বিষাক্তফুলের আসক্তি পর্ব-২৩+২৪

0
1067

#বিষাক্তফুলের আসক্তি
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্ব-২৩+২৪

প্রচন্ড মাথা যন্ত্রণা নিয়ে পিটপিট করে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলাম কোথায় আছি। আশেপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম এটা হসপিটাল, পাশেই একজন নার্স দাড়িয়ে কিছু করছে। মনে করার চেষ্টা করলাম এখানে কীভাবে এলাম।

কুয়াশা ঘেরা সকাল দেখে একটু ঘুরতে ইচ্ছে হলো পাহাড়ি রাস্তায়। ইচ্ছেটাকে প্রাধান্য দিয়ে সবুজকে কিছু না বলেই গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যাই। ধীরে ধীরে গাড়ি চালাচ্ছিলাম আর আশপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম৷ হঠাৎ করেই লক্ষ্য করলাম গাড়ির গতি বাড়ছে, চেষ্টা করেও কমাতে পারছি না। তারপরই বড় ঝটকা খেলাম, ব্রেক কাজ করছে না। এমনি পাহাড়ি রাস্তা, তার উপর ব্রেক কাজ করছে না। কোনোভাবে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিলাম না, তখনই সামনে দেখতে পাই একটা গাড়ি দাঁড় করানো। সেটা পাশ কাটিয়ে একটা গাছে ধাক্কা লাগে, মাথায় ব্যাথা অনুভব করি তারপর আর কিছু মনে নেই।

ধীর গলায় বললাম, নার্স।

২৮.
মিস্টার খানের জ্ঞান ফিরেছে শুনে হন্তদন্ত হয়ে কেবিনে গিয়ে বললাম, এখন কেমন লাগছে মিস্টার খান ?

তাজ ঘুরে তাকালো আহানের দিকে, জী আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু আপনি ?

নার্স বললো, স্যারই আপনাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছেন।

তাজ প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকিয়ে বললো, স্যার ?

আহান মুচকি হেসে বললো, আমি আহান চৌধুরী। এই হসপিটালটা আমাদেরই বলতে পারেন।

আহানের বাকি কথা তাজের কানে গেলো না। শুধু আহান নামটাই মস্তিষ্কে তীব্র বেগে আঘাত করলো।

কাঁপা গলায় বললো, আহান চৌধুরী ?

আহান মলিন হেসে বললো, জি আপনি যাকে ভাবছেন সেই আহান চৌধুরী।

অস্থির হয়ে উঠলো তাজ, তি,,,তিতির কোথায় ? আমি জানি তিতির আপনার কাছেই আছে। আপনি আমার ছোট হবেন বয়সে, তবু হাত জোর করে বলছি বলুন তিতির কোথায় ? গত প্রায় ছয়টা বছর যাবত হন্নে হয়ে খোঁজে চলেছি ওকে।

তাজের অস্থিরতা দেখে বুক কেঁপে উঠলো আহানের। তাজের চোখমুখ বলে দিচ্ছে সে তিতিরের জন্য কতটা অস্থির হয়ে আছে। সত্যিটা জানলে মানতে পারবে তো ?

আহান নিজেকে সামলে বললো, আপনি আগে শান্ত হন। এখন এত উত্তেজনা আপনার শরীরের জন্য ঠিক নয়। মাথার ক্ষতটা খুব গভীর না হলেও উত্তেজিত হলে ক্ষতি হবে।

তাজ আগের মতো অস্থির হয়েই বললো, আমি একদম ঠিক আছি। আপনি দয়া করে তিতিরের কাছে নিয়ে চলুন আমাকে।

কথা শেষ করে তাজ বেড থেকে নামতে গেলে আহান দ্রুত এসে ধরে ফেলে, আরে আরে করছেন কী ? আপনি এখনো অনেক উইক, অনেকটা রক্ত বেরিয়ে গেছে শরীর থেকে। ডান হাতটা ভেঙে গেছে, আপনি প্লিজ শান্ত হন।

তাজ এতক্ষণে খেয়াল করলো তার ডানহাতে ব্যান্ডেজ করা। এদিকে আহান নিজের ভুল বুঝতে পারলো। এখনই তাজের সামনে আসা ঠিক হয়নি তার। কিন্তু এতোকিছু ভাবেনি সে। তাজ এতটা ডেস্পারেট হয়ে উঠবে বুঝতে পারেনি।

তাজ তবু একই কথা বললো, প্লিজ বলুন তিতির কোথায় ? আমি আর সহ্য করতে পারছি না এই অপরাধবোধের বোঝা।

আহান কী করবে বুঝতে পারছে না। তাজকে এখনই সবটা জানালে সেটা তাজের জন্য ক্ষতিকর হবে। এদিকে তাজকেও শান্ত করা প্রয়োজন।

আহান তাজের কাঁধে হাত রাখলো, আপনি শান্ত হন আগে। তিতির আমার কাছেই আছে। আপনি সুস্থ হয়ে উঠলেই নিয়ে যাবো আপনাকে।

তাজ যেনো হাতে চাঁদ পেলো, সত্যি বলছেন আপনি ?

আহান তাজকে আশ্বস্ত করে বললো, জী আমি সত্যি বলছি।

মনে মনে বললো, আমাকে মাফ করবেন মিস্টার খান। তিতির আমার কাছে থেকেও নেই। কিন্তু এই মুহুর্তে এটা আপনাকে জানানো যাবে না।

হন্তদন্ত হয়ে কেবিনে প্রবেশ করলো ইরিনা। তাজকে দেখে ডুকরে কেঁদে উঠলো, এসব কীভাবে হলো বাবা ?

আমি ঠিক আছি মা, প্লিজ কান্না করো না।

কে শুনে কার কথা ইরিনা ছেলেকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো। তাজের এক্সিডেন্টের কথা শুনে তাদের দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গিয়েছিলো। ফ্লাইট পেতেই চলে এসেছে। এবার কেবিনে ঢুকলো সবুজ আর ইকবাল।

ইকবাল ভেজা গলায় বললো, এসব কীভাবে হলো তাজ ?

দুজনেই অস্থির হয়ে উঠলো তাজকে নিয়ে। তাজ যে তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। তাজ বাবা-মাকে বুঝাতে লাগলো সে ঠিক আছে। ইকবাল সবু্জকে ইচ্ছে মতো বকলো তাজকে একা ছাড়ার জন্য। একপাশে দাঁড়িয়ে আহান সবই দেখছে। চোখে নোনাজলের আনাগোনা দেখা গেলো তার।

মনে মনে বললো, সবার জীবনে কিছু শূন্যতা থেকেই যায়। মাকে বড্ড মনে পড়ছে আজ আহানের। সেই সাথে বাবার প্রতি হচ্ছে তীব্র ঘৃণা। চোখ মুছে নিলো আহান।

কেবিন থেকে বের হওয়ার জন্য পা বাড়াতেই তাজ বলে উঠলো, মা তিতিরকে পেয়ে গেছি আমি।

তাজের এক কথায় চমকে উঠলো সবাই। কেবিনে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে।

ইরিনা কাঁপা গলায় বললো, ক,,কোথায় পেয়েছিস তুই তিতিরকে ?

আহানকে দেখিয়ে তাজ বললো, তিতির আহানের কাছে আছে মা। আহান তিতিরের কাজিন।

ইকবাল আর ইরিনা দুজনেই তাকালো আহানের দিকে। আহানের আর পা বাড়ানো হলো না। সে জায়গাতেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। সবার দৃষ্টি এখন তার দিকে।

ইরিনা এগিয়ে এলো আহানের দিকে, তিতির তোমার কাছে ?

টলমল চোখে ইরিনার দিকে তাকালো আহান, সময় হলে সব জানতে পারবেন আপনারা। আপাতত আমাকে যেতে হবে এখন।

কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বের হয়ে গেলো আহান। রেখে গেলো কয়েক জোড়া কৌতূহলী চোখ। আহান অস্থিরতা নিয়ে বাড়ির দিকে ছুটলো। সবুজের থেকে তাজের গত পাঁচ বছরের জীবনযাপনের সম্পর্কে জেনেছে আহান। সন্ধ্যা পেরিয়ে বাড়িতে পৌঁছালো সে। সোজা চলে গেলো তিতিরের কবরের কাছে।

তুই যে বলেছিলি তাজ তোকে ভালোবাসে না। তবে কেনো তোর জন্য এতো অস্থিরতা তার ? এবার কীভাবে সবটা বলবো আমি তাকে ? সে তো তোর আশায় বসে আছে এখনো। বিয়ে পর্যন্ত করেনি তোর আর তোদের সন্তানের আশায়। তুই সত্যি স্বার্থপর রে তুতুল।

তাজ একাই আছে এখন কেবিনে। তিতিরের দেখা পাওয়ার জন্য ছটফট করছে৷ হঠাৎ তাজের মনে হলো নিজের সন্তানের কথা। তিতিরের খোঁজ পাওয়ার খুশিতে বাচ্চার কথা ভুলেই গিয়েছিলো তাজ। আহানকে বাচ্চার কথা জিজ্ঞেস করতে মনেই নেই। নিজের কান্ডকারখানায় নিজেই হতভম্ব হয়ে গেলো তাজ। বাচ্চাটার জন্য অস্থির হয়ে ছিলো সে আর তিতিরের খোঁজ পেয়ে বাচ্চার কথা মনেই নেই তার। এটা কীভাবে সম্ভব ? আহান তো বললো তিতির তার কাছেই আছে। তারমানে তিতির ভালো আছে, সুস্থ আছে আর বাচ্চাটা ? এত প্রশ্নের ভীড়ে মাথা ব্যাথা করছে তাজের। চোখ বন্ধ করে শুয়ে ভাবতে লাগলো কীভাবে তিতিরের কাছে মাফ চাইবে। একসময় ঘুমিয়ে পড়লো তাজ।

২৯.
দু’দিন হসপিটালের বেতে ছটফট করে কাটালো তাজ। আহান আড়াল থেকে তাজের খোঁজ খবর নিয়েছে কিন্তু সামনে যায়নি। আবার তিতিরের কথা জানতে চাইলে কী উত্তর দিবে সে ? নার্স জানালো তাজ তাকে খোঁজছে বারবার কিন্তু আহান নিরুপায়৷ তাজের এই অবস্থায় এমন একটা ধাক্কা সহ্য করতে পারবে না।

দু’দিন পর তাজকে আর হসপিটালে রাখা গেলো না। হসপিটাল থেকে আহানের ঠিকানা নিয়ে মাহমুদ ভিলার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। সাথে আছে সবুজ, ইকবাল আর ইরিনা হোটেলে আছে। গাড়ি ড্রাইভ করছে সবুজ।

হঠাৎ তাজ বলে উঠলো, আমার ভয় করছে সবুজ।

অবাক হয়ে তাজের দিকে তাকালো সবুজ। তাজের মুখে ভয় শব্দটা তার কাছে পৃথিবীর আরেকটা আশ্চর্যের বস্তু মনে হলো। তাজ আর ভয় শব্দটা ঠিক মেলাতে পারছে না সবুজ। তার হঠাৎ মনে হলো, মাত্র দু’দিন আগে এক্সিডেন্ট করেছে তাই হয়তো গাড়িতে ভয় লাগছে।

সবুজ বললো, স্যার আমি সাবধানে চালাচ্ছি গাড়ি।

তাজের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের আনাগোনা দেখা গেলো, তিতিরের সামনে কীভাবে দাঁড়াবো আমি সবুজ ?

সবুজ এতক্ষণে বুঝতে পারলো তাজের ভয়ের কারণ। সাথে অনেকটা অবাক হলো, তাজের মতো মানুষও বউকে ভয় পায়। যার তীক্ষ্ণ চাহনিতে মানুষের কাপড় নষ্ট হওয়ার অবস্থা হয়, সে নাকি বউয়ের সামনে দাঁড়াতে ভয় পাচ্ছে। আনমনে হাসলো সবুজ।

স্যার আমার কাছে একটা বুদ্ধি আছে।

তাজ আগ্রহ নিয়ে বললো, কী বুদ্ধি ?

স্যার কিছু না ভেবে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলবেন সরি আর আই লাভ ইউ।

সবুজের কথা শুনে সরু চোখে তাকালো তাজ। সবুজ ঢোক গিলে বললো, স্যার আমি এটাই করি তাই বললাম।

তাজ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো, তোমাদের মতো আমাদের সম্পর্কেটা স্বাভাবিক নয় সবুজ।

গাড়িতে আর কোনো কথা হলো না। তাজ নিজের ভাবনায় ডুবে গেলো। আজ সে তিতিরের কাছে মাফ চেয়ে তাকে ফিরে চাইবে নিজের জীবনে। নতুন করে সূচনা করবে জীবনের। অতীতের সব বিষাক্ততা ভুলে এক মুগ্ধতার সম্পর্ক তৈরি করবে।

স্বপ্নগুলো যখন এক ঝটকায় ভেঙে গুড়িয়ে যাবে কী অবস্থা হবে তাজের ? গাড়ি যত এগিয়ে যাচ্ছে তাজের হার্টবিট তত ফাস্ট হচ্ছে। সবুজও হয়তো পাশে বসে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে সেই শব্দ।

গাড়ি এসে থামলো মাহমুদ ভিলার সামনে। তাজ জানলা দিয়ে তাকালো বাড়িটার দিকে। বেশ পুরনো রাজকীয় ডিজাইনের বাড়িটা। গেইটের সামনে দেয়ালে সুন্দর করে পাথরে খোদাই করে লেখা “মাহমুদ ভিলা” তার নিচে লেখা “তিতিরপাখির নীড়”। তাজ নেমে গেলো গাড়ি থেকে। তিতির লেখাটা আলতো ছুঁয়ে দিলো। দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে গেইটে টোকা দিলে দারোয়ান গেইট খোলে দিলো।

কাকে চাই ?

আহান চৌধুরীর সাথে দেখা করতে এসেছি, উনাকে বলুন তাজওয়ার খান তাজ এসেছে তাহলেই চিনতে পারবেন।

সবুজ ততক্ষণে গাড়ি রাস্তার পাশে পার্ক করে তাজের পিছনে এসে দাড়ালো।

দারোয়ান গেইট ছেড়ে দাঁড়িয়ে বললো, ভেতর আসুন।

দারোয়ান ভেতরে গেলো আহানকে জানাতে তাজের আসার খবর। তাজ আর সবুজ গেইটের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। তাজ আশপাশটা নজর বুলিয়ে দেখে নিচ্ছে।

ধ্রুব আমি কিন্তু খেলবো না, তুমি বল করছো না ভালো করে।

ধ্রুব পূর্বের মতো ভাঙা বাংলায় বললো, আমি তো ভালো করেই করছি মাম্মাম। তুমি খেলতে পারো না তাই বল দেখতে পাও না।

ধ্রুবর আওয়াজ কানে যেতেই বুকটা কেঁপে উঠলো তাজের। আওয়াজের উৎস খোঁজে এগিয়ে গিয়ে দেখতে পেলো বাগানের এপাশে গাছের ছায়ায় একটা মেয়ে আর একটা বাচ্চা ছেলে ক্রিকেট খেলছে। বাচ্চাটার মুখ দেখা যাচ্ছে না। মেয়েটার হাতে ব্যাট আর বাচ্চাটার হাতে বল। তাজ কাঁপা পায়ে এগিয়ে গেলো সেদিকে। বুকের ভেতর তোলপাড় হচ্ছে তার। একটু কাছে গেলে পাখিকে চিনতে পারলো তাজ।

ধ্রুব বল করতেই পাখি আউট হয়ে গেলো এবার।

ধ্রুব হাত তালি দিয়ে লাফাতে লাফাতে বললো, মাম্মাম আউট, মাম্মাম আউট।

পাখি আমতা আমতা করে বললো, নো নো আমি আউট না।

ধ্রুব গাল ফুলিয়ে বললো, তুমি চিটিং করছো আমি খেলাবো না।

ধ্রুব উল্টোদিকে ফিরে গেলো। এবার ধ্রুবর মুখ দেখতে পেলো তাজ। মুহূর্তে শ্বাস আটকে এলো তাজের। অবিকল তিতিরের মুখটাই যেনো দেখতে পেলো ধ্রুবর মাঝে। কোনো ভুল করে তাজের বকা খেলে গম্ভীর তিতিরটাও তো এভাবে গাল ফুলাতো। তাজের পা কাঁপছে, হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে তার। নিজের সাথে যুদ্ধ করে এগিয়ে গেলো তাজ। হাটু গেড়ে বসলো ধ্রুবর সামনে। হঠাৎ তাজকে দেখে খানিকটা চমকে উঠলো ধ্রুব। তবে ভয় পেলো না, অদ্ভুত চাহনিতে দেখছে তাজকে। এই মুখটা তো ধ্রুব দেখেছে কোথাও। ছোট্ট মস্তিষ্কে চাপ দিয়ে ধ্রুব মনে করার চেষ্টা করলো তাজকে কোথায় দেখেছে ধ্রুব। তাজকে মোটেও অচেনা লোক লাগছে না ধ্রুবর কাছে। তাই ভয় পেয়ে সরেও যাচ্ছে না।

তাজ হুট করে বুকে জড়িয়ে নিলো ধ্রুবকে। ছোট্ট ধ্রুব কিছু না বুঝে ঘাপটি মেরে পরে রইলো তাজের বুকে। ধ্রুবকে বুকে নিয়ে তাজের বুকে যেনো প্রশান্তির বাতাস বয়ে গেলো। ধ্রুব তখনো ব্যস্ত তাজকে চেনার।

হঠাৎ করেই অস্পষ্ট গলায় বললো, বাবা।

হ্যাঁ ধ্রুব চিনতে পেরেছে তাজকে। প্রতিদিনই তো তাজ আর তিতিরের ছবি দেখে সে৷ তার বাবা-মা বলেই তো পরিচয় করিয়ে দেয় আহান। ধ্রুবর মুখে বাবা ডাকটা যেনো তাজের পুরো পৃথিবী নাড়িয়ে দিলো। পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে তার। এতগুলো বছরের অপেক্ষার ফল এখন তার বুকে। এ অনুভূতি হয়তো পৃথিবীর অন্য কিছু দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

ধ্রুবকে বুক থেকে তুলে মুখটা বা হাতের আঁজলে নিয়ে চুমু খেতে লাগলো তাজ। আজ দু’চোখের নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে বাঁধ ভেঙে। ধ্রুব তার ছোট ছোট হাত দিয়ে তাজের চোখ মুছে দিলো। তাজ অবাক চোখে তাকালো ধ্রুবর দিকে।

তুমি কাঁদছো কেনো বাবা ?

ধ্রুবর ছোট ছোট হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আবারও চুমু খেলো গুটি কয়েক।

ভেজা গলায় বললো, আবার বলো বাবা।

ধ্রুব পুনরায় বললো, বাবা।

তাজ ধ্রুবকে বুকে জড়িয়ে মাথায় চুমু খেতে লাগলো। কত বছরের অপেক্ষার অবসান হয়েছে আজ।

সবুজ পেছন থেকে ডেকে বললো, স্যার ?

তাজ ধ্রুবকে এক হাতেই কোলে তুলে নিলো, সবুজ দেখো এটা আমার ছেলে। আমার ছেলে এটা তুমি দেখেছো সবুজ ?

তাজের চোখেমুখে উপচে পড়ছে খুশীর ঝলক। সবুজ অবাক হয়ে দেখছে তাজকে। গত পাঁচ বছরে এই তাজকে কখনো দেখেনি সে। সবুজ তার চেনা তাজের সাথে এই তাজের মিল পাচ্ছে না।

পেছন থেকে গম্ভীর আওয়াজে, মিস্টার খান।

ঘুরে তাকালো তাজ। আহানকে দেখে ঠোঁটের কোণের হাসি প্রশস্ত হলো তাজের।

পাখি দৌড়ে গেলো আহানের কাছে, আহান দেখো ছেলেধরা। ধ্রুবকে নিয়ে যাবে তো। তুমি নিয়ে এসো না ধ্রুবকে।

আহান পাখির দিকে তাকিয়ে বললো, উনি তো ছেলেধরা না পুতুল৷ ভালো করে দেখো চিনতে পারবে।

পাখির চোখেমুখে তখনও আতংক। তাজকে থেকে ভয় পেয়েছে সে। ভীত চোখে এতক্ষণ তাজকে দেখছিলো। পাখি গোলগাল চোখে তাকালো তাজের দিকে। পাখি তাজকে চিনতে না পারলেও তাজ চিনতে পারলো পাখিকে।

মনে মনে বললো, তোমার মতো একটা নিষ্পাপ জীবন বাঁচাতে তিতির যা করেছে তাতে অন্যায় করেনি। যদি কিছু না করে তোমার ক্ষতি হতে দিতো তাহলেই বরং অন্যায় হতো। কোথায় তুমি তিতির ? প্লিজ সামনে এসো।

তাজ আশেপাশে তাকিয়ে তিতিরকে খুঁজতে লাগলো। না আশেপাশে তার দেখা মিললো না।

আহান বললো, ভেতরে চলুন মিস্টার খান।

তাজ মুচকি হেসে বললো, তুমি তিতিরের কাজিন তাই ভাইয়া বললেই খুশী হবো। তুমি করেই বললাম কিছু মনে করো না, তুমি বয়সে অনেকটা ছোট আমার থেকে।

তাজের কথায় আহানের বুক ধক করে উঠলো। ফিরে তাকালো তাজের দিকে৷ তাজের হাসিখুশি মুখটা আহানের ভয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। সত্যিটা জানলে কী অবস্থা হবে তাজের ভাবতেই বুক কেঁপে উঠলো।

আহান জোরপূর্বক হেসে বললো, ভেতরে চলুন ভাইয়া, সেখানে বসেই নাহয় কথা হবে। এমনিতেও আপনি অসুস্থ।

আহান কথা শেষ করে দু’কদম যেতেই তাজ বললো, তিতির কোথায় আহান ?

পা থেমে গেলো আহানের। এই প্রশ্নের ভয়েই তো তাজের সামনে যায়নি আহান। তবে এবার কীভাবে এড়িয়ে যাবে এই প্রশ্ন ?

আহান শুকনো ঢোক গিলে বললো, আগে ভেতরে চলুন তারপর নাহয় কথা বলি।

আহানের অস্থিরতা এবার নজরে এলো তাজের। আহান কেনো বারবার এই প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে চাইছে ? তবে কী তিতির আহানের কাছে নেই ? এসব প্রশ্নে তাজের ভয় হতে লাগলো। মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেলো তার। ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে তাকে শক্ত করে বুকে চেপে ধরলো।

কাঁপা গলায় বললো, তিতির তোমার কাছেই আছে তো আহান ?

আহান বুঝতে পারলো তাজ ছাড়ার পাত্র নয়। সে এই প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে দিবে না আহানকে। আহান জিহবা দিয়ে নিজের শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো। সেই বা আর কতক্ষণ তাজের থেকে সত্যিটা আড়াল করবে। তাজকে তো সত্যিটা আজ না হয় কাল জানাতেই হবে।

আহান নিজেকে শক্ত করে তাজের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো, তিতির আমার কাছে থেকেও নেই।

তাজের হাত-পা কাঁপছে ভয়ে, সে কী তবে তিতিরকে পেয়েও পেলো না।

ভীত গলায় তাজ বললো, মানে ?

আহান এগিয়ে এলো তাজের দিকে। ধ্রুবকে তাজের কোল থেকে নিজের কোলে নিলো। তারপর তাজের এক হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। তাজ বিস্ময় নিয়ে আহানের কাজ দেখছে শুধু। আহান বাড়ির দক্ষিণ দিকে একটু একটু করে আগাতে লাগলো। তাজ আর আহানের পিছনে যাচ্ছে কোতুহলী সবুজ আর ভীত পাখি। একেক কদম আগাচ্ছে আর তাজের ভেতরটা অস্থিরতায় ছেয়ে যাচ্ছে। আহান নিজেও অস্থিরতা অনুভব করছে। কী হবে এরপরে সেটা ভেবে ভয় হচ্ছে। পুকুরের ওপাড়ে বকুল গাছটার নিচে গিয়ে থামলো আহান। চারপাশে বকুল ফুলের সুবাস মম করছে। তাজ আশেপাশে না তাকিয়ে প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকিয়ে আছে আহানের দিকে।

আহান ভেজা গলায় বললো, আপনি তো জানতে চেয়েছিলেন তিতির কোথায় ?

মৃদু আওয়াজে তাজের উত্তর, হ্যাঁ।

আহান আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে সামনে তাকাতে বললো। তাজ আহানের আঙ্গুলের ইশারায় ধীরে ধীরে সামনে তাকালো। পাথরে বাঁধানো চকচকে তিনটা কবর দেখতে পেলো তাজ। প্রত্যেকটা কবরে নাম, জন্মতারিখ আর মৃত্যু তারিখ লেখা। প্রথমটায় লেখা আবির মাহমুদ, তারপর সুলতানা পারভীন।

শেষেরটা পড়তে গিয়ে তাজের গলা ধরে এলো, মুসকান মাহমুদ তিতির।

দু’কদম পিছিয়ে গেলো তাজ। মৃত্যু তারিখটা দেখলো আজ থেকে আরো পাঁচ বছর আগের। তাজের দৃষ্টি ঘোলা হয়ে গেলো। চোখেমুখে নেমে এলো অন্ধকার।

ঘোলাটে চোখে আহানের দিকে তাকিয়ে ভেঙে ভেঙে বললো, এসবের মানে কী আহান ?

আহান উদাস গলায় বললো, তুতুল আমার কাছে থেকেও নেই তাজ ভাইয়া। আমি চাইলেও আর কোনোদিন তুতুলের সাথে আপনার দেখা করাতে পারবো না। চাইলেও ফিরিয়ে দিতে পারবো না ধ্রুবকে তার মা। কারণ তুতুল আরো পাঁচ বছর আগে ধ্রুবকে এই পৃথিবীর আলো দেখিয়ে নিজেই হারিয়ে গেছে পৃথিবীর বুক থেকে। তাকে আপনি আর কোনোদিনই খোঁজে পাবেন না তাজ ভাইয়া।

ধৈর্যের বাঁধ ভালো তাজের। কেউ বুঝে উঠার আগেই তাজ জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়লো বকুল ফুল ছড়ানো ঘাসের বিছানায়।

সবুজ চিৎকার করে উঠলো, স্যার।

আহান হতভম্ব হয়ে তাকালো তাজের দিকে। আহান জানতো তাজ শক খাবে কিন্তু সেটা সামলে উঠতে পারবে না সেটা বুঝতে পারেনি। সবুজ দৌড়ে এসে তাজের সামনে বসে পড়লো।

৩০.
তিতিরের রুমেই শুয়ে আছে তাজ। ছোটবেলায় এটাই তিতিরের রুম ছিলো। যদিও একা কখনো থাকতো না এই রুমে। রুমটা আগের মতো নেই। বাড়িটা আগের হলেও অনেক কিছুই পরিবর্তন করতে হয়েছে৷ অনেক বছরের অযত্নে নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো অনেকটাই। আহানই সব ঠিকঠাক করিয়েছে। তাজের পাশে বসে আছে ধ্রুব। রুমে সকলেই উপস্থিত সাথে তাজের বাবা-মাও। সবুজের মাধ্যমে তাদেরও খবর দিয়ে এনেছে আহান। তাজের এখনো জ্ঞান ফিরেনি। এক্সিডেন্টের আঘাতই সামলে উঠতে পারেনি এখনো, তার মধ্যে এতবড় মানসিক আঘাত সহ্য করতে পারেনি। আহান দেখেছে তাজকে, এমনি প্রবেলম নেই তবে জ্ঞান ফিরতে একটু সময় লাগবে। ইরিনা ধ্রুবর সাথেই তাজের পাশে বসে নিঃশব্দে কান্না করছে আর মাঝে মাঝে ধ্রুবকে বুকে টেনে নিচ্ছে। সোফায় হতভম্ব হয়ে বসে আছে ইকবাল খান। আহানের থেকে তিতিরের মৃত্যুর কথা শুনে তারা সত্যি হতভম্ব।

ইকবাল খান তাকালো ধ্রুবর দিকে। তার বংশধর তার সামনে সহিসালামত বসে আছে একটা মেয়ের আত্মত্যাগের ফল হয়ে। যে মেয়েটাকে কিনা সে সবসময় অপছন্দ করে গেছে। সব সত্যিটা জানার পরও স্বার্থপর বসে আখ্যায়িত করে গেছে নির্দ্বিধায়। নিজের কাজে নিজেকে ধিক্কার জানাতে ইচ্ছে করছে ইকবালের। অর্থ, প্রতিপত্তি আর বংশমর্যাদার অহংকারে সবসময় ছোট করা মেয়েটার বংশপরিচয় তাকে আরো বেশি লজ্জিত করছে নিজের কাজে। অপরাধবোধ তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে কিন্তু তার থেকে মুক্তি পাওয়ার পথও নেই। কারণ মেয়েটার কাছে মাফ চেয়ে নিজের অপরাধবোধের বোঝা কমাতে পারবেন না কোনোদিন। বাকি জীবন এই অপরাধবোধের বোঝা মাথায় নিয়ে কাটাতে হবে। এসব ভেবে ইকবালের চোখ গেলো বিছানায় পড়ে থাকা ছেলের ক্লান্ত মুখশ্রীর দিকে। ইকবাল আজ বুঝতে পারছে তাজের কষ্ট। ছেলেটা যে গত প্রায় ছয়টা বছর ধরে এই অপরাধবোধ বয়ে বেড়াচ্ছে আর বাকি জীবনটাও বয়ে বেড়াতে হবে। নিজের ছেলের জন্য কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে ইকবালের। সহ্য করতে না পেরে এবার বের হয়ে গেলো রুম থেকে। ইরিনা ধ্রুবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

ধ্রুব হঠাৎ বললো, বাবা কী ঘুমাচ্ছে ?

ইরিনা মুগ্ধ হয়ে শুনলো ধ্রুবর কথা। আসছে পরে ধ্রুব এই প্রথম কথা বললো। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, আসলের চেয়ে সুদ মিষ্টি। নাতিকে পেয়ে ইরিনার অবস্থাও তেমন।

,,,,,,

শুভ্র রঙের শাড়ি গায়ে জড়ানো, মাথায় সদ্য ফোঁটা সাদা গোলাপের ব্যান্ড। সাদা গোলাপের বাগানের মাঝে হেঁটে যাচ্ছে এক রমণী, কোমর ছাড়িয়ে যাওয়া লম্বা চুলগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে।

দাঁড়াও কে তুমি ?

রমণী ফিরে তাকালো না তাজের কথায়। তাজের কানে বারি খেলো খিলখিল হাসির আওয়াজ। সে হাসিতে তাজের বুক কেঁপে উঠলো। তাজকে উপেক্ষা করে সেই রমণী চলে যেতে নিলে তাজ পেছন থেকে তার হাত টেনে ধরলো।

“বুঝবে তুমি বুঝবে
যেদিন সব বুঝবে
হারিয়ে আমায় খুঁজবে
তবে দিনশেষে শূণ্য হাতে
নিজের নীড়ে ফিরবে
বিষাক্তফুল নেই আপন করতে
তার ঘ্রাণেও যে হবে প্রাণনাশ”

রমণী না হাত ছাড়ালো আর না তাজের দিকে ফিরে তাকালো। ছন্দ ছন্দে কথাগুলো বলে আবার খিলখিলয়ে হাসতে লাগলো। সে রমণীর হাত ছেড়ে দিলো তাজ।

অস্ফুটস্বরে বললো, তিতির ?

এবার ঘুরে তাকালো সে-ই রমণী, বাহ্ চিনে নিয়েছেন তবে।

তিতিরের চোখ ঝলসানো রুপে চোখ বন্ধ করে নিলো তাজ। তিতির এতটা সুন্দর হয়ে উঠেছে তাজের চোখ যেনো ঝলসে যাবে তার রুপের আগুনে। তবু আবারও তাকালো তাজ।

আমি তো আপনাকে ভালো থাকার জন্যই ছেড়ে এসেছিলাম তাজ। তবু আপনি কেনো আমাকে খুঁজছেন ? আমি তো আপনার সাথে সব হিসেব নিকেশ চুকিয়ে এসেছি তাজ।

তাজ অসহায় গলায় বললে, সত্যি কী সব হিসেব নিকেশ চুকানো হয়ে গেছে তিতির ?

মুচকি হাসলো তিতির, না একটা হিসেব এখনো বাকি রয়ে গেছে।

তিতির নিজের পেছন থেকে হাত ধরে বের করে আনলো ছোট্ট ধ্রুবকে। ছোট্ট ধ্রুবর ঠোঁটের কোণে ঝুলে আছে মিষ্টি হাসি।

এই হিসেবটা বাকি থেকে গেছে তাজ। মনে পরে সেই রাতের কথা ? সেই রাতের প্রমাণ আমার জীবনের ধ্রবতারা এই তাহিয়ান খান ধ্রুব। ও শুধু আপনার সন্তান নয় তাজ। আপনার সারাজীবনের শাস্তি, অনুশোচনা, অপরাধবোধ। আপনি যতবার ওর দিকে তাকাবেন নিজের অনুশোচনার আগুনে পুড়বেন। আপনি তো বলেন আমি আপনার জীবনের বিষাক্তফুল। যেখানে বিষাক্তফুলের ঘ্রাণেও হয় প্রাণনাশ সেখানে ধ্রুব এই বিষাক্তফুলের একটা অংশ তাজ। তাজ পারবেন তো বিষাক্তফুলের এই অংশ আগলে রাখতে।

তাজ কাঁপা গলায় বললো, পাড়বো।

তিতির ধ্রুবর ছোট হাতটা তাজের হাতে তুলে দিলো, তবে নিন আপনার শাস্তি।

ধ্রুবকে তাজের হাতে দিয়ে তিতির সামনে হাঁটতে লাগলো আবার।

তাজ পেছন থেকে চিৎকার করে বললো, দাঁড়াও তিতির যেও না। আমাকে একবার সুযোগ দাও মাফ চাওয়ার, একবার ফিরে এসো আমার জীবনে।

ধীরে ধীরে কুয়াশায় মিলিয়ে গেলো তিতির, তাজের হাতে রেখো গেলো তাজের শাস্তি।

তিতির বলে হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলো তাজ। ঘামে সারা শরীরে ভিজে গেছে। জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো তাজ। অনেকটা সময় লাগলো নিজেকে সামলাতে। আশেপাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো কোথায় আছে৷ নিজের পাশে বেডে চোখ পড়তেই দেখতে পেলো ধ্রুব ঘুমিয়ে আছে তার পাশে। ফ্লোরে বসে বেডে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে ইরিনা আর সোফায় ইকবাল। ধীরে ধীরে সব মনে পড়ে গেলো তাজের। অস্থির হয়ে উঠলো তাজ। পাশ থেকে ধ্রুবকে একহাতে কোলে তুলে নিলো। বের হয়ে গেলো রুম থেকে। দরজায় ধরাম করে শব্দ হলে ঘুম ভেঙে গেলো ইরিনার। বেডে তাজ বা ধ্রুব কাউকে না দেখে চোখের ঘুম উধাও হয়ে গেলো।

ওগো শুনছো ছেলেটা কোথায় গেলো আবার ?

ইরিনার কান্নারত চিৎকারে ঘুম ছুটলো ইকবালের। ইরিনার থেকে শুনে রুম থেকে বের হয়েই তাজকে ডাকতে লাগলো জোরে জোরে। আহান ঘুমায়নি তাই বের হয়ে এলো নিজের রুম থেকে। ইকবালের থেকে সবটা জেনে ছুটলো তিতিরের কবরের দিকে।

ঘুমন্ত ধ্রুবকে বুকে জড়িয়ে কবরের পাশে ধপ করে বসে পড়লো তাজ। কৃত্রিম আলোয় চারপাশ আলোকিত, তবে অন্ধকার নেমে এসেছে তাজের জীবনে। আদৌও কী আর কখনো কাটবে এই অন্ধকার ? না এ অন্ধকার কাটার নয়। তাজের চোখের পানি টপটপ করে পড়ছে তিতিরের কবরে।

প্লিজ ফিরে এসো তিতির। একবার মাফ চাওয়ার সুযোগ দাও। একটা ভুলের এতবড় শাস্তি তুমি কীভাবে দিতে পারো আমাকে ? একবার ফিরে এসো, তোমাকে অভিযোগ করার সু্যোগ দিবো না আর কোনোদিন।

ডুকরে কেঁদে উঠলো তাজ। তিতিরের কী একটুও মায়া হচ্ছে না তাজের উপর ?

চলেব,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে