#বিষাক্ত_প্রেম
#পর্ব_3
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
” মেয়েটি কে ফাহাদ..!!?”
ফাহাদ পেছনে ফিরে ওর ফ্রেন্ড নিহালের দিকে তাকিয়ে আবার তিতির দিকে তাকালো।
তিতি এই রাতে নিজের সামনে দুইটা ছেলে দেখে ঘাবড়ে যায়।
ফাহাদ বুঝতে পারলো তিতির ভয় পাচ্ছে।
ফাহাদঃ তোমার ভয় পাওয়ার কিছু নেই আমরা খারাপ লোক না। আমি ইনস্পেক্টর ফাহাদ আহমেদ আর ও হলো আমার ফ্রেন্ড নিহাল আহমেদ ।
নিলয় তিতির কে অনেক প্রশ্ন করলো৷ কিন্তু তিতির কিছুই বলছে না।
বিরক্ত হয়ে ফাহাদ তিতিরকে সাথে নিয়ে অফিসে আসলো৷ খাবার দিলো। তিতিরের খুব খিদে ছিলো খাবার সামনে দেখেই খাওয়া শুরু করলো।
খাবার শেষে তিতি নিজ থেকেই ওদের শুরু থেকো শেষ অবধি সবটা বললো।
সবটা শুনে ফাহাদের খুব মায়া হলো। সে তিতির কে নিজের সাথে বাড়িতে নিয়ে আসলো। এখান থেকেই ঘড়ে উঠে তিতিরের নতুন পরিচয়।
ফাহাদ বলেছে তিতিরের স্মৃতি হারিয়ে গেছে কিছু মনে নাই। যাওয়ার জায়গাও নেই তাই আজ থেকে এখানে থাকবে ওর পরিবারও তাই মেনে নেয়। তিতিরকে আজ ৩বছর উনারা নিজের মেয়ের মতো দেখে আসছে।কখনো ভালোবাসা না পাওয়া মেয়েটা হঠাৎ করে কতো গুলো ভালোবাসার মানুষ পেয়ে গেছে। তার মধ্যে তিতির কখনো গ্রামে যায়নি না স্বামীর দেখা পেয়েছে আজ কেনো দেখা হলো!!?? কাল ফাহাদ আসলেই এই বিষয় কথা বলতে হবে।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই সুন্দর করে রেডি হয়ে তিতির বেরিয়ে পড়ে নতুন ইন্টারভিউর জন্য।
আমেনা বেগম জোর করে নিজ হাতে খাবার খাইয়ে দেন ওকে।
তিতির অফিসের সামনে গিয়ে একবার কোম্পানির দিকে তাকায়। এতো বড় কোম্পানিতে কখনো চাকরি হবে না এটা খুব ভালো করেই তিতির জানে। এখনো ওর এই কোম্পানিতে চাকরি করার যোগ্যতা হয়নি। তাও অজানা ইচ্ছায় এসেছে।
ওয়েটিং রুমে বসে আছে। এখানে যারা ইন্টারভিউ দিতে এসেছে সবার দিকে তাকিয়ে তিতির নিজের দিকে তাকালো। কতোটা নরমাল শুভ্র সাদা রঙের শাড়ি পড়ে সে চলে এসেছে আর বাকি সবাই ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়ে সুন্দর করে পরিপাটি হয়ে এসেছে।
এক এক করে তিতিরের ডাক আসলো।
তিতির ইন্টারভিউ দিয়ে বের হয়ে মন খারাপ করে বসলো। এখানে বসার কোনো মানে নেই। চলে যাওয়াই ভালো । ইন্টারভিউ বেশি ভালো হয়নি।
প্রথম ইন্টারভিউ ছিলো উত্তর জানা থাকার পরও ঠিক ভাবে বলতে পারেনি। এখন নিজের উপর রাগ হচ্ছে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে।
কিছু সময় পর একটা মেয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো এখানে তিলোত্তমা তিতির কে..?
তিতিরঃ জ্বি আমি।
~ আপনি আমার সাথে আসুন।
তিতির মেয়েটার সাথে গেলো৷
মেয়েটা তিতির কে জানালো ওর চাকরি হয়েছে।
তিতির অবাক হয়ে মনে মনে বলে ‘ এমন ইন্টারভিউ দিয়েও চাকরি হয়ে গেলো। তাহলে কি বাকি সবাই আরও খারাপ ইন্টারভিউ দিয়েছে!!..
মেয়েটা তিতিরের সামনে কিছু পেপার রেখে বললো। এগুলো ভালো করে দেখে সাইন করুন।
তিতির সাইন করার পর ওকে ম্যানেজার একটা ক্যাবিন দেখিয়ে বললো,’ এটা আমাদের বসের ক্যাবিন। তুমি আজ থেকে বসের এসিস্ট্যান্ট। বস প্রচুর রাগী খুব সাবধানে কাজ করবে। ‘
তিতির আচ্ছা বলে ক্যাবিনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
ভেতর থেকে একটা গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে আসে ” আসুন”
তিতির ভয়ে ভয়ে ভেতরে যায়।
মুরতাসিম চেয়ার ঘুরিয়ে তিতিরের দিকে তাকায় শুভ্র সাদা রঙের শাড়ি, হাত খালি, গলা খালি, কানে ছোটো ঝুমকা, চুল এক সাইড করে বেনি করা চোখে চশমা। এই সাদা মাটা সাজে তিতিরকে চমৎকার লাগছে। মুরতাসিম কিছু সময়ের জন্য মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।
মুরতাসিম কে দেখেই তিতির বেচারি শকট হয়ে সেখানেই জ্ঞান হারায়।
মুরতাসিম অবাক হয়ে তিতিরের দিকে তাকিয়ে রেগে যায়। এই মেয়েকে আমি কি ভয় দেখেবো এই মেয়ে তো আমাকে দেখেই ভয়ে জ্ঞান হারিয়েছে। আমি কি দেখতে এতো টাই খারাপ যে আমাকে দেখেই জ্ঞান হারালো!!..? না না মুরতাসিম তুই তো খুব সুন্দর আর হেন্ডস্যাম সেই জন্যই নিজের চোখের সামনে এতো সুন্দর কিউট ছেলে দেখে জ্ঞান হারিয়েছে।
মুরতাসিম অনিচ্ছার সত্তেও তিতিরের কাছে গিয়ে মুখে এক গ্লাস পানি ডেলে দিলো।
চোখে মুখে পানি পড়ার কারনে তিতির পিটপিট করে চোখ খোলে তাকায়।
আশেপাশে তাকিয়ে উঠে বসে।
মুরতাসিম নিজের চেয়ারে বসে আছে আর তিতিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
তিতির নিজের চোখে মুখে পানি দেখে কিছুটা রেগে গেলো।
মুরতাসিমমের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমার মুখে এভাবে পানি ঢেলেছে কে..?’
মুরতাসিম কথাটা ইগনোর করে বলে উঠলো, ‘ আপনার শরীর হয়তো দুর্বল বাসায় গিয়ে রেস্ট নিন। আমি আমার কাজের দিকে খুবি সিরিয়াস সো কাল সময় মতো চলে আসবেন । যেখানে সেখানে অজ্ঞান হয়ে গেলে এর জন্য শাস্তি অবশ্য দেওয়া হবে।
তিতির আমতা আমতা করে বলে উঠলো, ‘ আমি এই চাকরি করবো না। ‘
মুরতাসিমঃ আপনি তো চুক্তি পেপারে সাইন করে দিয়েছেন। আগে ভেবে নেওয়া উচিত ছিলো। আমি বেশি কথা পছন্দ করি না।
তিতিরঃ আপনি বের করে দিলেই তো হবে..
মুরতাসিমঃ আমি কেনো বের করবো..?দুই বছর আগে আপনি চাকরি ছাড়তে পারবেন না।
তিতির বিরক্ত হয়ে ক্যাবিন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পেছনে পা দিতেই পিছল খেয়ে নিচে পড়ে যায়। মুরতাসিম ওর মুখে পানি ডেলে ছিলো সেই পানিতেই আবার পিছল খেলো।
বেচারির মানসম্মান আর আজ কিছুই রইলো না বসের সামনে। প্রথম দেখায় অজ্ঞান এখন আবার পড়ে যাওয়া। লজ্জায় কোনো দিকে না তাকিয়ে তিতির অফিস থেকে বেরিয়ে যায়।
তিতির বের হতেই মুরতাসিম হেঁসে উঠে । এই মেয়ের নিশ্চয় যেখানে সেখানে পড়ে যাওয়ার রোগ আছে৷ সেই একটা বিনোদন পাওয়া গেলো।
মুরতাসিম সিসিটিভি ফুটেজ আবার দেখলো৷
ইন্টারভিউ রুমের ফুটেজ দেখে মুরতাসিম আবার রহস্যময় হাসি দিলো। আমার গাড়ির কাঁচের দাম তো আমি নিয়েই ছাড়বো। সাথে আমার সাথে বেয়াদবি করার পরিণাম দেখবে কতোটা ভয়ংকর হয়.। এতো সহজে ছাড়ছি না। নিজ থেকে হাতের মুঠোয় চলে আসলে আমার আর কষ্ট করতে হলো না।
তিতি বাসায় আসতেই শার্লিন ওকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলো,’ চাকরি হয়েছে..? ‘
তিতির কি বলবে বুঝে পেলো না। সে তা এই চাকরি কখনো করবে না।
~ না হয়নি।
শার্লিনঃ মন খারাপ করিস না। কার এতো বড় সাহস তোকে চাকরি দেয়নি..!! শুধু একবার নাম বল। বেটার হাত পা বেঁধে উগান্ডায় পাঠিয়ে দিবো।
শার্লিনের কথা শুনে তিতির হেঁসে বললো, ‘ উল্টো ক্রাশ খেয়ে বাঁশ হয়ে পড়ে থাকবি। ‘
~ মানে..!?
~ তোর ক্রাশের অফিসে গিয়ে ছিলাম।
শার্লিন খুশিতে লাফিয়ে বললো,’ ফারাজ স্যারের ভাইয়ের অফিসে..?’
~ না।
~ তাহলে..?
~ ফারাজ স্যারের অফিসে।
শার্লিনঃ ফারাজ স্যার তো অফিসে বসে না। অফিসে থাকে মুরতাসিম চৌধুরী।
তিতিরের সব কেমন গোলমাল লাগলো।
অফিসে সবাই উনাকে মুরতাসিম বলে আর ভার্সিটিতে ফারাজ। কিন্তু শার্লিনের কথায় তো গোলমেলে যাচ্ছে সব।
তিতিরঃ উনার বড় ভাইয়ার ছবি আছে তোর কাছে..?
শার্লিন হেঁসে বলে উঠলো, ‘ আরে উনারা যমজ।ফারাজ স্যারের ভাই দেখতে ফারাজ স্যারের মতোই।’
তিতির এতোক্ষনে সবটা বুঝলো। ফারাজ হলো মুরতাসিমের ছোটো ভাই। একি রকম দেখতে হওয়াই ফারাজ কে মুরতাসিম ভেবে ছিলো৷
তিতিরের মাথা ধরে গেলো। প্রায় এক ঘন্টা গোসল করে বেরিয়ে আসলো।
রুম থেকে বের হয়ে নিচে গিয়ে দেখে শার্লিন কারো সাথে কথা বলছে আর ঝগড়া করছে।
তিতিরের আর বুঝতে বাকি নেই ছেলেটা কে।
~ কেমন আছো ফাহাদ ভাই..?
ফাহাদঃ হুম ভালো। তুই কেমন আছিস..? বস এখানে।
তিতির বসতেই ফাহাদ ওর প্লেটে খাবার তুলে দিলো।
শার্লিন গাল ফুলিয়ে বললো,’ দেখলি তিতির ভাই তোর প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছে আর আমি বাটিটা একটু এগিয়ে দিতে বলাতেই ঝগড়া শুরু করলো। ‘
ফাহাদ শার্লিনের মাথায় গাট্টি মেরে বলে উঠলো, ‘ কেনো তোর কি হাত নেই!!’
শার্লিন কিছু না বলে মুখ ভার করে অন্য দিকে ফিরে খাওয়ায় মন দিলো। জানে কথা বললে এখানে সম্মান হারাবে।
ফাহাদ সব সময় তিতিরের একটু বেশিই কেয়ার করে । ওর কথা ওর তিতিরপাখি এখনো ছোটো । সেই প্রথম দিনের মতো এখনো ভিতু, বোকা একটা মেয়ে। মাঝে মাঝে তিতির খুব রেগে যায় ফাহাদের কথা শুনলে। ফাহাদ এটা সেটা দিয়ে আবার রাগ ভাঙিয়ে নেয়।
বাসার সবাই জানে ফাহাদ তিতিরের বিষয় খুবি সিরিয়াস।
শার্লিন খুব ভালো করেই জানে ওর ভাইয়ার মনের অবস্থা । সে খুব খুশি তিতির ওর ভাবি হলে বাসার সবাই খুশি হবে৷
কিন্তু তিতির কি ওর এই পাগলা ভাইটাকে ভালোবাসবে!!…
___________
আজ মুরতাসিম অনেক রাত করে বাসায় আসলো৷
ফ্রেশ হয়ে ছাঁদে গেলো।
ফারাজ বসে বসে সিগারেট টান বসালো।
পেছনে কারো আশার শব্দ শুনেই সিগারেট দূরে ফেলে দিলো।
মুরতাসিম ফারাজের পাশে এসে দাঁড়ালো।
~ ভাই কখন আসলে..?
~ এক ঘন্টা হবে।
~ খেয়েছো..?
~ হুম।
~ কাল খুব রেগে ছিলে কেনো..?
মুরতাসিম আকাশের দিকে তাকালো অন্ধকার হয়তো বৃষ্টি হবে। ঠান্ডা শীতল বাতাস বইছে।
মুরতাসিম ফারাজের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ তুই আবার স্মোক করেছিস।’
ফারাজ মুখে হাত দিয়ে বললো,’ কই না তো ভাইয়া। ‘
মুরতাসিম হাসলো।
~ আজ তোমাকে খুশি মনে হচ্ছে..?
মুরতাসিম ফারাজের পাশে বসে কালকের সবটা কাহিনি বললো।তারপর আজকের কি হয়েছে তাও বললো।
~ বাহ্ ভাই সব প্রেম কাহিনির শুরুটা কিন্তু এভাবেই হয়।
~ ওই মেয়ে আর আমি ইম্পসিবল!!..
~ আমি তোমার কথা কখন বললাম।
মুরতাসিম ফারাজের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো।
~ সরি ভাই। তুমি ইচ্ছে করেই এই মেয়েকে জবটা দিয়েছো তাই না!!..? ওই মেয়েকে দেখার ইচ্ছেটা বাড়িয়ে দিলে।
~ খবরদার আমার অফিসে যাবি না।
~ দেখা যাক।
___
ফাহাদ এসে তিতিরের পাশে বসলো।
~ মন খারাপ কেনো..?
~ তোমাকে কিছু বলার ছিলো ভাইয়া।
~ হুম বল..
তিতির সবটা খুলে বললো ফাহাদ কে।
ফাহাদ তিতিরকে বুঝালো ওর মন যা বলে তাই জেনো করে। আর জবটা করার প্রয়োজন নেই। যেহেতু মুরতাসিম ওকে চিনেনা তাই মুরতাসিমের কাছ থেকে দূরে চলে আসাই ভালো।
_____
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লো তিতির।
নয়টার দিকে ওর মোবাইলে কোম্পানি থেকে কল আসলো সময় মতো চলে আসতে লেইট জেনো না হয়।
তিতির সব কিছু ইগনোর করে ভার্সিটিতে চলে গেলো। সে এই জব কিছুতেই করবে না। ওর এমন জবটার প্রতি অনীহা দেখে বস এমনিতেই জব থেকে বের করে দিবে।
সারাদিন খুব ভালোই গেলো। ফারাজ কে আজ দেখেনি। আজ ভার্সিটিতে আসেনি ফারাজ।
তিতির ভার্সিটি থেকে বের হতেই ওর সামনে দুইট লোক এসে দাঁড়ালো। ওর মুখে স্প্রে দিয়ে অজ্ঞান করে গাড়িতে তুলে নিলো।
চলবে….