বিষাক্ত প্রেম পর্ব-১০+১১

0
864

#বিষাক্ত_প্রেম
#পর্ব_10
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

তিতির ভয়ে নিজের মুখ লুকানোর চেষ্টা করলো।

ফারাজ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ ভাই তুমি এতো সকালে..?’
মুরতাসিমঃ কেনো আমি কি এর আগে কখনো সকালে উঠিনি..?
ফারাজঃ উঠেছো ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং থাকলে। আজও কি আছে.?
মুরতাসিম ফারাজের উত্তর না দিয়ে তিতিরের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ তুমি এখানে!!..?’
তিতির কি বলবে ভয়ে ভয়ে ফারাজের দিকে তাকালো।
ফারাজ খুব ভালো করেই জানে মুরতাসিম ইচ্ছে করেই তিতিরকে এটা সেটা জিজ্ঞেস করবে। বেচারি বাচ্চা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ফারাজের বেশ মায়া হলো।
ফারাজঃ ভাই আম্মুর জন্য একজন মেয়ে দরকার ছিলো আমি তিতিরকে মায়ের জন্য নিয়ে এসেছি।
মুরতাসিম ফারাজের দিকে অবাক হয়ে তাকালো। তার ভাই তার থেকে বড় খেলোয়াড়। কি সুন্দর সবটা সামলে নিলো সাথে তিতিরকে প্রটেক্ট করলো।
তিতির ফারাজের দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো।
মুরতাসিম কিছু না বলে নিজের রুমের দিকে আবার চলে গেলো।

ফারাজঃ চলো আম্মুর সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেই।
তিতি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।

হালিমা চৌধুরী একটা হুইলচেয়ারে বসে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছেন। চোখে মুখে কি জেনো হারানোর ভয়।

ফারাজ ওর আম্মুর সামনে গিয়ে ইশারায় কিছু বুঝালো।
হালিমা চৌধুরী ছেলের দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে হাসলো।
ফারাজ ওর আম্মুকে রুমে নিয়ে আসলো।
হালিমা চৌধুরী দরজার দিকে তাকালো।
তিতির ভয়ে চুপটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে।
হালিমা চৌধুরী এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তিতিরের দিকে।
ফারাজ ইশারায় তিতিরকে রুমে আসতে বললো।
তিতির এসে সালাম দিলো।
ফারাজঃ আম্মু কথা বলতে পারে না তবে শুনতে পারে। আর আম্মু হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করে। একটা এক্সিডেন্টে আম্মুর এই অবস্থা।
তিতিরের খুব মায়া হলো। মায়াময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো হালিমা চৌধুরীর দিকে। হালিমা চৌধুরীর মুখ দেখে বেশ বুঝা যাচ্ছে তিতিরকে উনার পছন্দ হয়েছে।

________

দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেলো এক মাসের মধ্যে ২৫দিন।

আজ হালিমা চৌধুরীর পায়ের অপারেশন আছে।

প্রতিদিন মুরতাসিম রাতে তিতিরকে বাসায় দিয়ে যাওয়া ওর সাথে ভালো ব্যাবহার করা। সব সময় ওকে কেয়ার করা। এই গুলো দেখে তিতির মুরতাসিমের প্রেমে পড়ে গেছে।

মুরতাসিমের কল দেখে উঠে বসলো তিতির। অফিসে যেতে হবে। আসার সময় হালিমা চৌধুরীকে দেখে আসবে একবার।

তিতির অফিসে আশার সময় আমেনা বেগম তিতিরের মুখটা হাতে নিয়ে বললো,’ মাশাল্লাহ আমাদের তিতিরপাখি কে তো খুব সুন্দর লাগছে। সন্ধ্যায় তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে একটু জলদি চলে এসো।’
তিতিরঃ ঠিক আছে আন্টি।
শার্লিনঃ এই তিতির শোন না।
তিতিরঃ বল শুনছি।
শার্লিনঃ কাল রাতে নাকি সাইফ কি ঝামেলায় পরেছে বললো তোকে নিয়ে ওদের বাসায় যেতে।
তিতিরঃ আমার তো সময় নেই। তুই চলে যা।
শার্লিন ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো, ‘ তোর বসটা আসলেই সেলফিশ। একটা দিনও ছুটি নেই।’
তিতির হেঁসে বললো,’ আসলেই সেলফিশ। ‘

তিতির অফিসে এসে দেখে আজ দিশা আসেনি।
নিজের চেয়ারে বসতেই মুরতাসিমের কল আসলো।

তিতিরের বেশ লজ্জা লাগে এখন মুরতাসিমের সামনে যেতে।

তিতির মুরতাসিমের সামনে গিয়ে চুপচাপ দাঁড়ালো।

মুরতাসিম তিতিরের দিকে তাকালো।
তিতির আজ কালো শাড়ি পড়েছে। মুরতাসিম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তিতিরের দিকে।

নিজের বসা থেকে উঠে তিতিরের সামনে গেলো৷
তিতির লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে সাথে অদ্ভুত ফিলিংস।

মুরতাসিম আরও কাছে গেলো। এদের মাঝে এখন এক ইঞ্চির মতো ফাঁক।মুরতাসিম তিতিরের চুল গুলো এক হাতে সরিয়ে ওর ঠোঁটের দিকে তাকালো। তিতির লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নিলো।
মুরতাসিম তিতিরের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো। ফিসফিস করে বললো ” মায়াবতী ”

মুরতাসিমের আর কোনো সারা শব্দ না পেয়ে তিতির চোখ খুলে দেখলো মুরতাসিম সামনে নেই।

তিতির তাকিয়ে দেখে মুরতাসিম চেয়ারে বসে ফাইল দেখছে। আরও লজ্জা পেয়ে গেলো তিতির। ছিঃ এখন মুরতাসিম ওকে কি ভাববে!

মুরতাসিম তিতিরের দিকে তাকিয়ে বললো,’ এই ফাইল থেকে নাম দেখে দেখে স্টোর রুম থেকে ফাইল নিয়ে আসুন।’

তিতির মাথা নেড়ে ফাইল নিয়ে বেরিয়ে গেলো।

__________

সাইফের সামনে অবাক হয়ে বসে আছে শার্লিন।

সাইফঃ বইন আমি তো কাল আম্মুকে মিথ্যা বললাম এখন আমাকে বাঁচা তুই।
শার্লিনঃ ভ্যাঁ ভ্যাঁ করা বন্ধ কর। তোরে কেডা কইছে এই মাইয়ারে বাসায় আনতে!!
সাইফঃ তো কি করতাম মাইয়া অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলো।
শার্লিনঃ তাই বলে নিজের বাসায় কেন আনবি।
সাইফঃ তাহলে কি তোর বাসায় নিয়ে যাইতাম তোর ওই দারোগা ভাইয়ের ডান্ডার ভারি খাওয়ার জন্য!!
শার্লিনঃ আমার ভাইকে নিয়ে কিছু বললে উগান্ডায় পাঠামু তোরে এখন।
সাইফঃ যেমন ভাই তেমন বোন।
শার্লিনঃ কি কইলি..!?
সাইফঃ তুই ঝগড়া পড়েও করতে পারবি আম্মুকে বলছি এই মেয়ে আমার গার্লফ্রেন্ড। আম্মু প্রথম রেগে গেলেও মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে খুশি হয়ে নিজের রুমে নিয়ে গেলো। এতো এতো যত্ন করলো।আম্মু বললো সকালে ওর সাথে পরিচিত হবে কিন্তু এই মাইয়া তো একদম সকালে পালায় গেছে বাসা থেকে। এখন আম্মু আমাকে উনার বাসার এড্রেস দিতে বলছে। একের পর এক প্রশ্ন করছে। আমি কি করবো।
শার্লিনঃ আন্টিকে সত্যি টা বলে দে।
সাইফঃ আমি কি তোর মতো বলদা। সকাল থেকে দশ বার বলছি আম্মু বিশ্বাস করে না। বলে এটাই আমার ছেলের বউ হবে!

শার্লিন হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পরলো।
সাইফঃ হাসলে লাথি মেরে খাট থেকে ফেলে দিমু সর তো।
শার্লিনঃ মেয়েটা দেখতে কেমন..?
সাইফঃ তোর মতো পেত্নী।
শার্লিন রেগে সাইফের দিকে বালিশ ছুঁড়ে মারলো।

________

তিতির অনেক কষ্ট করে সব গুলো ফাইল খুঁজে বের করলো।
তিতিরের অবস্থা খুবি খারাপ হয়ে গেছে ফাইল গুলো খুঁজতে খুঁজতে।

তিতির ফাইল হাতে মুরতাসিম সামনে এসে অবাক হলো।
ইভা মুরতাসিমের হাত শক্ত করে ধরে আছে। সামনে খাবার বেড়ে দিচ্ছে।
তিতির ফাইল গুলো সামনে রেখে চলে আসতে নিলে ইভা বলে উঠলো, ‘ আরেহ তিতির না!!..?’
তিতির হেঁসে পেছন ফিরে তাকালো।
ইভাঃ দেখেছো আমি ঠহক চিনে নিলাম কিন্তু তুমি আমাকে চিনলে না!!
তিতিরঃ খেয়াল করিনি ইভা আপু।
ইভাঃ তুমি এই অফিসে জব করো আর আমি আজ জানতে পারলাম।
তিতির হাসার চেষ্টা করলো। ওর চোখ বার বার ইভার হাত মুরতাসিমের হাতে এটার দিকেই যাচ্ছে।
ইভাঃ এদিকে আসো তিতির।
তিতিরঃ আমার একটু….
ইভা মুরতাসিম কে দেখিয়ে বললো, ‘ আমাদের খুব জলদি এনগেজমেন্ট হতে যাচ্ছে।’
তিতিরের বুক কেঁপে উঠল, চোখ চিকচিক করে উঠলো। ‘
মুরতাসিম কিছু না বলে শুধু তিতিরের দিকে তাকিয়ে আছে। তিতিরের চোখের কোনে জলটা ঠিক খেয়াল করলো মুরতাসিম। বাঁকা হেঁসে বললো,’ইভা আমাকে কি আজ খাবার দিবে না!!’
ইভা খুশি হয়ে মুরতাসিমের দিকে তাকিয়ে রইলো। খুশিতে খাবার বেড়ে মুরতাসিম সামনে রাখলো।
মুরতাসিম খাবার মুখে দিয়ে বলে উঠলো, ‘ বাহ্ এতো মজা করে কিভাবে রান্না করো! তোমার খাবার তোমার ভালোবাসার মতোই মিষ্টি।তোমার হাতের খাবার খেলে মনে হয় শুধু খাবার নয় তোমাকেও…..
আর কিছু বলার আগেই তিতির বেরিয়ে গেলো। টুপ করে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো গাল বেয়ে।

__________

শার্লিন আর সাইফ মাঠে বসে আছে। শার্লিনের চোখ গেলো ফারাজের গাড়ির দিকে।

সাইফঃ চল পেত্নী আজকে বাইক রেস করি…
শার্লিনঃ এখন না ক্লাস শেষ হোক।
সাইফঃ ওকে… আর ওই মেয়ে।
শার্লিনঃ ডোন্ট ওয়ারি আমরা খুঁজে নিবো। এখন চল একটা কাজ করি।
সাইফঃ কি..
শার্লিনঃ চল তো।

শার্লিন মাথা থেকে ক্লিপ দিয়ে কিছু একটা করলো গাড়ির তারপর কিছু ময়লা নিয়ে গাড়ির ভেতর ফেলে দিলো। আশেপাশে তাকিয়ে কোমর দোলাতে দোলাতে ক্লাসের দিকে চলে গেলে।
দুই তলা থেকে শার্লিনের দিকে তাকিয়ে হাসলো ফারাজ সবটা সে মোবাইলের ক্যামেরায় বন্ধি করে নিয়েছে।

নিজের অজান্তেই কতো বড় বিপদের মুখে পা বাড়ালো শার্লিন!! বেচারি বুঝতেই পারলো না।

ক্লাসে এসে খুশিতে নাচতে শুরু করলো। নিজের প্রতিশোধ নিয়েছে সে। ভাব নিয়ে বলে উঠলো ” শার্লিনের সাথে লাগতে আসলে এর পরিনাম আরও ভয়ংকর হবে ফারাজ চৌধুরী!! ‘

চলবে…..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

#বিষাক্ত_প্রেম
#পর্ব_11
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

দিশা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ওর সামনে ওর সৎ মা অগ্নি রুপে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
কিছুটা দূরে ওর বাবা আর ভাই সোফায় বসে আছে। ভাই এখনো অনেক ছোটো কিছুই বুজে না

সৎ মাঃ কাল সারা রাত কোথায় ছিলে..??? তোমার জন্য সমাজে আমরা মুখ দেখাতে পারবো না। এতোদিন সব সহ্য করেছি আর না!!
দিশা কোনো জবাব না দিয়ে একবার দূরে বসে থাকা নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।

দিশার সৎ মা রিনা খান দিশার হাত মুচড়ে ধরে বলে উঠলো, ‘ তোর দিন দিন সাহস বেড়েই চলছে। সারা রাত বেডাগর লগে লটরপটর করে সকালে আমার বাসায় কি!! যা যার লগে সারা রাত ছিলি তার কাছে যা।
দিশা ব্যথায় চোখ বন্ধ করে নিলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, ‘ আমার হাত ছাড়ুন!! না হলে আপনার হাত ভেঙে গলায় জুলিয়ে দিবো।আমাকে আপনার মতো দোষ চরিত্র মেয়ে ভাববেন না। আপনার মুখের ভাষা দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
~ কি!! এতো বড় সাহস তোর আমি দোষ চরিত্রা! তোর এই মুখ আমি খুব জলদি বন্ধ করার ব্যাবস্থা করছি। একটু পর যখন আলাকার মহিলারা জিজ্ঞেস করবো সারা রাত কোন বেডার সাথে রাত কাটায় আইছোস তখন দেখমু এই মুখে পটর পটর কেমনে করোস। বলছি আমার এক ভাই আছে অনেক টাকা পয়সা আছে বিয়ে করে নে, না আমাদের শেষ করার জন্য এসে মাতার উপর বসেছে।মরতে পারোস না তোর মা’য়ের মতো!!
দিশাঃ আপনি সারা এলাকা করেছেন!!..খবর্দার আমার মা’য়ের নাম মুখে আনলে মুখ ছিড়ে ফেলবো আপনার!!?
রিনা খান শয়তানি হাসি দিয়ে দিশার দিকে তাকালো।
দিশা রেগে রিনা খানের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।
সাথে সাথে দিশার গালেও একটা থাপ্পড় পড়লো। দিশা অবাক হয়ে তাকালো সামনে। চোখের কোনে জল গড়িয়ে পরলো। নিজেকে এতোক্ষন ঠিক রাখার চেষ্টা করেও পারলো না অবাধ্য জল গুলো বার চোখ ঝাপসা করে দিচ্ছে।

দিশাঃ বাবা!! তুমিওওওও…!! এই মহিলা আমাকে মানুষিল রোগী বানিয়ে ফেলছে দিন দিন। আমার উপর কতোটা অত্যাচার করতে তুমি নিজের চোখে দেখো। বাড়ির সব কাজ শেষ করে অফিস যেতে হয় বাসায় এসে রাতের খাবারটাও আমার জন্য থাকে না।মাস শেষে টাকার জন্য রুমে এসে বসে থাকে আর কতো সহ্য করবো আমি!”?
~ তোর মতো চরিত্রহীন মেয়ের এই বাড়িতে কোনো জায়গা নেই। লায়লার সাথে ওই দিন তোকেও মে*রে ফেলার উচিত ছিলো। তুই না থাকলে আজ আমার এমন দিন দেখা লাগতো না। তোর সাহস কতো বড় রিনার গায়ে হাত তুলিস। এতো দিন অনেক সহ্য করেছি আর না বেড়িয়ে যা আমার বাড়ি থেকে এখুনি।
দিশাঃ আমার মা’ কে তোমরা খু*ন করেছো!!
~ হ্যাঁ নিজ হাতে আমি মেরেছি৷ অনেক জ্বালিয়েছে তাই একদম শেষ করে দিয়েছি।
দিশা দুই হাতে মুখ চেপে নিচে বসে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।
রিনা খান দিশার সামনে বসে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,’ আহা বেচারি কষ্ট হচ্ছে!! বুকে আসো…!আমার মুখে মুখে কথা বলার পরিনাম। তোর মা একটা মা** ছিলো। বেডাদের রুপ দেখায় দেখায় পাগল করতো ঠিক তোর মতো।!
দিশা বসা থেকে দাঁড়িয়ে ওর বাবার সামনে গিয়ে দাড়ালো। আফজাল সাহেব দিশার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই দিশা পাশ থেকে একটা ফুলদানি তুলে আফজাল সাহেবের মাথায় বারি মারলো।সাথে মাথা ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগলো দিশা পেছন থেকে আরেকটা কাঁচের গ্লাস হাতে নিয়ে রিনা খানের দিকে ছুড়ে মারলো। সেটাও গিয়ে রিনা খানের মাথায় পরলো।
দিশা ওর বাবার সামনে গিয়ে,’ কি কষ্ট হচ্ছে!! ভীষণ কষ্ট তাই না..? আমারও হচ্ছে ঠিক বুকের বা’ পাশে ভীষণ। আমার মা’য়ের ও হয়ে ছিলো৷
পেছন থেকে রিনা খানের ছেলে ছোট্ট আরিফ কান্না করছে। দিশা আরিফের দিকে তাকিয়ে রিনা খানের দিকে তাকালো। ইতি মধ্যে রিনা খান অজ্ঞান হয়ে গেছে। রক্তে লাল হয়ে গেছে রিনা খানের গাল।
দিশা ছোট্ট আরিফ কে একটা চকলেট দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।
এখন সে তার মা’য়ের কবরের পাশে যাবে৷ মা’কে একটু ভীষণ প্রয়োজন এখন।

__________________

শার্লিন ওড়না কোমড়ে গুঁজে গাড়ি পরিস্কার করছে।
সাইফ দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে বেচারা চাইলেও কোনো হেল্প করতে পারছে না।
ভার্সিটির কিছু ছেলে মেয়ে দূর থেকে লুকিয়ে ভিডিও করছে। কেউ সামনে এসে কিছু বলার বা মজা নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না ফারাজের জন্য।

শার্লিনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ফারাজ চৌধুরী। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে।

শার্লিন ফারাজের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বকতে শুরু করলো। বেচারির কাপড়ের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে। কে বলে ছিলো সুখে থাকতে গাড়ি নষ্ট করতে এখন নিজেই পরিস্কার করা লাগছে।
ফারাজঃ তোমার বিরবির করা বন্ধ হলে জলদি গাড়ি পরিস্কার করো।
শার্লিন পানি গাড়িতে ডালতে গিয়ে ইচ্ছে করে ফারাজের উপরে ফেলে দিলো।
ফারাজ শান্ত দৃষ্টিতে শার্লিনের দিকে একবার তাকালো তারপর নিজের দিকে।
ফারাজঃ এটা কি করলে..??
শার্লিনঃ সরি সরি স্যার! আপনি আর গাড়ি তো একি রকম তাই আপনাকেই গাড়ি ভেবে পরিস্কার করে দিলাম।
ফারাজ শার্লিনের কাছে এসে বললো,’ দেখো আমার দিকে..আমি কোন দিক দিয়ে অপরিস্কার বলো!!..?’

” আরে বেটা এমন শান্ত ভাবে কথা কেনো বলছে! রেগে গেলো না কেনো..? মনে মনে”
শার্লিনঃ আসলেএএএ….সরি স্যার।
ফারাজঃ তুমি একেতো আমার গারি নষ্ট করেছো এখন আমাকেও!!
শার্লিন কিছু না বলে চারপাশে তাকালো মেয়েরা কেমন নির্লজ্জের মতো ড্যাবড্যাব করে ফারাজের দিকে তাকিয়ে আছে। এতো দিন শুনতাম ছেলেরা লুচু এখন দেখি মেয়েরা আরও বড় লুচু৷
শার্লিন ফারাজের সামনে থেকে এক দৌড়ে চলে গেলে।
ফারাজের ভীষণ রাগ হলো তাও নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে কাউকে কল দিলো।

শার্লিন বাইক নিয়ে এসে ফারাজের সামনে আসলো।
ফারাজ ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই শার্লিন বলে উঠলো ‘ উঠে বসুন স্যার’
ফারাজ কথা না বাড়িয়ে আশেপাশে তাকিয়ে উঠে বসলো।

ভার্সিটির ছেলে মেয়েরা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। কিছু ছেলে তো ভিডিও করে নিলো। আর কিছু মেয়ে জেলাস হয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শার্লিনের দিকে।

ফারাজ মুচকি হেঁসে শার্লিনের কাঁধে হাত রাখতে গিয়ে নামিয়ে নিলো।

_______________

তিতির বসে আছে হালিমা চৌধুরীর সামনে।
হালিমা চৌধুরী তিতিরের হাত শক্ত করে ধরে আছে।
তিতির আসার পর থেকে হালিমা চৌধুরী বেশ খুশি। এই তিতির মেয়েটাকে অনেক পছন্দ করেন সেটা উনার মুখ দেখেই বুঝা যায়।

মুরতাসিম কে দেখেই তিতির নড়েচড়ে বসলো।
মুরতাসিমের সাথে ইভাকে দেখে হালিমা চৌধুরী রেগে তিতিরের হাত চেপে ধরলো। হালিমা চৌধুরীর নক গিয়ে বিধলো তিতিরের হাতে। তিতির ব্যথা পেলেও শব্দ করলো না। হালিমা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে ইভার দিকে তাকালো। চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে হালিমা চৌধুরী ইভার দিকে।

ইভাঃ কেমন আছো ছোটো আম্মু..? তোমাকে অনেক মিস করেছি। খুব জলদি তুমি সুস্থ হয়ে যাবে কারন আমি চলে এসেছি বলেই শয়তানি হাসি দিয়ে হালিমা চৌধুরীর দিকে তাকালো।

হালিমা চৌধুরী এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ইভার দিকে।

মুরতাসিম ওর আম্মুর হাত ধরে বলে উঠলো, ‘আম্মু আর কয়েকটা দিন তুমি ঠিক আগের মতো হয়ে যাবে। আমাদের আগের সেই হাসিখুশি আম্মুটা আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসবে।’

হালিমা চৌধুরী এক বার ছেলের দিকে তাকিয়ে মলিন হাসি দিয়ে তিতিরের দিকে তাকালো।
তিতিরের মোবাইলে কল আসলো ফাহাদের।
মুরতাসিম তিতিরের দিকে তাকালো।
তিতির মোবাইল হাতে নিয়ে হালিমা চৌধুরী কে বলে বেরিয়ে গেলো।তিতিরঃ তুমি কোথায়…?
ফাহাদঃ হসপিটালের নিচে।
তিতিরঃ আমি আসছি।
ফাহাদঃ আচ্ছা।

তিতির পেছনে ফিরতেই দেখলো মুরতাসিম দাঁড়িয়ে আছে। তিতির তাকাতেই মুরতাসিম তিতিরের দিকে এগিয়ে আসলো।
কিছু বলার আগেই ইভা এসে মুরতাসিমের হাত জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো, ‘ মুরতাসিম ডাক্তার আঙ্কেল তোমাকে বলেছে দেখা করতে এখুনি। ‘
তিতির তাকালো ইভা আর মুরতাসিমের হাতের দিকে।
মুরতাসিমঃ আমি একটু পর দেখা করছি।
ইভাঃ আন্টির বিষয় খুবি জলদি মুরতাসিম।
তিতির পেছন ফিরে হাঁটা ধরলো। আর ফিরে তাকালো না। ফিরে তাকালে হয়তো মনের ক্ষত চোখে প্রকাশ পেয়ে যেতো।

তিতির গিয়ে গাড়িতে বসে মুখে হাত দিয়ে নিলো।
ফাহাদঃ কি হয়েছে তিতিরপাখি..??
এমন স্নেহের হাত মাতায় পেয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো তিতির।
ফাহাদ উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো, ‘ কি হয়েছে তিতিরপাখি বল.? কেউ কিছু বলেছে..?’
তিতিরঃ সে অন্য কেউকে ভালোবাসে ভাইয়া। আমাকে কেনো ভালোনাসে না..? আমি কি দেখতে এতো খারাপ! দেখো আমার দিকে দেখো..? নাকি আমি গ্রামের গরীব মেয়ে বলে..?’
ফাহাদঃ এমন কিছু না তিতিরপাখি তুমি তো তোমার পরিচয় দাওনি। সে তো তোমাকে চিনেনা। তুমি তোমার পরিচয় দিয়ে দেখো সে অবশ্যই আমাদের তিতিরকে ফিরিয়ে দেওয়ার সাহস পাবে না।
তিতির ফাহাদের শার্টের হাতার মধ্যে মুখ দিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে ।
তিতিরঃ তার বিয়ে ঠিক ভাইয়া।আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
ফাহাদের চোখ টলমল করে উঠলো। যার চোখে এতো দিন এক ফোঁটা জল আসতে দেয়নি সে আজ এভাবে কাঁদছে। ফাহাদের বলতে ইচ্ছে হলো ” আমারও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তিতিরপাখি তোমার মুখে অন্য কারো কথা শুনে! ভীষণ কষ্ট হচ্ছে বুকের বা’ পাশে।যা তুমি কখনো বুঝবে না।”
ফাহাদের ভেতর জ্বলছে কেনো আমাকে ভালোবাসলে না তিতিরপাখি, এমন ক্ষতি হতো একটু ভালোবাসলে তিতিরপাখি!! আমি তো কখনো তোর এই চোখে জল আসতে দিতাম না। আমাকে একটু বুঝলে এমন কি ক্ষতি হতো!!. মনের জমানো হাজারো কথা মনেই রয়ে গেলো ফাহাদের।

______

দিশা একটা গাছের নিচে চুপ করে আছে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরছে।
মনে হলো সামনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে ওকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।
দিশা সামনে তাকিয়ে অপরিচিত একটা মহিলাকে এতো কাছে দেখে অবাক হয়ে গেলো।
দিশা তাকাতেই মহিলাটি খুশিতে গদগদ হয়ে বলে উঠলো ” এই তো খুঁজে পেয়ে গেলাম তোমাকে! আমি অনেক বকেছি সাইফ কে। ও একটু পাগল তুমি ওর সাথে রাগ করো না মা চলো আমার সাথে ”

দিশা কিছুই বুঝলো না মহিলার কথা।
~ তুমি কাঁদছো কেনো..???
দিশা চোখের জল মুছে বলে উঠলো, ‘ আপনি কে..!!????’

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে