#বিষাক্ত_প্রেম
#পর্ব_4
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
তিতির চোখ খোলে নিজেকে বাঁধা অবস্থায় একটা রুমে আবিস্কার করলো।
ধীরে ধীরে সারা রুমে চোখ বোলালো।
~ কেউ আছেন..?
কোনো সারা শব্দ না পেয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো, ‘ কেউ আছো!! কার এতো বড় সাহস আমাকে বেঁধে রেখেছো! তুমি জানো আমি কে..? এক বার শুধু ছাড়া পাই তোমার শরীর থেকে মাথা আলাদা করে ফেলবো৷
” আচ্ছা তাই নাকি..?”
তিতির পেছনে তাকালো মাক্স পড়া সেই বেয়াদব গাড়ির ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে। ওর পাশের একটা ছেলে তিতিরের সেই কথাটা শুনে ফিক করে হেঁসে দিলো।
মাক্স পড়া ছেলেটা রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই পাশে দাঁড়ানো ছেলেটা হাত দিয়ে মুখ তালা দিয়ে দিলো।
তিতিরঃ আপনি..!!???
ছেলেটা তিতিরের সামনে দাঁড়িয়ে পকেটে হাত দিয়ে বললো,’ তাহলে মনে রেখেছো..???’
~ আমার মতো একটা বাচ্চা মেয়েকে এমন হাতির বাচ্চা দিয়ে তুলে এনেছেন কেনো..? আমাকে কল দিলেই টাকা নিয়ে চলে আসতাম।
তিতির কে তুলে আনা লোকগুলো নিজের শরীরের দিকে তাকালো। একটা আরেক টাকে বলতে লাগলো ” দেখতো আমাকে দেখতে কি হাতির বাচ্চার মতো লাগছে..?!!”
মাক্স পড়া ছেলেঃ কল দেওয়ার জন্য তুমি কি যাওয়ার সময় কন্টাক্ট নাম্বার দিয়ে গিয়ে ছিলে..? আমি তিন দিনের মধ্যে আমার টাকা চাই।
~ তোমার মতো ফকির লোক আমার জীবনে একটাও দেখিনি। একটা কাঁচের জন্য আমার মতো ইনোসেন্ট একটা মেয়েকে এভাবে হুমকি দিচ্ছো..!!
মাক্স পড়া ছেলেটা রেগে তিতিরের দিকে তাকালো।
~ তুমি ইনোসেন্ট না ঝগড়ুটে মেয়ে একটা।
~ তোমার এতো বড় সাহস এক তো তুলে এনেছো আবার ঝগড়ুটে বলছো!!। আমি এখনি তোমার নামে আমার ভাইকে বলে জেলে ঢুকিয়ে দিবো।
মাক্স পড়া ছেলেটা তিতির কাছে আসলো।
তিতির ভয়ে দূরে সরে যেতে চাইলো৷ কিন্তু বেচারি তো চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় আছে।
~ আমার গাড়ির কাঁচ ভাঙ্গার অপরাধে আমি তোমাকে এখনি পুলিশের হাতে তুলে দিতে পারি।
পুলিশের কথা শুনে তিতির একটু ভয় পেলো। তবে বুঝতে দিলো না।
~ আমি তোমার টাকা তিন দিনের মধ্যেই দিয়ে দিবো।
~ মনে থাকে জেনো। কথার এদিক ওদিক হলে…
~ আর বলতে হবে না বুঝতে পেরেছি। এভাবে তুলে এনে বিক্রি করে দিবে তাই তো!!
~ তোমার মতোই মাথা মোটা তোমার ভাবনা চিন্তা।
তিতির রেগে বলে উঠলো, ‘ তোমার সাহস কতো বড় আমাকে অপমান করছো৷ একবার শুধু হাতের বাঁধনটা খুলে দাও তোমার গাড়ির মতো তোমার অবস্থাও করে দিবো।
এই গাড়িটা ছিলো ওর সব থেকে পছন্দের তাই রেগে ও বলে উঠলো, ‘ আমার সাহস আছে বলেই আজ তুমি এখানে৷ আর তুমি কি তোমার নিজের সাইজের দিকে এক বার তাকিয়েছো শূন্য ফিগার নিয়ে আসবে আমার সাথে ফাইট করতে!!…
পাশের ছেলেটা অবাক হয়ে ওদের ঝগড়া দেখছে। এই জেনো এরা ছোটো বাচ্চা এমন ভাবে ঝগড়া করছে। অবাক হয়ে বললো,’ বস আপনি তো কারো সাথে প্রয়োজনের বেশী কথা বলেন না আর এর সাথে ঝগড়া করছেন!!..
~ রবি তুমি তোমার মুখ বন্ধ রাখো আর এই মেয়েকে যেখান থেকে আনা হয়েছে ঠিক সেখানেই দিয়ে আসো।
একটা ছেলে এসে তিতিরের মুখে রুমাল চেপে ধরলো। বেচারি আবার জ্ঞান হারালো।
___
তিতির চোখ খোলে দেখে সে গাড়িতে। গাড়ি ভার্সিটির সামনে দাঁড় করানো৷
একটা ছেলে ওর মুখে পানি দিয়েছে যার কারনে ওর হুস ফিরেছে।
ওকে ওখানে রেখে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।
বাসায় আসার পর শার্লিন জিজ্ঞেস করলো এতক্ষন কোথায় ছিলি..?
তিতির শার্লিনকে সত্যিটা বললো না। ও চায় না ওর জন্য শার্লিন ঝামেলায় জড়াক।
ফাহাদ বাসায় এসে তিতিরকে বললো এক গ্লাস পানি দিতে।
শার্লিন আঁড়চোখে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দেয়। এটা নতুন কিছু নয়। ফাহাদ সব সময় অফিস থেকে বা বাহির থেকে এসেই তিতিরের হাতে পানি খাবে।
তিতির পানি দিয়ে শার্লিনের পাশে বসলো।
ফাহাদঃ চলো কাল তোমাদের শপিং করাবো৷ কাল সন্ধ্যায় তৈরি থাকবে।
শার্লিন খুশি হয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরে বললো,’ ভাই আমার তো অনেক কিছু লাগবে। তার পর এক এক করে বলা শুরু করলো।’
_________
তিতির দাঁড়িয়ে আছে অফিসের সামনে। কাগজপত্র গুলো নিয়ে রিজাইন লেটার আনতে হবে৷ অন্য কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিতে হবে। তিন দিনে এতো টাকা কোথায় পাবে..!!? ওর কাছে তো ২০হাজার আছে আরও ৩০ লাগবে।
অফিসের নিচে পায়চারি শুরু করলো। মনে শান্তি লাগছে না। এখনি অফিসে যাবে মুরতাসিমকে কি কথা বলবে সেই গুলো আরেকবার মুখস্থ করে নিলো।
পেছন থেকে গাড়ির হর্ণ শুনে ভয়ে কেঁপে উঠল। মনে হচ্ছে সে কোনো যুদ্ধে যাচ্ছে।
তিতির খুব সাহস করে অফিসে ঢুকলো৷
সিঁড়ি দিয়ে উপরে যাওয়ার সময় ম্যানেজার সাহেবের সামনে পড়লো।
ম্যানেজার সাহেবঃ তুমি কাল কেনো অফিসে আসোনি!!..? আজ আসার কোনো প্রয়োজন ছিলো না। স্যার এমনিতেই তোমাকে চাকরি থেকে বের করে দিবে। আমি প্রথমেই বলেছি স্যার কাজের বিষয় খুব সিরিয়াস!!…
তিতির খুশিতে হেঁসে ম্যানেজার কে ধন্যবাদ বলে একটা চকলেট এগিয়ে দিলো।
বেচারা ম্যানেজার অবাক হয়ে বললো,’ তুমি কি বুঝতে পেরেছো আমি কি বলেছি!!..?’
তিতিরঃ খুব ভালো করে বুঝেছি। আর আমি তো এটাই চাই।
ম্যানেজার কিছু না বলে তিতিরকে পাগল বলে চকলেট নিয়ে চলে গেলো।
তিতির খুশি খুশি মুরতাসিমের ক্যাবিনের সামনে দাঁড়ালো।
ভেতরে তো ঠিকি চলে আসলো এখন কি বলবে..? ভয় ক্রমশই বেড়ে চলছে এই বুঝি আবার জ্ঞান হারায়!!
দুই ঘন্টা ধরে একি ভাবে দাঁড়িয়ে আছে তিতির। মুরতাসিম নিজে কিছু বলছে আর না ওকে কিছু বলার সুযোগ দিচ্ছে৷ মুরতাসিমের উপর চরম বিরক্ত হয়ে তিতির বলে উঠলো, ‘ আমাকে কি কিছু বলার সুযোগ দিবেন..? এভাবে সামনে দাঁড় করিয়ে রাখার মানে কি..?”
মুরতাসিম শান্ত দৃষ্টিতে তিতিরের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আপনাকে খুব ভালো করে বলে দেওয়া হয়ে ছিলো সময় মতো অফিসে আসতে। আপনি প্রথম দিন অফিসে আসেননি আজ আবার লেইট৷’
তিতির ভাবতে লাগলো আজব আমি কেনো ভয় পাচ্ছি। কোনো ভয় নেই তিতির উনি মানুষ কোনো বাঘ নয়।
~ প্রথম দিন না আসার জন্য আর আজকে লেইট করে আসার জন্য আমি অবশ্য সরি বলবো না। কারন আমি আগেই বলে দিয়েছি আমি এই চাকরি করবো না।
মুরতাসিমঃ চাকরি না করলে আমি আপনাকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে পারি। এক কোটি টাকা কোম্পানি থেকে সরিয়ে ফেলার কথা বলে।
তিতির রেগে বলে উঠলো, ‘ আপনার কাছে কি প্রমাণ আছে..!?
মুরতাসিম পেপার গুলো তিতিরের সামনে এগিয়ে দিলো।
তিতির পেপার গুলোর দিকে তাকিয়ে একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে কিছু বলার আগে মুরতাসিম বললো,’ আপনাকে এডভান্স পঞ্চাশ হাজার দেওয়া হবে।’
টাকার কথা শুনেই তিতির খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। যখন বুঝলো ভুল জায়গায় ভুল রিয়েক্ট করে ফেলেছে লজ্জায় বসে পরলো।
মুরতাসিম মনে মনে হাসলেও মুখ আগের মতো গম্ভীর।
তিতির চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,’ আসলে টাকা বড় কথা নয়। আপনাদের কোম্পানিটা আমার খুব ভালো লেগেছে। আমি কাল থেকে জয়েন করবো।
আসল কথা হলো এখন তিতিরের টাকা প্রয়োজন তাই টাকার কথা শুনে বাঘিনী বিড়াল সেজে গেছে।
মুরতাসিমঃ কাল নয় আজ থেকেই জয়েন করুন। ম্যানেজার সব বুঝিয়ে দিবে।
তিতির জোর পূর্বক হেঁসে চেয়ার থেকে উঠে যেতে নিলেই চেয়ারের সাথে পা লেগে নিচে পড়ে গেলো। আহ্!! বেচারি লজ্জায় চট জলদি উঠে ক্যাবিন থেকে পা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বেরিয়ে গেলো। দেখেই বুঝা যাচ্ছে পায়ে ব্যাথা পেয়েছে।
তিতির বেরিয়ে যেতেই মুরতাসিম হেঁসে উঠলো।
ম্যানেজার তিতির কে সব কিছু বুঝিয়ে দিলো। একটু পর হাতে করে অনেক গুলো ফাইল নিয়ে এসে বললো, জলদি এই গুলো শেষ করতে।
তিতির একবার ফাইল গুলো আরেক বার ম্যানাজারের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আপনি পারবেন এক দিনে এত্তো গুলো ফাইল শেষ করতে..??’
ম্যানেজারঃ এখানে আমার কিছু করার নেই বসের হুকুম।
তিতির খুব ভালো করেই বুঝলো মুরতাসিম ইচ্ছে করে এমন করেছে। তিতিরও কম কিসে। কানে হেডফোন গুঁজে চোখ বন্ধ করে গান শুনতে লাগলো। আর বেছে বেছে তিনটা ফাইল হাতে নিয়ে বাকি গুলো এক সাইডে ফেলে রাখলো। সে শুধু এই তিনটা ফাইল দেখবে আর বাকি গুলো ম্যানেজার কে দিয়ে দেখাবে।
ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে হেঁসে বললো, ‘ বসুন না স্যার…’
ম্যানেজারঃ বস দেখলে চাকরি চলে যাবে।
তিতিরঃ কিচ্ছু হবে না। একটু বসুন পরিচিত হই।
ম্যানেজার আশেপাশে তাকিয়ে বসলো।
তিতিরঃ আপনার মতো কিউট, হ্যান্ডসাম ছেলে এখনো বিয়ে করেন নি কেনো..?নিশ্চয়ই কোনো ছলনাময়ীর ফাঁদে পড়ে ছিলেন! ঠিক বলেছি না..?
ম্যানেজার তার কষ্টের কথা তিতির কে বলতে শুরু করলো।
তিতির গালে হাত দিয়ে দুঃখি দুঃখি মুখ করে ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে একটা একটা করে ফাইল এগিয়ে দিচ্ছে। ম্যানেজার কষ্টের কথা বলছে আর ফাইল দেখছে।
এদিকে তিতির তো কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনছে। ম্যানেজারের কোনো কথাই ওর কানে যাচ্ছে না। বেচারা ম্যানেজার তো কিছুই জানেনা।
চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।