#বৃষ্টি_এসো_সাঁঝের_বেলা
#৩য়_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
‘
আমি তখন ঘোর বিপদে।না রাজি হয়েও কোন গতান্তর নেই। অবশেষে বললাম,’আমি রাজি।’
নিতুল ভাইয়া আমায় সঙ্গে সঙ্গে জড়িয়ে ধরে বললেন,’ওরে আমার গুলগুলি। এতোক্ষণে রাজি হয়েছে!’
আমি বললাম,’নিতুল ভাইয়া, আমার কিন্তু ভীষণ ভয় করছে।’
নিতুল ভাইয়া আমার ঠোঁটে আঙুল ঠেকিয়ে বললেন,’নিতুল ভাইয়া নয় শুধু নিতুল।’
‘যাহ আমার লজ্জা করে!’
বলে আমি মুখ লুকিয়ে ফেললাম নিতুলের বুকে।
তারপর আমরা গেলাম কাজি অফিসের ভেতর। ওখানে কত রকমের যে ঝামেলা! স্বাক্ষী, কাগজ পত্র আরো কতকিছু যে লাগে!
বিয়ের কাজ শেষ হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। কাজী অফিস থেকে যখন বের হলাম তখন সারা শহর আলো ঝলমলে। নিতুল বললো,’চলো হাঁটি।’
আমরা হাঁটতে লাগলাম হাত ধরাধরি করে এলোমেলো ভাবে। এখন আমরা স্বামী স্ত্রী। আমাদের মধ্যে একটা পবিত্র বন্ধন আছে। আমাদের এখন অনেক শক্তি। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছিল এই কথা ভেবে যে আসলে আমরা হেঁটে হেঁটে কোথায় যাচ্ছি?
আমি নিতুলের হাতটা খানিক শক্ত করে ধরে বললাম,’নিতুল,আমরা কোথায় যাচ্ছি?’
নিতুল খানিক সময় চুপ থেকে বললো,’যেদিকে দু চোখ যায় সেদিকে।’
‘বাসায় ফিরবে না?’
‘নাহ।’
নিতুল তার পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটে নিয়ে ধরালো। তারপর সেই সিগারেটের ধোঁয়া বাতাসে ছেড়ে দিয়ে বললো,’আমরা হাঁটবো।জনম জনম এভাবে হাত ধরাধরি করে হাঁটবো।’
‘বিয়ে করেছি কী এভাবে হাঁটার জন্য?’
‘হুম। ‘
‘আমাদের ফুলশয্যা হবে না?’
‘হবে।তাও হাঁটতে হাঁটতেই।’
এই কথা বলে আমায় জড়িয়ে ধরে চুমু খেলো নিতুল। তারপর বললো,’ফুলশয্যা হয়ে গেছে।’
সত্যিই ওর পাগলোটে আচরণগুলো অনেক মজার। অনেক ভালো লাগার। কিন্তু আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল এই কথা ভেবে যে পৃথিবী অতটা সহজ নয়।আর এভাবে হাটতে হাঁটতেও আমাদের একটা জনম শেষ হয়ে যাবে না!
আমি বললাম,’নিতুল, তুমি না বলেছিলে তোমার বউ তুমি চয়েজ করবে এতে কারোর কিছু বলার নাই। এখন কেন বাহানা করছো বাসায় যেতে?’
‘পৃথু, তুমি তো আর কোন বাচ্চা মেয়ে না। অনেক বড় হয়েছো।বিয়েও করেছো। দুদিন পর বাচ্চা কাচ্চার মাও হবে। সুতরাং তোমার এটা বুঝা উচিৎ যে এভাবে হঠাৎ করে তোমায় বিয়ে করে ঘরে ফিরলে তোমার আমার কারোরই রক্ষা থাকবে না!’
‘এটা তো আমি আগেই অনেকবার বলেছিলাম।তুমিই তো নিজের গলায় চাকু ধরে ভয় দেখিয়ে আমায় রাজি করিয়েছো। আমি জানতাম এমন কিছুই হবে। তুমি আমার দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে এটা করেছো। আমি তো অনাথ। আমার তো কেউ নাই!’
আমার চোখ ভিজে উঠলো জলে। আমি সত্যি সত্যিই কেঁদে উঠলাম।
নিতুল আমায় কাছে টেনে নিয়ে চোখ দুটো তার হাত দিয়ে মুছে দিতে দিতে বললো,’আজ কী কাঁদতে আছে পৃথু?আজ না আমাদের বিয়ে!’
‘এর নাম বিয়ে?’
আমি এবার ওর থেকে হাতটা ছাড়িয়ে রাস্তার পাশে একটা গাছের গোড়ায় গিয়ে বসে পড়লাম।নিতুলও আমার পাশে গিয়ে বসলো। অনেক্ষণ ধরে দুজন চুপচাপ থাকার পর নিতুল বললো,’আসলে আমার মাথায় কাজ করছিলো না পৃথু। আমি তোমার ভালোবাসায় তখন বুঁদ হয়ে ছিলাম। আমার মনে হয়েছিল যে করেই হোক তোমায় পেতে হবেই। তখন অত কিছু ভাবিনি। কিন্তু এখন ভাবছি যে এভাবে দুজন মিলে বাসায় যাওয়াটা কতটুকু ভয়ানক হবে।’
আমি কথা বললাম না।নিতুল আমার হাত ধরার চেষ্টা করলো। কিন্তু আমি হাত ছাড়িয়ে নিলাম।নিতুল এবার আমার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে নিজের কান দুটো ধরে বললো,’সরি! আমি অতটা বুঝিনি আগে। কিন্তু সত্যি হলো তোমায় আমি যেভাবেই হোক ভালো রাখবো।’
‘কীভাবে ভালো রাখবে? রাস্তায়?’
‘না ।বাসায়। ভালোবাসায়। তোমায় ভালো বাসতে ভালো একটি বাসা আমি ভাড়া করে রেখেছি। আমরা এখন হাঁটতে হাঁটতে ওখানেই যাবো।আর পাঁচ মিনিট হাঁটলেই ওখানে আমরা পৌঁছে যাবো।’
আমার তবুও মন কেমন করছে। আসলে আমি এমন কিছু চাইনি। আমি চেয়েছি সবার ভালোবাসা। আমি চেয়েছি বাবা মায়ের খুশি।তারাই তো আমার মতো এক অনাথকে আদর আহ্লাদ করে বড় করেছেন। আমার কোন পরিচয় ছিল না।তারা আমার পরিচয় হয়েছিলেন। তাদের সাথে আমার এটা বড় বিশ্বাসঘাতকতা হয়ে গেল।
আমি বললাম,’নিতুল, আমার বাবা মার জন্য খারাপ লাগছে। আমি তাদের কাছেই যেতে চাই!’
নিতুল এবার আমার পাশে এসে বসে আমার হাতটা টেনে ধরে তার দু হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,’সব ঠিক হয়ে যাবে একদিন।বাবা মাকে আস্তে আস্তে ম্যানেজ করবো। তারপর দুজন গিয়ে উঠবো বাসায়। কেমন!’
আমি প্রচন্ড মন খারাপ নিয়েও বললাম,’আচ্ছা।’
তারপর আমরা হেঁটে হেঁটে গেলাম আরো দশ মিনিট। তারপর বড় রাস্তা থেকে নেমে সরু গলি দিয়ে ঢুকে গেলাম ভেতরের দিকে। সরু গলি দিয়ে তিন মিনিট হাঁটতেই সামনে পড়লো সাদামাটা টিনশেড একটা ঘর। কিন্তু ঘরের সামনে গিয়ে আমি চমকে উঠলাম। আমি স্বপ্নেও———-
#চলবে