#বিষাক্ত_প্রেম
#সূচনা_পর্ব
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
বাহিরে তুমুল বৃষ্টি । হাতে জ্বলন্ত সিগারেটের অর্ধাংশ নিয়ে ব্যালকনিতে বসে আছে মুরতাসিম।
বাহিরের এই ঠান্ডা বাতাস শরীর ছুঁতে পারলেও মন ছুঁতে পারছে না। বাহিরের এই তুমুল বৃষ্টি সব ঠান্ডা করে দিলেও এই সিগারেটের আগুনের মতো ঝলঝল করছে মুরতাসিমের ভেতর।
মুরতাসিম বাকি সিগারেটে টান বসিয়ে বাহিরে ফেলে দিলো। ধুঁয়া উপরের দিকে ছেড়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। চোখের সামনে ভেসে উঠলো কিছু এলোমেলো স্মৃতি। এক কান্নাছন্ন মেয়ের মুখ ” আমাকে ছেড়ে যেও না মুরতাসিম আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না!! তুমি আমাকে এখানে নিজ হাতে মেরে ফেলো মুরতাসিম না হলে যে আমি জীবিত থেকেও মৃত হয়ে যাবো।আমি তোমার হাতে মরতে রাজি তাও তোমাকে অন্য কারো হতে দেখতে পারবো না। আমি তোমার কাছে তোমাকে ভিক্ষা চাচ্ছি মুরতাসিম। তুমি অন্য কারো হলে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো মুরতাসিম….. ”
তিতির বলে চিৎকার করে উঠলো মুরতাসিম।
আশেপাশে কাউকে খুঁজলো, না নেই! কেউ নেই। সব স্বপ্ন ছিলো। আবারও সেই স্বপ্ন। কোথায় তুমি তিতির! কোথায় হারিয়ে গেলে..?তুমি আমাকে একা রেখে যেতে পারো না!! এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলো না.. তুমি তোমার কথা রাখনি তিতির রাখনি!! বলেই পাগলামো শুরু করলো। হাতের কাছে যা পাচ্ছে এদিক সেদিক ছুড়ে মারছে।
পাগলের মতো আচরণ করা শুরু করলো মুরতাসিম। রুমে এসে সব কিছু ভাঙচুর করতে লাগলো।
পাশের রুম থেকে দৌড়ে আসলো মুরতাসিমের ছোটো ভাই । মুরতাসিম কে ঝাপটে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। জোর করে একটা ইঞ্জেকশন পুশ করলো। আসতে আসতে নিস্তেজ হয়ে গেলো মুরতাসিম।
পেছন থেকে কান্নার শব্দ শুনে তাকালো ফারাজ।
~ আমার ছেলেটা কি আগের মতো হবে না..!! বলেই আঁচল মুখে চেপে কেঁদে উঠলেন হালিমা বেগম।
ফারাজঃ শান্ত হোন আম্মু ভাই সুস্থ হয়ে উঠবে। আব্বুকে বলুন ভাইয়ার জন্য ইউরোপ যাওয়ার ব্যাবস্থা করতে।
ফারাজ মুরতাসিম এর দিকে তাকালো বিরবির করে কিছু বলছে।
ফারাজ মুরতাসিমের কাছে যেতেই শুনলো ” তুমি মরতে পারো না তিতির!!”
____________________________
অতীত…,
________
ভার্সিটিতে প্রথম দিনেই নিজের স্বামীকে স্যার হিসেবে দেখে থমকে যায় তিতির।
থরথর করে কেঁপে ওঠে হৃদয়। শরীর হালকা কাঁপতে থাকে। এটা কি তার স্বপ্ন নাকি সত্যি..!!? এতো গুলো বছর পর সেই মুখটি নিজের সামনে দেখে অপলক চেয়ে থাকে মানুষটির দিকে তিতির৷ চোখের কোনে জল জমা হয়। হাত দিয়ে নিজের মুখ আড়াল করে নেয়। পরক্ষণেই মনে পড়ে সে কেনো নিজেকে আড়াল করছে তার স্বামী তো তাকে চিনে না। এক পলকের জন্য ফিরে তাকায়নি।
পাশ থেকে শার্লিন তিতির হাতে আলতো করে ছুঁয়ে বললো,’ কি হয়েছে তিতির.? তুই ঠিক আছিস তো..? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো..!!?
তিতির শার্লিনের দিকে তাকিয়ে আবার সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি হেঁসে নিজের পরিচয় দেওয়া লোকটার দিকে তাকালো।
শার্লিন তিতিরের তাকানো দেখে হেসে বললো, ‘ এটা হলো আমাদের ভার্সিটির ফারাজ চৌধুরী সব থেকে ভালো আর শান্ত সৃষ্ট স্যার।’
পুরোনো সব তিক্ত স্মৃতি মনে পড়তেই ঘৃণা ধরে গেলো এই মানুষটির প্রতি। চোখ সরিয়ে নিলো। এই একটা মানুষের জন্য ওর জীবন জাহান্নামে পরিনত হয়ে ছিলো। মানুষটি কি তা জানে..? কখনো কি খুঁজ নিয়ে ছিলো!!..??
বিয়ের দিন মুগ্ধ হয়ে দেখেছিলো এই লোকটিকে তাই তো আজও চিনতে একদম ভুল হয়নি।
শার্লিন আবার বলে উঠলো, ‘ দোস্ত আগে এই স্যার আমার ক্রাশ ছিলো কিন্তু যখন থেকে উনার ভাইকে দেখেছি তারপর থেকে আমার আর কাউকে ভালো লাগে না। যদিও স্যার আর স্যারের ভাই দেখতে একি রকম। কিন্তু তাদের চলাফেরা সব আলাদা। স্যার শান্ত সৃষ্ট, সবার সাথে মিশে ভালো ব্যাবহার করে। কিন্তু উনার বড় ভাই একদম উল্টো গম্ভীর লোক, নিজের পরিবারের লোকের সাথেও প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। কিন্তু হেব্বি হেন্ডস্যাম।
তিতিরঃ তুই তো যাকে দেখিস তার উপর ক্রাশ খেয়ে যাস।
শার্লিন গাল ফুলিয়ে বলে উঠলো, ‘ একদম না তিতির আমি শুধু এই দুই ভাইয়ের উপর ক্রাশ খেয়েছি।
তিতিরঃ কলেজে কতো গুলো স্যারের উপর ক্রাশ খেয়েছিস মনে আছে..? জুনিয়র ছেলেদের ও ছাড়িসনি তুই!!
শার্লিন মুখ ভার করে অন্য দিকে তাকালো।
পুরো ক্লাস তিতির সামনের দিকে এক বারও তাকায়নি।
ক্লাস থেকে বের হতেই ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো সাইফ।
তিনজন গিয়ে বসলো ভার্সিটির মাঠের পাশে বড় আম গাছের নিচে।
সাইফ শার্লিনের মাঠায় গাট্টা মেরে বললো,’ তোদের ক্লাসে যে নতুন মেয়েটা এসেছে ওটার নাম কি..?’
শার্লিন ভ্রু কুঁচকে রেগে বললো,’ ফ্লার্ট করার জন্য এখন এই মেয়ের পেছনে লেগেছিস নাকি..?’
সাইফঃ আমাকে কি তোর ফ্লার্টবাজ মনে হয়..? নিজের মতো আমাকে ভাবিস নাকি!!
এই নিয়ে লেগে গেলো দুই জনের মধ্যে ঝগড়া।
তিতির বিরক্ত হয়ে বললো,’ তোরা চুপ করবি নাকি আমি চলে যাবো!!
দুইজন চুপ হয়ে গেলো।
শার্লিনঃ আমি কি ঝগড়া করতে পারি নাকি এই সাইফের বাচ্চা সব সময় ঝগড়া শুরু করে।
সাইফ শার্লিনের চুলে ধরে টান দিয়ে বললো,’ আমি শুরু করেছি নাকি তুই..!?
শার্লিনঃ দেখলি তিতির কতো বড় বজ্জাত সাইফফা!!
সাইফঃ একদম বজ্জাত বললে দাঁত ভেঙে দিবো!!
তিতিরঃ একদম চুপ! তোরা কি ছোটো বাচ্চা!! আর একটা কথা বললে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো। বাসায় চল কাল আমার একটা ইন্টারভিউ আছে।
সাইফ ও ঘড়ির টাইম দেখে বললো,’ আমারও সময় হয়ে গেছে চল।’
( তিতির, শার্লিন আর সাইফ। তিনজন হলো বেস্ট ফ্রেন্ড। সাইফের আব্বু নেই আম্মুকে নিয়েই তার পৃথিবী। সাইফ টিউশন করে নিজের পড়াশোনা আর পার্টটাইম জব করে সংসার চালায়। তার বিশ্বাস একদিন সে পড়াশোনা করে অনেক বড় হবে। আম্মুকে নিয়ে সুখে থাকবে। কষ্ট না করলে জীবনে সফলতা পাওয়া যায় না…)
_______________________
চৌধুরী বাড়ি,
নিজের রুম থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে বের হতেই পেছন থেকে কেউ বললো,’ আর কতো দিন এভাবে থাকবে.? এবার কি তোমার মনে হয় না বিয়ে করা প্রয়োজন!!..তোমার ছোটো ভাই বিয়ে করতে যাচ্ছে আর তুমি!!
মুরতাসিম হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আম্মু আপনার কি আর কিছু বলার আছে!!…? আমার সময় হয়ে গেছে যেতে হবে। আজ একটা ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং আছে।
হালিমা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন। বয়স তো কম হলো না। বিয়ের কথা বললেই যে কোনো বাহানা দিয়ে পালাই। সারাক্ষণ কাজ আর কাজ। তিনি কিছু না বলে চুপ করে দাড়িয়ে রইলেন।
মুরতাসিম চোখে চশমা পড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।
( মুরতাসিম চৌধুরী এই বাড়ির বড় ছেলে। একজন সফল বিজনেসম্যান। কাজের বেপারে সে খুবি সিরিয়াস। দেখতেও মাশাল্লাহ। বাকিটা গল্পে জানা যাবে)
মুরতাসিম গাড়িতে গিয়ে বসতেই ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিলো।
মোবাইল বের করে কাউকে কল দিলো।
ওপাশের লোকটি কল রিসিভ করতেই মুরতাসিম বললো,’ মেয়েটির কোনো খুঁজ পেয়েছো..?’
~ না বস..
মুরতাসিমঃ জলদি খুঁজ নাও কোথায় আছে.. বলেই কল কেটে দিলো।
তিন বছর আগের এই একটা ভুল আজও ওকে তারা করে বেড়াচ্ছে। কোথায় পাবে সে তার না দেখা বউ কে..? সে সংসার করবে না৷ তবে মেয়েটিকে একবার দেখতে চায়! শুনতে চায় কেনো সে পালিয়ে গেছে! তারপর মুক্তি দিয়ে দিবে।
রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে তিতির। তখনি একটা গাড়ি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার কাঁদা পানি ছিটকে এসে ওর শরীরে পরে। সাথে সাথে ওর সাদা জামা কাঁদার পানির ছিটায় নষ্ট হয়ে যায়।
সে তাকিয়ে দেখে গাড়িটা চলে যাচ্ছে। রেগে সে গাড়ির দিকে ইট ছুড়ে মারে। ইট গাড়ির কাঁচে গিয়ে পড়ে, সাথে সাথে কাঁচ ভেঙ্গে যায়।
চলবে…..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।