বিষাক্ত প্রেম পর্ব-০৯

0
880

#বিষাক্ত_প্রেম
#পর্ব_9
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

শার্লিন দাঁড়িয়ে আছে ফারাজের সামনে। খুবি বিরক্তিকর চাহনি তার।
ফারাজ তাকাতেই শার্লিন রেগে বলে উঠলো, ‘ এতো পেটুক স্যার কেনো আপনি!! আমার পা ব্যাথা করছে। এই পর্যন্ত কয় বার ক্যান্টিনে গিয়েছি আর এসেছি!!। এই বলছেন কফি খাবেন আবার নিয়ে আসার পর বলছেন মুড নেই। আসলে এটা বলুন আপনার খাওয়ার ইচ্ছে টাই নেই।”
ফারাজ শার্লিনের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ তুমি আমার এসিস্ট্যান্ট আমার কথা শুনতে তুমি বাধ্য আর তুমি আমাকে পেটুক বললে!! ভুলে যেওনা আমি তোমার স্যার।’
শার্লিন বিরবির করে বললো,” আপনি কেনো ভুলে যাচ্ছেন আমি আপনার ছাত্রী ঘরের বউ নই”
শার্লিনের কথাটা ফারাজ শুনলো তাও এমন ভাব করে মোবাইলের দিকে তাকালো জেনো সে কিছুই শুনলো না।

শার্লিনঃ স্যার আমি এখন আসি।
ফারাজঃ আমি বলেছি..? আপনি এই বইটা সিনিয়র 2 ক্লাসে গিয়ে ইভা চৌধুরী কে এই বইটা দিয়ে আসুন।

” এখন কি এই মেয়ের চামচামি করতে হবে আমাকে!! মনে মনে.”

শার্লিনঃ স্যার আপনার গার্লফ্রেন্ড আপনি ডেকে নিন না!
ফারাজঃ গার্লফ্রেন্ড!!..

“হুহ্ এমন একটা ভাব জেনো বাজা মাছটা উল্টিয়ে খেতে জানে না!! মনে মনে ”

শার্লিনঃ বইটা দেন।

________

কেটে গেছে বেশ কয়েকদিন।

রাতে তিতির ছাঁদে বসে কাছে তখনি অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলো। বেশ কয়েক বার রিং হয়ে কেটে গেলো। অচেনা নাম্বার দেখে তিতির মোবাইল পাশে রেখে অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।

আবার কল আসতেই বিরক্ত হয়ে কল রিসিভ করলো তিতির।

তিতির কল রিসিভ করেই বুঝলো এটা সেই বেয়াদব ছেলেটা।
তিতিরঃ আপনার সাহস কিভাবে হয় আমাকে কল দেওয়ার। একবার সামনে পেলে গাড়ির কাঁচের মতো আপনার মাথাটাও ভেঙে দিবো।

ছেলেটা হেঁসে উঠলো। যা তিতিরের রাগ আরও বাড়িয়ে দিলো।

তিতিরঃ আপনার হাসির শব্দ একদম জঘন্য।
~ সেটা আমিও জানি।
তিতিরঃ কল কেনো দিয়েছেন..?
~ তুমি তোমার কথা রাখোনি।।
তিতিরঃ আপনার জন্য আমি অপেক্ষা করে ছিলাম।
~ কিন্তু শেষ অবধি তো অপেক্ষা করেননি।
তিতিরঃ এখন কি চাই..?
~ আচ্ছা চলুন আমরা একটা চুক্তিতে আসি।
তিতিরঃ কিসের চুক্তি।
~ খুবি সাধারণ।
তিতিরঃ বলুন।
~ আমার আন্টি খুব অসুস্থ আপনি এক মাস উনার দেখা শোনা করলে টাকা পরিশোধ হয়ে যাবে। খুবি ভালো ভাবে উনার খেয়াল রাখতে হবে নিজের মা’য়ের মতো।
তিতিরঃ আমি জব করি…
~ আর কিছু বলার আগেই ছেলেটা বলে উঠলো, ‘ বেশি না দুই ঘন্টা করে সময় দিলেই হবে। সকালে দুই ঘন্টা ছুটির পর দুই ঘন্টা। ”

তিতিরকে সবটা বুঝিয়ে দিয়ে ছেলেটা কল রাখতেই তিতির ছাঁদেই শুয়ে পরলো , এই জবটা নেওয়ার পর থেকে একের পর এক ঝামেলায় সে জড়িয়ে যাচ্ছে৷ এক তো মুরতাসিমের আশেপাশে থাকলে দম বন্ধ হয়ে আসে। কেমন হার্টবিট অকারণেই বেড়ে যায়। আর উপর এখন আরেক ঝামেলা। আবার প্রশ্ন জাগে মনে মুরতাসিম এখনো কেনো বিয়ে করেনি..? কেনো তিতিরকে ডিভোর্স দিয়ে ছিলো..? গ্রামের মেয়ে বলে..? নিজের ভাবনায় নিজেই হাসলো তিতির। হাসতে হাসতে বলে উঠলো, ‘ তিতির তুই কোথায় আর মুরতাসিম কোথায়!! কোনো দিক দিয়েই তোদের যায় না। সাধারণ গ্রামের মেয়ে আর এতো বড় কোম্পানির মালিক। তাইতো তোকে ছেড়ে দিতে সে একবার তোর কথা ভাবেনি। তোর অবস্থার কথা ভাবেনি।’

সাইফ বাইক নিয়ে রাতে ঘুরতে বের হলো। কিছু দূর আসতেই দেখলো একটা মেয়ে ব্রিজের ওপর দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।
সাইফ একবার টাইম দেখে নিলো ১১টা বাজে। নিশ্চয়ই মেয়েটা সুইসাইড করার চেষ্টা করছে!! ব্রিজ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করবে!!

সাইফ বাইক থামিয়ে মেয়েটার কাছে আসার আগেই মেয়েটা ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে গেলো। মোবাইলে কাউকে বিশ্রী কতোগুলো গালি দিয়ে মোবাইল দূরে ফিলে দিলো। অকারণে হাসতে হাসতে ব্রিজ থেকে এক পা সামনে বাড়িয়ে দিতে নিলেই সাইফ মেয়েটির এক পা ধরে নিজের দিকে টান মারলো। মেয়েটি তাল সামলাতে না পেরে ওর উপর মুখ থুবরে এসে পরলো।
সাইফ নিচে মেয়েটি উপরে।এতো রোমাঞ্চকর একটা মূহুর্তে মেয়েটি “ওফ্ফ বলে উঠলো “।মেয়েটির মুখ থেকে খুবি বিশ্রী গন্ধ বেরিয়ে আসলো।

সাইফ নিজের নাক চেপে ধরে মেয়েটিকে দূরে সরিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।

সাইফঃ ছিহ্ মেয়েটি উল্টো পাল্টো কিছু তো খেয়েছে! এই সব কিছু মেয়েদের জন্যই আজ কাল বাকি গুলোও নষ্ট হচ্ছে! এখন আমি কি করবো..?

মেয়েটি নিচে বসে কান্না শুরু করলো।

সাইফ বিরক্ত হলো ভীষণ বিরক্ত হলো।

মেয়েটি বিরবির করে কিছু বলছে।
সাইফ শুনার জন্য একটু কাছে গেলো। কিছু শুনতে না পেয়ে আরও একটু কাছে গেলো।
~ সে আমাকে কখনো ভালোবাসেনি বলেই নিচে লুটিয়ে পড়লো ।

সাইফ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলো। এখন সে কি করবে..? মেয়েটাকে কি এখানে ফেলে যাবে নাকি সাথে নিয়ে যাবে..?

মেয়েটিকে একা ফেলে যেতে মন সায় দিলো না। বাড়িতে নিয়ে গেলে পড়তে হবে আরও ঝামেলায় তাও মেয়েটিকে কোলে তুলে নিলো সাইফ।একটা মেয়েকে এখানে রেখে যাওয়া মানে মৃত্যুর মুখে ফেলে যাওয়া।

___________

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে গেলো তিতির। বাহিরে এসে দেখে ফাহাদ গাড়ি নিয়ে ওর জন্য দাঁড়িয়ে আছে।
তিতিরঃ ভাইয়া এখনো যাওনি..?
ফাহাদঃ চল আজ আমি তোকে অফিসে দিয়ে আসি।
তিতিরঃ এতো সকালে তো অফিসে যাবো না।
ফাহাদঃ তাহলে কোথায়..?
তিতির এখন কি বলবে..? অনেক ভেবে বললো,’ ফ্রেন্ডের বাসায়।’
ফাহাদঃ এখন..!
তিতিরঃ হুম।
ফাহাদঃ ঠিক আছে চলো।
তিতির ভয়ে ভয়ে উঠে বসলো। সে তো এই ঠিকানা চিনে না। এখন কিভাবে রাস্তা বলবে..!!
ফাহাদঃ ঠিকানা বল।

তিতির মোবাইল থেকে লোকেশান দেখালো৷
ফাহাদ আর কিছু না বলে চললো৷ লোকেশান দেখে।
তিতির হাফ ছেড়ে বাচলো।

বাসার সামনে দাঁড়িয়ে অবাক হলো তিতির।এতো বড় বাড়ি, কি সুন্দর বাগান।

দারোয়ান তিতিরকে দেখেই জিজ্ঞেস করলো, ‘ আপনি তিতির..?’

তিতির বেশ অবাক হলো। দারোয়ান কিভাবে ওর নাম জানলো। সব কিছু কেমন রহস্য রহস্য গন্ধ। একটা কাড দেখালো। দারোয়ান ভেতরে আসতে দিলো।
তিতির আশেপাশে তাকাতে তাকাতে কলিং বেল বাজালো।

একজন এসে দরজা খুলে তাকাতেই তিতির চোখ বড় বড় করে তাকালো। এক হাত দিয়ে ভয়ে মুখ ডেকে দিলো।

~ আপনি..!?
তিতির হাত সরিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করলো। শা”লার কপাল লাস্ট অব্দি যাদের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ানোর চেষ্টা তাদের কাছেই কেনো শেষ অব্দি আসতে হয়!!

~ ভেতরে আসুন।
তিতির ভালো করে তাকালো আসলে এটা ফারাজ নাকি মুরতাসিম..?

~ এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো..?
তিতির বেস লজ্জা পেলো। আমতা আমতা করে বললো,’ ফারাজ স্যার..?’
ফারাজ হেঁসে মাথা নেড়ে বললো, ‘ আপনি তাহলে আগে কখনো আমার ভাইয়ার সাথেও পরিচিত হয়েছেন.!’
তিতিরও হেঁসে ভেতরে আসলো।
এতো বড় বাড়ি অথচ ফারাজ আর তিন জন কাজের লোক বাদে নিচে আর কেউ নেই।

ফারাজঃ বসুন।
তিতির আশেপাশে তাকিয়ে বসলো
ফারাজ ইশারায় নাস্তা নিয়ে আসতে বললো।
ফারাজঃ এবার বলুন হঠাৎ আমার বাসায়.
তিতিরঃ প্রথম থেকে লাস্ট অব্দি সবটা বললো।
তিতিরের কথা গুলো শুনে হেঁসে উঠলো ফারাজ। সে খুব ভালো করে জানে তিতির কোন বেয়াদব ছেলের কথা বলছে! রাগের বসে তিতির অনেক গুলো বকাও দিয়ে ফেললো সেই ছেলেকে।

ফারাজ কে হাসতে দেখে গাল ফুলিয়ে তাকালো তিতির। ওর এই করুন অবস্থার সবাই বেশ মজা নিচ্ছে।
ফারাজ কিছু বলার আগে পেছন থেকে একটা গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে আসলো। তাতেই তিতির ভয়ে জমে গেলো। কেনোওওওও সব সময় এই লোকের সামনে পড়তে হয়!… তিতিরের খুব ইচ্ছে করলো এখন হাত পা ছড়িয়ে কান্না করতে।

চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে