#বিষাক্তফুলের আসক্তি
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্ব-১৭+১৮
শীতের ঝরা পাতার মতো সবার জীবন থেকে ঝরে গেছে অনেকগুলো মাস। চোখের পলক ফেলার মতো যেনো দিনগুলো কেটেছে। লন্ডনের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে বসবাস করছে তিতির। নয় মাসের ভরা পেট নিয়ে চলাফেরা কষ্ট হয়ে গেছে তিতিরের। প্রেগনেন্সির গত কয়েকটা মাস তিতির নিজের শরীরের সাথে যেনো নিজে যুদ্ধ করেছে। একেকটা মাস পার হয়েছে আর একেকটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। তিতিরের প্রেগনেন্সি কমপ্লিকেশনের কথা আহান জানতে পারে প্রেগনেন্সির পাঁচ মাসে। তখন এবরশন করাও অনেক বেশি রিস্ক। সেদিন আহান তিতিরের হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলো তুই কোনো সবটা আমার থেকে লুকিয়ে গেলি তুতুল। সেদিন কোনো উত্তর দিতে পারেনি তিতির। বলতে পারেনি তাজকে সে কতটা ভালোবাসে। সে পারেনি তার অংশ নিজের থেকে সরিয়ে দিতে। অদৃশ্য এক মায়ায় জড়িয়ে গেছে ভেতরে থাকা ছোট প্রাণটারও। গত কয়েকটা মাস আহান যেনো তিতিরকে নিজের হাতের তালুতে আগলে রেখেছে। আহানের আজ একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে, তাই বাধ্য হয়ে ভার্সিটিতে গেছে। সকাল থেকে পেটে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করছে তবু আহানকে বলেনি, তাহলে সব ফেলে বাসায় বসে থাকতো। এমনি নিজেকে আহানের বোঝা মনে হয় তিতিরের কাছে। আবার তার জন্য আহানের পড়াশোনার ক্ষতি হোক সেটা চায় না তিতির। হাতের কলম ডাইরির ভাজে রেখে দিলো। গত আট মাসে তিতির দুটো ডায়েরি লিখেছে, একটা তার ছেলে ধ্রুবর জন্য আর আরেকটা তাজের জন্য। হ্যাঁ তিতিরের ছেলে হবে সেটাই জানিয়েছে ডক্টর। তিতিরের মন বলছে তার সময় ফুরিয়ে এসেছে এই পৃথিবীতে। তাই তাজকে না বলা কিছু কথা লিখে রেখেছে যদি কোনোদিন তাজ তার খোঁজে আসে তাহলে যেনো ডায়েরিটা পায় তাই লিখেছে। আর ছেলের সাথে তার কথা হবে না তাই ছেলের জন্য সব লিখে রেখেছে।
তিতির দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাথা সহ্য করে পাখিকে ডাকলো কিন্তু পাখির সাড়াশব্দ নেই, তিতির এবার ন্যান্সিকে ডাকলো। আহান তিতির আর পাখির দেখাশোনার জন্য ন্যান্সিকেই রেখেছে। ন্যান্সিও নিজের মেয়ের মতো ভালোবেসে আগলে রেখেছে তিতিরপাখিকে। তিতিরের একটু ওয়াশরুমে যাওয়া প্রয়োজন এখন কাউকে পাচ্ছে না। দিনদিন শরীরটা বয়ে চলাও কষ্ট হয়ে যাচ্ছে তিতিরের। নিজের কাছে নিজের শরীরের ওজন মণ খানেক মনে হয়। তিতির দূর্বল শরীর নিয়ে বেড আর দেয়াল ধরে ধরে ওয়াশরুমে গেলো। ওয়াশরুমে পা রেখে মুচকি হাসলো। যাতে কোনো এক্সিডেন্ট না হয়, তাই ওয়াশরুমে ফ্লোর মেট বিছিয়ে দিয়েছে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আতঙ্কিত গলায় ন্যান্সিকে ডাকলো তিতির। র*ক্তপাত হচ্ছে তার, যেটা মোটেই ভালো লক্ষণ নয়।
তিতিরের ডাক শুনে দৌড়ে এলো ন্যান্সি, কী হয়েছে মাম ?
তিতির দূর্বল গলায় বললে, মাম র*ক্তপাত হচ্ছে আমার।
ভয়ে চোখমুখ কালো হয়ে গেলো ন্যান্সির। তিতিরের ডাক শুনে পাখিও দৌড়ে এসেছে তার কাছে।
কী হয়েছে আপুনি ?
ন্যান্সি বললো, আমি এখনই আহানকে কল দিচ্ছি।
তিতির ন্যান্সিকে আটকানোর জন্য এক কদম যেতেই চারপাশ অন্ধকার হয়ে এলো। ধপ করে পাখির চোখের সামনে ফ্লোরে পড়ে গেলো, অবুঝ পাখি ধরে ফেলার আগেই।
পাখি চিৎকার করে বললো, আপুনি ?
পা থেমে গেলো ন্যান্সির। পেছনে ফিরে দেখলো ফ্লোরে পড়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছে তিতির। ন্যান্সি দৌড়ে তিতিরের কাছে এলো।
তিতির ঠোঁট কামড়ে ধীর গলায় বললে, খুব কষ্ট হচ্ছে মাম আমার সময় বুঝি ফুরিয়ে এলো।
ন্যান্সি নিজের বুকে চেপে ধরলো তিতিরকে। কয়েক মাসে নিজের মেয়ের মতো ভালোবেসে ফেলেছে।
তোর কিছু হবে না মাম। একটু সহ্য কর আমি আহানকে কল দিচ্ছি।
ন্যান্সি খেয়াল করলো ইতিমধ্যে ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে র*ক্তে। কী করবে দিশাহারা হয়ে গেছে ন্যান্সি। পাশে পাখি কিছু না বুঝে তার আপুনিকে কাঁদতে দেখে চিৎকার করে কাঁদছে। এমন সময় কলিংবেলটা বেজে উঠলো। পাখি কী বুঝে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।
দরজার ওপাশে আহান দাঁড়িয়ে আছে পাখি কাঁদতে কাঁদত বললো, আহান আপুনি কাঁদে।
কান্নার ফলে পাখির কথা বুঝা যাচ্ছে না। আহান পাখিকে কাঁদতে দেখে ভয় পেয়ে গেছে। তিতিরের নাম শুনেই দৌড়ে ভেতরে ঢুকলো।
তিতিরের দরজার সামনে এসে চিৎকার দিয়ে বললো, তুতুল।
ন্যান্সি কাঁদতে কাঁদতে বললো, আহান কিছু করো মাই সান।
আহান কিছু না ভেবে দ্রুত কোলে তুলে নিলো তিতিরকে। তিতিরের চোখ বুজে আসছে। এখন আর ব্যাথা অনুভব হচ্ছে না, শরীরটা কেমন তুলোর হালকা লাগছে তিতিরের। তিতির ঝাপসা চোখে আহানের জায়গায় যেনো তাজকে দেখলো।
বিড়বিড় করে বললো, আপনি এসেছেন ? এতো দেরি কেনো করলেন, আমার যে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।
তিতিরের বলা কোনো কথা কারো কানে গেলো না। আহান তিতিরকে নিয়ে গাড়িতে শুইয়ে দিলো। ন্যান্সি তিতিরের মাথা নিজের কোলে নিয়ে বসেছে। পাখি যেনো আজ বুঝদার হয়ে গেছে, নিজে নিজে সামনের সীটে গিয়ে বসলো। শীত কাল চলছে লন্ডনে, চারদিকে সাদা বরফে ঢাকা। বাসা থেকে মাত্র পাঁচমিনিটের রাস্তা হসপিটাল কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও গাড়ি স্টার্ট করতে পারলো না আহান। প্রকৃতি বোধহয় আজ তিতিরের সাথ দিতে চাইছে না। গাড়িতে সময় নষ্ট না করে আহান নেমে তিতিরকে কোলে তুলে ছুটলো হসপিটালের দিকে। তার পেছনে ন্যান্সি আর পাখি। বরফের নিচে লুকিয়েছে রাস্তা, আহান পনেরো মিনিটে পৌঁছাল হসপিটালে। এক মিনিটের জন্যেও থামেনি তিতিরের র*ক্তপাত। দ্রুত অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হলো তিতিরকে।
ডাক্তার অপারেশন থিয়েটারে ঢুকার আগে আহান তার সামনে দাঁড়িয়ে হাত জোর করে করুন গলায় বললো, স্যার প্লিজ বাঁচিয়ে দিন আমার তুতুলকে।
ডক্টর আহানের ভার্সিটির স্যার সে হতাশ গলায় বললো, I will try to my best but you know the condition of the patient.
ডক্টর ভেতরে চলে গেলে হাঁটু গেড়ে বসে দু’হাতে মুখ লুকিয়ে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে থাকে আহান। সে কী হারাতে চলেছে তার তুতুলকে ?
২০.
হসপিটালের করিডোরে বসে আছে তাজ। প্রায় আট মাস পর দেশের মাটিতে পা রেখেছে। সে ঘটনার পরদিন দেশ ছাড়ে। যাওয়ার আগে প্রেস মিডিয়া ডেকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে অফিশিয়ালি বিদায় নিয়ে যায় আর যাই হোক কারো সেক্রিফাইসের ক্যারিয়ার বয়ে চলা সম্ভব নয় তার পক্ষে। বাবা-মাও ভুল বুঝেছিলো তাকে। কেনো থাকবে সে এই দেশে। কিন্তু দু’দিন আগে হার্ট অ্যাটাক করেছে ইকবাল খান। তাজ প্রথমে মনে করেছিলো তাকে দেশে ফেরানোর জন্য মিথ্যা বলেছে কারণ এর আগেও এমন করেছিলো কিন্তু এবার খোঁজ নিয়ে জানতে পারে সবটা সত্যি। তাই পারেনি দূরে থাকতে, ছুটে এসেছে বাবা-মায়ের কাছে। এখনও আইসিইউতে রাখা হয়েছে ইকবালকে। ইরিনাও অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাই তাকেও ভর্তি করা হয়েছে।
কেমন আছো ?
পরিচিত কণ্ঠে মাথা তুলে তাকালো তাজ।
মৌ দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। আট মাসে পরিবর্তন হয়েছে মৌয়ের। আগের তুলনায় শুকিয়ে গেছে অনেকটা, তবে দেখতে সুন্দর লাগছে।
তাজ কিছু বলার আগেই মৌ বললো, ভয় নেই আজ আর ভালোবাসার দাবি নিয়ে তোমার সামনে আসিনি। একজন ডক্টর হিসাবেই এসেছি।
তাজ আর কিছু বললো না। মৌ চুপচাপ তাজের পাশে বসলো।
আঙ্কেলের হার্টের অবস্থা ভালো না। এটা উনার দ্বিতীয় এ্যাটাক সেটা হয়তো তোমারও জানা আছে। আবার কোনো মানসিক চাপ বা উত্তেজনা সহ্য করার মতো শক্তি উনার নেই। চেষ্টা করো উনাকে হাসিখুশি রাখতে। উনাদের ছেড়ে আর দূরে যেও না, আমি তো মেনে নিয়েছি আমার নিয়তি।
তাজ তাকালো মৌয়ের দিকে, মৌ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো, তাজ রায়হানকে আমি আগে অনেকবার তোমার পথ থেকে সরে যেতে বললেও গান রেকর্ডিং ছাড়তে বলিনি। সেটা নিজের ইচ্ছেতে ছেড়েছে রায়হান। তবু তোমার শাস্তি মাথা পেতে নিয়েছি তবে কেনো তুমি তোমার বাবা-মা ফেলে দূরে গিয়ে পরে আছো।
তাজ সোজা হয়ে বসলো, তোর জন্য বাবা-মাকে ছেড়ে যায়নি আমি। তারাও নিজের সন্তানকে বিশ্বাস করেনি তার শাস্তি দিয়েছি।
আঙ্কেলের অবস্থা এখন মোটামুটি ভালো। তাকে কেবিনে শিফট করা হবে একটু পর। তোমার সাথে দেখা করতে চাইছে।
তাজ কিছু বললো না। মৌ কিছুটা সময় তাজের পাশে চুপচাপ বসে থেকে উঠে চলে গেলো। একটু পরই ইকবালকে কেবিনে দেওয়া হলে তাজ সেখানে উপস্থিত হলো। চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলো ইকবাল। তাজ বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই ইকবাল তাকালো ছেলের দিকে।
অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিলো আবার, এসেছো কেনো এখন ? একেবারে মরে গেলেই আসতে, দাফন কাফন করতে।
তাজ অসহায় গলায় বললো, বাবা এভাবে বলো না প্লিজ আর কোথাও যাবো না তোমাদের ছেড়ে৷ আজ থেকে যা বলবে তাই করবো তবু রাগ করে থেকো না, তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও।
ইকবাল আবার তাকালো তাজের দিকে, তুমি আমার একমাত্র সন্তান তাজ। খান বংশের একমাত্র উত্তরাধিকারী। সব বাবা-মা চায় তার সন্তান ভালো থাকুক আর আমরাও সেটা চাই। এটাই কী আমাদের অপরাধ ?
না বাবা কোনো অপরাধ নেই তোমাদের।
ইকবাল ছেলের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো, আমার একটা কথা রাখবি বাবা কথা দে।
ইকবাল হাত বাড়িয়ে দিলে তাজ হাতটা ধরে বললো, বললাম তো বাবা তোমাদের সব কথা শুনবো।
ইকবাল কোনো ভুমিকা ছাড়াই বললো, মৌকে বিয়েটা করে নে বাবা। মেয়েটা সত্যি ভালোবাসে তোকে। আমি আমার ছেলেকে সুখী দেখতে চাই।
ইকবালের হাত ছেড়ে দিলো তাজ। উত্তেজিত হয়ে গেলো ইকবাল, ক্রমশ হার্টবিট বাড়ছে তার। নার্স ডেকে আনলো মৌকে।
মৌ এসে ব্যস্ত গলায় বললো, তোমাকে বললাম আঙ্কেলকে উত্তেজিত করো না৷ এবার এ্যাটাক হলে কিছু হাতে থাকবে না।
পাথরের মতো বসে আছে তাজ। গত আট মাস ধরে পাগলের মতো খুঁজেছে তিতিরকে। কিন্তু মেয়েটা যেনো কর্পূরের মতো উবে গেছে রাতারাতি। মেয়েটার কাছে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত সে পারবে না নিজের জীবন এগিয়ে নিতে। তাজ বের হয়ে গেলো কেবিন থেকে। এমনিতে আজ মনটা বড্ড বেশি অস্থির হয়ে আছে তাজের, হয়তো বাবা-মা অসুস্থ তাই।
তাজ বাইরে গিয়ে বসতেই মৌ বের হয়ে বললো, আঙ্কেল তোমাকে ডাকছে। আমি বারবার বলছি তাজ, উনার উত্তেজিত হওয়া ঠিক নয়।
তাজ বাধ্য হয়ে ভেতরে যেতেই ইকবাল ঘনঘন শ্বাস টেনে বললো, তাজ তুমি আমার হাত ধরে কথা দিয়েছো।
তাজ অসহায় চোখে তাকালো বাবার দিকে। কী করবে এবার সে ?
২১.
অপারেশন থিয়েটার থেকে ডক্টর বের হতেই আহান দৌড়ে সমানে গেলো। ন্যান্সি আর পাখিও হসপিটালে পৌঁছে গেছে। কাঁদতে কাঁদতে পাখির ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছে।
আহান বললো, স্যার আমার তুতুল ?
ডক্টর মাথা নিচু করে বললো, Sorry Ahan. I tried my best. রোগীর হাতে বেশি সময় নেই তোমার সাথে কথা বলতে চাইছে।
আহান মুহুর্তে পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেলো যেনো। রোবটের মতো এগিয়ে গেলো অপারেশন থিয়েটারে দিকে। অক্সিজেন মাস্ক মুখে লম্বা লম্বা শ্বাস নিচ্ছে তিতির। আহানকে দেখে কাঁপা হাত উঁচু করলো বেড থেকে। আহান এগিয়ে গিয়ে তিতিরের হাতটা নিজের মুঠোয় নিলো।
অক্সিজেন মাস্ক খুলে তিতির কাঁপা গলায় ভেঙে ভেঙে বললো, তুই বলেছিলি জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তোকে আমার পাশে পাবো। তুই তোর কথা রেখেছিস। তাই আজ তোর থেকে আরো একটা কথা চাইছি আহু। আমাকে ছুঁয়ে কথা দে আমার বোনু আর আমার ধ্রুবকে তুই আগলে রাখবি।
আহান পাশে তাকিয়ে দেখলো নার্সের কোলে সাদা কাপড়ে মোড়ানো ফুটফুটে একটা বাচ্চা কান্না করছে। নার্স টলমল চোখ তাকিয়ে আছে তিতিরের দিকে।
আহান কান্না গিলে বললো, কথা দিলাম তোকে। একটা ফুলের টোকাও পড়বে না ওদের গায়ে।
হাজার যন্ত্রণায় তিতিরের ঠোঁটের কোণে ফোটে উঠলো তৃপ্তির হাসি। প্রত্যেকটা কথা বলতে তার তীব্র যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে, তবু বলছে নাহলে আর যে বলা হবে না। তিতির নার্সকে ইশারা করলো বাচ্চাটাকে তার কোলে দিতে। নার্স বাচ্চাটাকে তিতিরের বুকের উপর শুইয়ে দিলো।
তিতির চুমু খেলো ছেলের মাথায়, মা থাকবে না সোনা তুমি মিষ্টি বাচ্চা হয়ে থেকো।
তিতির আহানের দিকে তাকিয়ে বললো, আমার ছেলের জন্য একটা উপহার রেখেছি আর একটা তার বাবার জন্য। সেগুলো ঠিক সময়ে তাদের দিয়ে দিস।
আহান চোখ মুছে বললো, তোর কষ্ট হচ্ছে প্লিজ কথা বলিস না তুতুল।
আহান অক্সিজেন মাস্ক পড়ানোর জন্য হাতে নিতেই তিতির লম্বা শ্বাস টেনে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে গেলো। ডক্টর পাশেই ছিলো সে তিতিরের পালস চেক করে জানালো পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছে তিতির। আহান পিছিয়ে গেলো দু’পা। তিতিরের বুকে লেপ্টে থাকা ছোট্ট ধ্রুব গলা ছেড়ে কাঁদছে। কী জানি সেও হয়তো বুঝে গেছে, জীবনের মূল্যবান সম্পদ হারিয়েছে সে। নার্স তিতিরের বুক থেকে বাচ্চাটা সরিয়ে নিতে গেলে আহান বাঁধা দিলো।
কাঁপা গলায় বললো, থাকতে দিন না আর কিছুটা সময়। এটাই তো ওর মায়ের প্রথম এবং শেষ স্পর্শ আর কোনদিন চাইলেও কোথাও খোঁজে পাবে না এই স্পর্শ।
আহানের চোখে বাঁধ ভেঙেছে। শব্দ হচ্ছে না কেবল গড়িয়ে পড়ছে নোনাজল। বুকের ভেতরটা জ্বলে পুড়ে ছাই হচ্ছে কিন্তু বুঝাতে পারছে না কাউকে। এ কেমন দম বন্ধ করা কষ্ট। নাহ্ আর সহ্য করা গেলো না। তিতিরের বুক থেকে ধ্রুবকে তুলে নিয়ে বের হয়ে গেলো আহান। তার যে এখন অনেক দ্বায়িত্ব, তাকে ভেঙে পড়লে চলবে নাকি ?
ইকবাল তাকিয়ে আছে তাজের দিকে তার উত্তরের অপেক্ষায়।
তাজের চোখমুখ শক্ত হয়ে গেলো মুহুর্তে, বাবা আগে তুমি ঠিক করে নাও। ছেলেকে জীবিত দেখতে চাও নাকি মৃত। এক অপরাধবোধের বোঝা মাথায় নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছি আমি। অনুশোচনার আগুনে পুড়ে ছাই হচ্ছি ক্ষণে ক্ষণে। আরো একটা অন্যায় করতে বললে দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো। আর এটাও তুমি ভুলে যাচ্ছো তিতির আইনত এখনো আমার স্ত্রী।
মৌ কিছু না বুঝে বাবা আর ছেলের কথা শুনে যাচ্ছে তখনই দরজায় দাঁড়িয়ে কেউ বললো, মৌ।
মৌ সহ সবাই ফিরে তাকালো দরজার দিকে। এক সুদর্শন যুবক দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে মৌয়ের কপালে বিরক্তির ছাপ দেখা দিলো।
তাজ বললো, আপনি কে ?
যুবক ভেতরে ঢুকে তাজের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে মুচকি হেসে বললো, আমি ডক্টর সুফিয়ান আহমেদ শান মৌয়ের হাসবেন্ড।
তাজ প্রথমে শকড হলেও পরে মুচকি হেসে হাত মিলিয়ে বললো, আমি,,,।
তাজকে কথা শেষ করতে দিলো না শান, আপনাকে দুই বাংলার কে না চেনে ? এতো ফেমাস অ্যাক্টর এন্ড সিঙ্গার।
তাজ মুচকি হেসে বললো, প্রাক্তন শব্দটা এড করতে ভুলে গেছেন মিস্টার শান।
ভুলিনি, তবে ইচ্ছে করেই এড করিনি। আপনাকে প্রাক্তন হিসাবে দেখতে চাইনি তাই।
তাজ সেদিকে কথা না বাড়িয়ে বললো, নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা। কী রে মৌ, বিয়ে করলি জানালি না ?
মৌ মাথা নিচু করে বললো, এক সপ্তাহ আগে আকদ হয়েছে। এখনো তেমন কেউ জানে না, পরে অনুষ্ঠান হলে সবাইকে জানাবে বাবা।
তাজ ঠোঁটের কোণে হাসিটা বজায় রেখে বললো, শুভকামনা।
মৌ চোখ তুলে তাকালে সবাই দেখতে পেত তার চোখের পানি। বাবা-মা বিষের বোতল হাতে নিয়ে বিয়ে করতে বাধ্য করেছে তাকে। মৌও তাদের একমাত্র সন্তান। কাল মাথার উপর থেকে বাবা-মার ছায়া সরে গেলে একা মেয়ে কীভাবে টিকে থাকবে এই পৃথিবীতে। মৌ কিছু না বলে বের হয়ে গেলো কেবিন থেকে।
শান তাজের দিকে তাকিয়ে বললো, আসছি বস, ভালো থাকবেন।
মৌ আর শান চলে যেতেই তাজ নিজের বাবার দিকে তাকালো। স্তব্ধ হয়ে বসে আছে ইকবাল। সে ঘুনাক্ষরে জানতেন না মৌয়ের বিয়ের ব্যাপারে।
ইকবাল কিছু বলবে তার আগেই তাজ বললো, ওয়েট আমার কথা আগে শুনে নাও। আজ তোমাকে একটা কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছি বাবা। আজকের পর যদি কখনো তুমি আমার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলো তাহলে আর কখনো খুঁজে পাবে না আমাকে। আমাকে যদি আমার মতো থাকতে দাও তাহলে তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো না। তোমার প্রবলেম ছিলো মৌ আমাকে ভালোবেসে নিজের জীবন নষ্ট করছে, এবার তো মৌ নিজের জীবন গুছিয়ে নিয়েছে। আমি আগেও মৌকে বিয়ে করতে চাইনি কারণ বন্ধু ছাড়া অন্যকিছু ভাবিনি ওকে। শুধু তোমাদের কথায় রাজি হয়েছিলাম কিন্তু আমি আর মৌ একে অপরের জন্য নই তাই আলাদা হওয়ারই ছিলো। এখন আমি শুধু তিতিরকে খুঁজে পেতে চাই আর তার কাছে ক্ষমা চাইবো। সে যদি আমার জীবনে ফিরতে চায় ফিরিয়ে নিবো আর যদি মুক্তি চায় মুক্তি দিবো। সে আমার জীবন যতটা নষ্ট করেছে, যাওয়ার আগে সেটা ঠিক করে দিয়েছে। কিন্তু আমি তার জীবন যতটা নষ্ট করেছি, আমি ঠিক করতে পারবো না। তাই তার কাছে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত আমার একটা মুহুর্ত শান্তিতে কাটবে না।
তাজ চলে গেলো কেবিন থেকে স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো ইকবাল। সে চেনে নিজের ছেলেকে। একবার যেটা না বলে দিয়েছে সেটা তাকে দিয়ে আর করানো সম্ভব নয়।
ইকবাল বিড়বিড় করে বললো, তিতির মেয়েটা আমার ছেলের জীবনে একটা বিষাক্তফুল। যে চলে গিয়েও তার বিষের রেশ রেখে গেছে।
তাজ প্রচন্ড স্প্রিডে ড্রাইভ করছে। মনের অস্থিরতা কমানোর জন্য এমন করছে। বুকের ভেতরটা কেমন অস্থির অস্থির লাগছে তার। হঠাৎ তাজের দৃষ্টি ঝাপসা হলে সে চোখে হাত দিলো। তার চোখে নোনাজল কিন্তু কেনো ? তাজ অস্থির হয়ে এই নোনাজলের কারণ খুঁজতে লাগলো কিন্তু পেলো না। বারবার ফোন বেজে বিরক্ত করছে তাই গাড়ি এক সাইডে নিয়ে ফোন রিসিভ করলো।
স্যার রায়হান চৌধুরী আপনার সাথে দেখা করতে চাইছেন।
২২.
আহান বাইরে আসতেই দেখতে পেলো বিধস্ত দুটো মানুষ বসে আছে চেয়ারে৷ কী উত্তর দিবে আহান তাদের ?
পাখি দৌড়ে এসে আহানের সামনে দাঁড়ালো, আপুনি কোথায় আহান ? আমি আপুনির কাছে যাবো।
আহান অসহায় চোখে তাকালো পাখির দিকে, তোমার আপুনি তো ঘুমিয়ে পড়েছে পুতুল। তার ঘুম আর কখনো ভাঙবে না।
পাখি কিছু না বলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আহানের দিকে। আহান কোলে থাকা ছোট্ট ধ্রুবকে পাখি দিকে এগিয়ে দিলো।
পুতুল তোমার আপুনি তোমাকে একটা জীবন্ত পুতুল দিয়ে গেছে তুমি নিবে ?
পাখি তাকালো ধ্রুবর দিকে মুহুর্তে হাসি ফোটে উঠলো পাখির মুখে। এক আঙ্গুল দিয়ে ধ্রুবকে ছুঁয়ে দেখে খিলখিল করে হেসে উঠলো সে। আহান টলমলে চোখে তাকিয়ে আছে পাখির দিকে। মেয়েটা যখন জানতে পারবে তার আপুনি আর কখনো ফিরে আসবে না তখন কীভাবে তাকে সামলাবে আহান ?
তুমি ওকে নিবে পুতুল ?
পাখি হাত বাড়িয়ে দিলো। আহান সাবধানে ধ্রুবকে পাখির কোলে দিলো। ধ্রুব এখন শান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছে।
আহান বললো, ব্যাথা পাবে কিন্তু সাবধানে রাখবে।
পাখি ধ্রুবকে কোলে তুলে চেয়ারে চুপটি করে বসলো। সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ধ্রুবর মুখের দিকে। এবার ন্যান্সি এগিয়ে এলো আহানের দিকে। আহানের কাঁধে হাত রাখতেই বাচ্চাদের মতো কেঁদে দিলো আহান।
আমার তুতুলটা চলে গেলো মাম। ওকে ছাড়া আমি কীভাবে থাকবো এখন ? পুরনো ক্ষত কেবল শুকাতে শুরু করেছিলো কিন্তু এবার যে ক্ষত দিয়ে গেলো সেটা তো আর সারাজীবনেও শুকাবে না মাম।
ন্যান্সি ভেজা গলায় বললো, তিতির কথায় কথায় বলতো ওর যদি কিছু হয়ে যায় ওকে যেনো বাংলাদেশে ওর বাবা-মার কাছে কবর দেওয়া হয়। এই কথা শুনে আমি কত বকতাম আহান। আর আজ দেখো সত্যি চলে গেলো মেয়েটা।
তিতিরের লাশ হসপিটালের মর্গে রাখা হলো। বাংলাদেশে নেওয়ার সব ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত এখানেই রাখা হবে। পাখিকে একবার দেখানো হয়েছে তার আপুনিকে। পাখি তিতিরকে ডাকতে গেলে আহান বলে তিতির ঘুমিয়ে আছে, ঘুম ভেঙে গেলে তার কষ্ট হবে। অবুঝ পাখি সেটাই বিশ্বাস করে নিয়েছে। সে নতুন একটা পুতুল পেয়েছে সেটা নিয়ে মেতে আছে। পুতুলটা নড়াচড়া করে, কাঁদে সব ভালো লাগে পাখির।
ধ্রুব আর পাখি ন্যান্সির কাছে আছে। ধ্রুব তিতিরের বানানো কাঁথায় ঘুমাচ্ছে আরামে। বাজারে পাওয়া পাউডার দুধ হয়েছে তার খাবার। সাদা বরফে ঢাকা লন্ডন শহর ঘুমিয়ে গেছে, ঘুম নেই আহানের চোখে। তিতিরের রুমে বসে আছে সে। এখনো সে চাইলেই দেখতে পারবে তার তুতুলের মুখটা কিন্তু দুদিন পর ? তিতিরের রুমের ছোট ছোট জিনিস ছুঁয়ে দেখছে আহান। টেবিলের উপর ডায়েরি দেখে থমকে গেলো কিছুটা সময়।
হাতে নিয়ে দেখলো উপরে জ্বলজ্বল করছে আমার ধ্রুবতারা লেখাটা। আহান হাত বুলালো লেখাটার উপর। ডায়েরির ভেতরে একটা কাগজ ভাজ করে রাখা, সেটা বের করলো আহান। ডায়েরিটা রেখে কাগজের ভাজ খুললো,
প্রিয় আহু
ডায়েরিটা লিখে প্রতিদিন এটা এখানেই রাখি সাথে এই চিঠি। যাতে হুট করে আমার কিছু হয়ে গেলে সহজে পেয়ে যাস। আজ এটা পড়ছিস মানে আমি তোদের থেকে অনেক অনেক দূরে চলে এসেছি। জানি তুই ভালো নেই তবুও বলবো কষ্ট পাস না প্লিজ। আহু রে মেয়েদের একটা অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। সামনে থাকা ছেলেটা তাকে কোনো নজরে দেখে সেটা বুঝার অদ্ভুত ক্ষমতা। তুই আমাকে ভালোবাসিস সেটা আমি বুঝতে পেরেছি প্রথম দিকেই কিন্তু তুই যখন আমার জীবনে ফিরে এলি তখন এক ঝড়ে আমার জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেছে। মনে জায়গা দিয়ে ফেলেছি অন্য কাউকে, তুই আরো আগে কেনো ফিরে এলি না ? তোর জীবনেও আমি একটা স্বার্থপর প্রমাণিত হলাম। বিশ্বাস কর আমি বুঝেও না বুঝার ভান করতাম যাতে তুই কষ্ট কম পাস। তুই যদি এই কষ্টটা বুকে আগলে জীবনটা থমকে দিস তাহলে মরেও শান্তি পাবো না, নিজেকে দায়ী মনে করে। আমার বোনুটা যদি সুস্থ থাকতো তাহলে আমি বেঁচে থাকতেই ওর সাথে তোর বিয়ে দিতাম। কিন্তু ওকে তোর জীবনে চাপিয়ে দিয়ে তোর জীবনটা নষ্ট করার অধিকার আমার নেই। জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না আহু, তুইও এগিয়ে যা এতেই আমি খুশি হবো। শুধু এতটুকু অনুরোধ আমার দুটো প্রাণকে আগলে রাখিস। ধ্রুব তোর কাছে আমানত, যদি কোনোদিন ওর বাবা ওর কথা জেনে ফিরিয়ে নিতে আসে তবে তাকে আমার রেখে আসা উপহারটা দিস। যেটা আলমারিতে রাখা আছে একটা নীল রঙের ডায়েরি আর তোর সামনে রাখা ডায়েরিটা আমার জীবনের ধ্রুবতারা, আমার সন্তানের। তার ১৮তম জন্মদিনে এটা আমার তরফ থেকে তার উপহার। সেদিন সে সিদ্ধান্ত নিবে তার বাবার কাছে ফিরে যাবে, নাকি যাবে না। তবে তুই তাকে নিজের কাছে আমানত হিসাবেই রাখিস, যাতে ফিরিয়ে দিতে হলে আবার কষ্ট না হয়। জীবনটা এগিয়ে নিয়ে যাস আহু। একটা কথা মনে রাখিস,
“তোদের হাসিতেই আমার বাস।”
ইতি
তোর স্বার্থপর তুতুল
আহান নিজের ঝাপসা চোখ মুছে নিলো। চিঠিটা বুকে জড়িয়ে চুপ করে বসে রইলো কিছুটা সময়। টেবিলের উপর থেকে ধ্রুবতারা ডায়েরিটা হাতে নিলো। এগিয়ে গেলো আলমারির দিকে। খোলে সামনেই পেলো নীল রঙের ডায়েরিটা। এমন জায়গায় রেখেছে যাতে সহজেই পাওয়া যায়। নীল রঙের ডায়েরিটা হাতে তুলে নিতেই চোখে পড়লো উপরের জ্বলজ্বল করতে থাকা লেখাটা, “বিষাক্তফুলের আসক্তি”। ডায়েরি দু’টো বোধ হয় নিজে ডিজাইন করে অর্ডার দিয়ে বানিয়ে এনেছে তিতির। দেখে তেমনই মনে হলো আহানের। কত যত্নে আগলে রেখেছিলো তিতির। আহান দু’টো ডায়েরি নিয়ে নিজের রুমে ফিরে এলো। যত্ন করে তুলে রাখলো সেগুলো আর তার জন্য রেখে যাওয়া চিঠিটাও আলাদা করে তুলে রাখলো।
২৩.
বাবার অফিসে জয়েন করেছে তাজ। ইকবাল খান এখনো হসপিটালে তাই অফিসের জরুরি কাজে তাজকেই সিলেট আসতে হয়েছে। কাজ শেষ করে ফিরে যাচ্ছে আজই। এই সরু রাস্তায় দুটো গাড়ি পাশাপাশি একসাথে যেতে পারে না। তাজের গাড়ি আর একটা লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স মুখোমুখি দাঁড়ালো। অ্যাম্বুলেন্স দেখে তাজ নিজের গাড়ি একটু পিছিয়ে নিয়ে সাইড করলো। ধীর গতিতে পাশ কাটিয়ে চলতে লাগলো অ্যাম্বুলেন্সটা, পাশাপাশি হতেই তাজের বুকটা কেমন কেঁপে উঠলো। কেমন দম বন্ধ হয়ে আসছে, চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে বুকের বা পাশটায়। তাজ তাকালো অ্যাম্বুলেন্সটার দিকে, কষ্টটা যেনো বাড়লো, কে জানে ভেতরে কার আপনজন শুয়ে আছে চিরনিদ্রায়। ভেতরে তিতিরের লাশের কফিনটা সামনে নিয়ে বসে আহান। সিলেট তিতিরের নিজের শহর, এখানেই আছে তার বাবা-মায়ের কবর। সেখানেই তাকে চিরশায়িত করতে যাচ্ছে আহান। তাজ যাকে পাগলের মতো খোঁজে ফিরছে মাত্র কয়েক ইঞ্চি দূরে শুয়ে আছে সে কিন্তু তাজ জানতেও পারলো না। অ্যাম্বুলেন্সটা চলে যেতেই তাজ হাসফাস করে নিজের গাড়ি ছুটালো।
চলবে,,,,