#বিষাক্ত_প্রেম
#পর্ব_১২
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
দিশা ভ্রু কুঁচকে সামনে দাঁড়ানো মহিলার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আপনি কি আমাকে চিনেন..!??’
মহিলাটি দিশার পাশে বসলো, ‘ আমি আলেয়া আর তুমি..? ‘
দিশাঃ আমি দিশা মনি।
আলেয়াঃ তোমার মায়ের নাম লায়লা..??
দিশা অবাক হয়ে মহিলাটির দিকে তাকালো।
আলেয়া বেগম হেঁসে দিশার দিকে তাকিয়ে বললো,’ অবাক হচ্ছো..!!??
দিশা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝালো।
আলেয়াঃ লায়লা আমার ছোটো বেলার সখি ছিলো। আমার একমাত্র প্রিয় শুধু প্রিয় না দুই দেহ এক আত্মা ছিলাম এক সময়। তুমি একদম তোমার মায়ের মতো হয়েছো।কাল রাতে সাইফের সাথে তোমাকে দেখে বেশ অবাক হয়ে ছিলাম। কিছু সময়ের জন্য মনে হয়ে ছিলো লায়লা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
দিশা হাসলো।
আলেয়াঃ তুমি এই সময় এখানে কেনো..?
দিশার বুক ভার হয়ে আসলো। চোখ ছলছল করে উঠলো।
আলেয়া বেগম দিশার হাতে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো,’ কিছু কি হয়েছে..?? ‘
দিশাঃ আমার আম্মু…
আলেয়াঃ বলতে হবে না আমি শুনে ছিলাম কিন্তু ভাগ্য আমাকে লায়লার মৃত মুখটা দেখার সুযোগ করে দেয়নি। ঠিক সেই দিন সাইফের বাবা আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গিয়ে ছিলো।
দিশা মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে রইলো৷
আলেয়াঃ তোমার আব্বু কেমন আছে..??
দিশার চোখ মুখ শক্ত হয়ে আসলো। এই বাবা নামের অমানুষের জন্য আজ ওর আম্মু ওর কাছে নেই!! দিশা নিজের কষ্ট, নিজের দুর্বলতা নিজের মধ্যে রেখে দিলো। পাশে বসা মহিলাটিকেও বুঝতে দিলো না। মনের ভেতর ঝড় বইছে কিন্তু উপরটা একদম শীতল।
দিশাঃ আচ্ছা আন্টি আসি আজ৷ আবার ভাগ্যে থাকলে দেখা হবে।
আলেয়াঃ আজ আমার সাথে আমার বাসায় চলো। না করলে হবে না। এতোদিন পর আমার কাছের কাউকে পেয়ে আমি ছাড়ছি না চলো চলো।
দিশাঃ আসলে আন্টি…
আলেয়াঃ আসলে নকলে কিছুই শুনতে চাচ্ছি না চলো আমার সাথে।
দিশার ইচ্ছে না থাকার শর্তেও যেতে হলো। এখন সময় নষ্ট করলে চলবে না একটা বাসা খুঁজতে হবে থাকার জন্য। এই বাসা থেকে বেরিয়ে বাসা খুজার কাজে লেগে যাবে।
____________
শার্লিন ফারাজকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিলো।
ফারাজ একবার শার্লিনের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো নামার জন্য।
শার্লিন বাইক থেকে নামতেই ফারাজ শার্লিনের হাত ধরে টেনে গেইটের ভেতরে নিয়ে আসলো।
শার্লিন ভয়ে বলে উঠলো, ‘ সরি স্যার আর কখনো আপনার সাথে দুষ্টুমি করবো না। মারবেন না প্লিজ স্যার আমার আম্মু ভীষণ কান্না করবে।
ফারাজ ঘার কাত করে শার্লিনের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তোমাকে মারলে তুমি কান্না করবে আন্টি নয়। ‘
শার্লিন চুপ করে দাঁড়িয়ে গেলো।
ফারাজ ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই শার্লিন বলে উঠলো, ‘ স্যার আম্মু কল দিয়ে ছিলো বাসায় এখন আমাকে ভীষণ দরকার। ‘
ফারাজঃ আমি কি সারাজীবনের জন্য রেখে দিচ্ছি নাকি। চলো বেশি কথা না বলে।
” আমি তো চাই সারাজীবনের জন্য রেখে দেন,কিন্তু মনের কথা মনেই রয়ে গেলো”
শার্লিনঃ স্যার আজ আমাকে দেখতে আসবে হয়তো এসেও গেছে প্লিজ স্যার এখন যেতে হবে।
ফারাজের পা অটোমেটিক থেমে গেলো। অবাক হয়ে শার্লিনের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ সত্যি!! ‘
শার্লিন সিরিয়াস মুখ করে বলে উঠলো, ‘ জ্বি স্যার তিন সত্যি ‘
ফারাজ বাঁকা হেঁসে শার্লিনের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ তাহলে আজ তোমার পানিশমেন্ট হলো সারাদিন আমার সব কাজ করে দিবে।”
শার্লিনঃ কিইই!! আমার যেতে হবে সবাই অপেক্ষা করছে।
ফারাজঃ আবার বলতে হবে..? আগে ভাবার দরকার ছিলো। অন্যায় করেছো শাস্তি তো পেতে হবে।
শার্লিনঃ আমি বাসায় যাবো আমার বিয়ে..
ফারাজঃ হুসস আর একটা শব্দ মুখ থেকে বের করলে ওই যে সামনে দেখছো উঁচু বিল্ডিং এটা থেকে নিচে ফেলে দিবো।
শার্লিন ভয়ে মুখে হাত দিয়ে হাঁটা শুরু করলো। এতো মিথ্যা কথা বললো তাও কাজ হলো না!! এতো জলদি মরতে চায় না সে। কতো স্বপ্ন পূরণ করার বাকি। ফারাজের সাথে বিয়ে, বাচ্চা, নাতিনাতনি ইসস এই স্বপ্ন গুলো পূরণ না করে সে কখনো মরবে না!
শার্লিন বাসার ভেতর এসে বেশ অবাক হয়ে এদিক ওদিক তাকালো। এতো সুন্দর এক একটা রুম।
ফারাজ এসেই ফ্রেশ হতে নিজের রুমে চলে গেলো।
শার্লিন গালে হাত দিয়ে সোফায় বসে আছে। এতো বড় বাড়ি কিন্তু তিন-চারটা কাজের লোক বাদে আর একটা মানুষও নেই৷ সামনে তাকিয়ে মুরতাসিম আর ফারাজের একটা ছবি দেখে তাকিয়ে রইলো।
______________
হালিমা চৌধুরী বাড়িতে যাওয়ার জন্য রাগ করে বসে আছেন।
মুরতাসিম বার বার বুঝানোর চেষ্টা করেছে।
ইভা বুঝাতে গেলেই হালিমা চৌধুরী রেগে একটা গ্লাস দূরে ছুড়ে ফেলেছেন।
মুরতাসিম বেশ অবাক হচ্ছে ইদানীং হালিমা চৌধুরীর ব্যবহারে।
আগে সব সময় মন খারাপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতো। কারো সাথে কথা বলতে চাইতো না। রুম থেকে বের হতো না।
তিতির আসার পর থেকে সবার সাথে বসে খাবার খাওয়া, মুরতাসিম কে দেখলে ইশারায় কাছে ডাকা,বিকেলে বই নিয়ে ছাঁদে বসা খুব অবাক আর খুশি হয়ে ছিলো। কিন্তু ইভাকে দেখলেই অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে হালিমা চৌধুরী। আগে তো ইভারকে খুব পছন্দ করতো হঠাৎ আম্মুর কি হলো..? এক ঝাক প্রশ্ন নিয়ে আম্মুর সামনে বসে হাতটা ধরলো।
হালিমা চৌধুরী মুখ গুড়িয়ে অন্য দিকে তাকালো।
মুরতাসিমঃ কি হয়েছে আম্মু.! এখন চাইলেও বাসায় যাওয়া যাবে না এক সাপ্তাহ পর আপনার অপারেশন। অপারেশন শেষ হলেই বাসায় নিয়ে যাবো। অবুঝের মতো আচরণ করো না আম্মু।
হালিমা চৌধুরী ছেলের হাত থেকে হাত ছাড়িয়ে ইভার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো।
ইভাও রেগে তাকিয়ে আছে হালিমা চৌধুরীর দিকে।
মুরতাসিম মায়ের দৃষ্টি খেয়াল করে ইভার দিকে তাকালো।
ইভা ইনোসেন্ট মুখ করে মুরতাসিমের দিকে তাকাতে মুরতাসিম ইশারায় বাহিরে যেতে বললো।
ইভা মন খারাপ করে বাহিরে চলে গেলো৷
মুরতাসিম মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তোমার কি হয়েছে আম্মু..? তুমি তো এমন ছিলে না! ইভার সাথে এমন আচরণ কেনো করো.?
হালিমা চৌধুরী চোখ বন্ধ করে নিলেন।
মুরতাসিম বুঝলো এই বিষয় কথা বাড়াতে চায় না হালিমা চৌধুরী।
মুরতাসিম উঠে যেতে নিলে হালিমা চৌধুরী মুরতাসিমের হাত ধরলো।
মুরতাসিমঃ কিছু বলবে..?
হালিমা চৌধুরী কলম দিয়ে তিতিরের নাম লিখে বুঝালো। তিতিরকে এখানে নিয়ে আসতে।
মুরতাসিম হেঁসে মোবাইল নিয়ে বেরিয়ে গেলো ।
তিতির আর ফাহাদ বাসায় আসতেই আমেনা বেগম ওদের মুখ দেখে বুঝলো কারো মন ভালো নেই।
তিতির নিজের রুমে চলে গেলো৷
আমেনা বেগমঃ কি হয়েছে ফাহাদ..?
ফাহাদঃ কোথায় কি হয়েছে..?
আমেনা বেগমঃ মন খারাপ কেনো তোদের.?
ফাহাদ কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলো।
আমেনা বেগম ছেলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রিলেন নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে!!
মুরতাসিম একের পর এক কল দিয়ে যাচ্ছে তিতিরের মোবাইলে।কিন্তু কোনো রেসপন্স না পেয়ে গাড়ি নিয়ে বের হলো তিতিরের বাসার উদ্দেশ্যে।
শার্লিন রেগে বাসায় আসলো।
আমেনা বেগম মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
আজ সবার হয়েছেটা কি..!!?
শার্লিন হাতের ব্যাগটা সোফায় ছুড়েফেলে নিজের রুমে চলে আসলো।
ওয়াশরুমে তিতির আর বাহিরে ওর মোবাইলে বাজছে।
শার্লিন বিছানায় সোজা হয়ে শুয়ে পরলো।আজ ফারাজ ওকে অনেক জ্বালিয়েছে। কিন্তু মোবাইলের টুংটাং শব্দে বিরক্ত হয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো অনেক কল আর মেসেজ। উপরে “বেয়াদব ” দিয়ে নাম্বার সেভ করা।
” কল ধরো না কেনো..? এমন অনেক মেসেজ৷
লাস্ট মেসেজ ছিলো” আমি তোমার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছি। নিচে পাঁচ মিনিটের মধ্যে না আসলে বাসায় চলে আসবো তিতির!!”
শার্লিন ভাবলো হয়তো পাড়ার বখাটে ছেলেদের কেউ একজন তিতিরকে বিরক্ত করছে, হুমকি দিচ্ছি। এমনিতেই ফারাজের উপর রেগে ছিলো এখন এই মেসেজ দেখে আরও রেগে গেলো৷ কতো বড় সাহস শার্লিনের বোন, হবু ভাবি, ফ্রেন্ড কে বিরক্ত করে! ”
শার্লিন আলমারি থেকে ওয়াশরুমের জন্য নতুন নিয়ে আসা জুতা জোরার ছবি তুলে পাঠিয়ে নিচে লিখে দিলো ” জুতা চিনোস! আর একবার কল বা মেসেজ দিলে নিচে গিয়ে এই জুতা গুলো তোর গালে পরবে! মেয়েদের বিরক্ত করার স্বাদ আজীবনের জন্য মিটিয়ে দিবো থাপড়িয়ে বেয়াদব !”
চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।
#বিষাক্ত_প্রেম
#পর্ব_১৩
লেখিকা#Sabihatul_Sabha
মুরতাসিম চুপচাপ বসে আছে সোফায়।
আমেনা বেগম মুরতাসিমের সামনে নাস্তা রেখে খুশিতে এটা সেটা জিজ্ঞেস করছেন। মুরতাসিম কে উনি আগে থেকেই চিনেন। বেশ পছন্দও করেন ছেলে হিসেবে।
সাইফ একবার তিতিরের দিকে আরেক বার মুরতাসিমের দিকে তাকাচ্ছে।
মুরতাসিম এখনো তিতিরের দিকে তাকায়নি। তার মাথায় শুধু জুতার ছবিটাই ঘুরছে।
আমেনা বেগমঃ তোমার আম্মু কেমন আছে..??
মুরতাসিমঃ জ্বি আলহামদুলিল্লাহ এখন একটু ভালো। আন্টি আমি কি এখন তিতিরকে একটু নিয়ে যেতে পারি।আসলে আম্মুর এখন তিতিরকে দরকার ছিলো।
আমেনা বেগম তিতিরের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আচ্ছা ঠিক আছে। ‘
ফাহাদ রেগে বসে থেকে উঠে নিজের রুমে চলে গেলো।
তিতির মুরতাসিমের সাথে বেরিয়ে যেতেই শার্লিন দরজার পেছন থেকে বের হয়ে কাঁদো কাঁদো মুখ করে ওদের দিকে তাকিয়ে দোয়া দুরুদ পড়া শুরু করলো। এটা সে কি করলো!! না বুঝে কাকে কি পাঠিয়ে ছিলো.?
মুরতাসিম গাড়িতে বসে তিতিরের সাথে একটা কথাও বললো না।
তিতির একবার মুরতাসিমের দিকে তাকিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইলো।
মুরতাসিম গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিলো।
তিতির ভ্রু কুঁচকে মুরতাসিমের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আস্তে চালান না!! আমার এতো জলদি মরার সখ নেই।
মুরতাসিম আরও বাড়িয়ে দিলো।
তিতির রেগে বলে উঠলো, ‘ আপনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন..???’
মুরতাসিম হঠাৎ গাড়ির ব্রেক কষলো।
তিতির ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।
মুরতাসিম শক্ত করে তিতিরের বাহু চেপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, ‘ এতো গুলো কল দিয়েছি রিসিভ করোনি কেনো.??? মেসেজের রিপ্লাই কি দিয়েছো!!..???’
তিতির ভয়ে চুপসে গেলো। সে তো মোবাইল বিছানায় রেখে ওয়াশরুমে ছিলো আর মেসেজের রিপ্লাই!!
মুরতাসিমঃ কি হলো উত্তর দাও.!!??
তিতিরঃ মেসেজের রিপ্লাই…
মুরতাসিম তিতিরকে ছেড়ে দূরে সরে গেলো।
তিতির চটজলদি মোবাইল বের করলো।
মেসেজ দেখে মুখ আপনা আপনি হ্যাঁ হয়ে গেলো।
তিতির কাঁদো কাঁদো মুখ করে মুরতাসিমের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আসলে স্যার…’
মুরতাসিমঃ আসলে কি!..?
তিতিরঃ আমি তো মেসেজ দেখিনি রিপ্লাই ও দেইনি।
মুরতাসিমঃ মোবাইল তোমার রিপ্লাই কে দিয়েছে.?
তিতিরের আর বুঝতে বাকি নেই এই রিপ্লাই কে দিয়েছে..!! শুধু হাতের কাছে একবার পাই শালিক!..
মুরতাসিম কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
________
সাইফ বাসায় এসেই নিজের রুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতেই ভূত দেখার মতো চকমে উঠলো। নিজের চোখ কচলে সামনে তাকালো না সে ভুল দেখছে না।
সাইফ দ্রুত দিশার সামনে এসে বলে উঠলো, ‘ এইইই আপনি এখনো জাননি..? আবার এসেছেন কেনো..!??’
দিশা এমনিতেই ভয়ে ছিলো সকালে এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে এখন আবার এই একি বাড়িতে আসতে হবে কে জানতো!
দিশাঃ আপনি আমাকে চিনেন..?
সাইফঃ কি আজব কাল আমার সাথে বাড়িতে আসলেন আজ বলছেন চিনি কিনা..?
দিশাঃ আপনার সাথে!!
সাইফঃ আপনার কিছু মনে নেই.??
দিশাঃ না।
সাইফ আর কিছু বলার আগে রান্না ঘর থেকে ওর আম্মু ডাকলো ওকে।
সাইফ দিশার দিকে তাকিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলো।
আলেয়া বেগম ছেলেকে তাদের জন্য নাস্তা বানাতে বলে রান্না ঘর থেকে চলে আসলেন৷
সাইফ হ্যাঁ করে নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর আম্মু ওকে নাস্তা বানাতে বললো!!!তাও বেচারা কিছু না বলে চুপচাপ কাজ শুরু করলো।
আলেয়া বেগম এসে দিশার সাথে গল্প করতে শুরু করলো। প্রথম প্রথম বিরক্ত লাগলেও এখন বেশ ভালো লাগছে দিশার সামনে বসে থাকা মহিলাটিকে।
কথায় কথায় দিশাও বলে দিলো ওর এখন বাসা খুঁজতে যেতে হবে তাই দেরি করা যাবে না।
আলেয়া বেগম কিছু একটা ভেবে দিশাকে নিয়ে উপরে একটা রুমে গলো।
আলেয়া বেগমঃ দেখো তো দিশা এই রুমটা কেমন..??
দিশা রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখলো এই বাসায় দেখা সব থেকে সুন্দর রুম এটা।
দিশাঃ হুম খুব সুন্দর।
আলেয়া বেগমঃ আজ থেকে তুমি এই রুমে থাকবে।
দিশা অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ।
দিশাঃ ঠিক আছে তবে আন্টি আমি এভাবে নয় ভাড়া দিয়ে থাকবে।
আলেয়া বেগম দিশাকে কাছে রাখার জন্য রাজি হয়ে গেলেন।
সাইফ সব শেষ করে বিরক্ত হয়ে নিজের রুমে আসার সময় পরলো দিশার সামনে।
আলেয়া বেগম দিশাকে ছাঁদে নিয়ে গিয়ে ছিলো দেখানোর জন্য সেখান থেকেই ফিরছিলো দিশা।
সাইফ একবার তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
” এই বিপদ আবার কেনো ঘুরে ফিরে আমার বাসায় আসলো!!..? তিতিরকে কল দিতে হবে! ‘
______________
তিতির বসে আছে হালিমা চৌধুরীর সামনে।
দূর থেকে মুরতাসিম তাকিয়ে আছে তিতিরের দিকে।
মুরতাসিম মোবাইল বের করে আবার জুতা জোরার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। সে খুব ভালো করে জানে এটা অন্য কারো কাজ তিতির আর যাই হোক জুতার ছবি দিয়ে এভাবে খারাপ ব্যবহার করবে না।
হালিমা চৌধুরী কে খাবার খাইয়ে মেডিসিন খাওয়ালো তিতির।
তিতিরঃ আন্টি আপনি এখন একটু ঘুমিয়ে নিন।
হালিমা চৌধুরী ইশারায় বুঝালো তিতির জেনো না যায়।
তিতির ক্যাবিন থেকে বের হয়ে বাহিরে বসলো। মুরতাসিম এসে তিতিরের পাশে বসে বলে উঠলো,’ কফি আনবো..??’
তিতিরঃ না প্রয়োজন নেই।
মুরতাসিমঃ আমার আম্মুর তোমাকে একটু বেশিই পছন্দ। মনে হচ্ছে আমি পর তুমি আপন।
তিতিরঃ আপনি জেলাস!!?
মুরতাসিম হাসলো।
তিতির ও হেঁসে বলে উঠলো, ‘ আপনার প্রয়োজন এখন আপনার আম্মুর পাশে ইভা আপুকে সব সময় রাখা৷ জেনো আন্টির মনে অনেকটা জায়গা করে নিতে পারে।
মুরতাসিমঃ আমি এমনিতেই বিবাহিত আর বিয়ে করার ইচ্ছে বা মন মানুষিকতা আমার নেই। ইভা আমার ছোটো বোনের মতো আমি ওকে সব সময় ছোটো বোনের নজরে দেখে এসেছি।
তিতিরঃ কিন্তু আপনাদের তো…
মুরতাসিমঃ তুমি অবাক হলে না আমি বিবাহিত শুনে!..??
তিতির চুল গুলো হাত দিয়ে পেছনে সরিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মুরতাসিমের দিকে তাকালো।
মুরতাসিম হাসলো তিতিরের রিয়াকশন দেখে।
তিতিরঃ আপনার বউ আছে তাহলে সবার সামনে কেনো আনছেন না..? আর এটা কেনো এতোদিন সবার থেকে লুকিয়ে রেখেছেন.??
মুরতাসিমঃ সে নিজেই লুকোচুরি খেলতে পছন্দ করে।
তিতির চঞ্চল চোখে এদিক সেদিক তাকিয়ে হাসলো।
মুরতাসিমঃ জানতে চাইবে না কিভাবে বিয়ে হলো..??
তিতিরঃ আজ নয় অন্য একদিন জেনে নিবো।
মুরতাসিমঃ কিন্তু আমি আজ বলতে চাচ্ছি।
তিতির মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
মুরতাসিম এক এক করে প্রথম থেকে সব বলা শুরু করলো।
তিতির অবাক হয়ে মুরতাসিমের দিকে তাকিয়ে আছে কতো সুন্দর করে সবটা মনে রেখেছে সামনে বসা শ্যামবর্ন পুরুষটি।
কিছু কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো তিতির।
মুরতাসিমঃ যখন আমি কবুল বলবো তখন দূর থেকে জানালার পাশে বউ সেজে বসে থাকতে দেখেছি তাকে। হয়তো স্পষ্ট মুখ দেখা হয়নি হাত দিয়ে ঘোমটা ধরে ছিলো৷ ওই দিন বাড়িতে ফেরার পথে আমি অনেক খুশি ছিলাম। আমারও একটা পুতুলের মতো বউ আছে। খুব জলদি তাকে আমার রাজ প্রসাদের রাণী করে নিয়ে আসবো।
তিতিরঃ তাহলে দূরে কেনো রেখেছেন তাকে..??
মুরতাসিমঃ আমি চেয়েছি সে এইচএসসি গ্রামে শেষ করুক তারপর আমি শহরে আমার কাছে নিয়ে আসবো। এখানে ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দেবো। বাড়িতে এসে ফারাজকে বলি সবটা সেও বেশ খুশি ছিলো। তাকে দেখতে চেয়েছিলো আমি বলে ছিলাম সময় আসলে দুই ভাই গিয়ে দেখে আসবো।আমি ওর যা যা প্রয়োজন সব প্রতি মাসের নির্দিষ্ট সময়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু..
তিতিরঃ কিন্তু কি..???
মুরতাসিমঃ আমি তিন মাসের জন্য দেশে ছিলাম না কোম্পানির কাজে বাহিরে গিয়ে ছিলাম দেশে এসে শুনি সে পালিয়ে গেছে শহরের কোনো এক ছেলের সাথে আমাকে ডিভোর্স পেপার দিয়ে।
তিতিরের চোখ মুখ শক্তিশালী হয়ে আসে। হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নেয়।
মুরতাসিম আর কিছু বলার আগেই তিতির রেগে বলে উঠলো, ‘ আর আপনি সেটাই বিশ্বাস করে নিলেন..?? একটা বার খুঁজ নিলেন না.!! আপনি নিজেই তো ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে ছিলেন!! গ্রামের মেয়ে বলে সম্পর্কে থাকতে চাননি এখন সব মেয়ের দোষ দিচ্ছেন..? আপনারা বড় লোকরাই এমন! নিজের সব দোষ দুর্বলদের উপর চাপিয়ে দেন। আপনি নিজ থেকে ডিভোর্স পেপার দিয়ে ছিলেন একটা বার খুঁজ নিয়ে ছিলেন তারপর কি ঘটে ছিলো আমার সাথে..? আজ বলছেন পালিয়ে গিয়ে ছিলাম ডিভোর্স পেপার দিয়ে বাহ্!!
মুরতাসিম বাঁকা হেঁসে বলে উঠলো, ‘ তোমার লুকোচুরি শেষ তিতিরপাখি…’
তিতির ভয়ে চুপসে গেলো। এটা কি করলো সে!? রাগের বসে ধরা দিয়ে ফেললো নিজ থেকে। ‘
চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।