#গল্পপোকা_কবিতা_লিখন_প্রতিযোগিতা
কবিতা:
বৃদ্ধাশ্রমে জন্মদাতা
সুদীপ্তা দে
” মনে আছে আজও সেদিনের ঐ কথা,
উঠেছিল তোর মায়ের বড়ই প্রসব ব্যথা।
আমি তাই দেখে বুঝে যাই ভয়ে মরে,
ভেবে কিছু না পাই,কপাল বড় সিক্ত ঘর্ম ত্রাসে।
সন্তর্পনে মাকে নিয়ে তোর যাচ্ছি হাসপাতালে,
কেন জানি মন ভরপুর মোর বড়ই শঙ্কাদলে।”
তোর মা শুধু বলে,”কি যে ব্যথা আমি যাই যেন হায় মরে!
আমার শিশুকে পাবো কি দেখতে এই দুই নয়ন
ভরে?
বাঁ চোখ আজ শুধুই লাফায়,
শুনেছি বড় অকল্যাণ এতে ,কল্যাণ তাতে ধায় ।”
আমি বলি, “ছিঃ ছিঃ তুমি বলো কি এসব?
মিছে কথা যত বাজে যতসব।
বলছি তোমায় ফুটফুটে শিশু আসবে যে কোল আলো করে,
বাজে কথা তুমি ছেড়ে এখন বসতো চুপটি করে।”
“এরপর তোর মাকে নিয়ে পৌঁছলুম হসপিটালে,
ডাক্তার নার্স বলে গেল সব সিচুয়েশন ক্রিটিক্যালে।
মনে মনে শুধু করছি যে প্রার্থনা,
এতদিন কিছু চাইনি আল্লাহ, তাই নিরাশ আজ করোনা।
হঠাৎ করেই কান্নার রোল ভাসে মোর হিয়াকোণে,
এসেছিস তুই এই বার্তা পৌঁছলো মোর মনে।
নার্স এসে বলে গেল তুই ঠিক আছিস মানিক আমার,
কিন্তু তোর মারে তারা হায় পারে নাই বাঁচাবার।”
মনে হল যেন তোর মা বলে গেল মোর কানে,
“রেখো মোর খোকারে তুমি বড় যতন করে আগলে।”
“তার কথামতো আমি দিয়েছি যে তোকে ভালোবাসা,
মায়ের ব্যথা বুঝতে দেই নাই, দিয়েছি আলো আশা,
ঘুমাবার কালে শোনাতাম কতো পক্ষীরাজের কথা!
সহিতে পারতাম না তোর কোনো ব্যাথা
যেদিন তুই ডাক্তার হয়ে এসেছিলি মোর কাছে,
বুক মোর এক বিঘাৎ, ফুলে উঠেছিলো গর্বে।
যা চেয়েছিলি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি দিতে,
তাই বলে আজ সেই দাবি নিয়ে আসি নাই তোর কাছে।
চাই না কোনো ঋণশোধ, চাই না তো অধিকার।
যেথা ইচ্ছা ফেলে দে মোরে, আমি কে কোথাকার?
বৃদ্ধাশ্রমের আঙিনাতেই থাকব বলে আমি,
একদিন তোর জন্মদাতা পিতা হয়েছি আমি।
যেদিন তুই এসেছিলি কোলে , পেয়েছিলাম স্বর্গসুখ,
এই বৃদ্ধাশ্রমে থেকে তাই পাব না নরকদুখ।
কেটে যাবে দিন ,কেটে যাবে ক্ষণ,
শুধু একবার আসিস, যখন মোর দুয়ারে দাঁড়াবে
মরণ।
থাকিস সুখে এই কামনা আজো করি মনে মনে,
ভাবিস না… কোনো অভিযোগ নাই মোর এই মনে।
বহিছে হাওয়া, নরম দোলায় দুলছে দূর্বাঘাস,
খোকা…! ফেরার পথে সাবধানে বাড়ি যাস।।