
    Kintu end hoye gelo to 🥺, R ki Kono part 2 asbe na aii story tar …… please din na 🙏🙏🙏
    Please
    Please
    Please
    Please
    Please
    Please
    Please
    Please
    Please,🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏
    Please din na next season 2 ta 🥺🥺
    Ame ghumate to parci na aii story tar jonno
    Na study korte parci tik moton……..😭😭😭😭
    Ektu Tara tari deben

Leave a Reply to Jhuma karmakar উত্তর বাতিল

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে